জৈবিক লিঙ্গ

একটি বৈশিষ্ট্য যা কোন নির্দিষ্ট জীবের প্রাজননিক কার্যপ্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে

জৈবিক লিঙ্গ বা যৌনতা হল একটি বৈশিষ্ট্য যা কোন নির্দিষ্ট জীবের প্রজনন-সংক্রান্ত কার্যপ্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে, পুরুষনারী হিসেবে, যা উদ্ভিদ ও প্রাণীতে যৌন প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে প্রজাতিসমূহের বংশবিস্তার ঘটায়। বহু প্রজাতির জীব সম্প্রদায় রয়েছে যেগুলো প্রধানত নারী ও পুরুষ হিসেবে দুটি আলাদা শ্রেণীতে বিভক্ত, এই শ্রেণী দুটির প্রতিটিই পৃথকভাবে এক একটি যৌনতা বা জৈবিক লিঙ্গ বা সেক্স হিসেবে পরিচিত[১]যৌন প্রজনন হল জীবজগতের মাঝে একটি সাধারণ প্রজনন বা সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার জন্য একই প্রজাতির দুটি বিপরীত যৌনতার জীবের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংযোগের প্রয়োজন হয়। উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয়ের দ্বারাই যৌন প্রজনন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে। এছাড়া কিছু ছত্রাক এবং বিভিন্ন এককোষী জীবেও এই প্রক্রিয়া দেখা যায়। যৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় একাধিক উৎস থেকে আগত জেনেটিক বৈশিষ্ট্য মিলিত ও মিশ্রিত হয়:[২][৩] গ্যামেট নামক বিশেষায়িত কোষদ্বয় মিলিত হয়ে সন্তান গঠন করে, যা পিতামাতা উভয়ের কাছ থেকে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। গ্যামেটদ্বয় গঠন ও কার্যপ্রণালীর দিক থেকে একই রকম হতে পারে (যা আইসোগ্যামি নামে পরিচিত), কিন্তু বহু ক্ষেত্রে এটি বিবর্তিত হয়ে গ্যামেটের ভিন্নতা দেখা যেতে পারে, এমন ক্ষেত্রে দুটি নির্দিষ্ট-যৌনতা বিশিষ্ট পৃথক গ্যামেট পাওয়া যায় (এই প্রক্রিয়াকে এনাইসোগ্যামি বলে।)।

পুং গ্যামেট (শুক্রাণু) দ্বারা স্ত্ৰী গ্যামেট (ডিম্বাণুর) নিষিক্তকরণ

মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণিতে, পুরুষ সাধারণত এক্সওয়াই (XY) ক্রোমোজোম ধারণ করে, যেখানে নারী প্রাণী এক্সএক্স (XX) ক্রোমোজোম বহন করে, যেগুলো হল এক্সওয়াই লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থার একটি অংশ। অন্যান্য প্রাণিতেও অনুরূপ কোন না কোন লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন পক্ষীকুলে জেডডব্লিউ লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা এবং পতঙ্গরাজ্যে এক্সজিরো লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা।

কোন জীবে কোন ধরনের গ্যামেট তৈরি হবে তা তার যৌনতা দ্বারা নির্ধারিত হয়: পুরুষ জীব পুরুষ গ্যামেট (স্পারমাটোজোয়া বা প্রাণিতে শুক্রাণু, উদ্ভিদে পরাগরেণু) তৈরি করে যেখানে নারী জীব তৈরি করে নারী গ্যামেট (ডিম্বাণু বা ডিম্বক কোষ); যে সকল জীব পুরুষ ও স্ত্রী উভয় গ্যামেট উৎপাদন করে তাদেরকে হারমাফ্রোডিটিক বা উভলিঙ্গীয় বলা হয়। সাধারণত, কোন জীবের যৌনতার পার্থক্যের কারণে শারীরিক পার্থক্য তৈরি হয়; উক্ত যৌন দ্বিরূপতা এই যৌনতাদ্বয়ের অভিজ্ঞতায় পৃথক ধরনের প্রাজননিক চাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, সঙ্গী নির্বাচন ও যৌন নির্বাচন প্রক্রিয়া এই দুটি যৌনতার মাঝে দৈহিক পার্থক্যের বিবর্তনকে তরান্বিত করতে পারে।

