দক্ষিণ ওশেটিয়া

দক্ষিণ ওশেটিয়া [n ১] (/ɒˈsɛtiə/ () O-SET-ee-ə, সাধারণত অল্প: /ɒˈsʃə/ () o-SEE-shə)[৫] যা আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ ওশেটিয়া প্রজাতন্ত্র অথবা দক্ষিণ ওশেটিয়া–আলানিয়া রাজ্য নামেও পরিচিত, দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের একটি আংশিক স্বীকৃত ও ভূমিবেষ্টিত রাষ্ট্র, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জর্জীয় অঞ্চলটির উত্তরে অবস্থিত।[৬][৭] সরকারিভাবে স্বীকৃত মাত্র ৫৬,৫০০ জন জনগণ ( ২০২২) নিয়ে এটি গঠিত এবং তারা বৃহত্তর ককেশাস পর্বতমালার দক্ষিণ দিকে ৩,৯০০ বর্গ কিমি (১,৫০০ বর্গমাইল) আয়তনের একটি এলাকায় বাস করে, যাদের মধ্যে ৩৩,০০০ জন কেবল রাজধানী শহর স্কিনভালিতেই বসবাস করে।[৮]  শুধুমাত্র রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া, নাউরুসিরিয়া দক্ষিণ ওশেটিয়াকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।[৯] যদিও জর্জিয়া দক্ষিণ ওশেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না, তবুও জর্জিয়ার সরকার ও জাতিসংঘ এটিকে জর্জিয়ার ভূখণ্ডের অংশ বিবেচনা করে।[৯]

দক্ষিণ ওশেটিয়া প্রজাতন্ত্র - আলানিয়া রাজ্য


  • Республикӕ Хуссар Ирыстон / Паддзахад Аллонстон (অসেটীয়)
    Respublikæ Xussar Iryston / Paddzaxad Allonston

  • ცხინვალის რეგიონი (জর্জীয়)
    Tskhinvalis regioni

  • Республика Южная Осетия / Государство Алания (রুশ)
    Respublika Yuzhnaya Osetiya / Gosudarstvo Alaniya
দক্ষিণ ওশেটিয়ার জাতীয় পতাকা
পতাকা
দক্ষিণ ওশেটিয়ার প্রতীক
প্রতীক
জাতীয় সঙ্গীত: দক্ষিণ ওশেটিয়ার জাতীয় সঙ্গীত
National Anthem of South Ossetia – Республикæ Хуссар Ирыстоны Паддзахадон Гимн
দক্ষিণ ওশেটিয়া (সবুজ), জর্জিয়া ও আবখাজিয়া (হালকা ধূসর)।
দক্ষিণ ওশেটিয়া (সবুজ), জর্জিয়াআবখাজিয়া (হালকা ধূসর)।
দক্ষিণ ওশেটিয়ার মানচিত্র
অবস্থাজাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ৫টি দ্বারা স্বীকৃত; জাতিসংঘ কর্তৃক জর্জিয়ার ডি জুর অংশ হিসাবে স্বীকৃত
রাজধানীস্কিনভালি
৪২°১৪′ উত্তর ৪৩°৫৮′ পূর্ব / ৪২.২৩৩° উত্তর ৪৩.৯৬৭° পূর্ব / 42.233; 43.967
সরকারি ভাষা
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষাজর্জীয়
ধর্ম
সরকারঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র
অ্যানাতলি বিভিলভ
এরিক পুখায়েভ
আইন-সভাসংসদ
স্বাধীনতা জর্জিয়া থেকে
২০শে সেপ্টেম্বর ১৯৯০[১]
• দক্ষিণ ওশেটিয়া রাষ্ট্র হিসেবে
২১শে ডিসেম্বর ১৯৯১
• স্বীকৃতি
২৬শে আগস্ট ২০০৮ (সীমিত)
আয়তন
• মোট
৩.৯০০ কিমি (১.৫০৬ মা)
• পানি (%)
নগণ্য
জনসংখ্যা
• ২০১৫ আদমশুমারি
৫৩,৫৩২[২]
• ঘনত্ব
১৩.৭/কিমি (৩৫.৫/বর্গমাইল)
জিডিপি (মনোনীত)২০১৭[৩] আনুমানিক
• মোট
মার্কিন $ ০.১ বিলিয়ন
• মাথাপিছু
মার্কিন $ ২,০০০
মুদ্রারুশ রুবল (RUB)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৩ (MSK)
গাড়ী চালনার দিকডান
কলিং কোড+995 34 (+৯৯৫ ৩৪)
  1. ওশেটীয়রুশ ভাষা দেশটির সরকারি ভাষা[৪]
  2. স্থানীয় ওশেটীয়, জর্জীয় এবং রুশরা ইস্টার্ন অর্থোডক্স। এখানে ইসলাম অভিবাসীদের মাধ্যমে এসেছে, যারা বিভিন্ন সময় অভিবাসিত হয়েছে। তবে উত্তর ওশেটিয়ায় ইসলাম স্থানীয়দের মাঝে বহুল প্রচলিত।
দক্ষিণ ওশেটিয়ার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য।

জর্জিয়া একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে দক্ষিণ ওশেটিয়ার অস্তিত্ব স্বীকার করে না। দক্ষিণ ওশেটিয়া নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি জর্জিয়ার কোন প্রশাসনিক অঞ্চলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় (যদিও জর্জীয় কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ ওশেটিয়ার চলমান অস্থায়ী প্রশাসনকে একটি ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা হিসাবে স্থাপন করেছে, যা এটিকে বন্দোবস্তের দিকে পরিচালিত করে। দক্ষিণ ওশেটিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলই শিদা কার্টলি অঞ্চলের অংশ এবং জর্জীয় সংবিধানে ১৯৯০ সালের একটি আইনে এর স্বায়ত্তশাসিত ওব্লাস্ট ভেঙে ফেলার কথা উল্লেখ করে একে "দক্ষিণ ওশেটিয়ার প্রাক্তন স্বায়ত্তশাসিত জেলা" হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে। যখন নিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহারের প্রয়োজন বলে মনে করা হয়, তখন জর্জিয়াআন্তর্জাতিক সংস্থা উভয়ই প্রায়শ এই অঞ্চলটিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্কিনভালি হিসাবে উল্লেখ করে।

১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের জর্জিয়া সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ফলে জর্জীয় সরকার দক্ষিণ ওশেটিয়ার স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে এবং বলপ্রয়োগ করে এই অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। ক্রমবর্ধমান এই সংকট ১৯৯১-৯২ সালে দক্ষিণ ওশেটিয়া যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে। জর্জিয়ানরা দক্ষিণ ওশেটিয়া নিয়ন্ত্রণকারীদের বিরুদ্ধে অন্য দুটি সংকটেও যুদ্ধ করেছে: ২০০৪ এবং ২০০৮। পরবর্তী সংঘাতের ফলে ২০০৮ সালের আগস্টে রুশ–জর্জীয় যুদ্ধ শুরু হয়, যার ফলে ওসেটীয় ও রুশবাহিনী পূর্বের ভূখণ্ডের সম্পূর্ণ ডি ফ্যাক্টো নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। ২০০৮ সালের যুদ্ধের পর থেকে জর্জিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ ওসেটিয় অঞ্চলকে রুশ সামরিক বাহিনীর দ্বারা অধিকৃত বলে মনে করে।[১০][১১][১২]

দক্ষিণ ওশেটিয়া রাশিয়া থেকে সামরিক, রাজনৈতিকআর্থিক সহায়তার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।[১৩][১৪] ২০০৮ সাল থেকে দক্ষিণ ওসেটীয় সরকার রুশ ফেডারেশনে যোগদান করার জন্যে নিজের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে এবং এটি সফল হলে তার পূর্ব ঘোষিত স্বাধীনতা বিলীন হবে। দেশীয় রাজনীতিতে এই বিষয়ে গণভোটের সম্ভাবনা একাধিকবার উত্থাপিত হলেও তা কখনো সফল হয়নি।

ইতিহাস

মধ্যযুগ ও প্রাথমিক আধুনিক যুগ

ককেশাস অঞ্চলকে চিত্রিত করে জেএইচ কোল্টনের ১৮৫৬ সালের মানচিত্রের খণ্ড। আধুনিক দক্ষিণ ওশেটিয়া সবুজ ওশেটিয়ার নিচে অবস্থিত, যা আধুনিক উত্তর ওশেটিয়ার সাথে প্রায় মিলে যায়।

অসেটীয়রা যাযাবর ইরানী উপজাতি অ্যালান থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়ে থাকে।[১৫] অষ্টম শতাব্দীতে উত্তর ককেশাস পর্বতমালায় একটি সমন্বিত অ্যালান সাম্রাজ্যের হঠাৎ উত্থান ঘটে, যা সেই সময়ের সূত্র ধরে অ্যালানিয়া নামে পরিচিত। ১২৩৯-১২৭৭ সালের দিকে অ্যালানিয়া মঙ্গোল এবং পরে তৈমুরের সেনাবাহিনীর হাতে পড়ে, যারা তৎকালীন অ্যালানিয়ার বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে হত্যা করেছিল। অ্যালানদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল, তারা মধ্য ককেশাসের পাহাড়ে চলে যায় এবং ধীরে ধীরে ককেশাস পর্বতমালা পেরিয়ে জর্জিয়া রাজ্যের দক্ষিণে অভিবাসন শুরু করে।[১৬] [১৮]

১৯ শতকের শুরুতে অঙ্কিত ককেশাস অঞ্চলের ঐতিহাসিক রুশ মানচিত্র

১৭ শতকে কাবার্ডীয় রাজকুমারদের চাপে ওসেটিয়রা উত্তর ককেশাস থেকে কার্টলি রাজ্যে (বর্তমান দক্ষিণ ওশেটিয়া ) অভিবাসনের দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু করে।[১৯] ওশেটীয়রা সাধারণত কৃষক, যারা দক্ষিণ ককেশাসের পার্বত্য অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয় এবং তারা প্রায় জর্জীয় সামন্ত প্রভুদের জমিতে বসতি স্থাপন করেছিল।[২০] তৎকালীন কার্টলি রাজ্যের জর্জীয় রাজা ওসেটীয়দের অভিবাসনের অনুমতি দেন। [২০] জর্জিয়ায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল তাতিশচেভের মতে, ১৭ শতকের শুরুতেই বৃহত্তর লিয়াখভি নদীর প্রধান জলের কাছে ওসেটীয়দের একটি ছোট দল বসবাস করত।[২০][২১] ১৭৭০ এর দশকে কার্টলি রাজ্যে আগের চেয়ে বেশি ওসেটীয় বাস করত।

সময়ের সাথে সাথে ওসেটীয় অভিবাসন।

এই সময় কালটি ১৭৭২ সালে জর্জিয়া পর্যটনকারী জোহান অ্যান্টন গুল্ডেনস্ট্যাডের ভ্রমণ ডায়েরিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। বাল্টিক জার্মান এই অভিযাত্রী আধুনিক উত্তর ওশেটিয়াকে কেবল ওশেটিয়া বলেই অভিহিত করেছেন, যেখান তিনি লিখেছেন যে, কার্টলি (আধুনিক দক্ষিণ ওশেটিয়ার অঞ্চল) জর্জীয়দের দ্বারা জনবহুল ছিল এবং পার্বত্য অঞ্চলগুলি জর্জীয় এবং ওসেটীয় উভয় দ্বারা জনবহুল ছিল। [২০] তিনি আরও লিখেছেন যে, কার্টলির উত্তরতম সীমান্ত হল প্রধানতম ককেশীয় রিজ।[২০][২২][২৩] ১৮ শতকের শেষ নাগাদ আধুনিক দক্ষিণ ওশেটিয়ার ভূখণ্ডে ওসেটীয় বসতি স্থাপনের চূড়ান্ত স্থানগুলি ছিল: কুদারো ( জে জোরা নদীর মোহনা), বৃহত্তর লিয়াখভি ঘাট, ছোট লিয়াখভি ঘাট, কসানি নদী, গিরিখাত, গুদা ( টেট্রি আরাগভির মোহনা) ও ট্রুসো ( তেরেক মোহনা)।[২৪]

