চ্যাটবট

চ্যাটবট (Chatbot) বা চ্যাটারবট (Chatterbot) এক ধরনের আলাপকারী এজেন্ট বা কম্পিউটার প্রোগ্রাম। এটি শ্রবণভিত্তিক কিংবা পাঠ্যভিত্তিক পদ্ধতিতে এক বা একাধিক মানুষের সাথে বুদ্ধিদীপ্ত আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নিয়ে বানানো হয়। বেশির ভাগ চ্যাটারবটের উত্তর শুনে মনে হয় যে তারা বুদ্ধিমান মানুষের মত ভেবেচিন্তে উত্তর দিচ্ছে, কিন্তু আসলে তারা সাধারণত ইনপুট থেকে এক বা একাধিক বিশেষ শব্দ (keyword) বেছে নেয় এবং সেগুলি কোন একটি ডাটাবেজের সাথে মিলিয়ে নিয়ে উত্তর তৈরি করে।[১][২] চ্যাটবটের এ পদ্ধতিটি পরিচালনার জন্য সাধারণত একে নিয়মিত ভাবে টিউনিং ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে রাখতে হয়। প্রথম দিকের বানানো চ্যাটবট গুলো কথোপকথন চালিয়ে যেতে সক্ষম ছিল না। ২০১২ সাল পর্যন্ত এগুলোর কোনটিই টুরিং মানদণ্ডের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।[৩] "চ্যাটারবট" শব্দটি কথোপকথন মূলক প্রোগ্রামগুলিকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ধারণাটি সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে মাইকেল মউলডিন (প্রথম ভার্বোটের স্রষ্টা) এর কাছ থেকে আসে।[৪]

একটি ভার্চুয়াল সহকারী চ্যাটবট
১৯৬৬ এলিজা চ্যাটবট

চ্যাটবট গুলো প্রাধাণত কথোপকথন ভিত্তিক কাজের জন্য বিশেষ উপযোগী। যেমন ভোক্তাদের সেবা প্রদান, পথ নির্দেশনা অথবা তথ্য সংগ্রহ করে দেওয়া ইত্যাদি। কিছু কিছু চ্যাটবট জটিল শব্দ প্রক্রিয়াকরণ সফটওয়্যার, স্বাভাবিক ভাষা প্রক্রিয়াজাতকরণ অথবা বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে পারে। আবার কিছু অতি সাধারণ ভাবে শব্দ খুঁজে নিয়ে সাংকেতিক ভাবে ডাটাবেজ অথবা সংযুক্ত লাইব্রেরীর সাথে মিলিয়ে উত্তর তৈরি করে দিতে পারে।

বেশির ভাগ চ্যাটবটই অনলাইনে ওয়েবসাইটের ভেতর পপ আপ কিংবা কৃত্রিম সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারের দিক থেকে এর কয়েকটি শ্রেণী বিভাগ করা যায়। যেমন: ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে (ই-কমার্স চ্যাটে), শিক্ষা-ব্যবস্থায়, বিনোদন ক্ষেত্রে, অর্থসংস্থান খাতে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, সংবাদ মাধ্যমউৎপাদনশীল ক্ষেত্রে[৫]

পটভূমি

১৯৫০ সালের দিকে অ্যালান টুরিং এর বিখ্যাত নিবন্ধ কম্পিউটিং মেশিনারি অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স প্রকাশিত হয়।[৬] যেটি বর্তমানে টুরিং পরীক্ষা নামে পরিচিত ও বুদ্ধিমত্তার মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত। এই মানদন্ডটি দিয়ে যে কোন কম্পিউটার প্রোগ্রাম এর সক্ষমতা যাচাই করা হয়। যেখানে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম একজন সত্যিকারের (রিয়েল টাইম) মানুষের মত কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারে। যা একজন মানুষের পক্ষে মানুষ ও কম্পিউটার প্রোগ্রামের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। ১৯৬৬ সালের দিকে টুরিং পরীক্ষণটির সফলতা ছড়িয়ে পড়ে জোসেফ ওয়েজেনবাম এর এলাইজা প্রোগ্রামটির মাধ্যমে। যেটি মানুষকে অনেকটা ধাঁধায় ফেলে দিতে সক্ষম ছিল যে তারা সত্যিকারের একজন মানুষের সাথেই কথোপকথন (চ্যাট) চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে এর মালিক ওয়েজেনবাম নিজে কখনো দাবি করেননি যে এলাইজা সত্যিকারের বুদ্ধিমান কোন প্রোগ্রাম ছিল। বরং তার গবেষণা পত্রের ভূমিকায় তিনি এটাকে খেলনার অনুশীলন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এইভাবে-

