খাওয়া

জীবনের একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া

খাওয়া (এছাড়াও খাদ্যগ্রহণ নামেও পরিচিত) হল খাদ্য এর গলাধঃকরণ, সাধারণত এটি পরভোজী জীবকে শক্তি প্ৰদান করে এবং বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রাণী এবং অন্যান্য পরভোজীদের বেঁচে থাকার জন্য খেতে হয় - মাংসাশী প্রাণীরা অন্যান্য পশুদের খায়, তৃণভোজীরা লতাপাতা খায় এবং সর্বভুকরা উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজাত উভয় প্রকারই খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে এছাড়া মৃতজীবীরা মৃত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ছত্রাক জাতীয় জীবের তাদের দেহের বাইরেই জৈব পদার্থকে পরিপাক করে যেখানে অন্যান্য প্রাণীরা দেহের ভেতরে খাদ্য পরিপাক করে। মানুষের জন্য, খাওয়া হল দৈনন্দিন জীবনযাত্রার একটি কার্যকলাপ। কিছু ব্যক্তি জীবনধারার জন্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষের জন্য বা ধর্মীয় উপবাস হিসাবে তাদের পুষ্টিগত ভোজন গ্রহণের পরিমান নির্দিষ্ট রাখেন।

ইংল্যান্ডে বিস্কুট খাওয়া নারী

মানুষের খাদ্যাভ্যাস

আমান্ডিনস দে প্রোভেন্স, 1900 সালে লিওনেটো ক্যাপিয়েলোর তৈরি পোস্টার
কেক খাওয়া একটি মেয়ে

অনেক বাড়িতেই খাবার প্রস্তুতির জন্য একটি বড় রান্নাঘর থাকে। এছাড়া ডাইনিং রুম, ডাইনিং হল বা খাওয়ার জন্য অন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা থাকতেও পারে।

বেশিরভাগ সমাজে রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান এবং অন্যান্য খাদ্য বিক্রেতাও রয়েছেন যাতে মানুষ বাড়ির বাইরে থাকলে, খাবার প্রস্তুত করার সময় থাকলে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের সময় খাবার খেতে পারে।[১] সর্বোচ্চ স্তরে এই স্থানগুলি "বিশ্বব্যাপী মহাজোট ও গূঢ় অর্থপূর্ণ কাহিনীর উপনেত্র" হয়ে উঠে।[২] বনভোজন, পোটলাক, এবং খাদ্য উৎসব, এইসব ক্ষেত্রে খাওয়াই হল আসলে একটি সমাবেশের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে খাদ্য এবং পানীয় অংশগ্রহণকারীদের জন্য পরিবেশন করা হয়।

মানুষ সাধারণত দিনে দুই থেকে তিনবার খাবার খায়। খাবার মধ্যস্থ সময়ে কিছু হাল্কা খাবার ‍(স্ন্যাকস) খাওয়া যেতে পারে। গ্রেট ব্রিটেনের ডাক্তাররা সাধারণত দিনে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা অন্তর তিনবার আহারের পরামর্শ দেন (আহার প্রতি ৪০০-৬০০ কিলো ক্যালোরি)। একজন সাধারণ মানুষের জন্য দিনে তিনবার সুষ্ঠ আহার (১৮০০ থেকে ২০০০ কিলো ক্যালোরি) হল যথেষ্ট (যথা : অর্ধেক থালা শাক-সবজি, ১/৪ অংশ প্রোটিন যুক্ত মাংসজাত খাদ্য, ১/৪ অংশ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত পাস্তা বা ভাত )

শরিয়া আইনের অধীনে, রমজানের সময় দিনের আলোয় মুসলিম প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আহার গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়।[৩][৪][৫]

মানুষদের মধ্যে উন্নয়ন

একটি রেস্টুরেন্ট কাঁটা চামচ দিয়ে খাওয়া
উজবেকিস্তান খাদ্য গ্রহণের পরম্পরাগত উপায়
হাশি (চপস্টিক্স) -এর সঙ্গে একটি মেয়ে
ইথিওপীয়দের হাত দিয়ে খাওয়া

