ফ্যানারোজোয়িক

ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগ
৫৪.১ - ০ কোটি বছর আগে
-৪৫০ —
-৪০০ —
-৩৫০ —
-৩০০ —
-২৫০ —
-২০০ —
-১৫০ —
-১০০ —
-৫০ —
০ —
স্কেল:
কোটি বছর

ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগ [৩] হল ভূতাত্ত্বিক সময়ের কালক্রমের অন্তর্গত বর্তমান ভূতাত্ত্বিক অধিযুগ এবং এমন একটি সময় যখন প্রচুর পরিমাণে প্রাণী এবং উদ্ভিদ জীবন অস্তিত্ব লাভ করেছিল। এটা ৫৪.১ কোটি বছর পূর্ব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করে [৪] এবং এটা ক্যাম্ব্রিয়ান যুগ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়েছিল যখন বিচিত্র ধরনের শক্ত-খোলসযুক্ত প্রাণী সৃষ্টি হয়েছিল। এর নাম উদ্ভূত হয়েছিল প্রাচীন গ্রিক শব্দ φανερός (phanerós- ফ্যানারোজ) এবং ζωή (zōḗ- জোয়) থেকে যাদের অর্থ দৃশ্যমান জীবন এবং যেহেতু এটা বিশ্বাস করা হত যে জীবনের সূচনা হয়েছিল ক্যাম্ব্রিয়ান যুগ হতে যা এই অধিযুগের অন্তর্ভুক্ত প্রথম যুগ ছিল। ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগের পূর্বের সময়কে প্রাক্-ক্যাম্ব্রিয়ান কাল বলা হত যা বর্তমানে হেডিয়ান, আর্কিয়ান এবং প্রোটেরোজোয়িক অধিযুগে বিভক্ত হয়েছে।

ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগের ব্যাপ্তিকাল শুরু হয়েছিল প্রাণীজগতের অনেক পর্বের দ্রুত উত্থানের মাধ্যমে; এসকল পর্বের বিভিন্ন বিচিত্র গঠনের বিবর্তনের মাধ্যমে; জটিল উদ্ভিদ প্রজাতির সৃষ্টি এবং উন্নতির মাধ্যমে; মাছের বিবর্তনের মাধ্যমে; কীট-পতঙ্গ এবং টেট্রাপডের সৃষ্টির মাধ্যমে এবং আধুনিক প্রাণীকুলের উন্নতির মাধ্যমে। আদিম ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগে স্থলে উদ্ভিদ জীবনের সূচনা হয়েছিল। এই সময়কালে, টেকটোনিক বল মহাদেশগুলিকে স্থানান্তরিত করেছিল এবং একক ভূখণ্ডে একীভূত করেছিল যা প্যানজিয়া (সর্বাপেক্ষা সাম্প্রতিক সুপারমহাদেশ) নামে পরিচিত যা পরবর্তীতে বর্তমান মহাদেশীয় ভূখণ্ডে পৃথক হয়ে যায়।

প্রোটেরোজোয়িক-ফ্যানারোজোয়িক সীমানা

জীবন সময়রেখা
-৪৫০ —
-৪০০ —
-৩৫০ —
-৩০০ —
-২৫০ —
-২০০ —
-১৫০ —
-১০০ —
-৫০ —
০ —
প্রথম জল
প্রবল উল্কাবর্ষণ
প্রথম যৌন জনন
ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ
পোঙ্গোলা
হিউরোনিয়ান
ক্রায়োজিনিয়ান
আন্দিয়ান
কারু
কোয়াটার্নারি
অক্ষের স্কেল: কোটি বছর
বামপ্রান্তে কমলা রঙে জানা তুষার যুগ চিহ্নিত।
আরও দেখুন: মানব সময়রেখাপ্রকৃতি সময়রেখা

প্রোটেরোজোয়িক-ফ্যানারোজোয়িক সীমানার অবস্থান হল ৫৪.১ কোটি বছর পূর্বে। [৫] ১৯ শতকে প্রথম সহজলভ্য প্রাণীর (মেটাজোয়ান) জীবাশ্ম আবিষ্কারের সময় থেকে সীমানা স্থাপিত হয়েছিল কিন্তু ১৯৫০ এর দশকে এইসব জীবাশ্মের পদ্ধতিগত গবেষণার মাধ্যমে আদিম প্রোটেরোজোয়িক মহাযুগের কয়েকশত শ্রেণীর (পর্ব) মেটাজোয়াকে শনাক্ত করা হয়েছিল। অধিকাংশ ভূতত্ত্ববিদ এবং জীবাশ্মবিদ প্রোটেরোজোয়িক-ফ্যানারোজোয়িক সীমানা স্থাপন করেছিল ক্লাসিক কোন বিন্দুতে যখন প্রথম ট্রাইলোবাইট এবং প্রাচীর সৃষ্টিকারী জীব (আরকিওসায়াথা) যথা প্রবাল ও অন্যান্য জীব সৃষ্টি হয়েছিল; যখন গর্তসৃষ্টিকারী জটিল শিকারী প্রাণী Treptichnus pedum সৃষ্টি হয়েছিল অথবা যখন প্রথম ক্ষুদ্র, পৃথক সাঁজোয়াযুক্ত প্রাণীর শ্রেণী সৃষ্টি হয়েছিল যা ‘ক্ষুদ্র খোলসযুক্ত প্রাণীকুল’ নামে পরিচিত। কয়েক মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে একে অপরের মধ্যে তিনটি বিভক্তকারী বিন্দু রয়েছে।

প্রাচীন সাহিত্যে ফ্যানারোজোয়িক শব্দটি জীবাশ্মবিদদের সময়কালের প্রতি আগ্রহের চিহ্ন প্রদর্শন করতে ব্যবহৃত হত কিন্তু বর্তমান সাহিত্যের অনেক জায়গায় শব্দটি ভুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফ্যানারোজোয়িকের মহাযুগসমূহ