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে, যন্ত্রপাতি (মেশিন) গুলোকে বিস্ময় সৃষ্টির লক্ষ্যেই বানানো হয়, যা এমনকি অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষককেও চমকে দিতে পারে। কিন্তু কোন প্রোগ্রাম যখন উন্মুক্ত করা হয়, এর ভেতরের কাজগুলো যখন ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়... তবে তার ভেতরের যাদুটা উড়ে যায়; এটা তখন নিছক ধারাবাহিক ভাবে লেখা শুধুমাত্র কিছু প্রসিডিউর (কোড)... নিরীক্ষক নিজেই বলেছিল "আমি নিজেই এটা লিখতে পারতাম"। এই ভাবনায়, তিনি প্রশ্নবিদ্ধ প্রোগ্রামটিকে "বুদ্ধিমান" চিহ্নিত শেলফ থেকে কৌতূহলীদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে নিয়ে যান... এই গবেষণার উদ্দেশ্য হল পুনঃমূল্যায়নের মাধ্যমে এটিকে ব্যাখ্যা করা। যাতে করে অন্য সকল প্রোগ্রামেও এটিকে ব্যবহার করা যায়।[৭]

ইনপুটকৃত শব্দ থেকে কী-পয়েন্ট (ক্লু) বা শব্দাংশ খুঁজে বের করাই ছিল এলাইজার মূল কার্যপদ্ধতি (যা এখন পর্যন্ত চ্যাটবট ডিজাইনাররা নকল (কপি) করেছে)। আর তার ভিত্তিতেই মূলত পূর্বথেকে গোছানো অথবা প্রোগ্রাম করা উত্তর উপস্থাপন করা হতো। যা কথোপকথোনটিকে অর্থপূর্ণ ভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেত (উদাহরণস্বরূপ (ইনপুটে যদি 'মা' শব্দটি থাকতো তবে উত্তরে 'আপনার পরিবার সম্পর্কে আরও কিছু বলুন' এ ধরনের বাক্য তৈরি হত।)[৭] এভাবেই ব্যবহারকারীকে কিছুটা বোকা বানানো হতো যদিও প্রক্রিয়াকরণের কাজটি এতটাও সূক্ষ্মভাবে করা হতো না। এলাইজা এ জিনিসটি এমনভাবে উপস্থাপন করেছিল যাতে বিচারকরা ভেবে বসেন যে এই ধরনের বোকা বানানো অনেক সহজ। যাতে করে বিচারকরা সন্দিহান হয়ে বসেন যে এটি হয়তোবা "বুদ্ধিদীপ্ত" ভাবে উত্তর দিতে পারে।

একদম সাধারণভাবে শব্দের সাথে মিলিয়ে কম্পিউটারের তৈরিকৃত উত্তরগুলো অনেকটাই অর্থবহুল হওয়ার কারণে তা ইন্টারফেস ডিজাইনারদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হয় কারণ এটি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা সম্ভব। বেশিরভাগ মানুষই এমন সব প্রোগ্রাম দ্বারা আকৃষ্ট হয় যেগুলো মানুষের মত কথাবার্তা (চ্যাট) চালাতে পারে। আর এই জিনিসটি দ্বিপাক্ষিক মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় যা চ্যাটবট মাধ্যমটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে উত্তর দিতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত সোজাসুজি প্রশ্ন করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সেগুলোকে আগে থেকেই নির্ধারণ করা শ্রেণিবিভাগে বিভক্ত করে ফেলা যায়। যেমন ধরুন, অনলাইনে কোন কিছু খুঁজে পেতে সাদামাটা সার্চ বারের পরিবর্তে যদি চ্যাটবটে চ্যাট করার মাধ্যমে যদি দরকারী জিনিস খুঁজে পান তবে অনেকটাই চমকপ্রদ। মোটামুটি এই সকল দিক বিবেচনা করেই ওয়েজেনবাম এর চ্যাটবট প্রযুক্তিটি উৎসাহীদের জন্য সংরক্ষিত থেকে "প্রকৃতপক্ষে গণনা পদ্ধতি" শ্রেণিবিভাগে উন্নতির দাবি রাখে।

উন্নয়ন

প্রথমদিককার উল্লেখযোগ্য চ্যাটবট গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এলাইজা (১৯৬৬) ও প্যারি (১৯৭২)।[৮][৯][১০][১১] পরবর্তী ধাপের উল্লেখযোগ্য প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে এলিস, জেব্রিওয়াকি ও ড্যুড (এজেন্সি নোটেবল ডি লা রিচার্স ও সি এন আর এস ২০০৬)। এলাইজা ও প্যারি সাদামাটা ভাবে লিখিত আকারের কথোপকথনের (চ্যাট এর) জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং ধীরে ধীরে চ্যাটবট গুলোতে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন গেম খেলা, ওয়েব সার্চের সুবিধা যুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালের দিকে একটি গুজব ছড়িয়েছিল যে দ্যা পুলিসম্যান'স বিয়ার্ড ইজ হাফ নামক একটি বই র‍্যাক্টার নামক একটি চ্যাটবটের সাহায্য নিয়ে লেখা হয়েছিল। যদিও প্রকাশিত প্রোগ্রামটি (সফটওয়্যারটি) এই ধরনের কাজের উপযুক্ত ছিল না।[১২]

মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণার মূল ভিত্তিই হচ্ছে স্বাভাবিক ভাষা প্রক্রিয়াজাতকরণ। সাধারণভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার সীমাবদ্ধতা কাটাতে বিশেষ সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে গঠিত বিশেষ বিশেষ ফাংশনের দরকার হয়। যেমন, এলিস চ্যাটবটটি এআইএমএল নামক একধরনের মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে।[২] যেটায় বিশেষ ফাংশন কথোকথনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। একই পদ্ধতি এলিসবট ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও ডেভেলপাররা ব্যবহার করে থাকেন। শুধু তাই নয়, এলিসে যৌক্তিকতা বিশ্লেষণের সক্ষমতা ব্যবহার না করে এখনো প্যাটার্ন ম্যাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যে পদ্ধতি বিগত ১৯৬৬ সালের দিকে এলাইজাতে ব্যবহার করা হতো। যার ফলে এগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি এবং যার আরও বিচক্ষণতা ও যৌক্তিক যুক্তি বিশ্লেষণের ক্ষমতা দরকার।

জেব্রিওয়াকি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট ডেটাবেজ থেকে পূর্ব নির্ধারিত উত্তর তৈরির পরিবর্তে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারকারীর তথ্যের উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন উত্তর তৈরি করা বা বিষয়বস্তু শিখতে সক্ষম ছিল। পরবর্তীকালের অনেক চ্যাটবটই উন্নত অ্যালগরিদমের (গাণিতিকভাবে সমস্যা সমাধাণের পদ্ধতি) কারণে তাৎক্ষণিকভাবে শিখতে সক্ষম। একইসাথে এগুলো এমনভাবে প্রতিটি উত্তর সাজিয়ে গুছিয়ে নেয় যাতে করে ব্যবহারকারীর সাথে আরও সূক্ষ্মভাবে কথোপকথন (চ্যাট) চালিয়ে যেতে পারে। তারপরে পরীক্ষিতভাবে সফল সাধারণ উদ্দেশ্যে তৈরি কথোপকথন চালানোর মত কোন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পাওয়া যায়নি এবং কিছু সফটওয়্যার ডেভেলপার এর ব্যবহারিক দিক ও তথ্য যাচাই-বাছাইকরণ নিয়ে পরীক্ষণ চালিয়ে যেতে থাকে।

ধীরে ধীরে চ্যাটবটগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়, যাদের মূল লক্ষ্য ছিল টিউরিং টেস্টের মত বিষয়গুলো পার হওয়া। এ ধরণের দুটি বার্ষিক প্রতিযোগিতা হলো লোবনার প্রাইজ ও দ্য চ্যাটারবক্স চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতা। (যা সর্বশেষটি ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়, তবে ওয়েব আর্কাইভ থেকে এখনও কিছু কিছু তথ্য পাওয়া যায়)।[১৩]

আধুনিক কালের চ্যাটবটগুলো পূর্বনির্ধারণকৃত সাধারণ উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ ভাষার মডেল ব্যবহার করে যা ইংরেজিতে জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমার (জিপিটি) নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিটি মেশিন লার্নিং পদ্ধতির সাথে জড়িত। "প্রি-ট্রেইনিং" বলতে মূলত এমন একটি প্রশিক্ষণ পদ্ধতি বুঝায় যেখানে সীমিত পরিমাণ ডাটা থেকে নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের পর সেটি থেকে বড় আকারের টেক্সট/বার্তা সম্পাদন করা যায়। আর এটি চ্যাটবট গুলোর জন্য মূল ভীত দাঁড় করায়। জিপিটি চ্যাটবট মডেলের সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হচ্ছে বর্তমান কালের চ্যাট জিপিটি। বর্তমানে এর বিস্তারিত উত্তর প্রদানের সক্ষমতা ও ইতিহাস ভিত্তিক জ্ঞান সবার আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু। যদিও এর নির্ভুলতা নিয়ে কিছুটা সমালোচনাও হয়েছে। এই মডেলটির আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে বায়োজিপিটি। যেটি বানিয়েছে মাইক্রোসফট ও এটি বায়োমেডিকেল সম্পর্কিত যে কোন ধরণের প্রশ্ন উত্তর দিতে সক্ষম।[১৪][১৫]

২০১৭ সালের দিকে গুগল ডিবিপিডিয়া ও গুগুলের সামার অব কোড সংক্ষেপে জিএসওসি (GSoc) চলাকালীন সময়ে একটি চ্যাটবট বানিয়েছিল।[১৬][১৭][১৮] যেটি ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে সক্ষম।