নবজাতক শিশু প্রাপ্তবয়স্ক খাবার খেতে পারে না। তারা শুধুমাত্র মাতৃ স্তন দুগ্দ্ধ খেয়ে বাঁচে।[৬] যদিও কিছু দুই তিন মাস বয়সী বাচ্চাদের সেদ্ধ খাবার খাওয়ানো হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশু ছয় বা সাত মাস বয়সী না হওয়া পর্যন্ত তাদের বয়স্কদের খাবার দেওয়া হয় না। গুটিকতক দাঁত ও অপরিণত পাচকতন্ত থাকার কারণে তাদের শুধু সেদ্ধ বাচ্চাদের খাবার দেওয়া হয়। ৮ থেকে ১২ মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের পাচকতন্ত্র উন্নত হয় ও অনেক শিশু হালকা খাবারও খেতে শুরু করে। যদিও তাদের খাবার সীমাবদ্ধ থাকে কারণ সেই সময় পর্যন্ত তাদের পেষকদন্ত ও শ্বাদন্ত থাকে না এবং কৃন্তক দন্তও কম থাকে। ১৮ মাসের মধ্যে বাচ্ছাদের যথেষ্ট সংখ্যক দাঁত গজায় এবং পাচকতন্ত্রও অনেক পরিণত হয় ফলে তারা অনেক প্রাপ্তবয়স্ক খাবারও খেতে পারে। খাবার খেতে শেখ অধিকাংশ শিশুদের কাছেই একটি জটিল প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায় এবং সাধারণত ৫-৬ বছর বয়স না হয় পর্যন্ত তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে খেতে শেখে না।

খাওয়ার ভঙ্গি

পৃথিবীতে অঞ্চলভেদে ও সংস্কৃতিভেদে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভঙ্গিতে আহার গ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন, মধ্য-পূর্বীয় দেশগুলিতে মাটিতে বসে আহার গ্রহণ প্রচলিত এবং মনে করা হয়, মাটিতে বসে খাওয়া টেবিলে বসে খাওয়ার চেয়ে বেশি স্বাস্থকর।[৭][৮]

প্রাচীন গ্রিকরা সমাহার নামক একধরনের উদযাপনে হেলান দিয়ে আহার গ্রহণের ভঙ্গি কে প্রচলিত করে, পরে প্রাচীন রোমানরাও এই ভঙ্গিকে গ্রহণ করে। প্রাচীন হিব্রুরাও তাদের প্রথাগত বাৎসরিক উদযাপনে এই ভঙ্গি গ্রহণ করে।

পীড়ণকর অত্যধিক আহার

পীড়ণকর অতিরিক্ত আহার বা আবেগগত আহার হল নেতিবাচক আবেগের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ অতিরিক্ত খাওয়ার ঝোঁক।[৯] পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা গেছে উদ্বেগের ফলে স্বাভাবিক ওজনযুক্ত লোকেদের খাদ্যগ্রহণ পায় এবং মোটা লোকের খাদ্যগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।[১০]

অনেক গবেষণায় দেখা যায় যে অতিরিক্ত ওজন যুক্ত ব্যক্তিরা আবেগের প্রতি বেশি প্রতিক্রিয়াশীল এবং কোনোভাবে পীড়িত হলে স্বাভাবিক ওজনের লোকেদের চেয়ে অতিরিক্ত আহার গ্রহণের প্রবণতাও বেশি। এছাড়া, দেখা গেছে যে স্থূল ব্যক্তিরা স্বাভাবিক ওজন ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি ঘন ঘন তীব্র ভাবে নেতিবাচক আবেগ দ্বারা আক্রান্ত হন।[১১]