কার্টলি-কাখেতি জর্জীয় রাজ্যটি ( যা আধুনিক দক্ষিণ ওশেটিয়ার অঞ্চলকেও অন্তর্ভুক্ত করে ) ১৮০১ সালে রুশ সাম্রাজ্য দ্বারা সংযুক্ত করা হয়েছিল। ওশেটিয়া যা রাশিয়ার আধুনিক উত্তর ওশেটিয়াসহ গঠিত এলাকা–ছিল উত্তর ককেশাসের প্রথম এলাকাগুলির একটি, যেগুলিতে ১৭৭৪ সালের প্রথমবার রুশ আধিপত্যের শুরু হয়েছিল।[২৫] রাজধানী ভ্লাদিকাভকাজ ছিল এই অঞ্চলের প্রথম রুশ সামরিক ঘাঁটি।[২৬] ১৮০৬ সাল নাগাদ ওশেটিয়া সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৯ এবং ২০ শতকে জর্জীয় অঞ্চলে ওসেটীয় অভিবাসন অব্যাহত ছিল, যখন জর্জিয়ার অঞ্চলটি রুশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ট্রায়ালেটি, বোরজোমি, বাকুরিয়ানি এবং কাখেতিতেও তখন ওসেটীয় বসতি গড়ে ওঠে।[২৪]

ওসেটীয়রা রুশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যায় এবং কখনই তারা নিজেদের উপরে রুশ কর্তৃপক্ষকে স্বীকার করেনি এবং ১৮৫০ সাল নাগাদ যখন জর্জিয়া সম্পূর্ণরূপে রুশ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তখন শক্তিশালী জর্জীয় পরিবার মাচাবেলি রুশ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে যে, তারা ওসেটীয় জনগোষ্ঠীর বসবাসকারী পাহাড়ি গিরিখাতগুলির নিয়ন্ত্রণ দখল করতে সক্ষম হয়নি। সেখানে তৎকালীন রুশ কর্মকর্তা ইয়ানোভস্কি ও কোজাচকোভস্কি ১৮৩১ সালে জর্জীয় সামন্ত প্রভু ও পাহাড়ের গিরিখাতে বাসকারী ওসেটীয় জনসংখ্যার মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে তাদের রাজকুমার এরিস্টভ দ্বারা নিয়োজিত ওশেটিয়ান গর্জেস নোট-এ লিখেছিলেন:

… আরও দূরবর্তী গিরিখাত; যেমন: ম্যাগ্রান্ডোলেটস্কি, তিলিস্কি, চিপ্রানস্কি, গভিডিস্ক, নগস্কি ও অন্যান্য, যার ব্যাপারে এরিস্তাভি দাবি করেছেন যে, এই সবে তাদের নিয়ন্ত্রণের কোনো চিহ্ন নেই। আমাদের সৈন্যদের দ্বারা জয়ী হওয়ার আগে এখানে বসবাসকারী ওসেটীয়রা আদিম মানুষদের একটি মডেল ছিল। গ্রাম ও ঘাটে একেবারেই আইন এবং আনুগত্য ছিল না। অস্ত্র বহন করতে সক্ষম সবাই নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে মনে করত। মাচাবেলি পরিবারের রাজকুমারের উদাহরণ তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।[২৭]

সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসেবে দক্ষিণ ওশেটিয়া

১৯২১ সালে জর্জিয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মানচিত্র (১৯১৮-১৯২১)।

অক্টোবর বিপ্লবের পরে আধুনিক দক্ষিণ ওশেটিয়ার অঞ্চলটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র জর্জিয়ার অংশে পরিণত হয়। [২৮] ১৯১৮ সালে জর্জিয়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত শিদা কার্টলি অঞ্চলে বসবাসকারী ভূমিহীন ওসেটিয় কৃষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যারা বলশেভিক দ্বারা প্রভাবিত ছিল এবং তারা যে জমিগুলিতে কাজ করত, তার মালিকানা দাবি করে বসে। মেনশেভিক সরকার জাতিগত জর্জীয় অভিজাতদের সমর্থন করে, যারা আইনি সেসব জমির মালিক ছিল। যদিও ওসেটীয়রা প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতিতে অসন্তুষ্ট ছিল; তবে উত্তেজনা শীঘ্রই জাতিগত সংঘাতে রূপান্তরিত হয়।[২৮] ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ওসেটীয় বিদ্রোহ শুরু হয় এবং তখন তিনজন জর্জীয় রাজপুত্রকে হত্যা করা হয়। তাদের সকল জায়গা-জমি ওসেটীয়রা দখল করে নেয়। তিবি‌লিসিের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ওই এলাকায় ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়ে প্রতিশোধ নেয়। যাহোক, জর্জীয় ইউনিট ওসেটীয়দের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার পর ওশেটীয় বিদ্রোহীরা পিছু হটে[২৯] এবং তারপর তারা স্কিনভালি শহর দখল করতে অগ্রসর হয়। সেখানে তারা জাতিগত জর্জীয় বেসামরিক জনসংখ্যার উপর আক্রমণ শুরু করে।

১৯১৯ এবং ১৯২০ সালের বিদ্রোহের সময় ওসেটীয়রা গোপনে সোভিয়েত রাশিয়া কর্তৃক সমর্থিত হয়েছিল; কিন্তু তবুও শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হয়েছিল। [২৮] ওসেটীয় সূত্রের অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯২০ সালের বিদ্রোহ দমনের ফলে জর্জীয় বাহিনীর হাতে ৫,০০০ ওসেটীয় লোক মারা গিয়েছিল এবং পরবর্তী ক্ষুধা ও মহামারী ১৩,০০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল। [৩১]

১৯২২ সালে ঐতিহাসিক জর্জীয় অঞ্চলে দক্ষিণ ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সৃষ্টি।
১৯২২ সালের দক্ষিণ ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মানচিত্র।
১৯৫৭-১৯৯১ সালে জর্জীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মানচিত্র।

১৯২১ সালে জর্জিয়ায় রেড আর্মি আক্রমণের পরে প্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত জর্জিয়ার সরকার কাভবিউরো'র (সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ককেশীয় ব্যুরো) চাপে ১৯২২ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ ককেশিয়ার ওসেটীয়দের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনিক ইউনিট তৈরি করেছিল, যা সাধারণত দক্ষিণ ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (AO) নামে পরিচিত। [২০] তবে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, বলশেভিকরা তাদের (বলশেভিকদের) আনুগত্যের বিনিময়ে ওসেটীয়দের এই স্বায়ত্তশাসন দেয় এবং এর মাধ্যমে তারা জর্জিয়ার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সাথে লড়াই করার একটি নিখুঁত পরিকল্পনা আটেঁ। এর জন্য তারা স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষ নেয়। কারণ এই অঞ্চলটি রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে কখনও আলাদা সত্তা ছিল না।[৩২] [৩৪]

স্বায়ত্তশাসিত দক্ষিণ ওশেটিয়ার প্রশাসনিক সীমানা অঙ্কন ছিল বেশ জটিল প্রক্রিয়া এবং জর্জীয় জাতির লোকদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অনেক জর্জীয় গ্রাম দক্ষিণ ওশেটিয়ার স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও সেই সময়ের স্কিনভালি শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ ওসেটীয় জনসংখ্যা ছিল না; তবুও এটি স্বায়ত্তশাসিত দক্ষিণ ওসেটীয় প্রজাতন্ত্রের রাজধানী করা হয়েছিল। [২০][৩৫] তিবিলিসি সরকারের গোরি উয়েজদ ও দুশেতি উয়েজদের কিছু অংশ ছাড়াও কুতাইসি সরকারের (পশ্চিম জর্জিয়া) রাচা উয়েজদের কিছু অংশও দক্ষিণ ওশেটিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঐতিহাসিকভাবে এ সমস্ত আদিবাসী জর্জীয় ভূমি ছিল। [২০]

১৯২৪ সালের আগে উত্তর ককেশাসের ঐতিহাসিক ওশেটিয়ার নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক সত্তা ছিল না। তখন উত্তর ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসিত ওব্লাস্ট তৈরি করা হয় এবং এর ফলে ওশেটিয়া নিজস্ব রাজনৈতিক সত্তা লাভ করে। [২০] যদিও ওসেটীয়দের নিজস্ব ভাষা ছিল অসেটীয় ভাষা; তবুও রুশজর্জীয় ছিল প্রশাসনিক/রাষ্ট্রীয় ভাষা।[৩৬]

সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন চলাকালীন জর্জিয়ার সরকারের শাসনের অধীনে ওসেটীয়রা সংখ্যালঘু সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করত। যার মধ্যে ওসেটীয় ভাষায় কথা বলা এবং স্কুলে শিক্ষা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৩৬] ১৯৮৯ সালে জর্জীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশ ওসেটীয় দক্ষিণ ওশেটিয়া প্রজাতন্ত্রের বাইরে বসবাস করত।[২০]

জর্জীয়-ওসেটীয় দ্বন্দ্ব

১৯৮৯-২০০৮

১৯৮৯ সালে জর্জীয়ওসেটীয়দের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদের জন্যে এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে।[৩৭] এর আগে জর্জীয় সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে দক্ষিণ ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দুটি সম্প্রদায় জর্জীয়-ওশেতীয় দ্বন্দ্ব ( ১৯১৮–১৯২০ ) ব্যতীত একে অপরের সাথে মিলে শান্তিতে বসবাস করছিল। উভয় জাতিসত্তার একটি স্বাভাবিক মাত্রার মিথস্ক্রিয়া ছিল এবং অনেক জর্জীয়-ওসেটীয় আন্তঃবিবাহ ছিল। [৩৮]

দক্ষিণ ককেশাসে ওসেটীয় জনগণের উপস্থিতি ঘিরে বিরোধ সংঘর্ষ শুরু হয় এবং এটিই উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ। যদিও জর্জীয় ইতিহাসগ্রন্থ বিশ্বাস করে যে, ১৭ শতকের দিকে দক্ষিণ ককেশাসে (জর্জিয়ায় ) ওসেটীয় জনগণের অভিবাসন শুরু হয় এবং ওসেটীয়রা দাবি করে যে, প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে তারা বসবাস করে আসছে, যা উপলব্ধ সূত্র দ্বারা সমর্থিত নয়।[২৮] তবে কিছু ওসেটীয় ইতিহাসবিদ স্বীকার করেন যে, ওসেটীয়দের পূর্বপুরুষরা আধুনিক দক্ষিণ ওশেটিয়ায় স্থানান্তরিত হওয়া শুরু করেন ১৩শ শতকের মঙ্গোল আক্রমণের পর পর, যখন ১৯৯০ এর দশকে একজন দক্ষিণ ওসেটীয় দেফাক্তো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ওসেটীয়রা এ অঞ্চলে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল ১৭ শতকের গোড়ার দিকে।[৩৯] যেহেতু এটি ১৯২১ সালের রুশ আক্রমণের পরে আবির্ভূত হয়, তাই সোভিয়েত যুগে জর্জীয়দের দ্বারা দক্ষিণ ওশেটিয়াকে কৃত্রিম সৃষ্টি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল।

