লাইসোজাইম

রাসায়নিক যৌগ

লাইসোজাইম (ইসি ৩.২.১.১৭, মুরামিডেস, এন -অ্যাসিটাইলমুরামাইড গ্লাইকানহাইড্রোলেস; পদ্ধতিগত নাম পেপটাইডোগ্লাইকান এন -অ্যাসিটাইলমুরামইলহাইড্রোলেজ) হল একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এনজাইম যা প্রাণীদেহে উৎপাদিত হয়। এটি সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ। এটি একটি গ্লাইকোসাইড হাইড্রোলেস যা নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াটিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে:

গ্লাইকোসাইড হাইড্রোলেজ, পরিবার ২২, লাইসোজাইম
মিথিলিন ব্লু দিয়ে স্টেইনিং করা লাইসোজাইম স্ফটিক
শনাক্তকারী
প্রতীক?
InterProIPR000974
লাইসোজাইম
শনাক্তকরণ
ইসি নম্বর3.2.1.17
ক্যাস নম্বর9001-63-2
ডাটাবেজ
ইন্টএনজইন্টএনজ প্রদর্শন
ব্রেন্ডাব্রেন্ডা অন্তর্ভুক্তি
এক্সপ্যাসিনাইসজাইম প্রদর্শন
কেইজিজিকেইজিজি অন্তর্ভুক্তি
মেটাসাইকমেটাবোলিক পাথওয়ে
প্রায়ামপ্রোফাইল
পিডিবি গঠনআরসিএসবি পিডিবি পিডিবিই পিডিবিসাম
জিন অন্টোলজিAmiGO / কুইকগো
একটি পেপটিডোগ্লাইকানে এ -অ্যাসিটাইলমুরামিক অ্যাসিড এবং এন -অ্যাসিটাইল- ডি -গ্লুকোসামিন অবশিষ্টাংশের মধ্যে এবং কাইটোডেক্সট্রিন-এ এন -অ্যাসিটাইল- ডি -গ্লুকোসামিন অবশিষ্টাংশের মধ্যে (১→৪)-বিটা-সংযোগের পানি দ্বারা বিয়োজন (হাইড্রোলাইসিস)

পেপটিডোগ্লাইকান হল গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরের প্রধান উপাদান।[১] এই হাইড্রোলাইসিসের ফলে ব্যাকটেরিয়া কোষের প্রাচীর ভেঙ্গে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়ার বিয়োজন ঘটে।

অশ্রু, লালা, মানুষের বুকের দুধ এবং শ্লেষ্মা থেকে প্রচুর পরিমাণে লাইসোজাইম নিঃসৃত হয়। এটি ম্যাক্রোফেজগুলির সাইটোপ্লাজমিক গ্রানুলে এবং পলিমারফোনিউক্লিয়ার নিউট্রোফিলস (পিএমএন) এও উপস্থিত থাকে। ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে লাইসোজাইম পাওয়া যায়। সি-টাইপ লাইসোজাইমগুলি অনুক্রম এবং গঠনে α-ল্যাকটালবুমিনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এটি তাদের একই গ্লাইকোসাইড হাইড্রোলেজ পরিবার ২২ এর অংশ করে তোলে।[২] মানুষের মধ্যে সি-টাইপ লাইসোজাইম এনজাইম 'এলওয়াইজেড' জিন দ্বারা এনকোড করা হয়।[৩][৪]

মুরগির ডিমের সাদা অংশের লাইসোজাইম তাপীয়ভাবে স্থিতিশীল। এর গলনাঙ্ক ৭২°সে. এবং পিএইচ ৫.০ পর্যন্ত পৌঁছায়।[৫] অপরদিকে মানুষের দুধের লাইসোজাইম সেই তাপমাত্রায় খুব দ্রুত কার্যক্ষমতা হারায়।[৬] মুরগির ডিমের সাদা অংশের লাইসোজাইম পিএইচ (৬-৯) এর বৃহৎ পরিসরে তার কার্যকলাপ বজায় রাখতে সক্ষম।[৭] এর আইসোইলেকট্রিক পয়েন্ট ১১.৩৫।[৮] মানুষের দুধের লাইসোজাইমের আইসোইলেক্ট্রিক পয়েন্ট ১০.৫-১১।[৯]