পর্যালোচনা

|
একগুচ্ছ স্পাইডারপ্ল্যান্ট (বামে)। এরা হল অযৌন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধির একটি উদাহরণ। প্রজাপতিরা হল সেসব প্রাণীদের মাঝে একটি, যারা যৌন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে (ডানে)।

জীবজগতের একটি অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল বংশবৃদ্ধি, এবং যৌনতা হল এই বৈশিষ্ট্যের একটি অংশ। জীবজগতের মত করে জীবের প্রজনন বা বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়াও সহজ স্তর থেকে জটিলতর স্তরের দিকে বিবর্তিত হয়েছে। জীবজগতের জীবসমূহের মধ্যে একাধিক প্রকারের প্রজনন প্রক্রিয়া দেখা যায়। শুরুতে প্রজনন ছিল একটি অনুলিপন প্রক্রিয়া যাতে নবজাতক সন্তানের জেনেটিক তথ্য ও পিতামাতার জেনেটিক তথ্য তথা সকল বৈশিষ্ট্য অভিন্ন ও অবিকল ছিল। একে অযৌন প্রজনন বলা হতো যা এখনো বহু প্রজাতিতে বিশেষত এককোষী প্রাণিজগতে দেখতে পাওয়া যায়।[৪] যৌন প্রজননে জেনেটিক উপাদান আসে একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন জীব থেকে। একটি লম্বা পরিক্রমার বিবর্তনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ক্রমবিকাশ লাভ করেছে যার মাঝখানে বহু পর্যায় রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাকটেরিয়া অযৌন পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করে, কিন্তু পাশাপাশি এমন একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েও যায় যার মাধ্যমে একটি ব্যাকটেরিয়া (দাতা) থেকে তার জেনেটিক উপাদানের একটি অংশ অপর এক ব্যাকটেরিয়ার (গ্রহীতার) কাছে স্থানান্তরিত হয়।[৫]

এই মধ্যবর্তী পর্যায়গুলো বাদ দিলে, যৌন ও অযৌন প্রজননের মধ্যে মূল পার্থক্য হল পূর্বসুরীর জেনেটিক উপাদান প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতি। সাধারণত অযৌন প্রজননে একটি কোষ তার জেনেটিক তথ্যের প্রতিলিপি করে এবং এরপর দুভাগে বিভক্ত হয়, যে প্রক্রিয়াকে মাইটোসিস নামে আখ্যায়িত করা হয়। যৌন জননে মিয়োসিস নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন সব বিশেষ ধরনের কোষ তৈরি হয় যেগুলো জেনেটিক উপাদানের অবিকল প্রতিলিপি ছাড়াই বিভক্ত হয়। উক্ত উৎপন্ন কোষগুলোকে গ্যামেট বলা হয় যেগুলো মাতৃকোষের জেনেটিক তথ্যের মাত্র অর্ধাংশ বহন করে। এই গ্যামেটগুলো হল সেই কোষ যেগুলো উক্ত প্রাণীর যৌন পদ্ধতিতে বংশবিস্তারের জন্য উৎপন্ন হয়।[৬] যৌনতায় সেইসকল ব্যবস্থাপনাগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে যেগুলো যৌন প্রজননকে সক্ষম করে, এবং এটি প্রজনন প্রক্রিয়ার সঙ্গেই বিবর্তিত হয়েছে, যা একই ধরনের গ্যামেট উৎপন্নের প্রক্রিয়া (আইসোগ্যামি) থেকে উন্নীত হয়ে এমন এক প্রক্রিয়ায় পৌঁছেছে যা বিভিন্ন ধরনের গ্যামেট তৈরি করে, আরও স্পষ্টভাবে বললে একটি বড় স্ত্রী গ্যামেট (ডিম্ব) এবং একাধিক ছোট পুরুষ গ্যামেট (শুক্রাণু) তৈরি করে।[৭]

