লিওনেল মেসি

আর্জেন্টিনীয় ফুটবলার
(জানুন কীভাবে ও কখন এই টেমপ্লেট বার্তাটি সরাবেন)

লিওনেল আন্দ্রেস “লিও” মেসি (স্পেনীয় উচ্চারণ: [ljoˈnel anˈdɾes ˈmesi] (); জন্ম: (২৪ জুন ১৯৮৭) একজন আর্জেন্টাইন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় যিনি মেজর লিগ সকার ক্লাব ইন্টার মায়ামি এবং আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে একজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। তিনি বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৫ই আগস্ট, ২০২১ তারিখে বার্সেলোনা ঘোষণা করে যে লিওনেল মেসি ক্লাবের সাথে চুক্তি নবায়ন করবেন না। ক্লাবটি মেসির চলে যাওয়ার কারণ হিসাবে স্প্যানিশ লিগার নিয়মকানুন দ্বারা সৃষ্ট আর্থিক এবং কাঠামোগত বাধার কথা উল্লেখ করেছে।[৪] মেসি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত।

লিওনেল মেসি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামলিওনেল আন্দ্রেস মেসি [১]
জন্ম (1987-06-24) ২৪ জুন ১৯৮৭ (বয়স ৩৬)[২]
জন্ম স্থানরোসারিও,আর্জেন্টিনা[২]
উচ্চতা১.৭০ মিটার (৫ ফুট ৭ ইঞ্চি)[৩]
মাঠে অবস্থানআক্রমণভাগের খেলোয়াড়
ক্লাবের তথ্য
বর্তমান দল
ইন্টার মায়ামি
জার্সি নম্বর১০
যুব পর্যায়
১৯৯২–১৯৯৫গ্রান্দোলি
১৯৯৫–২০০০নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজ
২০০০–২০০৩বার্সেলোনা
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছরদলম্যাচ(গোল)
২০০৩–২০০৪বার্সেলোনা সি১০(৫)
২০০৪–২০০৫বার্সেলোনা বি২২(৬)
২০০৪–২০২১বার্সেলোনা৭৭৮(৬৭২)
২০২১–২০২৩প্যারিস সেন্ট জার্মেই৭৫(৩২)
২০২৩–ইন্টার মায়ামি১৭*(১৪*)
জাতীয় দল
২০০৪–২০০৫আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০১৮(১৪)
২০০৭–২০০৮আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২৩(২)
২০০৫–আর্জেন্টিনা১৭৮(১০৬)
অর্জন ও সম্মাননা
ফুটবল (পুরুষ)
 আর্জেন্টিনা-এর প্রতিনিধিত্বকারী
ফিফা বিশ্বকাপ
বিজয়ী২০২২ কাতার
রানার-আপ২০১৪ ব্রাজিল
কোপা আমেরিকা
বিজয়ী২০২১ ব্রাজিল
রানার-আপ২০০৭ ভেনেজুয়েলা
রানার-আপ২০১৫ চিলি
রানার-আপ২০১৬ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
তৃতীয় স্থান২০১৯ ব্রাজিল
কনমেবল–উয়েফা কাপ অফ চ্যাম্পিয়ন্স
বিজয়ী২০২২ ইংল্যান্ড
অলিম্পিক
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান২০০৮ বেইজিং
ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ
বিজয়ী২০০৫ নেদারল্যান্ডস
দক্ষিণ আমেরিকা অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিয়নশিপ
তৃতীয় স্থান২০০৫ কলম্বিয়া

স্বাক্ষর
লিওনেল মেসির স্বাক্ষর
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে এবং ১২:১২, ১৮ মার্চ ২০২৪ (ইউটিসি) তারিখ অনুযায়ী সকল তথ্য সঠিক।
‡ জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা ১২:১২, ১৮ মার্চ ২০২৪ (ইউটিসি) তারিখ অনুযায়ী সঠিক।

লিওনেল মেসি টানা চারবারসহ মোট আটবার ব্যালন ডি'অর জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, যা ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পাশাপাশি তিনি সর্বোচ্চ ছয়বার ইউরোপীয় সোনালী জুতো জয়েরও কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তাঁর পেশাদার ফুটবল জীবনের পুরোটাই কেটেছে বার্সেলোনায়। যেখানে তিনি ১০টি লা লিগা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ৬টি কোপা দেল রেসহ মোট ৩৩টি শিরোপা জয় করেছেন, যা বার্সেলোনার ইতিহাসে কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ। এছাড়াও একজন অসাধারণ গোলদাতা হিসেবে মেসির দখলে রয়েছে লা লিগায় সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল (৪৪০), লা লিগা ও ইউরোপের যেকোনো লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৫০), ইউরোপে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৭৩), এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোল (৯১), এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল (২৬) এবং লা লিগা (৩৪) ও চ্যাম্পিয়নস লিগে (৮) সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকের কৃতিত্ব। পাশাপাশি মেসি একজন সৃষ্টিশীল প্লেমেকার হিসেবেও পরিচিত। তিনি লা লিগা (১৮৩) এবং কোপা আমেরিকার (১২) ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলে সহায়তাকারীর কৃতিত্বেরও মালিক। জাতীয় দল এবং ক্লাবের হয়ে তিনি ৮০০ এর অধিক পেশাদার গোল করেছেন।

মধ্য আর্জেন্টিনায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মেসি ছোট বেলায় গ্রোথ হরমোন সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হন। সেই সময় আর্জেন্টিনার কোন ক্লাবের পক্ষে তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু ক্লাব বার্সেলোনা তাঁর চিকিৎসার খরচ বহনের দায়িত্ব নেয়ায় ১৩ বছর বয়সে তিনি তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং স্পেনে পাড়ি জমান। বার্সেলোনার যুব প্রকল্পে তিনি নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেখাতে শুরু করেন এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার মূল দলে তাঁর অভিষেক হয়। পেশাদার ফুটবল জীবনের শুরুতে ইনজুরি-প্রবণ হলেও, ২০০৭ সাল নাগাদ তিনি নিজেকে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেন। তিনি ২০০৭ সালের ব্যালন ডি'অর পুরস্কারে তৃতীয় ও ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পরবর্তী বছর তিনি উভয় পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন এবং এর পরের বছর তিনি প্রথমবারের মত উভয় পুরস্কার জয় করেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে তিনি বার্সেলোনার মূল দলের একজন নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন। সে মৌসুমেই তিনি বার্সেলোনাকে প্রথমবারের মত এবং প্রথম স্পেনীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ে সাহায্য করেন।

মেসির সেরা মৌসুম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে তাঁর সেরা মৌসুম ছিল ২০১১-১২। সেই মৌসুমে তিনি লা লিগা এবং ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর প্রতিভার আরেকটি ঝলক দেখা যায় ২০১৪-১৫ মৌসুেম, যখন তিনি লা লিগা ও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং বার্সেলোনাকে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় ট্রেবল জয়ে সাহায্য করেন। ২০১৮ সালের আগস্টে মেসি বার্সেলোনার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মেসি আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০০৫ ফিফা ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাতে সাহায্য করেন যে প্রতিযোগিতায় তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার হয়ে ফুটবলে স্বর্ণপদক জয় করেন। ২০০৫ সালের অগাস্টে তার আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়। ( ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ) এ গোল করার মধ্য দিয়ে তিনি সর্বকনিষ্ঠ আর্জেন্টাইন হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২০০৭ কোপা আমেরিকায় তিনি সেরা যুব খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেন। ওই আসরে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। ২০১১ সালের আগস্টে তিনি আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধিনায়ক হিসেবে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে টানা তিনটি প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলেছেন: ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০১৫ কোপা আমেরিকা এবং ২০১৬ কোপা আমেরিকা। তিনি ২০১৪ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল পুরস্কার জয় করেন। ২০১৬ সালে মেসি জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন, তবে কয়েক মাস পরেই তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত বদলে পুনরায় জাতীয় দলে ফিরে আসেন এবং ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলায় তিন গোল করে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ২০১৯ কোপা আমেরিকায় তিনি দলকে নেতৃত্ব দেন। ২০২১ কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা তার নেতৃত্বে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০২২ সালে তিনি ২০২০ ইউরো জয়ী ইতালির বিরুদ্ধে ফাইনালিসিমা এবং ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা জেতান।২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে মেসি গোল্ডেন বল জেতেন। তিনি ২০২২ বিশ্বকাপে ৬ টি গোল করেন। এখনকার সময়ে মেসিকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বলা হয়। ২০২৩ সালে ক্লাব ও জাতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাকে ফিফা বর্ষসেরা এর পুরস্কারে পুরষ্কৃত করা হয়।মেসি তার খেলোয়াড় জীবনে সব কিছুই অর্জন করেছে যা একজন সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন।

প্রারম্ভিক জীবন

মেসি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন একজন খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী।[৫][৬][৭][৮] তার পৈতৃক পরিবারের আদি নিবাস ছিল ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন অ্যাঞ্জেলো মেসি ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন।[৯][১০] মেসির বড় দুই ভাই এবং এক ছোট বোন রয়েছে। বড় দুই ভাইয়ের নাম রদ্রিগো ও মাতিয়াস এবং ছোট বোনের নাম মারিয়া সল।[১১] পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন, যার কোচ ছিলেন তার বাবা হোর্হে।[১২] ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন।[১২] তিনি একটি স্থানীয় যুব পরাশক্তির অংশ হয়ে পড়েন, যারা পরবর্তী চার বছরে একটি মাত্র খেলায় পরাজিত হয়েছিল এবং স্থানীয়ভাবে “দ্য মেশিন অফ ‘৮৭” (The machine of '87) নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তাদেরকে এই নামে অভিহিত করার কারণ তাদের জন্ম সাল ছিল ১৯৮৭।[১৩]

১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের (growth hormone) সমস্যা ধরা পড়ে।[১৪] স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখালেও সেসময় তারা মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতিমাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার।[৮] বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন।[১৫][১৬] বার্সেলোনা মেসির চিকিত্‍সার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সেখানে মেসিকে বার্সেলোনার যুব একাডেমি লা মাসিয়া'র সভ্য করে নেয়া হয়।[১২][১৫]

২০০৮ সাল থেকে মেসি আন্তনেলা রোকুজ্জোর সাথে বসবাস শুরু করেন। তাদের দুটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়, ২রা নভেম্বর ২০১২ তারিখে থিয়াগোর আর ১১ই সেপ্টেম্বর ২০১৫ তে জন্ম নেয় মাতেও। ২০১৭ সালের ১লা জুলাই মহা ধুমধামে তাদের বিবাহ হয়।

ক্লাব কর্মজীবন

বার্সেলোনা

মেসি ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার যুব একাডেমির ইনফান্তিল বি, কাদেতে বি এবং কাদেতে এ দলে খেলেছেন। কাদেতে এ দলে খেলার সময় তিনি ৩০ খেলায় ৩৭ গোল করেন। ২০০৩ সালে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে ক্লাব থেকে প্রায় ছেড়েই দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যুব দলের প্রশিক্ষণকর্মীদের জোরাজুরিতে ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিষদ তাকে দলে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় (সেসময় সেস্‌ ফ্যাব্রিগাসকে ছেড়ে দেওয়া হয়)।[১৭] ২০০৩–০৪ মৌসুমে মেসি পাঁচটি আলাদা দলে খেলেন, যা একটি রেকর্ড।[১৮] তিনি হুভেনিল বি দলে খেলে ১টি গোল করেন এবং হুভেনিল এ দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন। সেখানে তিনি ১৪ খেলায় ২১টি গোল করেন। ২০০৩ সালের ২৯ নভেম্বর, বার্সেলোনা সি (তের্সেরা দিভিসিওন) দলে এবং ২০০৪ সালের ৬ মার্চ, বার্সেলোনা বি (সেহুন্দা দিভিসিওন) দলে তার অভিষেক হয়। ঐ মৌসুমে তিনি উভয় দলের হয়েই খেলেন এবং সি দলের হয়ে তার গোল সংখ্যা ছিল ১০ খেলায় ৫ এবং বি দলের হয়ে ৫ খেলায় শূন্য।[১৯][২০][২১][২২] এই দুই দলে অভিষেকের পূর্বে মেসির মূল দলে অভিষেক হয়েছিল ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর, পোর্তোর বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে (১৬ বছর এবং ১৪৫ দিন বয়সে)।[২৩][২৪]

