গুই সাপ

গোসাপ বিভিন্ন প্রকার হয়:

• জলগোধিকা (water monitor)
• স্থলগোধিকা (land monitor)
• স্বর্ণগোধিকা (yellow monitor)

এই প্রাণী গিরগিটি প্রজাতির । লম্বায় সর্বাধিক ১০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকলেও বেশিরভাগ দেখা মেলে ২-৪ ফুট এবং প্রস্থে ১১ ইঞ্চির মত হয়। এরা স্থলে বা জলে বাস করে এবং এদের সাতার কাটা ও গাছে চড়তেও দেখা যায়। বড় গুইসাপ দেখতে গাঢ় বাদামি বা কালচে হয়। এদের সারা শরীরে চামড়ার ওপরের ত্বকে হলুদ রঙের রিং বিদ্যমান। পা ও নখ লম্বাটে হয়। লেজ চ্যাপ্টা ও শিরযুক্ত।

দেশের সর্বত্র গৃহস্থের বাড়ির আঙিনায়, কৃষি ক্ষেতে, বনে–জঙ্গল ও জলাভূমিতে বিচরণ করতে দেখা যেতো পরিচিত প্রাণী গুই সাপ। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির গুইসাপ দেখা যায়। এগুলো হলো সোনা গুই, কালো গুই এবং রামগাদি বা বড় গুই।

কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর, হাঁস-মুরগির ডিম, পচা-গলা প্রাণীদেহ ,বড়রা মাছ, সাপ, ব্যাঙ ছোট কুমির, কুমিরের ডিম ও কচ্ছপসহ নানান পশু-পাখি ও উচ্ছিষ্ট খেয়ে এরা জীবন ধারন করে থাকে।

প্রকৃতি, পরিবেশের ও কৃষকের বন্ধু এই গুইসাপ ফসলের ক্ষেতের পোকাপতঙ্গ ও ধেনো ইঁদুর খেয়ে উপকার সাধিত করে।

ক্রমশ: নগরায়নের বিস্তার, অন্য দিকে চোরাশিকার, দু’পায়ের দাপটে এই প্রাণীটি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রাণী সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে অবাধে এদের হত্যা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ইউনিয়ন (আইইউসিএন)^[৩] ২০০০ সালে প্রাণীটিকে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য মতে, ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫১ লাখ ৪৩ হাজার টাকার চামড়া রপ্তানি হয়। গুই সাপের চামড়া রপ্তানির কারণে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের বিবেচনায় ১৯৯০ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এদের হত্যায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

গ্রামাঞ্চলে এদের এখনও দেখা মেলে । মানুষের রোষানলে বেঘোরে প্রাণ হারায় । কারো ক্ষতি সাধণের দৃষ্টান্ত না করলেও সমাজে এদেরকে ক্ষতিকারক ভাবা হয়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী গুইসাপ সংরক্ষিত।[১]