জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র

২০২১ সালে উৎক্ষিপ্ত মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র

জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (ইংরেজি: James Webb Space Telescope বা JWST) মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা, কানাডীয় মহাকাশ সংস্থাইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত একটি মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র। এটিকে নাসার ধ্বজাধারী নভোপদার্থবৈজ্ঞানিক অভিযান হিসেবে হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির উত্তরসূরী হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে।[৮][৯] এটিকে সংক্ষেপে ওয়েব (Webb) নামে ডাকা হয়। পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ওয়েবকে ২০২১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর তারিখে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে বিষুবরেখার কাছে ফরাসি গায়ানার কুরু শহরে অবস্থিত গায়ানা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ফরাসি বাণিজ্যিক রকেট উৎক্ষেপণ কোম্পানি আরিয়ানেস্পাসের তত্ত্বাবধানে একটি আরিয়ান ৫ রকেটের (আরিয়ান উড়াল ভিএ২৫৬) মাধ্যমে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণের পরে ওয়েব প্রায় ৩০ দিন মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন করে পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বে (চাঁদের চেয়েও অধিক দূরত্বে) দ্বিতীয় লাগ্রঁজীয় বিন্দুতে (যে বিন্দুতে পৃথিবী ও সূর্যের মহাকর্ষীয় লব্ধিবল এবং মহাকাশযানের কেন্দ্রাতিগ বল একে অপরকে নাকচ করে দেয়) পৌঁছানোর পরে সেটিতে অবস্থান করে সবসময় পৃথিবীর অন্ধকার পার্শ্বে থেকে পৃথিবীর সাথে সাথে একই সময়ে বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে।

জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র
সম্পূর্ণ মোতায়েনকৃত জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের চিত্র
নামপরবর্তী প্রজন্মের মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র (এনজিএসটি; ১৯৯৬–২০০২)
অভিযানের ধরনজ্যোতির্বিজ্ঞান
পরিচালকSTScI (নাসা)[১] / ইএসএ / সিএসএ
সিওএসপিএআর আইডি২০২১-১৩০এ
এসএটিসিএটি নং৫০৪৬৩[২]
ওয়েবসাইটটেমপ্লেট:Oweb
অভিযানের সময়কাল
  • ২ বছর, ৩ মাস, ২১ দিন (অতিবাহিত)
  • + বছর (প্রাথমিক অভিযান)[৩]
  • ১০ বছর (পরিকল্পিত)
  • ২০ বছর (প্রত্যাশিত জীবন)[৪]
মহাকাশযানের বৈশিষ্ট্য
প্রস্তুতকারক
উৎক্ষেপণ ভর৬,১৬১.৪ কেজি (১৩,৫৮৪ পা)[৫]
আয়তন২০.১৯৭ মি × ১৪.১৬২ মি (৬৬.২৬ ফু × ৪৬.৪৬ ফু), সূর্যরক্ষা
ক্ষমতাকিলোওয়াট
অভিযানের শুরু
উৎক্ষেপণ তারিখ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ (2021-12-25), ১২:২০ ইউটিসি
উৎক্ষেপণ রকেটআরিয়ান ৫ ইসিএ (ভিএ২৫৬)
উৎক্ষেপণ স্থানসঁত্র স্পাসিয়াল গুইয়ান, ইএলএ-৩
ঠিকাদারআরিয়ানেস্পাস
পরিষেবা চালু হয়েছে১২ জুলাই ২০২২
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্যসমূহ
তথ্য ব্যবস্থাসূর্য-পৃথিবী এল কক্ষপথ
আমলহেলো কক্ষপথ
পেরিapsis২,৫০,০০০ কিমি (১,৬০,০০০ মা)[৬]
অ্যাপোapsis৮,৩২,০০০ কিমি (৫,১৭,০০০ মা)[৬]
পর্যায়৬ মাস
প্রধান দূরবীক্ষণ যন্ত্র
ব্যাস৬.৫ মি (২১ ফু)
ফোকাস দূরত্ব১৩১.৪ মি (৪৩১ ফু)
সংগ্রহ অঞ্চল২৫.৪ মি (২৭৩ ফু)[৭]
তরঙ্গদৈর্ঘ্য০.৬-২৮.৩ মাইক্রোমিটার (কমলা থেকে মধ্য-অবলোহিত)
ট্রান্সপন্ডার
ব্যান্ড
  • S-band, telemetry and telecommand
  • Ka-band, science data downlink
ব্যান্ডউইথ
  • S-band up: 16 kbit/s
  • S-band down: 40 kbit/s
  • Ka-band down: up to 28 Mbit/s

জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র অভিযান প্রতীক

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ওয়েবের মূল দুইটি বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য হল ছায়াপথের জন্ম ও বিবর্তন এবং নক্ষত্র ও গ্রহসমূহের সৃষ্টি সংক্রান্ত গবেষণা। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানবিশ্বতত্ত্বের সমগ্র ক্ষেত্রজুড়ে বহু বিভিন্ন ধরনের গবেষণার দ্বার উন্মোচন করবে। এটির সাহায্যে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে মহাবিশ্বে বিরাজমান বস্তু ও সংঘটিত ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। যেমন এটির দ্বারা ধারণকৃত অবলোহিত বিকিরণ চিত্রণের মাধ্যমে আজ থেকে ১৩৫০ কোটি বছরেরও আগে (মহাবিস্ফোরণের প্রায় ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পরে) মহাবিশ্বের প্রথম ছায়াপথ ও আদ্যনক্ষত্রগুলি কীভাবে রূপলাভ করেছিল, তা জানা যাবে। এছাড়া মানুষের বসবাসযোগ্য সম্ভাব্য বহির্গ্রহগুলির আবহমণ্ডলের বিস্তারিত খুঁটিনাটি চরিত্রায়নও সম্ভব হবে। উপরন্তু, এটি সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ ও খ-বস্তুগুলির অনেক বেশী খুঁটিনাটি দেখতে সক্ষম হবে।