২০০৪ সালের ১৬ অক্টোবর, এস্পানিওলের বিপক্ষে বার্সেলোনার তৃতীয় কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে মেসির লা লিগায় অভিষেক হয় (১৭ বছর এবং ১১৪ দিন বয়সে)। অবশ্য, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে, বোয়ান কিরকিচ এই স্থান দখল করেন। ২০০৫ সালের ১ মে, আলবাসেতে বালোম্পাইয়ের বিপক্ষে বার্সেলোনার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় গোল করার রেকর্ড গড়েন মেসি (১৭ বছর ১০ মাস এবং ৭ দিন বয়সে)।[২৫] তার এই রেকর্ডও বোয়ান কিরকিচ ভেঙে ফেলেন ২০০৭ সালে। বোয়ান ঐ গোলটি মেসির পাস থেকেই করেছিলেন।[২৬] মেসি তার প্রাক্তন কোচ ফ্রাংক রাইকার্ড সম্পর্কে বলেন: ‘‘আমি কখনও ভুলবনা যে তিনি আমার ক্যারিয়ার শুরু করিয়েছিলেন, মাত্র ১৬ বা ১৭ বছর বয়সে আমার প্রতি তার আস্থা ছিল।’’[২৭] ঐ মৌসুমে মেসি বার্সেলোনা বি দলের হয়েও খেলেন এবং ১৭ ম্যাচে ৬ গোল করেন।

২০০৫–০৬ মৌসুম

১৬ সেপ্টেম্বর, তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মত বার্সেলোনা মেসির সাথে তাদের চুক্তি নবায়ন করে। এসময় মূল দলের খেলোয়াড় হিসেবে মেসির পারিশ্রমিক বাড়ানো হয় এবং চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত করা হয়। ২০০৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, মেসিকে স্পেনের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়,[২৮] এবং তিনি লা লিগায় খেলার সুযোগ পেয়ে যান। ২৭ সেপ্টেম্বর, মেসি ঘরের মাঠে ইতালীয় ক্লাব উদিনেসের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে তার প্রথম খেলায় মাঠে নামেন।[২৩] মেসি যখন মাঠে নামেন তখন ক্যাম্প ন্যু এর দর্শকগন তাকে দাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান।

মেসি লা লিগায় ১৭ খেলায় ৬ গোল এবং চ্যাম্পিয়নস লিগে ৬ খেলায় ১ গোল করেন। ২০০৬ সালের ৭ মার্চ, চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় লেগের খেলায় মেসির ডান উরুর পেশি ছিঁড়ে যায়। ফলে সেসমই তাকে মৌসুমের ইতি টানতে হয়।[২৯] ঐ মৌসুমে রাইকার্ডের অধীনে বার্সেলোনা স্পেন এবং ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মৌসুম শেষ করে।[৩০][৩১]

২০০৬–০৭ মৌসুম

২০০৭ সালে রেঞ্জার্সের বিপক্ষে খেলায় মেসি।

২০০৬–০৭ মৌসুমে মেসি নিজেকে দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে স্থাপন করেন এবং ২৬ খেলায় ১৪ গোল করেন।[৩২] ১২ নভেম্বর, সারাগোসার বিপক্ষে খেলার সময় মেসির পায়ের হাড় ভেঙে যায়, ফলে তিনি তিন মাসের জন্য মাঠের বাহিরে চলে যান।[৩৩][৩৪] ১০ মার্চ, এল ক্ল্যাসিকোতে মেসি হ্যাট্রিক করেন, খেলাটি ৩–৩ গোল ড্র হয়। বার্সেলোনা খেলায় তিনবার পিছিয়ে পরলেও, প্রত্যেকবারই মেসি দলকে সমতায় ফেরান, যার মধ্যে একটি গোল তিনি দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে করেছিলেন।[৩৫] এর আগে এল ক্ল্যাসিকোতে সর্বশেষ হ্যাটট্রিক করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ইভান জামোরানো, ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে।[৩৬] মেসিই এল ক্ল্যাসিকোতে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার। মৌসুমের শেষের দিকে মেসি আগের চেয়ে আরও বেশি গোল করতে শুরু করেন। লিগে তার করা ১৪টি গোলের ১১টিই এসেছিল শেষ ১৩টি খেলা থেকে।[৩৭]

হেটাফের বিপক্ষে ছয় জনকে কাটিয়ে মেসির গোল করার আগের মুহূর্ত।

এই মৌসুমে মেসি কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার বিখ্যাত কিছু গোলের পুনরাবৃত্তি ঘটান[৩৮] এবং নিজেকে ‘‘নতুন ম্যারাডোনা’’ রূপে স্থাপন করেন। ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল, কোপা দেল রে‘র সেমিফাইনালে খেতাফের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন। যার মধ্যে একটি গোল ছিল ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা দ্বিতীয় গোলটির মত, যে গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে খ্যাত।[৩৯] বিশ্বের ক্রীড়া মাধ্যম মেসিকে ম্যারাডোনার সাথে তুলনা করতে শুরু করে এবং স্পেনীয় সংবাদ মাধ্যম তাকে ‘‘মেসিডোনা’’ উপাধিতে ভূষিত করে।[৪০] ম্যারাডোনার মত মেসিও প্রায় ৬২ মিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে গোলরক্ষকসহ ছয় জনকে কাটিয়ে একই স্থান থেকে গোল করেছিলেন এবং কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন, যেমনটি করেছিলেন ম্যারাডোনা, ২১ বছর আগে মেক্সিকো বিশ্বকাপে।[৩৮] খেলা শেষে একটি সংবাদ সম্মেলনে মেসির সতীর্থ জেকো বলেছিলেন, ‘‘এটি আমার জীবনে দেখা সেরা গোল।’’[৪১] ইস্পানিওলের বিপক্ষেও মেসি একটি গোল করেছিলেন, যা ছিল ম্যারাডোনার ‘‘হ্যান্ড অব গড’’ খ্যাত গোলটির মত।[৪২] যেটি ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার করা প্রথম গোল ছিল।

বার্সেলোনার তত্‍কালীন ম্যানেজার ফ্রাংক রাইকার্ড মেসিকে মাঠের বাম পার্শ্ব হতে ডান উইঙ্গে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন, যেন তিনি সহজে মাঠের মাঝখানে প্রবেশ করতে পারেন এবং বাম পা দিয়ে শট বা ক্রস করতে পারেন। অবশ্য, প্রাথমিকভাবে এটি মেসির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিল।[৪৩]

২০০৭–০৮ মৌসুম

২৭ ফেব্রুয়ারি, মেসি ভালেনসিয়ার বিপক্ষে বার্সেলোনার হয়ে তার ১০০তম অফিসিয়াল খেলায় মাঠে নামেন।[৪৪]

স্পেনীয় সংবাদপত্র মার্কা তাদের অনলাইন সংস্করনে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের জন্য ভোটের আয়োজন করে, যেখানে মেসি ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম হন।[৪৫] বার্সেলোনা ভিত্তিক সংবাদপত্র এল মুন্দো দেপোর্তিভো এবং দেইলি স্পোর্ত সে বছর ব্যালোন ডি অর মেসিকে দেওয়ার জন্য দাবি করে।[৪৬] ফ্রাঞ্চেসকো তোত্তি’র মত ফুটবল ব্যক্তিত্ব মেসিকে বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার হিসেবে ব্যক্ত করেন।[৪৭] ২০০৭ সালের ব্যালন ডি’অর পুরস্কারে মেসি, কাকা এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পেছনে থেকে তৃতীয় হন, এবং ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারে তিনি কাকা’র পেছনে থেকে দ্বিতীয় হন।

৪ মার্চ সেল্টিকের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলায়, মেসি বাম পায়ের মাংসপেশির ইনজুরিতে আক্রান্ত হন এবং ছয় সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান। তিনটি মৌসুমে চতুর্থবারের মত মেসি একই ধরনের ইনজুরিতে আক্রান্ত হন।[৪৮] এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসি ৬ গোল করেন এবং ১টি গোলে সহায়তা করেন, যদিও বার্সেলোনা সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে বিদায় নেয়। মৌসুমে মেসি বার্সেলোনার হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ১৬ গোল করেন এবং ১৩টি গোলে সহায়তা করেন।

২০০৮–০৯ মৌসুম

লা লিগায় হুয়েলভার বিপক্ষে খেলায় কর্নার কিক নিচ্ছেন মেসি।

দল থেকে রোনালদিনহোর প্রস্থানের পর মেসি তার ১০ নম্বর জার্সি পেয়ে যান।[৪৯] এই মৌসুমে মেসি ২০০৮ ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার-এর পুরস্কারে ৬৭৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে কোপা দেল রে’র একটি খেলায় মেসি ২০০৯ সালে তার প্রথম হ্যাট্রিক করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৩–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[৫০] ২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, মেসি রেসিং স্যান্তেনদার এর বিপক্ষে খেলার দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে জোড়া গোল করেন। ঐ খেলায় ১–০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও মেসির কর্তৃত্বে বার্সেলোনা ১–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে। খেলার দ্বিতীয় গোলটি ছিল বার্সেলোনার ৫,০০০ তম লিগ গোল।[৫১] ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল, বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলায় মেসি জোড়া গোল করেন। যার মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে তার ৮ গোলের ব্যক্তিগত নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়।[৫২]

২০০৯ সালের ২ মে, স্যান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন এবং বার্সেলোনা ২–৬ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[৫৩] ১৩ মে, মেসি বার্সেলোনার হয়ে প্রথম কোপা দেল রে শিরোপা জিতেন। ফাইনাল খেলায় অ্যাথলেটিক বিলবাওর বিপক্ষে তিনি ১টি গোল করেন ও ২টি গোলে সহায়তা করেন।[৫৪] মৌসুমে বার্সেলোনা লা লিগা শিরোপাও জিতে। ২৭ মে, চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে গোল করে তিনি দলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিততে সহায়তা করেন। এই গোলের মাধ্যমে মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসির গোল সংখ্যা দাড়ায় ৯। তিনিই উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এক মৌসুমে ৯ গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়।[৫৫] মেসি একটি দূর্দান্ত মৌসুম কাটিয়ে উয়েফা বর্ষসেরা ক্লাব ফরোয়ার্ড ও বর্ষসেরা ক্লাব খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেন।[৫৬] বার্সেলোনা এক মৌসুমে লা লিগা, কোপা দেল রেচ্যাম্পিয়নস লিগ তিনটি শিরোপাই জিতে[৫৭] এবং এটিই ছিল কোন স্পেনীয় ক্লাবের প্রথম ট্রেবল জয়।[৫৮] এই মৌসুমে মেসি বার্সেলোনার হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৩৮ গোল করেন এবং ১৮টি গোলে সহায়তা করেন।

২০০৯–১০ মৌসুম

২০০৯ উয়েফা সুপার কাপ জেতার পর বার্সেলোনা ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা মন্তব্য করেন, ‘‘মেসিই খুব সম্ভবত তার দেখা সেরা খেলোয়াড়’’।[৫৯] এই মৌসুমে গার্দিওলা মেসিকে ডান উইং থেকে সরিয়ে ‘‘ফলস নাইন’’ পজিশনে নিয়ে আসেন।[৬০] ১৮ সেপ্টেম্বর, মেসি বার্সেলোনার সাথে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হন। এই চুক্তির সময় মেসির মূল্য রাখা হয় ২৫০ মিলিয়ন ইউরো এবং এই চুক্তির মাধ্যমে মেসির বার্ষিক আয় বেড়ে হয় ৯.৫ মিলিয়ন ইউরো।[৬১][৬২]

২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর, ব্যালন ডি অর বিজয়ী হিসেবে মেসির নাম ঘোষণা করা হয়। এবারের ব্যালন ডি অর পুরস্কারে মেসি ৪৭৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ২৩৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হন। এটি ছিল ব্যালন ডি অর এর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।[৬৩][৬৪][৬৫] মেসি আইএফএফএইচএস বর্ষসেরা প্লেমেকার পুরস্কারে জাভির পেছনে থেকে দ্বিতীয় হন।[৬৬]

