রাফায়েল নাদাল

স্পেনীয় টেনিস খেলোয়াড়

রাফায়েল নাদাল পেরেরা (স্পেনীয়: [rafaˈel naˈðal paˈɾeɾa];[৫] একজন স্প্যানীয় পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়। তিনি বর্তমানে বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে ২নংয়ে অবস্থান করছেন। এছাড়া, অ্যাসোসিয়েশন অব টেনিস প্রফেশনালস (এটিপি) দ্বারা পরিচালিত এই র‍্যাঙ্কিংয়ে তিনি ২০৯ সপ্তাহ ১ নংয়ে অবস্থান করেছেন এবং ১ নং হিসেবে বছর শেষ করেছেন পাঁচবার। নাদাল ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম পুরুষ একক শিরোপা জিতেছেন, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তিনি ৯২টি এটিপি একক শিরোপা জিতেছেন, যার মধ্যে রেকর্ড ১৪টি ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা এবং ৩৬টি মাস্টার্স শিরোপাসহ ৬২টি ক্লে কোর্টে অর্জন। ক্লেতে তার টানা ৮১টি জয় উন্মুক্ত যুগে এক পৃষ্ঠতলে দীর্ঘতম জয়ের ধারা।

রাফায়েল নাদাল
২০১৫ সালে অ্যাগন চ্যাম্পিয়নসে এক অনুশীলন সেশনে নাদাল
পূর্ণ নামরাফায়েল নাদাল পারেরা
দেশ স্পেন
বাসস্থানমানাকর, মায়োর্কা, স্পেন
জন্ম (1986-06-03) ৩ জুন ১৯৮৬ (বয়স ৩৭)
মানাকর, মায়োর্কা, স্পেন
উচ্চতা১.৮৫ মিটার (৬ ফুট ১ ইঞ্চি)[১]
পেশাদারিত্ব অর্জন২০০১
খেলার ধরনবাঁহাতি (দুই হাতের ব্যাকহ্যান্ড)
প্রশিক্ষকটনি নাদাল (১৯৯০–২০১৭)[২]
ফ্রান্সিসকো রইগ (২০০৫–)
কার্লোস মোয়া (২০১৬–)
মার্ক লোপেজ (২০২১–)[৩]
পুরস্কারমার্কিন$১২৭,১২১,৩৮৫ [৪]
  • অর্থ-পুরস্কার হিসেবে ৩য়
ওয়েবসাইটrafaelnadal.com
একক
পরিসংখ্যান১০৩৮–২০৯ (৮৩.২৪%)[ক]
শিরোপা৯০ (ওপেন যুগে ৪র্থ)
সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিং (১৮ আগস্ট ২০০৮)
বর্তমান র‌্যাঙ্কিং (১৭ জানুয়ারি ২০২২)[১]
গ্র্যান্ড স্ল্যাম এককের ফলাফল
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনজয়ী (২০০৯, ২০২২)
ফ্রেঞ্চ ওপেনজয়ী (২০০৫, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০)
উইম্বলডনজয়ী (২০০৮, ২০১০)
ইউএস ওপেনজয়ী (২০১০, ২০১৩, ২০১৭, ২০১৯)
অন্যান্য প্রতিযোগিতা
ট্যুর ফাইনালফাইনাল (২০১০, ২০১৩)
অলিম্পিক গেমস (২০০৮)
দ্বৈত
পরিসংখ্যান১৩৮–৭৪ (৬৫.০৯%)
শিরোপা১১
সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিং২৬ (৮ আগস্ট ২০০৫)
বর্তমান র‌্যাঙ্কিং১১৫৬ (৩১ জানুয়ারি ২০২২)[১]
গ্র্যান্ড স্ল্যাম দ্বৈতের ফলাফল
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন৩য় রাউন্ড (২০০৪, ২০০৫)
উইম্বলডন২য় রাউন্ড (২০০৫)
ইউএস ওপেনসেমিফাইনাল (২০০৪)
অন্যান্য দ্বৈত প্রতিযোগিতা
অলিম্পিক গেমস (২০১৬)
দলগত প্রতিযোগিতা
ডেভিস কাপজয়ী (২০০৪, ২০০৮, ২০০৯, ২০১১, ২০১৯)
পদকের তথ্য
 স্পেন-এর প্রতিনিধিত্বকারী
অলিম্পিক গেমস
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান২০০৮ বেইজিংএকক
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান২০১৬ রিও দি জেনেরিওদ্বৈত
সর্বশেষ হালনাগাদ: ৩১ জানুয়ারি ২০২২

নাদাল এটিপি ট্যুরের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কিশোরদের একজন। তিনি তার ২০তম জন্মদিনের আগে বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে ২ নম্বরে পৌঁছেছিলেন এবং ১৬টি শিরোপা জিতেছিলেন, যার মধ্যে তার প্রথম ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং ছয়টি মাস্টার্স টুর্নামেন্ট উল্লেখযোগ্য। নাদাল ২০০৮ সালে একটি ঐতিহাসিক উইম্বলডন ফাইনালে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও দীর্ঘদিনের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় রজার ফেদেরারের বিপক্ষে মাটির বাইরে প্রথম বড় জয়ের পর প্রথমবারের মতো ১ নং হন। সেই বছর বেইজিংয়ে একক বিভাগে তিনি একটি অলিম্পিক স্বর্ণপদকও জিতেছিলেন। ২০১০ সালে ইউএস ওপেনের ফাইনালে নোভাক জোকোভিচকে পরাজিত করার পর তৎকালীন ২৪ বছর বয়সী নাদাল উন্মুক্ত যুগের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম অর্জন করেছিলেন এবং একই বছরে তিনটি ভিন্ন পৃষ্ঠতলে (হার্ড, ঘাস এবং ক্লে) তিনটি মেজর জয়ী প্রথম ব্যক্তি হয়েছিলেন। তার অলিম্পিক স্বর্ণপদককে বিবেচনা করলে তিনি একক খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্ল্যাম সম্পন্ন করা মাত্র দুজন পুরুষের একজন (অন্যজন হলেন আন্দ্রে আগাসি)। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নাদালের প্রশিক্ষক ছিলেন তার চাচা টনি নাদাল।

২০১০ সাল থেকে নাদাল ফ্রেঞ্চ ওপেনে আধিপত্য বজায় রেখেছেন। তিনি পরপর অন্তত চারটি শিরোপা দুবার জিতেছেন। একই সময়ে তিনি আরও তিনটি ইউএস ওপেন শিরোপা এবং আরেকটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপা জিতেছেন। ২০২২ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তিনি পুরুষদের এককে সর্বাধিক মেজর শিরোপা জয়ের জোকোভিচ এবং ফেদেরারের রেকর্ড ছাড়িয়ে যান, একই সাথে তিনি ডাবল ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লামও সম্পন্ন করেন।

বিগ থ্রির একমাত্র বাঁহাতি সদস্য নাদাল। তার প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে একটি হল তার ফোরহ্যান্ড, যা তিনি নিয়মিতভাবে দুরূহ কোণে অত্যন্ত ভারী টপস্পিন দিয়ে আঘাত করেন। তিনি সার্ভ ব্রেক করায় সেরাদের একজন। রিটার্ন গেম, রিটার্ন পয়েন্ট, এবং ব্রেক পয়েন্ট জিতায় নাদালকে নিয়মিতভাবে ট্যুরের অগ্রগামীদের একজন হিসেবে দেখা যায়। নাদাল পাঁচবার স্টেফান এডবার্গ স্পোর্টসম্যানশিপ অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন, এবং ২০১১ এবং ২০২১ সালে লরিয়াস ওয়ার্ল্ড স্পোর্টসম্যান অফ দ্য ইয়ার ছিলেন। স্পেনকে প্রতিনিধিত্ব করে তিনি একক এবং দ্বৈত উভয় বিভাগেই একটি করে অলিম্পিক স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন এবং পাঁচটি ডেভিস কাপ শিরোপা জিতেছেন। নাদাল মায়োর্কায় একটি টেনিস একাডেমিও খুলেছেন এবং তিনি একজন সক্রিয় জনহিতৈষী। নাদাল এবং ফেদেরার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তারা ভাল বন্ধু, ফেদেরার তার শেষ ম্যাচ খেলার জন্য নাদাল কেই বেছে নেন,ডাবলস পার্টনারস হিসেবে।নাদাল মানসিক ভাবে সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। পুরো ক্যারিয়ার এ তিনি একটি র্্যাকেট ও ভাংগেন নি।

