আজারবাইজানি ভাষা

আজারবাইজানি বা আজেরি আলতায়ীয় ভাষাপরিবারের তুর্কীয় শাখার ওঘুজ উপশাখার একটি সদস্য ভাষা। মূলত আজারবাইজান ও উত্তর-পশ্চিম ইরানে প্রচলিত হলেও তুরস্ক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানেও ভাষাটির বক্তা রয়েছে। ভাষাটিকে উত্তর ও দক্ষিণ --এই দুইটি প্রধান উপভাষাতে ভাগ করা যায়। উত্তর আজারবাইজানি উপভাষাটি আজারবাইজানের জাতীয় ও সরকারি ভাষা। উত্তর আজারবাইজানি ভাষাটি জর্জিয়া এবং রাশিয়ার দাগেস্তানেও প্রচলিত। অন্যদিকে উত্তর-পশ্চিম ইরানে প্রচলিত উপভাষাটি দক্ষিণ আজারবাইজানি ভাষা নামে পরিচিত। ভাষাটি আজারবাইজানে লাতিন লিপিতে এবং ইরানে আরবি লিপিতে লেখা হয়।

আজারবাইজানি
Azərbaycan dili (লাতিন লিপি)
آذربایجان دیلی (পারসিক-আরবি লিপি)
উচ্চারণ[azærbajdʒan dili]
দেশোদ্ভব আজারবাইজান
 ইরান
 জর্জিয়া
 রাশিয়া
 কাজাখস্তান
 উজবেকিস্তান
 সিরিয়া
 ইরাক[১]
 তুরস্ক
 তুর্কমেনিস্তান
 ইউক্রেন
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
 যুক্তরাজ্য
 জার্মানি
 অস্ট্রিয়া
 কানাডা
জাতিআজারবাইজানি
মাতৃভাষী
২৫–৩৫ মিলিয়ন[২][৩][৪][৫][৬][৭] (২০০১–২০০৬ [৩০ মিলিয়ন])
তুর্কীয়
  • Oghuz
    • Western Oghuz
      • আজারবাইজানি
আজারবাইজানে উত্তর আজারবাইজানির জন্য লাতিন এবং সিরিলিক, ইরানে দক্ষিণ আজারবাইজানির জন্য পারসিক-আরবি
সরকারি অবস্থা
সরকারি ভাষা
 আজারবাইজান (উত্তর আজারবাইজানি)
 ইরাক (দক্ষিণ আজারবাইজানি) - একটি আঞ্চলিক ভাষা হিসাবে সাংবিধানিক অবস্থা (সংবিধানে তুর্কমেন হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে)
 রাশিয়া - দাগেস্তান এর সরকারি ভাষার একটি।
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-১az
আইএসও ৬৩৯-২aze
আইএসও ৬৩৯-৩aze – সমেত কোড
পৃথক কোডসমূহ:
azj – উত্তর আজারবাইজানি
azb – দক্ষিণ আজারবাইজানি
লিঙ্গুয়াস্ফেরা44-AAB-a এর অংশ
আজারবাইজানি ভাষাভাষীর অবস্থান

ওঘুজ ভাষাপরিবারের অন্যান্য ভাষা যেমন তুর্কি ভাষা এবং তুর্কমেন ভাষার সাথে আজারবাইজানি ভাষার পারস্পরিক বোধগম্যতা (mutual intelligibility) রয়েছে।

ব্যুৎপত্তি এবং পটভূমি

ঐতিহাসিকভাবে ভাষাটিকে স্থানীয়রা türk dili অথবা türkcə হিসেবে উল্লেখ করত [৮] যার অর্থ হয় "তুর্কি ভাষা"। আজারবাইজান এসএসআর প্রতিষ্ঠার পর, [৯] সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের আদেশে, আজারবাইজান এসএসআর-এর "সরকারি ভাষার নাম" "তুর্কি" থেকে "আজারবাইজানি" করা হয়। [৯] ভাষাটিকে সাধারণত ইরানি আজারবাইজানে তুর্কি বা তোর্কি নামে অভিহিত করা হয়। [১০]

ইতিহাস এবং বিবর্তন

ষোড়শ শতকে আজারবাইজানি ভাষায় ফুজুলিরচিত গার্ডেন অফ প্লেজারস।

আজেরবাইজানি ভাষার উদ্ভব হয় ওঘুজ তুর্কি ("পশ্চিম তুর্কি") থেকে [১১] যা মধ্যযুগীয় তুর্কি অভিবাসনের সময় পশ্চিম এশিয়া, ককেশাসে, পূর্ব ইউরোপে [১২] [১৩] এবং উত্তর ইরানে ছড়িয়ে পড়ে। [১৪]

ফারসি এবং আরবি এই ভাষাকে প্রভাবিত করেছিল, তবে আরবি শব্দগুলি মূলত সাহিত্যিক ফারসির মধ্য দিয়ে আজেরবাইজানি ভাষায় প্রবেশ করেছিল।[১৫]

