টেলিভিশনের ইতিহাস

টেলিভিশনের ধারণা ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে একাধিক ব্যক্তির কাজের মাধ্যমে এসেছে। রেডিও সিস্টেমে চলনশীল চিত্রের প্রথম ব্যবহারিক ট্রান্সমিশনটি যান্ত্রিক ঘূর্ণায়মান ছিদ্রযুক্ত ডিস্ক ব্যবহার করে একটি দৃশ্যকে সময়-পরিবর্তনশীল সংকেতে স্ক্যান করে চিত্রিত করা হয়েছিল, যা মূল চিত্রের অনুমানের ভিত্তিতে পুনর্গঠন করা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে টেলিভিশনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, ছবি স্ক্যান করার ও প্রদর্শনের সর্ব-ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিগুলি আধুনিক হতে থাকে।

একটি পরিবার টিভি দেখছে (১৯৫৮)

কারিগরিভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সংকেত মান ব্যবহার করে বিভিন্ন অঞ্চলে থেকে প্রেরিত চিত্রগুলিতে রঙ যোগ করার জন্য বেশ কয়েকটি ভিন্ন মান তৈরি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশন সম্প্রচার দ্রুত সম্প্রসারিত হয়, যা বিজ্ঞাপন, প্রচার ও বিনোদনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম হয়ে ওঠে।[১]

টেলিভিশন সম্প্রচারগুলি সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে ভিএইচএফ এবং ইউএইচএফ রেডিও সিগন্যাল দ্বারা, পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী উপগ্রহ থেকে মাইক্রোওয়েভ সংকেত দ্বারা, বা কেবল টিভির মাধ্যমে পৃথক গ্রাহকদের কাছে তারযুক্ত ট্রান্সমিশন দ্বারা পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। অনেক দেশ বর্তমানে মূল এনালগ রেডিও ট্রান্সমিশন পদ্ধতি থেকে দূরে সরে গেছে এবং এখন ডিজিটাল টেলিভিশন মান ব্যবহার করে। কিছু দেশ অতিরিক্ত সম্প্রচার বৈশিষ্ট্য প্রদান ও আরও লাভজনক সেবা প্রদানের জন্য রেডিও স্পেকট্রাম ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে। টেলিভিশন প্রোগ্রামিং ইন্টারনেটের মাধ্যমেও প্রেরণ করা যেতে পারে।

টেলিভিশন সম্প্রচারকারীরা সাধারণত বিজ্ঞাপনের অর্থ দ্বারা আয় করে এবং কিছু দেশে গ্রাহকদের থেকে লাইসেন্স ফি নিয়ে অর্থায়িত হয়। কিছু পরিষেবা, বিশেষত কেবল বা স্যাটেলাইট দ্বারা বাহিত পরিষেবাগুলো, অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সদস্যতার দ্বারা অর্থায়িত হয়।

টেলিভিশন সম্প্রচার অব্যাহত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যেমন দীর্ঘ দূরত্বের মাইক্রোওয়েভ নেটওয়ার্ক দ্বারা সমর্থিত, যা বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকায় প্রোগ্রামিং বিতরণের উপযুক্ত। ভিডিও ধারণ পদ্ধতিতে প্রোগ্রামিং সম্পাদনা এবং পরবর্তী ব্যবহারের জন্য পুনরায় সেটি চালানো হয়। ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু প্রদর্শন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার কারণে ভোক্তাদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

যান্ত্রিক টেলিভিশন

১৯ শতকের গোড়ার দিকে ফ্যাকসিমাইল ট্রান্সমিশন সিস্টেমের মাধ্যমে যান্ত্রিকভাবে গ্রাফিক্স স্ক্যান করার পদ্ধতির সূচনা হয়। স্কটিশ উদ্ভাবক আলেকজান্ডার বেইন ১৮৪৩ থেকে ১৮৪৬ সালের মধ্যে ফ্যাসিমাইল মেশিন আবিষ্কার করেছিলেন। ইংরেজ পদার্থবিদ ফ্রেডরিক বেকওয়েল ১৮৫১ সালে এটির একটি কার্যকরী পরীক্ষামূলক সংস্করণ প্রদর্শন করেন। টেলিগ্রাফ লাইনে কাজ করা প্রথম ব্যবহারিক ফ্যাকসিমাইল সিস্টেমটি ১৮৫৬ সালে ইতালীয় ধর্মযাজক জিওভান্নি ক্যাসেলি দ্বারা বিকশিত এবং ব্যবহার করা হয়েছিল।[২][৩][৪]

ইংরেজ বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী উইলবি স্মিথ, ১৮৭৩ সালে সেলেনিয়াম মৌলের ফটোকন্ডাক্টিভিটি আবিষ্কার করেন। এটি ১৮৯৫ সালের প্রথম দিকে ফোন লাইনের মাধ্যমে স্থির ছবি পাঠানোর মাধ্যম হিসেবে পরিচিত টেলিফটোগ্রাফির দ্বার উন্মোচিত করে দেয়। তারপর ইলেকট্রনিক ইমেজ স্ক্যানিং ডিভাইস এবং শেষ পর্যন্ত টিভি ক্যামেরার আবির্ভাব ঘটে। এগুলো স্থির এবং চলনশীল উভয় ধরনের চিত্র গ্রহণে সক্ষম ছিল।

নিপকো ডিস্ক

২৩ বছর বয়সী জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পল জুলিয়াস গটলিব নিপকো ১৮৮৪ সালে বার্লিনে নিপকো ডিস্কের সাথে পরিচিত করিয়েছিলেন।[৫] এটিতে একটি স্পিনিং ডিস্ক যার মধ্যে একটি সর্পিল আকারের গর্ত রয়েছে। এর প্রতিটি গর্ত চিত্রটির প্রতিটি অংশ স্ক্যান করে। তবে তিনি কখনই এই যন্ত্রটির কোনো কার্যকরী মডেল তৈরি করতে পারেন নি।[৫] কনস্ট্যান্টিন পারস্কি ২৪ আগস্ট, ১৯০০ সালে প্যারিসের বিশ্ব মেলায় আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ কংগ্রেসের একটি কাগজে টেলিভিশন শব্দটি আবিষ্কার করেছিলেন। পারস্কির এই শব্দটি ইলেক্ট্রোমেকানিকাল প্রযুক্তি পর্যালোচনা করে এবং নিপকো ও অন্যান্যদের কাজের উল্লেখ করে উদ্ভুত হয়েছিল।[৬]

ইমেজ ট্রান্সমিশনের (ছবি প্রেরণ) প্রথম প্রদর্শন করেছিলেন অগাস্টো বিসিরি। তিনি ১৯০৬ সালে একটি ফোটোগ্রাফ ছবি এক ঘর থেকে আরেক ঘরে প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯১৭ সালে, বেশ কয়েকটি স্বাধীন উদ্ভাবকের অন্যান্য সফল প্রচেষ্টার পরে, তিনি লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি চিত্র প্রেরণ করে প্রদর্শন করেন।

১৯০৯ সালে জর্জেস রিগনাক্স এবং এ. ফোর্নিয়ার দ্বারা প্যারিসে প্রথমবারের মতো তাৎক্ষণিক ছবির ট্রান্সমিশন প্রদর্শিত হয়েছিল। যান্ত্রিক কমিউটারের সাথে পৃথকভাবে তার দ্বারা যুক্ত ৬৪টি সেলেনিয়াম কোষের একটি ম্যাট্রিক্স, বৈদ্যুতিন রেটিনা হিসাবে কাজ করে। রিসিভারে, এক ধরণের কের সেল থাকে যা আলোকে রূপান্তর করে এবং একটি ঘূর্ণায়মান ডিস্কের প্রান্তে সংযুক্ত কয়েকটি কোণীয় আয়না ডিসপ্লে স্ক্রিনে রূপান্তরিত বিমটিকে স্ক্যান করে। একটি পৃথক সার্কিট এগুলোর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধারণার প্রমাণ হিসেবে ৮×৮ পিক্সেল রেজোলিউশনের বর্ণমালার পৃথক অক্ষরগুলি স্পষ্টভাবে প্রেরণ করা হয়েছিল। একটি চিত্র হালনাগাদ করে প্রতি সেকেন্ডে "বেশ কয়েকবার" প্রেরণ করে চলনশীলের অনুরূপ চিত্র নির্মিত হয়েছিল।[৭]