লোয়ে এবং ফিশারের গবেষণা স্বাভাবিক ও বেশি ওজনযুক্তযুক্ত কলেজ ছাত্রীদের মানসিক প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং আবেগগত আহারের তুলনা করে। গবেষণায় মোটা ব্যক্তিদের অতিরিক্ত আহার গ্রহণের প্রবণতা নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে এই গবেষণা শুধু হালকা খাবারের (স্ন্যাকস) জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ এর থেকে প্রমাণ হয় যে মোটা ব্যক্তিরা বেশি আহার গ্রহণের চেয়ে আহার মধ্যস্ত হালকা খাবার (স্ন্যাকস) খাওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহী । লোয়ে এবং ফিশারের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেন যে মোটা ব্যক্তিরা প্রায়ই অনেকের সাথে খাবার খায় এবং অন্যান্য মানুষের উপস্থিতির কারণে দুঃখ হ্রাসের কারণে বেশি খেতে পারে না। আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে যে সামাজের কাছে কাঙ্ক্ষিত হওয়ায় খাবার খাওয়ার সময় অন্যদের চেয়ে বেশি খেতে পারে না। আবার বিপরীতভাবে, হালকা খাবার বা স্ন্যাকস সাধারণত একা খাওয়া হয়, ফলে এটি তারা বেশি গ্রহণ করে।[১১]

ক্ষুধা ও তৃপ্তি

অনেক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া রয়েছে যা আহার শুরু এবং বন্ধ নিয়ন্ত্রণ করে। খাদ্য গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ একটি হল শারীরবৃত্তীয় জটিল, প্রেরিত আচরণগত ব্যবস্থা। বিভিন্ন হরমোন যেমন কোলাসিস্টোকাইনিন (Cholecystokinin), বোম্বেসিন (Bombesin), নিউরোটেনসিন (Neurotensin), এনোরেকটিন (anorectin), ক্যালসিটোনিন (calcitonin), এন্টারোস্ট্যাটিন (enterostatin), লেপটিন (Leptin) এবং কর্টিকোট্রপিন-রিলিজিং-হরমোন (corticotropin-releasing hormone) প্রভৃতি খাদ্য গ্রহণ কমাতে পারে।[১২][১৩]

সূচনা

একটি জার্মান শেফার্ড কুকুরছানা মানুষের হাত থেকে খাবার খাচ্ছে

বিভিন্ন সংকেত ক্ষুদার সূচনা করে যেমন পরিবেশগত সংকেত, পাকতন্ত্র থেকে সংকেত, এবং বিপাক সংকেত। পরিবেশগত সংকেত শরীরের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় থেকে আসে। এছাড়া খাবারের গন্ধ , চিন্তা , খাবারের থালা দেখা এমনকি খাবার সম্পর্কে কথা শুনলেও ক্ষুদার উদ্রেক হতে পারে।[১৪] পাচকতন্ত্র থেকে গ্রেলিন (ghrelin) নামক পেপটাইড হরমোন ক্ষুদার উদ্রেক করে । গ্রেলিন হরমোন ক্ষুদার উদ্রেকের জন্য মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় যে ব্যক্তি ক্ষুদার্থ আছে।[১৫]

পরিবেশগত সংকেত বা গ্রেলিনই ক্ষুধা উদ্রেককারী একমাত্র সংকেত নয় এছাড়াও অন্যান্য বিপাকীয় সংকেতও আছে।আহার মধ্যস্থ সময়ে শরীর দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টিভাণ্ডার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে থাকে,[১৪] এবং যখন কোশের গ্লুকোজের মাত্রা কমতে থাকে (glucoprivation), শরীরে ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টি হয়, এছাড়া কোশের লিপিদের মাত্রাও হ্রাস (lipoprivation) পেলেও একই ঘটনা ঘটে।[১৪] মস্তিষ্ক এবং যকৃত উভয় বিপাকীয় জ্বালানির মাত্রা নিরিক্ষনে রাখে। মস্তিষ্ক রক্তে ও মস্তিষ্কে গ্লুকোপ্রিশন অর্থাৎ কোশীয় গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস নজরে রাখে অন্যদিকে লিভার বাকি শরীরের লিপোপ্রিভেশন এবং গ্লুকোপ্রাইভেশন উপর নজর রাখে।[১৬]

