দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি
দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি বা সিওপিডি বলতে ফুসফুসের কিছু রোগকে বোঝায় যার কারণে ফুসফুসে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যার সৃষ্টি হয়। একে ইংরেজি পরিভাষায় ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (Chronic obstructive pulmonary disease, সংক্ষেপে COPD) বলে। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল শ্বাসকষ্ট এবং কাশির সাথে কফ বের হওয়া। লক্ষণগুলি সময়ের সাথে সাথে আরও ক্ষতিকর হয়ে উঠে। হাঁটাচলা করা বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা কষ্টকর হয়ে উঠে। সর্বাধিক পরিচিত দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি হল ক্লোমস্ফীতি বা কলাবায়ুস্ফীতি (এমফাইসিমা, Emphysema) এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লোমনালীপ্রদাহ (ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, chronic bronchitis), তবে এদেরকে বর্তমানে আর আলাদা করে দেখা হয় না। হোমিওপ্যাথিতে এই রোগ নিরাময়ের স্থায়ী চিকিৎসা রয়েছে।
দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি | |
---|---|
প্রতিশব্দ | ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ লাং ডিজিজ (COLD), ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ এয়ারওয়ে ডিজিজ (COAD), ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, এমফাইসিমা, পালমোনারি এমফাইসিমা ইত্যাদি |
সামগ্রিক রোগবিজ্ঞান এখানে সেন্ট্রিলোবিওলার এমফাইসিমা দেখা যাছে যা ধূমপান এর ফলে সাধারণত হয়। এখানে ফুসফুসের সমান্তরাল ব্যবছেদ চিত্রে অনেকগুলি গহ্বর যা কালো কার্বন কণায় ভর্তি। | |
বিশেষত্ব | ফুসফুসবিজ্ঞান |
লক্ষণ | শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী কাশি[১] |
জটিলতা | দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, পালমোনারি হৃদরোগ, নিউমোথোরাক্স[২][১] |
রোগের সূত্রপাত | ৩৫ বছরের বেশি বয়সী[১] |
স্থিতিকাল | দীর্ঘ মেয়াদী[১] |
কারণ | তামাক ধূমপান, বায়ু দূষণ, বংশগত[৩] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | স্পাইরোমেট্রি[৪] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের অকৃতকার্যতা, ব্রঙ্কাইক্টেসিস, যক্ষ্মা, অবলিটারেটিভ ব্রঙ্কিওলাইটিস, প্যানব্রঙ্কিওলাইটিস ছড়িয়ে পড়া[৫] |
প্রতিরোধ | ধূমপান বন্ধ করা, ভিতর এবং বাহিরের বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণ, তামাক নিয়ন্ত্রণ[৩][৬] |
চিকিৎসা | পালমোনারি পুনর্বাসন, দীর্ঘমেয়াদী অক্সিজেন থেরাপি, ফুসফুসের ভলিউম হ্রাস[৬] |
ঔষধ | ইনহেলার ব্রঙ্কোডাইলেটর ও স্টেরয়েড[৬] |
সংঘটনের হার | ১৭৪.৫ মিলিয়ন (২০১৫)[৭] |
মৃতের সংখ্যা | ৩.২ মিলিয়ন (২০১৯)[৩] |
রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
- কাশি
- শ্বাসকষ্ট
- শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় শব্দ হওয়া
- কাশির সাথে শ্লেষ্মা নির্গত হওয়া
- হাঁটাচলা করলে হয়রান হয়ে যাওয়া
ধূমপানও এই অসুখের জন্য দ্বায়ী। এ ছাড়া বায়ুদূষণ, ধুলা, ধোঁয়া ইত্যাদি ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি করে, যা সিওপিডির কারণ। এ রোগের কারণে ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হয়।[৮]
কাশি
গলা বা শ্বাসনালিতে ক্ষতিকর/উত্তেজক কোনো পদার্থের উপস্থিতির কারণে কাশি হয়ে থাকে। এই ক্ষতিকর/উত্তেজক পদার্থের উপস্থিতির কারণে মস্তিষ্ক থেকে তলপেট ও বুকের পেশীতে সংকেত পৌঁছায় যাতে ফুসফুস থেকে প্রবল বাতাস বা নিঃশ্বাসের সাহায্যে উত্তেজক পদার্থটি বের হয়ে আসে।
কাশি হলো এমন একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা আকস্মিকভাবে হয়ে থাকে ও যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে শ্বাসনালি থেকে যে কোনো দূষিত পদার্থ ও জীবাণু বাইরে বেরিয়ে আসে। কাশির এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত তিনটি পর্যায়ে হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে আমরা শ্বাস গ্রহণ করি, দ্বিতীয় পর্যায়ে বাতাস আবদ্ধ শ্বাসরন্ধ্রে চাপ সৃষ্টি করে এবং তৃতীয় ও শেষ পর্যায়ে ফুসফুস থেকে আবদ্ধ শ্বাসরন্ধ্রের ভেতর দিয়ে জোরপূর্বক সশব্দে বাতাস বেরিয়ে আসে, যাকে আমরা কাশি বলে থাকি। কাশি ইচ্ছাকৃত বা স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারে। কাশি বা কফ স্বল্পদিনের জন্য হলে তা দেহের তেমন কোনো ক্ষতি করে না। তবে এটি কয়েক সপ্তাহ বা এর বেশিদিন স্থায়ী হলে ও কফের সাথে রক্ত গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কাশি দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে তা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে, যেমন- নিদ্রাহীনতা, মাথাব্যথা, মূত্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসামর্থ্য হওয়া ও পাঁজরের ক্ষতি।