ফ্যানারোজোয়িক তিনটি মহাযুগে বিভক্ত: প্যালিওজোয়িক, মেসোজোয়িক এবং সিনোজোয়িক, যেগুলি আবার ১২ টি যুগে বিভক্ত হয়েছে। প্যালিওজোয়িকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মৎস্যকুল, উভচর এবং সরিসৃপের উথান। মেসোজোয়িকে সরিসৃপের প্রাধান্য ছিল এবং এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং বিখ্যাত ডাইনোসরের বিবর্তন। সিনোজোয়িককে স্তন্যপায়ী প্রাণীর যুগ বা অধিক সাম্প্রতিকভাবে মানুষের যুগও বলা হয়।

প্যালিওজোয়িক মহাযুগ

প্যালিওজোয়িক পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটা সময় ছিল যখন জটিল জীবনের রূপ উদ্ভূত হয়েছিল যারা স্থলে প্রথম অক্সিজেনের মাধ্যমে শ্বাস নিয়েছিল এবং তখন পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল অগ্রবর্তী জীবগণ বৈচিত্র্যপূর্ণ হতে থাকে। প্যালিওজোয়িক মহাযুগে ছয়টি যুগ রয়েছে: ক্যাম্ব্রিয়ান, অর্ডোভিশিয়ান, সিলুরিয়ান, ডেভোনিয়ান, কার্বনিফেরাস এবং পার্মিয়ান। [৬]

ক্যাম্ব্রিয়ান যুগ

ট্রাইলোবাইটসমূহ

ক্যাম্ব্রিয়ান প্যালিওজোয়িক মহাযুগের অন্তর্গত প্রথম যুগ এবং ব্যাপ্তিকাল হল ৫৪.১ কোটি বছর পূর্ব হতে ৪৮.৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। ক্যাম্ব্রিয়ান যুগ বিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৃদ্ধির চিহ্ন রেখে গেছে যা ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ ঘটনা নামে পরিচিত এবং এই সময় পৃথিবীর ইতিহাসে কোন একটি যুগে সর্বোচ্চ সংখ্যায় জীব উদ্ভূত হয়। শৈবালের মত উদ্ভিদ সৃষ্টি হয় এবং এই যুগে সর্বত্র প্রাধান্য বিস্তারকারী প্রাণী ছিল ট্রাইলোবাইটের মত সাঁজোয়াযুক্ত আর্থোপোড। প্রায় সকল সামুদ্রিক পর্বের প্রাণী এই যুগে সৃষ্টি হয়েছিল। এই সময় সুপারমহাদেশ প্যানোটিয়া ভাঙতে শুরু করে এবং যার বেশির ভাগ অংশ পরবর্তীতে সংযুক্ত হয়ে গন্ডোয়ানা মহাদেশ সৃষ্টি করেছিল। [৭]

অর্ডোভিশিয়ান যুগ

সেফালাসপিস (একটি চোয়ালবিহীন মাছ)

অর্ডোভিশিয়ান যুগের ব্যাপ্তিকাল হল ৪৮.৫ কোটি বছর পূর্ব হতে ৪৪ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। অর্ডোভিশিয়ান পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটা সময় ছিল যখন আদিম মাছ, সেফালোপড (শামুক জাতীয় প্রাণী) এবং প্রবালের মত অনেক প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছিল যেগুলি বর্তমান সময়েও প্রভাব বিস্তার করছে। সবথেকে প্রচলিত গঠনের প্রাণীর মধ্যে ছিল ট্রাইলোবাইট, শামুক এবং খোলসযুক্ত মাছ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে বলা যায় শূণ্য গন্ডোয়ানা মহাদেশের উপকূলে বসবাস করার জন্যে প্রথম আর্থোপোডা পর্বের প্রাণীরা গিয়েছিল। অর্ডোভিশিয়ান যুগের শেষের দিকে গন্ডোয়ানা বিষুবরেখা হতে দক্ষিণ মেরুতে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং লউরেনশিয়া বাল্টিকার সাথে সংঘর্ষ করেছিল যার ফলে ইয়াপিটাস মহাসাগর শুকিয়ে গিয়েছিল। গন্ডোয়ানার হিমবাহের ফলশ্রুতিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ব্যাপকভাবে নেমে যায় এবং এর উপকূলে প্রতিষ্ঠিত প্রানীজগত ধ্বংস হয়ে যায়। হিমবাহের ফলে স্নোবল আর্থ সৃষ্টি হয় যা অর্ডোভিশিয়ান-সিলুরিয়ান বিলুপ্তির ঘটনা ঘটায় এবং এর ফলে ৬০% সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং ২৫% প্রাণীর গোত্র বিলুপ্ত হয়ে যায়। একে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ব্যাপক বিলুপ্তির ঘটনা এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী বিলুপ্তির ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। [৮]

সিলুরিয়ান যুগ

সিলুরিয়ান যুগের ব্যাপ্তিকাল হল ৪৪ কোটি বছর পূর্ব হতে ৪১.৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত এবং এসময় স্নোবল আর্থ এর ফলে উষ্ণতা সৃষ্টি হয়। এই যুগে মাছের ব্যাপক বিবর্তন দেখা গিয়েছিল, যেমন- চোয়ালবিহীন মাছ সংখ্যায় অনেক বৃদ্ধি পায়, চোয়ালযুক্ত মাছ সৃষ্টি হয় এবং প্রথম মিঠাপানির মাছ সৃষ্টি হয় যদিও সামুদ্রিক বিছার মত আর্থ্রোপোড তখনও শীর্ষ শিকারী ছিল। পূর্ণ স্থলজ জীব সৃষ্টি হয়েছিল এবং এদের মধ্যে আদি মাকড়সা, ছত্রাক এবং সেন্টিপেড অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংবাহী উদ্ভিদের (কুকসোনিয়া) বিবর্তন স্থলে উদ্ভিদের প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে সাহায্য করে। এই আদিম স্থলজ উদ্ভিদগুলি স্থলে জন্মানো সকল উদ্ভিদের অগ্রদূত ছিল। এই যুগে চারটি মহাদেশ ছিল: গন্ডোয়ানা (আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এন্টার্কটিকা, ভারত), লউরেনশিয়া (উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের অংশ বিশেষ), বাল্টিকা (ইউরোপের বাকি অংশ) এবং সাইবেরিয়া (উত্তর এশিয়া)। সমুদ্রপৃষ্ঠের সমসাময়িক উচ্চতা বৃদ্ধি পানিতে অনেক নতুন প্রজাতিকে উন্নতি লাভ করতে সাহায্য করে। [৯]