উন্নত জটিল জীবে, যৌনাঙ্গ হল সেসব অঙ্গ যেগুলো যৌন প্রজননে গ্যামেট উৎপাদন এবং বিনিময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জীবজগতের বহু প্রজাতিতে বিশেষ করে প্রাণীজগতের জীবে যৌন বিশেষত্ব রয়েছে, এবং তাদের জনসংখ্যাকে পুরুষ এবং নারী জীবে বিভক্ত করা হয়। বলা বাহুল্য, এমন অনেক প্রজাতিও আছে যেগুলোতে কোন যৌন বিশেষত্ব নেই, এবং একই জীবে একই সাথে পুরুষ ও নারী যৌনাঙ্গ বিদ্যমান থাকে। এই সকল জীবকে বলা হয় হারমাফ্রোডাইট বা উভলিঙ্গ। উদ্ভিদ জগতে এই বৈশিষ্ট্যের ব্যাপকতা অনেক বেশি।[৮]

বিবর্তন

এনাইসোগ্যামির বিভিন্ন রূপ:
A) সচল কোষের এনাইসোগ্যামি, B) উওগ্যামি (ডিম্ব কোষ ও শুক্র কোষ), C) নিশ্চল কোষের এনাইসোগ্যামি (egg cell and spermatia).
আইসোগ্যামির বিভিন্ন রূপ:
A) সচল কোষের আইসোগ্যামি, B) নিশ্চল কোষের আইসোগ্যামি, C)কনজুগেশন।

যৌন প্রজনন সম্ভবত পূর্বপুরুষ-জীব প্রকৃত এককোষী প্রাণিদের মধ্যে প্রথম বিবর্তিত হয় প্রায় ১০০ কোটি বছর আগে।[৯] যৌনতার বিবর্তনের কারণ ও তা আজ অবধি টিকে থাকার কারণ কি তা এখনো একটি বিতর্কের বিষয়। এ বিষয়ে কিছু সমাদৃত তত্ত্ব হল, এটি বংশধরদের মধ্যে বৈচিত্র তৈরি করে, যৌনতা সুবিধাজনক বৈশিষ্টগুলো বিস্তৃত করতে ও অসুবিধাজনক বৈশিষ্টগুলোকে অপসারণ করতে সাহায্য করে, এবং যৌনতা জার্ম-লাইন ডিএনএ-কে মেরামত করতে সহায়তা করে।

যৌন প্রজনন হল মূলত প্রকৃতকোষী জীবদের একটি প্রক্রিয়া, যাদের কোষে নিউক্লিয়াস ও মাইটোকন্ড্রিয়া রয়েছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিদের পাশাপাশি, ছত্রাক ও অন্যান্য প্রকৃতকোষী জীবও (যেমন ম্যালেরিয়া পরজীবী) যৌন প্রজননে অংশগ্রহণ করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া নিজেদের কোষগুলোর মধ্যে জেনেটিক উপাদান স্থানান্তরের জন্য কনজুগেশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, যৌন প্রজননের সমতুল্য না হয়েও, এ প্রক্রিয়ার ফলে জেনেটিক বৈশিষ্টের সংমিশ্রণ ঘটে।

প্রকৃতকোষে যৌন প্রজননের বৈশিষ্ট্যের সংজ্ঞায়নের প্রধান বিষয় হল গ্যামেটের পার্থক্য ও নিষেকের দ্বৈত প্রকৃতি। কোন প্রজাতিতে দুই ধরনের গ্যামেটের বহুবিভাজনকে এখনো যৌন প্রজননের একটি রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, কোন বহুকোষী উদ্ভিদ বা প্রাণীতেই তৃতীয় প্রকারের কোন গ্যামেট পাওয়া যায় নি।[১০][১১][১২]

