ম্যুলুজ

পূর্ব ফ্রান্সের ও-রাঁ দেপার্ত্যমঁ-র (জেলার) একটি কম্যুন (শহর)

ম্যুলুজ (উচ্চারণ: [myluz]) পূর্ব ফ্রান্সে সুইজারল্যান্ড ও জার্মান সীমান্তে অবস্থিত একটি শহর ও কম্যুন। এটি ওত-রাঁ দেপার্তমঁর বৃহত্তম শহর এবং স্ত্রাসবুরের পর আলসেস রেজিওঁর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ২০১৭ সালে এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ১০৯,৪৪৩ জন,[১] এবং ২০১৬ সালে এই মহানগর এলাকার জনসংখ্যা ছিল ২৮৫,১২১ জন।[২] ম্যুলুজ হল ম্যুলুজ আলসাস আগ্লোমেরাশিওঁর ৩৯টি কম্যুনের একটি প্রধান কম্যুন।[৩][৪]

ম্যুলুজ

ম্যুলুজ শহরটি সিতে দ্য লোতোমোবিল (যা মুজে নাশিওনাল দ্য লোতোমোবিল বা জাতীয় অটোমোবাইল জাদুঘর নামেও পরিচিত) ও সিতে দ্যু ত্র্যাঁ (যা ম্যুজে ফ্রঁসে দ্যু শেমাঁ দ্য ফের বা ফরাসি রেলওয়ে জাদুঘর নামেও পরিচিত)-সহ একাধিক জাদুঘরের জন্য প্রসিদ্ধ। এই দুটি যথাক্রমে বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোবাইল ও রেলওয়ে জাদুঘর। "ফরাসি ম্যানচেস্টার"[৫] নামে পরিচিত এই শিল্প নগরীটিতে আপার আলসাস বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত, যেখানে ইউরোপিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটির সদর দপ্তর রয়েছে।

ইতিহাস

খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ অব্দে ম্যুলুজের পশ্চিমপ্রান্তে আরিওভিস্টুসের নের্তৃত্বে জার্মান দল জুলিয়াস সিজারের রোমান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। শহরটি নিয়ে প্রথম লিখিত যে নথি পাওয়া যায় তা ১২শ শতাব্দীর। এটি পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সুন্দগাউয়ের দক্ষিণ আলসাটিয়ান কাউন্টির অংশ ছিল। ১৩৫৪ থেকে ১৫১৫ সাল পর্যন্ত ম্যুলুজ আলসাসের দশটি মুক্ত রাজকীয় শহরের সংগ দেকাপোলের অংশ ছিল। ১৫১৫ সালে শহরটি সহযোগী হিসেবে সুইস কনফেডারেশনে যোগ দেয় এবং এর ফলে ফ্রান্স শহরটিকে ১৬৪৮ সালে ওয়েস্টফালিয়া শান্তি চুক্তির পর সুন্দগাউয়ের বাকি অংশের মত সংযোজন করেনি। আলসাসে অবস্থিত অন্য একটি দেশের অঞ্চল হিসেবে এটি সুইস ফেডারেশনের সহযোগী হয়ে স্ত্রাদত্রেপিউবলিক ম্যুলহাউসেন নামে মুক্ত ও স্বাধীন ক্যালভিনিস্ট প্রজাতন্ত্র ছিল। ১৭৯৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি এই শহরের নাগরিকদের ভোটের ১৭৯৮ সালের ২৮শে জানুয়ারি ফরাসি বিপ্লবের ডিরেক্টরি সময়কালে ম্যুলুজ চুক্তি অনুসারে এটি ফ্রান্সের অংশ হয়।