সাউথ ওশেটিয়ান পপুলার ফ্রন্ট (অ্যাডেমন নাইখাস ) ১৯৮৮ সালে তৈরি হয় এবং ১৯৮৯ সালের ১০ নভেম্বর দক্ষিণ ওসেটীয় আঞ্চলিক কাউন্সিল জর্জিয়ান সুপ্রিম কাউন্সিলকে "এই অঞ্চলটিকে" একটি "স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের" মর্যাদায় উন্নীত করার দাবি জানিয়েছিল। পরে দক্ষিণ ওসেটীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা দক্ষিণ ওসেটীয় প্রজাতন্ত্রকে দক্ষিণ ওসেটীয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত বিরোধকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ১১ নভেম্বর তাদের এ সিদ্ধান্ত জর্জীয় সংসদ "সুপ্রিম সোভিয়েত" দ্বারা প্রত্যাহার করা হয়।[৪০] জর্জীয় কর্তৃপক্ষ ওব্লাস্টের ফার্স্ট পার্টি সেক্রেটারিকে তার পদ থেকে সরিয়েও দেয়।[৪১][৪২]

পরবর্তী কালে ১৯৯০ সালের গ্রীষ্মে জর্জিয়ান সুপ্রিম কাউন্সিল আঞ্চলিক দলগুলিকে বাদ দিয়ে একটি আইন গ্রহণ করেছিল। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে দক্ষিণ ওসেটীয় আঞ্চলিক পরিষদ এই আইনকে তাদের দল অ্যাডেমন নাইখাসের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ হিসাবে ব্যাখ্যা করে এবং পরে ১৯৯০ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের আওতাধীন দক্ষিণ ওসেটীয় সোভিয়েত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে "জাতীয় সার্বভৌমত্বের ঘোষণা" পাস করে[৪৩] এবং ওসেটীয়রা পরবর্তী জর্জীয় সংসদীয় নির্বাচন বর্জন করে। কিছু দিন পর ডিসেম্বরে তারা নিজস্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

১৯৯০ সালের অক্টোবরে জর্জিয়ার সংসদীয় নির্বাচনে জেভিয়াদ গামসাখুরদিয়ার "রাউন্ড টেবিল" ব্লক জয় লাভ করে। ১৯৯০ সালের ১১ই ডিসেম্বরে জাভিয়াদ গামসাখুর্দিয়ার সরকার ওশেটিয়ার নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং দক্ষিণ ওশেটিয়ার স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করে। গামসাখুর্দিয়া এ বলে ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসনের বিলুপ্তিকে যুক্তিযুক্ত করেছেন যে, "তাদের [ওসেটীয়দের] এখানে [জর্জিয়ায়] একটি পৃথক রাষ্ট্রের অধিকার নেই। তারা জাতীয় সংখ্যালঘু। তাদের জন্মভূমি উত্তর ওশেটিয়া ... এখানে তো তারা নতুন।"[৩৯]

১৯৯০ সালের ১২ ডিসেম্বরে জর্জীয় পার্লামেন্ট যখন দক্ষিণ ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, তখন জর্জীয় ও সোভিয়েত উভয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৈন্যদের এই অঞ্চলে পাঠানো হয়েছিল। ১৯৯১ সালের প্রথম দিকে জর্জিয়ান ন্যাশনাল গার্ড গঠিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের ৫ জানুয়ারি জর্জীয় সৈন্যরা স্কিনভালিতে প্রবেশ করে।[৪৪] ১৯৯১–১৯৯২ সালের ওশেটিয়া যুদ্ধটি নিয়ন্ত্রণহীন মিলিশিয়াদের দ্বারা 'আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি অবহেলার প্রদর্শন করা' হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষই নৃশংসতার প্রদর্শন করেছিল।[৪৪]

১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বাহিনী মিখাইল গর্বাচেভের নির্দেশ অনুসারে একটি যুদ্ধবিরতির সুবিধা দেয়। সে বছরের মার্চ এবং এপ্রিলে সোভিয়েত সৈন্যরা উভয়পক্ষের মিলিশিয়াদের সক্রিয়ভাবে নিরস্ত্র করা এবং জাতিগত সহিংসতাকে প্রতিরোধ করার রিপোর্ট প্রকাশ করে। তবে জাভিয়াদ গামসাখুর্দিয়া জোর দিয়েছিলেন যে, সোভিয়েত নেতৃত্ব জর্জিয়াকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছেড়ে না যেতে বাধ্য করার জন্য চলমান দক্ষিণ ওসেটীয় বিচ্ছিন্নতাবাদকে উত্সাহিত করছে। অবশেষে ১৯৯১ সালের এপ্রিলে জর্জিয়া নিজের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।[৪৫][৩৯]

যুদ্ধের ফলস্বরূপ প্রায় ১০০,০০০ নৃতাত্ত্বিক ওসেটীয়জর্জীয় অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায়, যাদের বেশিরভাগ সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর ওশেটিয়ায় চলে যায়। এছাড়া আরও প্রায় ২৩,০০০ জাতিগত জর্জীয় লোক দক্ষিণ ওশেটিয়া থেকে জর্জিয়ার অন্যান্য অংশে পালিয়ে যায়। [৪৭] অনেক উদ্বাস্তু উত্তর ওসেটীয় প্রিগোরোদনি জেলায় গিয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে অনেক দক্ষিণ ওসেটীয়কে উত্তর ওশেটিয়ার অঞ্চলে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল, যেখান থেকে ১৯৪৪ সালে স্ট্যালিন ইঙ্গুশ জাতির লোকদের বহিষ্কার করেন। ১৯৯০-এর দশকে দক্ষিণ ওসেটীয়দের নতুন তরঙ্গ প্রাক্তন ইঙ্গুশ অঞ্চলে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে ওসেটীয় এবং ইঙ্গুশের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। [৪৮]

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলে দক্ষিণ ওশেটিয়ার পশ্চিম অংশ একটি ভূমিকম্প দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, যাতে ২০০ জনেরও বেশি নিহত হয়ে এবং কয়েক হাজার ওসেটীয় গৃহহীন হয়ে পড়ে।[৪৯][৫০]

১৯৯১ সালের শেষের দিকে সমালোচকদের প্রতি তার অসহিষ্ণুতা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রচেষ্টার কারণে জর্জিয়ার গামসাখুরদিয়ার বিরুদ্ধে ভিন্নমত বাড়তে থাকে।[৪৫] ১৯৯১ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি সেনা অভ্যুত্থানের পর গামসাখুর্দিয়া এবং তার সমর্থকদের তিবিলিসির বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে বিরোধী দল ও জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা ঘেরাও করে। পরবর্তীকালে ভারী লড়াইয়ের ফলে ২০০ জনেরও বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং জর্জিয়ার রাজধানীর কেন্দ্রটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এরপর ৬ জানুয়ারি গামসাখুর্দিয়া ও তার সমর্থকদের অনেকে নির্বাসনের জন্য শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীকালে জর্জীয় সামরিক পরিষদ জাবা আইওসেলিয়ানি, তেঙ্গিজ কিটোভানি ও তেঙ্গিজ সিগুয়ারের সমন্বয়ে জর্জিয়ান স্টেট কাউন্সিল নামে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত করে এবং তারা ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে প্রাক্তন সোভিয়েত মন্ত্রী এডুয়ার্ড শেভার্ডনাদজেকে জর্জিয়ায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। [৫২]

পরে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণ ওশেটিয়াতে একটি স্বাধীনতা গণভোট অনুষ্ঠিত হয়,[৫৩] যেখানে ভোটারদেরকে দুটি প্রশ্ন করা হয়: "আপনি কি একমত যে দক্ষিণ ওশেটিয়া একটি স্বাধীন দেশ হওয়া উচিত?" এবং "আপনি কি রুশ ফেডারেশনের সাথে ওশেটিয়ার পুনর্মিলনের জন্য ১৯৯১ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত ওসেটীয় সংসদের সমাধানের সাথে একমত?"[৫৩] ভোটে উভয় প্রস্তাবই অনুমোদিত হয়েছিল;[৫৩] কিন্তু ফলাফল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়নি।[৫৪] তবে তা সত্ত্বেও দক্ষিণ ওশেটিয় আঞ্চলিক পরিষদ পরবর্তীকালে একটি "রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার আইন" পাস করে এবং ২৯ মে, ১৯৯২ সালে দক্ষিণ ওশেটিয়া প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে[৪৩]

১৯৯৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জর্জীয় গৃহযুদ্ধ, যা অনেক হতাহত ডেকে আনে।

১৯৯২ সালের ২৪ জুন শেভার্ডনাদজে দক্ষিণ ওসেটীয় সরকারের সাথে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সোচি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে শক্তির ব্যবহার এড়াতে বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং জর্জিয়ার কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ ওশেটিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। জর্জীয় সরকার[৫৫] শহরসহ দক্ষিণ ওশেটিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। [৫৭] ওসেটীয়, রুশ ও জর্জীয়দের একটি শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯২ সালের ৬ নভেম্বর অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো–অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) জর্জীয় শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য জর্জিয়ায় একটি মিশন স্থাপন করে। তারপর থেকে ২০০৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দক্ষিণ ওশেটিয়া সাধারণত শান্তিপূর্ণ ছিল। [৫৮] [৫৯]

২০০৩ সালে গোলাপ বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর মিখাইল সাকাশ্ভিলি ২০০৪ সালে জর্জিয়ার রাষ্ট্রপতি হন। ২০০৪ সালের সংসদীয় এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তিনি জর্জিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।[৬০] একটি প্রাথমিক বক্তৃতার সময়ে মিখাইল সাকাশভিলি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলিকে সম্বোধন করে বলেন, "জর্জিয়া বা তার রাষ্ট্রপতি জর্জিয়ার বিচ্ছিন্নতা সহ্য করবে না। অতএব, আমরা আমাদের আবখাজ এবং ওসেটীয় বন্ধুদের অবিলম্বে আলোচনার প্রস্তাব দিই এবং আমরা তাদের ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রীয়তার প্রতিটি মডেল নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রস্তুত আছি।"[৬১]

২০০৪ সাল থেকে জর্জীয় কর্তৃপক্ষ আচারায় সফল হওয়ার পর সেই অঞ্চলটিকে তাদের শাসনের অধীনে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করার সাথে সাথে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছিল। জর্জিয়া ইর্গনেটির কালো বাজার বন্ধ করতে পুলিশ পাঠায়, যা ছিল এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান রাজস্বের উৎস। এতে রাশিয়া থেকে পাচারকৃত খাদ্যসামগ্রী ও জ্বালানি বিক্রি হতো। জর্জীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, রোকি টানেলের মাধ্যমে জর্জীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এরগনেটি বাজারের জন্য পণ্যের ব্যাপক চোরাচালান, দেশটিকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাস্টম রাজস্ব এনে দেয়। [৬২] পরে জর্জিয়া রকি টানেলকে যৌথ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণে আনার প্রস্তাব করেছিল এবং তা দক্ষিণ ওসেটীয় পক্ষ প্রত্যাখ্যান করে।[৬৩]

এরগনেটি বাজারের বিরুদ্ধে কালোবাজারি বিরোধী ব্যাপক অভিযানের কারণে জর্জিয়ার উদ্দেশ্যের প্রতি দক্ষিণ ওসেটীয় বিশ্বাস ভেঙে যায় [৬৪] এবং জর্জীয় শান্তিরক্ষী ও দক্ষিণ ওসেটীয় মিলিশিয়ান ও রাশিয়ার ফ্রিল্যান্স যোদ্ধাদের মধ্যে সহিংসতার একটি তরঙ্গ শুরু হয়।[৬৫][৬৬] এরমধ্যে আছে, কয়েক ডজন জর্জীয় শান্তিরক্ষীকে জিম্মি করা,[৬৭] জর্জিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রামগুলিতে লাগাতার গুলিবর্ষণ এবং এতে কয়েক ডজন নিহত ও আহত হওয়া। পরবর্তীকালে ১৩ আগস্ট উভয়ই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছয়; যদিও এটি বারবার লঙ্ঘন করা হয়েছিল। [৬৮][৬৬]

