উত্তর সাইপ্রাস
উত্তর সাইপ্রাস (তুর্কি: Kuzey Kıbrıs, ইংরেজি: Northern Cyprus) হল সাইপ্রাস দ্বীপের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি স্বল্প স্বীকৃত রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম তুর্কি প্রজাতন্ত্র উত্তর সাইপ্রাস (তুর্কি: Kuzey Kıbrıs Türk Cumhuriyeti-KKTC, ইংরেজি: Turkish Republic of Northern Cyprus-TRNC)। শুধু তুরস্ক উত্তর সাইপ্রাসকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাকি দেশগুলো একে সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের অংশ বলে মনে করে।
তুর্কি প্রজাতন্ত্র উত্তর সাইপ্রাস Kuzey Kıbrıs Türk Cumhuriyeti (তুর্কি) | |
---|---|
জাতীয় সঙ্গীত: İstiklal Marşı Independence March | |
অবস্থা | কেবল তুরস্ক কর্তৃক স্বীকৃত |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | উত্তর নিকোসিয়া (দে ফাক্তো) নিকোসিয়া (দে জুরি)[১] ৩৫°১১′ উত্তর ৩৩°২২′ পূর্ব / ৩৫.১৮৩° উত্তর ৩৩.৩৬৭° পূর্ব |
সরকারি ভাষা | তুর্কি |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | তুর্কি সাইপ্রিয়ট |
সরকার | এককেন্দ্রীক আধা রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র |
• রাষ্ট্রপতি | এরসিন তাতার |
• প্রধানমন্ত্রী | উনাল উস্তেল |
আইন-সভা | অ্যাসেম্বলি অফ দ্য রিপাবলিক |
প্রতিষ্ঠিত | |
• তুর্কি আক্রমণ | ২০ জুলাই ১৯৭৪ |
• স্বায়ত্তশাসিত তুর্কি সাইপ্রিয়ট প্রশাসন | ১ অক্টোবর ১৯৭৪ |
• তুর্কি ফেডারেটেড স্টেট অফ সাইপ্রাস | ১৩ অক্টোবর ১৯৭৫ |
• সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র থেকে স্বাধীনতা | ১৫ নভেম্বর ১৯৮৩[২] |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৩৫৫ কিমি২ (১,২৯৫ মা২) (unranked) |
• পানি (%) | ২.৭ |
জনসংখ্যা | |
• ২০১৭ আনুমানিক | ৩,২৬,০০০[৩] |
• ২০১১ আদমশুমারি | ২,৮৬,২৫৭ |
• ঘনত্ব | ৯৩/কিমি২ (২৪০.৯/বর্গমাইল) (১১৭ তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০১৮ আনুমানিক |
• মোট | $৪.২৩৪ বিলিয়ন[৪] |
• মাথাপিছু | $১৪,৯৪২[৪] |
মুদ্রা | তুর্কি লিরা ₺ (TRY ) |
সময় অঞ্চল | ইইটি (ইউটিসি+২)[৫] |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি+৩ (ইইএসটি) |
গাড়ী চালনার দিক | বাম |
কলিং কোড | +৯০ ৩৯২ |
১৯৭৪ সালে একটি অভ্যুত্থান, গ্রীসে দ্বীপটি দখল করার প্রচেষ্টা করে, যা সাইপ্রাসে তুর্কি অভিযানের সূত্রপাত ঘটায়। এর ফলে উত্তরের গ্রীক সাইপ্রাইট জনসংখ্যার বেশীরভাগ উচ্ছেদ হয় এবং দক্ষিণ থেকে তুর্কি সাইপ্রাইটদের আগমন হয়, এবং দ্বীপ বিভাজন হয়। ১৯৮৩ সালে উত্তর সাইপ্রাস একতরফা স্বাধীনতা করে। স্বীকৃতির অভাবে উত্তর সাইপ্রাস অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক সমর্থনের জন্য তুরস্কের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।[৬][৭][৮]
ইতিহাস
১৮৭৮ সালে সাইপ্রাস সম্মেলনের সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে যুক্তরাজ্য উসমানীয় সাম্রাজ্যের কাছ থেকে সাইপ্রাসকে একটি আশ্রিত রাজ্য হিসেবে গ্রহণ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে (১৯১৪ সালে) যুক্তরাজ্য সাইপ্রাস দখল করে নেয়। ১৯২৫ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পরে সাইপ্রাসকে ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত করা হয়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে গ্রীক সাইপ্রিয়টরা জর্জি গ্রিভাসের নেতৃত্বে ইওকা (Ethniki Organosis Kyprion Agoniston) গঠন করে এবং এনোসিস (গ্রীসের সাথে দ্বীপের মিলন) এর জন্য আন্দোলন শুরু করে। তবে, এ আন্দোলন সফল হয়নি। ১৯৬০ সালে সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র নামক একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়।