ডেভোনিয়ান যুগ

কার্বনিফেরাসের ইওগাইরিনাস (একটি উভচর)

ডেভোনিয়ান যুগের ব্যাপ্তিকাল হল ৪১.৫ কোটি বছর পূর্ব হতে ৩৫.৯ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। ডেভোনিয়ান "মাছের যুগ" নামেও পরিচিত কারণ এই সময় মৎস্য প্রজাতির ব্যাপক বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা হয় এবং এদের মধ্যে ডাঙ্কলিওসটিয়াসের মত সাঁজোয়াযুক্ত মাছের প্রজাতি এবং হাড়যুক্ত পাখনা সংবলিত মাছ অন্তর্ভুক্ত ছিল যা পরবর্তীতে প্রথম টেট্রাপড সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিল। স্থলভাগে উদ্ভিদ প্রজাতি অবিশ্বাস্যভাবে বিস্তৃত হচ্ছিল ডেভোনিয়ান বিস্ফোরণ এর ঘটনার মাধ্যমে প্রথম বৃক্ষ এবং বীজ সৃষ্টি হয়েছিল। এই ঘটনা নতুন আবাসস্থল প্রদান করার মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় আর্থ্রোপোড সৃষ্টি করেছিল। প্রথম উভচর প্রাণীও সৃষ্টি হয়েছিল এবং তখন খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে মাছ অবস্থান করছিল। ডেভোনিয়ান যুগের শেষের দিকে একটি ঘটনার দ্বারা ৭০% প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায় যা অন্ত্য ডেভোনিয়ান বিলুপ্তি নামে পরিচিত এবং এটা পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বিধ্বংসী বিলুপ্তির ঘটনা হিসেবে পরিচিত।[১০]

কার্বনিফেরাস যুগ

সিন্যাপসিড: ডিমেট্রডন

কার্বনিফেরাস যুগের ব্যাপ্তিকাল হল ৩৬ কোটি বছর পূর্ব হতে ৩০ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। এই সময় বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা অতীব বেশি ছিল: যদিও কার্বনিফেরাস যুগে তাপমাত্রার গড় ছিল ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (কিন্তু মধ্য কার্বনিফেরাস যুগে তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল)। [১১] পৃথিবীতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলাভূমির প্রাধান্য ছিল এবং প্রচুর উদ্ভিদ প্রজাতি কার্বন উৎপন্ন করে যা ভূগর্ভস্থ কয়লার স্তর (এজন্যে এই যুগের নাম কার্বনিফেরাস) সৃষ্টি করে। এই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলাভূমির কারণে সৃষ্ট উচ্চ অক্সিজেনের ঘনমাত্রা বৃহদাকার আর্থ্রোপোডদের শ্বসনতন্ত্রের আকার নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে তাদের আকার বৃদ্ধির প্রবণতাকে কমিয়ে দিয়েছিল। সম্ভবত এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তনীয় ক্রমবিকাশ ছিল অ্যামনিয়টিক ডিমের বিবর্তন যা উভচরকে অধিকতর দূরবর্তী স্থলাভিমুখে স্থানান্তরিত হতে সাহায্য করেছিল এবং এই যুগের সর্বোচ্চ প্রাধান্য বিস্তারকারী মেরুদণ্ডী প্রাণীতে পরিণত করেছিল। এছাড়াও জলাভূমিতে প্রথম সরিসৃপ এবং সিন্যাপসিড সৃষ্টি হয়েছিল। কার্বনিফেরাস জুড়েই শীতলতা প্রবণতা আব্যাহত ছিল যা পার্মো-কার্বনিফেরাস হিমবাহ এবং কার্বনিফেরাস রেইনফরেস্টের পতন ঘটাতে তরান্বিত করেছিল এবং এসময় গন্ডোয়ানার বেশির ভাগ অংশই দক্ষিণ মেরুর চতুর্দিকে অবস্থিত ছিল। [১২]

পার্মিয়ান যুগ

পার্মিয়ান যুগের ব্যাপ্তিকাল হল ৩০ কোটি বছর পূর্ব হতে ২৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত এবং এটি প্যালিওজোয়িক মহাযুগের সর্বশেষ যুগ ছিল। এই যুগের শুরুতে, সকল মহাদেশ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে সুপারমহাদেশ প্যানজিয়া গঠন করে যা প্যানথালাসা নামক মহাসাগর দ্বারা আবৃত ছিল। এই সময় পৃথিবী খুব শুষ্ক ছিল এবং ঋতুগুলিও খুব রুক্ষ ছিল কারণ প্যানজিয়ার অভ্যন্তরের জলবায়ু এর বৃহৎ পানির উৎস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো না। নতুন শুষ্ক জলবায়ুতে ডায়াপসিড এবং সিন্যাপসিড উদ্ভূত হয়। ডিমেট্রডন এবং ইডাফোসরাসের মত প্রাণীগুলি নতুন মহাদেশে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। প্রথম কনিফার উদ্ভিদ সৃষ্টি হয় এবং স্থলজ জমিতে আধিপত্য করে। পার্মিয়ান যুগের শেষের দিকে স্কুটোসরাস এবং গোরগনোপসিড দ্বারা শূণ্য মরুভূমি পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর তারা পৃথিবীর আরও ৯৫% প্রজাতির সাথে সাথে আকস্মিক বিপর্যয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় যা “দ্য গ্রেট ডায়িং” নামে পরিচিত এবং এটি তৃতীয় (ক্রমিক অনুসারে) এবং সবাধিক বিধ্বংসী বিলুপ্তির ঘটনা ছিল। [১৩][১৪]

মেসোজোয়িক মহাযুগ

মেসোজোয়িক মহাযুগের ব্যাপ্তিকাল হল ২৫.২ কোটি বছর পূর্ব হতে ৬.৬ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। মেসোজোয়িককে "ডাইনোসরের যুগ" ও বলা হয় এবং এই ১৫ কোটি বছর সময়ে স্থলে, জলে এবং বায়ুতে অনেক সরিসৃপ প্রাণীর উত্থান ঘটে। মেসোজোয়িকে তিনটি যুগ রয়েছে: ট্রায়াসিক, জুরাসিক এবং ক্রিটেশিয়াস।

