ওড়িশা
ওড়িশা (ওড়িয়া: ଓଡ଼ିଶା, উচ্চারণ [oɽiˈsa] (ⓘ), পূর্বনাম উড়িষ্যা) ভারতের একটি রাজ্য, পূর্ব ভারতে এর অবস্থান। রাজ্যটি পর্যটকমহলে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। ওড়িয়া এ রাজ্যের প্রধান ভাষা। ওড়িশার উত্তরে ঝাড়খণ্ড, উত্তর-পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমে ছত্তিশগড়।
ওড়িশা ଓଡ଼ିଶା | |
---|---|
রাজ্য | |
ভারতে ওড়িশার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক (ভুবনেশ্বর): ২০°০৯′ উত্তর ৮৫°৩০′ পূর্ব / ২০.১৫° উত্তর ৮৫.৫০° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
অঞ্চল | পূর্ব ভারত |
প্রতিষ্ঠিত | ১ এপ্রিল ১৯৩৬ |
রাজ্যের রাজধানী | ভুবনেশ্বর |
বৃহত্তম শহর | ভুবনেশ্বর[১] |
জেলা | ৩০ |
সরকার | |
• শাসক | ওড়িশা সরকার |
• রাজ্যপাল | গণেশী লাল |
• মুখ্য মন্ত্রী | নবীন পট্টনায়ক (বিজেডি) |
• বিধান সভা | এককক্ষবিশিষ্ট (১৪৭ আসন) |
• সংসদীয় আসন | ২১ লোকসভা[২] |
• উচ্চ আদালত | ওড়িশা উচ্চ আদালত, কটক |
আয়তন | |
• মোট | ১,৫৫,৭০৭ বর্গকিমি (৬০,১১৯ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ৮ম |
জনসংখ্যা (২০১৮) | |
• মোট | ৪,৫৯,৮৯,২৩২ |
• ক্রম | ১১তম |
বিশেষণ | ওড়িয়া |
সময় অঞ্চল | ভারত মান সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-OR |
মানব উন্নয়ন সূচক | ০.৩৬২ (নিম্ন) |
এইচডিআই ক্রম | ২২তম (২০০৭-২০০৮)[৩] |
সাক্ষরতা | ৭৩.৪৫% |
সরকারি ভাষা | ওড়িয়া |
ওয়েবসাইট | odisha.gov.in |
প্রতীক of ওড়িশা | |
ভাষা | ওড়িয়া |
সংগীত | বন্দে উৎকল জননী |
নৃত্য | ওড়িশি |
প্রাণী | সম্বর হরিণ[৪] |
পাখি | নীলকণ্ঠ পাখি[৫] |
ফুল | অশোক[৬] |
বৃক্ষ | অশ্বত্থ[৭] |
পরিচ্ছদ | শাড়ি (নারী) |
ব্যুৎপত্তি
ওড়িশা শব্দটি প্রাকৃত শব্দ "ওড্ড বিষয়" (বা "উড্র বিভাষ" বা "ওড্র বিভাষ") থেকে এসেছে। প্রাকৃত শব্দটি ১০২৫ সালের প্রথম রাজেন্দ্র চোলের তিরুমালাই শিলালিপিতে পাওয়া যায়।[৮] সরলা দাস, যিনি পঞ্চদশ শতকে ওড়িয়া ভাষায় মহাভারতের অনুবাদ করেছিলেন, ওড়িশাকে "ওড্র রাষ্ট্র" বলে অভিহিত করেছেন। পুরীর মন্দিরের দেওয়াল লিখনে গজপতি রাজ্যের (১৪৩৫–১৪৬৭) কপিলেন্দ্র দেব অঞ্চলটিকে "ওড়িশা" বা "ওড়িশা রাজ্য" বলে অভিহিত করেছেন।[৯]
ভূগোল
ওড়িশার উত্তরে ঝাড়খণ্ড, উত্তর-পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমে ছত্তিশগড় অবস্থিত।
জলবায়ু
ওড়িশা রাজ্যে চারটি আবহাওয়া সংক্রান্ত ঋতু লক্ষ্য করা যায়: শীত (জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি), প্রাক-মৌসুমি (মার্চ–মে), দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি (জুন–সেপ্টেম্বর) এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমি (অক্টোবর–ডিসেম্বর). তবে বঙ্গের মতো ওড়িশায় স্থানীয়ভাবে একটি বছরকে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত–এই ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হয়।[১০]