প্রারম্ভিক জীবন

রাফায়েল নাদাল পেরেরা স্পেনের বালেয়ারিক দ্বীপপুঞ্জের মায়োর্কা দ্বীপের মানাকোর নামের একটি শহরে ৩ জুন ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবার নাম সেবাস্তিয়ান নাদাল হোমার এবং মায়ের নাম অ্যানা মারিয়া পেরেরা ফেমেনিয়াস। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী যিনি একটি বীমা কোম্পানি, ভিদ্রেস মায়োর্কা নামের কাচ এবং জানালার কোম্পানি এবং সা পুন্তা নামের রেস্তোরাঁর মালিক। রাফায়েলের একজন ছোট বোন আছে যার নাম মারিয়া ইসাবেল। তার চাচা মিগুয়েল আনহেল নাদাল একজন অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার ফুটবলার, যিনি আরসিডি মায়োর্কা, এফসি বার্সেলোনা এবং স্পেনের জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন।[৬] রাফায়েল ছোটবেলায় বার্সেলোনার স্ট্রাইকার রোনালদোকে আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করতেন এবং তার চাচার মাধ্যমে বার্সেলোনার ড্রেসিংরুমে প্রবেশ করে ব্রাজিলিয়ানের সাথে একটি ছবি তুলেছিলেন।[৭] রাফায়েলের ভেতরের প্রাকৃতিক প্রতিভাকে চিনতে পেরে তার আরেক চাচা টনি নাদাল, যিনি একজন টেনিস কোচ, তাঁকে টেনিস খেলার সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন যখন তার বয়স তিন বছর ছিল।[৮]

নাদাল ৮ বছর বয়সে একটি আঞ্চলিক অনূর্ধ্ব-১২ টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন যে সময় তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন।[৯] এই কারণে টনি নাদাল প্রশিক্ষণকে আরো কঠোর করে তোলেন এবং সেই সময়েই নাদালের তৎকালীন দুই হাতের ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক অধ্যয়ন করার পর তার চাচা নাদালকে টেনিস কোর্টে সহজাত সুবিধা পাওয়ার জন্য বাঁ-হাতে খেলতে উৎসাহিত করেছিলেন।[৯]

১২ বছর বয়সে নাদাল তার বয়সের গ্রুপে স্প্যানিশ এবং ইউরোপীয় টেনিস শিরোপা জিতেছিলেন।[৯] তখন তিনি একই সাথে ফুটবলও খেলছিলেন। নাদালের বাবা তাঁকে ফুটবল এবং টেনিসের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে জোর করেন যাতে তার স্কুলের পড়াশোনা সম্পূর্ণরূপে খারাপ না হয়ে যায়। নাদাল বলেছেন: "আমি টেনিস বেছে নিয়েছিলাম। সাথে সাথে ফুটবল বন্ধ করতে হয়েছিল।"[৯]

তার বয়স যখন ১৪ বছর স্প্যানিশ টেনিস ফেডারেশন নাদালকে মায়োর্কা ছেড়ে বার্সেলোনায় এসে তার টেনিস প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। তার পরিবার এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল।[৯] এর আংশিক কারণ তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে তার পড়াশোনার ক্ষতি হবে, কিন্তু এছাড়াও টনি বলেছিল যে "আমি বিশ্বাস করতে চাই না যে একজন ভাল ক্রীড়াবিদ হওয়ার জন্য আপনাকে আমেরিকা বা অন্য জায়গায় যেতে হবে৷ আপনি এটি নিজের বাড়ি থেকে করতে পারেন।"[৮] বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্তের মানে ছিল ফেডারেশন থেকে কম আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি; এর পরিবর্তে নাদালের বাবা খরচ বহন করেন। ২০০১ সালের মে মাসে তিনি একটি ক্লে-কোর্ট প্রদর্শনী ম্যাচে প্রাক্তন গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্ট বিজয়ী প্যাট ক্যাশকে পরাজিত করেন।[৬]

পেশাদার টেনিস জীবন

২০০১–২০০৪: প্রাথমিক ক্যারিয়ার এবং ডেভিস কাপ শিরোপা

নাদাল ১৫ বছর বয়সে পেশাদার হিসেবে খেলা শুরু করেন[১০] এবং আইটিএফ জুনিয়র সার্কিটে দুটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন। ২৯ এপ্রিল ২০০২ সালে প্যারাগুয়ের রামন দেলগাদোকে পরাজিত করে বিশ্বের ৭৬২ নং নাদাল ১৫ বছর ১০ মাস বয়সে তার প্রথম এটিপি ম্যাচ জিতেছিলেন।[১১] তিনি উন্মুক্ত যুগে ১৬ বছর বয়সের আগে এই মাইলফলক ছোঁয়া নবম খেলোয়াড় ছিলেন।[১২]

২০০১ সালে নাদাল চ্যালেঞ্জার সিরিজের একক ম্যাচে ১-১ রেকর্ড নিয়ে এবং কোনো শিরোপা বা ফাইনালে উপস্থিতি না নিয়েই বছরটি শেষ করেন। তিনি কোনো দ্বৈত চ্যালেঞ্জার্স ইভেন্টে অংশ নেননি। আইটিএফ ফিউচারে নাদালের রেকর্ড একক ম্যাচে ৭-৫ এবং দ্বৈত ম্যাচে ১-২ ছিল এবং কোন শিরোপা বা ফাইনালে উপস্থিতি ছিল না।[১৩]

২০০২ সালে ১৬ বছর বয়সী নাদাল উইম্বলডনে ছেলেদের একক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিলেন যা তার প্রথম আইটিএফ জুনিয়র ইভেন্ট ছিল।[১৪] একই বছরে, তিনি আইটিএফ জুনিয়র সার্কিটে তার দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ উপস্থিতিতে জুনিয়র ডেভিস কাপের ফাইনালে স্পেনের হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করতে সাহায্য করেছিলেন।[১৪][১৫] ২০০২ সালে চ্যালেঞ্জার লেভেলের একক ম্যাচে নাদালের রেকর্ড ছিল ৪-২ এবং শিরোপাবিহীন কাটিয়েছিলেন। তিনি কোনো দ্বৈত চ্যালেঞ্জার্স ইভেন্টে অংশ নেননি। নাদাল একক ম্যাচে ৪০-৯ এবং দ্বৈত ম্যাচে ১০-৯ ফিউচারস রেকর্ড নিয়ে বছরটি শেষ করেন। তিনি এই পর্যায়ে ৬টি একক টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন যা মধ্যে ৫টি ক্লে কোর্টে এবং ১টি হার্ড কোর্টে। তিনি কোনো দ্বৈত টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে পারেননি।[১৬][১৭]

এপ্রিলের শেষে নাদাল একজন ওয়াইল্ডকার্ড হিসাবে ক্লে-কোর্টে অনুষ্ঠিত মায়োর্কা ওপেনেও প্রবেশ করেন যেখানে তিনি একক এবং দ্বৈত উভয় বিভাগেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই ওপেনটি এটিপি আন্তর্জাতিক সিরিজের অংশ ছিল। এককে, নাদাল রাউন্ড অফ ৩২-এ রামন দেলগাদোকে পরাজিত করে তার প্রথম এটিপি ম্যাচ জিতেছিলেন। তারপর তিনি রাউন্ড অফ ১৬-এ অলিভিয়ের রোচাসের কাছে পরাজিত হন।[১৬] দ্বৈতে, নাদাল এবং তার সঙ্গী, বার্তোলোমে সালভা ভিদাল, প্রথম রাউন্ডে ডেভিড অ্যাডামস এবং সাইমন অ্যাসপেলিনের কাছে পরাজিত হন।[১৮]

জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত রাফায়েল নাদালের একক র‍্যাংকিংয়ের ইতিহাসের চার্ট
জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচের একক র‍্যাংকিংয়ের ইতিহাসের সংযুক্ত চার্ট

২০০৩ সালে নাদাল দুটি চ্যালেঞ্জার শিরোপা জিতেছিলেন এবং ৪৯ নম্বর র‍্যাংকে বছর শেষ করেন। তিনি এটিপি বছরের সেরা নবাগত পুরস্কার জিতেছিলেন। ২০০৩ সালে তার উইম্বলডন অভিষেকে ১৯৮৪ সালে বরিস বেকারের পর তিনি সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছান।[১৯] উইম্বলডনের পর নাদাল বোশটাডে অংশগ্রহণ করেন যেখানে তিনি কোয়ার্টার ফাইনালে নিকোলাস ল্যাপেন্টির কাছে পরাজিত হন এবং স্টুটগার্টে রাউন্ড অফ ৩২-এ তিনি ফার্নান্দো গঞ্জালেজের কাছে হেরে যান। অবশেষে, কার্লোস ময়ার কাছে উমাগের সেমিফাইনাল হারেন।