ট্রায়াসিক যুগ

ট্রায়াসিকের ব্যাপ্তিকাল হল ২৫ কোটি বছর পূর্ব হতে ২০ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। পৃথিবীর ইতিহাসে ট্রায়াসিক হল পার্মিয়ান বিলুপ্তি এবং লাস জুরাসিকের মধ্যবর্তী জনশূণ্য পরিবর্তনশীল সময়। এর তিনটি উপযুগ রয়েছে: আদিম ট্রায়াসিক, মধ্য ট্রায়াসিক এবং অন্ত্য ট্রায়াসিক। [১৫]

আদিম ট্রায়াসিকের স্থায়িত্বকাল ছিল ২৫ কোটি বছর পূর্ব হতে ২৪.৭ কোটি বছর পূর্বের মধ্যবর্তী সময়ে এবং এসময় প্যানজিয়ার মত কিছু মরুভূমি প্রাধান্য বিস্তার করেছিল যদিও এটি তখন ভেঙে যায়নি কিন্তু এর অভ্যন্তর খুবই অনুর্বর ছিল। পৃথিবী একটি ভয়াবহ ধ্বংসের সাক্ষী হয়েছিল যাতে প্রায় ৯৫% প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। পৃথিবীতে লিসট্রোসরাস, ল্যাবিরিন্থোডোন্ট এবং ইউপারকেরিয়ার মত সাধারন জীবের পাশাপাশি আরও অনেক জীব ছিল যারা দ্যা গ্রেট ডায়িং এর সময় টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিল। টেমনোস্পোনডাইলি এই সময় সৃষ্টি হয়েছিল এবং এটা ট্রায়াসিকের বেশির ভাগ সময়ই প্রাধান্য বিস্তারকারী শিকারী ছিল। [১৬]

প্ল্যাটিওসরাস (একটি প্রোসরোপড)

মধ্য ট্রায়াসিকের ব্যাপ্তিকাল হল ২৪.৭ কোটি বছর পূর্ব হতে ২৩.৭ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। মধ্য ট্রায়াসিকে প্যানজিয়া ভেঙে পড়তে শুরু করে এবং টেথিস সাগরের সূচনা হয়। দ্য গ্রেট ডায়িং এর বিধ্বংসী প্রভাব হতে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। ফাইটোপ্লাঙ্কটন, প্রবাল এবং খোলস-যুক্ত প্রাণী সবই পুনরায় সৃষ্টি হয় এবং সরিসৃপ প্রাণীরা আকারে বাড়তে থাকে। নতুন জলজ সরিসৃপ যথা ইকথিওসর এবং নথোসর সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে স্থলে পাইন বনের সৃষ্টি হয় এবং মশা ও ফলের মাছিও সৃষ্টি হয়। প্রথম প্রাচীন কুমির সৃষ্টি হয় যা বৃহৎ উভচর প্রাণীদের সাথে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয় এবং মিঠাপানিতে অনেকদিন পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করে। [১৭]

অন্ত্য ট্রায়াসিকের ব্যাপ্তিকাল হল ২৩.৭ কোটি বছর পূর্ব হতে ২০ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। মধ্য ট্রায়াসিকের পূর্ণ বিকাশের পর অন্ত্য ট্রায়াসিকের বৈশিষ্ট্য ছিল ঘনঘন তাপমাত্রার উত্থান এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত (প্রতি বছর ১০-২০ ইঞ্চি)। তখনকার উষ্ণ প্রবণতা স্থলে সরিসৃপ প্রাণীর ব্যাপক বিবর্তনে সাহায্য করে এবং প্রথম প্রকৃত ডাইনোসর এবং টেরোসর সৃষ্টি হয়। জলবায়ু পরিবর্তিত হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে ব্যাপক বিলুপ্তির ঘটনা ঘটে যা ট্রায়াসিক-জুরাসিক বিলুপ্তির ঘটনা নামে পরিচিত এবং এই ঘটনায় সকল আর্কোসর (প্রাচীন কুমির ব্যতীত), সিন্যাপসিড ও সকল বৃহৎ উভচর এবং ৩৫% সামুদ্রিক জীব বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং এটি চতুর্থ ব্যাপক বিলুপ্তির ঘটনা। এই বিলুপ্তির কারণ এখনও বিতর্কিত। [১৮][১৯]

জুরাসিক যুগ

র‍্যাম্ফোরহিনকাস

জুরাসিক যুগের ব্যাপ্তিকাল হল ২০ কোটি বছর পূর্ব হতে ১৪.৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত এবং এর তিনটি প্রধান উপযুগ রয়েছে: আদিম জুরাসিক, মধ্য জুরাসিক এবং অন্ত্য জুরাসিক। [২০]

আদিম জুরাসিক উপযুগের ব্যাপ্তিকাল হল ২০ কোটি বছর পূর্ব হতে ১৭.৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। [২০] ট্রায়াসিকের তুলনায় এসময় জলবায়ু অধিক আর্দ্র ছিল এবং এর ফলশ্রুতিতে পৃথিবী অনেক উষ্ণ হয়েছিল। মহাসাগরে প্লেসিওসর, ইকথিওসর এবং সাগরে অ্যামোনাইট আধিপত্য বিস্তার করেছিল। স্থলে ডাইনোসর এবং অন্যান্য সরিসৃপ প্রাণী আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং এদের মধ্যে ডিলোফোসরাস প্রজাতি সর্বশীর্ষে ছিল। প্রথম প্রকৃত কুমির সৃষ্টি হয় এবং বৃহৎ উভচর প্রাণীকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। সরিসৃপ প্রাণী পৃথিবীতে প্রাধান্য বিস্তারকারী প্রাণী হিসেবে উত্থিত হয়। ইতিমধ্যে প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী সৃষ্টি হয় কিন্তু এরা কখনো শ্রিউ এর উচ্চতাকে অতিক্রম করেনি। [২১]