চ্যাটবটের ব্যবহার

মেসেজিং অ্যাপস

বেশির ভাগ কোম্পানির তৈরিকৃত চ্যাটবট কোন না কোন মেসেজিং অ্যাপসের সাথে অথবা সাধারণ এসএমএস এর মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই বিটুসি (ব্যবসা টু কাস্টমার/ভোক্তা) ভোক্তাদের সেবা প্রদান, বিক্রয় ও বিপণনের কাজে ব্যববহৃত হয়।[১৯]

২০১৬ সালের দিকে ফেসবুকের মেসেঞ্জার ডেভেলপারদেরদের তাদের প্লাটফর্মে চ্যাটবট ব্যবহার করার অনুমতি দিলে প্রথম মাসেই ৩০,০০০ বট মেসেঞ্জারের যোগ হয়। ক্রমেই ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এর সংখ্যা বেড়ে ১,০০,০০০-এ পোঁছে যায়।[২০]

ঠিক এই সময়ের মধ্যেই এটি হোয়াটসঅ্যাপের কো-পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবেও জায়গা করে নেয়। দুটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি কেএলএম এবং এইরোমেক্সিকো পরীক্ষামূলকভাবে এর ব্যবহারের ঘোষণা দেয়।[২১][২২][২৩][২৪] তার আগে তারা ফেসবুকের মেসেঞ্জারের মাধ্যেমে তাদের ভোক্তা সেবা চালু করেছিল।

এই বটগুলো সাধারণত ব্যবহারকারীর যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো তবে মাঝে মধ্যে গ্রপ চ্যাটেও অংশগ্রহণ করতে পারতো।

ধীরে ধীরে অধিকাংশ ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন প্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, এয়ার লাইন, হোটেল সমূহ, রিটেল, স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, সরকারী সংস্থা ও রেস্তোরাঁ গুলো সাধারণ প্রশ্ন উত্তর, ভোক্তার সাথে আরও সম্পৃক্ততা বাড়াতে[২৫], বিপণন সহ তাদের বিভিন্ন প্রচারণা এমনকি অর্ডার নেওয়ার কাজেও এর ব্যবহার শুরু করে।[২৬]

২০১৭ সালের একটি জরিপে দেখা যায় তখনকার প্রায় ৪% প্রতিষ্ঠান চ্যাটবটের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে।[২৭] এর আগে ২০১৬ সালের একটি জরিপ থেকে জানা যায় যে ৮০% ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের মধ্যে তাদের নিজস্ব চ্যাটবটের ব্যবহারের প্রতি আগ্রহী।[২৮]

কোম্পানির অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের অংশ হিসেবে

পূর্ববর্তী প্রজন্মের চ্যাটবটগুলো ওয়েবসাইটের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হত। যেমন আলাস্কা এয়ারলাইন্সের আস্ক জেন নামক চ্যাটবট। যা ২০০৮ সালে আত্মপ্রকাশ করে ও পরবর্তীতে ২০১১ সালের দিকে ভার্চুয়াল ভোক্তা সেবাদানকারী এজেন্ট হিসেবে পরিচিতি পায়।[২৯][৩০] ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত আইবিএম ওয়াটসন এর ক্ষমতা সম্পন্ন "রকি" নতুন প্রজন্মের চ্যাটবট হিসেবে পরিচিত। যেটি নিউ ইয়র্ক শহরের ই-কমার্স কোম্পানি রেয়ার ক্যারেট হীরার ক্রেতাদের কাছে তথ্য প্রদানের জন্য ব্যবহার করেছিল।[৩১][৩২]

চ্যাটবটের ধারাবাহিকতা

বিজ্ঞাপনদাতারা এটিকে ধারাহিকভাবে সংলাপের ধারার মত ব্যবহার করে। যেমনটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রশ্ন উত্তরের ধারাবাহিকতায় ব্যবহার হয়। এই ধরনের ধারাবাহিকতাগুলো ব্যবহারকারীর গতিবিধি মোতাবেক বিভিন্ন অপশনগুলোকে সাংকেতিক সংকেতের মাধ্যমে তুলে আনে। সাংকেতিক শব্দ অর্থাৎ কীওয়ার্ডের মাধ্যমে একের পর এক বার্তা দিতে থাকে ব্যবহারকারীর অনুসন্ধান অনুসারে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধারাবাহিকতায় প্রতিটি ব্যবহারকারীর গতিবিধিগুলো ছকে সাজানো হয় যাতে করে চ্যাটবট সঠিক উত্তরটি পর্যায়ক্রমে দিতে পারে।