কাজ এবং কার্যপদ্ধতি

পেপটিডোগ্লাইকানগুলিতে গ্লাইকোসিডিক বন্ধনগুলিকে হাইড্রোলাইজ করে এই এনজাইম কাজ করে। এনজাইমটি কাইটিনের গ্লাইকোসিডিক বন্ধনও ভেঙে দিতে পারে, যদিও এটি কাইটিনেস এনজাইমের মতো কার্যকরী নয়।[১০]

লাইসোজাইম দ্বারা অনুঘটিত বিক্রিয়া

লাইসোজাইমের সক্রিয় সাইট পেপটিডোগ্লাইকান অণুকে তার দুটি ডোমেনের মধ্যে আবদ্ধ করে। এটি পেপটিডোগ্লাইকানকে আক্রমণ করে (ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরে পাওয়া যায়, বিশেষ করে গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়াতে)। এর প্রাকৃতিক সাবস্ট্রেট -অ্যাসিটাইলমুরামিক অ্যাসিড (এনএএম) এবং এ -অ্যাসিটাইলগ্লুকোসামিন (এনএজি)-এর চতুর্থ কার্বন পরমাণু।

টেট্রাস্যাকারাইডের মতো সংক্ষিপ্ত স্যাকারাইডগুলিও একটি দীর্ঘ চেইন সহ অন্তঃবর্তী মাধ্যমে কার্যকর সাবস্ট্রেট হিসাবে কাজ করে।[১১] কাইটিনকে একটি কার্যকর লাইসোজাইম সাবস্ট্রেট হিসাবে দেখানো হয়েছে। লাইসোজাইমে কৃত্রিমভাবে তৈরি সাবস্ট্রেটও ব্যবহার করা হয়েছে।[১২]

কার্যপদ্ধতি

ফিলিপস পদ্ধতি

ফিলিপস পদ্ধতি প্রস্তাব করেছিল যে এনজাইমের অনুঘটক শক্তি আবদ্ধ সাবস্ট্রেটের স্টেরিক স্ট্রেন এবং একটি অক্সো-কারবেনিয়াম মধ্যবর্তী ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক স্থিতিশীলতা উভয় থেকেই এসেছে। এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফিক ডেটা থেকে ফিলিপস এনজাইমের সক্রিয় স্থানের প্রস্তাব করেছিলেন যেখানে একটি হেক্সাস্যাকারাইড অণু আবদ্ধ হয়। লাইসোজাইম হেক্সাস্যাকারাইডের চতুর্থ চিনিকে (ডি বা -১ সাবসাইটে) অর্ধ-চেয়ার য়াকারে অবস্থান করে। এই অবস্থায় গ্লাইকোসিডিক বন্ধন আরো সহজে ভেঙে যায়।[১৩] গ্লাইকোসিডিক বন্ড ভাঙার ফলে একটি অক্সো-কার্বেনিয়াম ধারণকারী একটি আয়নিক মধ্যবর্তী অবস্থা তৈরি হয়।[১৪] এইভাবে বিকৃতি সাবস্ট্রেট অণুকে মধ্যবর্তী অবস্থার মতো একটি টানটান অবস্থার সৃষ্টি করে বিক্রিয়ার শক্তির বাধাকে কমিয়ে দেবে।[১৫]

লাইসোজাইম এনজাইমের সমযোজী মধ্যবর্তী যৌগ। কালো রঙ দিয়ে সমযোজী বন্ধন এবং নীল জাল দিয়ে পরীক্ষামূলক প্রমাণ দেখানো হয়েছে।[১৬]