জর্জীয় সরকার এই অঞ্চলে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উপস্থিতির বিরুদ্ধে এবং দক্ষিণ ওসেটীয় পক্ষের অনিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল।[৬৯][৭০] [৭১] জর্জিয়ান সরকারি কর্মকর্তারা বলেন যে, বর্তমান দক্ষিণ ওশেটিয়ার প্রধান নিরাপত্তা অবস্থানগুলি ( প্রাক্তন ) রুশ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দখলে রয়েছে। [৭৩] কিছু রাজনৈতিক গবেষক রুশ ফেডারেশনের কাছে আউটসোর্স করা কিছু ওসেটীয় প্রতিষ্ঠানের কথা বলেন। [৭৫]

তারা শান্তিরক্ষা বাহিনীকে (যা দক্ষিণ ওসেটীয়, উত্তর ওসেটীয়, রুশ ও জর্জীয়দের সমান অংশ নিয়ে গঠিত) অনিরপেক্ষ বলে বিবেচনা করে এবং তা প্রতিস্থাপনের দাবি জানায়। জর্জিয়া দক্ষিণ ওশেটিয়ায় শান্তিরক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব চালু করে।[৭৬][৭৭][৭৮][৭৯] মার্কিন সিনেটর রিচার্ড লুগারের মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ সালে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল থেকে রাশিয়ান শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহারের জন্য জর্জিয়ার আহ্বানকে সমর্থন করেছিল।[৮০] পরে ইইউ'র দক্ষিণ ককেশীয় দূত পিটার সেমনিবি বলেন যে, "জর্জিয়ার গুপ্তচরে রাশিয়ার পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষ্ণ সাগরের প্রতিবেশী অঞ্চলে নিরপেক্ষ শান্তিরক্ষী হিসাবে তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।"[৮১] জোসেফ বিডেন ( ইউএস সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান) রিচার্ড লুগার ও মেল মার্টিনেজ ২০০৮ সালের জুন মাসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জর্জিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টার অভিযোগে একটি প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।[৮২]

২০০৮ সালের যুদ্ধ

যুদ্ধের আগে দক্ষিণ ওশেটিয়া।

২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে জর্জিয়ারাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।[৮৩][৮৪][৮৫] সে বছরের মাঝে জর্জীয় শান্তিরক্ষীদের পরিবহনকারী একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং দক্ষিণ ওসেটীয়রা এই ঘটনাটি ঘটানোর পেছনে দায়ী ছিল বলে সন্দেহ করা হয়। এই ঘটনা উভয় অঞ্চলের মাঝে শত্রুতা শুরু সৃষ্টি করে এবং এতে পাঁচ জর্জীয় সেনা আহত হয়।[৮৬] এর প্রতিক্রিয়ায় বেশ কিছু দক্ষিণ ওসেটীয় মিলিশিয়া আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং[৮৭] দক্ষিণ ওসেটীয়রা সীমান্তবর্তী জর্জীয় গ্রামসমূহে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এই আর্টিলারি হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জর্জীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পয়লা আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে গোলাগুলি শুরু করে।[৮৩][৮৭][৮৮][৮৯][৯০]

২০০৮ সালের ৭ই আগস্ট প্রায় ১৯:০০–এ জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশ্ভিলি একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন এবং তিনি শান্তি আলোচনার আহ্বান জানান।[৯১] যাহোক, জর্জীয় গ্রামগুলিতে ক্রমবর্ধমান আক্রমণ ( যা দক্ষিণ ওশেটিয়ার সংঘাতময় অঞ্চলে অবস্থিত) শীঘ্রই জর্জীয় সৈন্যদের বন্দুকযুদ্ধের সাথে মিলিত করে।[৯২][৯৩] তারা স্বঘোষিত দক্ষিণ ওশেটিয়া প্রজাতন্ত্রে রাজধানী স্কিনভালির দিকে অগ্রসর হতে শুরু। ৮ আগস্ট রাতে তারা রাজধানী অভিমুখে মার্চ করে এবং পরদিন সকালে তার কেন্দ্রে পৌঁছায়।[৯৪] একজন জর্জীয় কূটনীতিক ৮ আগস্ট রুশ সংবাদপত্র কমারসান্টকে বলছেন যে, স্কিনভালির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিবিলিসি দেখাতে চেয়েছিল যে, জর্জিয়া জর্জিয়ান নাগরিকদের হত্যা সহ্য করবে না।[৯৫] রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ পাভেল ফেলগেনহাওয়ারের মতে, ওসেটীয় উসকানি জর্জীয় প্রতিক্রিয়াকে প্রকাশ করার লক্ষ্যে ছিল, যা এর পূর্বপরিকল্পিত রুশ সামরিক আক্রমণের অজুহাত হিসাবে প্রয়োজন ছিল।[৯৬] জর্জীয় গোয়েন্দা এবং বেশ কয়েকটি রুশ মিডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, নিয়মিত (অ-শান্তি রক্ষাকারী) রুশ সেনাবাহিনীর কিছু অংশ জর্জীয় সামরিক পদক্ষেপের অনেক আগেই রোকি টানেল দিয়ে দক্ষিণ ওসেটীয় অঞ্চলে চলে গিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।[৯৭][৯৮]

রাশিয়া জর্জিয়াকে দক্ষিণে[৮৯][৩২] আগ্রাসনের জন্য অভিযুক্ত করে। জর্জিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে রাশিয়ার বিমান হামলাও শুরু হয় তখন।[৯৯] অপর দিকে ৯ আগস্ট আবখাজ বাহিনী জর্জিয়ার দখলে থাকা কোডোরি গর্জে আক্রমণ করে যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলেছিল।[১০০] ১০ আগস্ট রুশ সামরিক বাহিনী স্কিনভালি পুনর্দখল করে।[৯৯] সেই সাথে রুশ সেনাবাহিনী জর্জীয় শহর জুগদিদি,[১০১] সেনাকি,[১০২] পোটি[১০৩] এবং গোরি (যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর শেষটি) দখল করে।[১০৪] রুশ ব্ল্যাক সি ফ্লিট জর্জীয় উপকূল অবরোধ করেছিল।[৮৯]

২০০৮ সালের আগস্টে স্কিনভালি

যুদ্ধে দক্ষিণ ওশেটিয়ায় জর্জীয়দের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান পরিচালনা করেছিল দক্ষিণ ওসেটীয় লোকেরা।[১০৫] যুদ্ধ শেষে স্কিনভালির আশেপাশের জর্জীয় গ্রামগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।[১০৬] এই যুদ্ধে ১৯২,০০০ লোক বাস্তুচ্যুত হয়[১০৭] এবং অধিকাংশই যুদ্ধের পরে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। এর এক বছর পরও প্রায় ৩০,০০০ জাতিগত জর্জীয় বাস্তুচ্যুত থেকে যায়।[১০৮] কমার্স্যান্টে প্রকাশিত একটি সাক্ষাত্কারে দক্ষিণ ওশেটিয়ার নেতা এডুয়ার্ড কোকোইটি বলেন যে, তিনি জর্জীয়দের ফিরে যেতে দেবেন না।[১০৯][১১০]

ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ২০০৮ সালের ১২ আগস্ট একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আলোচনা করেন[১১১] ১৭ আগস্ট রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি দিমিত্রি মেদভেদেভ ঘোষণা করেন যে, রুশ বাহিনী পরের দিন জর্জিয়া থেকে প্রত্যাহার শুরু করবে।[১১২] ২৬ আগস্টে রাশিয়া আবখাজিয়া ও দক্ষিণ ওশেটিয়া প্রজাতন্ত্রকে পৃথক প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[১১৩] রুশ স্বীকৃতির প্রতিক্রিয়ায় জর্জীয় সরকার রাশিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।[১১৪] রুশ বাহিনী ৮ অক্টোবরে আবখাজিয়া এবং দক্ষিণ ওশেটিয়ার সীমান্তবর্তী বাফার এলাকা ত্যাগ করে এবং জর্জিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনিটরিং মিশন বাফার এলাকার উপর কর্তৃত্ব গ্রহণ করে।[১১৫][১১৬] এ যুদ্ধের পর থেকে জর্জিয়া দাবি বজায় রেখেছে যে, আবখাজিয়া এবং দক্ষিণ ওশেটিয়া রুশ-অধিকৃত জর্জীয় অঞ্চল।[১১৭][১১৮]

২০০৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জর্জীয় সংঘাতের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন বলেছে যে, কয়েক মাস পারস্পরিক উস্কানি দেওয়ার আগে স্কিনভালির বিরুদ্ধে একটি বিরাট আকারের জর্জিয়ান সামরিক অভিযানের মাধ্যমে প্রকাশ্য শত্রুতা শুরু হয়েছিল এবং আশেপাশের এলাকায় ২০০৮ সালের আগস্টের ৭ থেকে ৮ তারিখের রাতে চালু করা হয়েছিল।[১১৯][১২০]

২০০৮ সালের যুদ্ধের পর

২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাশিয়ার সাথে একীভূতকরণের উপর একটি গণভোট প্রস্তাব করা হয়; কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য তা স্থগিত রাখা হয়।[১২১] ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল দক্ষিণ ওশেটিয়ার সরকারি নামের উপর একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের তিন-চতুর্থাংশ দক্ষিণ ওসেটীয় সংবিধানের সংশোধনী সমর্থন করেন, যা আইনগতভাবে "রিপাবলিক অফ সাউথ ওশেটিয়া" ও "অ্যালানিয়া রাজ্য" নামগুলিকে সমান মর্যাদা দেয় এবং তখন থেকে আলানিয়া রাজ্য নামেও অভিহিত হয়।[১২২]

২০২২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতি আনাতোলি বিবিলভ ঘোষণা করেছিলেন যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে সহায়তা করার জন্য দক্ষিণ ওশেটিয়ার সেনা পাঠানো হয়েছে[১২৩][১২৪] এবং ২০২২ সালের ৩০শে মার্চ বিবিলভ ঘোষণা করেছিলেন যে, দক্ষিণ ওশেটিয়া রুশ অংশ হওয়ার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে[১২৫] এবং রুশ রাজনীতিবিদরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন যে, রুশ আইন বিদেশী অঞ্চলগুলিকে ফেডারেশনে যোগদানের অনুমতি দেবে। তারা একটি গণভোটের মাধ্যমে দক্ষিণ ওসেটীয় জনগণের ইচ্ছা প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।[১২৬]

ওসেটীয় নেতা বিবিলভ একটি দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে বলেন যে, তিনি দুটি গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন; একটি রাশিয়া দ্বারা সংযুক্তিকরণের বিষয়ে এবং দ্বিতীয় ভোট উত্তর ওশেটিয়াতে যোগদানের বিষয়ে,[১২৭] যার জন্য তিনি ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন।[১২৮] ৩১ মে সংযুক্তিকরণ গণভোট এবং ১৭ জুলাই উত্তর ওশেটিয়ায় যোগদানের জন্যে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।[১২৯][১৩০] ২০২২ সালের নির্বাচনে বিবলভের পরাজয়ের পর নতুন রাষ্ট্রপতি অ্যালান গাগ্লোয়েভ ৩০ মে গণভোট স্থগিত করেন।[১৩১]

ভূগোল

জর্জিয়ার মানচিত্রে দক্ষিণ ওশেটিয়া (বেগুনি) ও আবখাজিয়া (সবুজ)।

দক্ষিণ ওশেটিয়া এশিয়া এবং ইউরোপের সংযোগস্থল ককেশাসে অবস্থিত একটি দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল। এটি বৃহত্তর ককেশাস পর্বতমালার দক্ষিণ ঢাল এবং এর পাদদেশ দখল করে আছে, যা আইবেরিয়া সমভূমির অংশ। আইবেরিয়া একটি ভৌগোলিক মালভূমি, যা প্রায় দক্ষিণ ওশেটিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত। [১৩৩] লিখি রেঞ্জ দক্ষিণ ওশেটিয়ার পশ্চিম ভৌগোলিক সীমারেখা তৈরি করে, যদিও দক্ষিণ ওশেটিয়ার উত্তর-পশ্চিম কোণটি রেঞ্জের পশ্চিমে অবস্থিত।