আরও দুটি চ্যালেঞ্জার পর্যায়ের ইভেন্ট খেলার পর, যেগুলো তার ক্যারিয়ারের শেষ চ্যালেঞ্জার টুর্নামেন্ট ছিলো, নাদাল তার ২০০৩ সালের যাত্রা এটিপি ইভেন্টে তিনটি প্রথম রাউন্ড হারের মাধ্যমে শেষ করেছিলেন।[১৩] নাদাল ২০০৩ সালে সাতটি দ্বৈত টুর্নামেন্টেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং উমাগে অনুষ্ঠিত ক্লে-কোর্ট টুর্নামেন্ট ক্রোয়েশিয়া ওপেনে তার প্রথম এটিপি শিরোপা (ডাবল বা একক) জিতেছিলেন, যেখানে তিনি অ্যালেক্স লোপেজ মরনের সাথে দলবদ্ধ হয়ে ফাইনালে টড পেরি এবং থমাস শিমাদাকে সোজা সেটে পরাজিত করেছিলেন।[২০]

২০০৪ সালের শুরু হয়েছিল মহারাষ্ট্র ওপেনে টমি রোব্রেদোর সাথে একটি দ্বৈত চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার মাধ্যমে।[২১] এককে, নাদাল ২০০৪ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছেছিলেন যেখানে তিনি অস্ট্রেলিয়ান লেইটন হিউইটের বিপক্ষে তিন সেটে ম্যাচ হেরেছিলেন। সেই বছরের পরবর্তীতে, ৩৪তম র‍্যাঙ্কের ১৭ বছর বয়সী নাদাল মিয়ামি ওপেনে তৎকালীন ১ নং র‍্যাংকের অধিকারী রজার ফেদেরারের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেন যা তাঁদের মধ্যকার বহু ম্যাচের সূচনা ছিল।[২২][২৩] ম্যাচটি নাদাল সোজা সেটে জিতেছিলেন। তিনি সে বছর ফেদেরারকে হারানো ছয়জন খেলোয়াড়ের একজন ছিলেন (টিম হেনম্যান, আলবার্ট কস্তা, গুস্তাভো কুয়ের্তেন, ডমিনিক হরবাতি এবং টমাস বার্ডিচ এই কৃতীত্বের সহযোগী ছিলেন)। এরপর চতুর্থ রাউন্ডে তিনি ফার্নান্দো গঞ্জালেজের কাছে পরাজিত হন। বাম পায়ের গোড়ালিতে একটি স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের কারণে তিনি ফ্রেঞ্চ ওপেনসহ বেশিরভাগ ক্লে কোর্ট মৌসুম খেলার বাইরে কাটান।[৬] আগস্ট মাসে নাদাল প্রোকোম ওপেনের ফাইনালে হোসে আকাসুসোকে দুই সেটে হারিয়ে তার প্রথম এটিপি একক শিরোপা জিতেছিলেন।[২৪]

নাদাল ১৮ বছর এবং ছয় মাস বয়সে একটি বিজয়ী দেশের হয়ে ডেভিস কাপের ফাইনালে একক ম্যাচে জয়ী হওয়া সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হয়েছিলেন।[২৫] ২ নং অ্যান্ডি রডিককে পরাজিত করে তিনি স্পেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ৩-২ ব্যবধানে জয়ী করে ২০০৪ সালের শিরোপা জিততে সাহায্য করেছিলেন। তিনি ৫১ নং র‍্যাংকে বছর শেষ করেছিলেন।

২০০৫: প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা

২০০৫ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে, নাদাল চতুর্থ রাউন্ডে লেইটন হিউইটের কাছে হেরে যান যিনি পরে রানার্স আপ হন। তিনি দুই মাস পরে ২০০৫ মিয়ামি মাস্টার্সের ফাইনালে পৌঁছেছিলেন এবং সরাসরি সেটের জয় থেকে দুই পয়েন্ট দূরে থাকা সত্ত্বেও ১ নং রজার ফেদেরারের কাছে পাঁচ সেটে পরাজিত হন। দুটি পারফরম্যান্সই নাদালের জন্য বড় ধরনের সফলতা হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল।[২৬][২৭]

এরপর বসন্ত ক্লে-কোর্ট মৌসুমে তিনি আধিপত্য স্থাপন করেন। তিনি টানা ২৪টি একক ম্যাচ জিতেছিলেন যা আন্দ্রে আগাসির উন্মুক্ত যুগে একজন কিশোর হিসেবে টানা ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন।[২৮] নাদাল বার্সেলোনায় তর্নেও কন্দে দে গোদো জিতেছিলেন এবং ২০০৫ মন্টে কার্লো মাস্টার্স এবং ২০০৫ রোম মাস্টার্সের ফাইনালে ২০০৪ ফ্রেঞ্চ ওপেনের রানার-আপ গিয়েরমো করিয়াকে পরাজিত করেছিলেন। এই জয়গুলি তার র‍্যাঙ্কিংকে ৫ নম্বরে উন্নীত করেছিল[২৯] এবং তাঁকে তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফ্রেঞ্চ ওপেন খেলার আগে সেরাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তার ১৯তম জন্মদিনে, নাদাল ২০০৫ ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে শীর্ষ বাছাই ফেদেরারকে পরাজিত করেছিলেন। নাদাল সেই বছর ফেদেরারকে পরাজিত করা মাত্র চারজন খেলোয়াড়ের একজন ছিলেন (বাকীরা ছিলেন মারাত সাফিন, রিচার্ড গাস্কেট এবং ডেভিড নালবানদিয়ান)। তিনি দুই দিন পরে মারিয়ানো পুয়ের্তাকে ফাইনালে পরাজিত করেন। এর ফলে ১৯৮২ সালে ম্যাটস উইল্যান্ডারের পর দ্বিতীয় পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি তার প্রথম প্রচেষ্টায় ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছিলেন। তিনিই প্রথম কিশোর যে পিট সাম্প্রাসের ১৯ বছর বয়সে ১৯৯০ ইউএস ওপেন জেতার পর গ্র্যান্ড স্ল্যাম একক শিরোপা জিতেছিলেন।[৬] এই জয় তার র‍্যাঙ্কিংকে ৩ নম্বরে উন্নীত করেছিল।[২৯]

প্যারিসে তার বিজয়ের তিন দিন পর নাদালের ২৪-ম্যাচের জয়ের ধারাটি ঘাসের কোর্টে জার্মানির হ্যালে অনুষ্ঠিত গেরি ওয়েবার ওপেনের প্রথম রাউন্ডে ভেঙে যায় যেখানে তিনি আলেকজান্ডার ওয়াস্কের কাছে হেরেছিলেন।[৩০] এরপর তিনি ২০০৫ উইম্বলডনের দ্বিতীয় রাউন্ডে লুক্সেমবার্গের জিলস মুলারের কাছে হেরে ছিটকে যান। উইম্বলডনের পরপরই নাদাল টানা ১৬টি ম্যাচ এবং টানা তিনটি টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন যার ফলে ২৫ জুলাই ২০০৫ সালে তার র‌্যাঙ্কিং ২ নম্বরে উঠে আসে। ২০০৫ কানাডা মাস্টার্সের ফাইনালে আগাসিকে হারিয়ে নাদাল তার উত্তর আমেরিকার গ্রীষ্মকালীন হার্ড-কোর্ট মৌসুম শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০০৫ সিনসিনাটি মাস্টার্সের প্রথম রাউন্ডে হেরে যান। নাদাল ২০০৫ ইউএস ওপেনে দ্বিতীয় বাছাই হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে ৪৯ নং জেমস ব্লেকের কাছে চার সেটে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন।

সেপ্টেম্বর মাসে, তিনি বেইজিংয়ে চায়না ওপেনের ফাইনালে করিয়াকে পরাজিত করেন এবং ইতালির বিপক্ষে তার ডেভিস কাপের দুটি ম্যাচেই জয়লাভ করেন। অক্টোবরে, তিনি ২০০৫ মাদ্রিদ মাস্টার্সের ফাইনালে ইভান লুবিসিচকে পরাজিত করে বছরের চতুর্থ মাস্টার্স শিরোপা জিতেছিলেন। তারপরে তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন যার কারণে বছরের শেষের টেনিস মাস্টার্স কাপে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।[৩১]

