র্যনে দেকার্ত
র্যনে দেকার্ত[১৫] (ফরাসি: René Descartes) একজন ফরাসি দার্শনিক, গণিতজ্ঞ এবং বিজ্ঞানী ছিলেন।তিনি পাশ্চাত্য দর্শনে আধুনিক দর্শনের জনক হিসেবে স্বীকৃত।[১৬][১৭] তিনি একজন দ্বৈতবাদী দার্শনিক ছিলেন। তাছাড়া তিনি জ্যামিতি ও বীজগণিতের মধ্যকার সম্পর্ক নিরূপণ করেন, যার দ্বারা বীজগণিতের সাহায্যে জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান সম্ভব হয় (স্থানাঙ্ক জ্যামিতি)। তিনি বস্তু সম্পর্কে এক নতুন ধারণা দেন।
র্যনে দেকার্ত | |
---|---|
জন্ম | লা হায়ে অ ত্যুরাইন, ফ্রান্স রাজত্ব | ৩১ মার্চ ১৫৯৬
মৃত্যু | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৬৫০ স্টকহোম, সুইডিশ সাম্রাজ্য | (বয়স ৫৩)
জাতীয়তা | ফ্রেঞ |
শিক্ষা |
|
যুগ | 17th-century philosophy |
অঞ্চল | পশ্চিমা দর্শন |
ধারা | |
প্রধান আগ্রহ | অধিবিদ্যা, জ্ঞানতত্ত্ব, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান |
উল্লেখযোগ্য অবদান |
|
ভাবগুরু
| |
ভাবশিষ্য
| |
স্বাক্ষর | |
জন্ম ও শৈশব
দেকার্ত ১৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ শে মার্চ লা হায়ে অ ত্যুরাইন এ জন্ম গ্রহণ করেণ। তার পিতা জোয়াকিম দেকার্ত এবং মাতা জান ব্রোশার। তার আরো এক ভাই (পিয়ের) ও এক বোন (জান) ছিল। দেকার্তের পিতা একধারে একজন উকিল ও ম্যাজিস্ট্রট ছিলেন, ফলে সংসারে তিনি বেশি সময় দিতে পারতেন না। জান ব্রোশার দেকার্তের জন্মের দুই মাস পর মে মাসে মারা যান; তখন দেকার্ত এবং তার অন্য দুই ভাই ও বোন লা এ-তে তাদের দাদীর কাছে চলে যান। জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় বাস করেছেন।
শিক্ষা
প্রায় দশ বছর বয়সে ১৬০৬ সালে দেকার্তকে কলেজ রইয়াল অঁরি-ল্য-গ্রঁ (ফরাসি Collège Royal Henry-Le-Grand) জেসুইট কলেজে পাঠানো হয়। তিনি সেখানে ১৬১৪ সাল পর্যন্ত পড়েন এবং ১৬১৫ সালে পোয়াতিয়ে (Poitiers) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একবছর পর তিনি ধর্মীয় অনুশাসন ও দেওয়ানি আইনে বাকালোরেয়া (baccalauréat, অর্থাৎ "উচ্চ-মাধ্যমিক সনদ") ও লাইসেন্স লাভ করেন।
কর্মজীবন
তরুণ বয়সেই মানুষ এবং মহাবিশ্বের স্বরূপ জানার জন্য একটি অন্তর্দৃষ্টি পাবার প্রবল ইচ্ছা জাগে তার মনে। গভীর অধ্যয়নের পরে দেকার্ত এই সিদ্ধান্তে আসেন যে ইউরোপীয় মধ্যযুগ থেকে যে জ্ঞান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এসেছে তা খুব নির্ভরযোগ্য নয়। তিনি ঠিক করলেন সারা ইউরোপ ঘুরে বেড়াবেন, ঠিক যেমন সক্রেটিস অ্যাথেন্সের লোকের সাথে কথা বলে জীবন কাটিয়েছিলেন। এ কারণে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধে চলে গেলেন তিনি, তার ফলে মধ্য ইউরোপে কিছু দিন থাকার সুযোগ হল তার।[১৮] সেনাবাহিনীতে তিনি কী করতেন তা সঠিক ভাবে জানা যায় না। ১৬১৯ সালে তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন। এর পর প্যারিসে কাটান কিছু বছর, তারপর ১৬২৯ সালে চলে যান হল্যান্ড। সেখানে গণিত আর দর্শন বিষয়ক লেখালেখি নিয়ে কাটিয়ে দেন প্রায় বিশ বছর। ১৬৪৯ সালে রাণী ক্রিস্টিনার আমন্ত্রনে সুইডেন যান এবং সেখানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের শীতকালে মৃত্যুবরণ করেন।
দর্শন
দেকার্ত দার্শনিক সমস্যা সমাধানের একটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেন। দেকার্তের মত অনুযায়ী, কোনো কিছুকে পরিষ্কারভাবে এবং ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত আমরা সেটাকে সত্য বলে ধরে নিতে পারি না। সেজন্য, কোনো জটিল সমস্যাকে যতগুলো সম্ভব একক সমস্যায় ভেঙে নেওয়া বা ছোট করে নেওয়া দরকার। তখন সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ ভাব থেকে আমরা চিন্তা শুরু করতে পারি। দেকার্ত বিশ্বাস করতেন দর্শনের অগ্রসর হওয়া উচিত সরল থেকে জটিলের দিকে।
দেকার্ত বললেন যে দুই ধরনের বাস্তবতা বা সারবস্তু রয়েছে। একটি সারবস্তু হচ্ছে চিন্তা বা মন অন্যটি ব্যাপ্তি বা বস্তু। মন পুরোপুরি সচেতন এবং স্থানগত দিক দিয়ে কোনো জায়গা দখল করে না, ফলে এটাকে ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত করা যায় না। অন্যদিকে বস্তু জায়গা দখল করে এবং একে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা চলে। বস্তুর কোনো চেতনা নেই। দেকার্তের মতে দুই সারবস্তুই ঈশ্বর থেকে এসেছে, যদিও এ দুই সারবস্তুর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এজন্য দেকার্তকে দ্বৈতবাদী বলা হয়।