১৯৬০ সালে দেশটিতে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এতে ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনের বিধান রাখা হয়। এ সংবিধান অনুযায়ী সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতি হবেন একজন গ্রীক সাইপ্রিয়ট আর উপ-রাষ্ট্রপতি হবেন একজন তুর্কি সাইপ্রিয়ট। এছাড়া সংসদে কমপক্ষে ৩০% সদস্য তুর্কি সাইপ্রিয়টদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করার বিধান রাখা হয়। প্রাথমিকভাবে আর্চবিশপ তৃতীয় মাকারিওসকে রাষ্ট্রপতি এবং ডাঃ ফজল কুসুককে উপ-রাষ্ট্রপতি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদে পৃথক স্থানীয় পৌরসভা তৈরির বিধান রাখা হয় যাতে গ্রীক ও তুর্কি সাইপ্রিয়টরা বড় বড় শহরে তাদের নিজস্ব পৌরসভা পরিচালনা করতে পারে।
দ্বীপের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্র লড়াইয়ে রূপান্তরিত হয়। যার ফলে ১৯৬৪ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করে। এই বাহিনী আজও মোতায়েন আছে। ১৯৭৪ সালে গ্রীক জাতীয়তাবাদী গ্রীক সাইপ্রিয়টরা গ্রীসের সামরিক জান্তার সহায়তায় একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। তুরস্ক এ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বহুপাক্ষিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় এবং দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে আক্রমণ করে। যুদ্ধবিরতির পরও তুর্কি বাহিনী থেকে যায়, ফলে দ্বীপটি বিভক্ত হয়ে পড়ে।[৯] আন্তঃসম্প্রদায় সহিংসতা, অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী আগ্রাসনের ফলে কয়েক লক্ষ সাইপ্রিয়ট বাস্তুচ্যুত হয়।[১০][১১]
১৯৭৫ সালে উত্তর সাইপ্রাস তুর্কি ফেডারেটেড স্টেট অফ সাইপ্রাস নাম নিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর এর নাম তুর্কি প্রজাতন্ত্র উত্তর সাইপ্রাস রাখা হয়। শুধুমাত্র তুরস্ক কর্তৃক স্বীকৃত উত্তর সাইপ্রাসকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসাবে বিবেচনা করে।
২০০২ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান দ্বীপের একীভূতকরণের জন্য আলোচনার শুরু করেন। ২০০৪ সালে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পরে দ্বীপের একীভূতকরণের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এ পরিকল্পনাটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। কিন্তু, উভয় পক্ষের জাতীয়তাবাদীরা এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের জন্য প্রচারণা চালায়। এতে তুর্কি সাইপ্রিয়টরা এই পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও গ্রীক সাইপ্রিওটদের অধিকাংশই এটি প্রত্যাখ্যান করে।
রাজনীতি
উত্তর সাইপ্রাস একটি আধা রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, যেখানে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। দেশটিতে বহুদলীয় রাজনীতি বিদ্যমান। কার্যনির্বাহী ক্ষমতা সরকার প্রয়োগ করে। আইনি ক্ষমতা সরকার এবং প্রজাতন্ত্রের আইনসভা (অ্যাসেম্বলি) উভয়েরই উপর ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী এবং আইনসভা থেকে স্বাধীন।
রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি এরসিন তাতার আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেন উনাল উস্তেল। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি হল প্রজাতন্ত্রের আইনসভা, যেখানে ৬ নির্বাচনী জেলা থেকে সমানুপাতিক হারে ৫০ জন সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে ডানপন্থী ন্যাশনাল ইউনাইটি পার্টি বিধানসভায় সর্বাধিক আসন লাভ করে। বর্তমান দেশটিতে ন্যাশনাল ইউনাইটি পার্টি এবং মধ্যপন্থী পিপলস পার্টির একটি জোট সরকার বিদ্যমান।[১২]
