মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক

তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক (১৮৮১-১৯৩৮)

মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক,[ক] বা ১৯২১ সাল পর্যন্ত মোস্তফা কামাল পাশা[খ] এবং ১৯২১ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত গাজি মোস্তফা কামাল,[গ][২] (আনু. ১৮৮১[ঘ] – ১০ নভেম্বর ১৯৩৮) একজন তুর্কি ফিল্ড মার্শাল, বিপ্লবী রাষ্ট্রনায়ক, লেখক এবং তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক, যিনি ১৯২৩ থেকে ১৯৩৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্যাপক প্রগতিশীল সংস্কার গ্রহণ করেন, যা তুরস্ককে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, শিল্পায়িত দেশে উন্নত করে।[৩][৪][৫][৬] তিনি আদর্শগতভাবে একজন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী ছিলেন এবং তাঁর নীতি ও সামাজিক-রাজনৈতিক তত্ত্ব আতাতুর্কবাদ নামে পরিচিত পায়। সামরিক ও রাজনৈতিক কৃতিত্বের কারণে আতাতুর্ককে ২০ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়।[৭]

হালাস্কার গাজি[১]
মারেশাল
মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক
Mustafa Kemal Atatürk
১৯৩২-এ আতাতুর্ক
তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
২৯ অক্টোবর ১৯২৩ – ১০ নভেম্বর ১৯৩৮
প্রধানমন্ত্রীইসমত ইনোনু
ফেথি অকিয়ার
জেলাল বায়ার
পূর্বসূরীপদ স্থাপিত
উত্তরসূরীইসমত ইনোনু
আঙ্কারা সরকারের প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৩ মে ১৯২০ – ২৪ জানুয়ারি ১৯২১
ডেপুটিফেভজি চাকমাক
পূর্বসূরীপদ স্থাপিত
উত্তরসূরীফেভজি চাকমাক
তুরস্কের মহান জাতীয় সভার প্রথম স্পিকার
কাজের মেয়াদ
২৪ এপ্রিল ১৯২০ – ২৯ অক্টোবর ১৯২৩
পূর্বসূরীপদ স্থাপিত
উত্তরসূরীফেথি অকিয়ার
প্রজাতন্ত্রী জনতা দলের প্রথম নেতা
কাজের মেয়াদ
৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ – ১০ নভেম্বর ১৯৩৮
পূর্বসূরীপদ স্থাপিত
উত্তরসূরীইসমত ইনোনু
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআলি রুজা অলো মুস্তফা
(আলি রেজার পুত্র মোস্তফা)

আনু. ১৮৮১
সেলানিক, সেলানিক ভিলায়েত, উসমানীয় সাম্রাজ্য
মৃত্যু১০ নভেম্বর ১৯৩৮(1938-11-10) (বয়স ৫৭)
দোলমাবাহজে প্রাসাদ, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক
সমাধিস্থলনৃকুলবিদ্যা জাদুঘর, আঙ্কারা (২১ নভেম্বর ১৯৩৮ – ১০ নভেম্বর ১৯৫৩)
আনাতকাবির, আঙ্কারা (১০ নভেম্বর, ১৯৫৩ থেকে)
জাতীয়তাউসমানীয়, তুর্কি
রাজনৈতিক দলপ্রজাতন্ত্রী জনতা দল
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
স্বদেশ ও স্বাধীনতা
ঐক্য ও প্রগতি সমিতি (১৯০৭–১৯১৮)
আনাতোলিয়া ও রুমেলিয়ার অধিকার রক্ষা সংগঠন (১৯২৩ পর্যন্ত)
দাম্পত্য সঙ্গীলতিফে উশাকলেগিল (১৯২৩–২৫)
পিতামাতাআলি রুজা এফেন্দি
জুবায়দে হানম
আত্মীয়স্বজনমাকবুলে আতাদান (বোন)
পুরস্কারতালিকা (২৪ পদক)
স্বাক্ষর
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্যউসমানীয় সাম্রাজ্য উসমানীয় সাম্রাজ্য (১৮৯৩–১৯১৯)
আঙ্কারা সরকার (১৯২১–১৯২৩)
তুরস্ক তুরস্ক (১৯২৩–১৯২৭)
শাখা উসমানীয় সেনাবাহিনী
আঙ্কারার সেনা
তুর্কি সেনাবাহিনী
পদমিরলিভা (উসমানীয় সেনাবাহিনী)
মারেশাল (তুর্কি সেনাবাহিনী)
কমান্ড
  • ১৯তম বিভাগ
  • ১৬তম কর্প
  • ২য় বাহিনী
  • ৭ম বাহিনী
  • ইলদিরিম সেনাদল
  • মহান জাতীয় সভার সেনাবাহিনী
যুদ্ধ
তালিকা
  • ইতালীয়-তুর্কি যুদ্ধ
    তবরুক
    দারনা
  • বলকান যুদ্ধ
    বুলাইর
    দ্বিতীয় আদ্রিয়ানোপল
  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
    আনজাক কোভ
    বেবি ৭০০
    ৩ নম্বর পোস্ট
    নেক
    জুনুক বাইর
    শমশের পাহাড়
    পাহাড় ৬০
    সুভলা সাগর
    সারি বাইর
    বিতলিস
    দক্ষিণ ফিলিস্তিন
    তৃতীয় ট্রান্সজর্ডান
    নাবলুস
    মেগিদ্দো
    জিসর আদ দামিয়েহ
    সামাখ
    দামেস্ক
    জিসর বেনাত ইয়াকুব
    কিসওয়ে
    আউকাব
    হারিতান অভিযান
    খান আয়াশ
    আলেপ্পো
    হারিতান আক্রমণ
  • গ্রিক-তুর্কি যুদ্ধ
    সাকারিয়া
    মহা আক্রমণ
বিস্তারিত কালপঞ্জি

আতাতুর্ক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্যালিপলির যুদ্ধে (১৯১৫) উসমানীয় তুর্কিদের বিজয় নিশ্চিত করায় তাঁর ভূমিকার জন্য লোকদৃষ্টিতে আসেন।[৮] উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরাজয় ও বিলুপ্তির পর তিনি তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন, যা বিজয়ী মিত্রশক্তির মাঝে তুরস্কের মূল ভূখণ্ডের বিভাজন প্রতিহত করে। বর্তমান তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করে তিনি মিত্রশক্তির প্রেরিত বাহিনীকে পরাজিত করেন, এইভাবে বিজয়ী হন যা পরবর্তীতে তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে তিনি ক্ষয়িষ্ণু উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটান এবং তাঁর স্থলে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি ঘোষণা করেন।

নবগঠিত তুর্কি প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে আতাতুর্ক একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্র গঠনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কারের জন্য একটি কঠোর কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেন, সারা দেশে হাজার হাজার নতুন স্কুল খোলেন। তিনি পুরোনো উসমানীয় তুর্কি বর্ণমালা প্রতিস্থাপন করে লাতিন ভিত্তিক তুর্কি বর্ণমালাও প্রবর্তন করেন। আতাতুর্কের রাষ্ট্রপতিত্বকালে তুর্কি নারীরা সমান নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার লাভ করে।[৯] বিশেষ করে ৩ এপ্রিল ১৯৩০ তারিখে ১৫৮০ নং আইনের মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচনে নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় এবং কয়েক বছর পর ১৯৩৪ সালে তাঁরা পূর্ণ সার্বজনীন ভোটাধিকার লাভ করে।[১০]

তাঁর সরকার তুর্কিকরণের নীতি গ্রহণ করে, তুর্কি পতাকার ছায়ায় একটি সমজাতিক, ঐক্যবদ্ধ এবং সর্বোপরি ধর্মনিরপেক্ষ জাতি গঠনের চেষ্টা করেছিল।[১১][১২][১৩] আতাতুর্কের অধীনে কিছু অবশিষ্ট সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীদের জনসমক্ষে তুর্কি ভাষায় কথা বলতে বলা হয়েছিল, কিন্তু একই সময়ে তাঁদের নিজস্ব ভাষা বজায় রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল;[১৪] অতুর্কি উপনাম ও সংখ্যালঘুদের নামের তুর্কি অনুবাদ অনুসারে একটি তুর্কি ডাকনাম গ্রহণ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল।[১৫][১৬] আধুনিক তুর্কি প্রজাতন্ত্র নির্মাণে তাঁর ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩৪ সালে তুর্কি আইনসভা তাঁকে আতাতুর্ক উপাধিতে ভূষিত করে, যার অর্থ "তুর্কিদের জনক"।[১৭] তিনি ১০ নভেম্বর ১৯৩৮ তারিখে ৫৭ বছর বয়সে ইস্তাম্বুলের দোলমাবাচে প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন;[১৮] তাঁর দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী ইসমত ইনোনু রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁকে স্থলাভিষিক্ত করেন[১৯] এবং একটি রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।

১৯৮১ সালে আতাতুর্কের জন্মের শতবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতিকে জাতিসংঘইউনেস্কো সম্মানিত করেছিল, সালটিকে বিশ্ব আতাতুর্ক বর্ষ হিসাবে ঘোষণা করে এবং আতাতুর্ক শতবর্ষে রেজোল্যুশন গ্রহণ করে, যেখানে তাঁকে "ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত প্রথম সংগ্রামের নেতা" হিসেবে বর্ণনা করা হয় এবং যিনি "জনগণের মাঝে বোঝাপড়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে টেকসই শান্তির ধারণার অসাধারণ প্রবর্তক এবং তিনি সারাজীবন মানুষের মাঝে বিভেদ ছাড়াই সম্প্রীতি ও সহযোগিতার বিকাশের জন্য কাজ করেছেন"। [২০][২১] আতাতুর্ককে বিশ্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি এবং ইরান, যুগোস্লাভিয়া, ইরাক ও গ্রিসের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পাশাপাশি বলকান চুক্তি করার জন্যও কৃতিত্ব দেওয়া হয় যা সম্প্রসারণবাদী ফ্যাসিবাদী ইতালি ও জারবাদী বুলগেরিয়ার আগ্রাসনকে প্রতিহত করেছিল।[২২]

নাম

আতাতুর্কের জন্মনাম মুস্তাফা (প্রচলিত বাংলা বানানে মোস্তফা), তাঁর দ্বিতীয় নাম কামাল (যার অর্থ "পরিপূর্ণতা" বা "পরিপক্কতা") তাঁকে তাঁর গণিত শিক্ষক ক্যাপ্টেন উস্কুপ্লু মুস্তাফা এফেন্দি দিয়েছিলেন। আফেত ইনানের In Admiration of His Capability And Maturity অনুসারে, "তাঁর সক্ষমতা ও পরিপক্কতার প্রশংসায়" তাঁর শিক্ষক তাঁকে এই নামটি দিয়েছিলেন,[২৩][২৪] যেখানে অন্যান্য সূত্র অনুসারে, তাঁর শিক্ষক একই নামের দুইজন ছাত্রকে আলাদা করতে আতাতুর্ককে এই নামটি দিয়েছিলেন,[২৫][২৬] যদিও জীবনীলেখক অ্যান্ড্রু ম্যাঙ্গো পরামর্শ দিয়েছেন যে তিনি হয়তো জাতীয়তাবাদী কবি নামিক কামালের শ্রদ্ধায় এই নামটি নিজেই বেছে নিয়েছিলেন।[২৭] আলকানের মতে, আতাতুর্ক তাঁর সেনাবাহিনীর দিনগুলিতে কামাল নামটি গ্রহণ করেছিলেন বলে মনে হয়।[২৮]

