শাখারভ পুরস্কার
শাখারভ পুরস্কার বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, ভিন্নমতাবলম্বী এবং সোভিয়েত হাইড্রোজেন বোমার জনক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব আন্দ্রে শাখারভের সম্মানার্থে প্রবর্তিত পুরস্কার। পুরস্কারটির পুরো নাম হলো মুক্তচিন্তায় শাখারভ পুরস্কার।
মুক্তচিন্তায় শাখারভ পুরস্কার | |
---|---|
অবস্থান | স্ত্রাসবুর |
দেশ | ফ্রান্স |
পুরস্কারদাতা | ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট |
পুরস্কার | €৫০,০০০[১] |
প্রথম পুরস্কৃত | ১৯৮৮ |
সর্বশেষ পুরস্কৃত | ২০১৫ |
বর্তমানে আধৃত | রউফ বাদাবি |
ওয়েবসাইট | Website |
প্রেক্ষাপট
মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে এবং মুক্তচিন্তাকে প্রস্ফুটিত করতে যিনি বা যে সকল প্রতিষ্ঠান জীবন-সংগ্রাম করছে তাদেরকে সম্মানিত করতে এ পুরস্কার দেয়া হয়। মানব অধিকার ও স্বাধীনতা বিষয়ে আজীবন সোচ্চার ছিলেন আন্দ্রে শাখারভ। তাই তার নামকে চিরভাস্বর করে রাখতে জীবিতকালেই ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউরোপীয় সংসদ বার্ষিক ভিত্তিতে শাখারভ পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণা দেয়।[২] পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর থেকে সাংবাৎসরিকভাবে মানবাধিকার ও মুক্তচিন্তার মৌলিক বিকাশে অবদানের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত ব্যক্তি কিংবা সংগঠনকে এ পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।[৩]
মনোনয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগ এবং উন্নয়ন বিভাগের সদস্যদের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে পুরস্কারের জন্য একাধিক ব্যক্তি বা সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়। প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তি বা সংস্থার নাম ঘোষণা করা হয়।[১] ২০১০ সাল পর্যন্ত পুরস্কারের মূল্যমান ৫০,০০০ ইউরো ধার্য করা হয়েছে।[১]
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানস্থল
শাখারভ পুরস্কার সচরাচর প্রতি বছর ১০ই ডিসেম্বর তারিখে নির্ধারিত ব্যক্তি বা সংস্থাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রান্সের স্ত্রাসবুরে অবস্থিত ইউরোপীয় সংসদের অভ্যন্তরে প্রদান করা হয়। ১৯৪৮ সালের এই তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয় যা বিশ্বের সর্বত্র মানবাধিকার দিবস হিসেবে প্রতিপালিত হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা
১৯৮৮ সালে যৌথভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত জননেতা নেলসন মান্ডেলা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিন্নমতাবলম্বী আনাতোলী মার্চেঙ্কো-কে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে শাখারভ পুরস্কারের সূচনা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে আরব বিশ্বের আরব বসন্ত নামে খ্যাত গণআন্দোলনে অংশগ্রহণকারী - আসমা মাহফুজ, আহমেদ আল-সেনুস্সি, রজন জাইতোনেহ, আলী ফারজাত, মোহামেদ বুয়াজিজি-কে প্রদান করা হয়। এছাড়াও, ১৯৯২ সালে আর্জেন্টিনার মাদার্স অব দ্য প্লাসা দে মাইয়ো সংস্থাকে শাখারভ পুরস্কারের ইতিহাসে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করা হয়।
বছর | গ্রহণকারী ব্যক্তি/সংস্থার নাম | জাতীয়তা | বিবরণ | তথ্যসূত্র |
---|---|---|---|---|
১৯৮৮ | নেলসন ম্যান্ডেলা | দক্ষিণ আফ্রিকা | জাতিগত বিরোধী কর্মী এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি | [৪] |
১৯৮৮ | আনাতোলী মার্চেঙ্কো (মরণোত্তর) | সোভিয়েত ইউনিয়ন | সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিন্নমতাবলম্বী, লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী | [৪] |
১৯৮৯ | আলেকজান্ডার ডুবচেক | চেকোস্লোভাকিয়া | স্লোভাক রাজনীতিবিদ | [৪] |
১৯৯০ | অং সান সু কী | মায়ানমার (সাবেক বার্মা) | বিরোধী দলীয় নেত্রী। সাবেক এনএলডি মহাসচিব | [৫] |
১৯৯১ | আদেম ডিমাকি | কসোভো | রাজনীতিবিদ ও দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক বন্দী | [৪] |