ফ্রাঙ্কো-প্রুসীয় যুদ্ধে (১৮৭০-১৮৭১) প্রুসীয়রা বিজয়ী হলে ম্যুলুজ জার্মান সাম্রাজ্যে আলসাস-লরেন (১৮৭১-১৯১৮) অঞ্চলের অংশ হয়। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ফরাসি সৈন্যরা শহরটিকে স্বল্প সময়ের জন্য দখল করে নেয়, কিন্তু দুই দিন পর ম্যুলুজ যুদ্ধের পর তারা সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে ফরাসি সৈন্যদল আলসাসে প্রবেশ করে এবং ভার্সাই চুক্তির অধীনে জার্মানরা শহরটি ফ্রান্সের নিকট হস্তান্তর করে। ১৯৪০ সালে ফ্রান্স যুদ্ধের পর জার্মান সেনারা শহরটি দখল করে। ১৯৪৫ সালের মে মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে এটি ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে আসে।

১৮শ শতাব্দীর মধ্যভাগে টেক্সটাইল ও চামড়া শিল্পের বিস্তার এবং পরবর্তী কালে রাসায়নিক ও প্রকৌশল শিল্পের বিকাশের মধ্য দিয়ে শহরটি উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। ম্যুলুজকে দীর্ঘসময় ফরাসি ম্যানচেস্টার নামে অভিহিত করা হত। শহরটির লুইজিয়ানার সাথে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল, যেখান থেকে তুলা আমদানি করা হত। এছাড়া শহরটির লেভান্তের সাথে সম্পর্ক ছিল।

ভূগোল

ম্যুলুজ শহর দিয়ে দুটি নদী প্রবাহিত হয়েছে। সেগুলো হল দোলের ও ইল। এই দুটি রাইন নদীর শাখা নদী। ম্যুলুজ থেকে স্ত্রাসবুরজুরিখের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিমি (৬২ মাইল), মিলানের দূরত্ব ৩৫০ কিম (২১৭ মাইল), এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের দূরত্ব প্রায় ৩৪০ কিমি (২১১ মাইল)। এটি সুইজারল্যান্ডের বাসেল ও জার্মানির ফ্রাইবুর্গের সন্নিকটে অবস্থিত এবং এই দুটি শহরের সাথে যৌথভাবে ইউরোএয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে থাকে।[৬]

পরিবহন

আকাশপথ

ম্যুলুজ শহরটি সুইজারল্যান্ডের বাসেল ও জার্মানির ফ্রাইবুর্গ শহরের সাথে যৌথভাবে ইউরোএয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে থাকে।[৬] বিমানবন্দরটি শহর থেকে ২৫ কিমি (১৬ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।

রেলপথ

ম্যুলুজ-ভিল স্টেশনটি পারি, দিজোঁ, ব্যজঁসোঁ, বেলফোর, স্ত্রাসবুর, লিওঁ, মার্সেই, মোঁপেলিয়েলিল-সহ ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরের সাথে এই শহরের সংযোগ স্থাপন করে থাকে। কিছু রেলগাড়ি বাসেল, বার্ন ও জুরিখ-সহ সুইজারল্যান্ডের কয়েকটি শহরেও যাতায়াত করে। এছাড়া একটি রেলগাড়ি ফ্রাঙ্কফুর্টেও রেলসেবা প্রদান করে এবং ইউরোসিটি ব্রাসেলস, লুক্সেমবুর্গ, স্ত্রাসবুর ও বাসেল শহরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।

সড়কপথ

মটরওয়ে এ৩৬ শহরটির সাথে ফ্রান্সের পশ্চিম প্রান্তের শহর দিজোঁ, পারিলিওঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। এ৩৫ উত্তর-দক্ষিণ বরাবর স্ত্রাসবুরবাসেল শহরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।

ভগ্নী-প্রতিম শহর

ম্যুলুজ নিম্নোক্ত শহরগুলোর ভগ্নী-প্রতিম শহর:[৭]

  • ওয়ালসাল, ইংল্যান্ড, ১৯৫৩ থেকে
  • অঁভের্স, বেলজিয়াম, ১৯৫৬ থেকে
  • কাসেল, জার্মানি, ১৯৬৫ থেকে
  • বেরগামো, ইতালি, ১৯৮৯ থেকে
  • কেমনিৎজ, জার্মানি, ১৯৯০ থেকে
  • গিভাতাইম, ইসরায়েল, ১৯৯১ থেকে
  • তিমিশোয়ারা, রোমানিয়া, ১৯৯১ থেকে
  • জিনিং, চীন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