২০০৯ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে, আটলান্টার বিপক্ষে খেলায় মেসি।

১৯ ডিসেম্বর আবু ধাবিতে, মেসি ২০০৯ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে এস্তুদিয়ান্তেসের বিপক্ষে গোল করেন এবং দলকে ঐ বছর ৬টি শিরোপা এনে দেন।[৬৭] এর দুই দিন পরই তাকে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দেয়া হয়। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং কাকা-কে হারিয়ে মেসি এই পুরস্কার জিতেন। তিনিই প্রথম আর্জেন্টাইন হিসেব এই পুরস্কার জেতার কৃতিত্ব অর্জন করেন।[৬৮] ১০ জানুয়ারি, মেসি মৌসুমে তার প্রথম হ্যাট্রিক করেন এবং বার্সেলোনা ০–৫ ব্যবধানে টেনেরিফের বিপক্ষে জয় লাভ করে।[৬৯] ১৭ জানুয়ারি, মেসি বার্সেলোনার হয়ে তার ১০০ তম গোলটি করেন এবং বার্সেলোনা সেভিয়ার বিপক্ষে ৪–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[৭০]

মেসি ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে ভালেনসিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন এবং দলকে ৩–০ ব্যবধানের জয় এনে দেন।[৭১] পরের খেলায় জারাগোজার বিপক্ষেও তিনি হ্যাটট্রিক করেন এবং দলকে ২–৪ ব্যবধানের জয় এনে দেন।[৭২] মেসি বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায় টানা দুই খেলায় হ্যাটট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড়।[৭৩] ২০১০ সালের ২৪ মার্চ, মেসি ওসাসুনার বিপক্ষে বার্সেলোনার হয়ে তার ২০০তম অফিসিয়াল খেলায় মাঠে নামেন।[৭৪] ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল, মেসি তার ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মত এক খেলায় ৪ গোল করেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে আর্সেনালের বিপক্ষে ঐ খেলায় বার্সেলোনা ৪–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[৭৫][৭৬] এর মাধ্যমে মেসি চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা রিভালদোকে টপকে যান।[৭৭] মৌসুমে লা লিগার শেষ খেলায় ভায়াদোলিদের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন এবং বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায় এক মৌসুমে রোনালদোর করা ৩৪ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন, যেটি রোনালদো ১৯৯৬–১৯৯৭ মৌসুমে করেছিলেন।[৭৮][৭৯] ২০১০ সালের ৩ জুন, মেসি টানা দ্বিতীয় বারের মত লা লিগার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।[৮০] তিনি সব ধরনের প্রতিযোগীতায় ৪৭ গোল করে মৌসুম শেষ করেন। ১৯৯৬–৯৭ মৌসুমে রোনালদোও সমান সংখ্যক গোল করেছিলেন। মেসি মৌসুমে ১১টি গোলে সহায়তাও করেন।[৮১]

২০১০–১১ মৌসুম

২০১০ সালের ২১ আগস্ট, মৌসুমে মেসি তার প্রথম খেলায় সেভিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন। স্পেনীয় সুপার কাপের ঐ খেলায় বার্সেলোনা ৪–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। প্রথম লেগের খেলায় বার্সেলোনা ৩–১ ব্যবধানে হেরেছিল। দ্বিতীয় লেগে জয়ের ফলে ৫–৩ গোল ব্যবধানে বার্সেলোনা শিরোপা জিতে।[৮২]২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলার ৯২তম মিনিটে ডিফেন্ডার টমাস উজফালুসির অবিবেকী ট্যাকলের ফলে মেসি গোড়ালির ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। প্রাক-দর্শনে মনে হয়েছিল মেসির গোড়ালি ভেঙে গিয়েছে এবং এই তারকা খেলোয়াড়কে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে। কিন্তু পরের দিন মেসির এমআরআই স্ক্যান করানো হলে দেখা যায়, তার ডান গোড়ালির অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃস্থিত লিগামেন্ট মচকে গেছে।[৮৩] ঐ ঘটনা সম্পর্কে মেসির সতীর্থ ডেভিড ভিয়া বলেন, ‘‘মেসির উপর করা ট্যাকলটি ছিল পাশবিক।’’ খেলার ভিডিও চিত্র দেখে তিনি আরও বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ঐ ডিফেন্ডার আঘাত করার জন্য ট্যাকলটি করেননি।[৮৪]

আলমেরিয়ার বিপক্ষে মেসি মৌসুমে তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন এবং দলকে ০–৮ ব্যবধানের বড় জয় এনে দেন। এই হ্যাটট্রিকের দ্বিতীয় গোলটি লা লিগায় তার ১০০তম গোল ছিল।

চ্যম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলার একটি মুহূর্ত।

মেসি তার ক্লাব সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজ এবং আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে হারিয়ে ২০১০ ফিফা ব্যালন ডি অর পুরস্কার জিতেন।[৮৫] মেসি এই পুরস্কারের জন্য টানা চতুর্থবারের মত মনোনীত হয়েছিলেন।[৮৬] ৫ ফেব্রুয়ারি, ক্যাম্প ন্যু-তে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ৩–০ ব্যবধানে হারিয়ে বার্সেলোনা লা লিগায় টানা ১৬ খেলায় বিজয়ী হওয়ার নতুন রেকর্ড গড়ে।[৮৭] খেলায় মেসি হ্যাটট্রিক করেন। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মেসি বলেন, ‘‘দি স্তেফানো’র মত গ্রেটদের করে যাওয়া রেকর্ড ভাঙতে পারাটা অনেক সম্মানের।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি রেকর্ডটি অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয় তার মানে এই যে তা অর্জন করা খুব কঠিন এবং আমরা সেটি অর্জন করেছি একটি শক্তিশালী দলেকে হারিয়ে, যারা একটি খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছে, যার ফলে বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল।’’[৮৮]

এক মাস ধরে কোন গোল করতে না পেরে আলমেরিয়ার বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন; যার দ্বিতীয় গোলটি মৌসুমে তার ৪৭তম গোল ছিল। এর মাধ্যমে মেসি তার বিগত মৌসুমে করা ৪৭গোলের ব্যক্তিগত রেকর্ড স্পর্শ করেন।[৮৯] ২০১১ সালের ১২ এপ্রিল, চ্যাম্পিয়নস লিগে শাখতার দোনেত্‍স্ক এর বিপক্ষে জয়সূচক গোল করে মেসি তার ব্যক্তিগত রেকর্ডটিকে ছাড়িয়ে যান। এতে করে বার্সেলোনার হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড করেন মেসি[৯০] । ২৩ এপ্রিল, ওসাসুনার বিপক্ষে খেলার ৬০তম মিনিটে বদলি হিসেবে খেলতে নেমে মৌসুমে মেসি তার ৫০তম গোলটি করেন। ঘরের মাঠে খেলায় বার্সেলোনা ২–০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।[৯১] মৌসুমে বার্সেলোনা লা লিগা শিরোপা জিতে এবং মেসি ৩১টি গোল করেন। এতে করে পিচিচি ট্রফিতে মেসি রানার-আপ হন এবং ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ৪০ গোল নিয়ে ট্রফি জিতেন। মেসি লিগে ১৮টি গোলে সহায়তা করে সর্বোচ্চ সহায়তাকারী হিসেবে মৌসুম শেষ করেন।২০ এপ্রিল, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে কোপা দেল রে’র ফাইনালে বার্সেলোনা হেরে যায়। খেলায় মেসি পেদ্রোকে একটি গোলে সহায়তা করলেও গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। খেলার অতিরিক্ত সময়ে একমাত্র গোলটি করেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। প্রতিযোগিতায় ৭টি করে গোল করে মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো উভয়েই সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।[৯২][৯৩]চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি ফাইনালের প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন এবং দলকে ২–০ ব্যবধানে জয় এনে দেন। খেলায় দ্বিতীয় গোলটি তিনি কয়েকজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে করেছিলেন। এই গোলটি চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোল হিসেবে বিবেচিত।[৯৪][৯৫] ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলার ৫৪তম মিনিটে মেসি একটি গোল করেন এবং দলকে ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যান। খেলার ৬৯তম মিনিটে ডেভিড ভিয়া গোল করলে বার্সেলোনা ৩–১ ব্যবধানে জয়লাভ করে এবং ছয় বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলে। এটি ছিল বার্সেলোনার চতুর্থ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।[৯৬] খেলায় মেসির গোলটি ছিল প্রতিযোগীতায় তার ১২তম গোল। এতে করে মেসি রুড ভান নিস্টেলরুই-এর ইউরোপীয়ান কাপের এক মৌসুমে করা ১২ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন।[৯৭] ২০১০–১১ মৌসুমে মেসি সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৫৩টি গোল করেন এবং ২৪টি গোলে সহায়তা করেন।

২০১১–১২ মৌসুম

বার্সেলোনার হয়ে স্পেনীয় সুপার কাপ জেতার মাধ্যমে মৌসুম শুরু করেন মেসি। ১৪ আগস্ট, প্রথম লেগের খেলায় স্যান্তিয়াগো বের্ন্যাবেউ স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মেসি একটি গোল করেন। খেলাটি ২–২ সমতায় শেষ হয়। ১৭ আগস্ট, দ্বিতীয় লেগের খেলায় ক্যাম্প ন্যু-তে মেসি জোড়া গোল করেন এবং বার্সেলোনা ৩–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে। এতে করে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে একটি ড্র ও একটি জয় নিয়ে ৫–৪ গোল ব্যবধানে শিরোপা জিতে বার্সেলোনা[৯৮] ২৬ আগস্ট, পোর্তোর বিপক্ষে ইউরোপীয় সুপার কাপের খেলায় মেসি একটি গোল করেন এবং দলকে ২–০ গোলের ব্যবধানে জয় এনে দেন।[৯৯]

১৭ সেপ্টেম্বর, মেসি ওসাসুনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন

১৭ সেপ্টেম্বর, মেসি ওসাসুনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন এবং বার্সেলোনা ৮–০ ব্যবধানে বড় জয় লাভ করে। খেলায় মেসি তার প্রথম গোলটি মরক্কোর সুফিয়ান নামক ১০ বছরের এক শিশুর জন্য উত্‍সর্গ করেন, যে একটি বিরল পায়ের রোগে আক্রান্ত। মেসি সাধারণত গোল করার পর দু’হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করেন, কিন্তু ঐ খেলায় প্রথম গোলটি করার পর তিনি হাত দিয়ে তার উরুতে চড় মেরেছিলেন, যা সুফিয়ানের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।[১০০]

২০১১ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে সান্তোসের বিপক্ষে খেলছেন মেসি। খেলায় তিনি জোড়া গোল করেন

২৪ সেপ্টেম্বর, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে মেসি হ্যাটট্রিক করেন এবং দলকে ৫–০ ব্যবধানের বড় জয় এনে দেন।[১০১] ২৮ সেপ্টেম্বর, বাতে বরিসভের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে মৌসুমে মেসি তার প্রথম দুই গোল করেন।[১০২] এতে করে, সব ধরনের প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার হয়ে ১৯৪ গোল করে বার্সেলোনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা কুবালাকে স্পর্শ করেন মেসি।[১০৩] ১৫ অক্টোবর, লা লিগায় রেসিং স্যান্তেন্দার-এর বিপক্ষে জোড়া গোল করার মাধ্যমে ১৯৬ গোল নিয়ে মেসি কুবালাকে ছাড়িয়ে যান[১০৪] এবং লা লিগায়ও ১৩২ গোল নিয়ে বার্সেলোনার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিনত হন।[১০৫] ১ নভেম্বর, ভিক্টোরিয়া প্লাজেন-এর বিপক্ষে মেসি হ্যাটট্রিক করেন, যার প্রথম গোলটি বার্সেলোনার হয়ে তার ২০০তম গোল ছিল।[১০৬] ১৮ ডিসেম্বর, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে স্যান্তোসের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন এবং দলকে ৪–০ ব্যবধানের বড় জয় এনে দেন। মেসিকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বলের পুরস্কার দেওয়া হয়।[১০৭]