১৯৩৪ সালে তাঁর প্রথম আইডি কার্ডে আতাতুর্ক উপাধি পাওয়ার পর, তাঁর প্রদত্ত নামটি কামাল আতাতুর্ক হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছিল যেখানে মুস্তাফা নামটি পুরোপুরি বাদ পড়ে গিয়েছিল। ১৯৩৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আতাতুর্ক তাঁর কথিত "আসল" নাম Kamâl ব্যবহার করতে শুরু করেন। তারামা দের্গিসির (১৯৩৪) মতে, কামাল (Kamâl) মানে "দুর্গ", "প্রাসাদ", "সেনাবাহিনী" ও "ঢাল"। ১৯৩৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারিতে সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি নিম্নলিখিত ব্যাখ্যা দেয়:[২৮]

আমাদের তথ্যের আলোকে, আতাতুর্ক যে 'Kamâl' ধারণ করেছেন তা আরবি শব্দ নয় এবং আরবি শব্দ কামাল ['পরিপক্কতা', 'পরিপূর্ণতা'] দ্বারা এর অর্থও নেই। আতাতুর্কের [মূল] ব্যক্তিগত নাম যা রাখা হয়েছে তা হলো 'Kamâl', যার তুর্কি অর্থ সেনাবাহিনী ও দুর্গ। দ্বিতীয় a-এর সার্কামফ্লেক্সযুক্ত উচ্চারণ k-কে নরম করে আরবি 'কামাল'-এর উচ্চারণ ঘনিষ্ঠভাবে নিকটবর্তী করে। এটাই সাদৃশ্যের শেষ সীমা।

— আনাতোলু এজেন্সি

প্রাথমিক জীবন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের স্যালোনিকার (বর্তমানে থেসালোনিকি, গ্রিস) যে বাড়িটিতে আতাতুর্ক জন্মেছিলেন, বর্তমানে যাদুঘর।
উসমানীয় গ্রাম কোজাজিকে (বর্তমানে উত্তর মেসিডোনিয়ায়) আতাতুর্কের দাদা-দাদির পুনর্নির্মিত বাড়ি।

আতাতুর্ক ১৮৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তবে জন্মের মাস অনিশ্চিত। আহমেদ সুবাশির আশেপাশে অথবা ইসলাহান সড়কে (বর্তমানে আপোস্টুলু পাভলু সড়ক) কোকা কাসিম পাশার (এই বাড়িটি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত) আশেপাশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।[২৯] তার মা জুবাইদে হানিম ও পিতা আলি রিজা এফেন্দি। তার অন্যান্য ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র বোন মাকবুলে আতাদান (মৃত্যু : ১৯৫৬) শৈশবে বেঁচে ছিলেন।[৩০] এন্ড্রু ম্যাংগোর মতে, তিনি একটি তুর্কিভাষী মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৩১] এনসাইক্লোপিডিয়া জুডাইকার অনুযায়ী, সেলোনিকার অনেক ইহুদিদের মতে আতাতুর্ক ছিলেন দিওনমেহ বংশের। আতাতুর্কের ধর্মীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিকাংশ এই মতটিকে গ্রহণ করে।[৩২] কারও মতে তার পিতা আলি রিজা আলবেনিয়ান বংশোদ্ভুত;[৩৩][৩৪][৩৫][৩৬][৩৭] তবে ফালিহ ফির্কি আতায়ের মতে আলি রিজার পূর্বপুরুষরা তুর্কি ছিলেন যাঁরা আনাতোলিয়ার আয়দিন প্রদেশের সোক থেকে আসেন।[৩৮][৩৯] তাঁর মা জুবাইদেকে তুর্কি বংশোদ্ভুত বলা ধারণা করা হয়।[৩৫][৩৬] সেভকেত সুরেইয়ে আয়েদমিরের তিনি ছিলেন ইউরুক বংশোদ্ভুত।[৪০]

শৈশবে তাঁর মা তাকে ধর্মীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের জন্য উৎসাহিত করেন। পরবর্তীতে তিনি তার পিতার নির্দেশে শেমসি এফেন্দি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এটি ছিল একটি ব্যক্তিগত বিদ্যালয়। এর পাঠ্যক্রম তুলনামূলকভাবে অধিক ধর্মনিরপেক্ষ ছিল। তার পিতামাতা তাকে বাণিজ্য শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের না জানিয়ে মোস্তফা কামাল স্যালোনিকা সামরিক বিদ্যালয়ে ১৮৯৩ সালে ভর্তি পরীক্ষা দেন। ১৮৯৬ সালে তিনি মোনাস্তির সামরিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৪ মার্চ, ১৮৯৯ সালে তিনি উসমানীয় মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন।[৪১] এবং ১৯০২ সালে স্নাতক হন। পরবর্তীতে তিনি কন্সটান্টিনোপলের (ইস্তাম্বুল) উসমানীয় মিলিটারি কলেজ থেকে ১১ জানুরারি ১৯০৫ সালে স্নাতক হন।[৪১]

সামরিক জীবন

প্রাথমিক সময়

কামাল ১৯০৫ সালে ওয়ার একাডেমি থেকে স্নাতক প্রাপ্তির দিন।

স্নাতক হওয়ার পর তিনি দামেস্কে পঞ্চম বাহিনীর আলি ফুয়াত ও লুতফু মুফিতের কোম্পানিতে স্টাফ ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ পান।[৪১][৪২] মোস্তফা এলভানের নেতৃত্বাধীন সংস্কারবাদী কর্মকর্তাদের গোপন বিপ্লবী সংঘ ভাতান ভে হুরিয়াতে তিনি যোগ দেন। ১৯০৭ এর ২০ জুন সিনিয়র ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান এবং ১৯০৭ এর ১৩ অক্টোবর মানাসতিরে তৃতীয় বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়োগ পান।[৪৩] তিনি কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেসে যোগ দেন। তবে পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি এই কমিটির সমালোচনা ও বিরোধীতার জন্য আলোচিত হন। ১৯০৮ সালের ২২ জুন পূর্ব রুমেনিলায় উসমানীয় রেলওয়ের পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পান।[৪৩] একই বছরের জুলাইয়ে তরুণ তুর্কি বিপ্লবে তিনি অংশ নেন। এই বিপ্লব সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্র সূচনা করে।

মোস্তফা কামাল বে (ডান থেকে চতুর্থ) ফরাসি কর্নেল অগাস্ট এডওয়ার্ড হিরসচাওরের বক্তব্য শুনছেন

১৯১০ সালে তাকে উসমানীয় প্রদেশ আলবেনিয়ায় পাঠানো হয়।[৪৪][৪৫] ঐ সময় ঈসা বোলেতিনি কসোভোয় আলবেনিয়দের উত্থানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই সময় আলবেনিয়ায় বিদ্রোহ হয়।[৪৬][৪৭] ১৯১০ সালে তিনি একেরেম ভ্লোরার সাথে সাক্ষাৎ করেন।[৪৮][৪৯]

১৯১০ সালের হেমন্তে ফ্রান্সে পিকারডি আরমিতে উসমানীয় সামরিক পরিদর্শকদের মধ্যে তিনিও অন্যতম ছিলেন।[৫০]

১৯১১ সালে তিনি ইস্তানবুলে যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে স্বল্পকালের জন্য দায়িত্বপালন করেন।

ইতালি-তুর্কি যুদ্ধ (১৯১১-১৯১২)

দেরনায় একজন উসমানীয় সামরিক অফিসার ও বেদুইন সেনাদের সাথে মোস্তফা কামাল বে (বামে), ১৯১২।

পরবর্তীতে ১৯১১ সালে, তিনি উসমানীয় ত্রিপোলিতানিয়া ভিলায়েতে (বর্তমান লিবিয়া) ইতালি-তুর্কি যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য প্রেরিত হন। বেনগাজি, দেরনা ও তোবরাকের নিকট তিনি যুদ্ধে অংশ নেন। ইতালির প্রায় ১৫০০০০ জন সৈনিকের[৫১] বিপরীতে ২০০০০ জন বেদুইন[৫২] ও ৮০০০ তুর্কি ছিল।[৫২] ইতালি যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বে লিবিয়ায় অবস্থানরত উসমানীয় সৈনিকদের একটা বিরাট অংশ ইয়েমেনে বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরিত হয়। ফলে উসমানীয়রা লিবিয়ায় ইতালীয়দের প্রতিরোধে সমস্যার সম্মুখীন হয়। উরাবি বিদ্রোহের পর থেকে ব্রিটিশ সরকার মিশরসুদানের উসমানীয় প্রদেশ নিয়ন্ত্রণ করছিল। তারা উসমানীয় সৈনিকদেরকে মিশরের মধ্য দিয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। ফলে মোস্তফা কামালের মত উসমানীয় সৈনিকদেরকে আরব পোশাকে নাহয় হাতে থাকে স্বল্প সংখ্যক ফেরির সাহায্যে লিবিয়ায় প্রবেশ করতে হয়। এতে ঝুকি ছিল কারণ মিশরের ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা বুঝতে পারলে তাদের বন্দিত্ববরণ করতে হত, অন্যদিকে ইতালীয়রা নৌশক্তিতে এগিয়ে থাকায় ত্রিপোলিগামী জলপথ নিয়ন্ত্রণ করছিল। বাধা সত্ত্বেও মোস্তফা কামালের বাহিনী বেশ কয়েকটি যুদ্ধে ইতালীয়দেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। এই দুই বাহিনীর মধ্যে ১৯১১ সালের ২২ অক্টোবর তোবরাকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯১২ সালের ১৬-১৭ জানুয়ারি দেরনার যুদ্ধের সময় মোস্তফা কামাল যখন কাসর-ই হারুনের ইতালীদের নিয়ন্ত্রিত দুর্গ আক্রমণ করছিলেন, তখন ইতালীয় বিমান থেকে উসমানীয়দের উপর বোমা ফেলা হয় ও এর ফলে বিধ্বস্ত দালান থেকে চুনাপাথরের টুকরো মোস্তফা কামালের বাম চোখে প্রবেশ করে। এটি তার চোখের টিস্যুতে স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করলেও দৃষ্টি পুরোপুরি নষ্ট হয়নি। প্রায় এক মাস চিকিৎসা নেয়ার পর (রেড ক্রিসেন্টের স্বাস্থ্য সুবিধা তিনি দুই সপ্তাহ পর ত্যাগ করতে চাইলেও চোখের অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে পুনরায় চিকিৎসা নিতে হয়) ১৯১২ এর ৬ মার্চ তিনি পুনরায় দেরনায় উসমানীয় বাহিনীর কমান্ডার হন। ১৯১২ এর ১৮ অক্টোবর ইতালি-তুর্কি যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি শহর ও আশপাশের অঞ্চলের দখল ধরে রাখতে সক্ষম হন। ১৯১২ সালের ৮ অক্টোবর বলকান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মোস্তফা কামাল, এনভের বে, ফেতহি বে ও লিবিয়ায় অবস্থানরত অন্যান্য উসমানীয় সামরিক কমান্ডাররা উসমানীয় ইউরোপে ফিরে আসেন। এ কারণে উসমানীয় সরকার ত্রিপোলিতানিয়া, ফেজ্জান ও সিরেনকা প্রদেশ ইতালি রাজতন্ত্রের কাছে তুলে দিতে রাজি হয়। বলকান যুদ্ধ শুরু হওয়ার দশদিন পর ১৮ অক্টোবর আউচি চুক্তির মধ্য দিয়ে উসমানীয়রা এই প্রদেশগুলো ইতালীয়দের হাতে তুলে দেয়।