উত্তর সাইপ্রাসের বিচ্ছিন্নতা এবং তুর্কি সমর্থনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে দেশের রাজনীতিতে তুরস্কের উচ্চ পর্যায়ের প্রভাব রয়েছে। এর ফলে অনেক বিশেষজ্ঞ একে তুরস্কের একটি কার্যকর পুতুল রাষ্ট্র (পাপেট স্টেট) হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।[১৩][১৪][১৫] অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য উত্তর সাইপ্রাসের নির্বাচন ও নিয়োগের স্বতন্ত্র পদ্ধতি এবং তুর্কি সাইপ্রিয়ট সরকার ও তুর্কি সরকারের মধ্যে বিরোধের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, উত্তর সাইপ্রাসের জন্য "পুতুল রাষ্ট্র" বিশেষণটি সঠিক নয়।
বৈদেশিক সম্পর্ক
তুরস্ক ছাড়া আর কোনো দেশ উত্তর সাইপ্রাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।[১৩][১৬][১৭][১৮] জাতিসংঘ একে সাইপ্রাসের তুরস্ক অধিকৃত অংশ হিসেবে দেখে।[১৯][২০][২১] উত্তর সাইপ্রাসের স্বাধীনতা ঘোষণার পর প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দেশটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।[২২] কিন্তু জাতিসংঘ দেশটিকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় আন্তর্জাতিক (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের) চাপে দেশ দুটি তাদের স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নেয়।[২৩] জাতিসংঘের ভাষ্য মতে উত্তর সাইপ্রাসের স্বাধীনতা ঘোষণা আইনত অবৈধ।[১৯][২৪]
ভূগোল
উত্তর সাইপ্রাসের আয়তন ৩,৩৫৫ বর্গকিলোমিটার (১,২৯৫ মা২), যা সাইপ্রাস দ্বীপের প্রায় এক তৃতীয়াংশের সমান। উত্তর সাইপ্রাসের উত্তর সীমান্তের ৭৫ কিলোমিটার (৪৭ মাইল) তুরস্কের সাথে পূর্ব সীমান্তের ৯৭ কিলোমিটার (৬০.৩ মাইল) এবং সিরিয়ার সাথে অবস্থিত। এটি ৩৪° এবং ৩৬° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৩২° এবং ৩৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
উত্তর সাইপ্রাস সংলগ্ন দুইটি উপসাগর রয়েছে: মোরফু উপসাগর এবং ফ্যামাগুস্তা উপসাগর। এছাড়াও সেখানে রয়েছে চারটি অন্তরীপ: অ্যাপোস্টলোস আন্দ্রিয়াস অন্তরীপ, কোরমাকিটিস অন্তরীপ, জেইতিন অন্তরীপ এবং কাসা অন্তরীপ। সরু কাইরেনিয়া পর্বতশ্রেণীটি উত্তর উপকূলরেখা বরাবর অবস্থিত। এই পর্বতমালার মধ্যেই উত্তর সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ- সেলভিলি পর্বত অবস্থিত যার উচ্চতা ১,০২৪ মিটার (৩,৩৬০ ফু)। [২৫]
উত্তর সাইপ্রাসের ৫৬.৭% জমি কৃষি কাজের উপযোগী।[২৬]
প্রশাসনিক বিভাগ
উত্তর সাইপ্রাস ৬টি জেলায় বিভক্ত: লেফকোসা, গাজিমাগুসা, গির্নে, গুজলাইরুট, ইসকেলে এবং লেফকে। ২০১৬ সালে গুজলাইরুট জেলাকে বিভক্ত করে লেফকে জেলা গঠন করা হয়।[২৭]
এছাড়াও দেশটিতে মোট ১২টি উপজেলা আছে যা পাঁচটি বড় জেলার অধীন। দেশটির মোট পৌরসভার সংখ্যা ২৮টি।
জনসংখ্যা
উত্তর সাইপ্রাসের প্রথম আদমশুমারী অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। তখন দেশটির জনসংখ্যা ছিল ২,০০,৫৮৭ জন।[২৯] এরপর ২০০৬ সালের দ্বিতীয় আদমশুমারীতে দেশটির জনসংখ্যা ২,৬৫,১০০ উল্লেখ করা হয়।[৩০][৩১] ২০১১ সালে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের সহায়তায় উত্তর সাইপ্রাসের তৃতীয় আদমশুমারিটি করা হয়েছিল। এতে দেশটির মোট জনসংখ্যা ২,৯৪,৯০৬ উল্লেখ করা হয়।[৩২] বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং স্থানীয় সংবাদপত্র এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। তাদের দাবি, সরকার তুরস্ক থেকে আর্থিক সহায়তা লাভের জন্য জনসংখ্যা কম দেখিয়েছে।
দেশটির প্রায় সবাই তুর্কি ভাষী। তবে, দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজিও বহুল প্রচলিত।
ধর্ম
তুর্কি সাইপ্রিয়টদের অধিকাংশই (৯৯%) সুন্নি মুসলমান।[৩৩] কিন্তু উত্তর সাইপ্রাস একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।[৩৪] এখানকার অনেকেই অ্যালকোহল পান করে। অধিকাংশ তুর্কি সাইপ্রিয়ট মহিলাই মাথা ঢাকে না। অবশ্য, অনেকেই তুর্কি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মাথায় হেড-স্কার্ফ ব্যবহার করে। আবার অনেকেই রক্ষণশীল পোশাক হিসেবে হেড-স্কার্ফ পরিধান করে।[৩৩] এর পরও, ধর্মীয় সংস্কৃতি সমাজে একটি বড় ভূমিকা রাখে। তুর্কি সাইপ্রিয়ট ছেলেদের সাধারণত ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে খৎনা করা হয়।[৩৫]