২০০৫ সালে নাদাল এবং ফেদেরার দুজনেই এগারোটি একক শিরোপা এবং চারটি মাস্টার্স শিরোপা জিতেছিলেন। নাদাল ম্যাটস উইল্যান্ডারের ১৯৮৩ সালে আগের গড়া নয়টি কৈশোরের রেকর্ড ভেঙেছিলেন।[৩২] নাদালের আটটি শিরোপা কাদামাটিতে ছিল এবং বাকিগুলি হার্ড কোর্টে ছিল। নাদাল ৭৯টি ম্যাচ জিতেছিলেন যা ফেদেরারের ৮১টির পরে দ্বিতীয়। এছাড়াও, তিনি একজন স্প্যানিয়ার্ড হিসেবে বছর শেষের সর্বোচ্চ র‍্যাংকিং এবং এটিপি বছরের সবচেয়ে উন্নতিসাধিত খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।

২০০৬: দ্বিতীয় ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা

নাদাল পায়ের চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন মিস করেছিলেন।[৩৩] তিনি ফেব্রুয়ারিতে খেলা প্রথম টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে হেরে যান যা ছিল ফ্রান্সের মার্সেইতে ওপেন ১৩ টুর্নামেন্ট। দুই সপ্তাহ পরে তিনি দুবাই ডিউটি ফ্রি পুরুষ ওপেনের ফাইনালে রজার ফেদেরারকে তার বছরের প্রথম পরাজয়ের স্বাদ দেন (২০০৬ সালে, শুধুমাত্র রাফায়েল নাদাল এবং অ্যান্ডি মারে ছিলেন দুজন পুরুষ যারা ফেদেরারকে পরাজিত করেছিলেন)। বসন্তের হার্ড-কোর্ট মৌসুমের শেষ দিকে নাদাল ক্যালিফোর্নিয়ার ইন্ডিয়ান ওয়েলসে প্যাসিফিক লাইফ ওপেনের সেমিফাইনালে জেমস ব্লেকের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজিত হয়েছিলেন এবং ২০০৬ মিয়ামি মাস্টার্সের দ্বিতীয় রাউন্ডে বিপর্যস্ত হন।

ইউরোপীয় মাটিতে নাদাল চারটি টুর্নামেন্টে প্রবেশ করে সবগুলোয় জয়ী হয়েছিলেন এবং টানা ২৪টি ম্যাচ জিতেছিলেন। মন্টে কার্লো মাস্টার্স সিরিজের ফাইনালে তিনি ফেদেরারকে চার সেটে পরাজিত করেন। পরের সপ্তাহে, তিনি বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত ওপেন সাবেদেল আতলান্তিকো টুর্নামেন্টের ফাইনালে টমি রোব্রেদোকে পরাজিত করেন। এক সপ্তাহের বিরতির পর, নাদাল রোম মাস্টার্স ফাইনালে দুটি ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে পঞ্চম সেটের টাইব্রেকারে ফেদেরারকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেন এবং কিশোর বয়সে ১৬টি এটিপি শিরোপা জিতে বিয়োর্ন বোরির সমকক্ষ হয়েছিলেন। নাদাল ফ্রেঞ্চ ওপেনে তার প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে আর্জেন্টিনার গিয়েরমো ভিলাসের ২৯ বছরের পুরুষ রেকর্ড ভেঙে ক্লে-কোর্টে টানা ৫৩টি ম্যাচে জয়লাভ করেছিলেন। ভিলাস নাদালকে একটি ট্রফি উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পরে মন্তব্য করেছিলেন যে নাদালের কীর্তিটি তার নিজের চেয়ে কম চিত্তাকর্ষক ছিল কারণ নাদালের জয়ের ধারা দুই বছর জুড়ে ব্যপ্ত ছিল এবং তার সময়সূচীতে সহজ টুর্নামেন্ট যোগ করে এটি সম্পন্ন হয়েছিল।[৩৪] নাদাল ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে ফেদেরারের বিপক্ষে খেলেছিলেন । ম্যাচের প্রথম দুটি সেট বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ছিল কারণ দুই পক্ষ ৬-১ সেট বিনিময় করেছিলেন। নাদাল তৃতীয় সেট সহজেই জিতে নেন এবং চতুর্থ সেটে ম্যাচের জন্য সার্ভিস করেন কিন্তু ফেদেরার তাকে ভেঙে টাইব্রেকারে বাধ্য করেছিলেন। নাদাল টাইব্রেকারে জিতেছিলেন এবং প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে ফেদেরারকে পরাজিত করেছিলেন।[৩৫]

২০০৬ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন বিজয়ের পর কুপ দে মুস্কিতেরের সাথে নাদাল।

লন্ডনের কুইন্স ক্লাবে ঘাসের উপর খেলা আর্টোইস চ্যাম্পিয়নশিপে লেইটন হিউইটের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে নাদাল তার কাঁধে চোট পেয়েছিলেন।[৩৬] নাদাল ম্যাচটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি যা তার ২৬-ম্যাচ জয়ের ধারার অবসান ঘটায়। নাদাল উইম্বলডনে দ্বিতীয় বাছাই হয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে মার্কিন কোয়ালিফায়ার রবার্ট কেনড্রিকের বিপক্ষে পরাজয় থেকে দুই পয়েন্ট থাকা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়ে পাঁচ সেটে জিতেছিলেন। তৃতীয় রাউন্ডে, নাদাল ২০ নং আন্দ্রে আগাসিকে সরাসরি সেটে পরাজিত করেন যা উইম্বলডনে আগাসির ক্যারিয়ারেরর শেষ ম্যাচ ছিল। নাদাল তার পরের তিনটি ম্যাচও সরাসরি সেটে জিতেছিলেন যা তার প্রথম উইম্বলডন ফাইনালে মঞ্চ তৈরি করেছিল। ফাইনালটি ফেদেরারের বিপক্ষে ছিল যিনি আগের তিন বছর এই টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন। ১৯৬৬ সালে ম্যানুয়েল সান্তানার পর নাদালই প্রথম স্প্যানিশ ব্যক্তি যিনি উইম্বলডন ফাইনালে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু ফেদেরার চার সেটে ম্যাচটি জিতে টানা চতুর্থ উইম্বলডন শিরোপা জিতেছিলেন।

ইউএস ওপেন শুরুর আগে নাদাল উত্তর আমেরিকায় দুটি মাস্টার্স টুর্নামেন্ট খেলেন। তিনি টরন্টোতে রজার্স কাপের তৃতীয় রাউন্ডে এবং সিনসিনাটিতে ওয়েস্টার্ন অ্যান্ড সাউদার্ন ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ মাস্টার্সের কোয়ার্টার ফাইনালে পরাজিত হয়েছিলেন। নাদাল ইউএস ওপেনে দ্বিতীয় বাছাই নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ৫৪ নং রাশিয়ার মিখাইল ইউঝনির কাছে চার সেটে হেরেছিলেন।

নাদাল বাকি বছরের মাত্র তিনটি টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন। স্টকহোম ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে নাদালকে অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজিত করেছিলেন ৬৯০ নং জোয়াকিম জোহানসন। নাদাল পরের সপ্তাহে বছরের শেষ মাস্টার্স টুর্নামেন্ট, মাদ্রিদের মুতুয়া মাদ্রিলেনা মাস্টার্সের কোয়ার্টার ফাইনালে টমাস বার্ডিচের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। বছর শেষের টেনিস মাস্টার্স কাপের রাউন্ড-রবিন পর্যায়ে, নাদাল জেমস ব্লেকের কাছে হেরেছিলেন কিন্তু নিকোলাই দেভিদেঙ্কো এবং রোব্রেদোকে পরাজিত করেন। এই দুটি জয়ের কারণে নাদাল সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন, যেখানে তিনি ফেদেরারের কাছে হেরেছিলেন। ফেদেরারের সাথে ক্যারিয়ারের নয়টি ম্যাচে এটি নাদালের তৃতীয় হার ছিল।

নাদাল ১৯৯৪-৯৫ সালে আন্দ্রে আগাসির পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা দুই বছর ২ নং স্থানে বছর শেষ করেন।

২০০৭: তৃতীয় ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা

নাদাল ছয়টি হার্ড-কোর্ট টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে বছর শুরু করেন । তিনি তার প্রথম দুটি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে এবং প্রথম রাউন্ডে পরাজিত হন এবং তারপর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে চূড়ান্ত রানার-আপ ফার্নান্দো গঞ্জালেজের কাছে হেরেছিলেন। দুবাই টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে আরেকটি কোয়ার্টার ফাইনালের পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি নোভাক জোকোভিচকে হারিয়ে ২০০৭ ইন্ডিয়ান ওয়েলস মাস্টার্স জিতেছিলেন। এরপর ২০০৭ মিয়ামি মাস্টার্সের কোয়ার্টার ফাইনালে নোভাক জোকোভিচ তাকে পরাজিত করেছিলেন।

