ভিনসেন্ট ফন গখ

ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী

ভিনসেন্ট উইলাম ভ্যান গখ (ওলন্দাজ: [ˈvɪnsɛnt ˈʋɪləm vɑn ˈɣɔx] ();[১] ৩০ মার্চ ১৮৫৩ – ২৯ জুলাই ১৮৯০) একজন প্রধান উত্তর-অন্তর্মুদ্রাবাদী ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী। রুক্ষ সৌন্দর্যের এবং আবেগময় সততার প্রকাশ, সপ্রতিভ রং এর ব্যবহারের কারণে তার কাজ বিখ্যাত ছিল যা বিংশ শতাব্দীর শিল্পকলায় সুদূরপ্রসারি প্রভাব রেখেছিলো। তিনি ছোট বয়স থেকেই আঁকাআঁকি শুরু করেন। কিন্তু মধ্য বিশের পরে তিনি চিত্রকর্ম আঁকা শুরু করেন অসংখ্য বিখ্যাত চিত্রকর্ম তার জীবনের শেষ দুই বছরে আঁকা। প্রতিকৃতি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, সূর্যমুখী ফুল, গমের ক্ষেত ইত্যাদি তার আঁকার বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিল। মাত্র এক দশকে তিনি ২,১০০-এর বেশি চিত্রকর্ম আঁকেন, যার মাঝে ৮৬০টি তৈলচিত্র এবং ১,৩০০-এর বেশি জল রং, অঙ্কন, নকশা এবং চিত্র ছিলো। দীর্ঘ বিষন্নতা ও মানসিক অসুস্থতার [২][৩] ফলে তিনি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন।

ভিনসেন্ট ভ্যান গখ
A head and shoulders portrait of a thirty something man, with a red beard, facing to the left
আত্ম-প্রতিকৃতি, ১৮৮৭, আর্ট ইনস্টিটিউট অব শিকাগো
জন্ম
ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান গখ

(১৮৫৩-০৩-৩০)৩০ মার্চ ১৮৫৩
জুন্দার্ত, নেদারল্যান্ডস
মৃত্যু২৯ জুলাই ১৮৯০(1890-07-29) (বয়স ৩৭)
অভর-সু-অইস, ফ্রান্স
মৃত্যুর কারণগুলির আঘাত
সমাধিCimetière d'Auvers-sur-Oise, ফ্রান্স
৪৯°০৪′৩১″ উত্তর ২°১০′৪৪″ পূর্ব / ৪৯.০৭৫৩১° উত্তর ২.১৭৮৯৪° পূর্ব / 49.07531; 2.17894
শিক্ষা
  • রয়্যাল একাডেমি অব ফাইন আর্টস
  • Académie Royale des Beaux-Arts
পরিচিতির কারণপেন্টিং, স্থির-জীবন অঙ্কন, প্রতিকৃতি এবং ভূদৃশ্য অঙ্কন
উল্লেখযোগ্য কর্ম
  • আলু ভক্ষক (১৮৮৫)
  • সূর্যমুখী (১৮৮৭)
  • আর্লেসে শোয়ারঘর (১৮৮৮)
  • তারাময় রাত (১৮৮৯)
  • ডাক্তার গ্যাচেটের প্রতিকৃতি (১৮৯০)
  • কাকের সাথে গমক্ষেত (১৮৯০)
  • সিয়েস্তা (১৮৯০)
  • Church at Auvers (১৮৯০)
  • দুঃখী বৃদ্ধ মানুষ (১৮৯০)
আন্দোলনউত্তর-অন্তর্মুদ্রাবাদ
পরিবারথিওডোরাস ভ্যান গখ (ভাই)

শৈশব

Vincent

১৩ মার্চ ১৮৫৩ সালে নেদারল্যান্ডের বেরাইড শহরের কাছে গ্রুট জুন্ডার্থ নামে একটি ছোট গ্রামের একটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।[৪] জন্মের পর পিতামহের নামে তার নামকরণ হয়। সেই সময়ে পূর্বপুরুষদের নামের নবজাতকের নামকরণের প্রচলন ছিল। শৈশবে তিনি শান্ত স্বভাবের ছিলেন। ১৮৬০ সালে তিনি জুন্ডার্থ গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে মাত্র একজন ক্যাথলিক শিক্ষক ২০০ জন ছাত্রকে লেখাপড়া করাতেন। ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৪ সাল পর্যন্ত ভ্যান গখ ও তার বোন আন্না গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করেন। ১৮৬১ সালের ১ অক্টোবর তিনি বাড়ি থেকে ২০ মাইল দূরের জেভেনবার্গেনের একটি আবাসিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৬৬ সালে তিনি টিলবার্গের মিডল স্কুলে ভর্তি হন। তৎকালীন এক সফল চিত্রকর Constantijn C. Huysmans এর কাছে কিছুদিন চিত্রকলা বিষয়ক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ভ্যান গখ খুব ছোটবেলা থেকেই চিত্রকলা বিষয়ে খুব আগ্রহী ছিলেন। গখ শিল্পকলার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি হেগ, লন্ডন ও প্যারিসে ভ্রমণ করেন এবং পরে তিনি ইংল্যান্ডের আইসওর্থ ও রামসগেটে পড়ান। তিনি এই বয়সে অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন এবং একজন যাজক হতে চেয়েছিলেন। ১৮৭৯ সাল থেকে তিনি বেলজিয়ামের একটি খনির অঞ্চলে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে কাজ করেন যেখানে তিনি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষের স্কেচ করতে শুরু করেন। ১৮৮৫ সালে তিনি তার প্রথম প্রধান কাজ আলু খাদক আঁকেন। তার তখনকার কাজগুলো প্রধানত গুরুগম্ভীর ছিলো এবং কোনো প্রগাঢ় রঙের চিহ্ন ছিলো না যা তার পরবর্তী কাজগুলো থেকে আলাদা।