১৯৭৮ সালে অ্যারিহ ওয়ার্শেল অনুমান করেছিলেন যে সক্রিয় সাইটে অ্যাসপার্টেট এবং গ্লুটামেট অবশিষ্টাংশ দ্বারা প্রস্তাবিত অক্সো-কার্বনিয়াম মধ্যবর্তী যৌগকে ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিকভাবে স্থিতিশীল করা সম্ভব। ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক স্ট্যাবিলাইজেশন আর্গুমেন্টটি বাল্ক ওয়াটারের তুলনার উপর ভিত্তি করে ছিল যা পানির ডাইপোলগুলির পুনর্বিন্যাসের ফলে সৃষ্ট চার্জ মিথস্ক্রিয়ার স্থিতিশীল শক্তিকে বাতিল করতে পারে। ওয়ারশেলের মডেলে এনজাইম একটি সুপার-দ্রাবক হিসাবে কাজ করে যা আয়ন জোড়ার স্থিতিবিন্যাস ঠিক করে এবং সুপার-সলভেশন (আয়ন জোড়ার খুব ভাল স্থিতিশীলতা) প্রদান করে এবং বিশেষ করে যখন দুটি আয়ন একে অপরের কাছাকাছি থাকে তখন শক্তি কমিয়ে দেয়।[১৭]

এই বিক্রিয়ার হার নির্ধারক ধাপ (আরডিএস) অক্সো-কার্বেনিয়াম মধ্যবর্তী যৌগ গঠনের সাথে সম্পর্কিত। সঠিক আরডিএস নির্দেশ করার জন্য কিছু পরস্পরবিরোধী ফলাফলও ছিল। উৎপাদের গঠন (পি-নাইট্রোফেনল) ট্রেসিং করে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল যে আরডিএস বিভিন্ন তাপমাত্রায় পরিবর্তিত হতে পারে যা সেই পরস্পরবিরোধী ফলাফলের কারণ ছিল। উচ্চ তাপমাত্রায় আরডিএস গ্লাইকোসিল এনজাইম মধ্যবর্তী যৌগ গঠন এবং নিম্ন তাপমাত্রায় সেই মধ্যবর্তী যৌগের ভাঙ্গনের সাথে সম্পর্কিত।[১৮]

সমযোজী পদ্ধতি

ভোকাডলোর পরীক্ষার বিক্রিয়কসমূহ

১৯৬৯ সালে একটি প্রাথমিক বিতর্কে ডাহলকুইস্ট গতিশীল আইসোটোপ প্রভাবের উপর ভিত্তি করে লাইসোজাইমের জন্য একটি সমযোজী প্রক্রিয়ার প্রস্তাব করেছিলেন[১৪] কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য আয়নিক প্রক্রিয়াটি অধিক গৃহীত হয়েছিল। ২০০১ সালে ভোকাডলো একটি সমযোজী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি সংশোধিত প্রক্রিয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। ইএসআই-এমএস বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রমাণ একটি সমযোজী প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। বিক্রিয়া হার কমাতে এবং বৈশিষ্ট্য প্রদানের জন্য একটি ২-ফ্লুরো প্রতিস্থাপিত বিক্রিয়ক ব্যবহার করা হয়েছিল। অ্যামিনো অ্যাসিড সাইড-চেইন গ্লুটামিক অ্যাসিড ৩৫ (গ্লু৩৫) এবং অ্যাসপার্টেট ৫২ (অ্যাসপ৫২) এই এনজাইমের কার্যকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। গ্লু৩৫ গ্লাইকোসিডিক বন্ডের প্রোটন দাতা হিসাবে কাজ করে, বিক্রিয়কে সি-০ (কার্বন-০) বন্ডকে বিচ্ছিন্ন করে। অপরদিকে অ্যাসপ৫২ একটি গ্লাইকোসিল এনজাইম মধ্যবর্তী যৌগ উৎপন্ন করতে নিউক্লিওফাইল হিসাবে কাজ করে। গ্লু৩৫ পানির সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোক্সিল আয়ন তৈরি করে। হাইড্রোক্সিল আয়ন পানির চেয়ে শক্তিশালী নিউক্লিওফাইল। যা পরে গ্লাইকোসিল এনজাইম মধ্যবর্তী যৌগকে আক্রমণ করে, হাইড্রোলাইসিসের উৎপাদ উৎপন্ন করে এবং এনজাইমটিকে অপরিবর্তিত রাখে।[১৯] বিজ্ঞানী কোশল্যান্ড এনজাইম ক্যাটালাইসিসের জন্য এই ধরনের সমযোজী প্রক্রিয়া্র প্রস্তাব দেন।[২০]