১৯১১ সালে, বরিস রোজিং ও তার ছাত্র ভ্লাদিমির জোওরিকিন একটি সিস্টেম তৈরি করেছিলেন যা একটি যান্ত্রিক মিরর-ড্রাম স্ক্যানার ব্যবহার করে। জোওরিকিনের ভাষায়, এটি তারের উপর দিয়ে "ব্রান টিউব" রিসিভারে সঞ্চালন করে। স্ক্যানারে, "সংবেদনশীলতা যথেষ্ট ছিল না এবং সেলেনিয়াম কোষটি খুব পিছিয়ে ছিল" বলে চিত্রগুলিকে চলনশীল করে তোলা সম্ভব ছিল না।[৮]

১৯১৪ সালের মে মাসে, আর্কিবল্ড লো লন্ডনের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে তার টেলিভিশন সিস্টেমের প্রথম প্রদর্শনী করেন। তিনি তার সিস্টেমকে 'টেলিভিস্তা' নাম দেন। এটি বিশ্বব্যাপী পত্রিকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল এবং এগুলোকে বেতারের মাধ্যমে দেখা শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো হ্যারি গর্ডন সেলফ্রিজকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে তিনি তার প্রতিষ্ঠানে ১৯১৪ সালের বৈজ্ঞানিক ও বৈদ্যুতিক প্রদর্শনীতে টেলিভিস্তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।[৯][১০] আর্কিবল্ড লো-এর উদ্ভাবনে একটি ম্যাট্রিক্স ডিটেক্টর (ক্যামেরা) এবং একটি মোজাইক স্ক্রিন (রিসিভার/ভিউয়ার) ব্যবহার করা হয়েছে। এটিতে একটি বিদ্যুৎ-যান্ত্রিক (ইলেকট্রোমেকানিকাল) স্ক্যানিং যন্ত্র প্রদান করা হয়েছে, যা একটি ঘূর্ণয়মান রোলারকে সেলের সাথে সংযুক্ত করে ক্যামেরাকে বিভিন্ন সংকেত প্রদান করে। রিসিভারেও একটি অনুরূপ রোলার রয়েছে। দুটি রোলার একই সময়ে কাজ করে। এটি ২০ শতকের অন্যান্য টিভি সিস্টেমের বিপরীত ছিল। কিছু ক্ষেত্রে, আধুনিক ডিজিটাল টিভির ৮০ বছর আগে লো-এর কাছে একটি ডিজিটাল টিভি সিস্টেম ছিল। লন্ডনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পরার পর আর্কিবল্ড লো সংবেদনশীল সামরিক কাজে জড়িত হন এবং তাই তিনি ১৯১৭ সাল পর্যন্ত পেটেন্টের কাজ করেননি। "আলোকিক চিত্রের উন্নত বৈদ্যুতিক যন্ত্র" শিরোনামে তার "টেলিভিস্তা" (পেটেন্ট নং ১৯১,৪০৫) অবশেষে ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এটির প্রকাশ সম্ভবত নিরাপত্তার কারণে বিলম্বিত হতে পারে। পেটেন্টে বলা হয়েছে যে স্ক্যানিং রোলারটিতে বিন্যস্ত প্রতিটি সারিতে সেলের সাথে সম্পর্কিত পরিবাহী একটি সারি আছে এবং রোলারটি ঘোরানোর সাথে সাথে প্রতিটি সেলের নমুনা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রিসিভারের রোলারটিও একইভাবে তৈরি করা হয়েছিল। লুপসের রিপোর্টে জানানো হয়, "রিসিভারটি স্টিলের পাতলা স্ল্যাটের মধ্য দিয়ে সমবর্তিত আলোর উত্তরণ দ্বারা চালিত বেশ কয়েকটি সেল দিয়ে গঠিত। রিসিভারের বস্তুটি এবং রোলারটি একটি মোটর দ্বারা চালিত হয়। প্রতি মিনিটে ৩,০০০ আবর্তন এবং আলোর ফলস্বরূপ বৈচিত্রময় আলোকরশ্মি একটি সাধারণ পরিবাহী তারের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় এবং ট্রান্সমিটারটি এই আলোকে একটি চিত্র হিসেবে রূপান্তর করে। পেটেন্টে বলা হয়েছে "প্রতিটি... স্থানের মধ্যে আমি একটি সেলেনিয়াম সেল স্থাপন করেছি"। একটি তরল অস্তরক সেলগুলো ঢেকে রাখা হয়। রোলারটি বিন্যস্ত সারির উপর দিয়ে ঘুরার সময় এই মাধ্যমের মাধ্যমে প্রতিটি সেলের সাথে সংযুক্ত থাকে। লো বলেন, সিস্টেমের প্রধান ঘাটতি হল আলোক তরঙ্গকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য ব্যবহৃত সেলেনিয়াম কোষ, এটি খুব ধীরে কাজ করে যার ফলে অনেকসময় এই প্রক্রিয়ার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।

১৯২৪ সালের আবিস্কারগুলো সংবাদমাধ্যমের অনেক আগ্রহ অর্জন করেছিল।

১৯২৭ সালে, রোনাল্ড ফ্র্যাঙ্ক টিল্টম্যান লু-কে নিজের বইয়ের ভূমিকা লিখতে বলেছিলেন। সেখানে তিনি লো-এর কাজকে স্বীকার করেছিলেন।[১১] পরবর্তীতে তার ১৯৩৮ সালের পেটেন্ট লো-এর মাধ্যমে একটি উত্তাপযুক্ত স্তরে সিজিয়াম ধাতু জমা করার প্রক্রিয়া দ্বারা অর্জিত একটি অনেক বড় 'ক্যামেরা' সেলের ঘনত্ব তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন যা পরবর্তীকালে সেলগুলিতে বিভক্ত করার জন্য আলাদা করা হয়েছিল। এটি বর্তমান প্রযুক্তির মূল অংশ। তবে লো-এর সিস্টেমটি বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত প্রতিফলিত আলোর দ্বারা একটি চিত্র পুনরুৎপাদন করতে এবং একই সাথে আলো এবং ছায়ার ক্রমবিন্যাস চিত্রিত করতে অক্ষমতার কারণে। পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে, এই ধরনের অনেক ধারণা কয়েক দশক পরে কার্যকর হয়, কিন্তু সেই সময়ে এটি অবাস্তব ছিল।

জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৫ সালে তার টেলিভিশন সরঞ্জাম এবং ডামি "জেমস" এবং "স্টুকি বিল"-এর (ডানদিকে) সাথে।

১৯২৩ সালে, স্কটিশ উদ্ভাবক জন লগি বেয়ার্ড নিপকো ডিস্ককে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সম্পূর্ণ টেলিভিশন সিস্টেমের বিষয়ে কল্পনা করেছিলেন। সে সময় নিপকোর একটি পেটেন্ট ছিল, যা সেই সময়ে মোটেই স্পষ্ট ছিল না। গুরুতর অসুস্থতা থেকে মুক্ত হয়ে, তিনি হেস্টিংসে তার প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরি করেছিলেন। ১৯২৪ সালের শেষের দিকে, বেয়ার্ড তার পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য লন্ডনে ফিরে আসেন। ২৫ মার্চ, ১৯২৫ তারিখে, বেয়ার্ড লন্ডনের সেলফ্রিজ ডিপার্টমেন্ট স্টোরে টেলিভিশনে প্রচারিত সিলুয়েট চিত্রগুলির প্রথম প্রকাশ্য প্রদর্শন করেছিলেন।[১২] যেহেতু সেই সময়ে মানুষের মুখগুলিতে সিস্টেমে দেখানোর জন্য পর্যাপ্ত পার্থক্য ছিল না, তাই তিনি ১৯২৫ সালের মাঝামাঝি কাট-আউটগুলি টেলিভিশনে প্রচার করার জন্য মায়াস্বরের একটি বিচিত্রময় প্রতীকী চেহারা তৈরি করেন, যার নাম দেওয়া হয়েছিল "স্টুকি বিল"। "স্টুকি বিল" পরীক্ষায় ব্যবহৃত আলোর বিপরীত দিকের অন্ধকার স্তরের সামনে দীর্ঘ সময় স্থির থাকতে পেরেছিল। ২ শে অক্টোবর, ১৯২৫-এ, হঠাৎ প্রতীকী চেহারার মাথাটি অবিশ্বাস্য স্পষ্ট হয়ে পর্দায় আসে। ২৬ জানুয়ারী, ১৯২৬-এ, তিনি যন্ত্রের মধ্যে রয়্যাল ইনস্টিটিউশনের ৪০ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীকে বাস্তব মানুষের মুখের চিত্র প্রদর্শন করেছিলেন। এটি বিশ্বের প্রথম পাবলিক টেলিভিশন প্রদর্শনী হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। বেয়ার্ডের সিস্টেম চিত্রটি স্ক্যান ও প্রদর্শন উভয়ের জন্য নিপকো ডিস্ক ব্যবহার করেছিল। একটি উজ্জ্বল আলোকিত উপাদান লেন্স সহ ঘূর্ণায়মান নিপকো ডিস্কের সামনে স্থাপন করা হয়েছিল যা একটি স্থির ফটোসেল জুড়ে চিত্রগুলিকে সুইপ করে। ধারণা করা হয় যে এটি একটি থ্যালিয়াম সালফাইড (থ্যালোফাইড) কোষ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থিওডোর কেস দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল, যা উক্ত উপাদান থেকে প্রতিফলিত আলোকে সনাক্ত করে। এটিকে রেডিও দ্বারা একটি রিসিভার ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছিল, যেখানে ভিডিও সংকেতটি প্রথমটির সাথে সমানভাবে চলা অনুরূপ নিপকো ডিস্কের পিছনে একটি নিয়ন বাল্বে প্রয়োগ করা হয়েছিল। নিয়ন বাল্বের উজ্জ্বলতা চিত্রের প্রতিটি স্তরের উজ্জ্বলতার অনুপাতে ভিন্ন ছিল। ডিস্কের প্রতিটি লেন্স পাশ দিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ছবির একটি স্ক্যান লাইন পুনরুৎপাদন করা হয়েছিল। বেয়ার্ডের ডিস্কে ১৬টি লেন্স ছিল, তবুও অন্যান্য ডিস্কগুলির সাথে একত্রে ৩২টি স্ক্যান-লাইন সহ চলমান চিত্র তৈরি করা হয়েছিল, যা একটি মানুষের মুখ স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট। তিনি প্রতি সেকেন্ডে পাঁচ ফ্রেম-রেট দিয়ে শুরু করেছিলেন, যা ক্রমান্বয়ে প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে ১২ ফ্রেম এবং ৩০টি স্ক্যান-লাইন অনুপাতে বৃদ্ধি পায়।