পরিসমাপ্তি

মাথা, পেট, অন্ত্র এবং লিভার থেকে উদ্ভূত কিছু স্বল্পমেয়াদী সংকেত রয়েছে যারা পরিতৃপ্তি বা পূর্ণতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। পরিতৃপ্তি বা পূর্ণতার দীর্ঘমেয়াদী সংকেত আসে মেদজ কলা ।[১৪] খাবারের স্বাদ ও গন্ধ স্বল্পমেয়াদী পরিতৃপ্তি বা পূর্ণতার অনুভূতি সৃষ্টি করে যা শরীরকে খাওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। আমাদের পেটে ও অন্ত্রেও কিছু স্নায়ু রয়েছে যেগুলি পেট ভর্তি হয়ে গেলে মস্তিষ্কে নির্দেশ পাঠায় । ডিউডেনাম বা ক্ষুদ্রান্ত থেকে ক্ষরিত কোলেসিস্টোকাইনিন যা পেট ভর্তি হওয়ার নির্দেশ পাঠায় মস্তিষ্কে, তা আবার পেট খালি হওয়ার হারও নিয়ন্ত্রণ করে।[১৭] ক্ষুদ্রান্তে থেকে ক্ষরিত পেপটাইড YY 3-36 নামক হরমোনও পূর্তি সংকেত হিসাবে কাজ করে।[১৮] এছাড়া ইনসুলিনও পূর্তি সংকেত হিসাবে কাজ করে । মস্তিষ্ক রক্তে ইনসুলিন এর মাত্রা যাচাই করে এবং অনুমান করে কোশ দ্বারা পুষ্টি শোষিত হচ্ছে ও পেট ও ভর্তি হচ্ছে । দীর্ঘমেয়াদী পূর্তি সংকেত আসে মেদজ কলায় সঞ্চিত হওয়া মেদ থেকে , যেখান থেকে লেপটিন নামক হরমোন ক্ষরিত হয় যা ক্ষুদা নিবারণ করে। এছাড়া মেদজ কোলা থেকে নির্গত পূর্তি সংকেত গুলিই স্বল্পমেয়াদি সংকেত গুলিকে নিয়ন্ত্রিত করে ।[১৪]

মস্তিষ্কের ভূমিকা

মস্তিষ্কের স্টেম বা নিম্ন মস্তিষ্কতে স্নায়ু সংযোগ থাকায় মস্তিস্ত ক্ষুদা ও পূর্তি সংকেত গুলি শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলি থেকে গ্রহণ করতে পারে।[১৪] ওই বিষয়টি জানার জন্য ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালানো হয় । যেসব ইঁদুর গুলির মস্তিষ্কের স্টেম বা ডাটা অংশের মোটর স্নায়ু মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিসফেয়ারের স্নায়ুতন্ত্র থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল তারা আহার গ্রহণে অসমর্থ ছিল , এর পরিবর্তে তাদের তরল হিসাবে খাদ্য গ্রহণ করতে হত।[১৪] এই গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় মস্তিষ্কের স্টেম তথা মস্তিষ্ক আসলেই খাদ্য গ্রহণে একটি গুরুর্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হাইপোথালামাসে থেকে নিঃসৃত দুটি পেপটাইড যথা মেলানিন কন্সেনট্রেটিং হরমোন (এম.সি.এইচ) এবং অরেক্সিন, যারা ক্ষুদার উদ্রেক ঘটায়।যেখানে ক্ষুধা উৎপাদনে এম.সি.এইচ এর ভূমিকা বেশি ।ইঁদুরের দেহে এম.সি.এইচ ক্ষুদার উদ্রেক ঘটায় কিন্তু মিউটেশনের ফলে এর বেশি ক্ষরণ হলে অতিরিক্ত আহার গ্রহণ ও স্থূলতা ঘটায়।[১৯] অন্যদিকে অরেক্সিন আহার গ্রহণ ও ঘুমের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এছাড়াও হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত অন্যান্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত হরমোন গুলি হলো নিউরোপেপটাইড Y (এন.পি.ওয়াই) এবং আগুটি-সম্পর্কিত প্রোটিন (এ.জি.আর.পি)।[১৪]