যৌনতার বিবর্তন আদিকোষ বা প্রাথমিক প্রকৃতকোষ পর্যায় থেকে শুরু হওয়ার কারণে,[১৩] ক্রোমোজোমভিত্তিক লিঙ্গ নির্ধারণের উৎপত্তি সম্ভবত প্রকৃতকোষীদের উদ্ভবের সূচনাকালেই হয়েছে (দেখুন এনাইসোগ্যামির বিবর্তন)। জেডব্লিউ লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা পাখি, কিছু মাছ ও কিছু ক্রাস্টেশিয়াদের মধ্যে দেখা যায়। এক্সওয়াই লিঙ্গ নির্ধারণ ব্যবস্থা দেখা যায় অধিকাংশ স্তন্যপায়ীতে,[১৪] কিন্তু কিছু কীটপতঙ্গ,[১৫] ও উদ্ভিদেও(Silene latifolia) তা দেখা যায়।[১৬] এক্সজিরো লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা অধিকাংশ এরাকনিডে, সিলভারফিশ (এপটেরিগোটা), ড্রাগনফ্লাই (পেলিওপটেরা) ও ঘাসফড়িংয়ের (এক্সোপটেরিগোটা) ন্যায় কীটপতঙ্গে এবং কিছু নেমাটোড, ক্রাস্টেশিয়া ও গ্যাস্ট্রোপডে পাওয়া যায়।[১৭][১৮]

পাখির জেডব্লিউ ও স্তন্যপায়ীর এক্সএক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে মিল নেই,[১৯] এবং মানুষের সঙ্গে মুরগির তুলনা করলে, জেড ক্রোমোজোম মানুষের এক্স বা ওয়াই ক্রোমোজোমের তুলনায় মানুষের অটোজোমাল ক্রোমোজোম ৯ এর সঙ্গে অধিক সদৃশ বলে প্রতীয়মান হয়, যা থেকে ধারণা করা হয় যে, জেডব্লিউ এক্সওয়াই লিঙ্গ নির্ধারণ ব্যবস্থার মাঝে কোন মিল নেই, কিন্তু এদের সেক্স ক্রোমোজোম মানুষ ও পাখির সাধারণ পূর্বপুরুষের অটোজোমাল ক্রোমোজোম হতে এসেছে। ২০০৪ সালের একটি গবেষণাপত্রে মুরগির জেড ক্রোমোজোমের সঙ্গে প্লাটিপাসের এক্স ক্রোমোজোমের তুলনা করে প্রস্তাব করা হয় যে, এরা পরস্পর সম্পর্কিত।[২০]

যৌন প্রজনন

যৌনতার ক্রমিকচক্র

যৌন প্রজনন হল অধিকাংশ প্রাণী এবং উদ্ভিদের প্রজনন পদ্ধতি[২১]। কিছু প্রোটিস্টা এবং ছত্রাকও এই পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করে। যৌন প্রজননকারী জীবগণ দুটি আলাদা যৌনতা বা লিঙ্গবিশিষ্ট হয়ঃ এগুলো হলঃ পুরুষনারী। নারীর ডিম্ব বা ডিম্বাণু পুরুষের শুক্রকীট বা শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে নবজাতক সন্তানের জন্ম হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায় জড়িত রয়েছে।

উদ্ভিদ

ফুলেরা হল সপুষ্পক উদ্ভিদসমূহের যৌনাঙ্গ, যাতে সাধারণত পুরুষ ও স্ত্রী উভয় অংশ বিদ্যমান থাকে।
আবৃতবীজী উদ্ভিদের স্কেমা সাইকেল
স্ত্রী (বামে) ও পুরুষ (ডানে) কোন হল পাইন ও অন্যান্য কোনিফার উদ্ভিদের যৌনাঙ্গ।

