গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া

গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলীয় গ্রিন হাউজ গ্যাসসমূহ দ্বারা বিকৃত হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়। এই বিকীর্ণ তাপ ভূপৃষ্ঠে উপস্থিতিতেও বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ফিরে এসে ভূপৃষ্ঠের তথা বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।[১][২]

শক্তির উৎস (সূর্য), পৃথিবীর উপরিভাগ, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলমহাশূন্যের মধ্যে শক্তির ক্রমসঞ্চালনের একটি উপস্থাপনা।

মূলত সৌর বিকিরণ দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং ভূপৃষ্ঠ পরবর্তীকালে এই শক্তি দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে অবলোহিত রশ্মি আকারে নির্গত করে। এই অবলোহিত রশ্মি বায়ুমণ্ডলস্থ গ্রিন হাউজ গ্যাসসমূহ দ্বারা শোষিত হয়ে অনেক বেশি শক্তি আকারে ভূপৃষ্ঠে ও বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে পুনঃবিকিরিত হয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে সাধারণত কাচ নির্মিত গ্রিন হাউজ তৈরি করে উদ্ভিদ উৎপাদন করার পদ্ধতি অনুসরণ এই প্রক্রিয়ার নামকরণ করা হয়। একটি গ্রিন

হাউজে সৌর বিকিরণ কাচের মধ্য দিয়ে গ্রিন হাউজটিকে উত্তপ্ত র াখে,এখানে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে গ্রিন হাউজটিকে বাতাসের প্রবাহ হ্রাস করে উত্তপ্ত বাতাস কাচের কাঠামোর মধ্যে পরিচলন ব্যতিরেকে ধরে রাখতে পারে।[২][৩][৩][৪]

সূর্য থেকে পৃথিবীর মতো দূরত্বে যদি কোনো আর্দশ তাপ-সুপরিবাহী কৃষ্ণবস্তু (আর্দশ ভৌত পদার্থ যা তার উপর আপতিত সকল তড়িচ্চুম্বকীয়

বিকিরণ শোষণ করতে পারে) থাকত তাহলে বস্তুটির তাপমাত্রা হত প্রায় ৫.৩° সেলসিয়াস। যেথপৃথিবী িবী তার দিকে আগত সৌররশ্মির ৩০ শতাংশ প্রতিফলন করে[৫][৬] সেহেতু, এই আর্দশ গ্রহের কার্যকর তাপমাত্রা (একটি কৃষ্ণবস্তুও এই সমপরিমাণ তাপমাত্রা বিকিরণ করবে) হবে প্রায় -১৮° সেলসিয়াস।[৭][৮] এই কল্পিত গ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩৩° সেলসিয়াসের নিচে যেখানে পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রকৃত তাপমাত্রা প্রায় ১৪° সেলসিয়াস।বায়ুমণ্ডলেরডলের কারণে যে প্রক্রিয়া পৃষ্ঠের প্রকৃত তাপমাত্রা ও কার্যকর তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে তাইিন ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া।[৯]

পৃথিবীতে এই প্রাকৃতিক গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া প্রাণের সৃষ্টি করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু, মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিশেষত, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত দহন এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে প্রাকৃতিক গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া তীব্রতর হচ্ছে ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।[১০]

ইতিহাস

গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার অস্তিত্বের পক্ষে ১৮২৪ সালে জোসেফ ফুরিয়ার যুক্তি পেশ করেন। এই যুক্তি ও গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার অস্তিত্বের প্রমাণ পরবর্তীকালে আরও জোরদার করেন ক্লদ পৈলিওলেট ১৮২৭ ও ১৮৩৮ সালে এবং জন টিনডাল পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ দ্বারা ১৮৫৯ সালে। স্যভান্তে আরহেনিয়াস ১৮৯৬ সালে আরও সম্পূর্ণরূপে নিরূপণ করেন।[১১][১২]আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৯১৭ সালে লিখেছিলেন "জীবাশ্ম জ্বালানির অবারিত দহন হচ্ছে এক শ্রেণির গ্রিন হাউজ