শিক্ষা
উত্তর সাইপ্রাসের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা -এই স্তরগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। ৫ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক।
উত্তর সাইপ্রাসের হায়ার এডুকেশন প্ল্যানিং এভ্যালুশন অ্যাক্রেডিটেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল (YÖDAK) হল ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্স এজেন্সিস ইন হায়ার এডুকেশন (INQAAHE) এর সদস্য।[৩৬]
২০১৩ সালে উত্তর সাইপ্রাসের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৪ টি দেশের মোট ৬৩,৭৬৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। ২০১৪ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০,০০৪ জনে (১৫,২১০ জন তুর্কি সাইপ্রিয়টস; ৩৬,১৪৮ জন তুর্কি এবং ১৮,৬৪৬ জন আন্তর্জাতিক ছাত্র)।[৩৭][৩৮][৩৯]বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো:
- নেয়ার ইস্ট ইউনিভার্সিটি (এনইইউ)[৪০][৪১]
- গির্নে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি
- মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি-টিআরএনসি
- ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি অব লেফকে
- সাইপ্রাস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
- ইস্টার্ন মেডিটেরানিয়ান ইউনিভার্সিটি (ইএমইউ)
- ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি-টিআরএনসি
- ইউনিভার্সিটি মেডিটেরানিয়ান কার্পাসিয়া
- ইউনিভার্সিটি অব কাইরেনিয়া
এ সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ই ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইস্টার্ন মেডিটেরানিয়ান ইউনিভার্সিটি উচ্চতর শিক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান যেখানে ৩৫টি দেশের সহস্রাধিক শিক্ষক অধ্যাপনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬৮টি দেশের প্রায় ১৫,০০০ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। তুরস্কের উচ্চশিক্ষা পরিষদ উত্তর সাইপ্রাসের মোট ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইস্টার্ন মেডিটেরানিয়ান ইউনিভার্সিটি এবং নেয়ার ইস্ট ইউনিভার্সিটি[৪০][৪১] ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশনের পূর্ণ সদস্য।[৪২] এছাড়াও, ইস্টার্ন মেডিটেরানিয়ান ইউনিভার্সিটি- কমিউনিটি অব মেডিটেরানিয়ান ইউনিভার্সিটিজ, ফেডারেশন ইউনিভার্সিটিস অফ ইসলামিক ওয়ার্ল্ড, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটি এবং ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ গ্রাফিক ডিজাইন অ্যাসোসিয়েশনের একটি পূর্ণ সদস্য।[৪৩] এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ওয়েবমেট্রিক্স প্রণীত রাঙ্কিঙে সাইপ্রাস দ্বীপের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।[৪৪] উত্তর উপকূলবর্তী কাইনেরিয়ার গির্নে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যান্টেরবারিতে একটি ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে,[৪৫] যা ২০১০ সালে ব্রিটিশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃতি পায়।[৪৬]
উত্তর সাইপ্রাস নিয়মিত আন্তর্জাতিক রোবোকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ২০১৩ সালে তারা এ প্রতিযোগিতায় ২০ দলের মধ্যে ১৪ তম স্থান অধিকার করে।[৪৭][৪৮] দেশটির সুপার কম্পিউটার রয়েছে যার সাহায্যে এটি সিইআরএন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল যা হিগস বোসন কণা আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করে।[৪৯] ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সৌরচালিত যানবাহনের সোলার চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে উত্তর সাইপ্রাস অন্যতম।[৫০]
সংস্কৃতি
সাহিত্য