অতি সম্প্রতি কোয়ান্টাম মেকানিক্স/আণবিক মেকানিক্স (কিউএম/এমএম) আণবিক গতিবিদ্যা সিমুলেশনগুলি এইচইডব্লিউএল-এর ক্রিস্টাল ব্যবহার করছে এবং একটি সমযোজী মধ্যবর্তী অস্তিত্বের সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে করছে।[২১] ইএসআই-এমএস এবং এক্স-রে কাঠামোর প্রমাণ সমযোজী মধ্যবর্তী অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয় তবে তা প্রাথমিকভাবে কম সক্রিয় মিউট্যান্ট বা ভিন্নধর্মী সাবস্ট্রেট ব্যবহার করার উপর নির্ভর করে। এইভাবে কিউএম/এমএম আণবিক গতিবিদ্যা বন্য-টাইপ এইচইডব্লিউএল এবং স্থানীয় সাবস্ট্রেটের প্রক্রিয়াটি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করার অনন্য ক্ষমতা প্রদান করে। পর্যবেক্ষণগুলি প্রকাশ করেছে যে সমযোজী প্রক্রিয়া থেকে সমযোজী মধ্যবর্তী যৌগ ফিলিপস প্রক্রিয়ার আয়নিক মধ্যবর্তী যৌগের তুলনায় ~৩০ কিলোক্যালরি/মোল বেশি স্থিতিশীল।[২১] এই পর্যবেক্ষণগুলি দেখায় যে আয়নিক মধ্যবর্তী যৌগ অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রতিকূল এবং কম সক্রিয় মিউট্যান্ট বা ভিন্নধর্মী সাবস্ট্রেটগুলি ব্যবহার করে পরীক্ষা থেকে পর্যবেক্ষণ করা সমযোজী মধ্যবর্তীগুলি বন্য-টাইপ এইচইডব্লিউএল-এর প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে।

লাইসোজাইমের দুটি সম্ভাব্য কার্যপদ্ধতি

বাধাদান

ইমিডাজল থেকে উদ্ভূত যৌগ লাইসোজাইমকে প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাধা দেয়ার জন্য কিছু অবশিষ্টাংশ (সক্রিয় কেন্দ্রের মধ্যে বা বাইরে) নিয়ে চার্জ-ট্রান্সফার কমপ্লেক্স গঠন করতে পারে।[২২] গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ায় লাইপোপলিস্যাকারাইড লাইসোজাইমের সাথে আবদ্ধ হয়ে একটি বাধাদায়ক হিসাবে কাজ করে।[২৩]