মধ্য জুরাসিক উপযুগের ব্যাপ্তিকাল হল ১৭.৫ কোটি বছর পূর্ব হতে ১৬.৩ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। [২০] এই উপযুগে বৃহৎ সরোপড গোত্রের ব্র্যাকিওসরাস এবং ডিপ্লোডিকাসের মত সরিসৃপ প্রাণী সৃষ্টি হয় এবং এরা বৃক্ষহীন ফার্নযুক্ত প্রান্তরকে পরিপূর্ণ করে তোলে। অ্যালোসরাসের মত অনেক শিকারী প্রাণীরও উত্থান ঘটে। পৃথিবীর বনভূমির একটা বৃহৎ অংশ কনিফার (দেবদারু জাতীয় উদ্ভিদ) বন দ্বারা তৈরি হয়। মহাসাগরে প্লেসিওসর খুবই সহজপ্রাপ্ত ছিল এবং ইকথিওসর আরও উন্নতি হচ্ছিল। এই উপযুগে সর্বোচ্চ সংখ্যক সরিসৃপ ছিল। [২২]

শিল্পীর আঁকা ১৯০১ সালের একটি স্টেগোসরাস

অন্ত্য জুরাসিক উপযুগের ব্যাপ্তিকাল হল ১৬.৩ কোটি বছর পূর্ব হতে ১৪.৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। [২০] অন্ত্য জুরাসিক উপযুগে প্যানজিয়া পৃথক হয়ে লরেশিয়াগন্ডোয়ানাতে পরিণত হওয়ার জন্যে সরোপড এবং ইকথিওসরের ব্যাপক বিলুপ্তি ঘটে এবং এই বিলুপ্তির ঘটনা জুরাসিক-ক্রিটেশিয়াস বিলুপ্তি নামে পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং বৃক্ষহীন ফার্নযুক্ত প্রান্তরকে ধ্বংস করে জলাভূমি সৃষ্টি করে। ইকথিওসর বিলুপ্ত হয়ে যায় কিন্তু সরোপড পুরোপুরি বিলুপ্ত হয় নি এবং টিটানোসরাসের মত কিছু প্রজাতি K-T বিলুপ্তির ঘটনা পর্যন্ত টিকে থাকে। [২৩] সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আটলান্টিক সমুদ্র পথকে উন্মুক্ত করে দেয় এবং সময়ের সাথে সাথে এর আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিভক্ত পৃথিবী নতুন ডাইনোসরের বৈচিত্র্যতার সুযোগ করে দেয়।

ক্রিটেশিয়াস যুগ

ক্রিটেশিয়াস মেসোজোয়িকের সবচেয়ে দীর্ঘ যুগ যার ব্যাপ্তিকাল হল ১৪.৫ কোটি বছর পূর্ব হতে ৬.৬ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত এবং এটি দুইটি উপযুগে বিভক্ত: আদিম ক্রিটেশিয়াস এবং অন্ত্য ক্রিটেশিয়াস। [২৪]

টাইলোসরাস (একটি মোসাসর)

আদিম ক্রিটেশিয়াস উপযুগের ব্যাপ্তিকাল হল ১৪.৫ কোটি বছর পূর্ব হতে ১০ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। [২৪] আদিম ক্রিটেশিয়াস উপযুগে সমুদ্রপথের বিস্তার দেখা যায় এবং এর ফলে সরোপডের (দক্ষিণ আমেরিকা ব্যতীত) পতন এবং বিলুপ্তি ঘটে। অনেক উপকূলীয় অগভীর জলাভূমি সৃষ্টি হয়েছিল যা ইকথিওসরের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। মোসাসর সমুদ্রের শীর্ষ প্রজাতি হিসেবে সৃষ্টি হয়ে তাদেরকে স্থানান্তরিত করেছিল। প্রাচীন ইউরোপের উপকূলীয় জলাভূমি এবং ক্ষুদ্র দ্বীপগুলিতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্যে ইওস্ট্রেপটোস্পোনডাইলাস এর মত কিছু দ্বীপে বিচরণকারী ডাইনোসর সৃষ্টি হয়। জুরাসিক-ক্রিটেশিয়াস বিলুপ্তির ঘটনায় সৃষ্ট শূণ্যস্থান পূরন করার জন্যে কার্কারোডন্টোসরাসস্পিনোসরাস এর মত আরও অন্যান্য ডাইনোসরের উত্থান ঘটে। সবথেকে সফল ছিল ইগুয়ানোডন যা সকল মহাদেশেই বিস্তার লাভ করেছিল। ঋতুগুলি পুনরায় সক্রিয় হয় এবং মেরু ক্রমশ শীতল হওয়া শুরু করে। লিয়ালিনাসরা এর মত ডাইনোসর সারা বছর জুড়েই মেরু অঞ্চলের বনে অধিষ্ঠিত ছিল কিন্তু মুটাবুরাসরাস এর মত অনেক ডাইনোসর গ্রীষ্মকালে সেখানে স্থানান্তরিত হয়। যেহেতু এটা কুমিরদের জন্যে অত্যধিক শীতল ছিল এজন্যে এটা কুলাসকাস এর মত বৃহৎ উভচর প্রাণীদের জন্যে সুরক্ষিত শেষ আশ্রয়স্থল ছিল। টেরোসরাস আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ট্যাপেজারাঅর্নিথোকেইরাস এর মত প্রজাতি সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রথম পাখির উদ্ভব ঘটে এবং এরা টেরোসরাসের সাথে চরম প্রতিযোগিতা শুরু করে।