প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মাধ্যম হিসেবে

আরও অনেক ধরণের প্রতিষ্ঠান আছে যারা নিজেদের ভেতরকার দিকগুলো ব্যবস্থাপনার কাজে চ্যাটবট ব্যবহার করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- ভোক্তাদের সেবা প্রদান, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা এমনকি ইন্টারনেট অব থিংক্স প্রকল্পের কাজেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে। ওভারস্টক ডট কম নামক একটি প্রতিষ্ঠান মিলা নামক একটি চ্যাটবটের দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্মীদের অসুস্থতাজনিত ছুটির রিপোর্ট তৈরির জন্য ব্যবহার করেছিল।[৩৩] যা সাধারণভাবে করা অধিক সময় সাপেক্ষ ছিল। আরও কিছু বড় প্রতিষ্ঠান যেমন, লয়েডস ব্যাংকিং গ্রুপ, স্কটল্যান্ডের রয়্যাল ব্যাংক, রেনাল্ট ও সিট্রোয়েন মানুষের দ্বারা কল সেন্টার সেবার পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয় চ্যাটবটের দ্বারা অনলাইন সহায়তা দিয়ে থাকে। এফ৮ সম্মেলনে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ যখন মেসেঞ্জারে চ্যাটবটের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি আলোচনা করার পর চ্যাটবটগুলো সফটওয়্যার দিয়ে পরিষেবা প্রদানের একটি ইকো সিস্টেমে পরিণত হয়।[৩৪] হাসপাতাল ও বিমান চালনাকারীর মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা নির্ভর ও নির্ভুল সেবা প্রদানের লক্ষ্যে তাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট কাজে লাগায়।[৩৫] এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবটগুলো দ্রুততা ও নির্ভুলতার সাথে ছবি সম্পাদনা, মানুষের ভাষা বুঝা, স্বাভাবিক ভাষা প্রস্তুতকরণ, যান্ত্রিক শিখন ও ডিপ লার্নিং ব্যবহার করতে পারে।

গ্রাহক সেবা প্রদান

অনেক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম প্রযুক্তি নির্ভর ভোক্তা সেবা প্রদানের উপায় খুঁজছে। যাতে করে তারা আরও দ্রুত ও কম খরচে ভোক্তাদের এই সেবার আওতায় নিয়ে আসতে পারে যারা এই প্রযুক্তি বুঝে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে প্রচলিতভাবে ইমেল, ফোন অথবা মেসেজ পাঠানোর চাইতে চ্যাটবট দিয়ে মানুষের মত করে বরং আরও কার্যকরভাবে ভোক্তাদের সাথে কথোপথকন চালনো যায়। যেমন ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বড় দুটি কাজ হলো ভোক্তাদের সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আর তাদের লেনদেনে গতানুগতিক সেবা দেওয়া।

এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্টে গ্রাহক সেবার খরচ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাসের সম্ভাবনা জানা গেছে। যা থেকে আশা করা যায় এটি পরবর্তী ১০ বছরে বিলিয়ন ডলার সঞ্চয় করতে সক্ষম।[৩৬] ২০১৯ সালে গার্টনার (প্রযুক্তি নির্ভর গবেষণা সংস্থা) অনুমান করে যে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১৫% পরিপূর্ণ গ্রাহক সেবা দেওয়া হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে।[৩৭] ২০১৯ সালে জুনিপার রিসার্চের একটি সমীক্ষা থেকে অনুমান করা হয় যে চ্যাটবট-ভিত্তিক দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে খুচরা বিক্রয় ২০২৩ সালের মধ্যে ১১২ (ডলার) বিলিয়নে পৌঁছাবে।[৩৮]

২০১৬ সাল থেকেই ফেসবুক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোকে স্বয়ংক্রিয় গ্রাহক সহায়তা, ই-কমার্স সহায়তা, নিবন্ধ ও চ্যাটবটের মাধ্যমে আলাপচারিতার অভিজ্ঞতা প্রদানের অনুমতি প্রদানের পর থেকেই ফেসবুক মেসেঞ্জারের জন্য বিপুল সংখ্যক চ্যাটবট তৈরি করা হয়।[৩৯]

২০১৬ সালে রাশিয়া ভিত্তিক তোচকা ব্যাংক বিশ্বের সর্বপ্রথম ফেসবুক বট নিয়ে আসে যেটি অর্থ লেনদেন সহ আরও অনেক ধরণের আর্থিক সেবা প্রদান করতে সক্ষম।[৪০]

২০১৬ সালের জুলাইতে বার্চেলাস আফ্রিকা ব্যাংকও ফেসবুকে এমন একটি বট তৈরি করে যেটি আফ্রিকাতে সর্বপ্রথম ব্যাংকিং সুবিধা দিতে পারে।[৪১]

২০১৮ সালের মার্চে ফ্রান্সের (সম্পদের দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম) ব্যাংক সোসাইটি জেনারেল সোবট[৪২] নামক একটি চ্যাটবট নিয়ে আসে। সোবট-টির পরীক্ষণকালে শতকরা ৮০ জন ব্যবহারকারীই এর সম্পর্কে সন্তোষজনক মন্তব্য করেন। যদিও ব্যাংকটির ডেপুটি ডিরেক্টর বারট্র্যান্ড কোজ্জারোলো বলেছিলেন যে এটি দিয়ে হয়তো কাজ চালানো যাবে তবে কখনোই মানুষের মত অভিজ্ঞ পরামর্শকদের জায়গা দখল করে নিবে না।[৪৩]

