মারিও মোলিনা

মেক্সিকোণীয় নোবেলজয়ী রসায়নবিদ

মারিও হোসে মোলিনা-প্যাসকেল হেনরিকেজ (১৯ মার্চ ১৯৪৩ – ৭ অক্টোবর ২০২০) একজন মেক্সিকান রসায়নবিদ, যিনি অ্যান্টার্কটিকা ওজোন ছিদ্র আবিষ্কারের জন্য পরিচিত। ১৯৯৫ সালে তিনি যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি ওজোন স্তরে সিএফসি গ্যাসের (ক্লোরোফ্লোরো কার্বন) হুমকি সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করার জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি মেক্সিকোতে জন্ম নেওয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান।[৮]

মারিও জে. মোলিনা
২০১১ এ মারিও জে. মোলিনা
জন্ম(১৯৪৩-০৩-১৯)১৯ মার্চ ১৯৪৩
মৃত্যু৭ অক্টোবর ২০২০(2020-10-07) (বয়স ৭৭)
মাতৃশিক্ষায়তনমেক্সিকোর জাতীয় স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়
ফ্রেইবার্গের অ্যালবার্ট লুডউইগস বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়,বার্কলে
পরিচিতির কারণস্ট্রাটোমণ্ডলে থাকা ওজোন স্তরের হুমকি সিএফসি গ্যাস সম্পর্কে গবেষণা
দাম্পত্য সঙ্গীলুইসা ওয়াই. তান (১৯৭৩), গুয়াদালুপে আলভারেজ (২০০৬)[১]
পুরস্কারটাইলার প্রাইজ ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যাচিভমেন্ট (১৯৮৩)
নিউকম্ব ক্লিভল্যান্ড পুরস্কার(১৯৮৭)
নাসা এক্সেপশনাল সাইন্টিফিক অ্যাচিভমেন্ট মেডেল (১৯৮৯),[২]
রসায়নে নোবেল পুরস্কার (১৯৯৫)
জাতিসংঘ পরিবেশ কার্যক্রম সাসাকাওয়া পরিবেশ পদক (১৯৯৯)
পরিবেশে অবদানের জন্য নবম বার্ষিক হেইঞ্জ পদক (২০০৩)[৩]
ভলভো পরিবেশ পদক (২০০৪)[৪]
প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (২০১৩)[৫]
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্ররসায়ন
প্রতিষ্ঠানসমূহইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগো
ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি
জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি
ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিন
মেক্সিকোর জাতীয় স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় [৬][৭]
ওয়েবসাইটhttp://www.centromariomolina.org/ (স্পেনীয়)
বহিঃস্থ অডিও
audio icon "হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ওজোন হোল? : অ্যান এনভায়রনমেন্টাল সাকসেস স্টোরি", ডিস্টিলেশন্স পোডোকাস্ট ২৩০, সাইন্স হিস্টোরি ইন্সটিটিউট, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
২০১১ সালে নোবেল বিজয়ী গ্লোবাল সিম্পোজিয়ামে মলিনা

২০০৪ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগো ও স্ক্রিপস সমুদ্রবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান কেন্দ্রের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মেক্সিকো সিটির মারিও মোলিনা শক্তি ও পরিবেশ কেন্দ্রের পরিচালক। এছাড়া তিনি মেক্সিকোর সাবেক রাষ্ট্রপতি এন্রিকে পেইয়া নিয়েতোর পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।[৯]

জীবনী

মারিও জে. মোলিনার বাবা রবার্তো মোলিনা-প্যাসকেল একজন আইনজীবী ও বিচারক ছিলেন। তিনি ইথিওপিয়া, ফিলিপাইনঅস্ট্রেলিয়ায় ১৯২৩ সালে প্রধান রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১] তার মায়ের নাম লিওনর হেনরিকেজ।ছোটবেলায় স্নানঘরকে তিনি নিজের ছোট গবেষণাগারে রূপান্তর করেছিলেন। তিনি সেখানে খেলনা মাইক্রোস্কোপ ও রসায়ন সংক্রান্ত বস্তু রাখতেন। তিনি তার ফুফু এস্থের মোলিনাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যিনি ছিলেন একজন রসায়নবিদ। তিনি তাকে হরেক রকম পরীক্ষায় সাহায্য করতেন।[১০]