১৯২৭ সালে, বেয়ার্ড ৪৩৮ মাইল (৭০৫ কিমি) লন্ডন এবং গ্লাসগোর মধ্যে টেলিফোন লাইনের মধ্যে সংকেত প্রেরণ করেন। ১৯২৮ সালে, বেয়ার্ডস কোম্পানি (বেয়ার্ড টেলিভিশন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি/সিনেমা টেলিভিশন) লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কের মধ্যে প্রথম আটলান্টিকের ওপারে টেলিভিশন সংকেত পাঠায় এবং প্রথমে জাহাজে সম্প্রচার সংকেত পাঠানো সম্ভব হয়। ১৯২৯ সালে, তিনি জার্মানিতে প্রথম পরীক্ষামূলক যান্ত্রিক টেলিভিশন পরিষেবা চালু হয়। একই বছরের নভেম্বরে, পেথে কোম্পানির বেয়ার্ড এবং বার্নার্ড নাতান ফ্রান্সের প্রথম টেলিভিশন কোম্পানি, টেলেভিশন-বেয়ার্ড-নাতান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩১ সালে, তিনি একটি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা প্রথমবারের মতো আউটডোর রিমোট সম্প্রচার করেন।[১৩] ১৯৩২ সালে, তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গের টেলিভিশন প্রদর্শন করেন। বেয়ার্ড টেলিভিশন লিমিটেডের যান্ত্রিক সিস্টেমগুলি কোম্পানির ক্রিস্টাল প্যালেস স্টুডিওতে ২৪০ লাইনের রেজোলিউশনের শীর্ষে পৌঁছেছিল। পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে বিবিসি টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু করে। তবে অ্যাকশন চিত্রের জন্য (একজন উপস্থাপকের বিপরীতে) যান্ত্রিক সিস্টেম সরাসরি টেলিভিশনের দৃশ্য স্ক্যান করেনি। পরিবর্তে, একটি ১৭.৫এমএম ছবি চিত্রায়িত করা হয়েছিল এবং এটি দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। তারপর চিত্রটি ভেজা অবস্থায় স্ক্যান করা হয়েছিল।

১৯৩০-এর দশকে তাদের যান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে স্কোফনি কোম্পানির সাফল্যের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করা হয়, সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ব্রিটেনে তাদের ব্যবসার পরিধি কমে যায়।

আমেরিকান উদ্ভাবক চার্লস ফ্রান্সিস জেনকিন্সও টেলিভিশনের পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯১৩ সালে "বেতারের মাধ্যমে চলনশীল চিত্র" এর উপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরে পর্যবেক্ষকদের গতিশীল সিলুয়েট চিত্রগুলো প্রদর্শন করেছিলেন। ১৩ জুন, ১৯২৫-এ, জেনকিন্স প্রকাশ্যে সিলুয়েট ছবির যুগোপযোগী ট্রান্সমিশন প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯২৫ সালে, জেনকিন্স নিপকো ডিস্ক এবং একটি ৪৮-লাইন রেজোলিউশনের লেন্সযুক্ত ডিস্ক স্ক্যানার ব্যবহার করে পাঁচ মাইল (মেরিল্যান্ডের একটি নেভাল রেডিও স্টেশন থেকে ওয়াশিংটন, ডিসিতে তার গবেষণাগারে) দূরত্বে চলনশীল একটি খেলনার উইন্ডমিলের সিলুয়েট চিত্র প্রেরণ করেন।[১৪][১৫]

২৫ ডিসেম্বর, ১৯২৬-এ, কেনজিরো তাকায়ানাগি জাপানের হামামাতসু ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাই স্কুলে একটি নিপকো ডিস্ক স্ক্যানার এবং সিআরটি ডিসপ্লে স্থাপন করে ৪০-লাইন রেজোলিউশনের একটি টেলিভিশন সিস্টেম প্রদর্শন করেছিলেন। এই প্রোটোটাইপটি এখনও শিজুওকা বিশ্ববিদ্যালয়, হামামাতসু ক্যাম্পাসের তাকায়ানাগি মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে।[১৬] ১৯২৭ সালের মধ্যে, তাকায়ানাগি রেজোলিউশনটিকে ১০০ লাইনে উন্নীত করেন, যা ১৯৩১ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ রেজোলিউশন ছিল।[১৭] জাপানে তাকে প্রথম অল-ইলেক্ট্রনিক টেলিভিশনের আবিস্কার হিসেবে মনে করা হয়।[১৮] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হেরে যাওয়ার পর একটি মডেল তৈরির জন্য তার গবেষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্ধ করে দেয়।[১৬]

হার্বার্ট ই. আইভস ও বেল টেলিফোন ল্যাবরেটরিজ- এর ফ্রাঙ্ক গ্রে ৭ এপ্রিল, ১৯২৭-এ যান্ত্রিক টেলিভিশনের একটি নাটকীয় প্রদর্শন করেছিলেন। প্রতিফলিত-আলো টেলিভিশন সিস্টেমের মধ্যে ছোট এবং বড় উভয় পর্দাতেই দেখা যাচ্ছিল। ছোট রিসিভারের একটি দুই ইঞ্চি-চওড়া ও ২.৫-ইঞ্চি উঁচু স্ক্রিন ছিল। বড় রিসিভারের একটি স্ক্রিন ছিল ২৪ ইঞ্চি চওড়া ও ৩০ ইঞ্চি উঁচু। উভয় সেটই যুক্তিসঙ্গতভাবে নির্ভুল, একরঙা চলনশীল চিত্র প্রদর্শন করতে সক্ষম ছিল। ছবির পাশাপাশি, সেটগুলিতে যথাযথ সময়ের শব্দ পাওয়া গেছে। সিস্টেমটি দুটি মাধ্যম ব্যবহার করে ছবি প্রেরণ করেছে: প্রথমত, ওয়াশিংটন থেকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি তামার তারের মাধ্যমে, তারপর হুইপ্যানি, নিউ জার্সিতে বেতারের মাধ্যমে। দুটি ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে দর্শকরা উভয়ের মানের মধ্যে কোন পার্থক্য লক্ষ্য করেননি। একটি ফ্লাইং-স্পট স্ক্যানার বিম দ্বারা টেলিভিশনে আলো উৎপন্ন হয়। যে স্ক্যানারটি আলো তৈরি করেছিল, সেটিতে একটি ৫০-অ্যাপারচার ডিস্ক ছিল। ডিস্কটি প্রতি সেকেন্ডে ১৮টি ফ্রেমের গতিতে ঘোরে, প্রতি ৫৬ মিলিসেকেন্ডে একটি ফ্রেম ধারণ করতে পারে।