বৈশিষ্ট্যসমূহ

ওয়েবের আলোকীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র উপাদানটি তিনটি দর্পণের সমবায়ে গঠিত। প্রথম দর্পণটি ১৮টি ষড়ভুজাকৃতি দর্পণখণ্ডের সমবায়ে নির্মিত। প্রতিটি দর্পণখণ্ডের ব্যাস ১.৩ মিটার এবং এগুলি অত্যন্ত পাতলা (মাত্র ১০০ ন্যানোমিটার পুরু) সোনার প্রলেপ লাগানো বেরিলিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি। সোনা অবলোহিত বিকিরণের জন্য একটি অতি-উৎকৃষ্ট প্রতিফলক এবং রাসায়নিকভাবে তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে বেরিলিয়াম হালকা কিন্তু শক্ত ও অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রাতেও সংকুচিত না হয়ে আকৃতি ধরে রাখতে পারে। দর্পণখণ্ডগুলি একত্রে মিলে একটি বৃহৎ ৬.৫ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট মৌচাকের মতো দেখতে প্রায় ষড়ভুজাকৃতি একটি প্রাথমিক দর্পণ গঠন করবে, যার ক্ষেত্রফল হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ২.৪ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট দর্পণটির ক্ষেত্রফলের তুলনায় ৬ গুণেরও বেশি বড়। প্রাথমিক বৃহত্তর অবতল দর্পণটি আলোকরশ্মিগুলি প্রতিফলিত করে অপেক্ষাকৃত ছোট (০.৭৪ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট) ও সামান্য বিষমকেন্দ্রিক একটি দ্বিতীয় উত্তল দর্পণে ফেলবে, যেখানে সেগুলি প্রতিফলিত হয়ে একটি তৃতীয় বিষমকেন্দ্রিকতা-দূরকারী দর্পণের উপর পড়ে আলোক-সংবেদী উপকরণের ভেতরে প্রবেশ করবে। যেখানে হাবলকে নিকট-অতিবেগুনি, দৃশ্যমান আলোনিকট-অবলোহিত বিকিরণ (০.১ থেকে ১ মাইক্রোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট) বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, তার বিপরীতে ওয়েব অপেক্ষাকৃত নিম্নতর কম্পাঙ্কের পরিসীমার বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করবে, যার মধ্যে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দৃশ্যমান কমলা আলো থেকে শুরু করে মধ্য-অবলোহিত তরঙ্গগুলি অন্তর্ভুক্ত (০.৬-২৮.৩ মাইক্রোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট)। ফলে এটি একই সাথে হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও স্পিটজার মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের (একটি ০.৮৫ মিটার ব্যাসের অবলোহিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র) ভবিষ্যত উত্তরসূরী। অত্যধিক প্রাচীন ও অত্যধিক দূরে অবস্থিত আদ্যনক্ষত্র ও আদি ছায়াপথগুলি থেকে আগত রশ্মিগুলি দৃশ্যমান আলো নয়, বরং অদৃশ্য অবলোহিত রশ্মির (এক ধরনের তাপরশ্মি) আকারে আমাদের কাছে পৌঁছায়। অবলোহিত তরঙ্গগুলি গ্যাস ও ধূলিমেঘের ভেতর দিয়ে সহজেই অতিক্রম করে, যেগুলি ভূপৃষ্ঠস্থিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র কিংবা হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এ পর্যন্ত স্পষ্ট করে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু অবলোহিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র বিধায় ওয়েব এইসব উচ্চ লোহিত সরণবিশিষ্ট বস্তুসমূহ অতি উচ্চমাত্রার বিভেদনক্ষমতা ও সংবেদনশীলতা বজায় রেখে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে, যা আগে কখনও সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারটির সাথে রঞ্জনরশ্মির মাধ্যমে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি দর্শনের মিল আছে।[১০][১১]

সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ওয়েবের দুইটি দর্পণ ও অন্যান্য তাপ-সংবেদনশীল অংশগুলিকে অত্যন্ত শীতল অবস্থায় রাখতে হবে এবং যে অতিসূক্ষ্ম, দুর্বল সংকেতগুলি গ্রহণের জন্য এটিকে প্রস্তুত করা হয়েছে, সেই সংকেতগুলিকে বিনষ্টকারী সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর (মূলত সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ এমনকি দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির নিজস্ব উত্তাপ) আলোকীয় ও তাপীয় বিকিরণের কারণে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ব্যতিচার থেকে এটিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ কারণে প্রথমত এটিকে পৃথিবী থেকে বহুদূরে, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বেরও প্রায় ৪ গুণ দূরে, প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বে, দ্বিতীয় লাগ্রঁজীয় বিন্দুতে মোতায়েন করা হবে।[১২] তুলনায় হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি পৃথিবী থেকে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দ্বিতীয়ত, যন্ত্রটিকে সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ৩০০ বর্গমিটার (৩২৩১ বর্গফুট) ক্ষেত্রফলের একটি সৌরঢাল মোতায়েন করা হবে। সৌরঢালটি সিলিকনঅ্যালুমিনিয়ামে আবৃত পাঁচটি তাপ-অন্তরক ক্যাপটন পাত (বিশেষ ধরনের পলিথিনের মতো পাতলা পলিইমাইড ঝিল্লি) দিয়ে নির্মিত। সৌরঢালের উত্তপ্ত পার্শ্বটির তাপমাত্রা ক্ষেত্রবিশেষে ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। কিন্তু এটির শীতল পার্শ্বে মূল ও গৌণ দর্পণ ও অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলির তাপমাত্রা ৫০ কেলভিনের (শূন্যের নিচে ২২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নিচে থাকবে।[১৩] দর্পণ (ও তার পশ্চাৎফলক) ও সৌরঢালটি ব্যতীত ওয়েবে আরও আছে একটি সমন্বিত বৈজ্ঞানিক উপকরণ উপাংশ, যাতে চারটি বৈজ্ঞানিক উপকরণ রয়েছে; এগুলি হল মধ্য-অবলোহিত উপকরণ, নিকট-অবলোহিত বর্ণালীলেখ যন্ত্র, নিকট-অবলোহিত চিত্রগ্রাহক, সূক্ষ্ম চালনা সুবেদী গ্রাহক/নিকট-অবলোহিত চিত্রক ও গরাদহীন বর্ণালীলেখ যন্ত্র। মহাকাশযান-বাস নামক আরেকটি অংশ বৈদ্যুতিক শক্তি, উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ, আদেশ ও উপাত্ত সামাল, প্রচালন ও তাপীয় নিয়ন্ত্রণের কাজগুলির প্রতিটির জন্য পৃথক ৬টি উপব্যবস্থা ধারণ করে আছে। এছাড়া পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত প্রেরণের জন্য ও আদেশ গ্রহণের জন্য পৃথিবীর দিকে মুখ করে একটি শুঙ্গ (অ্যান্টেনা) এবং সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য সূর্যের দিকে মুখ করে এক সারি সৌরবিদ্যুৎকোষ রয়েছে। নির্দিষ্ট নক্ষত্র অঞ্চলের দিকে তাক করার জন্য কিছু ক্ষুদ্রাকায় দূরবীক্ষণ যন্ত্রও আছে, যেগুলিকে নক্ষত্র সন্ধানী নাম দেওয়া হয়েছে। ওয়েবের সমগ্র দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির ভর প্রায় ৬ মেট্রিক টন, যা হাবলের ভরের (প্রায় ১২ মেট্রিক টন) প্রায় অর্ধেক।

দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির দর্পণ, সৌরঢাল ও অন্যান্য বেশ কিছু অংশ ভাঁজ করে রকেটের নাসাশঙ্কুতে রেখে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং যন্ত্রটির এক মাস দৈর্ঘ্যের যাত্রাকালীন সময়ে একে একে সেগুলির ভাঁজ খুলে মেলে ধরা হবে। সম্পূর্ণ মোতায়েনকৃত অবস্থায় ২য় লাগ্রঁজ বিন্দুতে পৌঁছানোর পরে শুরু হবে দায়িত্ব অর্পণ ধাপ; এই ধাপে মূল দর্পণের প্রতিটি খণ্ডকে এক সমতলে নিয়ে আসা হবে এবং চারটি বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের প্রতিটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে সব ধরনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ত্রুটি সংশোধন করা হবে, যাতে সর্বোচ্চ স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। মোতায়েন ও দায়িত্ব অর্পণের দুই ধাপবিশিষ্ট সমগ্র প্রস্তুতি প্রক্রিয়াটি শেষ করতে উৎক্ষেপণ মুহূর্ত থেকে প্রায় ছয় মাস লাগবে। এর কারণ ওয়েবের উপাংশগুলিকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে জায়গামত বসতে হবে, কেননা যন্ত্রটিতে ৩৪৪টি একক ব্যর্থতা-বিন্দু বিদ্যমান, যার একটি ব্যর্থ হলে পুরো প্রকল্পটিই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। পৃথিবী থেকে বহুদূরে অবস্থিত বলে একবার মোতায়েন করার পরে মানুষের হাতে ওয়েবের কোনও মেরামতি বা পুরনো হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করা প্রায় অসম্ভব। পরিকল্পনা মোতাবেক ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি পৃথিবীতে অবস্থিত নাসার গভীর মহাকাশ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার (ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক) অংশ অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা, স্পেনের মাদ্রিদ ও ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ডস্টোন শহরের কাছে অবস্থিত তিনটি গ্রাহক অ্যান্টেনাবিশিষ্ট ভূকেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত (দৈনিক দুইবার করে প্রতিবার কমপক্ষে ২৮.৬ গিগাবাইট পরিমাণ উপাত্ত) প্রেরণ করা শুরু করবে। ওয়েবে বহনকৃত জ্বালানির সাহায্যে যন্ত্রটিকে কমপক্ষে প্রায় ১০ বছর কর্মক্ষম রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তুলনায় হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মক্ষম আছে।