তিনি পাঁচটি ক্লে-কোর্ট টুর্নামেন্ট খেলার জন্য ইউরোপে ফিরে আসার পর তুলনামূলকভাবে বেশি সাফল্য পেয়েছিলেন। তিনি মন্টে কার্লো মাস্টার্স, বার্সেলোনার ওপেন সাবাদেল আতলান্তিকো এবং রোম মাস্টার্সে শিরোপা জিতেছিলেন। অবশেষে তিনি হামবুর্গ মাস্টার্স ফাইনালে রজার ফেদেরারের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এই পরাজয়ের ফলে কাদামাটিতে তার ৮১-ম্যাচের জয়ের ধারাটির সমাপ্তি ঘটেছিল, যা একটি পৃষ্ঠে টানা জয়ের জন্য উন্মুক্ত যুগের পুরুষ রেকর্ড। এরপর তিনি আবারো ফেদেরারকে ফাইনালে পরাজিত করে টানা তৃতীয়বারের মতো ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছিলেন। বার্সেলোনা এবং রোমের টুর্নামেন্টের মাঝখানে নাদাল স্পেনের মায়োর্কাতে "ব্যাটল অফ সারফেসেস" (পৃষ্ঠতলের লড়াই) নামের একটি প্রদর্শনী ম্যাচে ফেদেরারকে পরাজিত করেছিলেন, যেখানে টেনিস কোর্ট অর্ধেক ঘাসের এবং অর্ধেক কাদামাটির ছিল।[৩৭]

নাদাল টানা দ্বিতীয় বছর লন্ডনের কুইন্স ক্লাবে আর্টোইস চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছিলেন। ২০০৬ সালের মতো এবারও নাদাল কোয়ার্টার ফাইনালে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন। এরপর নাদাল উইম্বলডনের তৃতীয় এবং চতুর্থ রাউন্ডে টানা দুটি পাঁচ সেটের ম্যাচ জিতেছিলেন এবং পাঁচ সেটের ফাইনালে শেষ পর্যন্ত ফেদেরারের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। উইম্বলডনে ২০০১ সালের পর এটিই ছিল ফেদেরারের প্রথম পাঁচ সেটের ম্যাচ।[৩৮] জুলাই মাসে নাদাল স্টুটগার্টে ক্লে-কোর্ট মার্সিডিজ কাপ জিতেছিলেন যেটি তার বছরের শেষ শিরোপা প্রমাণিত হয়েছিল। তিনি উত্তর আমেরিকার গ্রীষ্মকালীন হার্ড কোর্ট মৌসুমে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন। সিনসিনাটি মাস্টার্সে তিনি প্রথম ম্যাচ হেরে বাদ পড়ার আগে তিনি মন্ট্রিলে কানাডিয়ান মাস্টার্সের সেমিফাইনালিস্ট হয়েছিলেন। ইউএস ওপেনে তিনি দ্বিতীয় বাছাই খেলোয়াড় ছিলেন কিন্তু চতুর্থ রাউন্ডে ডেভিড ফেরারের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়।

টেনিস টুর্নামেন্ট থেকে এক মাস বিরতি নেয়ার পর নাদাল মাদ্রিদ মাস্টার্স এবং প্যারিস মাস্টার্স খেলেছিলেন। দুটি টুর্নামেন্টেই কোয়ার্টার ফাইনাল ও ফাইনালে ডেভিড নালবানদিয়ান তাঁকে হারিয়ে ছিলেন। সাংহাইতে টেনিস মাস্টার্স কাপের বছর শেষের টুর্নামেন্টে নাদাল তার তিনটি রাউন্ড রবিন ম্যাচের দুটিতে জিতে সেমিফাইনালে অগ্রসর হয়েছিলেন। সেখানে ফেদেরার তাকে সরাসরি সেটে পরাজিত করেছিলেন।

নাদাল উইম্বলডন ফাইনালের সময় অনুভব করা হাঁটুর চোটের সাথে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের পুরো সময় লড়াই করেছিলেন। এছাড়াও, বছরের শেষের দিকে গুজব ছড়িয়েছিল যে ২০০৫ সালে তিনি যে পায়ের আঘাত ভুগেছিলেন তা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হয়েছিল, যা কোচ টনি নাদালের অনুযায়ী সমস্যাটি "গুরুতর" দাবিকে ভিত্তি প্রদান করেছিল। যদিও নাদাল এবং তার মুখপাত্র এটিকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছিলেন। নাদাল নিজে সংবাদটিকে "সম্পূর্ণ মিথ্যা" বলেছিলেন।[৩৯]

২০০৮: দুইটি মেজর, অলিম্পিক স্বর্ণ, দ্বিতীয় ডেভিস কাপ এবং ১ নং র‍্যাঙ্কিং

নাদাল ভারতে বছর শুরু করেছিলেন, যেখানে তিনি চেন্নাই ওপেনের ফাইনালে মিখাইল ইউঝনির কাছে ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়েছিলেন। এরপর নাদাল প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিলেন। জো-উইলফ্রেড সোঙ্গা তাঁকে সেমিফাইনালে সরাসরি সেটে পরাজিত করেছিলেন। নাদাল এছাড়াও দ্বিতীয়বারের মতো মিয়ামি মাস্টার্সের ফাইনালে উঠেছিলেন।

বসন্তকালীন ক্লে-কোর্ট মৌসুমে নাদাল চারটি একক শিরোপা জিতেছিলেন এবং তিনটির ফাইনালে রজার ফেদেরারকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি মন্টে কার্লো মাস্টার্সে টানা তৃতীয় বছর ফেদেরারকে পরাজিত করেন এবং সেখানে তার উন্মুক্ত যুগের রেকর্ড টানা চতুর্থ শিরোপা জয় করেন। এরপর বার্সেলোনায় ওপেন সাবাদেল আতলান্তিকো টুর্নামেন্টে নাদাল তার টানা চতুর্থ শিরোপা জিতে নিয়েছিলেন।[৪০] নাদাল কয়েক সপ্তাহ পরে তিন সেটের ফাইনালে ফেদেরারকে হারিয়ে তার প্রথম মাস্টার্স হামবুর্গ শিরোপা জিতেছিলেন। তারপরে তিনি ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছিলেন। নাদাল উন্মুক্ত যুগে পঞ্চম পুরুষ হিসেবে একটি সেটও না হারিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম একক শিরোপা জিতেছিলেন।[৪১] তিনি টানা তৃতীয় বছরের জন্য ফাইনালে ফেদেরারকে পরাজিত করেন, কিন্তু এটি ছিল তাঁদের সব ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে একপেশে। কারণ নাদাল মাত্র চারটি গেম হেরেছিলেন এবং ১৯৯৯ সালের পর ফেদেরারকে তার প্রথম ব্যাগেল দিয়েছিলেন।[৪০] এটি ছিল নাদালের টানা চতুর্থ ফরাসি শিরোপা, যা বিয়োর্ন বোরির গড়া সর্বোচ্চ রেকর্ডের সমান। নাদাল উন্মুক্ত যুগে চতুর্থ পুরুষ খেলোয়াড় হয়েছিলেন যিনি টানা চার বছর একই গ্র্যান্ড স্ল্যাম একক টুর্নামেন্ট জিতেছেন (অন্যরা হলেন বোরি, পিট সাম্প্রাস এবং ফেদেরার)।

২০০৮ কানাডিয়ান ওপেনের ট্রফি হাতে নাদাল।

এরপর নাদাল টানা তৃতীয়বারের মতো উইম্বলডনের ফাইনালে ফেদেরারের বিপক্ষে খেলেছিলেন। এটি তাঁদের দ্বৈরথের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ম্যাচ ছিল।[৪২][৪৩] উইম্বলডনের আগে লন্ডনের কুইন্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত স্টেলা আর্টোইস চ্যাম্পিয়নশিপে তার ক্যারিয়ারের প্রথম ঘাসের কোর্টের শিরোপাসহ ২৩-ম্যাচের জয়ের ধারা নিয়ে নাদাল ফাইনালে প্রবেশ করেন। ফেদেরার হ্যালে অনুষ্ঠিত গেরি ওয়েবার ওপেনে তার রেকর্ড পঞ্চম ঘাসের কোর্টের শিরোপা জিতেছিলেন এবং তারপরে একটি সেটও না হারিয়ে উইম্বলডনের ফাইনালে পৌঁছেছিলেন। তাঁদের আগের দুটি উইম্বলডন ফাইনালের মতো যদিও ফেদেরার প্রতিদ্বন্দীতাবিহীনভাবে সেরা ছিলেন না এবং অনেক বিশ্লেষক নাদালকে জয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন।[৪৩][৪৪] তারা উইম্বলডনের ইতিহাসে দীর্ঘতম (কোর্টের সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, গেমের সংখ্যার বিচারে নয়) ফাইনাল খেলেছিলেন। (২০১৯ সালের ফাইনালটি পরবর্তীতে দীর্ঘতম উইম্বলডন ফাইনালের রেকর্ডটি ভেঙে দেয়।) বৃষ্টিবিলম্বের কারণে নাদাল প্রায়-অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় পঞ্চম সেট ৯-৭ জিতেছিল। ম্যাচটিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ উইম্বলডন ফাইনাল হিসাবে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল, কিছু টেনিস সমালোচক এমনকি এটিকে টেনিস ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যাচ বলে অভিহিত করেছেন।[৪৫][৪৬][৪৭][৪৮][৪৯]