১৯২৮ সালে, ডব্লিউআরজিবি (পূর্বে ডব্লিউটুএক্সসিডব্লিউ) বিশ্বের প্রথম টেলিভিশন স্টেশন হিসাবে যাত্রা শুরু করে। এটি নিউ ইয়র্কের শেনেকট্যাডিতে জেনারেল ইলেকট্রিক কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার করা হয়।

সোভিয়েত ইউনিয়নে, লিওন থেরেমিন ১৯২৫ সালে ১৬-লাইন রেজোলিউশন, ১৯২৬ সালে ইন্টারলেসিং ব্যবহার করে ৩২ লাইন এবং অবশেষে ৬৪ লাইনের মিরর ড্রাম-ভিত্তিক টেলিভিশন তৈরি করেছিলেন।

যেহেতু ডিস্কে সীমিত সংখ্যক গর্ত তৈরি করা যেত এবং একটি নির্দিষ্ট ব্যাসের বাইরের ডিস্কগুলি অব্যবহারিক হয়ে উঠত, তাই যান্ত্রিক টেলিভিশন সম্প্রচারে চিত্রের রেজোলিউশন তুলনামূলকভাবে কম ছিল (প্রায় ৩০ লাইন থেকে প্রায় ১২০ লাইন পর্যন্ত)। তবুও, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে ৩০-লাইন ট্রান্সমিশনের চিত্রের গুণমান ক্রমাগত উন্নত হয়েছে এবং ১৯৩৩ সালের মধ্যে বেয়ার্ড সিস্টেম ব্যবহার করে তৈরি টেলিভিশনের চিত্রগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে পরিষ্কার ছিল।[১৯] ২০০-লাইন অঞ্চলের মধ্যে কাজ করতে সক্ষম কয়েকটি সিস্টেমও ব্যর্থ হয়ে যায়।

১৯২৯ সালে, স্লোভানীয় বিজ্ঞানী অ্যান্টন কোডেলি এক লাইনবিশিষ্ট একটি ভিন্নধর্মী টেলিভিশন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু একটি যা পর্দায় একটি অবিচ্ছিন্ন সর্পিল তৈরি করেছিল এবং কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সেটি ব্যর্থ হয়ে যায়।

ইলেক্ট্রনিক টেলিভিশনের অগ্রগতিতে (ছবি ডিসেক্টর, ক্যামেরা টিউব এবং পুনরুৎপাদনের জন্য ক্যাথোড রে টিউব সহ) টেলিভিশনের প্রভাবশালী রূপ যান্ত্রিক টেলিভিশন যুগের সমাপ্তি হয়। যান্ত্রিক টিভি সাধারণত শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ছবি তৈরি করতে পারে। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এটি টেলিভিশনের প্রধান ধরন ছিল। ১৯৩৯ সালে প্রায় সম্পূর্ণভাবেই যান্ত্রিক টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।

ইলেকট্রনিক টেলিভিশন

ফার্দিনান্দ ব্রাউন

১৮৯৭ সালে, ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী জে. জে. থমসন তার তিনটি বিখ্যাত পরীক্ষায় ক্যাথোড রশ্মিকে বিচ্যুত করতে সক্ষম হন, যা আধুনিক ক্যাথোড রশ্মি নলের (ক্যাথোড-রে টিউব বা সিআরটি) মূল কাজ। সিআরটি-এর প্রাচীনতম সংস্করণটি ১৮৯৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ কার্ল ফার্ডিনান্ড ব্রাউন আবিষ্কার করেছিলেন এবং এটি ব্রাউন টিউব নামেও পরিচিত। [২০] [২১] ব্রাউন সর্বপ্রথম একটি ডিসপ্লে ডিভাইস হিসাবে সিআরটি ব্যবহার করার ধারণা করেছিলেন। [২২] এটি ছিল একটি কোল্ড-ক্যাথোড ডায়োড, যাফসফর-কোটেড স্ক্রীনের সাথে ক্রুকস টিউবের পরিবর্তনের মাধ্যমে সংঘটিত হতো। ব্রাউন টিউব ২০ শতকের দিকে টেলিভিশনের ভিত্তি হয়ে ওঠে। [২৩] ১৯০৬ সালে জার্মান প্রফেসর ম্যাক্স ডিকম্যান একটি ক্যাথোড রশ্মি টিউব সফলভাবে একটি প্রদর্শনকারী যন্ত্র হিসাবে প্রকাশ করেছিলেন, তার পরীক্ষামূলক ফলাফল ১৯০৯ সালে সায়েন্টিফিক আমেরিকান জার্নাল দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল [২৪] ১৯০৮ সালে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটির সহযোগী অ্যালান আর্কিবল্ড ক্যাম্পবেল-সুইনটন বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে একটি চিঠি প্রকাশ করেন যাতে তিনি বর্ণনা করেন কিভাবে ক্যাথোড রশ্মি নল (বা "ব্রাউন" টিউব) ব্যবহার করে ট্রান্সমিটিং ও রিসিভিং ডিভাইস হিসেবে "দূরবর্তী বৈদ্যুতিক চিত্র" দেখা যায়। [২৫] [২৬] তিনি ১৯১১ সালে লন্ডনে প্রদত্ত একটি বক্তৃতায় তার দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করেন এবং দ্য টাইমস [২৭]রন্টজেন সোসাইটির জার্নালে রিপোর্ট করেন। [২৮] [২৯] ১৯২৬ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত প্রকৃতির কাছে একটি চিঠিতে, ক্যাম্পবেল-সুইন্টন জিএম মিনচিন এবং জেসিএম স্ট্যান্টনের সাথে পরিচালিত কিছু "সামান্য সফল" গবেষণার ফলাফলও ঘোষণা করেছিলেন। তারা একটি সেলেনিয়াম-প্রলিপ্ত ধাতব প্লেটের উপর একটি চিত্র প্রদান করে একটি বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করার চেষ্টা করেছিল যা একই সাথে একটি ক্যাথোড রশ্মি দ্বারা স্ক্যান করা হয়েছিল। [৩০] [৩১] এই পরীক্ষাগুলি মার্চ ১৯১৪ সালে জিএম মিনচিনের মৃত্যুর পূর্বে করা হয়েছিল। [৩২] পরবর্তীতে ১৯৩৭ সালে ইএমআই থেকে এইচ. মিলার ও জেডব্লিউ স্ট্রেঞ্জ, [৩৩] এবং আরসিএ থেকে এইচ. ল্যামস এবং এ. রোস দ্বারা দুটি ভিন্ন দল দ্বারা একই ধরনের পরিক্ষা করা হয়েছিল। [৩৪] উভয় দলই মূল ক্যাম্পবেল-সুইন্টনের সেলেনিয়াম-কোটেড প্লেটের সাথে "খুবই ক্ষীণ" চিত্র প্রেরণে সফল হয়েছিল। যদিও অন্যরা ক্যাথোড রশ্মি নলকে রিসিভার হিসেবে ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল, তবে এ দল দুটি এটিকে ট্রান্সমিটার হিসেবে ব্যবহার করেছিল, যে ধারণাটি অভিনব ছিল। [৩৫] জন বি. জনসন এবং ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিকের হ্যারি ওয়েনার ওয়েইনহার্ট হট ক্যাথোড (গরম ক্যাথোড) ব্যবহার করার জন্য প্রথম সিআরটি করেছিলেন এবং ১৯২২ সালে এটি একটি বাণিজ্যিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।

এই প্রারম্ভিক ইলেকট্রনিক ক্যামেরা টিউবগুলি (ইমেজ ডিসেক্টরের মতো) একটি খুব হতাশাজনক ও মারাত্মক ত্রুটির শিকার হয়েছিল। ত্রুটিটি হলো তারা যে বিষয়টি স্ক্যান করেছিল এবং প্রতিটি পয়েন্টে যা দেখা গিয়েছিল তা স্ক্যানিং সিস্টেমটি অতিক্রম করার সাথে সাথে কেবলমাত্র আলোর ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে দেখা গিয়েছিল। একটি ব্যবহারিক কার্যকরী ক্যামেরা টিউবের জন্য একটি ভিন্ন প্রযুক্তিগত পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল, যা পরে চার্জ - স্টোরেজ ক্যামেরা টিউব নামে পরিচিত হয়। এটি একটি নতুন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে ১৯২৬ সালে হাঙ্গেরিতে আবিষ্কৃত ও পেটেন্টপ্রাপ্ত হয়েছিল, যা ১৯৩০ সালের দিকে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ও পরিচিত হয়েছিল [৩৬]