বিভিন্ন আবহাওয়া স্টেশনের গড় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ[১১] | ||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ভুবনেশ্বর (১৯৫২–২০০০) | বালেশ্বর (১৯০১–২০০০) | গোপালপুর (১৯০১–২০০০) | সম্বলপুর (১৯০১–২০০০) | |||||||||
সর্বোচ্চ (সেলসিয়াস) | সর্বনিম্ন (সেলসিয়াস) | বৃষ্টিপাত (মিমি) | সর্বোচ্চ (সেলসিয়াস) | সর্বনিম্ন (সেলসিয়াস) | বৃষ্টিপাত (মিমি) | সর্বোচ্চ (সেলসিয়াস) | সর্বনিম্ন (সেলসিয়াস) | বৃষ্টিপাত (মিমি) | সর্বোচ্চ (সেলসিয়াস) | সর্বনিম্ন (সেলসিয়াস) | বৃষ্টিপাত (মিমি) | |
জানুয়ারি | 28.5 | 15.5 | 13.1 | 27.0 | 13.9 | 17.0 | 27.2 | 16.9 | 11.0 | 27.6 | 12.6 | 14.2 |
ফেব্রুয়ারি | 31.6 | 18.6 | 25.5 | 29.5 | 16.7 | 36.3 | 28.9 | 19.5 | 23.6 | 30.1 | 15.1 | 28.0 |
মার্চ | 35.1 | 22.3 | 25.2 | 33.7 | 21.0 | 39.4 | 30.7 | 22.6 | 18.1 | 35.0 | 19.0 | 20.9 |
এপ্রিল | 37.2 | 25.1 | 30.8 | 36.0 | 24.4 | 54.8 | 31.2 | 25.0 | 20.3 | 39.3 | 23.5 | 14.2 |
মে | 37.5 | 26.5 | 68.2 | 36.1 | 26.0 | 108.6 | 32.4 | 26.7 | 53.8 | 41.4 | 27.0 | 22.7 |
জুন | 35.2 | 26.1 | 204.9 | 34.2 | 26.2 | 233.4 | 32.3 | 26.8 | 138.1 | 36.9 | 26.7 | 218.9 |
জুলাই | 32.0 | 25.2 | 326.2 | 31.8 | 25.8 | 297.9 | 31.0 | 26.1 | 174.6 | 31.1 | 24.9 | 459.0 |
আগস্ট | 31.6 | 25.1 | 366.8 | 31.4 | 25.8 | 318.3 | 31.2 | 25.9 | 195.9 | 30.7 | 24.8 | 487.5 |
সেপ্টেম্বর | 31.9 | 24.8 | 256.3 | 31.7 | 25.5 | 275.8 | 31.7 | 25.7 | 192.0 | 31.7 | 24.6 | 243.5 |
অক্টোবর | 31.7 | 23.0 | 190.7 | 31.3 | 23.0 | 184.0 | 31.4 | 23.8 | 237.8 | 31.7 | 21.8 | 56.6 |
নভেম্বর | 30.2 | 18.8 | 41.7 | 29.2 | 17.8 | 41.6 | 29.5 | 19.7 | 95.3 | 29.4 | 16.2 | 17.6 |
ডিসেম্বর | 28.3 | 15.2 | 4.9 | 26.9 | 13.7 | 6.5 | 27.4 | 16.4 | 11.4 | 27.2 | 12.1 | 4.8 |
সরকার ব্যবস্থা ও রাজনীতি
১৯৪৬ সালে রাজ্যের গঠনের পর প্রারম্ভিক ৩০ বছর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বেশিরভাগ সময় ক্ষমতায় ছিল। বর্তমানে বিজু জনতা দল ২০০০ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে।
রাজ্যে ২১টি লোকসভা আসন রয়েছে। তারমধ্যে ১২টি আসন বিজু জনতা দলের অধীনে। ৮টি ভারতীয় জনতা পার্টি-র দখলে এবং একটি কংগ্ৰেস।
২০১৯-এ ১৪৭ আসনের বিধানসভা নির্বাচনের পর ১১২টি আসন বিজু জনতা দলের অধীনে এবং ২৩টি ভারতীয় জনতা পার্টি-র দখলে।
বিভাগ ও জেলা
ওড়িশায় মোট ৩ টি বিভাগ ও ৩০টি জেলা রয়েছে।
উত্তর ওড়িশা বিভাগ (সদর দপ্তর- সম্বলপুর) | কেন্দ্রীয় ওড়িশা বিভাগ (সদর দপ্তর- কটক) | দক্ষিণ ওড়িশা বিভাগ (সদর দপ্তর- ব্রহ্মপুর) |
---|---|---|
জনপরিসংখ্যান
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
শিক্ষা
বিজ্ঞান
- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চ, ব্রহ্মপুর
- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চ, জাতানি
চিকিৎসা বিজ্ঞান
কারিগরি
- ভারতীয় প্রৌদ্যোগিকী সংস্থান, ভুবনেশ্বর
- রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান, রাউরকেলা
- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি, ভুবনেশ্বর