অ-এনজাইমেটিক ক্রিয়া

লাইসোজাইমের মুরামিডেস ক্রিয়াকলাপটি এর ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য মূল ভূমিকা পালন করার কথা বলা হলেও এর অ-এনজাইমেটিক ক্রিয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ সক্রিয় স্থানে (৫২- অ্যাস্পার্টিক অ্যাসিড -> ৫২- সেরিন) সংকটপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিডের মিউটেশনের মাধ্যমে লাইসোজাইমের অনুঘটক কার্যকলাপকে অবরুদ্ধ করলে জীবাণুরোধী কার্যকলাপকে বন্ধ হয় না।[২৪] ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়ার লাইপোপলিস্যাকারাইডের সাথে সম্পর্কিত টেট্রাস্যাকারাইডের জন্য লাইটিক কার্যকলাপ ছাড়াই ব্যাকটেরিয়া কার্বোহাইড্রেট অ্যান্টিজেন সনাক্ত করার জন্য লাইসোজাইমের লেকটিন-সদৃশ ক্ষমতা রিপোর্ট করা হয়েছিল।[২৫] এছাড়াও লাইসোজাইম অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল রিসেপ্টরগুলির সাথে যোগাযোগ করে।[২৬]

এনজাইমের গাঠনিক পরিবর্তন

লাইসোজাইম দুটি গঠন প্রদর্শন করে: একটি খোলা সক্রিয় অবস্থা এবং একটি বন্ধ নিষ্ক্রিয় অবস্থা। অনুঘটক প্রাসঙ্গিকতা একক প্রাচীরযুক্ত কার্বন ন্যানোটিউব (এসডব্লিউসিএন) ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর (এফইটি) দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল যেখানে একটি একক লাইসোজাইম এসডব্লিউসিএন এফইটি এর সাথে আবদ্ধ ছিল।[২৭] লাইসোজাইমকে বৈদ্যুতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এর দুটি রূপ দেখা যায়। এগুলো হল- একটি খোলা সক্রিয় সাইট এবং একটি বন্ধ নিষ্ক্রিয় সাইট। তার সক্রিয় অবস্থায় লাইসোজাইম প্রক্রিয়াগতভাবে তার সাবস্ট্রেটকে হাইড্রোলাইজ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে প্রতি সেকেন্ডে ১৫ হারে গড়ে ১০০টি বন্ধন ভেঙে দেয়। একটি নতুন সাবস্ট্রেটকে আবদ্ধ করতে এবং বন্ধ নিষ্ক্রিয় অবস্থা থেকে খোলা সক্রিয় অবস্থায় যাওয়ার জন্য দুটি ধাপের পরিবর্তন প্রয়োজন কিন্তু নিষ্ক্রিয়করণের জন্য একটি ধাপ প্রয়োজন।

সুপার ফ্যামিলি

প্রচলিত সি-টাইপ লাইসোজাইম হল লাইসোজাইম সুপারফ্যামিলি নামে অভিহিত গঠনগত এবং যান্ত্রিকভাবে সম্পর্কিত এনজাইমের একটি বৃহত্তর গোষ্ঠীর অংশ। এই পরিবারটি জিএইচ২২ সি-টাইপ ("চিকেন") লাইসোজাইমকে উদ্ভিদ কাইটিনেজ জিএইচ১৯ , জি-টাইপ ("গুজ") লাইসোজাইম জিএইচ২৩ , ভি-টাইপ ("ভাইরাল") লাইসোজাইম জিএইচ২৪ এবং কাইটোসানেস জিএইচ৪৬ পরিবারের সাথে একত্রিত করে। লাইসোজাইম-টাইপ নামকরণ শুধুমাত্র এর উৎস প্রতিফলিত করে। টাইপগুলো মূলত বিচ্ছিন্ন এবং সম্পূর্ণরূপে শ্রেণীবিন্যাস বন্টন প্রতিফলিত করে না।[২৮] উদাহরণস্বরূপ মানুষ এবং অন্যান্য অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর দুটি জি-টাইপ লাইসোজাইম জিন রয়েছে। যথা- এলওয়াইজি১ এবং এলওয়াইজি২।[২৯]

রোগ এবং চিকিৎসায় ভূমিকা

LYZ
Available structures
PDBOrtholog search: PDBe RCSB
Identifiers
AliasesLYZ, LZM, LYZF1, lysozyme
External IDsOMIM: 153450 MGI: 96902 HomoloGene: 121490 GeneCards: LYZ
Orthologs
SpeciesHumanMouse
Entrez
Ensembl
UniProt
RefSeq (mRNA)