১৯৯২ | মাদার্স অব দ্য প্লাসা দে মাইয়ো | আর্জেন্টিনা | ডার্টি ওয়ার (গেররা সুসিয়া)-তে নিহত শিশুর মায়েদের জন্য আর্জেন্টিনার সংগঠন | [৫] |
১৯৯৩ | অসলোবোডেনজে | বসনিয়া এন্ড হার্জেগোভিনা | জনপ্রিয় সংবাদপত্র। সারায়েভোতে কর্মরত অবস্থায় যার ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। | [৫] |
১৯৯৪ | তসলিমা নাসরিন | বাংলাদেশ | সাবেক ডাক্তার, নারীবাদী লেখক | [৫] |
১৯৯৫ | লেলা জানা | তুরস্ক | কুর্দী বংশোদ্ভূত নারী রাজনীতিবিদ। ১০ বছর নিজ ভাষায় তুরস্কের সংসদে বক্তৃতা রেখেছিলেন। | [৪] |
১৯৯৬ | ওয়েই জিনশেং | চীন গণপ্রজাতন্ত্র | চীনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী | [৫] |
১৯৯৭ | সলিমা ঘেজালি | আলজেরিয়া | সাংবাদিক, লেখক, নারী আন্দোলনকারী, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ | [৫] |
১৯৯৮ | ইব্রাহীম রুগোভা | কসোভো | আলবেনিয়ার রাজনীতিবিদ। কসোভোর ১ম রাষ্ট্রপতি | [৪] |
১৯৯৯ | জানানা গুসমাও | পূর্ব তিমুর | সাবেক বিচ্ছিন্নতাবাদী, যিনি পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি ছিলেন | [৬] |
২০০০ | বাস্তা ইয়া | স্পেন | সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থানরত বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তিকে একত্রিত করায় ব্যস্ত সংগঠন | [৭] |
২০০১ | নুরিত পেলেড-এলহানান | ইসরায়েল | শান্তি কর্মী | [৪] |
২০০১ | ইজ্জাত ঘাজ্জাউই | প্যালেস্টাইন | লেখক। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অপরাধে ইসরাইলী কর্তৃপক্ষের হাতে অনেকবার গ্রেফতার হন। | [৪] |
২০০১ | ডম জাকারিয়াজ ক্যামুইনহো | অ্যাঙ্গোলা | আর্চবিশপ এবং শান্তি কর্মী | [৪] |
২০০২ | ওসোয়াল্ডো পায়া | কিউবা | রাজনৈতিক কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বী | [৮] |
২০০৩ | কফি আনান (এবং জাতিসংঘ) | — | নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং জাতিসংঘের ৭ম জাতিসংঘের মহাসচিব | [৪] |
২০০৪ | বেলারুশিয়ান এসোসিয়েশন অব জার্নালিস্টস্ | বেলারুশ | বে-সরকারী সংগঠন হিসেবে কথা বলার স্বাধীনতা এবং তথ্য আদান-প্রদান ও পেশাদারী সাংবাদিকতার মানদণ্ডে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান | [৯] |
২০০৫ | লেডিস ইন হুয়াইট | কিউবা | বিরোধী আন্দোলন, কারাগারে আটক ভিন্নমতাবলম্বীদের সংগঠন | [১০] |
২০০৫ | রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডারস্ | — | ফ্রান্সভিত্তিক বে-সরকারী সংগঠন যারা প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতায় পরামর্শ প্রদান করে | [১০] |
২০০৫ | হাউয়া ইব্রাহীম | নাইজেরিয়া | মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী | [১০] |
২০০৬ | আলেকজান্ডার মিলিনকাইভিচ | বেলারুশ | ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস অব বেলারুশ কর্তৃক রাজনীতিবিদ হিসেবে ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ | [১১] |
২০০৭ | সালিহ মাহমৌদ উসমান | সুদান | মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী | [৫] |
২০০৮ | হু জিয়া | গণপ্রজাতন্ত্রী চীন | মানবাধিকার কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বী | [১২] |
২০০৯ | মেমোরিয়াল (সোসাইটি) | রাশিয়া | আন্তর্জাতিক পৌর অধিকার এবং ঐতিহাসিক সমিতি | [১৩] |
২০১০ | গুইলার্মো ফারিনাস | কিউবা | ডাক্তার, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী | [১৪] |
২০১১ | আসমা মাহফৌজ, আহমেদ আল-সেনুস্সি, রজন জাইতোনেহ, আলী ফারজাত, মোহামেদ বোয়াজিজি (মরণোত্তর) | মিশর লিবিয়া সিরিয়া সিরিয়া তিউনিসিয়া | আরব বিশ্বের পাঁচ প্রতিনিধি, যারা মুক্তি এবং মানবাধিকারের বিষয়ে সমর্থনের জন্য আন্দোলন করেন | [১৫] |
২০১২ | জাফর পানাহি নাসরিন সতুদে | ইরান | ইরানি মানবাধিকার কর্মী। সোতুদেহ আইনজীবী ও পানাহি চলচ্চিত্র পরিচালক | [১৬][১৭] |
২০১৩ | মালালা ইউসুফজাই | পাকিস্তান | নারী অধিকার ও নারী শিক্ষা কর্মী | [১৮] |
২০১৪ | দ্যনিস মুকওয়েগে | কঙ্গো প্রজাতন্ত্র | গণধর্ষনের শিকার নারীকে গাইনোকোলজি চিকিৎসা প্রদান | [১৯] |
২০১৫ | রউফ বাবাদি | সৌদি আরব | সৌদি আরব লেখক ও কর্মী, সৌদি উদারপন্থীদের ফ্রি ওয়েবসাইট স্রষ্টা | [২০] |