মেক্সিকো সিটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সুইজারল্যান্ডের ইনস্টিটিউট আউফ ডেম রোসেনবার্গ থেকে শিক্ষা অর্জনের পর ১৯৬৫ সালে তিনি মেক্সিকোর জাতীয় স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[১][১১] ১৯৬৭ সালে তিনি পশ্চিম জার্মানির ফ্রেইবুর্গেত অ্যালবার্ট লুডউইগস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিমারাইজেশন কাইনেটিকসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি জর্জ পিমেন্টেলের সাথে কাজ করে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।[৬][৭] সেখানে তার সাথে লুইসা ওয়াই. তানের পরিচয় হয়। তারা ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর সে বছরের শরতে তারা ক্যালিফোর্নিয়ার আরভিনে পাড়ি জমান।[১২]

১৯৭৪ সালে তিনি পোস্টডক্টরাল রিসার্চার হিসেবে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিনে যোগদান করেন। তিনি এবং শেরউড রোল্যান্ড স্ট্রাটোমণ্ডলের ওজোন স্তরে সিএফসি গ্যাসের প্রভাব সম্পর্কে যৌথভাবে নেচার সাময়িকীতে নিবন্ধ প্রকাশ করেন।[১৩] তখন, সিএফসি রাসায়নিক চালক ও হিমায়ক গ্যাস হিসেবে ব্যবহৃত হত। তারা এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক কমিশনের জন্য ১৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করেন। তারা ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আটলান্টিক সিটিতে এটি মার্কিন রসায়ন সমাজে উপস্থাপন করেন। তারা তাদের প্রতিবেদনে ও মার্কিন রসায়ন সমাজ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিএফসি গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তারা সিএফসি গ্যাস নিষিদ্ধের দাবি জানান। তাদের এই কাজ মার্কিন জাতির মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে।[১৪]

তাদের গবেষণার ফলাফলকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করে রাসায়নিক শিল্প ও উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ১৯৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি একটি প্রতিবেদনে তাদের গবেষণার ফলাফলের পক্ষে মতামত প্রদান করে। এরপর, জোসেফ সি. ফারম্যান ও তার সহযোগী লেখকেরা ১৯৯৫ সালে নেচার সাময়িকীতে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এই পেপারে তাদের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। দিন দিন মানব সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৭ সালে ৫৬টি রাষ্ট্র মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষর করে, পরবর্তীতে তার রসায়নে নোবেল পুরস্কার পাবার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।[১৫] মোলিনা ২২ জন নোবেল বিজয়ীর মধ্যে একজন, যিনি ২০০৩ সালে তৃতীয় মানবতাবাদী ঘোষণাপত্রে সাক্ষর করেছিলেন।[১৬]

১৯৭৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মোলিনা ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিন, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি এবং ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে গবেষণা ছাড়াও শিক্ষাদানে নিয়োজিত ছিলেন। ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে তিনি বায়ুমণ্ডল ও গ্রহবিদ্যা বিভাগ ও রসায়ন বিভাগে কাজ করেছেন।[৬] ২০০৪ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগোত ও স্ক্রিপস সমুদ্রবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে বায়ুমণ্ডল বিজ্ঞান কেন্দ্রে যোগ দেন।[১৭] এছাড়া ২০০৫ সালে তিনি মেক্সিকো সিটিতে মোলিনা শক্তি ও পরিবেশবিষয়ক কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।[১৮]

মোলিনা ২০০০-২০০৫ সময়কালে সোসাইটি ফর সাইন্স অ্যান্ড পাবলিকের (তখন সাইন্স সার্ভিস নামে পরিচিত ছিল) বোর্ড অব ট্রাস্টির একজন সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।[১৯] তিনি জন ডি. ও ক্যাথেরিন টি ম্যাকার্থার ফাউন্ডেশনের একজন পরিচালক হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।[২০] এছাড়াও, তিনি ম্যাকার্থার ফাউন্ডেশনের প্রাতিষ্ঠানিক নীতি বিষয়ক কমিটি ও পৃথিবীর টেকসই নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[২১]