মেসি তার ক্লাব সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে হারিয়ে ২০১১ সালের উয়ফা ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন। জাভি হার্নান্দেজ ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে হারিয়ে তিনি ২০১১ ফিফা বালোঁ দর পুরস্কারও জিতেন। এর মাধ্যমে ফুটবলের ইতিহাসে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে তিনবার ও দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিনবার এ পুরস্কার জিতেন মেসি। এর আগে তিনবার এ পুরস্কার জিতেছেন ইয়োহান ক্রুইফ, মিশেল প্লাতিনিমার্কো ফন বাস্তেন এবং টানা তিনবার জিতেছেন মিশেল প্লাতিনি[১০৮]২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, ভালেনসিয়ার বিপক্ষে মেসি লা লিগায় তার ২০০তম খেলায় মাঠে নামেন। খেলায় মেসি ৪টি গোল করেন এবং বার্সেলোনা ৫–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১০৯] ৭ মার্চ, বেয়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলায় মেসি ৫টি গোল করেন এবং দলকে ৭–১ গোলের বড় জয় এনে দেন। ১৯৯২ সালে, চ্যাম্পিয়নস লিগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক খেলায় ৫ গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন মেসি।[১১০]

২০ মার্চ, গ্রানাদার বিপক্ষে মেসি হ্যাটট্রিক করেন। এতে করে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা সিজার রদ্রিগুয়েজ-এর ২৩২ গোলের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যান তিনি।[১১১]

৩ এপ্রিল, চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের খেলায় এসি মিলানের বিপক্ষে মেসি পেনাল্টি থেকে ২টি গোল করেন। এতে করে তিনি চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে নিজের করা ১২ গোলের ব্যক্তিগত রেকর্ড টপকে যান এবং হোসে আলতাফিনির এক মৌসুমে করা সর্বোচ্চ ১৪ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন, যেটি আলতাফিনি ইউরোপীয়ান কাপের ১৯৬২–৬৩ মৌসুমে করেছিলেন।[১১২] চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি-ফাইনালের দুই লেগের কোনটিতেই মেসি গোল করতে পারেননি। চেলসির বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ৩–২ গোল ব্যবধানে হেরে বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিতে হয়। দ্বিতীয় লেগের খেলায় মেসি একটি গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি মিস করেন, যা বার্সেলোনাকে গোল ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত।[১১৩]

১১ এপ্রিল, মেসি গেতাফের বিপক্ষে মৌসুমে তার ৬১ তম গোল করেন এবং ২টি গোলে সহায়তা করেন।[১১৪] ২ মে, মালাগার বিপক্ষে মেসি হ্যাটট্রিক করেন। এতে করে তিনি ১৯৭২–৭৩ মৌসুমে গার্ড ম্যুলারের করা এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৬৭ গোলের রেকর্ড টপকে যান এবং ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডের মালিক বনে যান।[১১৫] এই খেলায় হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে তিনি মৌসুমে ২১তম বার এক খেলায় একাধিক গোল করেন এবং এটি মৌসুমে লা লিগায় তার সপ্তম হ্যাটট্রিক ছিল।[১১৬]

৫ মে, এস্প্যানিওলের বিপক্ষে মেসি ৪টি গোল করেন, এতে মৌসুমে তার মোট গোল সংখ্যা হয় ৭২। ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম শ্রেণির লিগে এক মৌসুমে ৭০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করা দ্বিতীয় ফুটবলার মেসি। আমেরিকান সকার লিগে ১৯২৪–২৫ মৌসুমে বেথলেহেম স্টিলের হয়ে আর্কি স্টার্ক ৭০ গোল করেছিলেন।

২৫ মে, কোপা দেল রে’র ফাইনালে মেসি আবারও গোল করেন এবং বার্সেলোনা ২৬ বারের মত কোপা দেল রে শিরোপা জিতে। এতে করে, মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়ায় ৭৩-এ।[১১৭] এই খেলাটি ছিল বার্সেলোনার ম্যানেজার হিসেবে পেপ গার্দিওলার শেষ খেলা এবং এই শিরোপাটি ছিল বার্সেলোনার হয়ে মেসির দ্বিতীয় কোপা দেল রে শিরোপা এবং ম্যানেজার হিসেবে চার বছরের মেয়াদে গার্দিওলার ১৪তম শিরোপা। মৌসুমে বার্সেলোনা লা লিগায় রানার-আপ হয় এবং চ্যাম্পিয়ন হয় রিয়াল মাদ্রিদলা লিগায় ১৬টি গোলে সহায়তা করে মেসি দ্বিতীয় সবোর্চ্চ সহায়তাকারী হিসেবে মৌসুম শেষ করেন, যেখানে মেসুত ওজিল ১৭টি সহায়তা করে প্রথম হন। তিনি ১৪টি গোল নিয়ে টানা চতুর্থবারের মত চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েন[১১৭] এবং ৫টি গোলে সহায়তা করে প্রতিযোগীতার অন্যতম সর্বোচ্চ সহায়তাকারী হিসেবে মৌসুম শেষ করেন। ক্লাবের হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৭৩টি গোল ও ২৯টি গোলে সহায়তা করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সহায়তাকারী হিসেবে মৌসুম শেষ করেন মেসি।

২০১২–১৩ মৌসুম

ক্যাম্প ন্যুতে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম খেলায় জোড়া গোল করার মাধ্যমে মেসি তার গোল করার ধারা অব্যাহত রাখেন। খেলায় বার্সেলোনা ৫–১ ব্যবধানের বড় জয় লাভ করে। ২৩ আগস্ট, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে স্পেনীয় সুপার কাপের প্রথম লেগের খেলায় মেসি পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৩–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১১৮] ২৬ আগস্ট, ওসাসুনার বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন। পিছিয়ে পড়েও খেলায় বার্সেলোনা ১–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১১৯] ২৯ আগস্ট, স্পেনীয় সুপার কাপের দ্বিতীয় লেগের খেলায় মেসি ফ্রি-কিক থেকে একটি গোল করেন। খেলায় বার্সেলোনা ২–১ ব্যবধানে পরাজিত হয়। দুই লেগ মিলিয়ে গোল ব্যবধান দাঁড়ায় ৪–৪। কিন্তু প্রতিপক্ষের মাঠে অধিক গোল করায় শিরোপা জিতে রিয়াল মাদ্রিদ[১২০] ইউরোপের সেরা খোলোয়াড়ের পুরস্কারে ১৭ ভোট নিয়ে মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো যৌথভাবে দ্বিতীয় হন। পুরস্কারটি জিতেন মেসির ক্লাব সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা[১২১]

২ সেপ্টেম্বর, ভালেনসিয়ার বিপক্ষে লা লিগার তৃতীয় খেলায় একমাত্র গোলটি করেন আর্দ্রিয়ানো। গোলটিতে সহায়তা করেছিলেন মেসি।[১২২] ১৫ সেপ্টেম্বর, গেতাফের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৪–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১২৩] ১৯ সেপ্টেম্বর, স্পার্তাক মস্কোর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম খেলায়ও তিনি জোড়া গোল করেন এবং দলকে ৩–২ ব্যবধানের জয় এনে দেন।[১২৪] ৭ অক্টোবর, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে লা লিগার প্রথম এল ক্ল্যাসিকোতে মেসি জোড়া গোল করেন। খেলাটি ২–২ সমতায় শেষ হয়। ২০ অক্টোবর, লা করুনার বিপক্ষে মেসি হ্যাটট্রিক করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৪–৫ ব্যবধানে জয় লাভ করে। লা লিগায় পরের খেলায় রায়ো ভায়েক্যানোর বিপক্ষে মেসি আবরও জোড়া গোল করেন এবং দলকে ০–৫ ব্যবধানের বড় জয় এনে দেন। ১১ নভেম্বর, মায়োর্কার বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন, যা ছিল ২০১২ সালে তার ৭৫তম ও ৭৬তম গোল। এর মাধ্যমে তিনি ১৯৫৮ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষে পেলের করা ৭৫ গোলের মাইলফলক টপকে যান। লা লিগার ১১তম থেকে ১৬তম পর্যন্ত টানা ছয় খেলায় মেসি জোড়া গোল করেন। ২০ নভেম্বর, চ্যাম্পিয়নস লিগে স্পার্তাক মস্কোর বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন, যা ছিল ২০১২ সালে তার ৭৯তম ও ৮০তম গোল।[১২৫] মেসি তার গোল করার ধারা অব্যাহত রাখেন এবং ২৫ নভেম্বর, লেভান্তের বিপক্ষে বছরে তার ৮১তম ও ৮২তম গোল করেন।[১২৬]

১ ডিসেম্বর, অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে মেসি বছরে তার ৮৩তম ও ৮৪তম গোল করেন। এর মাধ্যমে মেসি বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা সিজার রোদ্রিগুয়েজের ১৯০ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন।[১২৭] ৯ ডিসেম্বর, রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে মেসি বছরে তার ৮৫তম ও ৮৬তম গোল করেন এবং ১৯৭২ সালে জার্মান কিংবদন্তি গার্ড ম্যুলারের করা ৮৫ গোলের মাইলফলক টপকে যান। গার্ড ম্যুলার, বায়ার্ন মিউনিখজার্মানি জাতীয় দলের হয়ে এই রেকর্ড গড়েছিলেন।[১২৮][১২৯][১৩০] ১২ ডিসেম্বর, করদোবার বিপক্ষে কোপা দেল রে’র খেলায় মেসি জোড়া গোল করেন।[১৩১] ১৬ ডিসেম্বর, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে আবারও জোড়া গোল করার মাধ্যমে মেসি দলকে ৪–১ ব্যবধানের জয় এনে দেন এবং তার গোলসংখ্যাকে ৯০-এ নিয়ে যান।[১৩২] ২২ ডিসেম্বর, ভায়াদোলিদের বিপক্ষে বছরের শেষ খেলায় মেসি একটি গোল করেন। এতে করে, বছর শেষে তার মোট গোলসংখ্যা দাঁড়ায় ৯১, যার মধ্যে ৭৯টি বার্সেলোনার হয়ে এবং ১২টি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, মেসি বার্সেলোনার সাথে নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত করা চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।[১৩৩]

২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (২য়) এবং সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে (৩য়) হারিয়ে টানা চতুর্থবারের মত ফিফা বালোঁ দর জেতার কৃতিত্ব গড়েন মেসি। ফুটবলের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি চারবার এই পুরস্কার জিতেছেন।[১৩৪] এই অর্জনের ফলে মিডিয়া মেসিকে সাবেক কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনা এবং পেলের সাথে তুলনা করতে শুরু করে।[১৩৫][১৩৬]

২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি, ওসাসুনার বিপক্ষে বার্সেলোনা ৫–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। খেলায় মেসি চার গোল করেন। এরমধ্য দ্বিতীয় গোলটি লা লিগায় তার ২০০তম গোল ছিল। তিনি ৮ম এবং সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় ২০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন।[১৩৭] এতে করে, মৌসুমে লা লিগায় মেসির গোল সংখ্যা হয় ৩৩ এবং সবধরনের প্রতিযোগিতায় ৪৪।

২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, গ্রানাদার বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন। ফলে খেলায় পিছিয়ে পড়লেও বার্সেলোনা ১–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১৩৮] এবং জোড়া গোলের মাধ্যমে বার্সেলোনার হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় মেসি ৩০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন।[১৩৯]

২০১৩ সালের ২ মার্চ, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ২–১ ব্যবধানে পরাজিত হয় বার্সেলোনা। বার্সেলোনার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন মেসি। এর মাধ্যমে এল ক্ল্যাসিকোতে আলফ্রেদো দি স্তেফানোর করা ১৮ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন তিনি।[১৪০][১৪১] ২০১৩ সালের ৯ মার্চ, দেপর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে একটি গোল করার মাধ্যমে লা লিগায় টানা ১৭ খেলায় গোল করার রেকর্ড গড়েন মেসি। কোন ঘরোয়া লিগে যা একটি বিশ্ব রেকর্ড।[১৪২] ১২ মার্চ, চ্যাম্পিয়নস লিগে এসি মিলানের বিপক্ষে দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় লেগের খেলায় মেসি জোড়া গোল করেন এবং দলকে ৪–০ ব্যবধানের জয় এনে দেন। প্রথম লেগে বার্সেলোনা ২–০ ব্যবধানে হেরেছিল। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪–২ গোল ব্যবধানে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায় বার্সেলোনা,[১৪৩] এবং এই জোড়া গোলের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন মেসি।[১৪৪]