NM_000239

NM_013590

RefSeq (protein)

NP_000230

NP_038618

Location (UCSC)n/aChr 10: 117.12 – 117.13 Mb
PubMed search[৩১][৩২]
Wikidata
View/Edit HumanView/Edit Mouse

লাইসোজাইম সহজাত প্রতিরক্ষা তন্ত্রের অংশ। লাইসোজাইমের মাত্রা কমে যাওয়া নবজাতকদের ব্রঙ্কোপলমোনারি ডিসপ্লাসিয়ার সাথে সম্পর্কিত।[৩৩] মানুষের লাইসোজাইম সমৃদ্ধ দুধ খাওয়ানো শূকরগুলি ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ডায়রিয়াজনিত রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে পারে। মানুষের দুধে লাইসোজাইমের ঘনত্ব গবাদি পশুর দুধের ঘনত্বের চেয়ে ১,৬০০ থেকে ৩,০০০ গুণ বেশি। মানুষের লাইসোজাইম মুরগির ডিমের সাদা অংশের লাইসোজাইমের চেয়ে বেশি সক্রিয়। ছাগলের একটি ট্রান্সজেনিক লাইন ("আর্টেমিস" নামে একজন প্রতিষ্ঠাতা) মানুষের লাইসোজাইম দিয়ে দুধ উৎপাদনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল যাতে শিশুদের ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করা যায় যদি তারা মানুষের বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধা না পায়।[৩৪][৩৫]

লাইসোজাইম ব্যাসিলাস এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাসের[৩৬] মতো গ্রাম-পজিটিভ প্যাথোজেন থেকে সুরক্ষার একটি প্রাকৃতিক স্তর হওয়ায় এটি মানুষের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে শিশুদের প্রতিরক্ষা তন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[৩৭] ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক বাধা হিসেবে ত্বকের শুষ্কতা এবং অম্লতা কাজ করে। অপরদিকে কনজাংটিভা (চোখের আবরণকারী ঝিল্লি) এ থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইম (প্রধানত লাইসোজাইম এবং ডিফেনসিন) দ্বারা সুরক্ষিত। এই এনজাইমগুলো প্রতিরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে কনজেক্টিভাইটিস হয়।

কিছু ক্যান্সারে (বিশেষ করে মায়লোমোনোসাইটিক লিউকেমিয়া) ক্যান্সার কোষ রক্তে অত্যধিক লাইসোজাইম উৎপাদন করে যা লাইসোজাইমের বিষাক্ত মাত্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে। রক্তে উচ্চ লাইসোজাইম কিডনি বিকল হওয়া এবং রক্তে পটাসিয়ামের কম পরিমাণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। এর ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যা প্রাথমিক ম্যালিগন্যান্সির চিকিৎসার উন্নতি সাধন করতে পারে।

সারকয়েডোসিস নির্ণয়ের জন্য সিরাম অ্যাঞ্জিওটেনসিন রূপান্তরকারী এনজাইমের তুলনায় সিরাম লাইসোজাইম অনেক কম নির্দিষ্ট। এটি আরো সংবেদনশীল হওয়ায় এটি সারকোইডোসিস রোগের কার্যকলাপের শনাক্তকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং রোগ পর্যবেক্ষণের জন্য উপযুক্ত।[৩৮]

রাসায়নিক সংশ্লেষণ

লাইসোজাইম প্রোটিনের প্রথম রাসায়নিক সংশ্লেষণের চেষ্টা করেছিলেন ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ ডব্লিউ কেনার এবং তার সহকারীরা।[৩৯] অবশেষে ২০০৭ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিভ কেন্টের ল্যাবে টমাস ডুরেক একটি সিন্থেটিক কার্যকরী লাইসোজাইম অণু তৈরি করতে পেরেছিলেন।[৪০]