তিনি পন্টিফিশাল বিজ্ঞান একাডেমিতে কাজ করার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।[২২] তিনি ভ্যাটিকান কর্মশালা যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেছিলেন ও বীরাবর্ধন রামনাথন ও ডারউড জায়েলকের সাথে যৌথভাবে ওয়েল আন্ডার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস: ফার্স্ট অ্যাকশন পলিসিজ টু প্রটেক্ট পিপল অ্যান্ড দ্য প্লানেট ফ্রম এক্সট্রিম ক্লাইমেট চেঞ্জ (২০১৭) শিরোনামের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেছিলেন। প্রতিবেদনটিতে ১২ টি বাস্তব ও মাপযোগ্য সমাধানের কথা বলা হয়েছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করতে পারবে।[২৩][২৪]

বারাক ওবামা ২০০৮ সালে তাকে পরিবেশবিষয়ক ইস্যুগুলো নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করতে নিযুক্ত করেন।[২৫] বারাক ওবামার সময়কালে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।[২৬]

মোলিনার সাথে তার প্রথম স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে। লুইসা তান মোলিনা বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলাতে মোলিনা শক্তি ও পরিবেশবিষয়ক কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্রেরপ্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন।[২৭] তাদের পুত্র ফেলিপে হোসে মোলিনা ১৯৭৭ সালে জন্মগ্রহণ করে।[১][২৮] ফেলিপে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর বোস্টনে ইন্টার্নি করছেন। তিনি বেথ ইজরায়েল ডিয়াকোনেস মেডিকেল সেন্টারের সাথে সংযুক্ত আছেন। এছাড়া তিনি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও বেথ ইজরায়েল ডিয়াকোনেস মেডিকেল সেন্টারের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন[২৯] ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোলিনা গুয়াদালুপে আলভারেজের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[১]

মোলিনা বর্তমানে জিলেকোরের পরিচালকমণ্ডলীর একজন সদস্য।[৩০]

তার আবিষ্কার

মারিও মোলিনা ১৯৭৩ সালে পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে এফ. শেরউড রোল্যান্ডের গবেষণাগারে যোগ দেন। সেখানে, মোলিনা রোল্যান্ডের "হট অ্যাটম" রসায়ন বিষয়ক গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এটি হল এমন এক ধরনের রাসায়নিক বস্তু বিষয়ক গবেষণা, যেটি অতিরিক্ত স্থানান্তরিত শক্তির সাথে রেডিওঅ্যাকটিভ প্রক্রিয়ার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে থাকে।[১০][৩১]

তাদের এই গবেষণা খুব তাড়াতাড়ি ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (সিএফসি) তে গড়ায়ন সিএফসিকে ফ্রিজ, অ্যারোসল, প্লাস্টিক ফোম তৈরিতে ব্যবহৃত এক নিরীহ গ্যাস বলে মনে করা হত।[৩২] মানুষ কর্তৃক ব্যবহৃত হবার পর সিএফসি বায়ুমণ্ডলে পুঞ্জিভূত হয়ে থাকে। যে প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন মোলিনা জিজ্ঞেস করেছিলেন সেটা হল "মানুষ কি এমন জিনিস পরিবেশে পাঠাচ্ছে, যেটা আগে সেখানে ছিল না?"[৩১]

রোল্যান্ড ও মোলিনা পূর্বে সিএফসির মত বৈশিষ্ট্যযুক্ত পদার্থ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তারা যৌথভাবে রসায়ন বিষয়ক প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ওজোন, সিএফসি ও বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার কম্পিউটার মডেলিংয়ের সাহায্যে ওজোন স্তর ছিদ্রকরণ তত্ত্বের উন্নয়ন ঘটান। প্রথমে মোলিনা বের করার চেষ্টা যে, কীভাবে সিএফসিকে নষ্ট করা যায়। বায়ুমণ্ডলীয় নিম্নভাগে সিএফসি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মত আচরণ করে। মোলিনা বুঝতে পারলেন যে, বায়ুমণ্ডলে নির্গত হওয়া সিএফসিকে কোনোভাবে ধ্বংস করা সম্ভব না। তাদের নির্গমন বৃদ্ধি পেলে তাদের দ্বারা সম্পন্ন ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। স্ট্রাটোস্ফিয়ায়ের সর্বোচ্চ স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে থাকে। স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরে ওজোন গ্যাসের এক পাতলা স্তর ভূপৃষ্ঠকে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে থাকে।[৩২]