প্রতিক্রিয়া এবং এর চূড়ান্ত ফলাফল হচ্ছে গ্রীনহাউজটি ণিরশ্রেণষঘরে ্ণ-ঘরে পরিণত হয়।"তিনি এছাড়াও শক্তির উৎসগুলো যেগুলো যেমন সৌর শক্তি ব্যবহারের জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন।[১৩][১৪]

ক্রিয়াকৌশল

আমাদের পৃথিবী সূর্য হতে শক্তি গ্রহণ করে অতিবেগুনি রশ্মি, দৃশ্যমান আলোঅবলোহিত রশ্মি রূপে যার বেশিরভাগই বায়ুমণ্ডল কর্তৃক শোষিত না হয়ে পৃথিবীতে ফিরে যায়। প্রাপ্ত শক্তির মোট অংশ বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে থাকে এবং যার প্রায় ৫০ শতাংশ পৃথিবী পৃষ্ঠ কর্তৃক শোষিত হয়। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত

হবার দরুন উষ্ণ অবলোহিত রশ্মি বিকিরণ করে যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রধান শোষোণকৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের য়ুলনাই অনেক দীর্ঘ হয়।বেশির ভাগ তাপীয় বিকিরণই বায়ুমণ্ডল কর্তৃক শোষিত হয় ওপরে মুখীচেিমুখে উভয় দিকে পুন:বিকিরিত হয়।নিম্নাভিমুখী বিকিরণ পৃথিবী পৃষ্ঠ কর্তৃক শোষি‌ত হয়। সৃষ্ট এই দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপীয় বিকিরণ তাপমাত্রার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটায় যেন মনে হয় বায়ুমন্ডল অনুপস্থিত।

গ্রিন হাউজ গ্যাসসমূহ

পৃথিবীতে প্রধান যে চারটি গ্যাস গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী তাদের শতকরা পরিমাণ হচ্ছেঃ[১৫]

• জলীয় বাষ্প ৩৬-৭০%

কার্বন ডাই অক্সাইড ৯-২৬%

মিথেন ৪-৯%

ওজোন ৩-৭%

গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য মেঘ হচ্ছে প্রধান অগ্যাসীয় উপাদান যা অবলোহিত রশ্মি শোষণ ও নির্গত করে।[১৬]

জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা

মাওনা লোয়া মানমন্দির কর্তৃক মাপা বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্বের কিলিং কার্ভ.

মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দ্বারা গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়াকে আরও জোরালো করা বর্ধিত (অথবা মানুষ সৃষ্ট প্রভাব) গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া নামে পরিচিত।[১৭] মানুষ সৃষ্ট এইসব রশ্মিবিকিরণকারীর বৃদ্ধি প্রধা বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি করছে।[১৮] জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আন্তঃসরকার পরিষদ কর্তৃক করা সর্বশেষ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,"বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ পর্যবেক্ষিত গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি খুব সম্ভব মানুষ সৃষ্ট গ্রীনহাউজ গ্যাসের ঘনত্বের বৃদ্ধির জন্য ঘটেছে।"[১৯]জীবাশ্ম জ্বালানীর দহন ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড যেমনযেমন সিমেন্ট উৎপাদন এবং উষ্ণপ্রধান অঞ্চলের বন উজাড় দ্বারা কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়।[২০]মাওনা লোয়া মানমন্দির কর্তৃক একটি প্রতিবেদনে দেখায় যে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ৩১৩ পিপিএম (কণা প্রতি দশ লক্ষে)[২১] যা ছিল ১৯৬০ সালে তা বেড়ে গিয়ে ৩৮৯ পিপিএম হয় ২০১০ সালে।এটা মে ৯,২০১৩ তে ৪০০ পিপিএম এ পৌঁছায়।[২২] বর্তমানে পর্যবেক্ষিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ চরম অবস্থা (~৩০০ পিপিএম) ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বরফ গলনের উপাও অনুযায়ী।[২৩] বৈশ্বিক জলবায়ুর উপর কার্বন ডাই-অক্সাইডের দহন ও উৎপাদনের ফলাফল হচ্ছে একটি বিশেষ কারণ গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়ার জন্য যা প্রথম ১৮৯৬ সালে বর্ণনা করেছিলেন স্যভান্তে আরহেনিয়াস এবং এছাড়াও একে ক্যালেন্ডার এফেক্টও বলা হোত।

