ওলন্দাজ ভাষা
ওলন্দাজ ভাষা (ওলন্দাজ: Nederlands নেডর্লান্ট্স্) ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের জার্মানীয় শাখার পশ্চিম জার্মানীয় দলের একটি সদস্য ভাষা। এই ভাষাতে মূলত নেদারল্যান্ড্স এবং বেলজিয়ামের উত্তর অর্ধের ফ্লান্ডার্স অঞ্চলের প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ লোক কথা বলেন। বেলজিয়ামে প্রচলিত ওলন্দাজ ভাষার উপভাষাটি ফ্লেমিশ ভাষা নামে পরিচিত। ওলন্দাজ ভাষা ও নিম্ন জার্মান ভাষার মধ্যে একটি ঔপভাষিক ধারাবাহিকতা বিদ্যমান, ফলে এই দুই ভাষার মধ্যে কোন স্পষ্ট সীমানা নেই। এ কারণে কিছু কিছু জার্মান উপভাষা তাই আদর্শ জার্মান ভাষার চেয়ে ওলন্দাজ ভাষার সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ।
ওলন্দাজ | |
---|---|
Nederlands নেডর্লান্ট্স্ | |
দেশোদ্ভব | নেদারল্যান্ড্স, বেলজিয়াম, সুরিনাম, আরুবা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, পূর্ব গুয়ানা |
মাতৃভাষী | ২ কোটি ২০ লক্ষ (২০০৫) |
ইন্দো-ইউরোপীয়
| |
লাতিন লিপি (ওলন্দাজ বর্ণমেলা) | |
সরকারি অবস্থা | |
সরকারি ভাষা | আরুবা বেলজিয়াম নেদারল্যান্ড সুরিনাম |
নিয়ন্ত্রক সংস্থা | Nederlandse Taalunie (ওলন্দাজ ভাষা মন্ত্রণাসভা) |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-১ | nl |
আইএসও ৬৩৯-২ | dut (বি) nld (টি) |
আইএসও ৬৩৯-৩ | nld |
নেদারল্যান্ড্স ও বেলজিয়াম ছাড়াও ফ্রান্সের উত্তরতম অংশেও ওলন্দাজ ভাষা প্রচলিত। সেখানে এটি ভ্লাম্স নামে পরিচিত। ক্যারিবীয় সাগরের আরুবা ও নেদারল্যান্ড্স অ্যান্টিল দ্বীপপুঞ্জে ইংরেজি ও পাপিয়ামেন্তো ভাষার পাশাপাশি ওলন্দাজ ভাষা প্রচলিত। সুরিনামের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক লোকের মাতৃভাষা ওলন্দাজ ভাষা। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্পসংখ্যক ওলন্দাজ বক্তা রয়েছে।
ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার
ইন্দোনেশিয়াতে ওলন্দাজরা প্রায় সাড়ে তিনশ' বছর শাসন করেছিল। তবে বর্তমানে দেশটিতে ওলন্দাজ ভাষার কোন সরকারি মর্যাদা নেই।[১] খুবই কম সংখ্যক ইন্দোনেশীয় ওলন্দাজ ভাষায় কথা বলতে পারে, এবং এরা মূলত বৃদ্ধ কিন্তু শিক্ষিত প্রজন্মের লোক। এছাড়া আইনি পেশায় জড়িতরাও ওলন্দাজ ভাষা জানে, কারণ ইন্দোনেশিয়ার কিছু আইন এখনও ওলন্দাজ ভাষাতেই রয়ে গেছে। [২][৩] ইন্দোনেশীয় ভাষা মূলত মালয় ভাষা হলেও এটি ওলন্দাজ ভাষা থেকে দৈনন্দিন জীবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রের বহু শব্দ ধার করেছে।[৪] একজন পণ্ডিতের মতে ইন্দোনেশীয় ভাষার শব্দভাণ্ডারের ২০%-ই ওলন্দাজ থেকে এসেছে।[৫]
শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ ভারতে ওলন্দাজেরা প্রায় দেড়শ বছর ছিল; কিন্তু সেখানে ওলন্দাজ কোন অবশেষ খুঁজে পাওয়া যায় না।
বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার সুরিনামে ওলন্দাজ সরকারি ভাষা[৬] এবং সেখানকার ৫৮% মানুষের মাতৃভাষা। আরও প্রায় ২৮% সুরিনামি লোক ২য় ভাষা হিসেবে ওলন্দাজ ভাষাতে কথা বলতে পারে।[৭] আরুবা, বোনের এবং কুরাকাও দ্বীপগুলিতে ওলন্দাজ সরকারি ভাষা কিন্তু মাত্র ৭ থেকে ৮% লোক মাতৃভাষা হিসেবে এতে কথা বলে। [৮][৯]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে "জার্সি ডাচ" নামের একটি ওলন্দাজ উপভাষা প্রচলিত ছিল। এটি মূলত নিউ জার্সির বার্গেন ও পাসাইক কাউন্টিতে বসতি স্থাপনকারী ওলন্দাজদের বংশধরদের ভাষা ছিল। সর্বশেষ ১৯২১ সাল পর্যন্ত এটির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। [১০]মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কিছু শহর এবং নিউ ইয়র্ক শহরের কিছু এলাকা একদা নতুন নেদারল্যান্ড নামের ওলন্দাজ উপনিবেশের অন্তর্গত ছিল। এসব এলাকার বহু জায়গার নামে তাই ওলন্দাজ ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন নিউ ইয়র্ক শহরের একটি বারো ব্রুকলিনের নামটি ওলন্দাজ Breukelen থেকে, ফ্লাশিং এলাকাটির নাম Vlissingen থেকে, হার্লেম এলাকার নাম Haarlem থেকে, এবং স্টেটেন আইল্যান্ড নামটি ওলন্দাজ Staten Island থেকে এসেছে। নতুন নেদারল্যান্ডের শেষ ডিরেক্টর-জেনারেল পিটার স্টয়ভেসান্টের নামে নিউ ইয়র্ক শহরের একটি রাস্তা, একটি পাড়া, এবং কিছু স্কুলের নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া স্টয়ভেসান্ট নামের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে একটি শহরও আছে।
ওলন্দাজ ভাষার ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার সবচেয়ে বেশি যে দেশটিতে পরিলক্ষিত হয়, তা হল দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকাতে বহুসংখ্যক ওলন্দাজ কৃষক বসতি স্থাপন করে। এরা বুর (Boer অর্থাৎ "কৃষক") নামে পরিচিত ছিল এবং এরা ওলন্দাজ ভাষার একটি সরল রূপে কথা বলত, যার নাম দেয়া হয় আফ্রিকান্স। আফ্রিকান্স ও ওলন্দাজ ভাষাভাষীদের নিজেদের মধ্যে কথা বলতে তেমন কোন সমস্যা হত না। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওলন্দাজ উপনিবেশগুলি যুক্তরাজ্যের হাতে চলে গেলে এই ওলন্দাজ বসতিস্থাপকেরা দেশের অভ্যন্তরে চলে যায়। ২০০৫ সাল নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রায় ১ কোটি লোক ছিল, যার মাতৃভাষা বা ২য় ভাষা আফ্রিকান্স। [১১][১২]
গ্রন্থপঞ্জি
- Ammon, Ulrich (২০০৫)। Sociolinguistics।
- Baker, Colin (১৯৯৮)। Encyclopedia of Bilingualism and Bilingual Education। Multilingual Matters।
- Booij, G.E. (১৯৯৫)। The Phonology of Dutch।
- Sneddon, James (২০০৩)। The Indonesian Language: Its History and Role in Modern Society। UNSW Press।