রেজা শাহ
রেজা শাহ পাহলভী (ফার্সি: رضا شاه پهلوی; উচ্চারণ [reˈzɑː ˈʃɑːhe pæhlæˈviː]; জন্ম: ১৫ মার্চ, ১৮৭৮ - মৃত্যু: ২৬ জুলাই, ১৯৪৪) মাজান্দারান প্রদেশের ইরান আলাশত এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইরানের শাহানশাহ ছিলেন। ১৯২৫ থেকে ১৯৪১ মেয়াদে ইরান সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন।
রেজা শাহ পাহলভী | |||||
---|---|---|---|---|---|
ইরানের শাহানশাহ | |||||
ইরানের শাহ | |||||
রাজত্ব | ১৫ ডিসেম্বর, ১৯২৫ – ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ২৪ এপ্রিল, ১৯২৬ | ||||
পূর্বসূরি | আহমদ শাহ কাজার | ||||
উত্তরসূরি | মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী | ||||
ইরানের প্রধানমন্ত্রী | |||||
মেয়াদ | ২৮ অক্টোবর, ১৯২৩ – ১ নভেম্বর, ১৯২৫ | ||||
পূর্বসূরি | হাসান পিরনিয়া | ||||
উত্তরসূরি | মোহাম্মদ-আল ফরুগি | ||||
সম্রাট | আহমদ শাহ কাজার | ||||
জন্ম | আলাশত, সভাদ কুহ, মাজান্দারান প্রদেশ, পারস্য (ইরান) | ১৫ মার্চ ১৮৭৮||||
মৃত্যু | ২৬ জুলাই ১৯৪৪ জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা | (বয়স ৬৬)||||
সমাধি | |||||
দাম্পত্য সঙ্গী | মরিয়ম খানম তাজমাহ খানম সাফিয়াহ খানম তাজ উল-মলুক (রাজার স্ত্রী) কামার উল-মলুক ইসমত উল-মলুক | ||||
বংশধর | প্রিন্সেস হামদামসালতানেহ প্রিন্সেস শামস মুকুটলাভকারী প্রিন্স মোহাম্মদ রেজা প্রিন্সেস আশরাফ প্রিন্স আলী রেজা প্রিন্স গোলাম রেজা প্রিন্স আব্দুল রেজা প্রিন্স আহমদ রেজা প্রিন্স মাহমুদ রেজা প্রিন্সেস ফাতিমা প্রিন্স হামিদ রেজা[২] | ||||
| |||||
রাজবংশ | পাহলভী বংশ | ||||
পিতা | আব্বাস আলী খান | ||||
মাতা | নূশ-আফারিন আয়রোমলু | ||||
ধর্ম | ইসলাম |
১৯২৫ সালে ব্রিটিশ সহায়তায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কাজার রাজবংশের শেষ শাহ আহমদ শাহ কাজার ক্ষমতাচ্যূত হন ও তিনি পাহলভী রাজবংশের সূচনা করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ তারিখে অ্যাংলো-সোভিয়েত বাহিনী ইরান অভিযান করলে তাকে জোরপূর্বক ক্ষমতা থেকে সরানো হয়।[৩] তিনি সাংবিধানিকভাবে রাজতন্ত্রের সূচনা করেন। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের প্রেক্ষিতে পাহলভী সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। তার আমলে অনেক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পুণর্গঠনের সূত্রপাত হয়। এরফলেই আধুনিক ইরান রাষ্ট্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রারম্ভিক জীবন
১৮৭৮ সালে মেজর আব্বাস আলী খান ও নুশাফারিন আয়রোমলু দম্পতির সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।[৪][৫] তার মা সম্ভ্রান্ত জর্জীয় মুসলিম পরিবার থেকে এসেছেন।[৬][৭] রেজা শাহের জন্মের অনেক বছর পূর্বে সংঘটিত রুশ-পারস্য যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তারা পারস্যে অভিবাসিত হতে বাধ্য হয়েছিলেন।[৮] তার বাবা ৭ম সাভাদকুহ রেজিমেন্টে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন ও ১৮৫৬ সালে অ্যাংলো-পারস্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বাবার মৃত্যুর পর রেজার মা তেহরানে অবস্থানরত তার ভাইয়ের বাড়ীতে অবস্থান করেন। ১৮৭৯ সালে মায়ের পুণর্বিবাহের প্রেক্ষিতে রেজা শাহ তার চাচার তত্ত্বাবধানে থাকেন। এরপর পারিবারিক বন্ধু ও পারস্য সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আমির তুমান কাজিম খানের কাছে তাকে পাঠানো হয়।[৯] ষোল বছর বয়সে পারস্য কস্যাক ব্রিগেডে তিনি যোগ দেন।
কর্মজীবন
১৯১৮ সালে পারস্য কস্যাক ব্রিগেডের জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯২৫ সালে কাজার রাজতন্ত্রের পতনের পূর্বে সর্বশেষ কর্মকর্তা হিসেবে নিশান-ই-আকদান উপাধী পান।[১০]