তার প্রথম উইম্বলডন শিরোপা জেতার মাধ্যমে নাদাল ১৯৬৯ সালে রড লেভার এবং ১৯৭৮-১৯৮০ সালে বোরির পর উন্মুক্ত যুগে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে একই বছরে ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং উইম্বলডন উভয়ই জিতেছিলেন (ফেদেরার পরের বছর এটি সম্পন্ন করেন) )। তিনি এর পাশাপাশি উইম্বলডন জয়ী দ্বিতীয় স্প্যানিয়ার্ড ছিলেন। তিনি ফেদেরারের রেকর্ড টানা পাঁচটি উইম্বলডন শিরোপা এবং ঘাসের কোর্টে টানা ৬৫টি জয়ের ধারারও সমাপ্তি ঘটিয়েছিলেন। এই জয়ের মাধ্যমে নাদাল প্রথম বারের মতো পরপর দুটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন।

উইম্বলডনের পর নাদাল তার জয়ের ধারাকে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৩২ ম্যাচে টেনে নিয়েছিলেন। তিনি টরন্টোতে তার দ্বিতীয় রজার্স কাপ শিরোপা জিতেছিলেন এবং তারপর সিনসিনাটিতে ওয়েস্টার্ন এবং সাউদার্ন ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ মাস্টার্সের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছেন। ফলস্বরূপ, নাদাল ইউএস ওপেন সিরিজে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। সেই সাথে দুটি টুর্নামেন্টে ফেদেরারের প্রথম দিকের রাউন্ডে পরাজয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত ১৮ আগস্ট নাদাল বিশ্ব ১ নং র‍্যাঙ্কিং অর্জন করেন। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ফেদেরারের রেকর্ড সাড়ে চার বছর শীর্ষস্থানে রাজত্বের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল।

২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকের ফাইনালে চিলির ফার্নান্দো গঞ্জালেজকে পরাজিত করে নাদাল তার প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছিলেন।[৫০]

ইউএস ওপেনে নাদাল প্রথমবারের মতো একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টে শীর্ষ বাছাই খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি তার প্রথম তিনটি ম্যাচে একটি সেটও হারেননি যেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফায়ার খেলোয়াড় এবং তৃতীয় রাউন্ডে ভিক্টর ট্রয়কিকে পরাজিত করেছিলেন। সেমিফাইনালে তিনি অ্যান্ডি মারের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। পরে মাদ্রিদে ডেভিস কাপের সেমিফাইনালে নাদাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করতে স্পেনকে সাহায্য করেছিলেন।

নাদাল মাদ্রিদ মাস্টার্সের সেমিফাইনালে জিলস সিমনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। যদিও, টুর্নামেন্টে তার পারফরম্যান্স গ্যারান্টি দিয়েছিল যে উন্মুক্ত যুগে তিনি প্রথম স্প্যানিয়ার্ড হিসেবে ১ নং র‍্যাঙ্কিংয়ে বছর শেষ করবেন।[৫১] দুই সপ্তাহ পর প্যারিস মাস্টার্সে নাদাল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিলেন, যেখানে তিনি হাঁটুর আঘাতের কারণে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।[৫২] পরের সপ্তাহে, নাদাল হাঁটুর টেন্ডিনাইটিস উল্লেখ করে সাংহাইতে বছরের শেষের টেনিস মাস্টার্স কাপ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১০ নভেম্বরে নাদাল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে স্পেনের ডেভিস কাপ ফাইনাল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, কারণ তার হাঁটুর চোট পুরোপুরি সেরে উঠেনি।[৫৩]

২০০৯: অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ডেভিস কাপ শিরোপা

নাদালের প্রথম আনুষ্ঠানিক এটিপি ট্যুর ইভেন্ট ছিল দোহায় ২৫০ সিরিজের কাতার ওপেন, যেখানে তিনি কোয়ার্টার ফাইনালে গেল মনফিসের কাছে হেরেছিলেন। নাদাল তার সঙ্গী মার্ক লোপেজের সাথে টুর্নামেন্টের দ্বৈত ইভেন্টে প্রবেশ করেন এবং ফাইনালে ড্যানিয়েল নেস্টর এবং নেনাদ জিমনিচের এক নম্বর র‍্যাঙ্ক দ্বৈত দলকে পরাজিত করে জয় লাভ করেছিলেন। ২০০৯ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নাদাল একটি সেটও না হেরে তার প্রথম পাঁচটি ম্যাচ জিতেছিলেন। সেমিফাইনালে স্বদেশী ফার্নান্দো ভারদেস্কোকে পরাজিত করতে ৫ ঘন্টা ১৪ মিনিট সময় লেগেছিল যার ফলে ম্যাচটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ম্যাচের স্বীকৃতি পায়।[৫৪] এই জয় রজার ফেদেরারের সাথে চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ নির্ধারণ করে যা হার্ড-কোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টে তাঁদের প্রথম দেখা। নাদাল ফেদেরারকে পাঁচ সেটে পরাজিত করে তার প্রথম হার্ড-কোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যাম একক শিরোপা জিতেছিলেন।[৫৫] এটি তাঁকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ী প্রথম স্প্যানিয়ার্ডে পরিণত করেছিল।[৫৬]

২০০৯ মিয়ামি ওপেনে নাদাল।

রটারডামের এবিএন আমরো ওয়ার্ল্ড টেনিস টুর্নামেন্টে নাদাল ফাইনালে দ্বিতীয় বাছাই অ্যান্ডি মারের কাছে তিন সেটে হেরে গিয়েছিলেন।[৫৭] যদিও এই হাঁটুর সমস্যাটি নাদালের ডান-হাঁটুর টেন্ডোনাইটিসের সাথে যুক্ত ছিল না, তবে এটি যথেষ্ট গুরুতর ছিল যে এক সপ্তাহ পরে তাঁকে দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল।[৫৮] মার্চ মাসে, নাদাল স্পেনের বেনিডর্মে ক্লে কোর্টে ডেভিস কাপ বিশ্ব গ্রুপের প্রথম রাউন্ডের খেলায় সার্বিয়াকে হারাতে স্পেনকে সাহায্য করেন। নাদাল জ্যাঙ্কো টিপসারেভিচ এবং নোভাক জোকোভিচকে পরাজিত করেছিলেন।[৫৯][৬০] ২০০৯ ইন্ডিয়ান ওয়েলস মাস্টার্সের ফাইনালে মারেকে পরাজিত করে নাদাল তার ত্রয়োদশ মাস্টার্স টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন। পরবর্তী এটিপি ট্যুর ইভেন্ট ছিল ২০০৯ মিয়ামি মাস্টার্স। নাদাল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আবার আর্জেন্টিনার দেল পোত্রোর মুখোমুখি হন। এবারের ম্যাচে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।[৬১]

নাদাল মন্টে কার্লো মাস্টার্সে তার ইউরোপীয় ক্লে কোর্ট মৌসুম শুরু করেন, যেখানে তিনি নোভাক জোকোভিচকে পরাজিত করে সেখানে রেকর্ড পঞ্চম একক শিরোপা জিতেছিলেন।[৬২] তারপর তিনি বার্সেলোনা এবং রোম মাস্টার্সে যথাক্রমে ফেরার এবং জোকোভিচকে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছিলেন।[৬৩][৬৪] এরপর তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে মাদ্রিদ ওপেনের ফাইনালে রজার ফেদেরারের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। ২০০৭ টেনিস মাস্টার্স কাপের সেমিফাইনালের পর এই প্রথম নাদাল ফেদেরারের কাছে হেরেছিলেন।