বলকান যুদ্ধ (১৯১২-১৯১৩)

১৯১২ সালের ১ ডিসেম্বর মোস্তফা কামাল গেলিপলিতে তার নতুন সদরদপ্তরে আসেন। প্রথম বলকান যুদ্ধ চলাকালে তিনি থ্রেসের উপকূলে বুলাইরে অবতরণে অংশ নেন। এই অভিযান ফেতহি বে পরিচালনা করেন। কিন্তু বুলাইরের যুদ্ধের সময় স্টিলিয়ান কোভাচেভের বুলগেরিয়ার চতুর্থ বাহিনীর নেতৃত্বাধীন জর্জি টোডোরভের সপ্তম রিলা ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন একে বাধাগ্রস্থ করে।[৫৩][৫৪]

১৯১৩ সালের জুনে মোস্তফা কামাল দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধের সময় এনভের বের অধীন উসমানীয় সাথে ডিমেতোকা ও এডির্ন উদ্ধার যুদ্ধে অংশ নেন।

১৯১৩ সালে তাকে বলকানের উসমানীয় সামরিক এটাচে হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বুলগেরিয়ার সফিয়ায় তার কার্যালয় ছিল। ১৯১৪ সালের ১ মার্চ তাকে কায়মাকাম (লেফটেন্যান্ট কর্নেল/কর্নেল) হিসেবে তিনি পদোন্নতি পান।[৪১]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮)

মোস্তফা কামাল বে গেলিপলির ট্রেঞ্চে। সাথে অন্যান্য সৈনিকরাও রয়েছে, ১৯১৫।
গেলিপলির যুদ্ধের সময় অন্যান্য উসমানীয় সামরিক অফিসারদের সাথে।
ইল্ডিরিম আর্মি গ্রুপের কমান্ডার হিসেবে মোস্তফা কামাল পাশা, ১৯১৮

১৯১৪ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্য অক্ষশক্তির সমর্থনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইউরোপীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের লড়াইয়ে যুক্ত হয়। মোস্তফা কামাল গেলিপলির যুদ্ধের সময় পঞ্চম বাহিনীর সাথে সংযুক্ত ১৯তম ডিভিশনের পুনর্গঠন ও নেতৃত্বদানের দায়িত লাভ করেন। অক্ষশক্তির কোথায় আক্রমণ করা উচিত ও পিছু হটার আগ পর্যন্ত কোথায় অবস্থান করা উচিত এসব ব্যাপারে পূর্বজ্ঞান থাকায় তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার হয়ে উঠেন। গেলিপলির যুদ্ধের পর মোস্তফা কামাল এডির্নে ১৯১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় বাহিনীর ১৬তম কোর্পসের নেতৃত্ব লাভ করেন এবং আনাতোলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলতে রাশিয়ানদের ব্যাপক হামলার পর ককেসাস অভিযানে প্রেরিত হন। ৭ আগস্ট মোস্তফা কামাল তার সৈনিকদের নিয়ে পাল্টা আঘাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।[৫৫] তার দুটি ডিভিশন বিতলিস ও মুশ অধিকার করেন।[৫৬]

বিজয়ের পর কন্সটান্টিনোপলের কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার হেজাজে নতুন সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে এবং মোস্তফা কামালকে এর নেতৃত্বদানের জন্য নিয়োগ দেয়। তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই সেনাবাহিনী আর প্রতিষ্ঠা হয়নি।[৫০] ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ মোস্তফা কামাল ১৬তম কোর্পসের দায়িত্ব থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুরো দ্বিতীয় বাহিনীর নেতৃত্বের দায়িত্ব পান, যদিও রুশ বিপ্লব আরম্ভ হওয়ায় জারের সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করা হয়।[৫০][৫৫]

১৯১৭ এর জুলাইয়ে ফেভজি পাশার স্থলে তিনি সপ্তম বাহিনীর নেতৃত্বভার লাভ করেন। ফেভজি পাশা জার্মান জেনারেল এরিক ভন ফাল্কেনহাইনের অধীনে ইল্ডিরিম আর্মি গ্রুপে কর্মরত ছিলেন।[৫০] মোস্তফা কামাল পাশা জেনারেল ভনের অধীনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না। তিনি এবং ইসমত বে যৌথভাবে উজিরে আজম তালাত পাশার কাছে চিঠি লিখে ফিলিস্তিন রণাঙ্গনের দুরবস্থা ও পর্যাপ্ত রসদের অভাবের কথা জানান। তালাত পাশা তাদের কথা নাকচ করে দিয়ে জার্মান কমান্ডের উপর নির্ভর না করে তুর্কিদের মাধ্যমে উত্তরে উসমানীয় সিরিয়ায় আরো শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তুলতে বলেন।[৫০] দাবি নাকচ হওয়ায় মোস্তফা কামাল সপ্তম বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন ও কন্সটান্টিনোপলে ফিরে যান।[৫০] সেখানে তিনি যুবরাজ ও ভবিষ্যত সুলতান ষষ্ঠ মেহমেদের অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিজার্মানিতে রেলভ্রমণের সময় তার সহচরের দায়িত্ব পান।[৫০] জার্মানিতে অবস্থানকালে মোস্তফা কামাল পশ্চিম ইউরোপীয় রণাঙ্গনে জার্মান অবস্থানগুলো পরিদর্শন করেন। অক্ষশক্তি খুব শীঘ্রই যুদ্ধে পরাজিত হবে এই বোধ তার ভেতর জন্ম নেয়।[৫০] একথা তিনি খোলাখুলিভাবে কাইজার দ্বিতীয় উইলহাম এবং তার অন্যান্য উচ্চপদস্থ সেনানায়কদের কাছে উল্লেখ করেন।[৫০] ফিরতি পথে কার্লসবাদ ও ভিয়েনায় চিকিৎসার জন্য সাময়িকভাবে অবস্থান করেন।[৫০]

ষষ্ঠ মেহমেদ ১৯১৮ এর জুলাইয়ে সুলতান হন। তিনি মোস্তফা কামাল পাশাকে কন্সটান্টিনোপলে ডেকে পাঠান এবং আগস্টে তাকে ফিলিস্তিনে সপ্তম বাহিনীকে নেতৃত্বদানের জন্য নিয়োগ করেন।[৫০] মোস্তফা কামাল ২৬ আগস্ট আলেপ্পোয় পৌছান এবং নাবলুসে তার সদরদপ্তরে কাজ শুরু করেন। সপ্তম বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রধান কেন্দ্রের দখল বজায় রাখছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর মেগিড্ডোর যুদ্ধের প্রাক্কালে অষ্টম বাহিনী উপকূলীয় অঞ্চলের দখল ধরে রেখেছিল। তারা ব্যর্থ হলে লিমান পাশা সপ্তম বাহিনিকে উত্তর থেকে সরে জর্ডান নদীতে ব্রিটিশদের অগ্রগতিকে বাধাদানের আদেশ দেন। সপ্তম বাহিনী জর্ডান নদীর দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু ২১ সেপ্টেম্বর নাবলুস থেকে পিছু হটার সময় ব্রিটিশদের বোমাবর্ষণের ফলে তারা পর্যুদস্ত হয়।[৫৭] ৩০ সেপ্টেম্বর মাদরুসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যে অবস্থানরত সকল জার্মান এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সৈন্যবহরকে অবস্থান ত্যাগের জন্য সময় দেয়া হয়। ৩১ অক্টোবর মোস্তফা কামাল লিমান ভন স্যান্ডার্সের স্থলে ইল্ডিরিম আর্মি গ্রুপের নেতৃত্বদানের দায়িত্ব পান। তিনি এন্টিপের বেসামরিক জনগণকে অস্ত্রসজ্জিত করেন যাতে মিত্রশক্তির হামলার মোকাবিলা করা যায়।[৫০]

এই অংশের দক্ষিণে অবস্থানরত বাহিনীর ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব উসমানীয় সেনাবাহিনীতে তার শেষ সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ১৯১৮ এর নভেম্বরের দিকে ইল্ডিরিম আর্মি গ্রুপ দাপ্তরিকভাবে অবলুপ্ত হয়। ১৩ নভেম্বর মোস্তফা কামাল অধিকৃত কন্সটান্টিনোপলে ফিরে আসেন।[৫০] কিছুকালের জন্য তিনি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তরে কাজ করেন। ১৯১৯ সালের ১৬ মে পর্যন্ত তিনি এখানে কাজ করেন।[৫০] উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিভক্তির সীমা বরাবর মিত্রশক্তি আনাতোলিয়া অধিকার করে নেয়। স্মারনার পর কন্সটান্টিনোপল অধিকারের ফলশ্রুতিতে তুরস্কের জাতীয় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা ও তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়।[৫৮]

তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৯১৯-১৯২২)

মোস্তফা কামাল পাশা (ডানে) ও ইসমেত পাশা (বামে), আঙ্কারা
খ্যাতনামা জাতীয়তাবাদীদের সাথে
২৪ মার্চ ১৯২৩ সালের টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছবি। শিরোনাম : "Where is a Turk his own master?"

উসমানীয় সামরিক ইউনিটগুলোর অবস্থা পরিদর্শন ও আভ্যন্তরীন নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতির জন্য ১৯১৯ সালের ৩০ এপ্রিল কামাল পাশাকে নবম বাহিনীর পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়।[৫৯] ১৯ মে তিনি সামসুনে পৌছেন। তার প্রথম লক্ষ্য ছিল দখলদার বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে একটি জাতীয় প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠিত করা। জুনে তিনি আমসইয়া ঘোষণার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন বলে ঘোষণা করেন। ৮ জুলাই তিনি উসমানীয় সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। উসমানীয় সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে তাকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়।

উসমানীয় সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন ১৯১৯ এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোস্তফা কামালের নেতৃত্বাধীন “অ্যাসোসিয়েশন ফর ডিফেন্স অব রাইট ফর আনাতোলিয়া এন্ড রুমেলিয়া” সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এসময় তিনি আঙ্কারায় অবস্থান করছিলেন। ১৯২০ সালের ১২ জানুয়ারি কন্সটান্টিনোপলে সংসদের চতুর্থ ও শেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। মিসাক-ই মিল্লি (“জাতীয় চুক্তি”) ঘোষণার কিছুদিন পর ১৮ মার্চ ব্রিটিশরা এটিকে ভেঙে দেয়। আঙ্কারায় নতুন তুর্কি সংসদ “গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি” (জিএনএ) প্রতিষ্ঠার জন্য মোস্তফা কামাল জাতীয় নির্বাচনের ডাক দেন।[৬০] ২৩ এপ্রিল মোস্তফা কামালকে স্পিকার করে করে এর কার্যক্রম শুরু হয়। এর ফলে রাষ্ট্রে দ্বৈত শাসনের সূচনা হয়।

১৯২০ সালের ১০ আগস্ট উজিরে আজম দামাত ফেরিদ পাশা সেভরে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর ফলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিভক্তি চূড়ান্ত হয়। তুর্কিদের মূল ভূখণ্ড এই চুক্তির আওতায় ছিল। মোস্তফা কামাল তুর্কি জাতির স্বার্থে ও দেশের স্বাধীনতার জন্য এর প্রতিবাদ করেন। একটি জাতীয় সেনাবাহিনী গড়ে তোলার জন্য তিনি জিএনএ এর প্রতি আহ্বান জানান। জিএনএ এর বাহিনী মিত্রশক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসা খলিফার বাহিনীর মুখোমুখি হয়। পূর্ব রণাঙ্গনে আর্মেনিয়ান বাহিনী এবং স্মারনা (আধুনিক ইজমির) থেকে পূর্বদিকে ধাবমান গ্রিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। গ্রীকরা ১৯১৯ এর মে মাসে স্মারনা দখল করে।