উদ্ভিদ প্রজনন হল উদ্ভিদের নতুন সন্তান জন্মলাভ প্রক্রিয়া, যা যৌন এবং অযৌন উভয় প্রক্রিয়াতেই ঘটতে পারে। যৌন প্রজননে গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে জিনগতভাবে মাতাপিতা থেকে পৃথক সন্তান উৎপন্ন হয়। প্রাণীদের মতই, উদ্ভিদেরও উন্নত ও বিশেষায়িত পুরুষ ও নারী গ্যামেট রয়েছে।[২২] সবীজী উদ্ভিদে, পুরুষ গ্যামেট কঠিন চামড়ায় আবৃত হয়ে পরাগরেণু গঠন করে। উদ্ভিদের নারী গ্যামেট তার গর্ভাশয়ে অবস্থান করে, যা পরারেণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে বীজ গঠন করে, যাটে নিষিক্ত ডিমের মত ভ্রূণীয় উদ্ভিদের পরিবর্ধনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি সঞ্চিত থাকে। সপুষ্পক উদ্ভিদে, নিষিক্ত গ্যামেট বীজের ভেতর রক্ষিত থাকে, যা উদ্ভিদের বংশধরকে দুর দূরান্তে ছড়িয়ে দিতে বাহক প্রতিনিধির কাজ করে। ফুলেরা হল সপুষ্পক উদ্ভিদসমূহের যৌনাঙ্গ, যাতে সাধারণত পুরুষ ও স্ত্রী উভয় অংশ বিদ্যমান থাকে। ফুলের কেন্দ্রীয় অংশে থাকে গর্ভাশয় যাতে ডিম্বক উপস্থিত থাকে, এর উপরের অংশের নাম গর্ভমুণ্ড এবং এর চারপাশে থাকে পরাগধানী, যাতে পরাগরেণু উৎপন্ন হয়। পরাগরেণু পরাগায়ন প্রক্রিয়ায় গর্ভমুণ্ডে পৌঁছালে পরাগরেণু হতে পরাগনালি গর্ভমুণ্ডের ভেতর দিয়ে গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে পুংজনন কোষ পৌঁছে দেয়, যা ডিম্বককে নিষিক্ত করে বীজ ও বীজ ধারণকারী ফল উৎপন্ন করে।

সাইকাস ও পাইনাস গাছের মত পিনোফাইটা পর্বের উদ্ভিদদের যৌনাঙ্গ কোনিফার কোন নামে পরিচিতঃ; পুরুষ ও স্ত্রী কোন আলাদা এবং তা একই গাছে জন্ম নেয়, স্ত্রী কোনে বীজ এবং পুরুষ কোনে পরাগরেণু উৎপন্ন হয়, যা পরাগায়নের মাধ্যমে স্ত্রী কোনে পৌঁছে বীজকে নিষিক্ত করে।

অযৌন প্রজননে (যেমন অঙ্গজ প্রজনন) গ্যামেটের মিলন ছাড়াই সন্তান উৎপন্ন হয় যা জিনগতভাবে মাতৃউদ্ভিদের অনুরূপ, যদি না মিউটেশন প্রক্রিয়া ঘটে।

প্রাণী

মিলনরত হোভারফ্লাই

অধিকাংশ যৌন প্রজননশীল প্রাণী ডিপ্লয়েড জীব হিসেবে তাদের জীবন অতিবাহিত করে, যেখানে হ্যাপ্লয়েড পর্যায়টি হ্রাস পেয়ে এককোষী গ্যামেটে রূপলাভ করে।[২৩] প্রাণীর এই গ্যামেটগুলোর পুরুষ ও নারী রূপ রয়েছে - স্পারমাটোজোয়া বা শুক্রাণু এবং ডিম্ব কোষ। এই গ্যামেটদুটো ভ্রূণ গঠনের জন্য পরস্পর মিলিত হয় যা পরবর্তীতে নতুন সন্তান জীবে রূপান্তরিত হয়।

পুরুষ গ্যামেট হল স্পারমাটোজোয়া বা শুক্রাণু (যা শুক্রাশয়ে উৎপন্ন হয়), যা হল একটি একক ফ্লাজেলা বা লেজযুক্ত একটি কোষ, কোষটি উক্ত ফ্লাজেলার সাহায্যে চলাচল করে।[২৪] এটি অতি ক্ষুদ্র চলনক্ষম একটি কোষ যা ডিম্বাণুর আথে মিলিত হয়ে তাকে নিষিক্ত করে।