হাইপোথালামাসে পূর্তি সংকেত লেপ্টিন দ্বারা উদ্দীপিত হয়। লেপ্টিন আর্কুয়েট নিউক্লিয়াসের স্নায়ুকে নিশানা বানায় এবং এম.সি.এইচ এবং অরেক্সিন কে স্তিমিত করে । এছাড়া আর্কিউট নিউক্লিয়াসে আরও দুটো পেপাইডাইড রয়েছে যারা ক্ষুধা দমন করে যথা কোকেইন-এন্ড-এম্ফেটামাইন-রেগুলেটেড ট্রান্সক্রিপ্ট (CART) এবং α-MSH (α-মেলানোসাইট-স্টিমুলেটিং হরমোন)।[১৪]

ব্যাধিসমূহ

শারীরিকভাবে, আহার গ্রহণ সাধারণত ক্ষুধা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে কিছু শারীরিক ও মানসিক অবস্থা রয়েছে যা ক্ষুধা বা আহার গ্রহণের ইচ্ছাকে প্রভাবিত করতে পারে এছাড়া স্বাভাবিক খাদ্যাভাসে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে যাদের মধ্যে বিষণ্নতা, খাদ্য এলার্জি, রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণ, বুলিমিয়া, অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা, পিটুইটারি গ্রন্থির ঠিকভাবে কাজ না করা , অন্ত্রের সমস্যা , অসুস্থতা এবং খাওয়ার ব্যাধি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পুষ্টিকর খাদ্যের দীর্ঘস্থায়ী অভাব বিভিন্ন অসুস্থতার কারণ হতে পারে , এবং অবশেষে যা অনাহারে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং যখন এটি একটি বৃহৎ এলাকা জুড়ে ঘটে তখন তাকে দুর্ভিক্ষ বলে ।

যদি খাওয়া এবং পান করা সম্ভবপর না হয়, যা প্রায়সই অস্ত্রোপচারের ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে ছিদ্রপথে বা অন্যপথের মাধ্যমে শরীরে আহার প্রেরণ[২০] বা পারেনটেরাল পুষ্টি প্রেরণ (জটিল রাসায়নিকের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান পাঠানো) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ।[২১]

অন্যান্য প্রাণী

স্তন্যপায়ী প্রাণী

একটি ছোট চঞ্চুবিশিষ্ট একিডনা পোকামাকড় খুঁজছে

দেহের উচ্চ তাপমাত্রা বজায় রাখতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন তাই স্তন্যপায়ীদের বেশি বেশি পুষ্টি যুক্ত খাদ্যের প্রয়োজন। সর্বপ্রথম স্তন্নপায়ীরা সম্ভবত শিকারি ছিল এবং বিভিন্ন প্রজাতি তাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্যে বিভিন্ন ভাবে অভিযোজিত হয়েছে।

কিছু প্রাণীরা অন্য প্রাণীদের খেয়ে জীবনধারণ করে - এটি হল মাংসাশী খাদ্যরীতি (কীটপতঙ্গ খাওরা জীবেরও এর অন্তর্গত), আবার তৃণভোজীরা বিভিন্ন উদ্ভিদ যেগুলিতে জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন সেলুলোজ বর্তমান, খেয়ে বেঁচে থাকে, তৃণভোজী প্রাণীদের আবার বিভিন্ন উপশ্রেণীতে ভাগ করা যায় যেমন - গ্রানিভরী (বীজ খাওয়া), ফলিভরী (পাতা খাওয়া), ফ্রুগীভরী (ফল খাওয়া), নেক্টারিভরী (মকরন্দ খাওয়া), গামীভরী (গাছ থেকে নির্গত আঁঠা ও ক্ষার খাওয়া) এবং মাইকোফাগি (ছত্রাক খাওয়া)। তৃণভোজী প্রাণীদের পাকনালী হল বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বাসস্থানে যারা বিভিন্ন জটিল যৌগ কে ভেঙে প্রাণীটির পরিপাকযোগ্য করে তোলে, এই ব্যাকটেরিয়া গুলি সাধারণত বহুপ্রকোষ্ঠযুক্ত পাকস্থলী কিংবা সিকামে বসবাস করে।.[২২] আবার কিছু প্রাণী কপ্রোফেগাস হয় অর্থাৎ যারা একবারে পরিপাক না হওয়া পুষ্টিগুলি গ্রহণের জন্য নিজেদের মলকে পুনরায় খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।[২২]:131-137 একটি সর্বভুক প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় প্রকার খাদ্যই গ্রহণ করে। মাংসাশী স্তন্যপায়ীদের সাধারণত সহজ পাকনালী থাকে কারণ প্রোটিন , লিপিড ও অন্যান্য খনিজ যেগুলি মাংসের মধ্যে পাওয়া যায় সেগুলি তুলনামূলক কম জটিল পদ্ধতিতেই পরিপাক করা যায়, এক্ষেত্রে বালিন তিমিতে ব্যাতিক্রম দেখা যায় , তৃণভোজীদের মতো এদের বহুপ্রকোষ্ঠযুক্ত পাকস্থলীতেও গাট ফ্লোরা নামক অণুজীব বসবাস করে।[২২]