বৃহত্তর ককেশাস পর্বতমালা রাশিয়ার সাথে এর দক্ষিণ ওশেটিয়ার উত্তর সীমান্ত গঠন করে। দক্ষিণ ওশেটিয়া থেকে রাশিয়া পর্যন্ত পর্বতমালার মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র একটি প্রধান রাস্তা রয়েছে, যা রোকি ট্যানেলের মধ্য দিয়ে উত্তর ওশেটিয়ায় যাওয়ার ট্রান্সকেম হাইওয়ে। ১৯৮৬ সালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছিল। দক্ষিণ ওশেটিয়ায় অবস্থিত ট্রান্সকাম বিভাগটি জর্জীয় S10 হাইওয়ের নামমাত্র অংশ এবং তিবিলিসি কার্যত সেই অংশটিকেও নিয়ন্ত্রণ করে না। ২০০৮ সালের দক্ষিণ ওশেটিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য রকি টানেলটি অত্যাবশ্যক ছিল। কারণ এটি রাশিয়া এবং দক্ষিণ ওশেটিয়া যাওয়ার জন্য ককেশাস পর্বতমালার একমাত্র সরাসরি পথ। [১৩৫]

দক্ষিণ ওশেটিয়া প্রায় ৩,৯০০ কিমি (১,৫০৬ মা) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত[১৩৭][১৩৮] এবং অধিক জনবহুল উত্তর ওশেটিয়া (যা রাশিয়ার একটি প্রজাতন্ত্র) থেকে পর্বত দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এটি জর্জিয়ার কুরা নদীর দক্ষিণ দিক পর্যন্ত প্রসারিত। দক্ষিণ ওশেটিয়ার ৮৯% এরও বেশি অংশ ১,০০০ মি (৩,২৮১ ফু) থেকেও বেশি সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে অবস্থিত। এর সর্বোচ্চ বিন্দু খালাতসা পর্বত, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩,৯৩৮ মি (১২,৯২০ ফু) উপরে অবস্থিত।[১৩৯]

বৃহত্তর ককেশাসে বিদ্যমান প্রায় ২,০০০ টি হিমবাহের মধ্যে প্রায় ৩০% জর্জিয়ার মধ্যে অবস্থিত। লিয়াখভি নদীর অববাহিকার ১০টি হিমবাহ ও মুষ্টিমেয় রিওনি নদীর অববাহিকা দক্ষিণ ওশেটিয়ায় অবস্থিত। [১৪১]

দক্ষিণ ওশেটিয়ার বেশিরভাগ অংশ কুরা অববাহিকা এবং উত্তর-পশ্চিম অংশ কৃষ্ণ সাগরের অববাহিকায় অবস্থিত। লিখি ও রাচা শৈলশিরা এ দুটি অববাহিকা বিভক্ত করার কাজ করে। দক্ষিণ ওশেটিয়ার প্রধান নদীগুলির মধ্যে রয়েছে: বৃহত্তর ও ক্ষুদ্রকার লিয়াখভি, কসানি, মেদঝুদা, ত্লিডন, ক্যানাল সালটানিস, পটসা নদী ও অন্যান্য উপনদী

জলবায়ু

দক্ষিণ ওশেটিয়ার টাইপোগ্রাফিক মানচিত্র

দক্ষিণ ওশেটিয়ার জলবায়ু পূর্ব থেকে উপক্রান্তীয় প্রভাব ও পশ্চিম থেকে ভূমধ্যসাগরীয় প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়। বৃহত্তর ককেশাস পরর্তমালা উত্তর থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসের বিরুদ্ধে একটি বাধা হিসাবে কাজ করে স্থানীয় জলবায়ুকে পরিমিত করে এবং এর ফলে ( এমনকি উচ্চ উচ্চতায়ও ) উত্তর ককেশাসের তুলনায় এটি উষ্ণতর।[১৪২][১৪৩] দক্ষিণ ওশেটিয়ার জলবায়ু অঞ্চলগুলি কৃষ্ণ সাগর থেকে দূরত্ব ও উচ্চতা দ্বারা নির্ধারিত হয়। পূর্ব জর্জিয়ার সমতল পর্বতমালা কৃষ্ণ সাগরের প্রভাব থেকে রক্ষা পায়, যা মহাদেশীয় জলবায়ু প্রদান করে।

পাদদেশীয় ও পার্বত্য অঞ্চলগুলি ( বৃহত্তর ককেশাস পর্বতসহ) শীতল, আর্দ্র গ্রীষ্ম ও তুষারময় শীত অনুভব করে এবং অনেক অঞ্চলে প্রায়শ তুষার আচ্ছাদন দুই মিটারের বেশি হয়ে থাকে। কৃষ্ণ সাগর থেকে দক্ষিণ ওশেটিয়ার পশ্চিমে আর্দ্রবায়ুর অনুপ্রবেশ প্রায়ই লিকি পর্বতশ্রেণী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। দক্ষিণ ওশেটিয়ায় বছরের সবচেয়ে আর্দ্র সময়কাল সাধারণত বসন্তশরৎকালে ঘটে এবং শীত ও গ্রীষ্মের মাসগুলি সবচে' শুষ্ক থাকে। দক্ষিণ ওসেটীয় অঞ্চলে উচ্চতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানকার জলবায়ু পরিস্থিতি ১,৫০০ মি (৪,৯২১ ফু) এর উপরে যেকোনো নিচু অঞ্চলের তুলনায় যথেষ্ট ঠান্ডা। যে অঞ্চলগুলি ২,০০০ মি (৬,৫৬২ ফু) এর উপরে আছে সেখানে প্রায় গ্রীষ্মের মাসগুলিতেও তুষারপাত হয়।

জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ ওশেটিয়ার গড় তাপমাত্রা + ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি এবং জুলাই মাসে গড় তাপমাত্রা +২০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়। দক্ষিণ ওশেটিয়ার বার্ষিক তরল বৃষ্টিপাতের গড় প্রায় ৫৯৮ মিলিমিটার।[১৪২] দক্ষিণ ওশেটিয়ার গ্রীষ্মকালের গড় তাপমাত্রা ২০ °সে (৬৮ °ফা) থেকে ২৪ °সে (৭৫.২ °ফা) এর বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ও শীতকালে এর গড় তাপমাত্রা ২ °সে (৩৫.৬ °ফা) থেকে ৪ °সে (৩৯.২ °ফা) থাকে। আর্দ্রতা তুলনামূলকভাবে কম হয় এবং দক্ষিণ ওশেটিয়া জুড়ে বৃষ্টিপাত গড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ মিমি (১৯.৭ থেকে ৩১.৫ ইঞ্চি) প্রতি বছর হয়ে থাকে; কিন্তু আলপাইন এবং উচ্চভূমি অঞ্চলে স্বতন্ত্র মাইক্রোক্লিমেট রয়েছে। উচ্চ উচ্চতায় জর্জিয়ার পূর্ব সমভূমিতে বৃষ্টিপাত কখনও কখনও দ্বিগুণ ভারী হয়। আলপাইন অবস্থা প্রায় ২,১০০ মি (৬,৮৯০ ফু) এ শুরু হয় এবং ৩,৬০০ মি (১১,৮১১ ফু) এর উপরে তুষার ও বরফ সারা বছরই থাকে।

রুশ সীমালঙ্ঘন

যে সকল রুশ সৈন্য দক্ষিণ ওশেটিয়ার সীমান্তে টহল দেয় তারা অন্যায় দখলের মাধ্যমে এ অঞ্চলের সীমানা প্রসারিত করছে বলে জানা যায়। এর অর্থ হলো, তারা গোপনে জর্জিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে এক সময়ে কয়েক ফুট করে করে অগ্রসর হয় এবং পরবর্তীকালে তা নিজের ভূমি (ওশেটীয়) বলে দাবি করে।[১৪৪]

রাজনৈতিক অবস্থা

রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির ডিক্রি নং ১২৬১ দক্ষিণ ওশেটিয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।

২০০৮ সালে সংঘটিত দক্ষিণ ওশেটিয়ার যুদ্ধের পর রাশিয়া দক্ষিণ ওশেটিয়াকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[১৪৫] রাশিয়ার এই এক তরফা স্বীকৃতির ফলে সীমান্তে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং সার্বভৌম জর্জিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনের দায়ে ন্যাটো, অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (OSCE) ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের মত পশ্চিমা ব্লকগুলির নিন্দার সাথে তা শেষ হয়।[১৪৬][১৪৭][১৪৮][১৪৯] খবরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ ) কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মতবিরোধের কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। এই ঘটনায় যুক্তরাজ্য একটি কঠোর প্রতিক্রিয়া চায়; তবে জার্মানি, ফ্রান্স ও অন্যান্য ইইউ-ভুক্ত রাষ্ট্র রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন না করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।[১৫০] প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড হলব্রুক বলেন যে, এই সংঘাত রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে অন্য প্রাক্তন সোভিয়েত রাজ্যগুলিতে চলিত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উত্সাহিত করতে পারে এবং[১৫১] এর বেশ কিছু দিন পর নিকারাগুয়া দক্ষিণ ওশেটিয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় দেশ হয়ে ওঠে।[১৪৫] ২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভেনেজুয়েলা ৩য় রাষ্ট্র হিসেবে দক্ষিণ ওশেটিয়াকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং এটি করার মাধ্যমে ভেনিজুয়েলা ওশেটিয়াকে স্বীকৃতি প্রদানকারী জাতিসংঘের ৩য় সদস্য রাষ্ট্র হয়ে ওঠে।[১৫২]

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় কাউন্সিল ও উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থাসহ ( ন্যাটো ) জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য দেশগুলি দক্ষিণ ওশেটিয়াকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না। বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি সরকার কর্তৃক পরিচালিত দে ফাক্তো এ রাষ্ট্রটি ২০০৬ সালের ১২ নভেম্বরে দ্বিতীয় স্বাধীনতা-গণভোট[১৫৩] আয়োজন করে। এর পূর্বে ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম গণভোটটি বিশ্বের বেশিরভাগ সরকার দ্বারা বৈধ হিসাবে স্বীকৃত হয়নি।[১৫৪] এর তশখিনভালি নির্বাচন কর্তৃপক্ষের মতে গণভোটে জর্জিয়া থেকে স্বাধীনতার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভোট পাওয়া গিয়েছিল এবং এতে দক্ষিণ ওশেটিয়ার ভোটারদের প্রায় ৯৯% স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছিল। ভোটের জন্য ভোটার উপস্থিতি ছিল ৯৫%।[১৫৫] জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, সুইডেনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ৩৪ টি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের একটি দল ৭৮ টি ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে গণভোটটি পর্যবেক্ষণ করেন।[১৫৬] যাহোক, এটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, রাশিয়া এবং অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (OSCE) দ্বারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়নি। কারণ এতে জাতিগত জর্জীয়দের অংশগ্রহণের অভাব ছিল এবং তিবিলিসির জর্জীয় সরকারের কাছ থেকে কোনো স্বীকৃতি ছাড়াই এই ধরনের গণভোটের আয়োজন অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়।[১৫৭] ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি (OSCE) ও ন্যাটো এই গণভোটের নিন্দা করে।

