ইহুদি গণহত্যা
ইউরোপে ইহুদি গণহত্যা (ইংরেজি: The Holocaust দ্য হলোকস্ট্; হিব্রু ভাষায়: השואה হাশোয়া) হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের উপর চালানো গণহত্যা। হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি পার্টির পরিচালনায় জার্মান নাৎসি সামরিক বাহিনী ইউরোপের তদানীন্তন ইহুদি জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি অংশকে এবং আরও কিছু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বন্দী শিবির ও শ্রম শিবিরে নির্বিচারে হত্যা করে। আনুমানিক ষাট লক্ষ ইহুদি এবং আরও অনেক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ প্রাণ দেয়।
ইহুদি গণহত্যা | |
---|---|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর অংশ | |
স্থান | নাৎসি জার্মানি এবং জার্মান-অধিকৃত উপনিবেশ। |
তারিখ | ১৯৪১-৪৫ |
লক্ষ্য | ইউরোপীয় ইহুদি—হলোকস্ট পরিভাষার বিস্তৃত ব্যবহারে অন্যান্য নাৎসি অপরাধের ভুক্তভোগীরাও অন্তর্ভুক্ত।[২] |
হামলার ধরন | গণহত্যা, জাতি নির্মূলকরণ, বহিষ্কার |
নিহত | ৬,০০০,০০০[৩]–১১,০০০,০০০[৪] |
হামলাকারী দল | নাৎসি জার্মানি ও তাদের মিত্রবর্গ |
অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা | ২০০,০০০ |
হিটলারের বাহিনী পঞ্চাশ লক্ষ ইহুদি ছাড়াও সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, সাম্যবাদী, রোমানী ভাষাগোষ্ঠীর (যাযাবর) জনগণ, অন্যান্য স্লাভীয় ভাষাভাষী জনগণ, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষদের ওপর এই অমানবিক গণহত্যা পরিচালনা করে। নাৎসিরা এর নাম দিয়েছিল "ইহুদি প্রশ্নের চরম উপসংহার"। নাৎসি অত্যাচারের সকল ঘটনা আমলে নিলে সর্বমোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে নব্বই লক্ষ থেকে এক কোটি দশ লক্ষের মত।
অত্যাচার ও গণহত্যার এসব ঘটনা বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অনেক আগেই নাগরিক সমাজ থেকে ইহুদিদের উৎখাতের জন্য জার্মানিতে আইন প্রণয়ন করা হয়। জনাকীর্ণ বন্দী শিবিরে রাজনৈতিক ও যুদ্ধবন্দীদেরকে ক্রীতদাসের মতো কাজে লাগাতো যারা পরে অবসন্ন হয়ে রোগভোগের পর মারা যেত। জার্মানিতে নাৎসিদের উত্থানকে তৃতীয় রাইখ ("তৃতীয় রাজ্য") বলা হয়। নাৎসি জার্মানি তখন পূর্ব ইউরোপের কিছু এলাকা দখল করেছে। তারা সেখানে বিরুদ্ধাচরণকারী ও ইহুদিদের গণহারে গুলি করে হত্যা করে। ইহুদি এবং রোমানি ভাষাগোষ্ঠীর লোকদের তারা ধরে নিয়ে গ্যাটোতে রাখে। গেটো একধরনের বস্তি এলাকা যেখানে গাদাগাদি করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে এসব মানুষদেরকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হত। তারপর গেটো থেকে তাদেরকে মালবাহী ট্রেনে করে শত শত মাইল দূরের বধ্যশিবিরগুলোতে নিয়ে যেত। মালবাহী ট্রেনের পরিবহনেই অধিকাংশ মারা পড়ত। যারা বেঁচে থাকত তাদেরকে গ্যাস কক্ষে পুড়িয়ে হত্যা করা হত। তখনকার জার্মানির আমলাতন্ত্রের সকল শাখা সর্বাত্মকভাবে গণহত্যায় জড়িত ছিল। একজন ইহুদি গণহত্যা বিশেষজ্ঞ বলেছেন তারা জার্মানিকে একটি 'নরঘাতক রাষ্ট্রে' পরিণত করেছিল।
চিত্রে ইহুদি গণহত্যা
- পশ্চিম ইউক্রেনের (নাৎসিদের দখলকৃত সোভিয়েত ইউনিয়ন) জোলোচিভের নিকটে ইহুদি গণকবর। জোলোচিভের প্রাক্তন গেস্ট্যাপো সদরদপ্তরে কতিপয় সোভিয়েত-বাসী ছবিটি খুঁজে পায়।
- বারগেন-বেলসেনের অভ্যন্তরের একটি কবরস্থান।
- অসচউইটজে রোমান শিশুগণ, মেডিক্যাল এক্সপেরিমেন্টের ভুক্তভোগী।
- জার্মান পুলিস মিজকয গ্যাটোর নারী ও শিশুদের উপর গুলি চালাচ্ছে, ১৪ অক্টোবর ১৯৪২।
- এমএস সেইন্ট লুইস নামক জাহাজে বাহিত ৯৩০ জন ইহুদি শরণার্থীকে কিউবা, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় প্রবেশে অস্বীকৃতি জানানো হয়, এবং জাহাজটিকে ইউরোপে ফিরে যাওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়।
- উইক্রেনের লিভিভে দলবদ্ধভাবে অস্ত্রসজ্জিত পুরুষ ও যুবকদের দ্বারা ধাওয়াকৃত ইহুদি মহিলা, জুলাই ১৯৪১।
- ম্যাথুসেন ক্যাম্পের অনাহারী বন্দীদেরকে ১৯৪৫ সালের ৫ই মে মুক্ত করা হয়।
- বুশেনভাল্ড কন্সেন্ট্রেশান ক্যাম্পের কয়েকজন বন্দী, ছবিটি ১৯৪৫ সালে মার্কিন ৮০ তম ডিভিশনের সেনাদের বুশেনভাল্ড অধিকারের সময় তোলা।
- বুদাপেস্ট, হাঙ্গেরি—হাঙ্গেরীয় ও জার্মান সেনাদল গ্রেফতারকৃত ইহুদিদের মিউনিসিপাল থিয়েটারের ভেতর নিয়ে যাচ্ছে, অক্টোবর ১৯৪৪।
- বুদাপেস্ট, হাঙ্গেরি—ওয়েসেলেনি স্ট্রিটে বন্দী ইহুদি মহিলাগণ, ২০–২২ অক্টোবর ১৯৪৪।
- কারপাথো-রুথেনিয়ায় ইহুদি মহিলা ও শিশুগণ অসচউইটজ ডেথ ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর। মে/জুন ১৯৪৪।
- ওয়ার্সো গ্যাটোতে মৃত শিশুদের লাশ।
- ভিনিয়াস গেটোতে সক্রিয়ফারায়নিক্তে পারতিজানার অরগানিজাতসিয়ে নামক ইহুদি প্রতিরোধবাহিনীর কতিপয় অস্ত্রসজ্জিত সদস্য। এফপিওর মূলমন্ত্র ছিল "আমরা তাদের "আমাদেরকে ভেড়ার মত জবাই করার জন্য নিয়ে যেতে" দেবো না।"[৫]