ট্রান্সমিটিং বা "ক্যামেরা" টিউব থেকে কম বৈদ্যুতিক আউটপুট হওয়ার ফলে আলোর প্রতি কম সংবেদনশীলতার সমস্যাটি ১৯২৪ সালের শুরুতে হাঙ্গেরীয় প্রকৌশলী কালমান তিহানি দ্বারা চার্জ-স্টোরেজ প্রযুক্তির প্রবর্তনের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছিল। [৩৭] ১৯২৬ সালে, তিহানি সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক স্ক্যানিং ও ডিসপ্লে উপাদানগুলি ব্যবহার করে এবং স্ক্যানিং (বা "ক্যামেরা") টিউবের মধ্যে "চার্জ স্টোরেজ" তত্ত ব্যবহার করে একটি টেলিভিশন সিস্টেম প্রণয়ন করেছিলেন। [৩৮] [৩৯] [৪০] [৪১] তার যন্ত্রটি প্রতিটি স্ক্যানিং চক্র জুড়ে টিউবের মধ্যে বৈদ্যুতিক চার্জ ("ফটোইলেক্ট্রন") জমাকারী একটি ক্যামেরা টিউব ছিল। ১৯২৬ সালের মার্চ মাসে হাঙ্গেরিতে, রেডিওস্কপ নামের একটি টেলিভিশন সিস্টেম হিসেবে যন্ত্রটির প্রথম পেটেন্ট আবেদনে করা হয়েছিল। [৪২] ১৯২৮ সালের পেটেন্ট আবেদনে আরও পরিমার্জন করার পর, [৩৭] ১৯৩০ সালে ব্রিটেনে তিহানির পেটেন্ট বাতিল ঘোষণা করা হয়, [৪৩] এবং তাই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। যদিও তার এ যন্ত্রটি ১৯৩১ সালে আরসিএ এর "আইকনোস্কোপ" এর নকশায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু ১৯৩৯ সালের মে পর্যন্ত তিহানির ট্রান্সমিটিং টিউবের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পেটেন্ট মঞ্জুর করা হয় নি। তার রিসিভিং টিউবের পেটেন্ট পরবর্তী অক্টোবরে দেওয়া হয়েছিল। উভয় পেটেন্ট আরসিএ তাদের অনুমোদনের পূর্বে ক্রয় করে নেয়। [৩৯] [৪০] তিয়ানি-এর চার্জ স্টোরেজ ধারণাটি আজ অবধি টেলিভিশনের ইমেজিং ডিভাইসগুলির গঠনের মূল নীতি হিসাবে রয়ে গেছে। [৪২]

১৯২৪ সালে ফিলো ফার্নসওয়ার্থ

২৫ ডিসেম্বর, ১৯২৬-এ, কেনজিরো তাকায়ানাগি জাপানের হামামাতসু ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাই স্কুলে একটি নিপকো ডিস্ক স্ক্যানার এবং সিআরটি ডিসপ্লে স্থাপন করে ৪০-লাইন রেজোলিউশনের একটি টেলিভিশন সিস্টেম প্রদর্শন করেছিলেন।। [১৬] তবে তাকায়নাগি এটির পেটেন্টের জন্য আবেদন করেননি। [৪৪]

৭ সেপ্টেম্বর, ১৯২৭-এ, ফিলো ফার্নসওয়ার্থের ইমেজ ডিসেক্টর ক্যামেরা টিউব সান ফ্রান্সিসকোতে তার গবেষণাগারে তার প্রথম চিত্র প্রদর্শন করে, যেটি ছিল সাধারণ সরল রেখা। [৪৫] [৪৬] ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯২৮ সাল নাগাদ, ফার্নসওয়ার্থ প্রেসে প্রদর্শনের জন্য যথাযথভাবে সিস্টেমটি তৈরি করেছিলেন। এটিকে সর্বপ্রথম ইলেকট্রনিক টেলিভিশন প্রদর্শনী হিসেবে গণ্য করা হয়। [৪৬] ১৯২৯ সালে, টেলিভিশন সিস্টেমটিতে থাকা সবশেষ যান্ত্রিক অংশ মোটর জেনারেটর বাদ দিয়ে সিস্টেমটিকে আরও উন্নত করা হয়েছিল। [৪৭] সেই বছর, ফার্নসওয়ার্থ তার সিস্টেমে প্রথম জীবন্ত মানুষের ছবি প্রেরণ করেন। [৪৮]

ভ্লাদিমির জোওরিকিন ইলেকট্রনিক টেলিভিশন প্রদর্শন করছেন (১৯২৯)

রুশ-মার্কিন উদ্ভাবক ভ্লাদিমির জোওরিকিনও ছবি তৈরি এবং প্রদর্শনের জন্য ক্যাথোড রশ্মি নল নিয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলেন। ১৯২৩ সালে ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিকের জন্য কাজ করার সময়, তিনি একটি ইলেকট্রনিক ক্যামেরা টিউব তৈরি করতে শুরু করেন। কিন্তু ১৯২৫ সালের একটি প্রদর্শনে, চিত্রটি ম্লান, কম বৈসাদৃশ্যপূর্ণ, নিম্নমানের এবং স্থির ছিল। [৪৯]

১৯৩৩ সালে তিহানির চার্জ স্টোরেজ তত্ত্বের উপর নির্ভর করে আরসিএ একটি উন্নত ক্যামেরা টিউব প্রবর্তন করে। [৫০] [৫১] ফার্নসওয়ার্থ একটি অনন্য "মাল্টিপ্যাক্টর" যন্ত্রের উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার ইমেজ ডিসেক্টরের বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তিনি ১৯৩০ সালে এর কাজ শুরু করেছিলেন এবং ১৯৩১ সালে এটি প্রদর্শন করেছিলেন। [৫২] এই ছোট টিউবটি একটি সংকেতের শক্তি ৬০ গুণ বা তার চেয়েও বেশি বাড়াতে পারে। [৫৩] এটি ইলেকট্রনিক্সের সমস্ত ক্ষেত্রে দুর্দান্তভাবে কাজ করে। মাল্টিপ্যাক্টরের সাথে একটি সমস্যা ছিল যে, এটি একটি অসন্তোষজনক হারে জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। [৫৪]

১৯৩৩ সালে ম্যানফ্রেড ফন আরডেন

বার্লিনে ১৯৩১ সালের আগস্টে বার্লিন রেডিও শোতে, ম্যানফ্রেড ভন আরডেন জনসম্মুখে একটি টেলিভিশন সিস্টেম প্রদর্শন করেছিলেন। এটিতে ট্রান্সমিশন ও সংকেত গ্রহণ উভয় ক্ষেত্রেই সিআরটি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ছিল প্রথম কোনো সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক টেলিভিশন ট্রান্সমিশন। [৫৫] আর্ডেন ক্যামেরা টিউব তৈরি না করে স্লাইড ও ফিল্ম স্ক্যান করার জন্য একটি ফ্লাইং-স্পট স্ক্যানার হিসাবে সিআরটি ব্যবহার করেছিলেন। [৫৬] আরডেন ২৪ ডিসেম্বর ১৯৩৩ সালে তার প্রথম টেলিভিশন ছবির ট্রান্সমিশন করতে সক্ষম হন।তারপরে ১৯৩৪ সালে তিনি পাবলিক টেলিভিশন পরিষেবার জন্য পরীক্ষা চালানো শুরু করেন। ১৯৩৫ সালে, বার্লিনে বিশ্বের প্রথম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী টেলিভিশন পরিষেবা চালু হয়েছিল। ফার্ন্সেসেন্ডার পল নিপকো স্টেশন দ্বারা বার্লিন থেকে সমগ্র জার্মানি জুড়ে ১৯৩৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল। [৫৭] [৫৮]

ফিলো ফার্নসওয়ার্থ ২৫ আগস্ট, ১৯৩৩ সালে ফিলাডেলফিয়ার ফ্রাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটে এবং তার পর দশদিনের জন্য একটি লাইভ ক্যামেরা ব্যবহার করে বিশ্বে প্রথমবারের মতো জনসাধারণর কাছে সর্ব-ইলেকট্রনিক টেলিভিশন সিস্টেম প্রদর্শন করেছিলেন। [৫৯] [৩১]