২০১৩ সালের ১৭ মার্চ, রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে মেসি অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামেন। এই প্রথম কোন অফিসিয়াল খেলায় তিনি বার্সেলোনার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।[১৪৫] ৩০ মার্চ, সেলতা ভিগোর বিপক্ষে গোল করার মাধ্যমে লা লিগায় টানা ১৯ খেলায় গোল করার কৃতিত্ব গড়েন মেসি। এছাড়াও ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লিগের সবগুলো দলের বিপক্ষে টানা গোল করার কৃতিত্ব গড়েন তিনি।[১৪৬] ২ এপ্রিল, চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে পারি সাঁ জার্মেই এর বিপক্ষে খেলার সময় মেসি ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিং এর ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। ফলে তাকে এক সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়।[১৪৭] খেলায় মেসি একটি গোল করেন। খেলাটি ২–২ সমতায় শেষ হয়।[১৪৮]

২০১৩–১৪ মৌসুম

টানা তৃতীয়বারের মত মেসি উয়েফা ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। তার সাথে ছিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো এবং ফ্রাংক রিবেরি[১৪৯] ৩৬ ভোট পেয়ে পুরস্কারটি জিতেন রিবেরি, মেসি পান ১৪টি এবং রোনালদো পান ৩টি ভোট।[১৫০][১৫১][১৫২]

২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট, লেভান্তের বিপক্ষে জোড়া গোল এবং একটি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৩–১৪ লা লিগা মৌসুম উদ্বোধন করেন মেসি। খেলায় বার্সেলোনা ৭–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১৫৩] ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে অ্যাওয়ে গোলে জয় লাভ করে নিজেদের ১১তম স্পেনীয় সুপার কাপ শিরোপা ঘরে তোলে বার্সেলোনা[১৫৪]

১ সেপ্টেম্বর, ভালেনসিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারে নিজের ২৩তম হ্যাট্রিক পুরণ করেন মেসি। প্রতিপক্ষের মাঠে বার্সেলোনা ২–৩ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১৫৫][১৫৬][১৫৭] এই গোলের মাধ্যমে তিনি প্রতিপক্ষের মাঠে ১০০ গোলের মালিক বনে যান এবং লা লিগার ইতিহাসেও প্রতিপক্ষের মাঠে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড গড়েন।[১৫৮] এই গোলসমূহ তাকে লা লিগার ইতিহাসের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত করে।[১৫৯][১৬০]১৮ সেপ্টেম্বর, মেসি তার ক্যারিয়ারের ২৪তম হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে আয়াক্সের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে বার্সেলোনা ৪–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। এই গোলসমূহ তাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত করে এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থানে নিয়ে আসে।[১৬১] এছাড়া এই হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে চারটি হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েন মেসি।[১৬২] ৬ নভেম্বর, চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের খেলায় মিলানের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৩–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। এর আগে তিনি টানা চার খেলায় গোলবঞ্চিত ছিলেন।[১৬৩] ১০ নভেম্বর, রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে খেলায় মেসি ইনজুরি আক্রান্ত হন, যা তাকে ২০১৪ এর জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠের বাইরে রাখে। এটি ছিল মৌসুমে তার তৃতীয় ইনজুরি।[১৬৪] ৮ জানুয়ারি, হেতাফের বিপক্ষে খেলায় ইনজুরি থেকে ফিরে জোড়া গোল করেন মেসি।[১৬৫] ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারী, ২০১৩ ফিফা বালোঁ দর পুরস্কারে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পেছনে থেকে দ্বিতীয় হন মেসি।[১৬৬] ১৫ ফেব্রুয়ারি, রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে বার্সার ৬-০ গোলে জয়ের খেলায় মেসি জোড়া গোল করেন এবং লা লিগার ইতিহাসের শীর্ষ গোলদাতাদের তালিকায় আরেক আর্জেন্টিনীয় আলফ্রেদো দি স্তেফানোকে টপকে রাউলের সাথে তালিকার তৃতীয় স্থান ভাগাভাগি করেন।[১৬৭]

২০১৪ সালের ১৬ মার্চ, ওসাসুনার বিপক্ষে মেসি হ্যাটট্রিক করেন এবং পেদ্রোর একটি গোলে সহায়তা করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৭-০ গোলে জয় লাভ করে।[১৬৮][১৬৯] এই হ্যাট্রিকের মাধ্যমে তিনি পাউলিনো আলকান্তারাকে (৩৬৯ গোল) অতিক্রম করে বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন (দাপ্তরিক ও প্রদর্শনী খেলা সহ, ৩৭১ গোল)।[১৭০][১৭১] ২৩ মার্চ, সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করার মাধ্যমে এল ক্লাসিকোর ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন মেসি।[১৭২]

২০১৪ সালের এপ্রিলে, বার্সেলোনার হয়ে মেসি তার অসাধারণ ফর্ম হারিয়ে ফেলায় সমালোচিত হন। বিশেষ করে, চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে আতলেতিকো মাদ্রিদ এবং কোপা দেল রে'র ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে বার্সার পরাজয়ের খেলায় তিনি তার স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে ব্যর্থ হন, যার ফলে এই সমালোচনার উদ্ভব ঘটে।[১৭৩]

২০১৪ সালের ১৪ মে, বার্সেলোনার সাথে নতুন চুক্তিতে রাজি হন মেসি। ১৬ মে, তিনি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।[১৭৪]

২০১৪–১৫ মৌসুম

অক্টোবর ২০১৪: গ্রানাদার বিপক্ষে গোল উৎযাপন করছেন মেসি।

এলচের বিপক্ষে জোড়া গোলের মাধ্যমে মেসি তার ২০১৪-১৫ মৌসুম শুরু করেন।[১৭৫] পরের খেলায় ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে তিনি সান্দ্রোর জয়সূচক গোলে সহায়তা করেন, যদিও তিনি সামান্য ইনজুরিতে আক্রান্ত হন।[১৭৬] ২৭ সেপ্টেম্বের, গ্রানাদার বিপক্ষে খেলায় মাত্র ২৭ বছর বয়সে, মেসি তার কর্মজীবনের ৪০০তম পেশাদার গোল করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৬-০ গোলে জয় লাভ করে। ওই খেলায় তিনি আরও একটি গোল করেন এবং দুইটি গোলে সহায়তা করেন।[১৭৭] খেলা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তার কোচ লুইস এনরিক তার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন: "মনে হয় যেন মেসিকে জাদুর লাঠি স্পর্শ করেছে।"[১৭৮]

১৬ অক্টোবর, বার্সেলোনায় নিজের অভিষেক হওয়ার দশম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করেন মেসি।[১৭৯] ১৮ অক্টোবর, এইবারের বিপক্ষে লা লিগায় নিজের ২৫০তম গোল করেন মেসি, তিনি ওই খেলায় একটি গোলে সহায়তাও করেন, যার ফলে ৩-০ গোলে জয় পায় বার্সেলোনা। এই গোল তাকে লা লিগার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা তেলমো জারার ২৫১ গোলের রেকর্ডের আরও কাছে নিয়ে যায়।[১৮০] ৫ নভেম্বর, আয়াক্সের বিপক্ষে বার্সেলোনার ২-০ গোলে জয়ের খেলায় উভয় গোলই করেন মেসি, যার মাধ্যমে গ্রুপ পর্বের দুইটি খেলা বাঁকি থাকতেই চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে বার্সেলোনা। এবং এই দুই গোলের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা রাউলের রেকর্ডে ভাগ বসান মেসি।[১৮১] ২২ নভেম্বর, সেভিয়ার বিপক্ষে মেসি হ্যাটট্রিক করেন এবং দলকে ৫-১ গোলের জয় এনে দেন। এর মাধ্যমে তিনি ২৫৩ গোল নিয়ে লা লিগার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা তেলমো জারাকে (২৫১ গোল) ছাড়িয়ে যান। জারার ২৫১ গোলের রেকর্ডটি ১৯৫৫ সাল থেকে অক্ষুণ্ন ছিল।[১৮২] এর তিন দিন পর, আপোয়েল নিকোসিয়ার বিপক্ষে তিনি আবারও হ্যাটট্রিক করেন এবং দলকে ৪-০ গোলে জয় এনে দেন। এই হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে ৭৪ গোল নিয়ে রাউলকে ছাড়িয়ে তিনি চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার স্থান নিজের করে নেন।[১৮৩]

৭ ডিসেম্বর, বার্সেলোনা ডার্বিতে এস্পানিওলের বিপক্ষে মেসি আবারও হ্যাটট্রিক করেন। এটি ছিল শেষ চার খেলায় তার তৃতীয় হ্যাটট্রিক।[১৮৪] এর মাধ্যমে তিনি ১২ গোল নিয়ে সেসার রদ্রিগেসকে পেছনে ফেলে বার্সেলোনা ডার্বির সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে নিজের নাম লেখান।[১৮৫] ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি, বার্সেলোনা ত্রয়ী মেসি, নেইমারসুয়ারেজ আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করেন এবং দলকে ৩-১ গোলের জয় এনে দেন। মেসি তার গোলের মাধ্যমে আতলেতিকোর বিপক্ষে নিজের গোলখরা কাটান। ১২ জানুয়ারী, ২০১৫ ফিফা বালোঁ দরে টানা দ্বিতীয়বারের মত ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পেছনে থেকে দ্বিতীয় হন মেসি।[১৮৬]

বার্সেলোনার উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে চলছিল এই মৌসুম, এমনকি মেসির ক্লাব ছাড়ার গুজবও সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।[১৮৭] কিন্তু ১১ জানুয়ারি আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলার মধ্যে দিয়ে সবকিছু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। তাদেরকে ৩-১ গোলে হারায় বার্সেলোনা, যেখানে প্রথম বারের মত এমএসএন ত্রয়ীর প্রত্যেকে গোল করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, লেভান্তের বিপক্ষে মেসি লা লিগায় তার রেকর্ড ১০৬তম অ্যাসিস্ট করেন এবং এর মাধ্যমে লুইস ফিগোকে ছাড়িয়ে লা লিগার ইতিহাসের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টকারী হিসেবে নিজের নাম লেখান।[১৮৮] ৮ মার্চ, রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে মেসি মাত্র ১১ মিনিটে গোলের হ্যাট্রিক সম্পূর্ণ করেন, যা তার কর্মজীবনের দ্রুততম হ্যাটট্রিক। এই হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে তিনি তেলমো জারাকে সরিয়ে স্পেনীয় ফুটবলে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটি নিজের করে নেন। এটি ছিল বার্সেলোনায় তার ৩২তম হ্যাটট্রিক।[১৮৯]

২০১৫-১৬ মৌসুম

সেভিয়ার বিপক্ষে উয়েফা সুপার কাপে ৫-৪ গোলের ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে (অতিরিক্ত সময়সহ) জোড়া ফ্রি-কিক গোলের মাধ্যমে মেসি তার ২০১৫-১৬ মৌসুম শুরু করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর রোমার বিপক্ষে ম্যাচে মেসি সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০০ ম্যাচ খেলার রেকর্ড করেন। হাঁটুর ইনজুরি থেকে সুস্থ হওয়ার পর ২১ নভেম্বর এল ক্লাসিকোর ম্যাচে তিনি বদলি হিসেবে নেমে মাঠে ফিরেন। ডিসেম্বরে ২০১৫ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে মেসি বার্সেলোনার হয়ে বছরের ৫ম ট্রফি জয় করেন। ৩০ ডিসেম্বর রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি বার্সেলোনার হয়ে ৫০০ তম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেন।

২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি মেসি ক্যারিয়ারে ৫ম বারের মতো ফিফা ব্যালন ডি অর বিজয়ী হন। লালিগায় সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচে মেসি পেনাল্টিতে সুয়ারেজকে এসিস্ট করেন, যা প্রচুর আলোচনার জন্ম দেয়। মূলত নেইমারকে এসিস্ট করার জন্য মেসি পেনাল্টি মিস করেন, কিন্তু সুয়ারেজ তুলনামূলক বেশি এগিয়ে আসায় তিনি গোলটি করতে সক্ষম হন।