কমল এবং তুর্কি সেনা 1922 সালের 18 জুন।

জিএনএ'র সামরিক বাহিনী আর্মেনীয়দের বিরুদ্ধে ১৯২০ এর হেমন্তে বিজয় লাভ করে। পরবর্তীতে গ্রীকদের বিরুদ্ধেও তারা বিজয়ী হয়।[৬১] ১৯২০ এর হেমন্ত থেকে রাশিয়ার বলশেভিক সরকার কর্তৃক কামালের লোকদেরকে স্বর্ণ ও যুদ্ধোপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়।

গ্রীক-তুর্কি যুদ্ধের সময় পরপর কয়েকটি লড়াইয়ের পর সাকারইয়া নদীর অনেক কাছাকাছি, জিএনএ'র মাত্র ৮৯ কিলোমিটারের মধ্যে পৌছায়। ১৯২১ সালের ৫ আগস্ট জিএনএ মোস্তফা কামালকে প্রধান সেনানায়ক হিসেবে নিযুক্ত করে।[৬২] ২৩ আগস্ট সাকারইয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং গ্রীকরা এতে পরাজিত হয়। এই বিজয়ের পর ১৯ সেপ্টেম্বর গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি মোস্তফা কামালকে মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া ও গাজি উপাধিতে ভূষিত করে। কামালের সাফল্য সত্ত্বেও মিত্রশক্তি সেভরে চুক্তির কিছুটা পরিবর্তিত রূপে আঙ্কারার সামনে উত্থাপন করলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। ১৯২২ সালের আগস্টে কামাল গ্রীকদের উপর ব্যাপক আক্রমণ শুরু করেন। ৯ সেপ্টেম্বর তুর্কিরা স্মারনার অধিকার লাভ করে।[৬৩] ১০ সেপ্টেম্বর মোস্তফা কামাল গণহত্যার জন্য আঙ্কারা সরকার দায়ী থাকবে না বলে লিগ অব ন্যাশনসে টেলিগ্রাম পাঠান।[৬৪]

রাষ্ট্রপতিত্ব

তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

১৯২২ সালের ২১ নভেম্বর লোজান সম্মেলন শুরু হয়। এতে তুরস্কের প্রতিনিধি ইসমত ইনোনু তুরস্কের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করে এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।[৬৫] ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই জিএনএকে তুরস্কের সরকার স্বীকার করে লোজান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।

রাষ্ট্রপতির পদ প্রাপ্তি

বুরসায় বক্তৃতাকালে, ১৯২৪।

তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর একে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। নতুন সরকার ফ্রান্স, সুইডের ও সুইজারল্যান্ডের মত ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিষ্ঠান ও সংবিধানগুলো পর্যালোচনা করে সেগুলোকে তুরস্কের জন্য গ্রহণ করে। কামালের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনবহিত হওয়ায় জনগণ “আমরা প্রথম খলিফাদের দিনে ফিরে যাচ্ছি” বলে উল্লাস করে।[৬৬] মোস্তফা কামাল তার সংস্কারের স্বার্থে ফেভজি চাকমাক, কাজিম ওজাল্প ও ইসমত ইনানোকে রাজনৈতিক পদ প্রদান করেন। মোস্তফা কামাল একজন দক্ষ সামরিক অধিনায়ক হিসেবে প্রাপ্ত সম্মান কাজে লাগান এবং ১৯৩৮ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারকাজ চালিয়ে যান। এর মাধ্যমে তিনি তুর্কি সমাজকে বিশাল সাম্রাজ্যের একটি মুসলিম অংশ থেকে আধুনিক, গণতন্ত্রী ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতিতে পরিণত করেন।

অভ্যন্তরীণ নীতি

কামালের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের পূর্ণ স্বাধীনতা।[৬৭] তিনি তার অবস্থান এই বলে ব্যক্ত করেন:

নতুন প্রজাতন্ত্রের আইন, বিচার ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কারকাজে তিনি নেতৃত্ব দেন।

মোস্তফা কামাল প্রাক্তন উসমানীয় সাম্রাজ্য ও নব্য প্রজাতন্ত্রের ভেতরকার পরিবর্তন তুলে ধরার জন্য ব্যানার তৈরী করেন। প্রত্যেক পরিবর্তন একেকটি তীর চিহ্ন দ্বারা নির্দেশিত হয়। এগুলোকে একত্রে কামালবাদী আদর্শ বলা হয়। এই আদর্শ মোস্তফা কামালের চিন্তার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।[৬৯] মূলনীতিগুলো বিশ্বরাজনীতিতে নতুন ছিল না তবে তা তুর্কি সমাজে নতুন ছিল। এগুলো তুর্কিদের প্রয়োজন অনুসারে গঠিত হয়েছিল। এর একটি উদাহরণ হল, কামালবাদী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র খ্রীষ্টান রাষ্ট্রগুলো থেকে যথেষ্ট পার্থক্যসূচক ছিল।

রাষ্ট্রের উদ্ভব, ১৯২৩-১৯২৪

মেভলেভি তরিকার সদস্যদের সাথে মোস্তফা কামাল পাশা, ১৯২৩। এটি তুরস্কে সূফিবাদ নিষিদ্ধের পূর্বের ছবি। নিষিদ্ধের পর দরবেশদের খানকাহগুলোকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। তবে এই প্রথা রাজনীতি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে যেতে সক্ষম হয়।
তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের মানচিত্র, Anavatan ("মাতৃভূমি"), 1927 সালে।
কামাল 1931 সালে একটি নাগরিকের সাথে কথা বলেন।

মোস্তফা কামালের ব্যক্তিগত জার্নাল ১৯২৩ সালে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগে থেকে চালু ছিল। এই জার্নাল থেকে বোঝা যায় যে তিনি জনগণের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করতেন। নতুন প্রজাতন্ত্র গঠনের সময় তুর্কি বিপ্লবীরা কন্সটান্টিনোপল এবং উসমানীয় ঐতিহ্যের পতন এবং দুর্নীতির বিষয়ে অনুধাবন করেন।[৭০] তারা আঙ্কারাকে দেশের নতুন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন। এটি আনাতোলিয়ার একটি প্রাদেশিক শহর ছিল। আঙ্কারা স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠে। সংসদ কর্তৃক শাসিত সরকার কামালের আকাঙ্খা ছিল।[৭১] তিনি চাইতেন এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে জাতীয় সংসদ ক্ষমতা সর্বোচ্চ উৎস হবে।[৭১]

পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি তার অবস্থান বদল করেন। রাষ্ট্রে তখন ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন ছিল এবং সংসদ কর্তৃক শাসিত সরকার এই পরিস্থিতির জন্য উপযোগী ছিল না। বিপ্লবীরা প্রাক্তন উসমানীয় আমলের সমর্থক, সেই সাথে কমিউনিজম ও ফেসিজম সমর্থকদের কাছ থেকে ব্যাপক বিরোধীতার সম্মুখীন হন। মোস্তফা কামাল ১৯২০ ও ৩০ এর দশকে এই দুই মতাদর্শ প্রয়োগের ফলাফল প্রত্যক্ষ করেন। তাই তিনি এ দুটিকেই প্রত্যাখ্যান করেন।[৭২] সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানিইতালির মত তিনি তুরস্কে পার্টির শাসনের পক্ষপাতি ছিলেন না।[৭৩]

মোস্তফা কামাল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জিএনএ নতুন প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্র হয়ে উঠে।[৭৪] নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল স্বচ্ছ।[৭৪] এর সদস্যরা তুর্কি সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও সরকার নির্বাচনের অধিকার সংসদের ছিল। এটি আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংরক্ষণ করত, সেই সাথে নির্বাহী বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ অধিকারও ছিল। ১৯২১ সালের তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী সংসদ এই ক্ষমতা লাভ করে।[৭৪] ১৯২৪ সালের সংবিধানে আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণ করা হয়। এই দুই বিভাগের মধ্যে বিচারিক ব্যবস্থার পৃথকীকরণও এর অংশ ছিল। এরপর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোস্তফা কামাল শক্তিশালী অবস্থান লাভ করেন।

১৯২৪ সালের সংবিধান চালুর পরের বছর ১৯২৫ সালে একদলীয় শাসন চালু হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে গঠিত দল “পিপলস পার্টি” এসময় একমাত্র দল ছিল। ১৯২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এর নতুন নাম দেয়া হয় রিপাবলিকান পিপলস পার্টি

নাগরিক স্বাধীনতা ও খিলাফত, ১৯২৪-১৯২৫

মোস্তফা কামালের রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্যে অন্যতম ছিল খিলাফতের বিলোপ সাধন ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠা। খিলাফত ছিল সুন্নি মুসলিমদের রাজনৈতিক মতবাদ।[৭৫] সালতানাতের বিলোপ সহজসাধ্য ছিল। এসময় একদিকে প্রজাতন্ত্র অন্যদিকে খলিফার সরকার, দুই বজায় ছিল। কামাল ও ইনানো এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।[৭৬] ১৯২২ সালে সালতানাত বিলুপ্তির পর খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদ খলিফা নির্বাচিত হন।

খলিফার নিজস্ব কোষাগার ও সামরিক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নিজস্ব সেবার ব্যবস্থা ছিল। মোস্তফা কামাল বলেন যে এই ব্যবস্থার কোনো ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বৈধতা নেই। তিনি বিশ্বাস করতেন যে খলিফা বৈদেশিক প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ দাপ্তরিক অনুষ্ঠান ও উৎসবে অংশগ্রহণ করে সুলতানদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন।[৭৭] তিনি খলিফার ক্ষমতাকে জিএনএ'এর সাথে একীভূত করতে চাইতেন। ১৯২৪ সালের ১ জানুয়ারি[৭৭] ইনানো, চাকমাক ও ওজাল্প খিলাফতের বিলুপ্তির ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করেন। খলিফা রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না বলে বিবৃতি দেন।[৭৮] ১ মার্চ মোস্তফা কামাল সংসদে বলেন:

১৯২৪ সালের ৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফত বিলুপ্ত হয়। খিলাফতের ক্ষমতা জিএনএ'র এর আওতাভুক্ত করা হয়। অন্যান্য মুসলিম জাতিগুলো তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিতর্কে অবতীর্ণ হয়।[৭৮] ১৯২৬ সালের মে মাসে কায়রোতে “খিলাফত সম্মেলন” অনুষ্ঠিত হয়। খিলাফতকে “ইসলামের জন্য অত্যাবশ্যকীয়” ঘোষণা করা হয়। তবে এই ঘোষণা বাস্তব প্রয়োগের মুখ দেখেনি।[৭৮]

১৯২৬ ও ১৯৩১ সালে যথাক্রমে মক্কা ও জেরুজালেমে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এগুলো কোনো সিদ্ধান্তে পৌছতে ব্যর্থ হয়।[৭৮] তুরস্ক খিলাফতের পুনপ্রতিষ্ঠাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং মৌলিক অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। মোস্তফা কামাল ও অন্যান্য সংস্কারবাদীরা তাদের নিজেদের পথে যাত্রা শুরু করেন।[৮০]