ইতিহাস

জেমস ই. ওয়েব, যার নামে এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির নামকরণ করা হয়েছে

১৯৯৬ সাল থেকে পরিকল্পিত[১৪] এ প্রকল্পটি একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ফল,[১৫] যার নেতৃত্বে রয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। নাসা-র গডার্ড মহাকাশ যাত্রা কেন্দ্র (Goddard Space Flight Center; GSFC) যন্ত্রটির নির্মাণ প্রচেষ্টার ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিল। অন্যদিকে উৎক্ষেপণের পরে মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এটির পরিচালনা করবে।[১৬] নরথ্রপ গ্রামেন কোম্পানিকে যন্ত্রটি নির্মাণের মূল ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।[১৭] এছাড়া ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এবং কানাডীয় মহাকাশ সংস্থাও এই কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সব মিলিয়ে বিশ্বের ১৪টি দেশ ও ২৯টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের ৩ শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্থা ও কোম্পানির পাশাপাশি শতশত বিজ্ঞানী ও হাজার হাজার প্রকৌশলী এই প্রকল্পের উপরে কাজ করেছেন। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পটি শেষ করতে ১০০০ কোটির বেশি মার্কিন ডলার অর্থ ব্যয় হয়েছে (যার মধ্যে নাসার অবদান ৯৭০ কোটি মার্কিন ডলার) ও প্রায় ৩০ বছর সময় লেগেছে। তুলনায় হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের পেছনে এ যাবৎ ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে।

নাসার দ্বিতীয় প্রশাসক এবং অ্যাপোলো অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী জেমস ই. ওয়েবের নামানুসারে যন্ত্রটির নামকরণ করা হয়েছে।[১৮]

সর্বশেষ অবস্থা

নাসা জানায় যে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ওয়েব দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে মহাজাগতিক পার্কিং স্পটে পৌঁছেছে। এ সময়ে দ্বিতীয় লাগ্রঁজীয় বিন্দুতে বা এল-২ তে পৌঁছানোর জন্য থ্রাস্টারগুলো ৫ মিনিটের জন্য চালু করে। এই থ্রাস্টারগুলো ওয়েবের গতি ঘণ্টায় ৩.৬ মাইল (সেকেন্ডে ১.৬ মিটার) বাড়িয়ে দেবে, যা ওয়েবটিকে পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে ত্রিমাত্রিক কক্ষপথ “হ্যালো” এল-২ তে স্থাপন করবে।[১৯]

বৈজ্ঞানিক ফলাফল

ওয়েবের (২০২২) তুলনায় হাবল (২০১৭)[২০][২১]

সম্প্রতি ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা মহাবিশ্বের কয়েকশ কোটি বছর আগের প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন ছবি প্রকাশ করেছে নাসা।

এযাবত এটাই মহাজগতের প্রাচীনতম অবস্থার সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে তোলা চিত্র। এই ছবিতে তারামণ্ডলী ও ছায়াপথের যে আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ দেখা যাচ্ছে তা শত কোটি বছর পাড়ি দিয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। ছবিতে লাল বাঁকা আলোগুলো মহাজগতের একেবারে সূচনা লগ্নের ছায়াপথ থেকে আসা আলো।[২৭]

ওয়েব ওয়াস্প-৯৬ বি নামে একটি বিশালাকৃতির গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করেছে। এই গ্রহ পৃথিবী থেকে এক হাজার আলোক বর্ষ দূরে। এই বিশ্লেষণ ওই গ্রহের আবহাওয়া মণ্ডলের রসায়ন জানাতে সাহায্য করবে। ওয়াস্প-৯৬ বি তার উৎস নক্ষত্রটির খুব কাছ দিয়ে কক্ষপথে ঘুরছে, যার ফলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা হয়ত অসম্ভব।[২৮]

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