সল পার্লমাটার

পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী

সল পার্লমাটার (জন্ম: ২২শে সেপ্টেম্বর, ১৯৫৯) একজন মার্কিন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী। তিনি অধ্যাপনা করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-তে, পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন। তিনি অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এর সদস্য এবং ২০০৩ সালে অ্যামেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স এর ফেলো নিযুক্ত হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এরও সদস্য। পার্লমাটার মহাবিশ্বের ত্বরিত সম্প্রসারণের পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ খুঁজে পাওয়ার কারণে ২০১১ সালে ব্রায়ন পি. শেমিডিট এবং অ্যাডাম জি. রেইস এর সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। একই কারণে ২০০৬ সালে তিনি শ প্রাইজ ইন অ্যাস্ট্রোনমি-ও পেয়েছিলেন।

সল পার্লমাটার
২০১১ সালে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সময় পার্লমাটার
জন্ম (1959-09-22) সেপ্টেম্বর ২২, ১৯৫৯ (বয়স ৬৪)
শ্যাম্পেন-আর্বানা, ইলিনয়, যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তামার্কিন
মাতৃশিক্ষায়তনহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতক), ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে (পিএইচডি)
পরিচিতির কারণত্বরিত মহাবিশ্ব / তমোশক্তি
পুরস্কারআর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্স অ্যাওয়ার্ড (২০০২)
শ প্রাইজ ইন অ্যাস্ট্রোনমি (২০০৬)
গ্রুবার প্রাইজ ইন কসমোলজি (২০০৭)
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (২০১১)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রজ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে
লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি
ডক্টরাল উপদেষ্টারিচার্ড এ মুলার[১]

জীবনী

সল পার্লমাটারের দরিদ্র পিতামহ-মাতামহরা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন পূর্ব ইউরোপ থেকে। তবে দরিদ্র হলেও তারা বুদ্ধিবৃত্তিতে ছিলেন স্বকীয়, যুক্তরাষ্ট্র এসেছিলেন এই ভেবে যে যুক্তি ও ব্যক্তি স্বাধীনতা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর জীবন উপহার দেবে। তাদের আশাহত হতে হয়নি, পিতামহের ছেলে অর্থাৎ সলের বাবা রাসায়নিক প্রকৌশলের অধ্যাপক এবং মাতামহের মেয়ে তথা সলের মা সমাজকর্মী হিসেবে সুনাম কুড়োন। প্রতি সপ্তাহান্তে তাদের বাড়িতে বুদ্ধিবৃত্তিক আড্ডা জমতো, বাবা-মার সব বন্ধু বান্ধবরা আলোচনা করতো মূলত রাজনীতি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য আর শিল্প নিয়ে। এই পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে বেশ ছোটবেলা থেকেই সল পার্লমাটার সঙ্গীত, সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান, স্থাপত্য ও মনোবিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হয়ে উঠেন।

শিক্ষাজীবন শুরুর পর সিদ্ধান্ত নেন মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনের জন্য কাজ করবেন। পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক করেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে। ১৯৮১ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলিতে অধিস্নাতক ছাত্র হিসেবে ভর্তি হওয়ার পরই তিনি পর্যবেক্ষণমূলক উপাত্ত নিয়ে কাজ করা হয় এমন একটি গবেষণা প্রকল্পের সন্ধানে ছিলেন। শুধু তত্ত্ব নয় বরং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর বের করাটা তার কাছে রোমাঞ্চকর মনে হয়েছিল। এ সময়ই অধ্যাপক রিচার্ড মুলারের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণা দলের খোঁজ পান যারা মহাকর্ষের মৌলিক পরিমাপ থেকে শুরু করে, বায়ুমণ্ডলের কার্বন চক্র এবং এমনকি সাইক্লোট্রন নিয়েও কাজ করতো।

পিএইচডি-র সময় তিনি একটি রোবটিক-অতিনবতারা প্রকল্পে কাজ করেছেন। এটি বেছে নেয়ার কারণ ছিল এর মাধ্যমে সরাসরি হাবল ধ্রুবক নির্ণয় করা যেতো। তিনি এমন কিছু সফটওয়ার ও হার্ডওয়ার নির্মাণ করেন যার মাধ্যমে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ছবিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অতিনবতারা সনাক্ত করা সম্ভব। ১৯৮৬ সালে যখন পিএইচডি শেষ করেন, তখন তার পদ্ধতিটি খুব ভালভাবেই কাজ করছিল। এজন্য তাকে পোস্টডক হিসেবে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করা হয় এবং তিনি তাতে সম্মত হন।

এ সময় কিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল যে টাইপ-ওয়ান নামে যে নতুন ধরনের অতিনবতারা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে আদর্শ দূরত্ব মাপাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর আগে দুরবিনগুলো টাইপ-টু অতিনবতারা পর্যবেক্ষণেই বেশি সময় ব্যয় করতো। নতুন আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ হয়ে পার্লমাটার সহকর্মী কার্ল পেনিপ্যাকার এর সাথে মিলে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়ার চিন্তা করতে থাকেন। সেই ১৯৩০-এর দশক থেকেই ধারণা করা হয়ে আসছিল যে অতিনবতারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এক সময় মহাবিশ্বের মন্দনের প্রমাণ পাওয়া যাবে। টাইপ-ওয়ান অতিনবতারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই কাজটি আরও ভালভাবে করা সম্ভব। উপরন্তু তখন সিসিডি এবং অত্যাধুনিক চিত্র বিশ্লেষণ পদ্ধতি পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিপ্লবের সূচনা ঘটাতে যাচ্ছিল।