খিলাফতের অবলুপ্তির পর সরকার ও ধর্মীয় কাজের মধ্যে পৃথকীকরণ করা হয়। এ উদ্দেশ্যে শিক্ষাকে মূল হিসেবে ধরা হয়। ১৯২৩ সালে তিনটি ধারার শিক্ষাব্যবস্থা ছিল। তার মধ্যে মাদরাসা ব্যবস্থা যা আরবি, কুরআন এসবের উপর পরিচালিত, তা বহুল প্রচলিত ছিল। দ্বিতীয় ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল ইদাদি ও সুলতানি। এগুলো তানযিমাত যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ হল কলেজ ও বিদেশী ভাষার সংখ্যালঘু বিদ্যালয়। এখানে ছাত্রদেরকে শিক্ষাদানের জন্য আধুনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হত। পুরনো মাদরাসা ব্যবস্থা আধুনিক করা হয়।[৮১] মোস্তফা কামাল প্রথাগত ইসলামিক শিক্ষাপদ্ধতিকে পরিবর্তন করেন।[৮১] শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারকে তিনি তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন।

১৯২৪ সালের গ্রীষ্মে মোস্তফা কামাল তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের জন্য আমেরিকান শিক্ষা সংস্কারক জন ডেওয়েকে আঙ্কারায় আমন্ত্রণ জানান।[৮১] তার শিক্ষা সংস্কার কার্যক্রমে গণস্বাক্ষরতা বৃদ্ধিকে মূল লক্ষ্য ধরা হয়। নাগরিক সংস্কৃতির বিকাশকে সহযোগীতা করার লক্ষ্যে তিনি শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চান। রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়গুলো একটি সাধারণ পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে। এটি “শিক্ষার একীভূতকরণ” বলে পরিচিতি পায়।

১৯২৪ সালের ৩ মার্চ শিক্ষাব্যবস্থার একীভূতকরণ আইনের মাধ্যমে বলবত করা হয়। নতুন আইনের অধীনে শিক্ষাকে অধিকমাত্রায় বিস্তৃত করা হয়। এই নতুন প্রক্রিয়ায় বিদ্যালয়গুলো তাদের পাঠ্যক্রম জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। একই সময় ধর্মীয় বিষয়গুলোকে সরকারের ধর্মীয় বিভাগের আওতাধীনে আনা হয়। শিক্ষাব্যবস্থার একীভূতকরণের পরও তুরস্ক ধর্মীয় বিদ্যালয় চালু ছিল। এগুলো উচ্চশিক্ষার দিকে অগ্রসর হয়। মোস্তফা কামালের মৃত্যুর পর সরকার তাদেরকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনে।

১৯২৫ সালে কাস্টামনু বক্তৃতার পর পানামা হ্যাট হাতে মোস্তফা কামাল

১৯২৫ সালে মোস্তফা কামাল তুর্কিদেরকে আধুনিক ইউরোপীয় পোশাক পড়তে উৎসাহ দেন[৮৩]দ্বিতীয় মাহমুদের সময় শুরু হওয়া পোশাক সংস্কার কার্যক্রম যাতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথাগত পোশাক ত্যাগ করা হচ্ছিল তাকে চূড়ান্ত রূপ দেয়াতে তিনি বদ্ধ পরিকর ছিলেন।[৮৩] উসমানীয় সাম্রাজ্যের আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় মাহমুদের সময় ১৮২৬ সালে ফেজ ব্যবহার শুরু হয়। মোস্তফা কামাল সর্বপ্রথম সরকারি চাকুরেদের জন্য হ্যাটকে বাধ্যতামূলক করেন।[৮৩] তার জীবদ্দশায় শিক্ষার্থী ও সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য পোশাক বিধিমালা প্রণীত হয়। সরকারি চাকরিজীবিদের অনেকেই হ্যাটকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে। ১৯২৫ সালে মোস্তফা কামাল একটি জনসমাবেশে তার পানামা হ্যাট পরিধান করেন। হ্যাট সভ্য জাতির পোশাক এটি বোঝাতেই তিনি এমনটা করেন। এই সংস্কারের সর্বশেষ অংশ ছিল পাগড়ির মত ধর্মভিত্তিক পোশাকের পরিবর্তে আধুনিক পশ্চিমা স্যুট ও নেকটাই সেই সাথে হ্যাট পরিধান করা।

মোস্তফা কামাল নারীদের জন্য আধুনিক পোশাককে উৎসাহিত করলেও নারীদের পোশাক কেমন হওয়া উচিত সেই বিষয়ে তিনি মত দেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে নারীরা তাদের নিজস্ব পোশাকের ধরন বেছে নিতে পারবে। বিভিন্ন আলোকচিত্রে তিনি ও তার স্ত্রী লতিফে উশাকগিলকে একসাথে দেখা যায়। এতে তার স্ত্রীকে ইসলামী রীতি অনুযায়ী মাথা ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখা যায়। পশ্চিমা পোশাক পরিহিতা নারীদের সাথে তোলা আলোকচিত্রেও মোস্তফা কামালকে দেখা যায়। তবে তার দত্তক কন্যা সাবিহা গাকচেন ও আফেত ইনান ভবিষ্যৎ তুর্কি নারীদের জন্য রোল মডেল হয়ে উঠেন। মোস্তফা কামালের লেখা অনুযায়ী:"নারীদের ধর্মীয় মতে আবৃতকরণ সমস্যার সৃষ্টি করবে না। … মাথা ঢেকে রাখার এই রীতি আমাদের সমাজের মূল্যবোধ ও রীতিবিরুদ্ধ নয়।"[৮৪]

১৯২৫ সালের ৩০ আগস্ট ধর্মীয় চিহ্নের উপর কামালের দৃষ্টিভঙ্গি তার কাস্তামনু বক্তৃতায় বিবৃত হয়। তিনি বলেন:

২ সেপ্টেম্বর সরকার দেশের সকল সূফি কার্যক্রম ও খানকাহসমূহ বন্ধের আদেশ জারি করে। মোস্তফা কামাল খানকাহগুলোকে জাদুঘরে রূপান্তরের আদেশ দেন। সূফিবাদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রদর্শন তুরস্কে বেআইনি ঘোষিত হয়। রাজনীতি নিরপেক্ষ সূফিবাদ যা শুধুমাত্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকবে, তার অনুমোদন দেয়া হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

খিলাফতের বিলুপ্তি ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংস্কার বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। রক্ষণশীল মতাবলম্বীরা এতে নাখোশ হয় এবং কামালবাদী সংস্কারকদের উপর হামলা করে।[৭৮]

কামালের বিরোধীপক্ষ, ১৯২৪-১৯২৭

মার্শাল মোস্তফা কামাল সামরিক অফিসারদের দ্বারা 24 আগস্ট 1925 আগস্ট সালাম দেওয়া হয়।

১৯২৪ সালে কামাল যখন মসুল সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন শেখ সাঈদ বিদ্রোহ সংগঠিত করা শুরু করেন। শেখ সাঈদ ছিলেন একজন ধনী কুর্দি গোত্রীয় ব্যক্তি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তিনি নকশবন্দি তরিকার নেতা ছিলেন। তিনি খিলাফতের বিলুপ্তির প্রতিবাদের সাথে পাশ্চাত্য ধাচের নাগরিক আইন, ধর্মীয় রীতির অবলোপন, বহুবিবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা ও সিভিল ম্যারেজ রীতিরও প্রতিবাদ করে। তিনি তার অনুসারীদেরকে সরকারের বিরুদ্ধের নীতির বিরুদ্ধে সংগঠিত করেন। ইসলামী আইনের পুনপ্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তার বাহিনী দেশময় ছড়িয়ে পড়ে, সরকারের কার্যালয়গুলো অবরোধ করে ও এলাজিগ ও দিয়ারবাকিরের গুরুত্বপূর্ণ শহরের অভিমুখে যাত্রা করে।[৮৬] সরকারের সদস্যরা শেখ সাঈদের বিদ্রোহকে পাল্টা বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত করেন। একে প্রতিরোধ করার জন্য তারা সামরিক পদক্ষেপ নেন। বিদ্রোহকে দমন করার জন্য ১৯২৫ সালের ৪ মার্চ আইন পাশ হয়। এই আইনের ফলে সরকার ব্যতিক্রমী ক্ষমতা লাভ করে সেই সাথে ধ্বংসাত্মক গ্রুপগুলো দমন করা কর্তৃত্ব লাভ করে। ১৯২৯ সালের ৪ মার্চ এটি বিলুপ্ত হয়।

জিএনএ এর অনেক সদস্য এসব পরিবর্তনে অসন্তুষ্ট ছিলেন। রিপাবলিকান পিপলস পার্টির বৈঠকে তারা বিরোধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল উল্লেখ করে নিন্দিত হন। মোস্তফা কামাল তা নিজের দলের ভেতর সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার ভয় প্রকাশ করেন।[৮৭] তিনি এই দলটিকে বাদ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।[৮৭] পরবর্তীতে নিন্দা প্রস্তাব দলভঙ্গের সুযোগ করে দেয়। কাজিম কারাবেকির তার বন্ধুদের নিয়ে ১৯২৪ সালের ১৭ অক্টোবর এমন একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন। এই নিন্দা মোস্তফা কামালের জন্য আস্থা ভোটে রূপ নেয়। ৮ নভেম্বর ভোটের পর এই নিন্দা প্রত্যাখ্যাত হয়।[৮৭] কামালের দল সংসদে একটি ছাড়া বাকি আসনগুলো লাভ করে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার লাভের পর[৮৭] কামাল বলেন, “তুর্কি জনগণ প্রজাতন্ত্র, সভ্যতা ও প্রগতির পথে যাত্রার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”[৮৭]

১৯২৪ সালের ১৭ নভেম্বর দলত্যাগীরা প্রগ্রেসিভ রিপাবলিকান পার্টি গঠন করেন। এর ফলে বহুদলীয় ব্যবস্থা চালু হয়। পিআরপি এর অর্থনৈতিক কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের বদলে ব্যক্তি উদ্যোগকে সমর্থন করে। দলের নেতৃবৃন্দ কামালের বিপ্লবী মুলনীতিকে সমর্থন করলেও সাংস্কৃতিক বিল্পব ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতির ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে।[৮৮] তারা মোস্তফা কামালের কর্মকাণ্ডের সাথে মৌলিকভাবে দ্বিমত ছিলেন না।[৮৯]

১৯২৬ সালে ইজমিরে মোস্তফা কামালকে হত্যা করার পরিকল্পনা ফাস হয়। খিলাফতের বিলুপ্তির বিপক্ষে অবস্থানকারী একজন প্রাক্তন সাংসদ এর সূত্রপাত করেন। তদন্ত হত্যা পরিকল্পনা থেকে সহিংস কর্মকাণ্ডের হোতাদের দিকে গড়ায়। তবে মূল উদ্দেশ্য ছিল কামালের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিরোধীদের চিহ্নিত করা। তদন্তের ফলে কারাবেকিরসহ অনেক রাজনৈতিক কর্মীকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। চাভিদ, আহমেদ শুকরু ও ইসমাইল কানবুলাতসহ কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা যারা তুর্কি বিপ্লবে দ্বিতীয় সারিতে ছিলেন, দোষী সাব্যস্ত হন। তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।[৯০] পিআরপি ও শেখ সাঈদের বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে যোগসাজোশ তদন্তে বের হয়ে আসে। বিচারের ফলে পিআরপিকে বিলুপ্ত করা হয়। ফলে নিয়মতান্ত্রিক বিরোধীতার ধারা ভেঙে পড়ে। মোস্তফা কামাল বলেন, “আমার নশ্বর দেহ ধুলো হয়ে যাবে, কিন্তু তুর্কি প্রজাতন্ত্র চিরকাল টিকে থাকবে”। হত্যাচেষ্টার পর তিনি এই উক্তি করেন।[৯১]

আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা, ১৯২৬-১৯৩০

স্টেট আর্ট এন্ড স্কাল্পচার মিউজিয়াম উদ্বোধনকালে ১৯২৭
রাষ্ট্রপতি মোস্তফা কামাল কায়সেরির জনগণকে নতুন তুর্কি বর্ণমালা শিক্ষা দিচ্ছেন, ২০ সেপ্টেম্মবর ১৯২৮।
লাইব্রেরীতে রাষ্ট্রপতি কামাল আতাতুর্ক, স্থান চানকায়া রাষ্ট্রপতি ভবন, আঙ্কারা, ১৯২৯

১৯২৬ সালের পরের বছরগুলোতে কামাল পূর্বতন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সময়কার সংস্কার থেকে মৌলিকভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিবর্তন শুরু করেন।[৯২] ইতিহাসে এই প্রথমবার ইসলামী আইন সেক্যুলার আইন থেকে পৃথক হয় এবং শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ করা হয়।[৯২] মোস্তফা কামাল বলেন,

১৯২৬ সালের ১ মার্চ ইতালীয় দন্ডবিধির উপর ভিত্তি করে গঠিত তুরস্কের দন্ডবিধি পাস হয়। সেই বছরের ৪ অক্টোবর ইসলামী আদালতগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। নতুন আইনের প্রতিষ্ঠা সময়সাপেক্ষ ছিল বিধায় কামাল ১৯৩৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এগুলোর অবলুপ্তিকে দীর্ঘায়িত করেন।

উসমানীয় আমলে নারী পুরুষের সামাজিক মেলামেশা নিরুৎসাহিত করা হয়। মোস্তফা কামাল সামাজিক সংস্কার কার্যক্রম খুব দ্রুত শুরু করেন। তার ব্যক্তিগত জার্নাল থেকে একথা বোঝা যায়। তিনি ও তার অধীনস্তরা নারীদের পর্দাপ্রথা ও বাইরের জগতের সাথে তাদের আত্মীকরণের বিষয়ে আলোচনা করেন। এই বিষয়ে তিনি কীভাবে অগ্রসর হচ্ছিলেন তা ১৯১৫ সালের নভেম্বরে তার জার্নালে পাওয়া যায়;

নারীদের স্বাধীনতা প্রদানের জন্য মোস্তফা কামালের নতুন আইনের প্রয়োজন ছিল। এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল নারীশিক্ষা। ১৯২৬ সালের ৪ অক্টোবর তুরস্কের সিভিল কোড পাশ হয়। সুইস সিভিল কোডের উপর ভিত্তি করে এটি প্রণীত হয়। নতুন আইনের অধীনে নারীরা উত্তরাধীকার ও তালাকের মত ব্যাপারে পুরুষের সমান হিসেবে গণ্য হয়। মোস্তফা কামালের মতে নারি ও পুরুষের একতার মাধ্যমে সমাজ তার উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে উসমানীয় যুগের মত নারী পুরুষের পৃথকীকরণ থাকলে তার আকাঙ্ক্ষিত প্রগতি অর্জন করা যাবে না।[৯৫] একটি বৈঠকে তিনি বলেন,

১৯২৭ সালে স্টেট আর্ট এন্ড স্কাল্পচার মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। এতদিন ধরে তুরস্কে ইসলামী আদর্শের সাথে মিল রেখে ভাস্কর্যের চর্চা খুবই কম ছিল। কামাল বিশ্বাস করতেন যে সংস্কৃতি হচ্ছে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি।[৯৭] প্রাক-ইসলামী যুগের তুর্কি সংস্কৃতি গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে। সেলজুক ও উসমানীয় সভ্যতার পূর্বের তুর্কি সংস্কৃতির উপর জোর দেয়া হয়। লোকসংস্কৃতির উপরও জোর দেয়া হয়।

১৯২৮ সালের বসন্তে মোস্তফা কামাল সমগ্র তুরস্ক থেকে আসা বেশ কয়েকজন ভাষাবিদ ও অধ্যাপকের সাথে আঙ্কারায় বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে তিনি তুর্কি ভাষা লেখার জন্য ল্যাটিন বর্ণমালার উপর ভিত্তি করে নতুন বর্ণমালা গঠনের বিষয়টি উত্থাপিত করেন। এই নতুন বর্ণমালা তুরস্কের স্বাক্ষরতা সমস্যা সমাধানকল্পে পূর্বে ব্যবহৃত আরবি বর্ণমালার স্থলে ব্যবহারের কথা বলা হয়। এজন্য তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে বলে আগত বিশেষজ্ঞরা মত দেন। বলা হয় যে কামাল দৃঢ়তার সাথে উত্তর দেন, “আমরা এটি তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে করব।”[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পরবর্তী মাসগুলোতে নতুন তুর্কি বর্ণমালার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এসময় তার বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি নতুন বর্ণমালার বিষয়ে উল্লেখ ক্করেন। ১৯২৮ সালের ১ নভেম্বর নতুন তুর্কি বর্ণমালা চালু ও আরবি বর্ণমালার ব্যবহার বিলুপ্ত করা হয়। এসময় জনগণে ১০ শতাংশ শিক্ষিত ছিল। তুর্কি ভাষায় আরবি বর্ণমালার ব্যবহার শিখতে প্রায় তিন বছর লাগত।[৮১] এসময় প্রচুর আরবিফার্সি শব্দ ব্যবহার করা হত।[৮১] মোস্তফা কামালের প্রচেষ্টায় ল্যাঙ্গুয়েজ কমিশন ল্যাটিন বর্ণমালার প্রচলনের দায়িত্ব হাতে নেয়।[৮১] এক উসমানীয়-আর্মেনিয়ান ক্যালিগ্রাফার এ ব্যাপারে সহায়তা করে।[৯৮] ১৯২৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর নতুন বর্ণমালা ব্যবহার করে তুরস্কে সর্বপ্রথম পত্রিকা প্রকাশিত হয়। নাগরিকদেরকে নতুন পন্থা শিক্ষাদানের জন্য কামাল নিজে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করেন। তার ধারণা অনুযায়ী নতুন ব্যবস্থা খুব শীঘ্রই বিস্তার লাভ করে এবং তুরস্কের স্বাক্ষরতার হার দুই বছরের মধ্যে ১০% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭০% হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯৩২ সালের শুরুতে দেশজুড়ে পিপলস হাউস খোলা হয় যাতে ৪ থেকে ৪০ বছরের মধ্যের মানুষেরা নতুন বর্ণমালা শিখতে পারে। কপিরাইট, গণশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক প্রকাশনীর উপর সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাক্ষরতা সংস্কারের জন্য নতুন কপিরাইট আইনে ব্যক্তিগত উদোগে প্রকাশনীকে সাহায্য করা হয়।

মোস্তফা কামাল প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির প্রবর্তন করেন। এজন্য ডেওয়ে সম্মানজনক অবস্থান লাভ করেন।[৮১] তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ডেওয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেন।[৮১] তিনি বয়স্ক শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। তুর্কি নারীদেরকে সন্তান প্রতিপালন, পোশাক তৈরী ও গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি ঘরের বাইরে কাজে অংশ নেয়ার জন্যও শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষাব্যবস্থাকে রাষ্ট্র কর্তৃক তত্ত্বাবধান করা হয়।[৯৯] তার শিক্ষা কার্যক্রম এমনভাবে পরিকল্পিত ছিল যাতে নাগরিকদের দায়িত্ববান হিসেবে গড়ে তোলা যায়।[৮১] দারিদ্র দূরীকরণ ও লিঙ্গ সমতার জন্য শিক্ষাকে ব্যবহার করা হয়।

আধুনিক শিক্ষাকে বিস্তৃত করার জন্য মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি দুটি পাঠ্যবই প্রণয়নের সাথে জড়িত ছিলেন। এদুটি হল “Vatandaş İçin Medeni Bilgiler  (১৯৩০) ও জিওমেট্রী (১৯৩৭)।

কামালের বিরোধীপক্ষ, ১৯৩০-১৯৩১

লিবারেল রিপাবলিকান পার্টির নেতা ফেতহি বে ও তার কন্যার সাথে, স্থান ইয়ালোভা, ১৩ আগস্ট ১৯৩০।

১৯৩০ সালের ১১ আগস্ট মোস্তফা কামাল বহুদলীয় ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি আলি ফেতহি ওকয়েরকে নতুন দল গঠন করতে বলেন। নবগঠিত লিবারেল রিপাবলিকান পার্টি দেশজুড়ে সাফল্য লাভ করে। তবে এবারেও এটি আতাতুর্কের সংস্কারের বিরুদ্ধাচারীদের কেন্দ্র হয়ে উঠে, বিশেষত ব্যক্তিজীবনে ধর্মের অবস্থানকে কেন্দ্র করে।

১৯৩০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়। মেনেমেন শহরে ইসলামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী এর সূচনা করে। ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কারের প্রতি একে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৯৩০ সালের নভেম্বরে আলি ফেতহি ওকয়ের তার দলকে বিলুপ্ত করেন। ১৯৪৫ সালে দীর্ঘস্থায়ী বহুদলীয় ব্যবস্থা শুরু হয়।

ব্যক্তিগত জীবন

কামাল আতাতুর্ক এবং তাঁর স্ত্রী লাতিফে উশাকিজাদে ১৯২৪ সালে বুরসায় একটি সফরকালে

কামাল আতাতুর্কের নাম চারজন মহিলার সাথে যুক্ত: এলেনি কারিন্তে, ফিকরিয়ে হানিম, দিমিত্রিনা কোভাচেভা[১০০] এবং লাতিফে উশাকলিগিল। এলেনির সাথে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে খুব কমই জানা যায়, যিনি তাঁর ভালোবাসায় পড়েছিলেন যখন আতাতুর্ক মেসিডোনিয়ার বিটোলায় একজন ছাত্র ছিলেন, কিন্তু এই সম্পর্কটি মেসেডোনীয় লেখক দেয়ান দুকভস্কির একটি নাটককে অনুপ্রাণিত করেছিল, পরবর্তীতে আলেকজান্ডার পপোভস্কি দ্বারা চিত্রায়িত হয়েছিল।[১০১] ফিকরিয়ে আতাতুর্কের নামমাত্র ফুফাতো বোন ছিলেন, যদিও তাঁর সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক ছিলেন না (তিনি ছিলেন আতাতুর্কের সৎ বাবা রাগিপ বেগ-এর বোনের মেয়ে)। ফিকরিয়ে আতাতুর্কের সাথে আবেগগতভাবে যুক্ত ছিলেন; আতাতুর্কের প্রতি তাঁর অনুভূতির সম্পূর্ণ সীমা অস্পষ্ট কিন্তু এটা নিশ্চিত যে ফিকরিয়ে তাঁর মিশরীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে ইস্তাম্বুলে ফিরে আসার পর আতাতুর্ক ও তিনি খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি আতাতুর্কের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে আঙ্কারার চানকায়াতে তাঁর সাথে থাকতেন।