একটি প্রাণীর আকার তার খাদ্যরীতি নির্ধারণে (অ্যালেন এর নিয়ম) ভূমিকা রাখে। যেহেতু ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের তাপ উৎপন্নের পরিমান চেয়ে তাপ বিকিরণের ক্ষেত্র বেশি তাই তাদের বেশি শক্তির প্রয়োজন এবং মেটাবলিক রেটও বেশি হয়। যেসব স্তন্যপায়ীদের ওজন ১৮ আউন্স (৫১০ গ্রাম বা ১.১ পাউন্ড) -এর কম তারা সাধারণ ধীর ও জটিল পাচক প্রক্রিয়া সহ্য করতে পারে তাই বেশিরভাগই পতঙ্গভুক হয়। অন্যদিকে বৃহৎ স্তন্যপায়ীরা স্বল্প তাপের অপচয়ে বেশি পরিমান তাপ উৎপন্ন করতে পারে এছাড়া তারা ধীর সংগ্রাহী প্রক্রিয়া ( মাংসাশী যাদের বৃহৎ মেরুদন্ড বর্তমান ) ও ধীরগতি সম্পন্ন পাচক প্রক্রিয়াও (তৃণভোজী) সহ্য করতে পারে।[২২] আবার যেসব স্তন্যপায়ী যাদের ওজন ১৮ আউন্স (৫১০ গ্রাম বা ১.১ পাউন্ড) -এর বেশি তারা নিজেদের শরীরের পুষ্টি যোগানের মতো যথেষ্ট পরিমান কীট -পতঙ্গ জোগাড় করতে পারে না। শুধুমাত্র যেসব স্তন্যপায়ীরা কীট -পতঙ্গ এর বড় বসতি পিঁপড়ে, উইপোকা) খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে তারাই একমাত্র পতঙ্গভুক স্তন্যপায়ী ।[২২]

কিছু সস্তন্যপায়ীর সর্বভুক হয় এবং বিভিন্ন ধরনের মাংসাশী ও তৃণভোজী রীতি প্রদর্শন করে , তবে সাধারণত একরকম খাদ্যরীতির ওপরেই বেশি ঝোঁক প্রদর্শন করে। যেহেতু উদ্ভিদ ও প্রাণীজ খাদ্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পাচিত হয় তাই কোনো একটি অন্যটির থেকে বেশি পছন্দ করা হয় , যেমন ভালুকের বেশিরভাগ প্রজাতি প্রধানত মাংসাশী হলেও কিছু প্রজাতি তৃণভোজীও হয়।[২৩] এদের সাধারণত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করে হয় : মেসোকার্নিভরী (৫০ থেকে ৭০ শতাংশ মাংস খায় ) , হাইপারকার্নিভরী ( ৭০ শতাংশ ও তার বেশি মাংস খায়) এবং হাইপোকার্নিভরী (৫০ শতাংশ বা তার কম মাংস খায় ) । হাইপোকার্নিভরীদের খাদ্য পেষাই এর জন্য ভোঁতা ও ত্রিভুজাকৃতি ছেদক দাঁত থাকে। হাইপারকার্নিভরীদের মোচাকৃতি দাঁত থাকে ও কাটার জন্য ধারালো ছেদক দাঁত থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে হাড় চুরমার করার মতো শক্তিশালী থাবাও থাকে, যা হাইনার ক্ষেত্রে হাড় চিবিয়ে খেতে সাহায্য করে। আবার বড়ো দাঁতওয়ালা বাঘের (Machairodontinae) লম্বা তলোয়ারের মতো দাঁত থাকে।[২৩]