১৭ ফেব্রুয়ারি মেসি তার ৩০০তম লিগ গোলটি করেন। এর কিছুদিন পর আর্সেনালের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ১৬ এর ম্যাচে তিনি জোড়া গোল করেন। এর মধ্যে ২য় গোলটি ছিল ছিল বার্সেলোনার ইতিহাসে অফিসিয়াল ম্যাচে ১০,০০০তম গোল। ১৭ এপ্রিল মেসি বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার হয়ে ক্যারিয়ারের ৫০০তম গোল করেন।লা লিগাকোপা দেল রে জয়ের মাধ্যমে তিনি মৌসুম শেষ করেন। বার্সেলোনার আক্রমণভাগের মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ ত্রয়ী মৌসুমে ১৩১টি গোল করে নিজেদেরই পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে স্প্যানিশ রেকর্ড করেন।

২০১৬-১৭ মৌসুম

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ইনজুরির ফলে মেসি স্প্যানিশ সুপারকোপার ম্যাচে অধিনায়কত্বের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ মৌসুম শুরু করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে সেল্টিকের বিরুদ্ধে মেসি মৌসুমে প্রথমবারের মতো হ্যাট্রিক করেন, যা চ্যাম্পিয়নস লিগে তার ৬ষ্ঠ হ্যাট্রিক ছিল (তৎকালীন সর্বোচ্চ)। এর ১ সপ্তাহ পর আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি কুঁচকির চোটে পড়ে ৩ সপ্তাহের জন্য খেলা থেকে ছিটকে যান। ১৬ অক্টোবর দেপার্তিভো লা করুণার বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমে ৩ মিনিটের মধ্যে গোল করে তিনি মাঠে ফিরেন। এর ৩ দিন পর ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ক্লাব ক্যারিয়ারের ৩৭তম হ্যাট্রিক করেন। ১ নভেম্বর ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে মেসি চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্যায়ে তার ক্যারিয়ারের ৫৪তম গোলটি করেন, যা রাউলের পূর্ববর্তী ৫৩ গোলের রেকর্ডটি ভেঙে দেয়।

মেসি ৫১ গোল করে ইউরোপে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়ে বছর শেষ করেন। তবে, তিনি ব্যালন ডি অর ও ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড় পুরস্কারে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর কাছে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় হন। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি অ্যাথলেটিক বিলবাও এর বিপক্ষে কোপা ডেল রে প্রতিযোগিতার শেষ ১৬ এর ম্যাচে তিনি ফ্রিকিক থেকে গোল করেন। যা বার্সেলোনার হয়ে মেসির ২৬তম ফ্রিকিক গোল ছিল এবং এর মাধ্যমে রোনাল্ড কোম্যানের বার্সা রেকর্ড স্পর্শ করেন। এরপরের লিগ ম্যাচে তিনি লাস পালমাসের বিপক্ষে গোল করে রাউলের(৩৫) লালিগায় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল করার রেকর্ড স্পর্শ করেন। ৪ ফেব্রুয়ারি লালিগায় অ্যাথলেটিক বিলবাও এর বিপক্ষে ম্যাচে ক্যারিয়ারের ২৭তম ফ্রিকিক গোল করে মেসি রোনাল্ড কোম্যানের বার্সা রেকর্ড ভাঙেন।

২৩ এপ্রিল মেসি রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে জোড়া গোল করেন। এই ম্যাচে তিনি বার্সার হয়ে ৫০০তম ক্যারিয়ার গোল করেন এবং রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের সামনে জার্সি খুলে স্মরণীয় এক উদযাপন করেন।

মেসি ২০১৬-১৭ মৌসুম মোট ৫৪ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্টের মাধ্যমে শেষ করেন। লালিগার ৩৭ গোলের ফলে মেসি পিচিচি ট্রফি এবং ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট (৪র্থ বার) জয়ী হন।

২০১৭-১৮ মৌসুম

মেসি স্প্যানিশ সুপারকোপায় এল ক্লাসিকোতে হেরে ২০১৭-১৮ মৌসুম শুরু করেন। ৯ সেপ্টেম্বর মেসি এস্পানিওলের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম হ্যাট্রিক করেন। ১২ সেপ্টেম্বর বুফনের জুভেন্টাসের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি জোড়া গোল করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর এইবারের বিপক্ষে ৬-১ গোলে জয়ী হওয়া ম্যাচে তিনি ৪ গোল করেন। ১ অক্টোবর লাস পালমাসের বিপক্ষে ম্যাচে মেসি কার্লোস পুয়োলকে ছাড়িয়ে ক্লাবের ইতিহাসে ৩য় সর্বোচ্চ ম্যাচে উপস্থিতির রেকর্ড করেন। কাতালোনিয়ায় স্বাধীনতা আন্দোলন প্রেক্ষাপটে ম্যাচটি ন্যু ক্যাম্পে দর্শকবিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়।

১৮ অক্টোবর মেসি অলিম্পিয়াকোর বিপক্ষে ম্যাচে চ্যাম্পিয়নস লিগে তার ক্যারিয়ারের ৯৭ তম গোলটি করেন, যা ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতায় তার ক্যারিয়ারের ১০০তম গোল ছিল। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর ইতিহাসে ২য় খেলোয়াড় হিসেবে তিনি রেকর্ডটি করেন। তবে, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর চেয়ে ২১ ম্যাচ কম খেলে তিনি রেকর্ডটি করেন।

৪ নভেম্বর মেসি সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বার্সেলোনার হয়ে ৬০০তম ম্যাচ খেলেন। ২৫ নভেম্বর মেসি বার্সেলোনা ক্লাবের সাথে ২০২০-২১ মৌসুম পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেন। যাতে তার রিলিজ ক্লস ৭০০ মিলিয়ন ইউরো নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি মেসি লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচে লালিগায় তার ৪০০তম ম্যাচ খেলেন এবং সে ম্যাচে গোল করে সেরা ৫ ইউরোপিয়ান লিগে এক ক্লাবের হয়ে জার্ড মুলারের সর্বোচ্চ ৩৬৫ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন। এক সপ্তাহ পর, রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ম্যাচে মেসি সেই রেকর্ডটি ভেঙে দেন।

৪ মার্চ মেসি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচে তার ক্যারিয়ারের ৬০০তম গোল করেন। ১৪ মার্চ চেলসির বিপক্ষে ম্যাচে তিনি চ্যাম্পিয়নস লিগে তার ক্যারিয়ারের ৯৯তম ও ১০০তম গোল করেন। ইতিহাসে মাত্র ২য় খেলোয়াড় হিসেবে তিনি রেকর্ডটি করেন এবং ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর চেয়ে কম বয়স, কম ম্যাচ, কম শট নিয়ে তিনি রেকর্ডটি করেন। মেসি ম্যাচের প্রথম গোলটি ২ মিনিট ৮ সেকেন্ডে করেন, যা তার ক্যারিয়ারের দ্রুততম গোল। ৭ এপ্রিল লেগানেসের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি হ্যাট্রিক করেন ও ম্যাচে মৌসুমে ৬ষ্ঠ বারের মতো ফ্রিকিক থেকে গোল করেন। যা তার সাবেক সতীর্থ রোনালদিনহোর রেকর্ড স্পর্শ করে।

মেসি মৌসুমে লালিগায় ৩৪ গোল করেন। যা তাকে পিচিচি ট্রফি এবং ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট (৫ম বার) বিজয়ী করে। বার্সেলোনা তাদের ইতিহাসের ৩০তম কোপা দেল রে এবং ২৫তম লা লিগা জয়ের মাধ্যমে মৌসুম শেষ করে। মৌসুম শেষে বার্সেলোনা লালিগার ইতিহাসে টানা সর্বোচ্চ ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে।

২০১৮-১৯ মৌসুম

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার বিদায়ের ফলে অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী মেসির হাতে পড়ে। ১২ আগস্ট সেভিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপারকোপা জয়ের মাধ্যমে মেসি অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ট্রফি জিতেন। ১৯ আগস্ট আলাভাসের বিপক্ষে ম্যাচে মেসির প্রথম গোলটি বার্সেলোনার লা লিগা ইতিহাসে ৬০০০তম গোল ছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসভি এন্দোভানের বিরুদ্ধে মেসি হ্যাট্রিক করেন, যা চ্যাম্পিয়নস লিগে তার ৮ম হ্যাট্রিক ও ইতিহাসে সর্বোচ্চ।২০ অক্টোবর সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মেসি ইনজুরিতে পড়েন ও তিন সপ্তাহের জন্য খেলা থেকে ছিটকে যান। ৮ ডিসেম্বর এস্পানিয়লের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জয়ী ম্যাচে মেসি জোড়া গোল করেন। ম্যাচে মেসির প্রথম গোলটির মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লালিগায় টানা ১৩ মৌসুম কমপক্ষে ১০ গোল করার ইতিহাস গড়েন তিনি।

২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি এইবারের বিপক্ষে ম্যাচে মেসি লালিগায় ক্যারিয়ারের ৪০০তম গোল করেন। যা ইতিহাসে সেরা ৫ ইউরোপিয়ান লিগের যেকোনোটিতে কোনো খেলোয়াড়ের করা সর্বপ্রথম রেকর্ড। ২ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টিতে গোল করে লালিগার ইতিহাসে মাত্র ৩য় খেলোয়াড় হিসেবে ৫০টি পেনাল্টি গোলের রেকর্ড করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি সেভিয়ার বিপক্ষে লালিগার ম্যাচে মেসি তার ক্যারিয়ারের ৫০তম হ্যাট্রিক করেন এবং ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ৬৫০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন।

২৭ এপ্রিল লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচে মেসি লালিগায় ৪৫০তম ম্যাচ খেলেন এবং ম্যাচের একমাত্র গোলটি করে দলের লালিগা জয় নিশ্চিৎ করেন। অধিনায়ক হিসেবে সেটি মেসির প্রথম ও ক্যারিয়ারে ১০ম লা লিগা জয় ছিল। ১ মে ন্যু ক্যাম্পে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের ১ম লেগে লিভারপুলের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করে ৩-০ জয়ে অবদান রাখেন। ম্যাচে তার দ্বিতীয় গোলটি ছিল বার্সেলোনার হয়ে ৬০০তম ক্যারিয়ার গোল। ফিরতি লেগে অ্যানফিল্ডে ৪-০ ব্যবধানে হেরে বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেয়। ২৫ মে কোপা দেল রে ফাইনালে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে ২-১ ব্যবধানে বার্সেলোনা পরাজিত হয়। লালিগায় ৩৪ ম্যাচে ৩৬ গোল করে মেসি ৬ষ্ঠবারের মতো ও টানা ৩য় বার পিচিচি ট্রফি জিতেন।

২০১৯-২০ মৌসুম

২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে মেসির করা দৃষ্টিনন্দন গোল ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন লাভ করেছিল। তবে, ইনজুরির কারণে মেসি মৌসুমের শুরুর দিকের খেলাগুলো মিস করেন। ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ২০১৯ সালের ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ড ও ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত ৩ জন খেলোয়াড়ের তালিকায় মেসি জায়গা করে নেন। এরপর, ২৩ সেপ্টেম্বর মেসি ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন।