অন্ত্য ক্রিটেশিয়াস উপযুগের ব্যাপ্তিকাল হল ১০ কোটি বছর পূর্ব হতে ৬.৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। [২৪] অন্ত্য ক্রিটেশিয়াস উপযুগে শীতলতা প্রবণতা শুরু হয়েছিল যা সিনোজোয়িক মহাযুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গ্রীষ্মপ্রধান বাস্তুসংস্থান বিষুবরেখায় সীমাবদ্ধ ছিল এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সীমার বাইরের আবহাওয়ায় ঋতু পরিবর্তন অত্যন্ত উগ্র ছিল। তখনো [[টাইর‌্যানোসরাস]], অ্যানকাইলোসরাস, টাইসেরাটপ এবং হাডরোসরের মত নতুন প্রজাতির ডাইনোসর বিস্তার লাভ করে এবং খাদ্য জালে আধিপত্য বিস্তার করে। যেহেতু পাখিরা আকাশে প্রাধান্য বিস্তার করে সেজন্যে টেরোসরাস ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। সর্বশেষ যে প্রজাতির টেরোসরাস বিলুপ্ত হয়েছিল তার নাম কোয়েটযালকোটলাস। বৃহৎ কনিফার বনাঞ্চলে স্ক্যাভেঞ্জার হিসেবে ক্যাঙ্গারু সৃষ্টি হয়েছিল। মহাসাগরে ইকথিওসর এবং ইলাসমোসরাস নামক বৃহৎ প্লেসিওসরের ভূমিকা পূরণ করার জন্যে মোসাসর সমুদ্রে আধিপত্য বিস্তার করে। এছাড়া প্রথম সপুষ্পক উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। ক্রিটেশিয়াস উপযুগের শেষের দিকে ডেকান ট্র্যাপ এবং অন্যান্য আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে তুলেছিল। যেহেতু এটা অব্যাহত ছিল তাই ধারণা করা হত যে একটা বৃহৎ উল্কাপিণ্ড পৃথিবীকে পিষে ফেলেছিল এবং চিক্সালাব ক্রেটার সৃষ্টি করেছিল যা K-T বিলুপ্তির ঘটনা ঘটিয়েছিল এবং এটি পঞ্চম বিধ্বংসী ও সাম্প্রতিক বিলুপ্তির ঘটনা যাতে নন-এভিয়েন ডাইনোসরসহ পৃথিবীর প্রায় ৭৫% প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। যেসকল বসবাসকারী জীবের শরীরের ভর ১০ কিলোগ্রামের বেশি ছিল যারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যায় এবং ডাইনোসরের যুগের সমাপ্তি ঘটে। [২৫][২৬]

সিনোজোয়িক মহাযুগ

সিনোজোয়িকের বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাধান্য বিস্তারকারী প্রাণীদের শ্রেণী হিসেবে স্তন্যপায়ী প্রাণীর উত্থান যা বিবর্তনের ক্ষেত্রে ডাইনোসরের যুগের বিলুপ্তির শূণ্যস্থান পূর্ণ করে। সিনোজোয়িক তিনটি যুগে বিভক্ত: প্যালিওজিন, নিওজিন এবং কোয়াটার্নারি।

প্যালিওজিন যুগ

৬.৬ কোটি বছর পূর্বে ডাইনোসোরের বিলুপ্তি থেকে শুরু হয়ে ২.৩ কোটি বছর পূর্বে নিওজিন পর্যায়ের প্রারম্ভ পর্যন্ত প্যালিওজিন যুগের ব্যাপ্তিকাল ছিল। এটি তিনটি উপযুগে বিভক্ত: প্যালিওসিন, ইওসিন এবং অলিগোসিন।

ব্যাসিলোসরাস (নাম হওয়া সত্ত্বেও এটি একটি তিমি)

প্যালিওসিন উপযুগ K-T বিলুপ্তির ঘটনার দ্বারা শুরু হয়েছিল যা বর্তমানের ইউকাতান পেনিনসুলাতে উল্কার প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এর ফলে পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রজাতির প্রায় ৭৫% ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আদিম প্যালিওসিনের সময় পৃথিবী এই ঘটনা হতে পুনরুদ্ধার হয়েছিল। মহাদেশগুলি আধুনিক আকার নিতে শুরু করেছিল, কিন্তু সকল মহাদেশ (এবং ভারত) একে অপরের থেকে পৃথক ছিল। আফ্রো-ইউরোশিয়া অঞ্চল টেথিস সাগর দ্বারা পৃথক হয়েছিল এবং আমেরিকা পানামার জলপ্রণালী দ্বারা পৃথক হয়েছিল কিন্তু ইসথমাস তখনো সৃষ্টি হয় নি। ব্যাপক উষ্ণতা এই উপপর্যায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যা জঙ্গলের সাথে সাথে মেরুতেও প্রসারিত হয়েছিল। মহাসাগরগুলি হাঙ্গরের অধীনে ছিল যদিও এর পূর্বে বৃহৎ সরিসৃপের অধীনে ছিল যা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রাচীন স্তন্যপায়ী যথা- ক্রেওডোন্টস এবং আদিম প্রাইমেট যা মেসোজোয়িকে সৃষ্ট হয়েছিল সেগুলি দ্বারা পৃথিবী পরিপূর্ণ ছিল। এই সময় কোন স্থলজ প্রাণীই ১০ কিলোগ্রাম এর বেশি ছিল না। স্তন্যপায়ী প্রাণী আকারে তখনও অনেক ক্ষুদ্র ছিল। [২৭]

ইওসিন উপযুগের ব্যাপ্তি ছিল ৫.৬ কোটি বছর পূর্ব হতে ৩.৪ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। আদিম ইওসিন উপযুগে স্থলজ প্রাণী আকারে ক্ষুদ্র ছিল এবং অনেকটা প্যালিওসিনের মত আবদ্ধ জঙ্গলে বসবাস করত। কোন কিছুর ওজনই ১০ কিলোগ্রাম এর বেশি ছিল না। [২৮] সেগুলোর মধ্যে আদিম প্রাইমেট, তিমি, ঘোড়া এবং বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রাথমিক রূপ উল্লেখযোগ্য ছিল। খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে গ্যাসটোরনিস এর মত বৃহৎ আকারের পাখি ছিল। এটাই ইতিহাসের একমাত্র সময় যখন পাখি পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এক মেরু থেকে অন্য মেরুতে তাপমাত্রার সামান্য তারতম্য ছিল। মধ্য ইওসিনে অস্ট্রেলিয়া এবং এন্টার্কটিকার মধ্যে এন্টার্কটিক সার্কামপোলার স্রোত গঠিত হয়েছিল যার ফলে বিচ্যুৎ মহাসাগরগুলি পৃথিবীব্যাপী স্রোত সৃষ্টি করেছিল এবং এর ফলে বৈশ্বিক শীতল প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল এবং জঙ্গল সংকুচিত হয়েছিল। এটা স্তন্যপায়ীকে তিমি থেকে ম্যামথের মত অতিকায় অনুপাতে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করেছিল এবং এদেরকে পূর্ণ জলচর প্রাণীতে পরিণত করেছিল। অ্যাণ্ড্রুসারকাসের মত স্তন্যপায়ী প্রাণী খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে ছিল এবং হাঙ্গর ব্যাসিলোসরাস তিমি দ্বারা স্থানান্তরিত হয়েছিল ও সমুদ্রে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। অন্ত্য ইওসিন উপযুগে ঋতুসমূহের পুনর্জন্ম হয় এবং এর ফলে ক্রান্তীয় ঘাসযুক্ত অঞ্চলের বিস্তার ঘটে এবং ঘাসের বিবর্তন ঘটে। [২৯][৩০]

