২০১৪ সালের পেশাওয়ার বিদ্যালয় হত্যাকাণ্ড

২০১৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের ছয়জন অস্ত্রধারী সদস্য পেশাওয়ার শহরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সেনাবাহিনী পাবলিক বিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটায়। এই আক্রমণে অংশ নেয়া ছয়জন জঙ্গিই বিদেশী নাগরিক ছিল। এর মাঝে একজন চেচেন, তিনজন আরব ও দুইজন আফগান ছিল।[১] এই সন্ত্রাসী দলটি বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিদ্যালয়টির কর্মচারী ও বাচ্চাদের উপর গুলিবর্ষণ করে।[২] ফলে ১৩২ জন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ মোট ১৪৯ জন প্রাণ হারায়। নিহত শিক্ষার্থীদের বয়স আট থেকে আঠারো বছরের মধ্যে ছিল। এই ঘটনাটি ভয়াবহতার দিকে দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ে সংঘটিত গণহত্যার মধ্যে চতুর্থ।[৩][৪] পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশেষ দল, স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ কর্তৃক একটি উদ্ধার অপারেশন পরিচালনাকালে ছয়জন সন্ত্রাসীই নিহত হয় এবং বিদ্যালয়টি থেকে ৯৬০ জন মানুষ উদ্ধার হয়।[৫][৬]

বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এই বিদ্যালয়ে হওয়া সন্ত্রাসী হত্যাযজ্ঞকে ২০০৪ সালে রাশিয়ারউত্তর ওশেতিয়া- আলানিয়ার বেসলান বিদ্যালয় বন্দি ঘটনার সাথে তুলনা করা হয়।[৭][৮][৯][১০][১১]

এই ঘটনার ফলস্বরূপ পাকিস্তান সরকার সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকা মৃত্যুদণ্ডকে পুনর্বহাল করে, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে চলমান যুদ্ধে আরো তীব্রভাবে অংশ নেয় এবং সামরিক আদালতে সাধারণ জনগণের বিচারকে সাংবিধানিক ভাবে সিদ্ধ করে। ২০১৫ সালের ২রা ডিসেম্বর এই পেশাওয়ার হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত চার সন্ত্রাসীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়।[১২] অবশ্য এই হত্যাযজ্ঞের মূল পরিকল্পনাকারী ওমর খোরাসানি একটি ড্রোন আক্রমণে ২০১৭ সালে ১৮ই অক্টোবর পূর্ব আফগানিস্তানে মারা যায়। 

পিছনের কথা

২০১৪ সালের জুন মাসে একটি যৌথ সামরিক অপারেশনে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী উত্তর ওয়াজিরস্থানে একাধিক দলের সাথে বিরোধ হয়। এর ফলশ্রুতিতে উত্তর ওয়াজিরস্থানে একটানা বেশ কিছু সহিংসতা ঘটে। অপারেশোন জার্ব-এ-আযব নামের এই অপারেশন ছিল জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হামলার পরবর্তী সামরিক বাহিনী কর্তৃক নেয়া পদক্ষেপের একটি। টিটিপি ২০১৪ সালের জুনে এই হামলার দায়ভার স্বীকার করে এবং তা পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে চলমান যুদ্ধের অংশ বলে দাবী করে। উল্লেখ্য, তখন অব্দি যুদ্ধটিতে ২১০০ এর মতো মানুষ মারা গিয়েছিল।[১৩] এছাড়াও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মতে উত্তর ওয়াজিরস্থানের অন্তত ৯০ শতাংশ জায়গা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছিল।[১৪]

আক্রমণ

সেনাবাহিনী পাবলিক বিদ্যালয়

আক্রমণের দিন মোট ১,০৯৯ জন শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় কর্মচারী বিদ্যালটিতে উপস্থিত ছিল।[১৫] সকাল সাড়ে দশটার দিকে বন্দুক ও বিস্ফোরকধারী সন্ত্রাসীরা বিদ্যালয়ের প্রাচীর টপকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ১৪৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে পেশাওয়ার ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত এই সেনাবাহিনী পাবলিক বিদ্যালয়ে [১৬] প্রবেশের পূর্বে সন্ত্রাসীরা তাদের সুজিকি বোলান এসটি৪১ মডেলের ভ্যানগাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সন্ত্রাসীরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেই সরাসরি অডিটোরিয়ামে চলে যায় এবং সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার উপর ট্রেনিং নিতে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর বিনা বিচারে গুলিবর্ষণ করে। [১৭]

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশেষ দল উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় স্নাইপার দিয়ে অস্ত্রধারী একজন সন্ত্রাসীদের হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় তিনজন সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে নিহিত হয়। বন্দুকযুদ্ধে সেনাবাহিনীর দুইজন অফিসারসহ সাতজন সদস্য আহত হন।

দায়ভার

তেহেরি-ই-তালিবান পাকিস্তান এই হত্যাযজ্ঞের দায়ভার নেয়। তারা ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে দেশটির উত্তর ওয়াজিরস্তানে পাকিস্তান আর্মির অপারেশন জারব-এ-আযব-এর প্রতিশোধমূলক অপারেশন বলে এই হত্যাযজ্ঞকে আখ্যায়িত করে।

মুহাম্মদ আল খোরসানী, দলটির মুখুআত্রের ভাষ্যমতে, "আমরা বিদ্যালয়টি ল্ক্ষ্য করেছি কেননা সেনাবাহিনী আমাদের পরিবারকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে। সেনাবাহিনী যেন আমাদের বেদনা অনুধাবন করতে পারে তাই এই আক্রমণ।"[১৮][১৯] এই আক্রমণ মূলত আফগানিস্তানে অবস্থানরত টিটিপির নেতাদের দ্ব্রাআ পরিচালিত হয়।[২০]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