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গণভোট ও নির্বাচনের মাঝে দক্ষিণ ওশেটিয়ার তৎকালীন স্ব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান এডুয়ার্ড কোকোইটি ওশেটিয়ার বিরোধী পার্টির চাপে ( পিপলস অফ সাউথ ওশেটিয়া ) তৎকালীন জর্জিয়া– নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ ওশেটিয়ার অন্তর্গত এলাকায় সমসাময়িকভাবে তাদের নিজস্ব নির্বাচনের আয়োজন করেছিল এবং সে নির্বাচনে জর্জীয়রাসহ এই অঞ্চলের কিছু ওশেটীয় বাসিন্দা দক্ষিণ ওশেটিয়ার বিকল্প রাষ্ট্রপতি হিসাবে দিমিত্রি সানাকোয়েভের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।[১৫৮] সানাকোয়েভের বিকল্প নির্বাচন জাতিগত জর্জীয়দের পূর্ণ সমর্থন দাবি করেছে।[১৫৯]

২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে জর্জিয়া দক্ষিণ ওশেটিয়ার অস্থায়ী প্রশাসনিক সত্তা তৈরি করে।[১৬০][১৬১] [১৬২] যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জাতিগত সদস্য ওসেটীয়রা কর্মরত ছিল এবং দিমিত্রি সানাকোয়েভকে সেই সত্তার নেতা হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, এই অস্থায়ী প্রশাসন কেন্দ্রীয় জর্জীয় কর্তৃপক্ষের সাথে তার চূড়ান্ত অবস্থা এবং দ্বন্দ্ব সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করবে।[১৬৩] ২০০৭ সালের ১০ মে জর্জিয় রাষ্ট্রপতি সানাকোয়েভকে দক্ষিণ ওশেটিয়ার অস্থায়ী প্রশাসনিক সত্তার প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করেন।

২০০৭ সালের ৩ জুলাই জর্জিয়া জর্জীয় রাজ্যসমূহের মধ্যে দক্ষিণ ওশেটিয়ার স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বিকাশের উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুরাব নোগাইডেলির সভাপতিত্বে একটি রাষ্ট্রীয় কমিশন গঠন করেন এবং জর্জীয় আধিকারিকদের মতে, ওসেটীয় সমাজের সব শক্তি ও সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে একটি সর্ব-অন্তর্ভুক্ত কথোপকথনের কাঠামোর মধ্যে এই অবস্থাটি তৈরি হয়েছে।[১৬৪]

দক্ষিণ ওশেটিয়ার সাথে সাথে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া, আর্টশখ ও আবখাজিয়াকে কখনো কখনো সোভিয়েত-পরবর্তী 'হিমায়িত সংঘর্ষ' অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[১৬৫]

রুশ ফেডারেশনের সাথে একীভূত করণের পরিকল্পনা

২০০৮ সালের আগস্টে দক্ষিণ ওসেটিয় পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার টারজান কোকোইটি ঘোষণা করেন যে, এই অঞ্চলটি শীঘ্রই রাশিয়ার সাথে যুক্ত হবে, যাতে দক্ষিণ ও উত্তর ওসেটীয়রা একটি ঐক্যবদ্ধ রাশিয়ান রাজ্যে একসাথে বসবাস করতে পারে।[১৬৬] এরপর রুশ এবং দক্ষিণ ওসেটীয় বাহিনী দক্ষিণ ওশেটিয়ার প্রধানত জাতিগত জর্জীয়দের আবাস্থল পূর্ব অংশের বৃহত্তম জনবহুল শহর আখালগোরিতের বাসিন্দাদের রুশ নাগরিকত্ব গ্রহণ অথবা শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া শুরু করে।[১৬৭] তবে দক্ষিণ ওশেটিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এডুয়ার্ড কোকোইটি পরে বলেন যে, দক্ষিণ ওশেটিয়া রাশিয়ায় যোগদান করে নিজের স্বাধীনতা ত্যাগ করবে না। তিনি বলেছিলেন, "আমরা নিজেদের স্বাধীনতাকে না বলতে যাচ্ছি না, যা অনেক প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল; দক্ষিণ ওশেটিয়ার রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার এখন কোন পরিকল্পনা নেই।" সিভিল জর্জিয়া বলেছে যে, এই বিবৃতিটি আগের দিন কোকোইটির দেওয়া কথার বিরোধিতা করে, যেখানে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, দক্ষিণ ওশেটিয়া উত্তর ওশেটিয়ার সাথে রুশ ফেডারেশনে যোগ দেবে।[১৬৬][১৬৮]

দক্ষিণ ওসেশিয়া ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ২০১৫ সালের ১৮ মার্চে একটি "জোট ও একীকরণ" চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন[১৬৯] এবং চুক্তিতে দক্ষিণ ওসেশিয়ার সামরিক বাহিনীকে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রয়েছে। এছাড়া চুক্তি মতে, দক্ষিণ ওশেটিয়ার শুল্ক পরিষেবাকে রাশিয়ার সাথে একীভূত করা এবং উত্তর ককেশাস ফেডারেল জেলার সমান হারে দক্ষিণ ওশেটীয় রাষ্ট্রীয় কর্মীদের বেতন প্রদানের জন্য রাশিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।[১৭০] অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই চুক্তিকে উভয় রাষ্ট্র প্রায় সম্পূর্ণ একীকরণের আহ্বান হিসাবে বর্ণনা করেছে এবং এটিকে রাশিয়াআবখাজিয়ার মধ্যে ২০১৪ সালের চুক্তির সাথে তুলনা করেছে।[১৬৯] জর্জীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চুক্তি স্বাক্ষরকে রাশিয়া কর্তৃক বিতর্কিত অঞ্চলের "প্রকৃত সংযোজন" হিসাবে বর্ণনা করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে যে, তারা এটিকে স্বীকৃতি দেবে না।[১৭১][১৭২]

রুশ ফেডারেশনের সাথে দেশটির একীকরণের দিকে আরও একটি পদক্ষেপে দক্ষিণ ওশেটিয়ার রাষ্ট্রপতি লিওনিড টিবিলভ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত উত্তর ওশেটিয়া-আলানিয়ার সাথে সাদৃশ্য রেখে এর পূর্ববতী নামটি পরিবর্তন করে দক্ষিণ ওশেটিয়া-আলানিয়া " করার প্রস্তাব করেন। তিবিলভ এছাড়াও ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের আগে রুশ ফেডারেশনে যোগদানের উদ্দেশে একটি গণভোট আয়োজন করারও পরামর্শ দেন, যা গোটা ওশেটিয়া নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ "ওশেটিয়া-আলানিয়া" গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।[১৭৩] ২০১৬ সালের এপ্রিলে তিবিলভ বলেছিলেন যে, তিনি সেই বছরের আগস্টের আগে গণভোট আয়োজন করতে চান।[১৭৪][১৭৫]

যাহোক, ২০১৭ সালের ৩০ মে টিবিলভ এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর পর্যন্ত গণভোট স্থগিত করেন।[১৭৬] নাম-পরিবর্তন গণভোটে যারা ভোট দিয়েছিলেন, তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ নাম পরিবর্তন সমর্থন করেন।তবে পরে নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদের দৌড়ে আনাতোলি বিবিলভ জিতেছিলেন, যিনি ক্ষমতাসীন তিবিলভের বিরুদ্ধে ছিল এবং তিবিলভ মস্কো দ্বারা সমর্থিত ছিল।[১৭৭]

২০২২ সালের ৩০ মার্চ রাষ্ট্রপতি আনাতোলি বিবিলভ রুশ ফেডারেশনের সাথে একীভূত হওয়ার জন্য নিকট ভবিষ্যতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার ক্ষেত্রে নিজের অভিপ্রায় ঘোষণা করেন।[১২৫] যদিও তিনি পরবর্তীকালে ২০২২ সালের দক্ষিণ ওশেটিয়ান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির পদ হারান।

জর্জিয়ার দখলকৃত অঞ্চলের আইন

"অধিকৃত অঞ্চলে জর্জিয়ার আইন" (জর্জীয় ভাষায়), ২৩ অক্টোবর, ২০০৮।

২০০৮ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে রাষ্ট্রপতি সাকাশভিলি জর্জীয় পার্লামেন্টের পাশ করা অধিকৃত অঞ্চলের আইন প্রণয়নে স্বাক্ষর করেন। এই আইনটি আবখাজিয়া এবং তশখিনভ্যালির ( সাবেক দক্ষিণ ওসেটীয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলির একটি ) বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করে।[১৭৮][১৭৯] আইনটি এই অঞ্চলে অবাধ চলাচল, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও সমাপ্ত রিয়েল এস্টেট লেনদেনের উপর বিধিনিষেধের কথা বলে। বিশেষ করে এই আইন অনুসারে, বিদেশী নাগরিকদের কেবলমাত্র জর্জিয়ার মাধ্যমেই বিচ্ছিন্ন অঞ্চল দুইটিতে প্রবেশ করতে পারবে। আবখাজিয়ায় প্রবেশ করতে হবে জুগদিদি পৌরসভা থেকে ও দক্ষিণ ওশেটিয়ায় গোরি পৌরসভা থেকে এবং এর বাইরে বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রবেশকারীকে অবৈধ বলে গণ্য হবে।

জর্জিয়ার বাকি অংশ থেকে দক্ষিণ ওশেটিয়া যাওয়ার প্রধান রাস্তাটি গোরি পৌরসভার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। যাহোক, এই রাস্তাটি ২০০৮ সাল থেকে এরগনেটিতে উভয় দিকে বন্ধ রয়েছে[১৮০] প্রধান ক্রসিং পয়েন্ট, যা জর্জীয় ও দক্ষিণ ওসেটীয়দের জন্য খোলা ছিল, সেটি আখালগোরি জেলায় অবস্থিত এবং এটি ২০১৯ সাল থেকে দক্ষিণ ওশেটিয়া বন্ধ করে দিয়েছে।[১৮১] এর বাইরে দক্ষিণ ওসেটীয় কর্তৃপক্ষ বিদেশীদের শুধুমাত্র রুশ ফেডারেশনের অঞ্চল দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেয়।[১৮২]

জর্জীয় আইন অবশ্য বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড়ও দেয়, যার ফলে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ বেআইনি বলে গণ্য করা হয় না। তবে এটি শর্ত দেয় যে, বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিতে প্রবেশ করার জন্য একটি বিশেষ পারমিট জারি করা যেতে পারে, যদি সেখানে ভ্রমণ "জর্জিয়ার রাষ্ট্রীয় স্বার্থ পূরণ করে, যারা চলমান সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান আশা করে। এ আইনটি যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপকেও নিষিদ্ধ করে–উদ্যোক্তা বা উদ্যোক্তা নয় এমন সবার জন্য। এ ধরনের কার্যকলাপের জন্যে জর্জীয় আইন অনুসারে অনুমতি, লাইসেন্স ও নিবন্ধন করা প্রয়োজন হয়। আইনটি আকাশ, সমুদ্র ও রেল যোগাযোগ এবং অঞ্চলগুলির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ট্রানজিট, খনিজ অনুসন্ধান এবং অর্থ স্থানান্তর নিষিদ্ধ করে। অর্থনৈতিক কার্যকলাপকেও অন্তর্ভুক্ত করার বিধানটি পূর্ববর্তী ১৯৯০ এর আইনে ফিরে যায়। [১৮৩]

আইন বলে যে, রুশ ফেডারেশন–যে রাষ্ট্রটি সামরিক দখল করেছে - আবখাজিয়া এবং দক্ষিণ ওশেটিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী। নথি অনুসারে, রুশ ফেডারেশন জর্জীয় নাগরিক, রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি এবং বিদেশী নাগরিকদের ক্ষতিপূরণের জন্যও দায়ী, যারা জর্জিয়ায় রয়েছে এবং উপযুক্ত অনুমতি নিয়ে অধিকৃত অঞ্চলে প্রবেশ করে। [১৮৪] এই আইনটি আরও বলে যে, ডি ফ্যাক্টো রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং অধিকৃত অঞ্চলে কর্মরত কর্মকর্তাদের জর্জিয়া অবৈধ বলে গণ্য করে। [১৮৫] বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে "জর্জীয় কর্তৃত্বের সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার" না হওয়া পর্যন্ত আইন বলবৎ থাকবে। [১৮৬]