উত্তর সাইপ্রাসে সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম হল কবিতা। দেশটির কবিতায় তুর্কি সাহিত্য এবং সাইপ্রাস দ্বীপের সংস্কৃতির পাশাপাশি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের প্রভাব লক্ষণীয়।[৫১] দেশটির কবি ওসমান তুর্কায় দুই বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন।[৫২]
চলচ্চিত্র
২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আনাহতার (চাবি) ছিল উত্তর সাইপ্রাসে নির্মিত প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।[৫৩] উত্তর সাইপ্রাস, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং নেদারল্যান্ডের সহ-প্রযোজনায় নির্মিত Kod Adı Venüs[৫৪] (কোড নেম ভেনাস) ২০১২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল।[৫৫] ২০০৩ সালে পরিচালক ডার্ভিজ জাইমের চলচ্চিত্র Mud (Çamur) ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ইউনেস্কো পুরস্কার জিতেছিল।
তুর্কি সাইপ্রিয়ট সাংবাদিক ফেভি ট্যাপান্নার পরিচালিত ডকুমেন্টারি ফিল্ম Kayıp Otobüs (দ্য মিসিং বাস) টিআরটি টিভিতে প্রচারিত হয়েছিল এবং ২০১১ সালের বোস্টন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছিল। চলচ্চিত্রটি এগারো তুর্কি সাইপ্রিয়ট শ্রমিককে নিয়ে লেখা যারা ১৯৬৪ সালে তাদের বাড়ি ছেড়ে বাসে চড়ে রওনা হয়েছিল কিন্তু আর ফিরে আসেনি। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সাইপ্রাসের একটি কূপে তাদের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল।[৫৬][৫৭]
খেলাধুলা
উত্তর সাইপ্রাসে পাঁচটি স্টেডিয়াম রয়েছে যার প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৭,০০০ থেকে ৩০,০০০ এর মধ্যে। উত্তর সাইপ্রাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাটি হচ্ছে ফুটবল। দেশটিতে মোট ২৯টি ক্রীড়া ফেডারেশন আছে যাতে প্রায় ১৩,৯৫০ জন নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে।[৫৮] দেশটির ফুটবল দল এলো র ্যাংকিংয়ে ১০৭ তম অবস্থানে রয়েছে।[৫৯] দেশটির বিলিয়ার্ড ফেডারেশন ইউরোপীয় বিলিয়ার্ড ফেডারেশনের সদস্য।[৬০] তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকায় তারা অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার সদস্য হতে পারেনি। এমনকি অলিম্পিকেও দেশটি অংশ নিতে পারে না। তবে দেশটির অনেকেই অন্য দেশের (প্রধানত, তুরস্কের) হয়ে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে থাকে।
গ্রন্থপঞ্জি
- Langdale, Allan (২০১২)। In a Contested Realm: an Illustrated Guide to the Archaeology and Historical Architecture of Northern Cyprus। Grimsay Press। আইএসবিএন 978-1845301286।
- North Cyprus – a Pocket-Guide। Rustem Bookshop, Nicosia। ২০০৬। আইএসবিএন 9944-968-03-X।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
সরকারি
- উত্তর সাইপ্রাসের আইনসভা
- উত্তর সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতির দপ্তর
- আঙ্কারায় উত্তর সাইপ্রাসের দূতাবাস
- উত্তর সাইপ্রাসের কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অন্যান্য
- Embargoed!, a non-profit association campaigning against the total economic embargo imposed on the population of Northern Cyprus.
- ATCA News, Association of Turkish Cypriots Abroad ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে
- Northern Cyprus Home Page
- "Islamic Conference's Parliaments to Call TRNC 'Cyprus Turkish State'" JTW
- International Expert Panel for a European Solution in Cyprus
- UK All Party Parliamentary Group for Cyprus
- Timeline of Cyprus issue by BBC
- Assembly of Turkish American Associations
- Turkish Cypriots of Australia – Historical Book ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে
- EU task-force on Turkish Cypriot community