নারী গ্যামেট হল ডিম্বাণু (ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন হয়), চলাচলে অক্ষম বৃহৎ কোষ, যাতে ভ্রূণ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও কোষীয় উপাদান থাকে।[২৫] ডিম্বকোষ প্রায়শই ভ্রূণ গঠনের সহায়তার জন্য অন্যান্য কোষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যা একটি ডিম তৈরি করে। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণিতে নিষিক্ত ভ্রূণ নারী প্রাণীর দেহেই অবস্থান করে, যা তার মায়ের দেহ থেকে সরাসরি পুষ্টি গ্রহণ করে।

প্রাণীরা সাধারণত চলনক্ষম হয়, এবং মিলনের জন্য বিপরীত যৌনতার সঙ্গীকে অনুসন্ধান করতে থাকে। পানিতে বসবাসকারী প্রাণীরা বহিঃনিষেক পদ্ধতিতে মিলন করতে পারে, যেখানে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু জলের মাঝেই নিষিক্ত হয়।[২৬] তবে যেসব প্রাণী জলে বাস করে না তাদেরকে অবশ্যই অন্তঃনিষেক প্রক্রিয়ায় পুরুষ থেকে নারীদেহে শুক্রাণু স্থানান্তর করতে হয়।

অধিকাংশ পাখিতে নারী ও পুরুষ উভয় পাখির ক্লোয়াকা নামক জননছিদ্র থাকে, এদেরও সংযোগের মাধ্যমেই পুরুষ পাখি হতে নারী পাখিতে শুক্রাণু স্থানান্তরিত হয়।[২৭] বহু স্থলজ প্রাণিতে পুরুষের শুক্রাণু পরিবহনের বিশেষায়িত পুং জননাঙ্গ থাকে, এদের অপূর্ণাঙ্গ শিশ্ন বলা হয়। মানুষ ও ও অন্যান্য স্তন্যপায়ীর পুং জননাঙ্গ হল শিশ্ন, যা জরায়ু নামক নারীর প্রাজননিক এলাকায় প্রবেশ করে শুক্রাণু প্রদান করে, এই প্রক্রিয়াকে যৌনসঙ্গম বলা হয়। শিশ্নে একটি নালিকা থাকে যার মধ্য দিয়ে বীর্য (শুক্রাণুবাহী তরল) প্রবাহিত হয়। নারী স্তন্যপায়ীতে জরায়ু ডিম্বাশয়ের সাথে সংযুক্ত থাকে, যেটি নিষিক্ত ভ্রূণকে ধারণ করে তার পরিবর্ধন পরিচালনা করে, এই প্রক্রিয়াকে গর্ভধারণ বলে।

প্রাণীর চলাচলে সক্ষমতার কারণে, প্রাণীর যৌন আচরণে জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপকিছু পতঙ্গ প্রজাতি নারী সঙ্গীকে বীর্য প্রদানের ক্ষেত্রে ট্রমাটিক ইন্সেমিনেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে, যেখানে নারী প্রাণীর উদরীয় গহ্বর বিদীর্ণ করে বীর্য প্রদান করা হয়, যা উক্ত নারী প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ছত্রাক

ছত্রাকের যৌন প্রজননের অংশ হিসেবে মাশরুম উৎপন্ন হয়।

অধিকাংশ ছত্রাকই যৌন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে, যাদের জীবনচক্রে হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড উভয় পর্যায় রয়েছে। এসব ছত্রাক সাধারণত আইসোগ্যামাস (একই রকম গ্যামেট বিশিষ্ট), যাদের পুরুষ ও নারী বিশেষত্ব নেইঃ হ্যাপ্লয়েড ছত্রাকেরা একে অপরের সংস্পর্শে বেড়ে ওঠে এবং এক পর্যায়ে পরস্পরের কোষের মিলন ঘটায়। কিছু ক্ষেত্রে এই মিলন হয় অসম, এবং এই কোষ দুটোর মধ্যে যেই ছত্রাকটি একটি নিউক্লিয়াস (অন্যান্য কোষীয় অঙ্গাণু ছাড়া) দান করে, তাকেই বাচনিকভাবে পুরুষ হিসেবে বিবেচনা হয়।[২৮]