ভ্যান গখের বাড়ি

প্যারিস

১৮৮৬ সালের মার্চে, তিনি প্যারিসে আসেন এবং থিওর সাথে কথা বলেছিলেন মন্টমার্টে লাভল অ্যাপার্টমেন্ট এবং ফার্নানড কর্মনের স্টুডিওতে পড়াশোনা নিয়ে। জুনের মধ্যে তার ভাই থিও বড় একটি ফ্লাট নেন।[৫] ফরাসি ইমপ্রেশনিজ্‌মবাদীদের আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে, তিনি দক্ষিণ ফ্রান্সে যান এবং তিনি সেখানকার প্রবল সূর্যরশ্মির দ্বারা প্রভাবিত হন। তার আঁকা ছবিগুলোতে উজ্জ্বল রঙ বৃদ্ধি পায় এবং তিনি এক অনন্য এবং অত্যন্ত স্বীকৃত শৈলী বিকশিত করেন যা ১৮৮৮ সালে আর্লেসে থাকার সময় তিনি সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করেন। বর্তমানে তার শিল্পকর্ম নিলাম করা হলে অতি উচ্চমূল্য পাওয়া যায়। তার আঁকা বেশ কিছু ছবি পৃথিবীর সবচেয়ে দামী শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে গণ্য করা হয়। তিনি পয়েন্টিলিজম কৌশল গ্রহণ করেছিলেন, এটি এমন একটি কৌশল যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট রঙের বিন্দু ক্যানভাসে প্রয়োগ করা হয় যা দূর থেকে দেখলে রঙের একটি অপটিক্যাল মিশ্রণের মতো মনে হয়। শৈলীটি প্রাণবন্ত করার জন্য বা বৈপরীত্য তৈরি করতে নীল এবং কমলা সহ পরিপূরক রঙগুলির সক্ষমতার উপর জোর দেয় হতো।[৬][৭]

গঁগ্যার সাথে সাক্ষাৎ

১৮৮৮র নভেম্বরে পল গোগাঁ সাথে ভ্যান গখের সাথে সাক্ষাতে আর্লেসে আসেন। তারপর তারা দুজন একত্রে ছবি আঁকেন। গঁগ্যা সূর্যমুখীর চিত্রকর: ভ্যান গখের প্রতিকৃতি শিরোনামে একটি ছবি অঙ্কন করেন। ভ্যান গখ অন্যদিকে তার লাল আঙুরক্ষেত ছবিটি অঙ্কন করেন।[৮] গঁগ্যা সফরের প্রস্তুতির জন্য, ভ্যান গগ স্টেশনের ডাক তত্ত্বাবধায়ক জোসেফ রোলিনের পরামর্শে দুটি বিছানা কিনেছিলেন, যার প্রতিকৃতি তিনি এঁকেছিলেন। গঁগ্যা সফরের প্রস্তুতির সময় ভ্যান গগ স্টেশনের ডাক কর্মকর্তা জোসেফ রোলিনের পরামর্শে দুটি বিছানা কিনেছিলেন, যার প্রতিকৃতি তিনি এঁকেছিলেন।[৯] ভ্যান গগ এবং গঁগ্যা ১৮৮৮ সালের ডিসেম্বরে মন্টপিলিয়ার ( Montpellier) পরিদর্শন করেছিলেন। সেখানে তারা কোরবেট এবং ডেলাক্রিক্সের কাজ দেখেছিলেন। তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে; ভ্যান গখ গঁগ্যার প্রশংসা করেছেন এবং তার সমতুল্য হিসাবে বিবেচিত হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গঁগ্যা ছিলেন অহংকারী এবং দাপুটে। যা ভ্যান গগকে হতাশ করেছিল।[১০]

মৃত্যু

কুৎসিত মুখাকৃতির ও জীবনের প্রতি প্রবল হতাশায় ভুগে ১৮৯০ সালের ২৯ জুলাই রিভলভার দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন।[১১][১২] কোনো সাক্ষী ছিল না এবং তিনি ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পরে মারা যান।[১৩] বুলেটটি গেঁথে ছিলো পাঁজরে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির মধ্যে কোনো ক্ষতি না করেই তার বুকের মধ্যে দিয়ে গেছে - সম্ভবত তাঁর মেরুদণ্ড গিয়ে আটকে গিয়েছিলো। তিনি আবার্গ রাভাক্স হাসপাতালে হেটে গিয়েছিলেন, সেখানে দুইজন চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু সার্জন উপস্থিত না থাকলে বুলেটটি অপসারণ করা যায়নি। পরেরদিন তার ভাই থিও হাসপাতালে এসে উনাকে দেখে খুশি হন। কিন্তু ভ্যান গখের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। ২৯ জুলাই সকালে তিনি মারা যান।[১৪][১৫][১৬]

চিত্রকর্ম

আত্মপ্রতিকৃতি

  • ধূসর টুপি, শীতকালীন ১৮৮৭-৮৮ স্ব-প্রতিকৃতি।ভ্যান গগ যাদুঘর, আমস্টারডাম
  • স্ব-প্রতিকৃতি খড়ের টুপি, প্যারিস, শীতকাল ১৮৮৭-৮৮। মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট, নিউ ইয়র্ক

প্রতিকৃতি

  • স্ট্র হ্যাটওয়ালা আত্মপ্রতিকৃতি, ১৮৮৭/৮৮
  • শুশ্রুমুণ্ডিত আত্মপ্রতিকৃতি, ১৮৮৯
  • প্রতিকৃতি, ১৮৮৯

সাইপ্রেস

ফুল

গমক্ষেত

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