ব্যাংকিং খাতে চ্যাটবট ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো গ্রাহকদের সাথে কথোপকথন চালানো, আর্থিক পরামর্শ ও উপদেশ খরচ কমানো সহ ২৪/৭ সেবা প্রদান।[৪৪][৪৫]

স্বাস্থ্যসেবা

চ্যাটবটের ব্যবহার স্বাস্থ্যসেবাতেও ব্যাপক হারে বেড়েছে।[৪৬][৪৭] এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের মতে চ্যাটবটের মাধ্যমে তারা ডাক্তারের সাক্ষাতের সময়সূচি, ক্লিনিকের অবস্থান ও ঔষধ সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে প্রভূত উপকার পাবেন।[৪৮]

কোভিড-১৯ এর সময়ে হোয়াটসঅ্যাপ দলগতভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে একত্রে চ্যাটবটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়।[৪৯]

২০২০ সালের দিকে ভারতীয় সরকার মাইগভ নামক চ্যাটবট দিয়ে একটি করোনা তথ্যকেন্দ্র চালু করে।[৫০] এটিও হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ঘরে বসে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে উপকৃত করেছে।[৫১][৫২]

তবে কিছু সংখ্যক রোগী এখনো চ্যাটবট ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। একটি মিশ্র পদ্ধতির জরিপে দেখা গেছে যে, প্রযুক্তিগত জটিলতা, সহানুভূতির অভাব ও সাইবার-নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বেগের কারণে লোকেরা এখনও তাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য চ্যাটবট ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করছে।[৫৩] বিশ্লেষণটিতে এটাও দেখা গেছে যে শতকরা ৬ জন লোক চ্যাটবটের কথা শুনে থাকলে তার মধ্যে শতকরা ৩ জন লোক এটি ব্যবহার করে দেখেছে। একই সাথে ৬৭% লোক ১২ মাসের মধ্যে চ্যাটবট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেখেছে। এর মধ্যে ৭৮% সাধারণ স্বাস্থ্য তথ্য, ৭৮% ডাক্তারের সাথে সাক্ষাত ও ৮০% স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবার তথ্যের জন্য চ্যাটবট ব্যবহার করেছিল। এসবের পরেও স্বাস্থ্য খাতে চ্যাটবট ব্যবহার করে ডাক্তারি পরীক্ষা ও যৌন স্বাস্থ্যের মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চাওয়ার জন্য অনেকে একে কিছুটা কম উপযুক্ত মনে করেছিল। রোগীদের মনোভাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩% তাদের পছন্দ ও ডাক্তাররের সাথে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। আর সর্বোমট ৯৩% এর থেকে নির্ভরযোগ্য ও সঠিক স্বাস্থ্য তথ্যের সন্ধান নিতে পেরেছে। যেখানে ৮০% ব্যবহারকারী স্বাস্থ্যসেবা ত্বরান্বিত করার কাজে প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী ছিল, ৬৬% শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিলেই ডাক্তার দেখাতে ইচ্ছুক ছিল ও ৬৫% চ্যাটবটের ব্যবহারকে ভাল দিক হিসেবে নিয়েছিল। মজার ব্যপার হচ্ছে ৩০% কম্পিউটারের সাথে কথা বলতে অপছন্দ করেছিল, ৪১% তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সহজাত ভাবে চ্যাটবটের সাথে কথা বলতে পারেনি ও তাদের অর্ধেকের মত চ্যাটবটের পরামর্শ নিয়ে সন্দিহান ছিল। যার থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, বিশ্বাসযোগ্যতা, বটগুলোর প্রতি ভিন্ন মনোভাব ও কম্পিউটারের সাথে আলোচনা অপছন্দ করাই ছিল স্বাস্থ্যসেবায় চ্যাটবট ব্যবহারের প্রধান কিছু বাঁধা।

রাজনীতি

নিউজিল্যান্ডে এসএএম (সিম্যান্টিক এনালাইসিস মেশিন[৫৪]) নামক একটি চ্যাটবট তৈরি করেছিল নিক গ্যারিটসেন অব টাচটেক[৫৫] নামক একটি কোম্পানি। এই চ্যাটবটটি রাজনৈতিক নেতাদের মত মতাদর্শ তৈরি করতে পারতো। রাজনীতিবিদদের মত আবহাওয়া পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা এই সমস্ত বিষয়ে পারদর্শী ছিল। এই চ্যাটবটটি ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতে পারতো।[৫৬][৫৭][৫৮][৫৯]