বাস্তব গ্রীনহাউজ

আরএইচএস হুইচলে অবস্হিত একটি আধুনিক গ্রীনহাউজ

বায়ুমন্ডলীয় গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া যার নামকরণ করা হয়েছে গ্রীনহাউজের সাথে সাদৃশ্য রেখে যা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে উষ্ণ হয়।কিন্ত,যে প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডল তাপ ধরে রাখে তা আলাদা।[২৪]প্রাথমিকভাবে একটি গ্রীনহাউজ শোষিত তাপ কাঠামোর দ্বারা পরিচলনের মাধ্যমে ছেড়ে না দিয়ে ধরে রাখে।গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া পৃথিবীকে উওপ্ত করে কারণ গ্রীনহাউজসমূহ নির্গমরত বিকীর্ণ শক্তি শোষণ করে এবং তার কিছু অংশ আবার পুন:বিকিরণ করে পৃথিবীর দিকে।সূর্যালোক অতিক্রম করতে পারে এমন যেকোন উপাদান সাধারণত কাচ বা প্লাস্টিক দিয়ে গ্রীনহাউজ তৈরি করা হয়।এটা প্রধাণত উওপ্ত হয় কারণ সূর্যালোক এর মধ্যকার ভূপৃষ্ঠকে উওপ্ত করে যা পরবর্তীতে গ্রীনহাউজের মধ্যকার বাতাসকে উষ্ণ করে।গ্রীনহাউজের বাইরের পরিবেশে ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী উষ্ণ বাতাস উপরের দিকে উঠে শীতল বাতাসের সাথে মিশ্রিত হয় যেখানে এমনটা না হয়ে গ্রীনহাউজের মধ্যকার বাতাস উষ্ণ হতেই থাকে কারণ তা গ্রীনহাউজের মধ্যে আটকান অবস্থায় থাকে।গ্রীনহাউজের ছাঁদের কাছাকাছি একটা জানালা খুলে এটা দেখানো যায় তাপমাত্রা যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পায়।এটি পরীক্ষামূলকভাবে (আর.ডাবলু.উড,১৯০৯) দেখানো হয়েছে যে একটি গ্রীনহাউজ যার আচ্ছাদন খনিজ লবণের (যার মধ্য দিয়ে অবলোহিত রশ্মি অতিক্রম করতে পারে) তা কাছাকাছি কাচের আচ্ছাদনের অপর একটি গ্রীনহাউজকে উওপ্ত করে।[৩] সুতরাং,গ্রীনহাউজের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে শীতলকারীর পরিচলন রোধ করা।[৪][২৫]গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়ায় বরং বাতাসের চলাচল রোধ করে তাপ ধরে রাখে এবং গ্রীনহাউজ গ্যাসসমূহ তার শোষিত শক্তির কিছু অংশ ভূপৃষ্ঠের দিকে পুন:বিকিরণ করে পৃথিবীকে উওপ্ত করে।এই প্রক্রিয়া বাস্তব গ্রীনহাউসের মধ্যেও বিদ্যমান,কিন্তু তা তুলনামূলকভাবে গুরুত্বহীন।

পৃথিবীর বাইরে গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া

সৌরজগৎতে মঙ্গল, শুক্র,ও টাইটান (শনির উপগ্রহ) এ গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া প্রলক্ষিত হয় যার মধ্যে শুক্রতে বিশেষ করে বেশি কারণ এর বায়ুমন্ডল প্রধাণত কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে গঠিত।[২৬] টাইটান বিপরীত-গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে যেখানে এর বায়ুমন্ডল সৌর বিকিরন শোষন করে কিন্তু তা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি বিকিরন করে।[২৭][২৮]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