মোলিনা গবেষণার মাধ্যমে এই ধারণায় উপনীত হলেন যে, অতিবেগুনি রশ্মির ফোটন কণা, যেটি অক্সিজেন অণুকে ভাঙার জন্য পরিচিত, সেটি সিএফসিকে ভাঙতে পারে। যার দরুজ স্ট্রাটোমণ্ডলে ক্লোরিনের পরমাণুর সংখ্যা বাড়ে। এই ক্লোরিন পরমাণুতে একটি মুক্ত ইলেকট্রন থাকে এবং এটি খুব সক্রিয়। ক্লোরিন পরমাণু খুব সহজেই ওজোন অণুর (O3) সাথে বিক্রিয়া করতে পারে। ওজোন অণু ও ক্লোরিন পরমাণু বিক্রিয়া করে O2 এবং ক্লোরিন মনোক্সাইডের (ClO) সৃষ্টি করে।[৩২][৩৩]

Cl· + O
3
→ ClO· + O
2

ClO ও খুব সক্রিয়। এটি ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে দুইটি O2 অণু একটি Cl পরমাণু সৃষ্টি করে। Cl বিক্রিয়ার পর কোনো কিছু কর্তৃক শোষিত হয় না, বায়ুমণ্ডলে থেকে যায়।[৩২][৩৩]

ClO· + O· → Cl· + O
2

মোলিনা ও রোল্যান্ড আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, ক্লোরিন পরমাণুগুলো সিএফসি গ্যাস ধ্বংস করায় অংশ নিবে, যা ওজোন স্তরের ক্ষতিসাধন থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে। যখন তারা গবেষণা করলেন, তখন দেখলেন যে, সিএফসি শৃংখল বিক্রিয়ার সাহায্যে ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।[১০][১৫][৩১]

রোল্যান্ড ও মোলিনা তাদের গবেষণার কথা ১৯৭৪ সালের ২৮ জুন নেচার সাময়িকীতে প্রকাশ করেন। তারা বৈজ্ঞানিক সমাজের বাইরে তাদের গবেষণার কথা নীতিনির্ধারক ও সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করেন। ফলশ্রুতিতে, ওজোন স্তরকে রক্ষা করতে সিএফসি গ্যাসের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণীত হয়।[১০][৩১]

সম্মাননা

১৯৯৫ সালের দিকে ওরাল কন্ট্রসেপ্টিভ পিলের আবিষ্কারক লুইস ই. মিরামোন্তেসের সাথে মারিও মোলিনা (বামে), যিনি মোলিনার স্বদেশীয়

মোলিনা বিভিন্ন পুরস্কার জিতেছেন ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।[৬][৭] তিনি ১৯৯৫ সালে পল জে. ক্রুটজেন ও এফ. শেরউড রোল্যান্ডের সাথে ওজোনস্তরের ক্ষতিসাধনে সিএফসির অবদান সম্পর্কিত বিষয় আবিষ্কারের জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[২]

১৯৯৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমিতে কাজ করার জন্য নির্বাচিত হন।[৩৪] ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ও ২০০৩ সালে মেক্সিকোর জাতীয় মহাবিদ্যালয়ে কাজ করার জন্য নির্বাচন করা হয় তাকে।[৩৫][৩৬] তিনি মেক্সিকো বিজ্ঞান একাডেমির একজন সদস্য।[৬]মোলিনা মার্কিন উন্নত বিজ্ঞান সংগঠনের একজন ফেলো। ২০১৪ সালে তিনি এএএএস জলবায়ু বিজ্ঞান প্যানেলের "হোয়াট উই নো: দ্য রিয়েলিটি, রিস্ক অ্যান্ড রেস্পন্স টু ক্লাইমেট চেঞ্জ" শীর্ষক এক সেমিনারে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেছিলেন।[৩৭]