আইন
- ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি, কটক
ব্যাবস্থাপনা
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, সম্বলপুর
অন্যান্য
কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, ভুবনেশ্বর
সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি-র আওতাধীন ওড়িশা উপকূলবর্তী চাঁদিপুর-এ আব্দুল কালাম দ্বীপ-এ ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জের (আইটিআর) লঞ্চ কমপ্লেক্স রয়েছে। এখানথেকে ক্ষেপণাস্রের পরীক্ষা চালানো হয়।
সংস্কৃতি
খাদ্যাভাস ও রন্ধনপ্রণালী
ওড়িশাতে মাছ সর্বগৃহীত প্রধান খাদ্য। মিষ্টি জাতীয় খাবার ওড়িশার বেশ জনপ্রিয়।
নৃত্য
ওডিসি (ওড়িসি) নাচ এবং সংগীত শাস্ত্রীয় শিল্পের ফর্ম। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে ওডিসি ভারতের প্রাচীনতম বেঁচে থাকা নাচের রূপ [১৩]। ওডিসির ২,০০০ বছরের দীর্ঘ ও অবিচ্ছিন্ন ঐতিহ্য রয়েছে । ভারতমুনির নাট্যশাস্ত্রে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রিটিশ আমলে নাচের রূপটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। কয়েকজন গুরু দ্বারা ভারতের স্বাধীনতার পরে এর পুনরুদ্ধার করা হয়।নৃত্যের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে রয়েছে ঘুমুরা নৃত্য, মহারী নৃত্য, ডালখাই এবং গোটিপুয়া।
বালি শিল্প
ওড়িশার উপকূলীয় অংশে বালুশিল্প বিশ্বজোড়া প্রসিদ্ধ। পুরী সমুদ্র উপকূলে মূলত এই শিল্পের ব্যাপক চলন রয়েছে। ওড়িশার বিখ্যাত বালুশিল্পীর একজন সুদর্শন পট্টনায়েক। ২০১৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী পেয়েছেন। পুরীতে গড়েছেন তার ‘স্যান্ড আর্ট ইনস্টিটিউট’। এখানে বালুশিল্পের ওপর পড়াশোনা করানো হয়। ওড়িশা পর্যটন দফতর আয়োজিত কোণার্ক সূর্য মন্দির-এর কাছে আন্তর্জাতিক বালু শিল্প উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই স্যান্ড আর্ট ফেস্টিভ্যালে যোগ দেয় ৯টি দেশের অন্তত ৭০ জন প্রতিনিধি। [১৪]
চলচ্চিত্র
ওড়িয়া ভাষায় পূর্বে শব্দহীন কথাচিত্ৰ নিৰ্মাণ করা হত । মোহন সুন্দর দেব গোস্বামীর নির্দেশনায় রামায়ণের কাহিনীর উপর নির্ভর করে ১৯৩৬ সালে নির্মিত হয় প্ৰথম ওড়িয়া কথাছবি সীতা বিবাহ। এটির গল্প কামপাল মিশ্ৰ রচিত একটি নাটক থেকে নেয়া হয়েছিল । মাত্ৰ ৩০,০০০ টাকায় নিৰ্মীত এই ছবিতে ১৪ টি গান ছিল ।
খেলাধুলা
ওড়িশায় বিবিধ খেলাধুলা প্রচলিত। এখানে ভুবনেশ্বর শহরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক হকির প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। হকি ইন্ডিয়া লীগ-এর কলিঙ্গ ল্যান্সার্স দলের ঘরের মাঠও এটি। এছাড়া কটক শহরের বড়বাটি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
পরিবহন ব্যবস্থা
আকাশপথে
বিজু পট্টনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাজ্যের প্রধান ও একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখান থেকে কুয়ালালামপুর পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে।
রেলপথ
পূর্ব উপকূলীয় রেল-এর সদর দপ্তর এই রাজ্যের ভুবনেশ্বর শহরে অবস্থিত।