ব্রিটেনে আইজ্যাক শোয়েনবার্গের নেতৃত্বে ইএমআই প্রকৌশলী দল ১৯৩২ সালে একটি নতুন ডিভাইসের পেটেন্টের জন্য আবেদন করে, যাকে তারা "দ্য এমিট্রন" নাম দেয়। [৬০] [৬১] এটি বিবিসির জন্য ইএমআই-এর তৈরি করা প্রধান ক্যামেরা হয়ে ওঠে। ১৯৩৬ সালের নভেম্বরে, এমিট্রন ব্যবহার করে আলেকজান্দ্রা প্রাসাদের স্টুডিওতে ৪০৫-লাইনবিশিষ্ট টেলিভিশনের সম্প্রচার পরিষেবা শুরু হয়েছিল। এটির সংকেত ভিক্টোরিয়ান ভবনের একটি টাওয়ারের উপরে একটি বিশেষভাবে নির্মিত একটি স্তম্ভ থেকে প্রেরণ করা হয়েছিল। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম সাধারণ হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশন পরিষেবা। [৩১]

হাই ডেফিনিশন মেকানিক্যাল স্ক্যানিং সিস্টেমের তুলনায় আমেরিকান আইকনোস্কোপের শব্দের মান খারাপ ছিল, সিগন্যালে অধিক ত্রুটি ছিল এবং এটির ফলাফল হতাশাজনক ছিল। [৬২] [৬৩] আইজ্যাক শোয়েনবার্গের তত্ত্বাবধানে ইএমআই দল বিশ্লেষণ করেছিল যে কীভাবে আইকনোস্কোপ (বা এমিট্রন) একটি ইলেকট্রনিক সংকেত তৈরি করে। তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এর বাস্তব কার্যকারিতা তাত্ত্বিক সর্বাধিক কার্যের মাত্র ৫%। [৬৪] [৬৫] তারা ১৯৩৪ সালে সুপার-এমিট্রন এবং সিপিএস এমিট্রন নামে দুটি নতুন ক্যামেরা টিউব বিকাশ ও পেটেন্ট করে এই সমস্যার সমাধান করেছিল। [৬৬] [৬৭] [৬৮] সুপার-ইমিট্রন পুর্বের এমিট্রন ও আইকনোস্কোপ টিউবগুলির তুলনায় দশ থেকে পনের গুণ বেশি সংবেদনশীল ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে এই অনুপাতটি যথেষ্ট বেশি ছিল। [৬৪] এটি সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালের যুদ্ধবিরতি দিবসে বিবিসি দ্বারা বৈশ্বিক সম্প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। [৬৯] ১৯৩৯ সালে নিউ ইয়র্কে প্রথমবারের মতো অপর একটি ভবনের ছাদে স্থাপিত ক্যামেরা থেকে সরাসরি একটি রাস্তার দৃশ্য সম্প্রচার করা সম্ভব হয়।

১৯৩৯ সালে আরসিএ দ্বারা নিউ ইয়র্ক সিটিতে পরীক্ষামূলক টেলিভিশন সম্প্রচারের শুরুর বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, ১৯৩৪ সালে, জোওরিকিন জার্মান লাইসেন্সধারী কোম্পানি টেলিফুঙ্কেনের সাথে কিছু পেটেন্ট অধিকার ভাগ করে নেয়। [৭০] তারা যৌথ সহযোগিতায় "ইমেজ আইকনোস্কোপ" (জার্মানিতে "সুপারিকোনোস্কোপ") তৈরি করতে সক্ষম হন। এই টিউবটি মূলত সুপার-ইমিট্রনের অনুরূপ।ইউরোপে সুপার-ইমিট্রন এবং ইমেজ আইকনোস্কোপের উৎপাদন এবং বাণিজ্যিকীকরণ জোওরিকিন ও ফার্নসওয়ার্থের মধ্যে পেটেন্ট যুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হয়নি, কারণ ডায়কম্যান এবং হেল একটি পেটেন্ট জমা দিয়ে চিত্র বিচ্ছেদক আবিষ্কারের জন্য জার্মানিতে অগ্রাধিকার পেয়েছিলেন। ইমেজ আইকনোস্কোপ (সুপারিকোনোস্কোপ) ১৯৩৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ইউরোপে পাবলিক সম্প্রচারের জন্য মানসম্পন্ন যন্ত্র হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে এটির বিকল্প হিসেবে ভিডিকন এবং প্লাম্বিকন টিউব প্রকাশিত হয়। জার্মান কোম্পানি হেইম্যান ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিক গেমসের জন্য সুপারিকোনোস্কোপ তৈরি করেছিল, [৭১] [৭২] পরবর্তীতে হেইম্যান ১৯৪০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত এটি তৈরি ও বাণিজ্যিকীকরণ করেছিলেন, [৭৩] অবশেষে ডাচ কোম্পানি ফিলিপস ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে ইমেজ আইকনোস্কোপ এবং মাল্টিকন তৈরি এবং বাণিজ্যিকীকরণ করে। [৭৪] [৭৫]

সেই সময়ে আমেরিকান টেলিভিশন সম্প্রচারে বিস্তৃত আকারের বিভিন্ন বাজার ছিল। সেগুলো প্রোগ্রামিং এবং আধিপত্যের জন্য বিরল ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। ১৯৪১ সালে একটি চুক্তি করা হয়েছিল এবং এর ভিত্তিতে প্রতিযোগী পক্ষগুলো একত্রিত হয়। [৭৬] উদাহরণস্বরূপ, আরসিএ, নিউ ইয়র্ক এলাকায় শুধুমাত্র আইকনোস্কোপ ব্যবহার করেছিল, কিন্তু ফিলাডেলফিয়া এবং সান ফ্রান্সিসকোতে ফার্নসওয়ার্থ ইমেজ ডিসেক্টর ব্যবহার করেছে। [৭৭] ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, আরসিএ ফার্নসওয়ার্থের পেটেন্ট প্রাপ্তির জন্য ফার্নসওয়ার্থ টেলিভিশন এবং রেডিও কর্পোরেশনের রাজস্ব পরবর্তী দশ বছরে পরিশোধ করতে সম্মত হয়। [৭৮] এই ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে, আরসিএ তাদের সিস্টেমে ফার্নসওয়ার্থ প্রযুক্তির সবচেয়ে ভালো জিনিসগুলোকে একীভূত করে। [৭৭] ১৯৪১ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫২৫-লাইনবিশিষ্ট টেলিভিশন আবিস্কার করেছিল। [৭৯] [৮০]

বিশ্বের প্রথম ৬২৫-লাইনবিশিষ্ট মানসম্পন্ন টেলিভিশন ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি করা হয়েছিল এবং ১৯৪৬ সালে এটি জাতীয়করণ ওঠে। [৮১] ৬২৫-লাইন স্ট্যান্ডার্ডে প্রথম সম্প্রচার ১৯৪৮ সালে মস্কোতে হয়েছিল। [৮২] প্রতি ফ্রেমে ৬২৫ লাইনের ধারণাটি পরবর্তীকালে ইউরোপীয় সিসিআইআর স্ট্যান্ডার্ডে প্রয়োগ করা হয়েছিল। [৮৩]

১৯৩৬ সালে, কালমান তিহানি প্রথম ফ্ল্যাট প্যানেল ডিসপ্লে সিস্টেম "প্লাজমা ডিসপ্লের"নীতি বর্ণনা করেন। [৮৪] [৮৫]

১৯৭৮ সালে, জেমস পি. মিচেল, সম্ভাব্য প্রাথমিক সময়ের একরঙা ফ্ল্যাট প্যানেল এলইডি ডিসপ্লে প্রোটোটাইপ ও প্রদর্শন করেন। এটির সম্ভাব্য লক্ষ্য ছিল আরসিএ-কে প্রতিস্থাপন করা।

রঙিন টেলিভিশন

একটি রঙিন চিত্র তৈরি করতে তিনটি একরঙা চিত্র ব্যবহার করা হয়। এটির প্রাথমিক ধারণাটি কালো-সাদা টেলিভিশন তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই পরীক্ষা করে আবিষ্কার করা হয়েছিল। ১৮৮০ সালে মরিস লে ব্ল্যাঙ্ক একটি রঙিন টেলিভিশন সিস্টেম প্রস্তাব করেন। এটি টেলিভিশনের জন্য প্রথম প্রকাশ্যে প্রদানকৃত প্রস্তাবগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল। এই সিস্টেমের মধ্যে প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে লাইন ও ফ্রেম স্ক্যানিংয়ের উল্লেখ করা হয়। যদিও তিনি এর কোনও ব্যবহারিক বিবরণ দেননি। [৮৬] পোলিশ উদ্ভাবক জ্যান সজেপানিক ১৮৯৭ সালে একটি রঙিন টেলিভিশন সিস্টেমের পেটেন্ট করেছিলেন, যার ট্রান্সমিটারে একটি সেলেনিয়াম ফটোইলেকট্রিক সেল এবং একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেট ছিল। এটি ব্যবহার করে দোদুল্যমান মনিটর ও রিসিভারে প্রবাহমান প্রিজম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু তার এই সিস্টেমে ট্রান্সমিটিং প্রান্তে রঙের বর্ণালী বিশ্লেষণ করার কোনো উপায় ছিল না এবং এটি বর্ণনা করার মতো কোনো কাজ সিস্টেমটি করতে পারত না। [৮৭] অন্য একজন উদ্ভাবক হোভানেস অ্যাডামিয়ানও ১৯০৭ সালের প্রথম দিকে রঙিন টেলিভিশন নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনিই প্রথম রঙিন টেলিভিশন প্রকল্পে সফলভাবে কাজ করার দাবি করেন। [৮৮] ৩১ মার্চ, ১৯০৮ সালে জার্মানিতে এটির পেটেন্ট করা হয় (পেটেন্ট নং ছিল ১৯৭১৮৩)। ১ এপ্রিল, ১৯০৮ সালে ব্রিটেনে পেটেন্ট নং ৭২১৯, [৮৯] ফ্রান্সে (পেটেন্ট নং ৩৯০৩২৬) এবং ১৯১০ সালে রাশিয়ায় (পেটেন্ট নং ১৭৯১২)-এ এটি নিবন্ধন করা হয়। [৯০]