১৯৭৮ সালে উত্তরপূর্ব বিভাগে তাকে এসেলেন পদক প্রদান করে মার্কিন রসায়ন সমাজ। ১৯৮৮ সালে তিনি মার্কিন উন্নত বিজ্ঞান সংগঠন থেকে নিউকম্ব ক্লিভল্যান্ড পদক লাভ করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি নাসার নিকট থেকে অসাধারণ বৈজ্ঞানিক অবদাব পুরস্কার লাভ করেন। সেই বছরে জাতিসংঘ পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি তাকে গ্লোবাল ৫০০ পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৯০ সালে পিউ দাতব্য সংস্থা আয়োজিত পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক এক বিজ্ঞানী সম্মেলনে তাকে দশজন পরিবেশ বিজ্ঞানীর সাথে সম্মাননা প্রদান করা হয় ও দেড় লাখ মার্কিন ডলার অর্থ পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়।[৬][৩৮][৩৯]১৯৯৮ সালে মার্কিন রসায়ন সমাজের শিকাগো শাখা তাকে উইলার্ড গিবস পদক প্রদান করে।[৪০] ১৯৯৮ সালে তাকে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সৃজনশীল উদ্ভাবন পদক প্রদান করে মার্কিন রসায়ন সমাজ।[৪১] ২০০৩ সালে তিনি পরিবেশ বিভাগে নবম বার্ষিক হেইঞ্জ পুরস্কার লাভ করেন।

তার সম্মানে একটি গ্রহাণুর নামকরণ করা হয়েছে ৯৬৮০ মোলিনা।[৪২]

২০১৩ সালের ৮ আগস্ট তার নাম সেই বছরের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল ফর ফ্রিডম একজন প্রাপক হিসেবে প্রেস রিলিজে ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা[৪৩] তার সম্পর্কে লেখা ছিল:

মারিও মোলিনা একজন দূরদর্শী রসায়নবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী। মেক্সিকোতে জন্ম নেওয়া ড. মোলিনা আমেরিকায় এসেছিলেন তার স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য। পরবর্তীকালে তিনি কীভাবে ক্লোরোফ্লোরোকার্বন গ্যাস ওজোন স্তর ছিদ্র করে, তা আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ড. মোলিনা সান ডিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপজ; মারিও মোলিনা শক্তি ও পরিবেশ কেন্দ্রের পরিচালক; এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা।[৫]

সম্মানসূচক ডিগ্রি

মারিও মোলিনা ত্রিশটিরও বেশি সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেছেন।[৬] তিনি যেখান থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেছেন, তা নিম্নে প্রদত্ত হল:

  • ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৭)[৪৪]
  • টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৩)[৪৫]
  • ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৯)[৪৬]
  • হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (২০১২)[৪৭]
  • মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়: ন্যাসিওনাল অব মেক্সিকো (১৯৯৬), মেত্রোপলিতান (২০০৪), শাপিঙ্গো (২০০৭), ন্যাসিওনাল পলিটেকনিক (২০০৯)
  • মেক্সিকোর রাজ্য পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়: হিডালগো (২০০২),[৪৮] স্টেট অব মেক্সিকো (২০০৬),[৪৯] মিশোক্যান (২০০৯),[৫০] গুয়াদালাজারা (২০১০),[৫১] সান লুইস পোতোসি (২০১১)[৫২]
  • মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়: মিয়ামি (২০০১), ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল (২০০২), সাউদার্ন ফ্লোরিডা (২০০৫), ক্লেয়ারমন্ট গ্রাজুয়েট (২০১৩ সালে ঘোষিত)
  • মার্কিন মহাবিদ্যালয়: কানেক্টিকাট (১৯৯৮), ট্রিনিটি (২০০১), ওয়াশিংটন (২০১১), হুইটিয়ের (২০১২), উইলিয়ামস (২০১৫)
  • কানাডীয় বিশ্ববিদ্যালয়: ক্যালগ্রি (১৯৯৭), ওয়াটারলু (২০০২), ব্রিটিশ কলম্বিয়া (২০১১)
  • ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়: পূর্ব আংলিয়া (১৯৯৬), দশম আলফোনসো (২০০৯), কমপাল্টেন্স অব মাদ্রিদ (২০১২), ফ্রি অব ব্রাসেলস (২০১০),

গ্রন্থতালিকা

প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিবেদন:

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