বেকারস ইস্ট সহ কিছু ছত্রাকের এমন মিলন কৌশল আছে যা যৌথভাবে পুরুষ ও নারী অবদানের একটি সদৃশ দ্বৈততা সৃষ্টি করে। একই রকম যৌন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ইস্ট ডিপ্লয়েড কোষ গঠনের জন্য একে অপরের সাথে কোষ বিনিময় করে হয় না, শুধুমাত্র তাদের সঙ্গেই বিনিময় করে যারা ভিন্ন যৌন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।[২৯]

ছত্রাক যৌন প্রজননের অংশ হিসেবে মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা তৈরি করে। মাশরুমের ভেতরেই ডিপ্লয়েড কোষ তৈরি হয়, যা পড়ে হ্যাপ্লয়েড স্পোরে বিভাজিত হয় - মাশরুমের উচ্চতা যৌন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত এই সকল সন্তানকে (স্পোর) বিস্তৃতভাবে চারপাশে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে।

লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা

অধিকাংশ প্রাণিতেই উভলিঙ্গিয় যৌন প্রক্রিয়া দেখা যায়, যাতে একই দেহে পুরুষ ও নারী উভয় গ্যামেট উৎপন্ন হয়; শামুকের মত কিছু প্রাণী এবং অধিকাংশ সপুষ্পক উদ্ভিদে এটি দেখা যায়।[৩০] তবে, বহু ক্ষেত্রে, যৌনতার বিশেষত্ব বিবর্তিত হয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কিছু প্রাণী তাদের কোন একটি দেহে শুধুমাত্র পুরুষ অথবা শুধুমাত্র নারী গ্যামেট উৎপন্ন করে। যে জৈবিক কারণে কোন জীবের প্রতিটিতে নির্দিষ্টভাবে নারী অথবা পুরুষ যৌনতার উন্মেষ ঘটে তাকে লিঙ্গ নির্ধারণ বলা হয়। লিঙ্গ নির্ধারণ ব্যবস্থা দুই প্রকারঃ জিনগত ও পরিবেশগত।চচ

জিনগত

ড্রসোফিলার এক্সওয়াই লিঙ্গ-নির্ধারণ

মানুষ সহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে, জিনগত এক্সওয়াই লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থার দ্বারা কোন প্রাণীর যৌনতা নির্ধারিত হয়। এছাড়া কমন ফ্রুটফ্লাই এবং কিছু উদ্ভিদেও এই প্রক্রিয়া দেখা যায়।[৩০] এক্ষেত্রে কোন প্রাণীর যৌনতা নির্ভর করে তার পিতামাতা থেকে সে কোন প্রকারের সেক্স ক্রোমোজোম লাভ করেছে তার উপর। একজন নারীর ডিম্বাণু বা ডিম্ব কোষে একটি মাত্র এক্স ক্রোমোজোম বিদ্যমান থাকে। একজন পুরুষের শুক্রাণুতে হয় একটি এক্স ক্রোমোজোম অথবা একটি ওয়াই ক্রোমোজোম বিদ্যমান থাকে। যখন একটি শুক্রাণু ও একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত ডিম্বাণু গঠনের জন্য মিলিত হয়, তখন শিশু এই দুটি ক্রোমোজোমের যে কোন একটি তাঁর বাবা থেকে লাভ করে। শিশুটি যদি দুটি এক্স ক্রোমোজোম লাভ করে তবে সে মেয়ে শিশুরূপে বেঁড়ে ওঠে আর যদি সে একটি এক্স এবং একটি ওয়াই ক্রোমোজোম লাভ করে তবে সে ছেলে হিসেবে বেঁড়ে ওঠে।[৩১] শিশু জন্মের পূর্বে, তাদের দেহে পুং জননাঙ্গ অথবা স্ত্রী জননাঙ্গ বিকশিত হয়।