যাইহোক ১৯২২ সালে তুর্কি সেনাবাহিনী ইজমিরে প্রবেশ করার পর আতাতুর্কের সঙ্গে লাতিফের সাক্ষাৎ হয় যখন আতাতুর্ক লাতিফের পিতা শিপিং ম্যাগনেট মুয়াম্মার উশাকিজাদের (পরবর্তীতে উশাকলি) বাড়িতে ছিলেন। লাতিফে আতাতুর্কের প্রেমে পড়েছিলেন; এ ক্ষেত্রেও তাঁর সাথে আতাতুর্কের ভালোবাসার সীমা কতটুকু ছিল অজানা, তবে আতাতুর্ক লাতিফের বুদ্ধিবৃত্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন: তিনি ছিলেন সর্বনের একজন স্নাতক এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় লন্ডনে ইংরেজিতে অধ্যয়ন করছিলেন। ২৮ জানুয়ারি ১৯২৩ তারিখে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। লাতিফে ফিকরিয়ের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন এবং তাঁকে চানকায়ের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন; ফিকরিয়ে উচ্ছন্ন হয়ে সঙ্গে সঙ্গে একটি গাড়িতে করে চলে যান। সরকারি বিবরণ অনুসারে, আতাতুর্ক কর্তৃক তাঁকে উপহার হিসেবে দেওয়া একটি পিস্তল দিয়ে ফিকরিয়ে নিজেকে গুলি করেছিলেন। যাইহোক, এটা গুজব ছিল যে তাঁকে পরিবর্তে খুন করা হয়েছিল।[১০২]

আতাতুর্ক, ফিকরিয়ে ও লাতিফের প্রেমের ত্রিভুজটি আতাতুর্কের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সালিহ বোজোকের একটি পাণ্ডুলিপির বিষয় হয়ে ওঠে, যদিও কর্মটি ২০০৫ সালের আগ পর্যন্ত অপ্রকাশিত ছিল।[১০৩] লাতিফে সংক্ষিপ্ত ও আক্ষরিক অর্থে নবযুগের তুর্কি নারীদের প্রতিচ্ছবি ছিলেন, তিনি তাঁর স্বামীর সাথে পাশ্চাত্য পোশাকে জনসমক্ষে উপস্থিত হতেন।[১০৪] তবে তাঁদের দাম্পত্য সুখের ছিল না; ঘন ঘন কলহের পর ৫ আগস্ট ১৯২৫-এ দুজনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।[১০৫]

জীবদ্দশায় আতাতুর্ক তেরোজন সন্তানকে দত্তক নিয়েছিলেন: একজন ছেলে এবং বারোজন মেয়ে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন সাবিহা গোকেন, তুরস্কের প্রথম মহিলা পাইলট এবং বিশ্বের প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলট।[১০৬]

আতাতুর্কের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[১০৭] কিছু গবেষক জোর দিয়েছেন যে ধর্ম সম্পর্কে তাঁর মতামত পর্যায়ক্রমিক এবং বিষয়টির সাথে সম্পর্কিত তাঁর ইতিবাচক মতামত ১৯২০ এর দশকের প্রথম দিকে সীমাবদ্ধ ছিল।[১০৮] কিছু তুর্কি সূত্র দাবি করে যে তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন।[১০৯][১১০][১১১] যাইহোক, অন্যান্য সূত্র অনুসারে, আতাতুর্ক নিজে ছিলেন একজন অজ্ঞেয়বাদী অর্থাৎ অধার্মিক ঈশ্বরবাদী[১১২][১১৩] অথবা এমনকি একজন নাস্তিক্যবাদী[১১৪][১১৫][১১৬] যিনি সাধারণভাবে ধর্মবিরোধী ও ইসলাম-বিরোধী ছিলেন।[১১৭][১১৮]

অসুখ ও মৃত্যু

আতাতুর্কের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি দৃশ্য, নভেম্বর ১৯৩৮

জীবনের বেশিরভাগ সময় আতাতুর্ক একজন মাঝারি থেকে ভারী মদ্যপানকারী ছিলেন, প্রায়ই দিনে আধা লিটার রাকি পান করতেন; তিনি মূলত সিগারেট আকারে তামাকও ধূমপান করতেন।[১১৯][১২০][১২১] ১৯৩৭ সালে আতাতুর্কের স্বাস্থ্য অবনতি হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯৩৮ সালের প্রথম দিকে ইয়ালোভা ভ্রমণের সময় তিনি একটি গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তিনি চিকিৎসার জন্য ইস্তাম্বুলে যান, যেখানে তাঁর সিরোসিস ধরা পড়ে। ইস্তাম্বুলে থাকার সময় তিনি তাঁর নিয়মিত জীবনধারা বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু অবশেষে তাঁর অসুস্থতায় নিমজ্জিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৩৮ সালের ১০ নভেম্বর ৫৭ বছর বয়সে দোলমাবাচে প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি পদ থাকাকালে মারা যান।[১২২] যে বেডরুমে তিনি মারা গেছেন সেই কক্ষের ঘড়িতে এখনও তাঁর মৃত্যুর সময়ে সেট করা আছে, সকাল ৯:০৫।

আতাতুর্কের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তুরস্কে দুঃখ ও গৌরব উভয়ই ডেকে এনেছিল এবং ১৭টি দেশ তাঁদের বিশেষ প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল, যেখানে নয়টি দেশ সশস্ত্র সম্মান প্রেরণ করে।[১২৩] আতাতুর্কের দেহাবশেষ মূলত আঙ্কারার নৃতাত্ত্বিক যাদুঘরে সমাহিত করা হয়েছিল, কিন্তু ১০ নভেম্বর ১৯৫৩ (তার মৃত্যুর ১৫ বছর পর) একটি ৪২-টন সার্কোফ্যাগাসে আঙ্কারার আনাতকাবিরে সমাধিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।[১২৪]

আতাতুর্ক তাঁর উইলে সকল সম্পত্তি রিপাবলিকান পিপলস পার্টিকে দান করেন, শর্ত থাকে যে তাঁর তহবিলের বার্ষিক সুদ[১২৫] তাঁর বোন মাকবুলে এবং তাঁর দত্তক নেওয়া সন্তানদের দেখাশোনা করতে এবং ইসমত ইনোনুর সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থায়ন করা হবে।[১২৬] বাকিটা তুর্কি ভাষা সমিতি এবং তুর্কি ঐতিহাসিক সমাজের কাছে উইল করা ছিল।[১২৭][১২৬]

প্রভাব

তুরস্ক

আঙ্কারায় অবস্থিত আতাতুর্কের সমাধি আনাতকাবিরে প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো দিন বিশাল জনসমাগম হয়ে থাকে।

কামাল আতাতুর্কের স্মরণে তুরস্ক জুড়ে অনেক স্মৃতিচিহ্ন তৈরি হয়েছে, যেমন ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গোল্ডেন হর্নের (হালিক) উপর নির্মিত আতাতুর্ক সেতু, আতাতুর্ক বাঁধ এবং আতাতুর্ক স্টেডিয়াম। তুর্কি সরকার তুরস্কের সকল শহরে আতাতুর্কের ভাস্কর্য স্থাপন করেছস এবং অধিকাংশ শহরে তাঁর নিজস্ব স্মারক আছে। তুরস্কের সর্বত্র তাঁর মুখ ও নাম দেখা ও শোনা যায়; তাঁর প্রতিকৃতি সরকারি ভবন, স্কুল, সকল তুর্কি লিরা ব্যাংকনোট এবং তুরস্কের অনেক পরিবারের বাড়িতে পর্যন্ত দেখা যায়।[১২৮] প্রতি বছর ১০ নভেম্বর সকাল ৯:০৫ মিনিটে আতাতুর্কের মৃত্যুর একদম ঠিক মুহুর্তে, দেশটির রাস্তায় বেশিরভাগ যানবাহন এবং লোকেরা তাঁর স্মরণে এক মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করে।[১২৯]

১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দেরেস নেতৃত্বাধীন ডেমোক্র্যাট পার্টি-নিয়ন্ত্রিত (আতাতুর্কের নিজস্ব রিপাবলিকান পিপলস পার্টির রক্ষণশীল বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও) তুর্কি পার্লামেন্টে একটি আইন (আতাতুর্কের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আইন) জারি করা হয় যেখানে তাঁর স্মৃতির অবমাননা (hatırasına alenen hakaret) এবং তাঁকে প্রতিনিধিত্বকারী বস্তুসমূহের ধ্বংসযজ্ঞকে নিষিদ্ধ করা হয়।[১৩০] এই আইনের মাধ্যমে সমালোচনা ও অবমাননার মাঝের সীমাবদ্ধতাকে একটি রাজনৈতিক যুক্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং আইনের ৫ম অনুচ্ছেদের আলোকে বিচারমন্ত্রীকে (একটি রাজনৈতিক অবস্থান) আইন কার্যকর করার জন্য সরকারি অভিশংসকের পরিবর্তে নিয়োগ করা হয়েছিল। এই আইন লঙ্ঘন করে এমন ওয়েবসাইটগুলোর নিন্দা করার জন্য একটি সরকারি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়।[১৩১]

২০১০ সালে ফ্রান্স-ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স আতাতুর্কের স্মৃতি রক্ষাকারী তুর্কি আইনের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় এবং যুক্তি দেয় যে তুর্কি কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমের বাকস্বাধীনতার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান সূচকগুলোর বিরোধিতা করে।[১৩২]

বিশ্বজুড়ে

তুর্কি প্রজাতন্ত্রের সুদর্শন নেতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নারীদের প্রশংসা সম্পর্কে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সংবাদ নিবন্ধ।

১৯৮১ সালে আতাতুর্কের জন্মের শতবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতিকে জাতিসংঘইউনেস্কো সম্মানিত করেছিল, সালটিকে বিশ্ব আতাতুর্ক বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে এবং আতাতুর্ক শতবর্ষে রেজোল্যুশন গ্রহণ করে।[২০][২১] তুরস্কের বাইরে আতাতুর্ক স্মৃতিস্তম্ভের কয়েকটি উদাহরণ হলো মেক্সিকো সিটির পাসেও দে লা রেফোর্মায় আতাতুর্ক স্মৃতিস্তম্ভ; আজারবাইজানের বাকুতে আতাতুর্ক স্মৃতিস্তম্ভ; নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে আতাতুর্ক স্মৃতিস্তম্ভ (যেটি গ্যালিপোলিতে নিহত এএনজেডএসি সৈনিকদের স্মৃতিসৌধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়); অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় আনজাক প্যারেডের গৌরবাঙ্গনে আতাতুর্ক স্মৃতিস্তম্ভ; এবং চিলির সান্তিয়াগোতে প্লাজা মুস্তাফা কেমাল আতাতুর্ক ও ইতালির রোমে লার্গো মুস্তাফা কেমাল আতাতুর্ক নামে পরিচিত চত্বরসমূহ। ভারতের নয়াদিল্লিতে কামাল আতাতুর্ক মার্গ; বাংলাদেশের ঢাকাচট্টগ্রামে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ; পাকিস্তানের কেন্দ্রস্থল ইসলামাবাদে আতাতুর্ক এভিনিউ; পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানার দক্ষিণের নগরে আতাতুর্ক রোড; তিউনিসিয়ার তিউনিসে মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক সড়ক; ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের সান্তো দোমিঙ্গোর নাকো জেলার মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক সড়ক; এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডামে আমস্টার্ডাম-নোর্ট বরোতে আতাতুর্ক সড়ক ও স্মৃতিস্তম্ভের মতো বেশ কয়েকটি দেশে তাঁর নামে রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার আলবানিতে প্রিন্সেস রয়্যাল হার্বারের প্রবেশপথের নাম আতাতুর্ক প্রণালি। উত্তর সাইপ্রাসে আতাতুর্কের নামে অনেক ভাস্কর্য ও সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।