২০২২ সালের দিকে চ্যাটবট "লিডার লারস" নামক একটি চ্যাটবট ড্যানিশ সংসদীয় একটি রাজনৈতিক দল দ্যা সিন্থেটিক পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হয়েছিল।[৬০] এটি তৈরি করেছিল কালেক্টিভ কম্পিউটার লারস নামক একটি প্রতিষ্ঠান।[৬১] পূর্বের সকল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রাজনীতিবিদ চ্যাটবট থেকে লিডার লারস আলাদা ছিল কারণ এটি একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিল ও সাধারণ প্রার্থীর মত ছিল না।[৬২] বিশ্বের অনেক সাধারণ মানুষের সাথে এটি রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম ছিল।[৬৩]

ভারতে, রাজ্য সরকার তার আপিল সরকার প্ল্যাটফর্মের জন্য একটি চ্যাটবট চালু করেছিল।[৬৪] যেটি জন সাধারণকে কথোপকথনের মাধ্যমে জনসেবা সংক্রান্ত তথ্যে প্রদান করতো।[৬৫][৬৬]

খেলনা

আধুনিককালে চ্যাটবট যন্ত্রপাতিতেও সংযুক্ত করা হয়েছে যা শুধুমাত্র কম্পিউটিং এর কাজে ব্যবহার হয়না, যেমন খেলনা।[৬৭]

হ্যালো বারবি নামক একটি ইন্টারনেট সংযুক্ত পুতুলের মধ্যে চ্যাটবট ব্যবহার করে টয়টক নামক একটি প্রতিষ্ঠান।[৬৮] যেটি আগে ছিল বাচ্চাদের স্মার্টফোনে খেলনা।[৬৯] চ্যাটবটের ব্যবহারের ফলে এটি পরবর্তীতে এর মধ্যে থাকা চরিত্রটি কিছু নিয়ম মেনে গল্পের লাইন তৈরি করতে পারতো।[৭০]

মাই ফ্রেন্ড কায়লা নামক একটি ১৮ ইঞ্চি (৪৬ সেমি) পুতুল যাতে কন্ঠ সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এনড্রয়েড অথবা আইফোনের সাথে যুক্ত হয়ে বাচ্চাদের সাথে কথোপকথন চালাতে পারে। হ্যালো বারবির মতো এটি ব্লুটুথের মাধ্যমে বাচ্চাদের কন্ঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কথোপকথন চালিয়ে নিতে পারতো।

আইবিএম এর ওয়াটসন কম্পিউটার চ্যাটবট ব্যবহার করে কগনিটয়েস[৬৭] নামক দ্বিপাক্ষিক বাচ্চাদের শিক্ষামূলক খেলনাতে চ্যাটবট ব্যবহার করেছিল।[৭১]

ক্ষতিকর ব্যবহার

চ্যাট রুম গুলোতে স্প্যাম ও বিজ্ঞাপনের জন্য কিছু ক্ষতিকর চ্যাটবটও ব্যবহার করা হয়। এই চ্যাটবটগুলো মানুষজনকে ব্যঙ্গ করা অথবা কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার প্রকাশ করে দিতে প্রলুব্ধ করে। জনপ্রিয় চ্যাট টুলস যেমন ইয়াহু মেসেঞ্জার, উইন্ডোজ লাইভ মেসেঞ্জার, এওএল ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার ও অন্যান্য সকল মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে এগুলো ব্যবহার করা হতো। ডেটিং পরিষেবা দেয়ার সাইটগুলোতে নকল ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত একটি চ্যাটবটের তালিকা নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল।[৭২]

টে হচ্ছে এমন একটি চ্যাটবট যেটি পূর্বের কথোপকথন থেকে শিখতে পারতো। টুইটারে বিভিন্ন উপহাসের শিকার হওয়ায় এটি দ্রুত বিতর্কে পরিণত হয়। এটি এমনই উপহাসের শিকার হয় যে এর ১৬ ঘন্টা পরেই ব্যবহারকারীদের অত্যন্ত আপত্তিকর টুইট দিতে থাকে। এর কারণ ছিল এটি আগের বার্তাগুলি থেকে শিখে নিতো কিন্তু এতে সৌজন্যমূলক বা ভদ্রতা রক্ষা করার কোন নিরাপত্তা ছিল না। আর এটাকেই তার দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।[৭৩]

যদি কোনো বার্তা প্রদানকারী অ্যালগরিদম নিজেকে চ্যাটবটের পরিবর্তের মানুষের মতো করে উপস্থাপন করে ফেলতে পারে তবে তার বার্তাগুলি আরও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। তাই, ভালোভাবে তৈরি করা অনলাইন পরিচয় সহ মানুষের মতো পরিচয় দিতে পারা চ্যাটবটগুলি ভুয়া খবর ছড়াতে পারে যা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়, উদাহরণস্বরূপ ভুয়া নির্বাচনী প্রচারণা। চ্যাটবটের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে সামাজিক পরিচয়ও পাওয়া যেতে পারে।[৭৪][৭৫]