রুশ বিপ্লবের পর পারস্য যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। ১৯১৭ সালে ব্রিটেন রাশিয়ায় আক্রমণ পরিচালনার্থে ইরানকে ব্যবহার করে। কিন্তু ব্রিটেনের ব্যর্থতায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পারস্যের উত্তরাংশ দখল করাসহ পারস্য সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গঠন করে। ১৯২০-এর দশকে রাশ্টে জাঙ্গালিস, কুর্দ, আর্মেনীয় ও আজারবাইজানীদের নিয়ে গঠিত ১,৫০০ সদস্যের গেরিলা বাহিনী তেহরান অভিমুখে যাত্রা করে। এরফলে রাজধানীতে গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি করে।[১১]
১৪ জানুয়ারি, ১৯২১ তারিখে ব্রিটিশ জেনারেল আয়রনসাইড রেজা খানকে তাবরিজ ব্যাটলিয়নের নেতৃত্বে দেন।[১২] ব্রিটিশদের দিক-নির্দেশনায় একমাস পর রেজা খানা তিন-চার হাজার সৈনিক নিয়ে রাজধানী তেহরান দখল করেন। তিনি পূর্বতন সরকারের পতন ঘটান ও সৈয়দ জিয়াউদ্দিন তাবাতাবাইকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন।[১৩] ইরানের সংবিধান অনুযায়ী ১২ ডিসেম্বর, ১৯২৫ তারিখে মজলিসের সদস্যরা তাকে ইরানের শাহরূপে ঘোষণা করে।[১৪] ২৫ এপ্রিল, ১৯২৬ তারিখে তিনি শপথ নেন। পরবর্তীতে তার সন্তান মোহাম্মদ রেজা পাহলভী পারস্যের মুকুটধারী হন।
৮ জুন, ১৯৩২ তারিখে ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে এক প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, ক্ষমতা পুঞ্জীভূত করতে ব্রিটিশ সরকার রেজাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।[১৫]
অবদান
তার আমলে ট্রান্স-ইরানিয়ান রেলপথ নির্মিত হয় ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ও তার আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[১৬] অনেক ইরানি ছাত্রকে ইউরোপীয় শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে তার সরকার সহায়তা করে।[১৭] এছাড়াও, জনস্বাস্থ্যের আধুনিকায়ণেও তার সরকার ভূমিকা রাখে।[১৮]
নির্বাসন
১৯৪১ সালের আগস্টে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মিত্রশক্তির পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইরান আক্রমণ করে। ব্রিটিশ ও সোভিয়েত শক্তির প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে ইরানের সশস্ত্রবাহিনী সহজেই পরাজিত হয়। উইনস্টন চার্চিল মিত্রবাহিনীর বিজয়ে ইরানকে বিজয়ের সেতুরূপে আখ্যায়িত করেন[১৯]। ১৯৪১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মিত্রশক্তি রেজা শাহকে তার পুত্র মোহাম্মদ রেজা পাহলভীর কাছে জোরপূর্বক ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করে।
ব্রিটিশ ও সোভিয়েত সেনাদের নিয়ন্ত্রণে ইরানের অবস্থান থাকায় রেজা শাহকে নির্বাসনে পাঠাতে একমত হয়। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তার সম্মতিতে পুরো পরিবারকে মৌরিতাসে নিয়ে যায়।[২০] এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান থেকে জোহানেসবার্গে তিনি বসবাস করেন। বেশ কয়েক বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হবার পর ২৬ জুলাই, ১৯৪৪ তারিখে তার দেহাবসান ঘটে। মৃত্যুর পর তার শবদেহ মিশরের কায়রোয় আল রিফাই মসজিদে নেয়া হয় ও দাফন করা হয়।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
রেজা শাহ পাহলভী বংশ জন্ম: 15 March 1878 মৃত্যু: 26 July 1944 | ||
শাসনতান্ত্রিক খেতাব | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী আহমদ শাহ কাজার | ইরানের শাহানশাহ ১৫ ডিসেম্বর, ১৯২৫ – ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ | উত্তরসূরী মোহাম্মদ রেজা পাহলভী |
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
পূর্বসূরী হাসান পিরনিয়া | ইরানের প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর, ১৯২৩ – ১ নভেম্বর, ১৯২৫ | উত্তরসূরী মোহাম্মদ-আলী ফরুকী |
সামরিক দপ্তর | ||
পূর্বসূরী কর্নেল স্তারোসেলস্কি | পার্সিয়ান কস্যাক ব্রিগেডের কমান্ডার ১৯২০-১৯২১ | উত্তরসূরী পদ শূ্ন্য |
Titles in pretence | ||
পূর্বসূরী আহমদ শাহ কাজার | — TITULAR — ইরানের শাহানশাহ ১৬ সেপ্টেম্বর – ২৬ জুলাই, ১৯৪৪ Reason for succession failure: অ্যাংলো-সোভিয়েত অভিযান | উত্তরসূরী মোহাম্মদ রেজা পাহলভী |