অলিগোসিন উপপর্যায়ের ব্যাপ্তি ছিল ৩.৩ কোটি বছর পূর্ব হতে ২.৩ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। অলিগোসিন উপপর্যায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ঘাসের বিস্তার ঘটা যা অনেক নতুন প্রজাতি সৃষ্টির সূচনা করেছিল এবং এদের মধ্যে প্রথম হাতি, বিড়াল, কুকুর, ক্যাঙ্গারু এবং বর্তমান যুগের অনেক প্রজাতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। চিরসবুজ উদ্ভিদের মত আরও অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি এই উপযুগে সৃষ্টি হয়েছিল। দীর্ঘমেয়াদী শীতলতা প্রবণতা অব্যাহত ছিল এবং ঋতুভিত্তিক বৃষ্টিপাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তখনো বড় হতে আরও বড় আকারে বৃদ্ধি পাওয়া অব্যহত রেখেছিল। এই উপযুগে বসবাসকারী সর্ব বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল প্যারাসেরাথেরিয়াম এবং এর সাথে সাথে অনেক পেরিসোডাকটাইলও বসবাস করত যেগুলো ইওসিন-অলিগোসিন বিলুপ্তির ঘটনা (Grande copure) দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। [৩১]

নিওজিন যুগ

নিওজিন যুগের ব্যাপ্তি হল ২.৩০৩ কোটি বছর পূর্ব হতে পঁচিশ লক্ষ আশি হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত। এই যুগের দুইটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপযুগ রয়েছে: মায়োসিন এবং প্লাইওসিন। [৩২]

মায়োসিন উপযুগের ব্যাপ্তি ছিল ২.৩০৩ কোটি বছর পূর্ব হতে তেপ্পান্ন লক্ষ তেত্রিশ হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত এবং এটা এমন একটা সময় যখন ঘাসের আরও বিস্তার ঘটে এবং পৃথিবীর বিশাল অংশে ঘাস প্রাধান্য বিস্তার করায় অরণ্যগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেলপ অরণ্য সৃষ্টি হয় যা সী অটারের (সামুদ্রিক উদবিড়াল) মত প্রজাতির বিবর্তনকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এই সময় পেরিসোডাকটাইলা (অযুগ্ম-খুর-যুক্ত চতুষ্পদ) বিস্তার লাভ করে এবং এর বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় প্রজাতির সৃষ্টি হয়। এসবের পাশাপাশি এপিস (নরবানর) এর ৩০ টি প্রজাতির সৃষ্টি হয়। মোটকথা পৃথিবীর সর্বত্র শুষ্ক এবং পাহাড়ি এলাকা প্রাধান্য বিস্তার করে যেখানে তৃণভোজী প্রানীর সৃষ্টি হয়। আরব উপদ্বীপ সৃষ্টির সাথে সাথে টেথিস সাগর শুকিয়ে গিয়েছিল এবং শুধুমাত্র কৃষ্ণ সাগর, লোহিত সাগর, ভূমধ্যসাগর এবং কাস্পিয়ান সাগরের অবশিষ্টাংশ ছিল। অনেক নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়েছিল, ৯৫% আধুনিক বীজজাতীয় উদ্ভিদ মধ্য মায়োসিন উপযুগে সৃষ্টি হয়েছিল। [৩৩]

প্লাইওসিন উপযুগ তেপ্পান্ন লক্ষ তেত্রিশ হাজার বছর পূর্ব থেকে পঁচিশ লক্ষ আশি হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত চলেছিল। প্লাইওসিন উপযুগে জলবায়ুর নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছিল যা প্রকৃতপক্ষে আধুনিক প্রজাতি সৃষ্টির পথিকৃৎ ছিল। ভূমধ্যসাগর কয়েক মিলিয়ন বছরের জন্যে শুকিয়ে গিয়েছিল। এসকল ভূতাত্ত্বিক ঘটনার পাশাপাশি আফ্রিকায় অস্ট্রালোপিথেকাসের উদ্ভব ঘটে বা মানবীয় শাখার সূচনা করেছিল। পানামার ইসথমাস গঠিত হয় এবং বিভিন্ন প্রাণী উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকায় স্থানান্তরিত হয় যা স্থানীয় বাস্তুসংস্থানকে ব্যাপক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। জলবায়ুর পরিবর্তন ক্রান্তীয় ঘাসের সারা পৃথিবীব্যাপী বিস্তার অব্যহত রাখে, ভারতীয় মৌসুমি বায়ুর সূত্রপাত ঘটায়, মধ্য এশিয়াতে মরুভূমির সৃষ্টি করে এবং সাহারা মরুভূমির সূত্রপাত ঘটায়। পৃথিবীর মহাদেশ এবং মহাসাগরগুলি বর্তমানের আকারে স্থানাত্নরিত হচ্ছিল। কোয়াটার্নারি যুগের হিমবাহ উদ্ভবের মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন যথা- বৃহৎ হ্রদসমূহ সৃষ্টি ব্যতীত বৈশ্বিক মানচিত্রের খুব একটা পরিবর্তন ঘটে নি। [৩৪][৩৫]

