মেঘলা চিতা
মেঘলা চিতা (ইংরেজি: Clouded Leopard, বৈজ্ঞানিক নাম: নিওফেলিস নেবুলোসা) বা লাম চিতা, যা ফুলেশ্বরী বাঘ বা গেছো বাঘ নামেও পরিচিত (বাংলায় সাধারণত গেছো বাঘ নামেই পরিচিত) হল একধরনের বিড়াল জাতীয় প্রাণী যাদের প্রধানত হিমালয়ের পাদদেশে দেখা যায় । এদের প্রধান বিস্তার হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনে। আইইউসিএন এদেরকে সংকটাপন্ন ঘোষণা করেছে। এদের সংখ্যা ১০,০০০ এরও কম এবং সমগ্র পৃথিবীতে প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীর সংখ্যা ১,০০০ এরও কম।[১]
মেঘলা চিতা | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | ভার্টিব্রাটা |
শ্রেণী: | স্তন্যপায়ী |
বর্গ: | শ্বাপদ বর্গ |
পরিবার: | ফেলিডি |
উপপরিবার: | Pantherinae |
গণ: | Neofelis |
প্রজাতি: | N. nebulosa[২] |
দ্বিপদী নাম | |
Neofelis nebulosa (Griffith, 1821) | |
মেঘলা চিতাদের বিস্তার | |
প্রতিশব্দ | |
Felis macrocelis |
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
এদেরকে বড় বিড়াল এবং ছোট বিড়ালদের মধ্যে একটি সংযোগ সৃষ্টিকারী প্রজাতি হিসেবে ধরা হয়। [৪]
গেছো বাঘ সারা বিশ্বে বিরল, বিপন্ন ও দুর্লভ একটি প্রাণী। এখনো এদের সম্পর্কে গবেষকরা খুব বেশি একটা জানেন না। এদের লাম চিতা নামটি এসেছে নেপালি নাম লাম চিতোয়া থেকে। গেছো বাঘ নামের কারণ এদের জীবনের অধিকাংশ সময়ই এরা গাছে কাটায়। আর মেঘলা চিতা এসেছে ইংরেজি নাম ক্লাউডেড লেপার্ড এর বাংলা অর্থ থেকে। ইংরেজিতে ক্লাউডেড লেপার্ড নাম হওয়ার কারণ এদের শরীরের বড় বড় মেঘের আকৃতির ছোপ রয়েছে।
বিবরণ
গেছো বাঘের পিঠের দিকে জলপাই হলুদের ওপর গাঢ় বাদামী লম্বাটে ও গোলাকার বড় বড় চাকতির মতো রয়েছে। মুখে ও পেটে কালো ছোপ রয়েছে; লেজে কালো ছোপ বা বলয় রয়েছে। এদের পেট সাদাটে। পুরুষ বাঘ স্ত্রী বাঘ অপেক্ষা আকারে বড় হয়। মাথাসহ এদের দেহের দৈর্ঘ্য ৯৫ থেকে ১২০ সেমি এবং লেজ ৭৫-৮৫ সেমি। মোটা ও লম্বা লেজ এদের সহজেই গাছের ডালে হাঁটাচলা ও লাফানোর সময় ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। দেহের তুলনায় এদের মাথা বড়। থাবাগুলোও বড়। কিন্তু পাগুলো খাটো। ওজনে এরা ১৭-২০ কেজি হয়।
গেছো বাঘের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এদের মুখের উপরের পাটির বিশাল দুটি শ্বদন্ত। দেহের অনুপাতে অন্য কোন বিড়াল প্রজাতির এতো বড় দাঁত নেই!
এদের থাবা বড় হওয়ার ফলে দুই পা দিয়ে এরা গাছে ঝুলে থাকতে পারে যা অন্য কোন বিড়াল প্রজাতি পারে না। নামার সময় মাথা খাড়াভাবে নিচু করে নামতে পারে। এদের
শরীর গাছে চড়া ও বিচরণ করার মতে করেই তৈরি। এরা প্রয়োজনে সাঁতার ও কাটতে পারে।
গেছো বাঘ খুবই লাজুক ও নিশাচর বৃক্ষবাসী প্রাণী। বড় গাছের ডালে শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেয় বলে সাধারণত এদের গেছো বাঘ বলে। এরা গভীর ও ঘন ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনাঞ্চলে থাকতে পছন্দ করে। এরা নিভৃতচারী প্রাণী। মানুষের সান্নিধ্য এরা পছন্দ না করলেও খুব তাড়াতাড়ি পোষ মানে। বুনো বাঘকে কিছু দিন খাঁচায় রাখলেই পোষ মানে। সেই কারণেই অতীতে এতদঞ্চলীয় জমিদার ও রাজারা গেছো বাঘ পুষতেন। আসামের চা বাগান মালিকরাও গেছো বাঘ পুষতেন।
বনে এদের জীবনযাপন সম্পর্কে এখনো অনেক তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঘন বনে বিচরণকারী বানর, কাঠবিড়ালি, ইঁদুর, গেছো ইঁদুর, পাখি এদের প্রধান খাদ্য। তবে গাছ থেকে নেমে বুনো শুকর, হরিণ, বুনো ছাগলও শিকার করে। এমনকি পোষা প্রাণীও শিকার করে।পালিত অবস্থায় এরা ১৭ বছর পর্যন্ত বাঁচে। বন্য অবস্থায় ১১-১২ বছর।
এদের প্রজনন ঋতু অক্টোবর-জানুয়ারি। ৮৫-৯৩ দিন গর্ভধারণের পর স্ত্রী গেছো বাঘ গাছের খোড়ল, গুহা, পাহাড়ি ফাটল এরকম কোন নিরাপদ স্থানে ১-৩টি বাচ্চা দেয়। প্রায় ১০ দিন পর বাচ্চাদের চোখ ফোটে। ৫ সপ্তাহ বয়সে এরা মায়ের সাথে বাইরে ঘুরাঘুরি করে। ১০-১২ মাস বয়স পর্যন্ত এরা মায়ের সাথে থাকে। দুই বছর বয়সে এরা প্রজননক্ষম হয়।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের ঘন ও দুর্গম পাহাড়ি বনাঞ্চলে এখনো এরা টিকে রয়েছে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম।[৫]
সুমাত্রা ও বোর্নিওতে প্রাপ্ত সুন্দা মেঘলা চিতাকে ২০০৬ সাল থেকে জিনগত বৈশিষ্ট্যের জন্য আলাদা প্রজাতি হিসেবে হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৬][৭]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- The Clouded Leopard Project ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে
- Smithsonian National Zoological Park: Clouded Leopard Facts
- National Geographic page of the Clouded Leopard
- Clouded leopard video
- BBC: video of a clouded leopard ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ নভেম্বর ২০১০ তারিখে
- Focus Taiwan: Taiwan's clouded leopard extinct: zoologists