তাঁর উগ্র-ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কারকার্যের সত্ত্বেও আতাতুর্ক মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।[১৩৩] খ্রিস্টান ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসনের সময়ে একটি নতুন, সম্পূর্ণ স্বাধীন মুসলিম দেশের প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিজয়ী হওয়ার জন্য তাঁকে স্মরণ করা হয়।[১৩৩] যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তখন নিখিল ভারত মুসলিম লীগ তাঁকে "ইসলামি বিশ্বের একজন সত্যিকারের মহান ব্যক্তিত্ব, একজন মহান সেনাপতি এবং একজন মহান রাষ্ট্রনায়ক" হিসেবে উল্লেখ করে এবং ঘোষণা করে যে তাঁর স্মৃতি "সারা বিশ্বের মুসলিমদের সাহস, অধ্যবসায় ও পুরুষত্ব দ্বারা অনুপ্রাণিত করবে।"[১৩৩]

মেক্সিকো সিটির পাসে দে লা রেফোর্মায় আতাতুর্ক স্মৃতিস্তম্ভ

আতাতুর্কের প্রশংসাকারীদের পরিসর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাঁর প্রতিপক্ষ রাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে জার্মান নাৎসি নেতা ও স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলার[১৩৪][১৩৫][১৩৬][১৩৭] পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল; হিটলার আতাতুর্ককে "অন্ধকারের তারকা"[১৩৮] বলে অভিহিত করেছিলেন, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট এবং জন এফ. কেনেডি, যিনি ১৯৬৩ সালে আতাতুর্ককে তাঁর মৃত্যুর ২৫ তম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন।[১৩৯]

জাতীয় সার্বভৌমত্বকে উৎসাহিতকারী রোলমডেল হিসাবে, আতাতুর্ক তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বিশেষভাবে সম্মানিত, যেখানে তাঁকে ঔপনিবেশিক শক্তি থেকে স্বাধীনতার অগ্রদূত হিসেবে দেখা হতো। এই ধরনের দেশের নেতাদের মধ্যে আতাতুর্কের ইরানের সমসাময়িক রেজা শাহ পাহলভি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতি হাবিব বুরগিবা ও মিশরের রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।[১৪০][১৪১][১৪২] পাকিস্তানি কবি ও দার্শনিক মুহাম্মদ ইকবাল এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সম্মানে কবিতা লিখেছেন।

১৯৩৫ সালের ১৮ এপ্রিল তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দ্বাদশ আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং মিশরীয় জাতীয়তাবাদী-নারীবাদী হুদা শারাওভি আন্তর্জাতিক মহিলা সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। হুদা আতাতুর্ককে তাঁর ক্রিয়াকলাপের জন্য আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন এবং তাঁর স্মৃতিচারণে লিখেছেন:

ইস্তাম্বুল সম্মেলন শেষ হওয়ার পর, আমরা আধুনিক তুরস্কের মুক্তিদাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়েছি ... এবং আমি বললাম: যদি তুর্কিরা আপনাকে তাঁদের পিতার যোগ্য বলে মনে করে এবং তাঁরা আপনাকে আতাতুর্ক বলে ডাকে, আমি বলি যে এটি যথেষ্ট নয়, তবে আপনি আমাদের জন্য "আতাশার্ক" [প্রাচ্যের পিতা]। এর অর্থ নারী প্রতিনিধি দলের কোনো প্রধানের কাছ থেকে আসেনি, এবং মহান গুণের জন্য আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানান, এবং তারপর আমি তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম যে তিনি ল্‌'এগিপ্তিয়েঁ জার্নালে প্রকাশনার জন্য মহামান্যের একটি ছবি দিয়ে আমাদের বাধিত করতে।[১৪৩]

যাইহোক, আতাতুর্কের প্রশংসা সার্বজনীন নয়। ১৯১৯–১৯২৩ সালের জাতীয় আন্দোলনের নেতা হিসসেবে, আতাতুর্ককে মিত্রবাহিনী এবং ইস্তাম্বুলের সাংবাদিক আলি কামাল (যিনি বিশ্বাস করতেন যে স্বাধীনতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে এবং মিত্রশক্তি আরও কঠোর শাস্তি আরোপ করবে) একজন "দস্যু প্রধান" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। লর্ড বেলফোর এই প্রসঙ্গে তাঁকে "সকল ভয়ঙ্কর তুর্কিদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর" বলে অভিহিত করেছিলেন।[১৪৪]

আরও দেখুন

  • আতাতুর্কের বিরুদ্ধে অপরাধের আইন
  • আতাতুর্ক ও হাজিয়া সোফিয়া
  • আতাতুর্ক বনানী খামার ও চিড়িয়াখানা
  • ইউরোপীয় আন্তঃযুদ্ধকালীন একনায়কত্ব
  • গ্রিক গণহত্যা
  • ইলেরি সংবাদপত্র
  • কামালবাদ
  • কামালবাদী ইতিহাস রচনা
  • টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের তালিকা (১৯২০-এর দশক) – ২৪ মার্চ ১৯২৩ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭
  • নুতুক
  • মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের কালপঞ্জি
  • তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ
    • তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের উচ্চপদস্থ সেনাপতিদের তালিকা
    • তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের কালপঞ্জি
  • তরুণ তুর্কি

টীকা

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

নথি
  • Ahmad, Feroz (১৯৯৩)। The Making of Modern Turkey। London; New York: Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-07835-1 
  • Armstrong, Harold Courtenay (১৯৭২)। Grey Wolf, Mustafa Kemal: An Intimate Study of a Dictator। Freeport, NY: Books for Libraries Press। আইএসবিএন 978-0-8369-6962-7 
  • Atillasoy, Yüksel (২০০২)। Atatürk: First President and Founder of the Turkish Republic। Woodside, NY: Woodside House। আইএসবিএন 978-0-9712353-4-2 
  • Bacqué-Grammont, Jean-Louis; Roux, Jean-Paul (১৯৮৩)। Mustafa Kemal et la Turquie nouvelle (ফরাসি ভাষায়)। Paris: Maisonneuve et Larose। আইএসবিএন 2-7068-0829-2 
  • Barber, Noel (১৯৮৮)। Lords of the Golden Horn। London: Arrow। আইএসবিএন 978-0-09-953950-6 
  • Barlas, Dilek (১৯৯৮)। Statism and Diplomacy in Turkey: Economic and Foreign Policy Strategies in an Uncertain World, 1929–1939। New York: Brill Academic Publishers। আইএসবিএন 978-90-04-10855-4 
  • Cleveland, William L (২০০৪)। A History of the Modern Middle East। Boulder, Colorado: Westview Press। আইএসবিএন 978-0-8133-4048-7 
  • Crease, Robert P. (২০১৯)। "Kemal Atatürk: Science and Patriotism"। The workshop and the world: what ten thinkers can teach us about science and authority (ইংরেজি ভাষায়)। New York: W.W. Norton & Company, Inc.। পৃষ্ঠা 189–204। আইএসবিএন 978-0-393-29243-5ওসিএলসি 1037807472 
  • Doğan, Çağatay Emre (২০০৩)। Formation of Factory Settlements Within Turkish Industrialization and Modernization in 1930s: Nazilli Printing Factory (তুর্কি ভাষায়)। Ankara: Middle East Technical University। ওসিএলসি 54431696 
  • Hanioğlu, M. Şükrü (২০১১)। Atatürk: An Intellectual Biography। New Jersey and Woodstock (Oxfordshire): Princeton University Press। আইএসবিএন 978-0-691-15109-0 
  • Huntington, Samuel P. (২০০৬)। Political Order in Changing Societies। New Haven, Conn.; London: Yale University Press। আইএসবিএন 978-0-300-11620-5 
  • İğdemir, Uluğ; Mango, Andrew (translation) (১৯৬৩)। Atatürk। Ankara: Turkish National Commission for UNESCO। পৃষ্ঠা 165–170। ওসিএলসি 75604149 
  • İnan, Ayşe Afet (২০০৭)। Atatürk Hakkında Hatıralar ve Belgeler (তুর্কি ভাষায়)। Istanbul: Türkiye İş Bankası Kültür Yayınları। আইএসবিএন 978-9944-88-140-1 
  • İnan, Ayşe Afet; Sevim, Ali; Süslü, Azmi; Tural, M Akif (১৯৯৮)। Medeni bilgiler ve M. Kemal Atatürk'ün el Yazıları (তুর্কি ভাষায়)। Ankara: AKDTYK Atatürk Araştırma Merkezi। আইএসবিএন 978-975-16-1276-2 
  • Kinross, Patrick (২০০৩)। Atatürk: The Rebirth of a Nation। London: Phoenix Press। আইএসবিএন 978-1-84212-599-1ওসিএলসি 55516821 
  • Kinross, Patrick (১৯৭৯)। The Ottoman Centuries: The Rise and Fall of the Turkish Empire। New York: Morrow। আইএসবিএন 978-0-688-08093-8 
  • Landau, Jacob M (১৯৮৩)। Atatürk and the Modernization of Turkey। Boulder, Colorado: Westview Press। আইএসবিএন 978-0-86531-986-8 
  • Lengyel, Emil (১৯৬২)। They Called Him Atatürk। New York: The John Day Co। ওসিএলসি 1337444 
  • Mango, Andrew (২০০২) [1999]। Atatürk: The Biography of the Founder of Modern Turkey (Paperback সংস্করণ)। Woodstock, NY: Overlook Press, Peter Mayer Publishers, Inc। আইএসবিএন 978-1-58567-334-6 
  • Mango, Andrew (২০০৪)। Atatürk। London: John Murray। আইএসবিএন 978-0-7195-6592-2 
  • Saikal, Amin; Schnabel, Albrecht (২০০৩)। Democratization in the Middle East: Experiences, Struggles, Challenges। Tokyo: United Nations University Press। আইএসবিএন 978-92-808-1085-1 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  • Shaw, Stanford Jay; Shaw, Ezel Kural (১৯৭৬–১৯৭৭)। History of the Ottoman Empire and Modern Turkey। Cambridge; New York: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-21280-9 
  • Spangnolo, John (১৯৯২)। The Modern Middle East in Historical Perspective: Essays in Honour of Albert Hourani। Oxford: Middle East Centre, St. Antony's College। আইএসবিএন 978-0-86372-164-9ওসিএলসি 80503960 
  • Tunçay, Mete (১৯৭২)। Mesaî : Halk Şûrâlar Fırkası Programı, 1920 (তুর্কি ভাষায়)। Ankara: Ankara Üniversitesi Siyasal Bilgiler Fakültesi। ওসিএলসি 1926301 
  • Tüfekçi, Gürbüz D (১৯৮১)। Universality of Atatürk's Philosophy। Ankara: Pan Matbaacılık। ওসিএলসি 54074541 
  • Yapp, Malcolm (১৯৮৭)। The Making of the Modern Near East, 1792–1923। London; New York: Longman। আইএসবিএন 978-0-582-49380-3 
  • Webster, Donald Everett (১৯৭৩)। The Turkey of Atatürk; Social Process in the Turkish Reformation। New York: AMS Press। আইএসবিএন 978-0-404-56333-2 
  • Zürcher, Erik Jan (২০০৪)। Turkey: A Modern History। London; New York: I.B. Tauris। আইএসবিএন 978-1-85043-399-6 
গবেষণাপত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