৬ অক্টোবর সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মেসি মৌসুমে প্রথমবারের মতো গোল করেন এবং সেটি ছিল লালিগায় তার ৪২০তম গোল। এর মাধ্যমে তিনি সেরা ৫ ইউরোপিয়ান লিগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ৪১৯ গোলকে ছাড়িয়ে যান। ২৩ অক্টোবর চ্যাম্পিয়নস লিগের স্লাভিয়া প্রাগের বিপক্ষে ম্যাচে গোল করার মাধ্যমে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১৫ চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল করার রেকর্ড করেন। একই সাথে রাউল এবং ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সাথে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে (৩৩) গোল করার রেকর্ড স্পর্শ করেন। ২৯ অক্টোবর মেসি রিয়াল ভালাদোলিদের বিপক্ষে ম্যাচে ক্যারিয়ারের ৫০তম ফ্রিকিক গোল করেন। এছাড়া, মেসির ক্লাব ক্যারিয়ারে মোট গোলের(৬০৮) সংখ্যাও রোনালদোকে(৬০৬) ছাড়িয়ে যায়। ৯ নভেম্বর মেসি সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচে লালিগায় তার ৩৪তম হ্যাট্রিক করেন। যা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর স্প্যানিশ রেকর্ড স্পর্শ করে। ২৭ নভেম্বর বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মেসি বার্সেলোনার হয়ে ক্যারিয়ারে ৭০০তম ম্যাচ খেলেন এবং ম্যাচে গোল করেন। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসির গোল করা ৩৪তম প্রতিপক্ষ ছিল। ফলে, রাউল এবং ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর যৌথভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে (৩৩) গোল করার রেকর্ডটি মেসি ভেঙে ফেলেন। ২ ডিসেম্বর মেসি ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৬ বার ব্যালন ডি অর জয়ী হন। ৮ ডিসেম্বর মেসি লালিগায় তার রেকর্ড ৩৫তম হ্যাট্রিক করেন।

২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, মেসি এইবারের বিপক্ষে ম্যাচে ৪ গোল করেন। ১৪ জুন মায়োর্কার বিপক্ষে ম্যাচে গোল করে লালিগার ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১২ মৌসুমে কমপক্ষে ২০ বা, তার বেশি গোল করার রেকর্ড করেন। ৩০ জুন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচে পানেনকা শটে করা গোলটির মাধ্যমে মেসি বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারে ৭০০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১১ জুলাই মেসি লালিগায় মৌসুমের ২০তম অ্যাসিস্ট করে এক মৌসুমে কমপক্ষে ২০ অ্যাসিস্টের জাভির ২০০৮-০৯ মৌসুমের রেকর্ড স্পর্শ করেন। ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে আর্সেনালের থিয়েরি হেররির(২০০২-০৩) পর সেরা ৫ ইউরোপিয়ান লিগে এক মৌসুমে কমপক্ষে ২০ গোল ও ২০ অ্যাসিস্টের রেকর্ড করেন মেসি। মৌসুম শেষে মেসি সর্বোচ্চ ২৫ গোল ও সর্বোচ্চ ২১ অ্যাসিস্ট করেন ও রেকর্ড ৭ম বারের মতো পিচিচি ট্রফি জিতে তেলমো জারাকে ছাড়িয়ে যান।তবে, বার্সা রিয়াল মাদ্রিদের কাছে লালিগা হেরে ও বায়ার্ন মিউনিখের কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ৮-২ ব্যবধানে শোচনীয় হারে মৌসুম শেষে ট্রফিশূণ্য থাকে।

আগস্ট ২০২০ঃ বার্সার তৎকালীন বোর্ডের সাথে অসন্তুষ্টির কারণে মেসি বার্সেলোনা থেকে বিদায় নিতে চান। ২৫ আগস্ট তিনি ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে বোর্ডকে তার ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তার এই ঘোষণা বর্তমান, সাবেক খেলোয়াড় ও গণমাধ্যমের কাছে তীব্র সাড়া ফেলে। ২৬ আগস্ট বার্সেলোনার স্পোর্টিং ডিরেক্টর রামোন প্লানেস বলেন, মেসি শুধুমাত্র ৭০০ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লস পরিশোধ করে ক্লাব ছেড়ে যেতে পারবেন। চুক্তি অনুযায়ী শর্ত ছিল, মেসি যদি ৩১ মে ২০২০ এর আগে তার সিদ্ধান্ত জানাতেন, শুধু সেক্ষেত্রেই ফ্রিতে যেতে পারতেন। যদিও খেলোয়াড়ের প্রতিনিধিরা দাবি করেন নির্ধারিত সময়সীমা ৩১ আগস্ট হবে, যেহেতু ২০১৯-২০ মৌসুম দেরিতে শেষ হয়েছে। ৩০ আগস্ট লা লিগা বিবৃতি দেয়, মেসির চুক্তি ও রিলিজ ক্লস এখনো বিদ্যমান আছে।৪ সেপ্টেম্বর লিওনেল মেসির বাবা জর্জ মেসি লা লিগার উদ্দেশ্যে বিবৃতি দেন যে, মেসির রিলিজ ক্লস এখন আর বিদ্যমান নেই যেহেতু ২০১৯-২০ মৌসুম শেষে খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনুযায়ী চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। এর কিছু পরে লা লিগা ৩০ আগস্ট ঘোষিত বিবৃতিটি পুনরায় ঘোষণা করে। সেদিন সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যম গোল-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি চুক্তির শেষ মৌসুম খেলার সিদ্ধান্ত জানান। মেসি সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তিনি একাধিকবার ক্লাব প্রেসিডেন্ট বার্তোমেউকে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু বার্তোমেউ তাকে জানান, মৌসুম শেষে মেসি তার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ফলে, মেসির সামনে দুটি সুযোগ থাকে। হয়তো ক্লাবে থেকে যাওয়া অথবা, আদালতে ক্লাবের বিরুদ্ধে মামলা করা। মেসি জানান, তিনি জীবনে কখনো তার ক্লাবের বিপক্ষে আদালতে যাবেন না।

২০২০-২১ মৌসুম

২৭ সেপ্টেম্বর লা লিগায় ভিলারিয়ালের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করে মৌসুম শুরু করেন। এর দুই দিন পর লুইস সুয়ারেসের প্রস্থান নিয়ে মন্তব্য করে তিনি পুনরায় বোর্ডের সমালোচনা করেন। মেসি এ বিষয়ে বলেন, "এখন কোনো কিছুই আমাকে আর বিস্মিত করে না।"২০ অক্টোবর চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেরেঙ্কভারোসের বিপক্ষে ৫-১ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে পেনাল্টিতে গোল করে ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মেসি টানা ১৬ চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল করার রেকর্ড করেন। ২৫ নভেম্বর প্রকাশিত ২০২০ ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ও পরে সেরা ৩ জন খেলোয়াড়ের তালিকায় মেসি জায়গা করে নেন। ২৯ নভেম্বর মেসি ওসাসুনার বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে দলের চতুর্থ গোলটি করেন এবং ৪ দিন পূর্বে প্রয়াত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বার্সেলোনার জার্সির নিচে পরিহিত সাবেক ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের জার্সি প্রদর্শন করে স্ক্রিনে ম্যারাডোনার ছবির দিকে উভয় হাত উঠিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। উক্ত জার্সিটি ছিল ক্লাবটির হয়ে ১৯৯৩ সালে ম্যারাডোনার পরিহিত ১০ নং জার্সির অনুরূপ। মেসি ১৭ ডিসেম্বর ঘোষিত ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের তালিকায় রবের্ত লেভানদোভস্কিক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পরে ৩য় হন এবং ফিফা ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশে চতুর্দশতম বারের মতো জায়গা করে নেন। ২৩ ডিসেম্বর মেসি লালিগায় রিয়াল ভালাদোলিদের বিপক্ষে ম্যাচে তার বার্সেলোনা ক্যারিয়ারের ৬৪৪তম গোল করে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের হয়ে পেলের করা এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি ছাড়িয়ে যান। মেসির এই রেকর্ডটি বুদউয়েজার নামক বিয়ার কোম্পানি সকল গোলকিপারকে যাদের বিরুদ্ধে মেসি গোল করেছেন বিয়ারের বোতল পাঠিয়ে উদযাপন করে।

২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি স্প্যানিশ সুপারকোপার ফাইনালের ২-৩ গোলে পরাজিত ম্যাচে একদম শেষ মুহূর্তে বার্সেলোনার হয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো লাল কার্ড দেখেন। বার্সেলোনা পিএসজির কাছে পরাজিত হয়ে ১৪ মৌসুমের মধ্যে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ১৬ পর্যায় থেকে বাদ পড়ে। ১৫ মার্চ হুয়েস্কার বিপক্ষে ম্যাচে জোড়া গোল করে লালিগার ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মেসি টানা ১৩ মৌসুমে কমপক্ষে ২০ গোল করার রেকর্ড করেন। ২১ মার্চ, তিনি বার্সেলোনার হয়ে জাভির ৭৬৮ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছাড়িয়ে যান। ১৭ এপ্রিল অ্যাথলেটিক বিলবাও এর বিপক্ষে কোপা দেল রেই ফাইনালে ৪-০ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে জোড়া গোল করেন এবং টানা ১৩ মৌসুমে গোল করে জার্ড মুলারের টানা ১২ মৌসুমে কমপক্ষে ৩০ এর অধিক গোল করার রেকর্ড ভেঙে ফেলেন। এই ম্যাচে বার্সেলোনার হয়ে ৩৫তম টুর্নামেন্ট জয় করে মেসি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রায়ান গিগসের এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ ট্রফি জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করেন। ১৬ মে সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ১-২ ব্যবধানে পরাজিত ম্যাচে মেসি লালিগায় মৌসুমে তার ৩০তম গোল করেন। যেটি বার্সেলোনার জার্সি গায়ে তার সর্বশেষ গোল ও ম্যাচ হয়ে রইলো।

লালিগার সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়ে মেসি রেকর্ড ৮ম বারের মতো পিচিচি ট্রফি জিতেন এবং সেটি ছিল তার টানা ৫ মৌসুমে পিচিচি ট্রফি জয়। এর মাধ্যমে তিনি লালিগায় রিয়াল মাদ্রিদের আলফ্রেডো ডি স্টেফানো ও হুগো সানচেজের টানা ৪ বার জয়ের রেকর্ড ভাঙেন এবং সেরা ৫ ইউরোপিয়ান লিগের মধ্যে জিন পিয়েরে পাপিনের টানা ৫ বারের রেকর্ড স্পর্শ করেন।

১ জুলাই চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় মেসি ফ্রি এজেন্ট হয়ে পড়েন। বার্সেলোনার জটিল অর্থনৈতিক সমস্যার প্যাঁচে পড়ে মেসি বার্সেলোনার হয়ে নতুন চুক্তি করতে ব্যর্থ হন। ৫ আগস্ট বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, লিওনেল মেসি আর ক্লাবে থাকছেন না। যদিও উভয় পক্ষ চুক্তির ব্যাপারে একমত হয়েছিল এবং সেদিন নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল। কিন্তু, লালিগার অর্থনৈতিক কাঠামো ও বিধিনিষেধের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি বলে জানায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বার্সেলোনা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা ক্লাবের এই অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য পূর্ববর্তী বোর্ডকে দায়ী করেন। এর ৩ দিন পর, ন্যু ক্যাম্পে কান্না জর্জরিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মেসি আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিদায় নিশ্চিত করেন।

বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা মেসির বিদায়ের ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেছিলেন, "মেসি ক্লাবে থাকতে চেয়েছিল এবং ক্লাবও তাকে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু লালিগার নিয়মের জন্য সেটি সম্ভব হয়নি। লালিগার সংগতি নীতির সাথে মানিয়ে নিতে একটি চুক্তি করতে হতো। যেটাতে আগামী ৫০ বছরের জন্য ক্লাবের টিভি স্বত্ব বন্ধক রাখতে রাজি নই। এফ সি বার্সেলোনা যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বড়।"

প্যারিস সেন্ট জার্মেইন

২০২১-২২ মৌসুম

মেসি তার সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপে (বামে) এবং নেইমারের (ডানে) সাথে

১০ আগস্ট ২০২১, মেসি দুই বছরের চুক্তিতে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইনতে যোগ দেন। মেসি ২০২১-২২ মৌসুমে তার সেরা ফর্মের আশে পাশেও ছিলেন না । তিনি এই মৌসুমে মোট ২০২১-২২ মৌসুমে তিনি অবদান রেখেছেন ২৫ গোলে। প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট হিসাবে মেসির সবচেয়ে বেশি গোল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। এ প্রতিযোগিতায় ৭ ম্যাচ খেলেই ৫ গোল করেছেন তিনি। অন্যদিকে লিগ ওয়ানে ২৬ ম্যাচে খেলে মেসি করেছেন মাত্র ৬ গোল। [১৯০] তিনি মৌসুমে পিএসজির হয়ে মোট ৩৪ মাচে ১১ গোল করেন।