শারীরবৃত্তীয়ভাবে কিছু মাংসাশী উদ্ভিদজাতীয় খাবার খায় আবার কিছু শাকাশিও মাংস খায় যা অভ্যাসগত ভাবে সর্বভুক বানায় কিন্তু শারীরবৃত্তীয়ভাবে এটি Zoopharmacognosy এর কারণেও হতে পারে (কিছু প্রাণীরা নিজেদের শরীরের ক্ষতিকর বস্তুর প্রভাব কমানোর জন্য অনেক সময় তাদের জন্য অখাদ্য বস্তুও খেতে পারে ) । যদি কোনো প্রাণী উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় থেকেই শক্তি ও পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে তবেই তাকে সর্বভুক বলা হয়। তাই এক্ষেত্রে ঐসব প্রাণীদের যদিও তাদের খাদ্যরীতির বাইরের খাদ্য গ্রহণ করতে পারে তবুও তাদের শুধুই মাংসাশী বা শাকাশি হিসাবেই শ্রেণীভুক্ত করা হবে। উদাহরণস্বরূপ , বহু স্থানেই এটি লিপিবদ্ধ যে জিরাফ , উট ও গোমহিষাদি পশু কিছু বিশেষ খনিজ ও পুষ্টি গ্রহণের জন্য হাড় চিবিয়ে খায়। এছাড়া বিড়াল মাঝে মাঝে অপাচিত বস্তু যেমন চুলের গোলা শরীর থেকে বার করার জন্য , হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন ত্বরান্বিত করার জন্য বা জোলাপ হিসাবে ঘাস খায়।

কিছু স্তন্যপায়ী পরিবেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিলে মেটাবলিজম স্তিমিত করে শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে হাইবারনেশনে চলে যায়। এর আগে বৃহত্তর প্রাণীরা যেমন : ভালুক , অতিরিক্ত আহার গ্রহণ করে ফ্যাট বা চর্বি সঞ্চয় করে রাখে আর ছোট প্রাণীরা খাবার সংগ্রহ করে সঞ্চয় করে রাখে। মেটাবলিজম কমবার সাথে সাথে হৃদস্পন্ধনও কমে যায় এছাড়া দেহের অভ্যন্তরীন তাপমাত্রারও হ্রাস ঘটে যা কিছু ক্ষেত্রে চারিপার্শিক তাপমাত্রার কাছাকাছি হয়। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরমেরুর কাঠবেড়ালি নিজের দেহের তাপমাত্রা −২.৯ °C (২৬.৮ °F) পর্যন্ত নামিয়ে আনতে পারে যদিও তাদের মাথা ও গলার তাপমাত্রা সর্বদা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অপেক্ষা বেশি থাকে। এছাড়া কিছু গরম পরিবেশের স্তন্নপায়ীরা ক্ষরা বা অতিরিক্ত গরমের সময় গ্রীষ্মঘুম দেয় যেমন: মোটা লেজ বিশিষ্ট বামন লেমুর (Cheirogaleus medius) (মাদাগাস্কার দ্বীপের একজাতীয় ছুঁচালো মুখযুক্ত নিশাচর বানর)।

পাখি

পাখির খাদ্যরীতিতে প্রচুর ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় , যার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল মকরন্দ , ফল , উদ্ভিদ , বীজ , গলিত মাংস বা আবর্জনা এবং বিভিন্ন ছোট প্রাণী এমনকি অন্যান্য পাখিও।[২২] যেহেতু পাখিদের দাঁত থাকে না তাই পাখিদের পাচনতন্ত্র গোটা খাবার হজম করার জন্য অভিযোজিত।[২২]