চ্যাটবটের সীমাবদ্ধতা

চ্যাটবট তৈরি ও বাস্তবায়ন এখনও একটি উন্নয়নশীল পর্যায়ে রয়েছে। এটি ব্যাপকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পর্কিত। তাই এর প্রদত্ত সমাধানগুলি, সুস্পষ্ট সুবিধার সাথে সাথে, কার্যকারিতা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় ধরণের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যদিও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এর পরিবর্তন ঘটে চলেছে।

কিছু সাধারণ সীমাবদ্ধতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:[৭৬]

  • যেহেতু এর প্রদত্ত ও ফলাফল প্রদানের ডাটাবেজ নির্দিষ্ট ও সীমিত সেহেতু চ্যাটবট কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হতে পারে।[৪৫]
  • একটি চ্যাটবটের দক্ষতা ভাষা প্রক্রিয়াকরণের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে এবং ভাষার অনিয়ম, যেমন আঞ্চলিকতা ভেদে উচ্চারণ ও ভাষাগত ভুলের কারণেও সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়।
  • চ্যাটবট একই সময়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে অক্ষম ও তাই কথোপকথন চালিয়ে যেতে সীমাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।[৭৬]
  • চ্যাটবট গুলোর প্রশিক্ষণের জন্য প্রচুর পরিমাণে কথোপকথনমূলক ডেটা দরকার হয়। সাধারণ মডেলগুলো সাধারণত ডীপ লার্নিং অ্যালগিরদমের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি শব্দ বেঁছে বেঁছে উত্তর তৈরি করার জন্য ডাটা সেট বানানো হয়। যেটি স্বাভাবিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণের সাথে জড়িত।
  • চ্যাটবটের কথোপকথন গুলো একমুখি বা সহজ সরলভাবে আগানো যায়না যার ফলে ব্যবহারকারীর সাথে তাল মিলিয়ে বিষয় বস্তুর আগে ও পরের বিষয় গুলো নিয়ে কথোপকথন চালিয়ে যেতে চ্যাটবট দারুণ সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়।[৭৭]
  • চ্যাটবট গুলোর পরিষেবাগুলো সাধারণত প্রযুক্তির সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। যার ফলে নতুন প্রজন্মেরা যদি পুরাতন চ্যাটবটের কারিগরি নিয়ে না জেনে থাকে তবে সেটি ব্যবহার করতে তাদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে।[৭৬]

চ্যাটবট ও কর্মক্ষেত্র

ব্যবসা বাণিজ্য নিয়মিত স্বয়ংক্রিয়তার ফলে যেখানে দক্ষতা ভিত্তিক প্রতিভার প্রয়োজন নেই সেখানেই চ্যাটবট জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ভোক্তা পরিষেবার ব্যাপারটি পুরোপুরি মেসেজিং অ্যাপস ভিত্তিক কিংবা ফোনকলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেটি চ্যাটবটের মাধ্যমে গণহারে দেওয়া সম্ভব ও চ্যাটবট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিনিয়োগের অংশ থেকে সুনির্দিষ্ট মুনাফা দিয়ে লাভবান করে চলেছে। যার ফলে এখন যারা ফোনকল নির্ভর প্রতিষ্ঠানে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা পরিচালিত চ্যাটবটের কারণে হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।[৭৮]

চ্যাটবটের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্র

চ্যাটবটের উন্নয়নকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোক্তা পরিষেবা অথবা যোগাযোগ করার জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, ডিবাগ ও ব্যবস্থাপনা করে থাকে। তাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে কোডগুলোকে প্রয়োজন অনুসারে পুনরায় পর্যালচনা ও সহজ করা। তারাই মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বট তৈরি ও পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে।

ফরেস্টারের (জুন, ২০১৭) একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে ২০১৯ সালের মধ্যেই ২৫% কর্মক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রভাব পড়বে।[৭৯]

আরও দেখুন

  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এপলিকেশন সমূহ
  • অটোনোমাস এজেন্ট
  • চ্যাট জিপিটি (ওপেন এ আই এর)
  • কথোপকথনমূলক ব্যবহারকারী ইন্টারফেস
  • ইউজিনি গুস্টম্যান
  • বন্ধুত্বপূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
  • হাইব্রিড ইন্টিলিজেন্ট সিস্টেম
  • ইন্টিলিজেন্ট এজেন্ট
  • ইন্টারনেট বট
  • চ্যাটবটের তালিকা
  • মাল্টি এজেন্ট সিস্টেম
  • স্বাভাবিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ
  • সোশ্যাল বট
  • সফটওয়্যার এজেন্ট
  • সফটওয়্যার বট
  • টুইটার বট

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

  • উইকিমিডিয়া কমন্সে চ্যাটবট সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