অন্যান্য ব্যবহারসমূহ

লাইসোজাইম স্ফটিকগুলি অনুঘটক এবং বায়োমেডিকাল অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য অন্যান্য কার্যকরী উপকরণ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।[৪১][৪২][৪৩] লাইসোজাইম গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়াকে ভাঙ্গার জন্য ব্যবহৃত এনজাইম।[৪৪] লাইসোজাইম কোষ প্রাচীরকে পরিপাক করতে পারে এবং অসমোটিক শক সৃষ্টি করতে পারে (কোষের চারপাশে হঠাৎ দ্রবণ ঘনত্ব পরিবর্তিত হলে অসমোটিক চাপের ফলে কোষটি ফেটে যায়)। ল্যাবে সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার পেরিপ্লাজমের অভ্যন্তরীণ ঝিল্লিটি স্ফেরোপ্লাস্ট নামক ভেসিকেলে আবদ্ধ থাকলে তা থেকে প্রোটিন আলাদা করতে লাইসোজাইম ব্যবহৃত হয়।[৪৫][৪৬]

উদাহরণস্বরূপ পেরিপ্লাজমিক স্থানের বস্তুকে মুক্ত করতে লাইসোজাইম ব্যবহার করে ই. কোলাইকে ভেঙে ফেলা যেতে পারে। পেরিপ্লাজমীয় বস্তু সংগ্রহ করার জন্য ল্যাবে এটি বিশেষভাবে কার্যকর।[১] বিশেষ তাপমাত্রা, পিএইচ রেঞ্জ এবং লবণের ঘনত্বে লাইসোজাইম সবচেয়ে ভালো কাজ করে। লাইসোজাইমের কার্যকলাপ ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার সাথে বৃদ্ধি পায়। এর পিএইচ পরিসীমা ৬.০-৭.০। উপস্থিত লবণগুলি লাইসোজাইমের কাজকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে কিছু লবন প্রতিরোধমূলক প্রভাব বলে এবং অন্যরা লাইসোজাইম দ্বারা ভাঙনে সাহায্য করে। সোডিয়াম ক্লোরাইড লাইসোজাইম দ্বারা ভাঙনে সাহায্য করে কিন্তু উচ্চ ঘনত্বে এটি ভাঙন প্রতিরোধ করে। পটাসিয়াম লবন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই রকম পর্যবেক্ষণ দেখা গেছে। ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেনের পার্থক্যের কারণে লাইসোজাইমের কাজে সামান্য ভিন্নতা দেখা যায়।[৪৭] প্রোটিন ক্রিস্টালাইজেশনের জন্য রিকম্বিন্যান্ট প্রোটিন আহরণে লাইসোজাইম ব্যবহারের একটি ফল হল যে স্ফটিকটি লাইসোজাইমের একক দ্বারা দূষিত হয়ে একটি বিসদৃশ সংমিশ্রণ তৈরি করে। কিছু প্রোটিন এই ধরনের দূষণ ছাড়া স্ফটিক করতে পারে না।[৪৮][৪৯]

লাইসোজাইম বিষাক্ত রিকম্বিন্যান্ট প্রোটিনের বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারে। বিএল২১(ডিই৩) স্ট্রেনে সাধারণত টি৭-আরএনএ পলিমারেজ রিকম্বিন্যান্ট প্রোটিন প্রকাশ করে।আইপিটিজি আবেশের মাধ্যমে ইউভি-৫ রিপ্রেসারকে বাধা দেওয়া হয়। ফলে টি৭-আরএনএ পলিমারেজের ট্রান্সক্রিপশন হয় এবং উক্ত প্রোটিন তৈরি হয়। তবে টি৭-আরএনএ পলিমারেজের একটি বেসাল স্তর আবেশ ছাড়াই পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে। টি৭ লাইসোজাইম টি৭-আরএনএ পলিমারেজ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। একটি সাহায্যকারী প্লাজমিড (পিলাইসএস) ধারণকারী নতুন উদ্ভাবিত স্ট্রেন গঠনমূলকভাবে টি৭ লাইসোজাইমের নিম্ন স্তরসহ বিষাক্ত রিকম্বিন্যান্ট প্রোটিনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিব্যক্তি প্রদান করে।[৫০]