খাওয়ানোর জন্য চঞ্চুর অভিযোজন

যেসব পাখি বিভিন্ন কৌশলে আহার সংগ্রহ করে বা বিভিন্ন প্রকার খাদ্যতে জীবনধারণ করে তাদের জেনারেলিস্ট বলা হয় , অন্যদিকে যারা সময় ও খাটুনি দিয়ে আহার সংগ্রহ করে বা একটি বিশেষ কৌশল দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে তাদের স্পেশালিস্ট বলা হয়।[২২] পাখিদের খাওয়ার পদ্ধতিও প্রজাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। বিভিন্ন পাখি কুড়িয়ে কুড়িয়ে পোকামাকড় , ফল , বীজ প্রভৃতি খাদ্যবস্তু সংগ্রহ করে। আবার কিছু পাখি গাছের শাখা থেকে আচমকা আক্রমণ করে পোকামাকড় শিকার করে। যেসব পাখিরা কীটপতঙ্গ আহার হিসাবে গ্রহণ করে তারা জৈবিক কীটপতঙ্গ নিধনকারী হিসাবে কাজ করে এবং জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতেও সাহায্য করে।[২২] মিলিত ভাবে পতঙ্গভুক্ পাখিরা বার্ষিক প্রায় 400-500 মিলিয়ন মেট্রিক টন আর্থ্রোপোডা খেয়ে ফেলে।[২২]

মকরন্দভোজী পাখি যেমন হামিংবার্ড, সানবার্ড, লোরিস এবং লোরিকিটস প্রভৃতির ব্রাশের মতো জিহ্বা নিয়ে অভিযোজিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে আবার ফুলেরাও একইভাবে সহ-অভিযোজিত হয়ে ওঠে।[২২] কিউই এবং স্নোরবার্ড তাদের লম্বা চঞ্চু দ্বারা দ্বারা অমেরুদন্ডীদের ওপর নিশানা করে। স্নোরবার্ডের পরিবর্তিত লম্বা চঞ্চু এবং খাদ্যাভ্যাস তাকে পরিবেশের স্থান থেকে আলাদা করে।[২২][২২]

লুন পাখি, সাঁতারু হাঁস , পেঙ্গুঈন এবং ওক পাখি এরা জলের নিচে তাদের ডানা ও পা ব্যবহার করে শিকার করে।[২২] নভঃ শিকারি যেমন মাছরাঙা , সুইল্ডস ও টার্ন পাখিরা তাদের শিকার লক্ষ্য করে ঝাঁপ দেয়। ফ্লেমিংগো , তিন প্রজাতির প্রিওন এবং কিছু হাঁসেরা ফিল্টার ফিডিং পদ্ধতির মাধ্যমে শিকার করে।[২২][২২] রাজহংসী ও ড্যাবলিং হাঁসেরা সাধারণত মাঠে চরে আহার গ্রহণ করে।

কিছু প্রজাতির ফ্রিগেট পাখি , গাংচিল[২২] ও স্কুয়াস[২২] অন্যান্য পাখির শিকার চুরি করে নিজে আহার করে। মনে করা হয় এই পদ্ধতি শিকার করা আহারের সাথে সংযুক্ত হয়ে মোট আহারের পরিমান বৃদ্ধি করার জন্যই ব্যবহার করা হয়। গ্রেট ফ্রিগেট পাখিদের ওপর করা একটি গবেষণা দেখায় যে , তারা মাস্কড বুবি পাখি থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ এবং গড়ে মাত্র ৫ শতাংশ আহার চুরি করে।[২২] অন্যান্য পাখিরা ঝাড়ুদার পাখি , তাদের মধ্যে শকুন গলিত মাংস খাওয়াতে পটু অন্যদিকে গাংচিল , কাক ও শিকারের অন্যান্য পাখিরা সুযোগসন্ধানী হয়।[২২]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • উইকিমিডিয়া কমন্সে খাওয়া সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