স্কটিশ উদ্ভাবক জন লগি বেয়ার্ড ৩ জুলাই, ১৯২৮-এ বিশ্বের প্রথম রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচার প্রদর্শন করেন। এটির ট্রান্সমিটিং ও রিসিভিং প্রান্তে স্ক্যানিং ডিস্ক ব্যবহার করে তিনটি ছিদ্র রাখা হয়েছিল। এগুলোর প্রতিটি সর্পিল আকারের এবং এতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রাথমিক রঙের ফিল্টার (ছাঁকনি) রয়েছে। ফলাফল প্রদর্শনকারী স্তরে একটি কমিউটার সহ তিনটি আলোর উৎস রয়েছে। [৯১] বেয়ার্ড ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৮-এ বিশ্বের প্রথম রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচারও করেছিলেন। সে সম্প্রচারটি ১২০-লাইন ইমেজ যান্ত্রিকভাবে স্ক্যান করে বেয়ার্ডের ক্রিস্টাল প্যালেস স্টুডিও থেকে লন্ডনের ডোমিনিয়ন থিয়েটারের একটি প্রজেকশন স্ক্রিনে সংযোগের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছিল। [৯২] যান্ত্রিকভাবে স্ক্যানকৃত রঙিন টেলিভিশনটিও বেল ল্যাবরেটরিজ দ্বারা ১৯২৯ সালের জুন মাসে তিনটি সম্পূর্ণ সিস্টেম ফটোইলেকট্রিক কোষ, অ্যামপ্লিফায়ার, গ্লো-টিউব এবং কালার ফিল্টার ব্যবহার করে প্রদর্শিত হয়েছিল, যাতে লাল, সবুজ ও নীল ছবিগুলিকে একটি পূর্ণ রঙের ছবিতে সুপারইমপোজ (অধিষ্ঠিত) করা যায়।

জন লগি বেয়ার্ড প্রথম ব্যবহারিক, হাইব্রিড, ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল (বিদ্যুৎ-যান্ত্রিক) ও ফিল্ড-সিকুয়েন্সিয়াল কালার সিস্টেমটি (ক্ষেত্র-ক্রমিক রঙ সিস্টেম) প্রবর্তন করেন, যা ১৯৩৯ সালের জুলাইয়ে প্রাথমিকভাবে প্রদর্শিত হয়। [৯৩] একরঙা টেলিভিশন সম্প্রচারে কৃত্রিম রঙ যোগ করার জন্য তার সিস্টেমে ক্যামেরা ও সিআরটি উভয়ের সামনে সিঙ্ক্রোনাইজকৃত (কালানুক্রম উন্নত) লাল ও নীল-সবুজ রঙের ঘূর্ণায়মান ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি প্রকাশ্যে একটি ৬০০ লাইন, হাইব্রিড, ফিল্ড-সিকুয়েন্সিয়াল, রঙিন টেলিভিশন সিস্টেম প্রদর্শন করেছিলেন। [৯৪] এই ডিভাইসটির স্ক্রিন খুব "গভীর" ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে একটি দর্পন স্থাপন করে এটি উন্নত করা হয়েছিল। [৯৫] তবে, বেয়ার্ড ডিভাইসটির ডিজাইনে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি ১৯৪৪ সালের প্রথম দিকে ব্রিটিশ সরকারের একটি কমিটিকে জানিয়েছিলেন যে এই সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ডিভাইসটি আরও উন্নত করা হবে।

১৯৩৯ সালে, হাঙ্গেরীয় প্রকৌশলী পিটার কার্ল গোল্ডমার্ক সিবিএসে থাকাকালীন একটি ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল সিস্টেম চালু করেন, যাতে একটি আইকনোস্কোপ সেন্সর ছিল। সিবিএস ফিল্ড-অনুক্রমিক রঙের সিস্টেমটি আংশিকভাবে যান্ত্রিক ছিল। এটির টেলিভিশন ক্যামেরার ভিতরে লাল, নীল এবং সবুজ ফিল্টার দিয়ে তৈরি একটি ডিস্ক ১,২০০ আরপিএম-এ ঘূর্ণয়মান অবস্থায় কাজ করছিল এবং রিসিভার সেটের ভিতরে ক্যাথোড রে টিউবের সামনে সিঙ্ক্রোনাইজেশনে একই রকম একটি ডিস্ক ঘূর্ণয়মান ছিল।[৯৬] সিস্টেমটি প্রথম ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি) এর কাছে ২৯ আগস্ট, ১৯৪০-এ প্রদর্শিত হয়েছিল এবং ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। [৯৭] [৯৮] [৯৯] [১০০]

সিবিএস ২৮ আগস্ট, ১৯৪০ সালের প্রথম দিকে ফিল্ম ব্যবহার করে এবং ১২ নভেম্বরের মধ্যে লাইভ ক্যামেরা ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ক্ষেত্রের কার্যকারিতা যাচাই শুরু করে। [১০১] এনবিসি (আরসিএ-র মালিকানাধীন) ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪১-এ রঙিন টেলিভিশনের প্রথম বাস্তবিক পরীক্ষা করে। সিবিএস ১ জুন, ১৯৪১ তারিখ থেকে প্রতিদিন রঙিন ক্ষেত্রের পরীক্ষা শুরু করে [১০২] এই রঙের সিস্টেমগুলি তখনকার সময়ে বিদ্যমান কালো-সাদা টেলিভিশন সেটগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তাই সে সময়ে কোনও রঙিন টেলিভিশন সেট জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ ছিল না। আর রঙের ক্ষেত্রের পরীক্ষাগুলি আরসিএ এবং সিবিএস-এর প্রকৌশলীদের এবং আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ওয়ার প্রোডাকশন বোর্ড ২২ এপ্রিল, ১৯৪২ থেকে ২০ আগস্ট, ১৯৪৫ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য টেলিভিশন এবং রেডিও সরঞ্জাম তৈরি বন্ধ করে দেয়, যার ফলে সাধারণ জনগণের কাছে রঙিন টেলিভিশন চালু করার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। [১০৩] [১০৪]

মেক্সিকান উদ্ভাবক গুইলারমো গনজালেজ ক্যামারেনাও হাইব্রিড ফিল্ড-সিকুয়েন্সিয়াল রঙিন টিভি (প্রথমে টেলিস্কোপিয়া নামে পরিচিত ছিল) নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৩১ সালে শুরু হয় এবং ১৯৪০ সালের আগস্টে দাখিল করা "ট্রাইক্রোম্যাটিক ফিল্ড সিকোয়েন্সিয়াল সিস্টেম" রঙিন টেলিভিশনের জন্য মেক্সিকোতে পেটেন্ট করা হয়। [১০৫]