তুর্কি ভাষাগুলোর মধ্যে উজবেক ভাষার পর আজারবাইজানি ভাষার উপর ফার্সি এবং অন্যান্য ইরানী ভাষাগুলি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে - প্রধানত ধ্বনিতত্ত্ব, শব্দতত্ত্ব এবং বাক্যতত্ত্বে।


তুর্কি ভাষা আজারবাইজানি ধীরে ধীরে ইরানী ভাষাগুলিকে প্রতিস্থাপন করেছে, যা বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম ইরানে এবং ককেশাসে ব্যবহৃত হত, বিশেষ করে উদি এবং পুরাতন আজেরি । ১৬ শতকের শুরুতে, ভাষাটি অঞ্চলের প্রভাবশালী ভাষা হয়ে ওঠে। এটি সাফাভিদ, আফশারিদ এবং কাজারদের দরবারে একটি কথ্য ভাষা ছিল।

আজারবাইজানি ভাষার ঐতিহাসিক বিকাশকে দুটি প্রধান যুগে ভাগ করা যায়: প্রাথমিক (আনুমানিক ১৪ থেকে ১৮ শতক) এবং আধুনিক (১৮ শতক থেকে বর্তমান)। আদি আজারবাইজানি এবং আধুনিক আজেরবাইজানি ভাষার অন্যতম পার্থক্য হল, আধুনিক আজেরবাইজানি ভাষায় অনেক বেশি সংখ্যক ফার্সি এবং আরবি শব্দ , বাক্যাংশ এবং বাগার্থ উপাদান ব্যবহৃত হয়। আজারবাইজানীয় প্রাথমিক লেখাগুলি ওগুজ এবং কিপচাক উপাদানগুলির মধ্যে অনেক দিক থেকে ভাষাগত আদান-প্রদান প্রদর্শন করে (যেমন- সর্বনাম, বিভক্তি, ক্রিয়াবিভক্তি ইত্যাদি।) যেহেতু আজারবাইজানি ধীরে ধীরে নিছক মহাকাব্য এবং গীতিকবিতার ভাষা থেকে সাংবাদিকতা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভাষাতে পরিণত হয়েছে, এর সাহিত্যিক সংস্করণটি কমবেশি একীভূত এবং সরলীকৃত হয়েছে। এর বহু প্রাচীন তুর্কি উপাদান, ইরানি এবং অটোমান এবং অন্যান্য শব্দ, অভিব্যক্তি এবং নিয়ম যা আজারবাইজানীয় জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তা আজেরবাইজানি ভাষা হতে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

১৮০৪-১৮১৩ এবং ১৮২৬-১৮২৮ সালের রুশো-ইরানি যুদ্ধের মাধ্যমে ককেশাসে ইরানের অঞ্চলগুলির রাশিয়ার দখল আজেরবাইজানি ভাষা সম্প্রদায়কে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত করে। পরবর্তীতে, জারবাদী প্রশাসন এই অঞ্চলে ফারসি ভাষার প্রভাব রূখতে, যা তখন অভিজাত আজেরবাইজেনীয়রা ব্যবহার করত, পূর্ব ট্রান্সককেশিয়ায় আজারবাইজানীয় ভাষার বিস্তারকে উৎসাহিত করে। [১৬] [১৭]

১৯২০ হতে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত, এখনকার আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রে জাতীয় ভাষার একীভূতকরণের জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ চালু হয়, যা হাসান বে জারদাবি এবং মাম্মাদ আগা শাহতাখতিনস্কির মতো পণ্ডিতের হাত ধরে জনপ্রিয়তা লাভ করে।বিভিন্ন মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাদের সকলের প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রাথমিকভাবে অর্ধ-শিক্ষিত জনসাধারণের পক্ষে সাহিত্য পড়া এবং বোঝা সহজ করে তোলা। তারা সকলেই কথোপকথন এবং সাহিতত্যে ফার্সি, আরবি এবং ইউরোপীয় উপাদানগুলির অত্যধিক ব্যবহারের সমালোচনা করেছিলেন এবং একটি সহজ এবং জনপ্রিয় শৈলীর জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।


সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে পরপর দুটি লিপি পরিবর্তনের মাধ্যমে এর বিকাশকে যথেষ্ট পরিমাণে পিছিয়ে দেয় [১৮] – প্রথমে ফার্সি থেকে ল্যাটিন এবং তারপরে সিরিলিক লিপিতে। তবে ইরানী আজারবাইজানিরা বরাবরের মতোই ফার্সি লিপি ব্যবহার করতে থাকে। আজারবাইজান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে আজারবাইজানের ব্যাপক ব্যবহার সত্ত্বেও, কেবল ১৯৫৬[১৯] সালে আজারবাইজানের সরকারী ভাষা হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র একটি পরিবর্তিত ল্যাটিন লিপি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