২০০৯ সালের নভেম্বরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে একটি নতুন জর্জীয় দূতাবাসের ভবন উদ্বোধন করার জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে জর্জীয় রাষ্ট্রপতি মিখাইল সাকাশভিলি বলেছিলেন যে, দক্ষিণ ওশেটিয়া এবং আবখাজিয়ার বাসিন্দারাও এর সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে: "প্রিয় বন্ধুরা আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, এটিও আপনাদের সকলের বাড়ি এবং এখানে আপনারা সর্বদা সমর্থন এবং সমস্যার সমাধান সন্ধান করতে সক্ষম হবেন"।[১৮৭]

রাজনীতি

২০০৮ সালের আগস্টের সশস্ত্র সংঘাতের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ ওশেটিয়া জর্জীয়অশেটীয়-অধ্যুষিত শহর ও গ্রামগুলির একটি চেকারবোর্ড নিয়ে গঠিত ছিল।[১৮৮] বৃহত্তর ওসেটীয় রাজধানী শহর তশখিনভালি ও অন্য ওসেটীয় জাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহের বেশিরভাগই বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকার কর্তৃক শাসিত হয়েছিল, যখন জর্জীয়-অধ্যুষিত গ্রাম ও শহরগুলি জর্জিয়ান সরকার দ্বারা শাসিত হয়েছিল। এ ঘনিষ্ঠতা ও দুটি সম্প্রদায়ের মিশে যাওয়াই পরবর্তীকালে জর্জীয় ও ওসেটীয় দ্বন্দ্বকে বিশেষভাবে বিপজ্জনক করে তোলে। যেহেতু একটি জাতিগতভাবে বিশুদ্ধ অঞ্চল তৈরি করার যে কোনো প্রচেষ্টার সাথে জনসংখ্যার স্থানান্তরের বিষয়টি ব্যাপক জড়িত হয়।

রাজনৈতিক বিরোধ এখনও সমাধান করা হয়নি এবং দক্ষিণ ওশেটিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্তৃপক্ষ তিবিলিসি থেকে কার্যত স্বাধীনতার মাধ্যমে অঞ্চলটি পরিচালনা করে। যদিও দুই পক্ষের মধ্যে পর্যায়ক্রমে একের পর আলোচনা বৈঠক হয়েছিল; তবে কার্যত কোনো ফলই বের হয়নি। এডুয়ার্ড শেভার্ডনাদজের (১৯৯৩–২০০৩) সরকারের অধীনে সামান্য অগ্রগতি আসে এবং তার উত্তরসূরি মিখাইল সাকাশভিলি (নির্বাচিত, ২০০৪ খ্রি.) জর্জিয়ার সরকারি কর্তৃত্বের কথার ভিত্তির একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে ঝুঁকেন। ২০০৪ সালের মে মাসে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আজারিয়ার দে ফাক্তো স্বাধীনতা সফলভাবে সমাপ্তি ঘটার পর তিনি দক্ষিণ ওশেটিয়াতেও অনুরূপ একটি সমাধান খোঁজার প্রতিশ্রুতি দেন। ২০০৪ সালের সংঘর্ষের পর জর্জিয়ার সরকার সমস্যাটিকে আন্তর্জাতিক নজরে আনার জন্য তার প্রচেষ্টা জোরদার করে এবং ২০০৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সাকাশভিলি স্ট্রাসবার্গে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অফ ইউরোপ অধিবেশনের পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলিতে দক্ষিণ ওশেটিয়ার দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য জর্জীয় দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। সে বছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী জুরাব নোগাইডেলি ভিয়েনায় অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটির স্থায়ী কাউন্সিলে জর্জীয় কর্ম পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।[৭৬] সেখানে মার্কিন সরকার ও OSCE তাদের সমর্থন প্রকাশ করে।[১৮৯]

দক্ষিণ ওসেটীয় ডি ফ্যাক্টো কর্তৃপক্ষ এই পরিকল্পনাটি "বাস্তববাদী নয়" এবং "দক্ষিণ ওশেটিয়ার পক্ষের জন্য নতুন কিছু নেই" বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।[১৯০] ৬ ডিসেম্বর লিউব্লিয়ানায় OSCE মন্ত্রী পরিষদে জর্জীয় শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।[১৯১][১৯২] মন্ত্রী পরিষদের আগে রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জর্জীয় পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে[১৯৩] বলেছিল যে, এটি ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপিত সাকাশ্ভিলির পরিকল্পনা থেকে ভিন্ন,[১৯৪] যা দক্ষিণ ওশেটীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সমর্থন করা হয়েছিল। OSCE রেজোলিউশনের পর দক্ষিণ ওসেটীয় পক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে জর্জিয়ান পরিকল্পনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে অনেককে অবাক করেছিল।[১৯৫][১৯৬]

সরকার

দক্ষিণ ওসেটীয় সংবিধানের ৪৭নং অনুচ্ছেদ অনুসারে দক্ষিণ ওশেটিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকারের নির্বাহী শাখার প্রধান। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। দক্ষিণ ওশেটিয়ার আইনসভা হল এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, যা ৩৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত, যারা ১৭টি একক-সদস্যের নির্বাচনী এলাকা নির্বাচিত হয় এবং ১৭ জন প্রতিনিধি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে নির্বাচিত (ধারা ৫৭) একটি মিশ্র পদ্ধতিতে পাঁচ বছরের জন্য জনপ্রিয় ভোটে নির্বাচিত হয়।[১৯৭]

২০২২ সালের ২৪ মে তারিখ থেকে অ্যালান গাগলোভ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হন। তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন আনাতোলি বিবিলভের প্রতিদ্বন্দ্বিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন।[১৯৮]

সামরিক বাহিনী

২০১৭ সালে দক্ষিণ ওশেটিয়ার ক্ষুদ্র সশস্ত্র বাহিনীকে আংশিকভাবে রুশ সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৯৯] রুশ সশস্ত্র বাহিনী দক্ষিণ ওশেটিয়ায় ৪র্থ গার্ডস সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে, যা তশখিনভালি শহর থেকে উত্তরে অবস্থিত এবং জাভার নিকটে তাদের প্রশিক্ষণের স্থান রয়েছে। এছাড়া ঘাঁটির একটি শাখা উগারদান্তা গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে। এটি বায়ুসেনার আওতাধীন রয়েছে।[২০০] অধিকন্তু, রাশিয়া তিবিলিসি নিয়ন্ত্রিত জর্জিয়ার সীমানা রেখার কাছে প্রায় ২০ টি তথাকথিত "সামরিক বর্ডার গার্ড ঘাঁটি"[২০১] প্রতিষ্ঠা করেছে, যেগুলি রুশ সামরিক বাহিনীর কমান্ড এবং দায়িত্বের অধীনে পড়েছে। দক্ষিণের একটি ঘাঁটিকে রাষ্ট্রীয় সীমান্ত কার্যকর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা দক্ষিণ ওশেটিয়া ও জর্জিয়ার মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে।[২০২][২০৩]

দক্ষিণ ওশেটিয়াতে আনুমানিক ৩০০০-৩৫০০ এর মত রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং আনুমানিক ১,৫০০ সামরিক কর্মী সীমান্ত রক্ষী ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে।[২০৪][২০৫][২০৬] দক্ষিণ ওসেটীয় দে ফাক্তো কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, প্রায় ৪৫০ জন দক্ষিণ ওসেটীয় নাগরিক চতুর্থ রুশ সামরিক ঘাঁটিতে নিযুক্ত আছেন।[২০৭]

২০২২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতি বিবিলভ বলেন যে, দক্ষিণ ওশেটিয়া ২০২২-এ ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের সময় রাশিয়াকে সাহায্য করার জন্য সৈন্য পাঠায়, যেন তার সৈন্যরা "পুরোপুরি বুঝতে পারে যে, তারা যেভাবে রাশিয়াকে রক্ষা করতে যাচ্ছে, এভাবে ওশেটিয়াকেও রক্ষা করতে হবে।[২০৮][২০৯] এই সৈন্যদের একটি বড় অংশ যুদ্ধের মাঠে চলে যায় এবং পরবর্তীকালে দক্ষিণ ওশেটিয়ায় ফিরে যায়। বিবিলভ পরে বলেন যে, এদের কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।[২১০]

জনসংখ্যা

১৯৯৫ থেকে ককেশাসের জাতিগত মানচিত্র, যখন ওশেটীয়রা উত্তর ও দক্ষিণ ওশেটিয়ায় বাস করত।

২০১৫ সালের গণনা অনুযায়ী

  ওসেটীয় (৮৯.৯৪%)
  জর্জীয় (৭.৪১%)
  রুশ (১.১৪%)
  আর্মেনীয় (০.৭১%)
  অন্যান্য (০.৮১%)

জর্জীয় ও ওশেটীয় সংঘর্ষের আগে দক্ষিণ ওশেটিয়ার জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছিল ওশেটীয় ও ২৫–৩০% ছিল জর্জীয়। আখালগোরি শহর এবং জেলার চারপাশে দক্ষিণ ওশেটিয়ার পূর্ব প্রান্তিক ছিল প্রধানত জর্জীয় এবং কেন্দ্র ও পশ্চিম ছিল প্রধানত ওসেটীয়। পার্বত্য উত্তরোঞ্চলের খুবই কম অংশ জনবসতিপূর্ণ। (ককেশাসের মানচিত্রে দেখুন)

২০০২ সালের জর্জীয় আদমশুমারি দক্ষিণ ওশেটিয়ার ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ ছিল। কারণ এটি শুধুমাত্র সেই সময়ে কার্যকর জর্জীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় হয়েছিল। এটি আখালগোরি জেলার খুবই জনবহুল জর্জীয় এলাকা, পাতারা লিয়াখভি এবং দিদি লিয়াখভি উপত্যকার তশখিনভালির আশেপাশের জর্জীয় সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কিত ছিল।[২১১] যদিও কিছু অনুমান মতে ২০০৭ সালে দক্ষিণ ওশেটিয়ায় ৪৭,০০০ জাতিগত ওসেটীয় ও ১৭,৫০০ জাতিগত জর্জীয় ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।[২১২]

তাশখিনভলিতে পাম রবিবার মিছিল

যুদ্ধের পর ২০০৯ সালে সেখানে জনসংখ্যার অনুমান ছিল: জর্জীয় কর্মকর্তাদের মতে ১৫,০০০ জন জর্জীয় সঠিকভাবে জর্জিয়ায় চলে গেছে; দক্ষিণ ওশেটিয়ার কর্মকর্তারা ইঙ্গিত করেন যে, ৩০,০০০ ওসেটীয় উত্তর ওশেটিয়ায় পালিয়ে যায় এবং দক্ষিণ ওশেটিয়ার মোট ৫০০ জন নাগরিক নিহত হয়।[২১৩][২১৪]

দক্ষিণ ওসেটীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত ২০১৫ সালের আদমশুমারি অনুসারে, এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ছিল ৫৩,৫৩২ জন; যার মধ্যে ৪৮,১৪৬ জন ওশেটীয় (৮৯.৯%), ৩,৯৬৬ জর্জীয় (৭.৪%) এবং ৬১০ জন রুশ। জর্জীয় কর্তৃপক্ষ এই তথ্যের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।[২১৫] সরকারি জন্মহার এবং স্কুলে উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে অনুমান করা হয় যে, এর প্রায় ৩৯,০০০ বাসিন্দা হতে পারে। ২০০৯ সালে একটি স্বাধীন অনুমান মতে, এর জনসংখ্যা ২৬,০০০ জন।[২১৬]