ফ্রেঞ্চ ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে লেইটন হিউইটকে পরাজিত করে, নাদাল ফ্রেঞ্চ ওপেনে টানা ৩১টি জয়ের রেকর্ড গড়েন যা বিজর্ন বোরির আগের রেকর্ডটি (২৮) ভেঙে ফেলে। এই যাত্রাটি ৩১ মে ২০০৯ সালে শেষ হয় যখন নাদাল ৪র্থ রাউন্ডে চূড়ান্ত রানার-আপ রবিন সোডারলিংয়ের কাছে হেরে যান। এটি ছিল নাদালের প্রথম এবং, ২০১৫ সাল পর্যন্ত ফ্রেঞ্চ ওপেনে একমাত্র পরাজয়। ফ্রান্সে তার আশ্চর্যজনক পরাজয়ের পর নাদাল এইগন চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। তিনি দুই হাঁটুতে টেন্ডিনাইটিসে ভুগছিলেন বলে নিশ্চিত করা হয়।[৬৫] ১৯ জুন, নাদাল তার হাঁটুতে বারবার ফিরে আসা আঘাতের কারণে ২০০৯ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।[৬৬] রজার ফেদেরার শিরোপা জিতেছিলেন এবং নাদাল এই কারণে ৬ জুলাই ২০০৯ সালে ২ নংয়ে নেমে যান।

টনি নাদাল ৪ আগস্ট নিশ্চিত করেছিলেন যে নাদাল মন্ট্রিলে রজার্স কাপে খেলতে ফিরবেন।[৬৭] সেখানে তিনি কোয়ার্টার ফাইনালে হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রোর কাছে হেরে গিয়েছিলেন।[৬৮] এই হারের সাথে সাথে তিনি ১৭ আগস্ট ২০০৯ সালে অ্যান্ডি মারের কাছে ২ নম্বর স্থানটি পরিত্যাগ করে ২৫ জুলাই ২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো শীর্ষ দুই র‍্যাঙ্কিংয়ের বাইরে চলে গিয়েছিলেন।

ইউএস ওপেনে নাদালকে সেমিফাইনালে থামিয়ে দিয়েছিলেন চূড়ান্ত বিজয়ী হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রো।[৬৯] এটিপি ফাইনালে নাদাল যথাক্রমে রবিন সোডারলিং, নিকোলাই দেভিদেনকো এবং নোভাক জোকোভিচের বিপক্ষে তার তিনটি ম্যাচের সবগুলো একটি সেটও না জিতে হেরেছিলেন। নাদাল ডিসেম্বরে তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডেভিস কাপ ফাইনালে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি তার প্রথম একক ম্যাচে টমাস বার্ডিচকে পরাজিত করে স্প্যানিশ ডেভিস কাপ দলকে সিরিজে তাঁদের প্রথম পয়েন্ট এনে দিয়েছিলেন। স্প্যানীয় ডেভিস কাপ দল তাঁদের চতুর্থ ডেভিস কাপ জয় নিশ্চিত করার পর, নাদাল তার ক্যারিয়ারের প্রথম ডেভিস কাপের গুরুত্বহীন ম্যাচে জান হ্যাজেককে পরাজিত করেছিলেন।

নাদাল পাঁচ বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মতো ২ নম্বর স্থানে বছর শেষ করেছিলেন।

২০১০: তিন পৃষ্ঠে গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা এবং ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্ল্যাম

নাদাল ২০১০ সালকে তার পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে সেরা বছর বলে আখ্যায়িত করেছেন। ২০১০ টেনিস মৌসুমে নাদাল টেনিস ইতিহাসে প্রথম পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে একই বর্ষপঞ্জিতে তিনটি ভিন্ন পৃষ্ঠে (ক্লে, গ্রাস এবং হার্ড কোর্ট) গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন।

নাদাল আবুধাবিতে ক্যাপিটালা ওয়ার্ল্ড টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে বছর শুরু করেছিলেন। তিনি ফাইনালে রবিন সোডারলিংকে সরাসরি সেটে পরাজিত করেছিলেন।[৭০] নাদাল দোহায় কাতার এক্সনমোবিল ওপেন এটিপি ২৫০ ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তিনি নিকোলাই দেভিদেঙ্কোর কাছে ফাইনালে হেরেছিলেন।[৭১] অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নাদাল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিলেন। সেখানে তাঁকে অ্যান্ডি মারের বিরুদ্ধে তৃতীয় সেটে ৩-০তে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় থেমে যেতে হয়েছিল।[৭২] নাদালের হাঁটু পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা তাঁকে দুই সপ্তাহ বিশ্রাম নেয়া এবং তারপর দুই সপ্তাহ পুনর্বাসনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

২০১০ মুতুয়া মাদ্রিলেনা মাদ্রিদ ওপেন, মাদ্রিদ, স্পেনে নাদাল

নাদাল ইন্ডিয়ান ওয়েলসে বিএনপি পারিবাস ওপেনের এককে সেমিফাইনালে পৌঁছেছেন, যেখানে তিনি তিন সেটে ইভান লুবিসিচের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।[৭৩] ইন্ডিয়ান ওয়েলসের পরে নাদাল সনি এরিকসন ওপেনের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিলেন, যেখানে তিনি চূড়ান্ত বিজয়ী অ্যান্ডি রডিকের কাছে তিন সেটে হেরেছিলেন।[৭৪] নাদাল মন্টে-কার্লো রোলেক্স মাস্টার্সের ফাইনালে ফার্নান্দো ভারদাস্কোকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন। এই জয়ের মাধ্যমে নাদাল উন্মুক্ত যুগের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন যিনি টানা ছয় বছর একটি টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন।[৭৫] নাদাল পরবর্তীতে বার্সেলোনা টুর্নামেন্ট বাদ দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তার পরবর্তী টুর্নামেন্ট ছিল রোম মাস্টার্স। রোমের ফাইনালে দেভিদ ফেরারকে পরাজিত করে তিনি তার পঞ্চম শিরোপা জিতেছিলেন। নাদাল তারপরে রজার ফেদেরারকে সোজা সেটে পরাজিত করে ২০১০ মুতুয়া মাদ্রিলেনা মাদ্রিদ ওপেন জিতেছিলেন। এই জয় তাঁকে তার ১৮তম মাস্টার্স শিরোপা এনে দেয়, যা সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। পরের দিন নাদাল আবার ২ নম্বর স্থানে ফিরে আসেন।

ফ্রেঞ্চ ওপেনে প্রবেশ করার সময় অনেকেই আরেকটি নাদাল-ফেদেরার ফাইনালের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু রবিন সোডারলিং কোয়ার্টার ফাইনালে ফেদেরারকে পরাজিত করেছিলেন।[৭৬] নাদাল ফাইনালে উঠে সরাসরি সেটে সোডারলিংকে পরাজিত করেছিলেন। এই জয়টি দ্বিতীয়বারের মতো উল্লেখ্য যে নাদাল একটি সেট না হেরেই ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছিলেন।

জুন মাসে নাদাল এইগন চ্যাম্পিয়নশিপে প্রবেশ করেন, যেটি তিনি ২০০৮ সালে জিতেছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি স্বদেশী ফেলিসিয়ানো লোপেজের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপে, তিনি তার প্রথম দুটি ম্যাচ সরাসরি সেটে জিতেছিলেন। তৃতীয় রাউন্ডে ফিলিপ পেটজশ্নারকে হারাতে তার পাঁচ সেটের প্রয়োজন হয়েছিল। ম্যাচ চলাকালীন নাদালকে তার কোচ এবং চাচা টনি নাদালের কাছ থেকে কোচিং নেওয়ার অভিযোগে দুবার সতর্ক করা হয়েছিল, যার ফলে উইম্বলডন কর্মকর্তাদের দ্বারা $২,০০০ জরিমানা করা হয়।[৭৭][৭৮] তারপরে তিনি সেমিফাইনালে অ্যান্ডি মারেকে এবং ফাইনালে টমাস বার্ডিচকে পরাজিত করে তার দ্বিতীয় উইম্বলডন শিরোপা এবং ২৪ বছর বয়সে তার ক্যারিয়ারের অষ্টম মেজর শিরোপা জিতে নিয়েছিলেন।[৭৯][৮০]

উইম্বলডনের পর তার প্রথম টুর্নামেন্টে নাদাল রজার্স কাপের সেমিফাইনালে উঠেছিলেন, যেখানে তিনি অ্যান্ডি মারের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।[৮১] এছাড়াও নাদাল জোকোভিচের সাথে দ্বৈত ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন যা বিশ্ব নং ১ এবং ২-এর মধ্যে একটি হাই-প্রোফাইল পার্টনারশিপ ছিল।[৮২] এই জুটি প্রথম রাউন্ডে মিলোস রাওনিচ এবং ভাসেক পসপিসিলের কাছে হেরে গিয়েছিল। পরের সপ্তাহে নাদাল সিনসিনাটি মাস্টার্সের শীর্ষ বাছাই ছিলেন, কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে মার্কোস বাগদাতিসের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