অতিনবতারা গবেষণা প্রকল্প

১৯৮৭ সালে কার্ল ও পার্লমাটার একটি নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ৪ মিটার ব্যাসের দুরবিনের সাথে সিসিডি যোগ করে একটি ওয়াইড-ফিল্ড ক্যামেরা তৈরি করা যার মাধ্যমে প্রতি রাতে ১০,০০০ ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এর আগে একটি ছবিতে মাত্র একটি ছায়াপথই পর্যবেক্ষণ করা যেতো। কয়েক বছরে তারা অনেক দূরের বেশ কিছু অতিনবতারা আবিষ্কার করে ফেলেন যাদের মাধ্যমে মন্দন রাশি পরিমাপের চেষ্টা করা সম্ভব। অনেক দূরের বলতে ০.৩ এর বেশি লোহিত সরণ বোঝানো হচ্ছে এখানে। ১৯৮৮ সালে বার্কলির নতুন সেন্টার ফর পার্টিকেল অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এর অংশ হিসেবে শুরু হয় প্রকল্পটির কাজ। অবশ্য খারাপ আবহাওয়ার কারণে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত খুব বেশি অগ্রগতি ঘটেনি। এই বছরই পার্লমাটার অতিনবতারা গবেষণা প্রকল্পের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং কম সময়ের মধ্যেই ০.৪৫ লোহিত সরণের একটি টাইপ-ওয়ান অতিনবতারা আবিষ্কৃত হয়। এর অবস্থান ছিল পূর্বের সবচেয়ে দূরবর্তী অতিনবতারারও দ্বিগুণ দূরে।

অবশ্য দুটি বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাদেরকে। প্রথমত, কাছের ও দূরের অতিনবতারাগুলোকে আলাদা আলাদা ফিল্টার দিয়ে পরিমাপ করা হতো বলে তাদের উজ্জ্বলতার একটি সাধারণ পরিমাপ আন্দাজ করা ছিল কষ্টকর। দ্বিতীয়ত, দুরবিন তাক করলেই অতিনবতারা বিস্ফোরণ পর্যবেক্ষণ করা যাবে তার নিশ্চয়তা কতটুকু তা বোঝা যাচ্ছিল না। আর নিশ্চয়তা না থাকলে দুরবিন কোন দিকে তাক করে অপেক্ষায়ই থাকতে হবে যা অনেক ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। ১৯৯৪ সালের মধ্যে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হয়। কোন দিনে উচ্চ লোহিত সরণের কি পরিমাণ অতিনবতারা বিস্ফোরণ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব তার বেশ ভাল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হন তারা। এই নিশ্চয়তাই হাবল মহাকাশ দুরবিন-কে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি করে দেয়। হাবল দিয়ে ১ লোহিত সরণের অতিনবতারার উজ্জ্বলতা ও বর্ণালি সূক্ষ্ণভাবে পরিমাপ করতে পারলে বিভিন্ন বিশ্বতাত্ত্বিক মডেলের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে বলে মত প্রকাশ করেন পার্লমাটার ও এরিয়েল গুবার।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে অনেক গবেষক মিলে অতিনবতারা নিরূপণের প্রক্রিয়াটিকে আরও সূক্ষ্ণ করে তোলেন। ওদিকে অস্ট্রেলিয়ার ব্রায়ান শ্মিটের নেতৃত্বে আরেকটি দলও একই কাজে হাত দেয়। অবশেষে ১৯৯৭ সালে সবাই মিলে ০.৫ লোহিত সরণের কাছাকাছি থাকা ৪২ টি টাইপ-ওয়ানএ অতিনবতারা বিশ্লেষণ করে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়েন। তারা আবিষ্কার করতে চাচ্ছিলেন মহাকর্ষের প্রভাবে মহাবিশ্বের মন্দনের পরিমাণ, কিন্তু উল্টো দেখলেন মহাবিশ্বের ত্বরণ ঘটছে। এটি পদার্থবিজ্ঞানের সর্বজনগৃহীত মডেলের সাথে খাপ খাচ্ছিল না। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত অ্যামেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মিটিং-এ তারা এই ফলাফল প্রকাশ করেন। মিটিংটিতে পার্লমাটার, অ্যাডাম রিস এবং ব্রায়ান শ্মিট ভিন্ন ভিন্ন ভাবে একই ফলাফল প্রকাশ করেন যে কারণে বিজ্ঞানী মহলে তা বিপুল গ্রহণযোগ্যতা পায়।

পার্লমাটার তার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরও নিখুঁত উপাত্তের মাধ্যমে ত্বরণের পরিমাণ নিয়ে আরও জানতে চাচ্ছেন। নিজের আত্মজীবনীর শেষে তিনি বলেছিলেন,

আমার তিন বছরের মেয়ে নোয়া যখন হাই স্কুলে প্রবেশ করব তখন হয়তো বিশ্ব সম্পর্কে মানুষ আরও বিস্ময়কর ও নিখুঁত তথ্য জানতে পারবে।[২]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