দক্ষিণ ওশেটিয়ার পরিসংখ্যান সংস্থা মতে, জনসংখ্যা আনুমানিক ৫৬,৫২০ জন ছিল। এটি ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় এবং এর মধ্যে ৩৩,০৫৪ জন তক্ষিনভালিতে বাস করে। [২১৭]

ইস্টার্ন অর্থোডক্স হল প্রধান ধর্ম, যা দক্ষিণ ওশেটিয়ার ওসেটীয়, জর্জীয়রুশদের দ্বারা পালিত হয়।[২১৮]

জাতিসত্তা১৯২৬ সালের আদমশুমারি১৯৩৯ সালের আদমশুমারি১৯৫৯ সালের আদমশুমারি১৯৭০ সালের আদমশুমারি১৯৭৯ সালের আদমশুমারি১৯৮৯ সালের আদমশুমারি২০১৫ আদমশুমারি
সংখ্যা%সংখ্যা%সংখ্যা%সংখ্যা%সংখ্যা%সংখ্যা%সংখ্যা%
ওসেটীয়৬০,৩৫১৬৯.০৭৭২,২৬৬৫৮.১০৬৩,৬৯৮৬৫.৮০৬৬,০৭৩৬৬.৪৬৬৫,০৭৭৬৬.৪১৬৫,২৩২৬৬.২১৪৮,১৪৬৮৯.৯৪
জর্জীয়২৩,৫৩৮২৬.৯৪২৭,৫২৫২৫.৯৪২৬,৫৮৪২৭.৪৬২৮,১২৫২৮.২৯২৮,১৮৭২৮.৭৭২৮,৫৪৪২৮.৯৭৩,৯৬৬৭.৪১
রুশ১৫৭০.১৮২,১১১১.৯৯২,৩৮০২.৪৬১,৫৭৪১.৫৮২,০৪৬২.০৯২,১২৮২.১৬৬১০১.১৪
আর্মেনীয়১,৩৭৪১.৫৭১,৫৩৭১.৪৫১,৫৫৫১.৬১১,২৫৪১.২৬৯৫৩০.৯৭৯৮৪১.০০৩৭৮০.৭১
ইহুদি১,৭৩৯১.৯৯১,৯৭৯১.৮৬১,৭২৩১.৭৮১,৪৮৫১.৪৯৬৫৪০.৯৭৩৯৭০.৪০০.০০
অন্যান্য২১৬০.২৫৭০০০.৬৬৮৬৭০.৯০৯১০০.৯২১,০৭১১.০৯১,২৪২১.২৬৪৩১০.৪১
মোট৮৭,৩৭৫১০০.০০১০৬,১১৮১০০.০০৯৬,৮০৭১০০.০০৯৯,৪২১১০০.০০৯৭,৯৮৮১০০.০০৯৮,৫২৭১০০.০০৫৩,৫৩২১০০.০০
সূত্র:[২১৯][২২০][২২১]

অর্থনীতি

জুয়ারিকাউ-তশখিনভালি পাইপলাইন, যা রাশিয়া থেকে দক্ষিণ ওশেটিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে। ২০০৯ সালে এটি চালু হয়।

দক্ষিণ ওশেটিয়ার অর্থনীতি প্রাথমিকভাবে কৃষিনির্ভর; যদিও দক্ষিণ ওশেটিয়ার জমির ১০%–এরও কম চাষ করা হয়। খাদ্যশস্য, ফল ও লতাগুল্ম দেশটির প্রধান উত্পাদন। বনায়নগবাদি পশু শিল্পও অর্থনীতিতে বেশ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ওশেটিয়ার রাজধানী তশখিনভালির আশেপাশে বেশ কিছু শিল্প সুবিধাও বিদ্যমান আছে। ১৯৯০-এর দশকে যুদ্ধের পর দক্ষিণ ওশেটিয়া অর্থনৈতিকভাবে অনেক সংগ্রাম করে এটি সক্রিয় রাখে। ২০০২ সালে দক্ষিণ ওশেটিয়ার জিডিপি ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমান করা হয়েছে এবং ২০০৭ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে দক্ষিণ ওশেটিয়ার দারিদ্র্যের প্রান্তিকে ৩,০৬২ রুবেল প্রতিমাসে দাঁড়ায় বা রাশিয়ার গড় থেকে প্রায় ২৩.৫ শতাংশ কম ছিল, যখন দক্ষিণ ওসেটিয়দের আয় তুলনামূলকভাবে কম।[২২২]

জনসংখ্যার অধিকাংশই কৃষিকার্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। দক্ষিণ ওসেটীয় কর্তৃপক্ষ ময়দার স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করে ময়দা আমদানির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে আর্থিক উন্নতি করার পরিকল্পনা করেছিল। এই উদ্দেশ্যে গমের আবাদ করা এলাকা ২০০৮ সালে ১৩০ হেক্টর থেকে ১,৫০০ হেক্টরে, যা পূর্বেকার তুলনায় দশগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে গমের ফসল ২,৫০০ টন শস্য হবে বলে আশা করা হয়েছিল। দক্ষিণ ওশেটিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ও ২০০৮ সালে কিছু ট্রাক্টর আমদানি করেছিল এবং ২০০৯ সালে আরও খামার যন্ত্রপাতি সরবরাহের আশা ব্যক্ত করেছিল।[২২২]

২০০৮ সালের রাশিয়ান-জর্জীয় যুদ্ধের আগে দক্ষিণ ওশেটিয়ার শিল্পব্যবস্থা ২২টি ছোট কারখানার সমন্বয়ে গঠিত ছিল, যাদের মোট উৎপাদন ছিল ৬১.৬ মিলিয়ন রুবল (২০০৬ সালে)। ২০০৭ সালে মাত্র ৭টি কারখানা চালু ছিল। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে এটি রিপোর্ট করা হয়েছিল যে, বেশিরভাগ উত্পাদন সুবিধাগুলি বেকার পড়ে রয়েছে এবং মেরামতের প্রয়োজন ছিল। এমনকি সফল কারখানাগুলোতেও শ্রমিকের ঘাটতি ছিল। এটি ঋণগ্রস্ততা ও কার্যকরী মূলধনের অভাবে হয়েছিল।[২২২] বৃহত্তম স্থানীয় উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি হল ইমাপ্রোভোড কারখানা, যার মোট ১৩০ জন কর্মচারী রয়েছে।[২২২] উপরন্তু ২০০৮ সালে সংঘটিত যুদ্ধের পর জর্জিয়া আখালগোরি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দেয় এবং এটি উক্ত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। [২২৩]

২০২১ সালের শেষে কর্মরত লোকের সংখ্যা ২০,৭৩৪ জন নির্ধারণ করা হয়েছিল, যেখন ২,৪৪৯ জন বেকার হিসাবে নিবন্ধিত হয়। বয়সের হিসেবে মোট কর্মজীবী জনসংখ্যা ছিল ৩৪,৩০৮ (পুরুষ ১৮-৬৫; মহিলা: ১৮–৬০)। [২২৪] কার্যত উল্লেখযোগ্য একমাত্র অর্থনৈতিক সম্পদ, যা দক্ষিণ ওশেটিয়ার দখলে রয়েছে সেটি হলো রোকি টানেলের নিয়ন্ত্রণ, যা রাশিয়া এবং জর্জিয়াকে সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এই ট্যানেল থেকে দক্ষিণ ওশেটিয়া সরকার নিজের বাজেটের একটি বড় অংশ মালবাহী ট্রাফিকের উপর শুল্ক আরোপ করে পেয়ে থাকে বলে জানা গিয়েছে। [২২৫] [২২৬] [২২৮]

২০০৮ সালের যুদ্ধের পর থেকে দক্ষিণ ওশেটিয়া এবং এর অর্থনীতি সমালোচনামূলকভাবে রুশ অর্থনৈতিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল[২২৯] এবং যুদ্ধের এক বছর পর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এডুরার্ড কোকোইটি পুনর্গঠন কাজের জন্য রুশ সহায়তার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন।[২৩০] রিপোর্ট অনুযায়ী, রুশ অনুদান ২০১০ সালের মধ্যে দক্ষিণ ওশেটিয়ার বাজেটের প্রায় ৯৯% ছিল[২৩১] এবং ২০২১ সালের মধ্যে এটি ৮৩%–এ হ্রাস পেয়েছে। [২৩২] রাশিয়া থেকে দক্ষিণ ওশেটিয়া পর্যন্ত চলমান একটি নতুন ব্যাকআপ পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন এ অঞ্চলে নীরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে চালু করা হয়েছিল। এটি নির্মাণে ১.৩ বিলিয়ন রুবেল ($১৭ মিলিয়ন) খরচ হয় এবং এটি দক্ষিণ ওশেটিয়ায় রুশ বিনিয়োগ কর্মসূচির কাঠামোর আওতায় নির্মিত হয়েছিল।[২৩৩][২৩৪]

২০১৬ সালে আর্মেনিয়া, জর্জিয়া ও দক্ষিণ ওশেটিয়ার মধ্যে একটি ট্রানজিট রুট খোলার জন্য জর্জিয়াকে রাজি করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু জর্জিয়া সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।[২৩৫]

২০২২২০২৫ সময়ের জন্য দক্ষিণ ওশেটিয়ার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি রাশিয়া দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হল, দক্ষিণ ওশেটিয়ার জন্য ২০২৫ সালের উত্তর ককেশাস ফেডারেল ডিস্ট্রিক্টের আর্থ-সামাজিক সূচকগুলিতে পৌঁছানো।[২৩৬]

সংস্কৃতি

ওশেটিয়া বৃহত্তর ককেশাস পর্বতমালার উভয় পাশে অবস্থিত একটি দুর্গম অঞ্চল। ওসেটীয় লোকসঙ্গীত (ওসেটীয় : Ирыстоны музыкæ ) ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে ও ২০ শতাব্দীর প্রথম দিকে সংগ্রহ এবং রেকর্ড করা শুরু হয় এবং ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পর ওশেটিয়াতে পেশাদার সঙ্গীতের আবির্ভাব ঘটে এবং পরবর্তী দশকগুলিত বেশ কয়েকটি সিম্ফনি, ব্যালে, অপেরা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়।

লোকসঙ্গীত

ওসেটীয় লোকসঙ্গীত ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে সংগ্রহ করা শুরু হয়। বরিস গালেভ সংগ্রহ এবং তথ্যচিত্রে যথেষ্ট অবদান রাখেন। ওসেটীয় লোকসঙ্গীত কয়েকটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে:

  • ঐতিহাসিক গান
  • বিপ্লবের গান
  • বীরত্বপূর্ণ গান
  • শ্রমিকের গান
  • বিয়ের গান
  • আসরের গান
  • হাস্যরসাত্মক গান
  • নাচের গান
  • ভালবাসার গান
  • লিরিক্যাল গান

উল্লেখযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ ওশেটীয় সঙ্গীতজ্ঞ হলেন, ভ্যালেরি গের্গিয়েভ, ভেরোনিকা দুদারোভা, জ্লাতা চোচিয়েভা ও তুগান সোখিয়েভ।[২৩৭][২৩৮][২৩৯]

শিক্ষা

দেশটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় হলো সাউথ ওসেশিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটি, যা তশখিনভালিতে অবস্থিত।[২৪০] ২০০৮ সালে রুশ জর্জীয় যুদ্ধের পর শিক্ষা কর্মকর্তারা দক্ষিণ ওশেটিয়ার থেকে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রাশিয়ান পোস্ট-সেকেন্ডারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।[২৪০]

সরকারি ছুটি

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

নোট

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