কোয়াটার্নারি যুগ

কোয়াটার্নারি যুগের ব্যাপ্তি পঁচিশ লক্ষ আশি হাজার বছর পূর্ব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত এবং এটি ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগের সর্বাপেক্ষা সংক্ষিপ্ত ভূতাত্ত্বিক যুগ। এই যুগের বৈশিষ্ট্য হল আধুনিক প্রাণীর উদ্ভব এবং জলবায়ুর নাটকীয় পরিবর্তন। এটা দুইটি উপযুগে বিভক্ত: প্লেইস্টোসিন এবং হলোসিন।

প্লেইস্টোসিন উপযুগের প্রাণীকুল (ম্যামথ, গুহার সিংহ, রোমশ গণ্ডার, বল্গাহরিণ, ঘোড়া)

প্লেইস্টোসিন উপযুগের ব্যাপ্তি পঁচিশ লক্ষ আশি হাজার বছর পূর্ব হতে ১১৭০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত। মধ্য ইওসিনে শুরু হওয়া প্রবণতার ফলস্বরূপ সৃষ্ট বরফ যুগ দ্বারা এই উপযুগটি চিহ্নিত হয়েছিল। পর্বতময় এলাকার ৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের দক্ষিণে অবস্থিত আগাম বরফ ক্যাপের দ্বারা কমপক্ষে ৪টি পৃথক গ্লাসিয়াসন যুগ চিহ্নিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আফ্রিকা ব্যাপক শুষ্কপ্রবণতার মুখোমুখি হয় যার ফলশ্রুতিতে সাহারা, নামিব এবং কালাহারি মরুভূমির সৃষ্টি হয়। অনেক প্রাণী সৃষ্টি হয় এবং এদের মধ্যে ম্যামথ, দৈত্যাকার স্থলজ স্লথ, ভয়ানক নেকড়ে, বাঁকা দন্তযুক্ত বিড়াল এবং বিখ্যাত Homo sapiens অন্তর্ভুক্ত ছিল। আফ্রিকার অন্যতম ভয়াবহ খরার সমাপ্তি চিহ্নিত হয় ১০০০০ বছর পূর্বে এবং এর ফলে আদিম মানব প্রজাতির ঘটা শুরু হয়। যখন প্লেইস্টোসিন উপযুগের সমাপ্তি ঘটে তখন নিয়ানডারথালস এর মত কিছু হোমিনিড প্রজাতিসহ পৃথিবীর প্রাণিজগতের ব্যাপক বিলুপ্তি ঘটে। সকল মহাদেশই আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু আফ্রিকা অল্প পরিমাণে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও এটা জলহস্তির মত কিছু বড় আকারের প্রাণীদের বসবাস বজায় রেখেছিল। [৩৬]

হলোসিন উপযুগ ১১৭০০ বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল এবং এটা বর্তমান সময় পর্যন্ত চলছে। সকল সংরক্ষিত ইতিহাস এবং “বিশ্বের ইতিহাস” হলোসিন উপযুগের সীমানায় অবস্থান করছে। [৩৭] মানুষের কার্যক্রম অনেক কিছু বিলুপ্তির জন্যে দায়ী যা মোটামুটিভাবে ১০০০০ বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল, যদিও প্রজাতির বিলুপ্তি শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে শুরু হয়েছিল বলে নথিভুক্ত আছে। একে অনেক সময় “ষষ্ঠ বিলুপ্তি (Sixth Extinction)” বলেও অভিহিত করা হয়। শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে মানুষের কার্যক্রমের জন্যে ৩২২ টির বেশি বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। [৩৮][৩৯]

জীববৈচিত্র্য

ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগে, জীববৈচিত্র্য একঘেয়ে ছিল না বরং একদম শূণ্যের কাছাকাছি হতে কয়েক হাজার গণ পর্যন্ত জীববৈচিত্র্য সামাঞ্জস্যপূর্ণ বৃদ্ধি বজায় রাখে।

এটা বলা যায় যে, ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগে জীববৈচিত্র্যের পরস্পরের সাথে সম্পর্ক এক্সপোনেনশিয়াল ও লজিস্টিক মডেলের (ঐতিহ্যগতভাবে পপুলেশন বায়োলজিতে ব্যবহৃত হত কিন্তু বিস্তরভাবে জীববৈচিত্র্যের জীবাশ্মে ব্যবহৃত হয়) তুলনায় অধিবৃত্তীয় মডেলের (ব্যাপকভাবে জনসংখ্যাতত্ত্ব ও ম্যাক্রোসোশিওলজিতে ব্যবহৃত হয়) মাধ্যমে বেশি ভালভাবে প্রদর্শিত হয়। পরবর্তী মডেলটি এটা প্রকাশ করে যে বৈচিত্র্যের পরিবর্তন প্রথম ক্রমের ধনাত্নক ফিডব্যাক (যত পূর্বপুরুষ, তত উত্তরপুরুষ) অথবা ঋণাত্নক ফিডব্যাক যা সম্পদের সীমাবদ্ধতা হতে উত্থিত হয় অথবা উভয়ের দ্বারা পরিচালিত হয়। অধিবৃত্তীয় মডেল দ্বিতীয় ক্রমের ধনাত্নক ফিডব্যাক প্রদর্শন করে।[৪০] দ্বিতীয় ক্রমের ধনাত্নক ফিডব্যাক হতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অধিবৃত্তীয় প্যাটার্ন উত্থিত হয় এবং এটি জনসংখ্যার পরিমাণ ও প্রযুক্তিগত বৃদ্ধির হারের মিথস্ক্রিয়ার কারণে ঘটে। ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগের জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধির প্রকৃতি গোত্রের বৈচিত্র্য এবং গঠনের জটিলতার মধ্যবর্তী ফিডব্যাকের দ্বারা এককভাবে নির্নীত হতে পারে। এটা প্রস্তাব করা যে, জীববৈচিত্র্যের বক্ররেখাচিত্র ও মানব জনসংখ্যার সম্ভাব্য সাদৃশ্য উভয়ই বৃত্তাকার ও এলোমেলো গতিবিদ্যার অন্তর্গত অধিবৃত্তীয় গঠনের উপর উপরিপাতনের ফলে উদ্ভূত হয়। [৪০]

আরও দেখুন

  • প্যালিওজলবায়ুবিদ্যা

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