১৯৪০ সালের প্রথম দিকে বেয়ার্ড একটি সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক সিস্টেমে কাজ শুরু করেছিলেন যার নাম তিনি "টেলিক্রোম" রাখেন। প্রারম্ভিক টেলিক্রোম ডিভাইসগুলিতে একটি ফসফর প্লেটের উভয় দিকে দুটি ইলেক্ট্রন গান (electron gun) ব্যবহার করা হতো। সায়ান ও ম্যাজেন্টা ফসফর ব্যবহার করে, একটি সীমিত-রঙের চিত্র পাওয়া যেতো। তিনি ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করতে একরঙা সংকেত ব্যবহার করে অন্য আরেকটি সিস্টেম প্রদর্শন করেছিলেন (তখন যাকে "স্টেরিওস্কোপিক" বলা হতো)। ১৬ আগস্ট, ১৯৪৪-এ একটি প্রদর্শনী হয়েছিল, যা ব্যবহারিক রঙিন টেলিভিশন সিস্টেমের প্রথম প্রদর্শনীগুলোর অন্যতম। সে সময় টেলিক্রোমের কাজ এগিয়ে যেতে থাকে এবং সম্পূর্ণ রঙ উৎপাদনের জন্য তিনটি ইলেকট্রনিক গানবিশিষ্ট সংস্করণ চালু করার পরিকল্পনা করা হয়। এটিতে ফসফর প্লেটের একটি প্যাটার্নযুক্ত সংস্করণ ব্যবহার করা হয়েছিল। এটির গানগুলো প্লেটের একপাশে শিলাগুলিকে লক্ষ্য করে স্থাপন করা হয়েছিল। যাইহোক, ১৯৪৬ সালে বেয়ার্ডের অকাল মৃত্যুতে টেলিক্রোম সিস্টেমের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। [১০৬] [৯৫]

অনুরূপ ধারণাগুলি ১৯৪০ এবং ১৯৫০-এর দশকে প্রচলিত ছিল। তবে প্রাথমিকভাবে তিনটি গান-এর দ্বারা উৎপন্ন রংগুলিকে পুনরায় একত্রিত করার পদ্ধতিতে কিছু পার্থক্য এসেছিল। উদাহরণস্বরূপ গিয়ার টিউব সিস্টেম, যা বেয়ার্ডের ধারণার অনুরূপ ছিল। তবে এটিতে একটি সমতল পৃষ্ঠে বেয়ার্ডের ত্রিমাত্রিক প্যাটার্নিংয়ের পরিবর্তে তাদের বাইরের মুখের উপর জমা ফসফরসহ ছোট পিরামিড আকৃতির চিত্রের গঠন ব্যবহার করা হয়েছিল। আরেকটি জনপ্রিয় সিস্টেম ছিল পেনেট্রন, এটিতে একে অপরের উপরে ফসফরের তিনটি স্তর ব্যবহার করা হয়েছিল এবং রঙ উৎপাদনের সময় উপরের স্তরগুলিতে পৌঁছানোর জন্য আলোকরশ্মির শক্তি ও পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। ক্রোম্যাট্রন সিস্টেম আরেকটি প্রচলিত সিস্টেম ছিল, যাতে টিউবের উল্লম্ব ফিতে সাজানো রঙিন ফসফর নির্বাচন করতে ফোকাসিং তারের একটি সেট ব্যবহার করা হয়েছিল।

রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচার প্রবর্তনের একটি বড় প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ছিল ব্যান্ডউইথ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, বিদ্যমান সাদা-কালো সিস্টেমের চেয়ে সম্ভাব্য তিনগুণ ভালো মানের সিস্টেম তৈরি এবং অত্যধিক পরিমাণে রেডিও স্পেকট্রাম ব্যবহার না করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যথেষ্ট গবেষণার পর, ন্যাশনাল টেলিভিশন সিস্টেম কমিটি [১০৭] আরসিএ দ্বারা তৈরি সর্ব-ইলেকট্রনিক সামঞ্জস্যপূর্ণ রঙিন টেলিভিশন সিস্টেমটি অনুমোদন দেয়। এই সিস্টেমটি উজ্জ্বলতার উপর ভিত্তি করে রঙিন চিত্র প্রস্তুত করতে পারে এবং ব্যান্ডউইথ সংরক্ষণ করার জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে তুলনামূলক কম রেজুলেশনের রঙ ব্যবহার করতে পারে। উজ্জ্বলতার উপর ভিত্তি করে তৈরি চিত্রটি বিদ্যমান কালো-সাদা টেলিভিশন সেটের সাথে কিছুটা কম রেজোলিউশনে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। রঙিন টেলিভিশনগুলি সিগন্যালে অতিরিক্ত তথ্য ডিকোড করতে পারে এবং একটি সীমিত-রেজোলিউশনের রঙের প্রদর্শন তৈরি করতে পারে। উচ্চ রেজোলিউশনের কালো-সাদা এবং কম রেজোলিউশনের রঙিন ছবিগুলি টেলিভিশনের ব্রেইনে (মস্তিষ্ক) একত্রিত হয়ে একটি আপাতদৃষ্টিতে উচ্চ-রেজোলিউশন সম্পন্ন রঙের চিত্র তৈরি করে। এনটিএসসি মান-এ এই সিস্টেমটি একটি প্রধান প্রযুক্তিগত অর্জনের প্রতিনিধিত্ব করে।

একটি পরীক্ষামূলক প্যাটার্নে ব্যবহৃত রঙের বার। এটি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এখনও কোনো অনুষ্ঠান উপলব্ধ না থাকলে প্রদর্শন করা হয়।

যদিও ১৯৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্ব-ইলেকট্রনিক রঙিন টেলিভিশন সিস্টেম চালু করা হয়েছিল, [১০৮] তবে উচ্চ মূল্য এবং রঙিন টেলিভিশন প্রোগ্রামিংয়ের অভাবের কারণে বাজারে এর গ্রহণযোগ্যতা ব্যপকভাবে কম ছিল। ১ জানুয়ারী, ১৯৫৪-এ প্রথম জাতীয় রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচার (১৯৫৪ সালের রোজেস প্যারেড টুর্নামেন্ট) হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী দশ বছরে বেশিরভাগ নেটওয়ার্ক সম্প্রচার এবং প্রায় সমস্ত স্থানীয় প্রোগ্রামিং সাদা-কালোতে চলতে থাকে। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত রঙিন টেলিভিশন সেট প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হতে শুরু করে। ১৯৬৫ সালে রঙিন সিস্টেমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পর ঘোষণা করা হয়েছিল যে সমস্ত নেটওয়ার্কে প্রাইম-টাইম প্রোগ্রামিং এর অর্ধেকেরও বেশি সময় রঙিন চিত্রে সম্প্রচার করা হবে। প্রথম অল-কালার প্রাইম-টাইম সিজন ঠিক এক বছর পরে বাজারে আসে। ১৯৭২ সালে, দিনের বেলা সম্প্রচারিত নেটওয়ার্ক প্রোগ্রামগুলির মধ্যে সর্বশেষ প্রোগ্রামটি রঙিন চিত্রে প্রদর্শন করা শুরু হয়, যার ফলে প্রথম সম্পূর্ণরূপে দিনের বেশিরভাগ সময়ে রঙিন নেটওয়ার্ক সম্প্রচার শুরু হয়েছিল।

প্রারম্ভিক রঙিন সেটগুলি ফ্লোর-স্ট্যান্ডিং কনসোল মডেল অথবা টেবিলটপ সংস্করণ ছিল, যা প্রায়ই অত্যন্ত ভারী ছিল, তাই সেগুলো দৃঢ়ভাবেবেশিরভাগ সময়ই এক জায়গায় স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হতো। ১৯৬৬ সালে জিই একটি তুলনামূলকভাবে সংহত এবং লাইটওয়েট পোর্টা-কালার সেট প্রবর্তন করে। এটি রঙিন টেলিভিশন দেখাকে আরও নমনীয় এবং সুবিধাজনক করে তোলে। ১৯৭২ সালে, রঙিন সেটের বিক্রি অবশেষে সাদা-কালো সেটের বিক্রিকে ছাড়িয়ে যায়।

১৯৬০ সাল পর্যন্ত ইউরোপে রঙিন সম্প্রচারও পিএএল (PAL) ফরম্যাটে উপলব্ধ ছিল না।

১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, ছোট বাজারে কয়েকটি উচ্চ-সংখ্যার ইউএইচএফ স্টেশন এবং ছোট বাজারে কয়েকটি কম-পাওয়ার রিপিটার স্টেশন (যেমন: অবকাশ স্পট) সাদা-কালোতে সম্প্রচারিত একমাত্র স্টেশন ছিল। ১৯৭৯ সাল নাগাদ, এমনকি এসব স্টেশনগুলোও রঙিন সম্প্রচারকারীতে রূপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে, কালো-সাদা সেটগুলির বিক্রি একটি বিশেষ বাজারে রূপান্তরিত হয়, বিশেষত কম-পাওয়ার ব্যবহার, ছোট পোর্টেবল সেট, অথবা ভিডিও মনিটর স্ক্রীন হিসাবে ব্যবহার খরচের ভোক্তা সরঞ্জাম বাজারে বিক্রি শুরু হয়। ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে, বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে রঙিন টেলিভিশন সেট পৌঁছে যায়।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