ইতিহাস

মুরগির ডিমের সাদা অংশে এতে থাকা লাইসোজাইমের কারণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। .১৯০৯ সালে লাসচেঙ্কো প্রথম এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।[৫১] পেনিসিলিনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২২ সালে অনুনাসিক শ্লেষ্মার ব্যাকটেরিয়া-হত্যার কার্যকলাপ প্রদর্শন করেছিলেন ও "লাইসোজাইম" শব্দটি তৈরি করেছিলেন।[৫২] তিনি বলেছেন: "যেহেতু এই পদার্থের গাঁজন সম্পন্ন করার মতো বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাই আমি একে 'লাইসোজাইম' বলেছি।"[৫৩] ফ্লেমিং দেখাতে গিয়েছিলেন যে একটি এনজাইমিক পদার্থ বিভিন্ন নিঃসরণে উপস্থিত ছিল এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াকে দ্রুত ভেঙ্গে ফেলতে (অর্থাৎ দ্রবীভূত করতে) সক্ষম, বিশেষ করে একটি হলুদ "কক্কাস" ব্যাকটেরিয়াকে, যা নিয়ে তিনি গবেষণা করেছিলেন।[৫৪]

এডওয়ার্ড আব্রাহাম ১৯৩৭ সালে সর্বপ্রথম লাইসোজাইমের স্ফটিক তৈরি করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে ডেভিড চিল্টন ফিলিপসমুরগির ডিমের সাদা লাইসোজাইমের ত্রিমাত্রিক গঠন বর্ণনা করতে সক্ষম হন। তিনি এক্স-রে স্ফটিকগ্রাফির মাধ্যমে প্রথম ২- অ্যাংস্ট্রম (২০০pm ) রেজোলিউশন মডেল পান।[৫৫][৫৬] কাঠামোটি ১৯৬৫ সালে একটি রয়্যাল ইনস্টিটিউশন বক্তৃতায় জনসম্মুখে উপস্থাপিত হয়েছিল।[৫৭] লাইসোজাইম ছিল দ্বিতীয় প্রোটিন গঠন এবং প্রথম এনজাইম গঠন যা এক্স-রে ডিফ্র্যাকশন পদ্ধতির মাধ্যমে পাওয়া যায়। এটিই প্রথম এনজাইম যা সম্পূর্ণরূপে ক্রমানুসারে বিশটি সাধারণ অ্যামিনো অ্যাসিড ধারণ করে।[৫৮] লাইসোজাইমের গঠন সম্পর্কে ফিলিপসের ব্যাখ্যানুযায়ী এটিই প্রথম এনজাইম যার অনুঘটক ক্রিয়া পদ্ধতির জন্য একটি বিশদ ও নির্দিষ্ট কার্যপদ্ধতি প্রস্তাবিত হয়েছিল।[৫৯][৬০][৬১] এই কাজটি ফিলিপসকে গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে এনজাইমগুলি একটি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে গতি দান করে তার ব্যাখ্যা প্রদান করতে সাহায্য করে। ফিলিপসের প্রস্তাবিত মূল পথটি সম্প্রতি সংশোধিত হয়েছিল।[৬২]

আরও দেখুন

  • ডিমে অ্যালার্জি

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • Muramidase যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় চিকিৎসা গ্রন্থাগারে চিকিৎসা বিষয়ক শিরোনাম (MeSH)
  • Proteopedia.org HEW Lysozyme
  • PDBe-KB provides an overview of all the structure information available in the PDB for Human Lysozyme C.
  • PDBe-KB provides an overview of all the structure information available in the PDB for Hen egg white Lysozyme C.
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