২০১০ ইউএস ওপেনে নাদাল একটি সেট না ফেলেই তার প্রথম ফাইনালে পৌঁছেছিলেন। ফাইনালে তিনি নোভাক জোকোভিচকে চার সেটে পরাজিত করেছিলেন। এর মাধ্যমে নাদাল তার ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম সম্পূর্ণ করেন; এছাড়াও তিনি আন্দ্রে আগাসির পর দ্বিতীয় পুরুষ হিসেবে ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্ল্যাম সম্পন্ন করেন।[৮৩] নাদালের ইউএস ওপেন জয়ের ফলে তিনি একই বছরে ক্লে, গ্রাস এবং হার্ড কোর্টে মেজর জয়ী প্রথম ব্যক্তি এবং রড লেভারের ১৯৬৯ সালের পর একই বছরে ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেন জয়ী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন।[৮৪] নাদালের জয় ২০১০ সালের জন্য বছর শেষের নম্বর ১ র‍্যাঙ্কিংও নিশ্চিত করেছিল।[৮৫]

নাদাল তার এশীয় সফর শুরু করেন ব্যাংককের ২০১০ পিটিটি থাইল্যান্ড ওপেনে যেখানে তিনি সেমিফাইনালে স্বদেশী গিয়ের্মো গার্সিয়া-লোপেজের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। নাদাল টোকিওতে পুনরায় জয়ের ধারায় ফিরতে সক্ষম হয়েছিলেন, গায়েল মনফিসকে পরাজিত করে ২০১০ রাকুটেন জাপান ওপেন টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে মৌসুমের সপ্তম শিরোপা অর্জন করেছিলেন। নাদাল পরবর্তীতে শাংহাই রোলেক্স মাস্টার্সে খেলেছিলেন, যেখানে তিনি তৃতীয় রাউন্ডে ১২ নম্বর ইয়ুর্গেন মেলজারের কাছে হেরে যান। ৫ নভেম্বর, নাদাল ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি তার বাম কাঁধে টেন্ডিনাইটিসের কারণে প্যারিস মাস্টার্স থেকে নাম প্রত্যাহার করছেন।[৮৬] ২১ নভেম্বর ২০১০ সালে লন্ডনে, নাদাল প্রথমবারের মতো স্টেফান এডবার্গ স্পোর্টসম্যানশিপ অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন।[৮৭]

লন্ডনে ২০১০ এটিপি ফাইনালে, নাদাল তার সবগুলো রাউন্ড-রবিন ম্যাচ জিতেছিলেন। সেমিফাইনালে তিনি মারেকে তিন সেটে পরাজিত করেন কিন্তু ফাইনালে তিনি রজার ফেদেরারের কাছে পরাজিত করেছিলেন।[৮৮]

২০১১: ষষ্ঠ ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা এবং ডেভিস কাপ জয়মুকুট

নাদাল ২০১১ সালে আবুধাবিতে মুবাদালা ওয়ার্ল্ড টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বছর শুরু করেছিলেন। ফাইনালে তিনি রজার ফেদেরারকে হারিয়েছিলেন। কাতার এক্সনমোবিল ওপেনের সেমিফাইনালে তিনি নিকোলাই দেভিদেঙ্কোর কাছে সরাসরি সেটে বশীভূত হয়েছিলেন।[৮৯] তিনি এবং স্বদেশী লোপেজ দ্বৈত ম্যাচে ড্যানিয়েল ব্রাসিয়ালি এবং আন্দ্রেয়াস সেপ্পিকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন।[৯০]

২০১১ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নাদাল

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে নাদাল দেভিদ ফেরারের বিরুদ্ধে ম্যাচের শুরুতে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত সরাসরি সেটে হেরে গিয়েছিলেন, সেইসাথে টানা চারটি মেজর টুর্নামেন্ট জেতার প্রচেষ্টার অবসান ঘটে।[৯১]

মার্চ মাসে নাদাল বেলজিয়ামের শার্লেরোইয়ের স্পিরুডোমে ২০১১ ডেভিস কাপ বিশ্ব গ্রুপের প্রথম রাউন্ড ম্যাচে বেলজিয়ামকে হারাতে সাহায্য করেছিলেন। নাদাল রুবেন বেমেলম্যানস এবং অলিভিয়ের রোকাসকে হারিয়েছিলেন।[৯২][৯৩] ২০১১ বিএনপি পারিবাস ওপেন এবং ২০১১ সনি এরিকসন ওপেনের দুইটিতেই নাদাল ফাইনালে পৌঁছেছিলেন এবং নোভাক জোকোভিচের কাছে তিন সেটে হেরেছিলেন।[৯৪][৯৫] এই প্রথম নাদাল একই বছরে ইন্ডিয়ান ওয়েলস এবং মিয়ামির ফাইনালে পৌঁছেছিলেন।

নাদাল ২০১১ মন্টে-কার্লো রোলেক্স মাস্টার্স জিতে তার ক্লে-কোর্ট মৌসুম শুরু করেছিলেন যেখানে তিনি মাত্র একটি সেট হেরেছিলেন। ফাইনালে, তিনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে দেভিদ ফেরারের কাছে তার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।[৯৬] মাত্র এক সপ্তাহ পরে, নাদাল ফেরারকে আবারও সোজা সেটে হারিয়ে তার ষষ্ঠ বার্সেলোনা ওপেনের মুকুট জিতেছিলেন। এরপর তিনি রোম মাস্টার্স এবং মাদ্রিদ ওপেনের ফাইনালে নোভাক জোকোভিচের কাছে হেরে গিয়েছিলেন।[৯৭] তবুও, নাদাল ক্লে-কোর্ট মৌসুমে তার ১ নং র‌্যাঙ্কিং ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং রজার ফেদেরারকে হারিয়ে তার ষষ্ঠ ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা জিতেছিলেন।[৯৮]

উইম্বলডনে নাদাল তিনটি চার সেট ম্যাচ খেলার পর ফাইনালে পৌঁছেছিলেন। এটি ২ নং নোভাক জোকোভিচের বিরুদ্ধে ফাইনাল ঠিক করেছিল, যে ২০১১ সালে তাঁদের চারটি ম্যাচেই নাদালকে হারিয়েছিল৷ তৃতীয় সেটটি হারার পর, জোকোভিচ নাদালকে চতুর্থ সেটে পরাজিত করেছিলেন৷ টুর্নামেন্টে জোকোভিচের সাফল্যের মানে হল যে তিনি নাদালের বিশ্ব নং ১ স্থান দখল করে নিয়েছিলেন। উইম্বলডনের সময় প্রাপ্ত পায়ের আঘাতের জন্য এক মাস বিশ্রামের পর, তিনি ২০১১ রজার্স কাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যেখানে তিনি কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ান ইভান ডডিগের কাছে পরাজিত হন। তিনি পরবর্তীতে ২০১১ সিনসিনাটি মাস্টার্সে খেলেন, যেখানে তিনি আবার কোয়ার্টার ফাইনালে মার্ডি ফিশের কাছে হেরে গিয়েছিলেন।

২০১১ ইউএস ওপেনে নাদাল চতুর্থ রাউন্ডে ডেভিড নালবান্দিয়ানকে পরাজিত করার পরে, তার ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গুরুতর ক্র্যাম্পের কারণে ঢলে পড়ার কারণে শিরোনাম সৃষ্টি করেছিলেন।[৯৯] তিনি আবার ফাইনালে নোভাক জোকোভিচের কাছে চার সেটে হেরে গিয়েছিলেন। ইউএস ওপেনের পর নাদাল জাপান ওপেন টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিলেন। নাদাল, যিনি ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, অ্যান্ডি মারের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সাংহাই মাস্টার্সে, তিনি তৃতীয় রাউন্ডে ২৩ নম্বর র‌্যাঙ্কের ফ্লোরিয়ান মায়ারের কাছে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের শিকার হয়েছিলেন। ২০১১ এটিপি ফাইনালে নাদাল রাউন্ড-রবিন পর্যায়ে রজার ফেদেরার এবং জো-উইলফ্রেড সোঙ্গার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছিলেন। ডিসেম্বরে ডেভিস কাপের ফাইনালে, তিনি হুয়ান মোনাকো এবং হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রোর বিরুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে স্পেনকে শিরোপা জিততে সাহায্য করেছিলেন।[১০০]

ব্যাখ্যামূলক নোট

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