জিনগত প্রক্রিয়ায় আরও অনেক লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন পক্ষীকুলে জেডডব্লিউ লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা, পিপড়া ও মৌমাছিতে হ্যাপ্লয়েড-ডিপ্লয়েড লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা এবং পতঙ্গরাজ্যে এক্সজিরো লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা।

পরিবেশগত

ক্লাউনফিশরা জন্মগতভাবে পুরুষ; কিন্তু দলের সবচেয়ে বড় মাছটি নারীতে রূপান্তরিত হয়।

অনেক প্রজাতি রয়েছে, যেগুলোতে জীবের যৌনতা পিতামাতা নয় বরং জীবনদশায় প্রাপ্ত পরিবেশের দ্বারা নির্ধারিত হয়। বহু সরীসৃপে তাপমাত্রানির্ভর যৌনতা নির্ধারণ ব্যবস্থা রয়েছে; যেমন কচ্ছপের যৌনতা নির্ধারিত হয় ডিম ফোটানোর তাপমাত্রার উপর; কম তাপমাত্রায় ফোটানো ডিমগুলোতে পুরুষ এবং বেশি তাপমাত্রার ডিমে নারী কচ্ছপ বেড়ে ওঠে।

এছাড়া কিছু জীবের ক্ষেত্রে জীবনভর যৌনতা পরিবর্তিত হয়, যেমন সকল ক্লাউনফিশ জন্মগতভাবে পুরুষ; কিন্তু তাদের দলের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী মাছটি নারী মাছে রূপান্তরিত হয়।

কিছু ফার্ন উদ্ভিদে সাধারণ যৌনতা হল উভলিঙ্গ, কিন্তু আগে উভলিঙ্গ ফার্ন জন্মেছিল এমন মাটিতে আবার নতুন ফার্ন জন্ম নিলে তা পুরুষ ফার্নে পরিণত হয়।[৩২]

যৌন দ্বিরূপতা

Orgyia antiqua, পুরুষ ও স্ত্রী নমুনা

যৌন দ্বিরূপতা বলতে কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির জীবের স্ত্রী ও পুরুষ সদস্যের মধ্যে বাহ্যিক শারীরিক বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এমন তারতম্য দেখা যায় যাতে করে স্ত্রী-পুরুষে খুব সহজে পার্থক্য করা যায়। সাধারণত প্রধান পার্থক্যটি হল যৌনাঙ্গের বিভিন্নতা। এছাড়া বর্ণ, আকার-আকৃতি, গঠন অথবা কোন বিশেষ জিনগত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে এদের আলাদা করা যায়। প্রধানত দুটো কারণে যৌন দ্বিরূপতা দেখা যায়। প্রথমত, বিপরীত লিঙ্গের জীবকে আকৃষ্ট করার লক্ষে যৌন বিবর্তনের মাধ্যমে দ্বিরূপতা সৃষ্টি (যেমন পুরুষ ময়ূরের ঝলমলে পালক) এবং দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে দ্বিরূপতা সৃষ্টি (যেমন পুরুষ বেবুনের বড় দেহ ও শ্বদন্ত)। প্রধানত পাখিদের মধ্যে যৌন দ্বিরূপতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। পুরুষ পাখিদের ঝলমলে ও উজ্জ্বল পালক থাকে, এতে প্রজনন ও সীমানা বজায় রাখতে সুবিধা হয়। স্ত্রী পাখিদের পালক সাধারণত খুব সাদামাটা হয়, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে তা একদম মিশে যায়। ফলে বাসায় বসে থাকা স্ত্রী পাখিরা শত্রুর হাত থেকে বেঁচে যায়। একই কারণে স্তন্যপায়ী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে যৌন দ্বিরূপতা দেখা যায়। এছাড়া আচরণের দিক থেকেও বিভিন্নতা দেখা যায়। যেমন: কাঁটাওয়ালা তক্ষকের পুরুষ সদস্যদের খাদ্যাভ্যাস স্ত্রী সদস্যদের তুলনায় ভিন্ন।[৩৩]

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