আন্তর্জাতিক কর্মজীবন

আর্জেন্টাইন-স্পেনীয় নাগরিক হিসেবে ২০০৪ সালে মেসিকে স্পেনের জাতীয় অনূর্ধ্ব ২০ ফুটবল দলে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু মেসি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ২০০৪ সালের জুনে, আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব ২০ দলের হয়ে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রথম প্রীতি খেলায় মাঠে নামেন।[১৯১] তিনি ২০০৫ দক্ষিণ আমেরিকান যুব চ্যাম্পিয়নশিপে আর্জেন্টিনা দলের হয়ে খেলেন, যেখানে আর্জেন্টিনা তৃতীয় হয়। ২০০৫ ফিফা যুব চ্যাম্পিয়নশিপে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয় এবং তিনি ৬টি গোল করে প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল এবং গোল্ডেন বুটের পুরস্কার জিতেন।[১৯২]

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট, ১৮ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে সিনিয়র দলে মেসির অভিষেক হয়। খেলার ৬৩তম মিনিটে বদলি হিসেবে খেলতে নেমে ৬৫তম মিনিটেই তাকে লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়। ম্যাচ-রেফারি মার্কাস মের্ক দাবি করেন, মেসি হাঙ্গেরির ডিফেন্ডার ভিলমস ভ্যানজাককে কনুই দিয়ে আঘাত করেছিলেন, যিনি মেসির শার্ট ধরে টানছিলেন। রেফারির সিদ্ধান্তটি ছিল বিতর্কিত। কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা দাবি করেন, রেফারির সিদ্ধান্তটি পূর্ব-সংকল্পিত ছিল।[১৯৩][১৯৪]

২০০৫ এর ৩ সেপ্টেম্বর, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে মেসি আবারও খেলতে নামেন। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ঐ খেলায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ০–১ ব্যবধানে হেরে যায়।[১৯৫] পেরুর বিপক্ষে খেলায় মেসি প্রথম একাদশের সদস্য হিসেবে খেলতে নামেন এবং খেলায় আর্জেন্টিনা জয় পায়। খেলা শেষে পেকারম্যান মেসিকে ‘‘রত্ন’’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন।[১৯৬] ২০০৬ সালের ১ মার্চ, আর্জেন্টিনার হয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একটি প্রীতি খেলায় মেসি প্রথম গোল করেন।[১৯৭]

২০০৬ বিশ্বকাপ

২০০৫–০৬ মৌসুমে ইনজুরির কারণে ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপে মেসির খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবুও মেসি দলে ডাক পান। বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব ২০ দলের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে একটি খেলায় তিনি ১৫ মিনিট খেলেন এবং অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে একটি প্রীতি খেলায় ৬৪তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামেন।[১৯৮][১৯৯] আইভরি কোস্টের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় মেসি সাইড বেঞ্চে বসেছিলেন।[২০০] পরের খেলায় সার্বিয়া এবং মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে খেলার ৭৪তম মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মেসি এবং ৭৮তম মিনিটে হের্নান ক্রেসপোর একটি গোলে সহায়তা করেন। খেলার ৮৮তম মিনিটে মেসি একটি গোল করেন। এতে করে, আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ এবং ইতিহাসের ৬ষ্ঠ কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। খেলায় আর্জেন্টিনা ৬–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২০১] নেদারল্যান্ডস-এ­র বিপক্ষে পরের খেলায় মেসি প্রথম দলে সুযোগ পান। খেলাটি ০–০ সমতায় শেষ হয়।[২০২] মেক্সিকোর বিপক্ষে রাউন্ড-১৬ এর খেলায় ৮৪তম মিনিটে মেসি বদলি হিসেবে খেলতে নামেন। খেলায় উভয় দল তখন ১–১ গোলে সমতায় ছিল। খেলতে নেমেই তিনি একটি গোল করলেও তা অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ে রদ্রিগুয়েজের গোলে আর্জেন্টিনা ২–১ ব্যবধানে জয় পায়।[২০৩][২০৪] কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে কোচ জোসে পেকারম্যান মেসিকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন। পেনাল্টি শুটআউটে ৪–২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনা হেরে যায় এবং টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে।[২০৫]

২০০৭ কোপা আমেরিকা

২০০৭ কোপা আমেরিকায় মেসি।

২০০৭ সালের ২৯ জুন, মেসি কোপা আমেরিকায় তার প্রথম খেলায় মাঠে নামেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ঐ খেলায় আর্জেন্টিনা ৪–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। খেলায় মেসি প্লেমেকার হিসেবে তার সামর্থের জানান দেন। তিনি হের্নান ক্রেসপোর একটি গোলে সহায়তা করেন। থেলার ৭৯তম মিনিটে মেসিকে উঠিয়ে তেভেজকে নামানো হয় এবং তেভেজ একটি গোল করেন।[২০৬]

আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় খেলা ছিল কলম্বিয়ার বিপক্ষে। খেলায় তিনি একটি পেনাল্টি জিতেন এবং পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান হের্নান ক্রেসপো। খেলায় আরও একটি গোলে তার ভূমিকা ছিল। ডিবক্সের বাহিরে মেসিকে ট্যাকল করা হলে রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজান এবং আর্জেন্টিনার পক্ষে ফ্রি-কিক দেন। ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন রিকুয়েলমে। খেলায় আর্জেন্টিনা ৪–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে। এতে করে, আর্জেন্টিনার কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়।[২০৭]

তৃতীয় খেলায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে, কোচ মেসিকে বিশ্রামে রাখেন। খেলার ৬৪তম মিনিটে এস্তেবান­ কাম্বিয়াসোর বদলে তিনি মাঠে নামেন। খেলাটি তখন ০–০ গোলে সমতায় ছিল। তিনি হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানোর গোলে সহায়তা করেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ১–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২০৮]

কোয়ার্টার ফাইনালে, আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় পেরুর। রিকুয়েলমের­ পাস থেকে মেসি টুর্নামেন্টে তার দ্বিতীয় গোল করেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ৪–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২০৯] সেমি ফাইনালে মেক্সিকোর বিপক্ষে, মেসি একটি গোল করেন এবং দলকে ৩–০ ব্যবধানের জয় এনে দেন।[২১০] ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে, আর্জেন্টিনা ৩–০ ব্যবধানে পরাজিত হয়।[২১১] মেসি টুর্নামেন্টের কনিষ্ঠ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।

২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক

২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলায় মেসি।

২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে খেলার জন্য বার্সেলোনা মেসিকে ছাড়পত্র দিতে রাজি হয়।[২১২] তিনি আর্জেন্টিনা দলে যোগদান করেন এবং আইভরি কোস্টের বিপক্ষে থেলায় প্রথম গোল করে দলকে ২–১ ব্যবধানে জয় এনে দেন।[২১২] নেদারল্যান্ডস-এ­র বিপক্ষে দ্বিতীয় থেলায় তিনি একটি গোল করেন এবং অতিরিক্ত সময়ে এঙ্গেল ডি মারিয়ার একটি গোলে সহায়তা করে দলকে ২–১ ব্যবধানের জয় এনে দেন।[২১৩] সেমি ফাইনালে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে তিনি খেলতে নামেন এবং দলকে ৩–০ ব্যবধানের জয় এনে দেন। ফাইনালে, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে এঙ্গেল ডি মারিয়ার একমাত্র গোলটিতে তিনি সহায়তা করেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ১–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে এবং স্বর্ণপদক জিতে।[২১৪]

২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব

২০০৯ সালের ২৮ মার্চ, ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলায় মেসি ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলতে নামেন। আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার হিসেবে এটি ছিল ম্যারাডোনার প্রথম খেলা। খেলায় আর্জেন্টিনা ৪–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। খেলার প্রথম গোলটি করেন মেসি।[২১৫] ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে মেসি মোট ১৮টি খেলায় মাঠে নামেন এবং চারটি গোল করেন।[২১৬]

২০১০ বিশ্বকাপ

২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে খেলায় মেসি।

২০১০ বিশ্বকাপে মেসি ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন। এই প্রথম বড় কোন প্রতিযোগিতায় তিনি ১০ নম্বর জার্সি পরে নামেন।[২১৭] বিশ্বকাপের প্রথম খেলায়, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে খেলার পুরোটা সময়ই তিনি মাঠে ছিলেন। তিনি গোল করার অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করেছিলেন, কিন্তু তার সবকয়টি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন নাইজেরিয়ান গোলরক্ষক ভিনসেন্ট এনইয়েমা। খেলায় আর্জেন্টিনা ১–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২১৮] পরের খেলায় কোরিয়া রিপাবলিকের বিপক্ষে মেসি মাঠে নামেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ৪–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। ম্যারাডোনার­ অধীনে তিনি মূলত একজন আক্রমণাত্মক মাঝমাঠের খেলোয়াড় বা প্লেমেকার হিসেবে খেলেছিলেন।[২১৭][২১৯][২২০] খেলার সবকটি গোলেই তার ভূমিকা ছিল। তার সহায়তায় গঞ্জালো হিগুয়েইন খেলায় হ্যাট্রিক করেন।[২২১] বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার তৃতীয় ও গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় গ্রিসের বিপক্ষে মেসি অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ২–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। কোন গোল না করলেও এই জয়ে মেসির বড় ভূমিকা ছিল, যার ফলে তাকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত করা হয়।[২২২]

রাউন্ড ১৬-তে, মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলায় কার্লোস তেভেজের একটি গোলে মেসি সহায়তা করেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ৩–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২২৩] কোয়ার্টার ফাইনালে, জার্মানির বিপক্ষে ৪–০ ব্যবধানে হেরে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়।[২২৪] প্রতিযোগিতার গোল্ডেন বল পুরস্কারের জন্য ১০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় মেসি জায়গা পান। ফিফার টেকনিক্যাল গবেষণা দল মেসির সক্ষমতা সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলে, ‘‘অসাধারণ গতি, দলের জন্য সৃজনশীলতা, ড্রিবলিং, শুটিং, পাসিং এ সবগুলোতেই তিনি দক্ষ এবং দর্শনীয়।’’[২২৫]

২০১১ কোপা আমেরিকা, ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব এবং প্রদর্শনী খেলাসমূহ

২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হাট্ট্রিক করেন মেসি।

২০১০ সালের ১৭ নভেম্বর, দোহায় ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রীতি খেলার শেষ মিনিটে মেসি একটি গোল করেন এবং দলকে ১–০ ব্যবধানের জয় এনে দেন।[২২৬] ২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়, পর্তুগালের বিপক্ষে খেলার শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন মেসি। খেলায় আর্জেন্টিনা ২–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। প্রথম গোলটিতে সহায়তা করেছিলেন তিনি।[২২৭]

২০১১ কোপা আমেরিকায় মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগীতায় তিনি কোন গোল করতে না পারলেও তিনটি গোলে সহায়তা করেন। ১ জুলাই, বলিভিয়ার বিপক্ষে প্রথম খেলাটি ১–১ সমতায় শেষ হয়। মেসিকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত করা হয়।[২২৮] কলম্বিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় খেলাটি গোলশূন্য ড্র হয়।[২২৯] তৃতীয় খেলায়, কোস্টারিকার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ৩–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। এই খেলায়ও মেসিকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত করা হয়।[২৩০] কোয়ার্টার ফাইনালে, উরুগুয়ের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে ৫–৪ ব্যবধানে হেরে আর্জেন্টিনাকে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয়। আর্জেন্টিনার পক্ষে প্রথম পেনাল্টি শট নিয়ে মেসি গোল করেন।[২৩১]

কোপা আমেরিকায় অসফল হওয়ার পর বাতিস্তাকে সরিয়ে আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেয়াকে। ২০১১ সালের আগস্টে, সাবেয়া মেসিকে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব প্রদান করেন।[২৩২] ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি তার প্রথম হ্যাটট্রিক করেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ৩–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২৩৩] ২০১২ সালের ৯ জুন, আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে ঐ খেলায় আর্জেন্টিনা ৪–৩ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২৩৪] এতে করে, আর্জেন্টিনার হয়ে ৭০ খেলায় মেসির মোট গোল সংখ্যা দাড়ায় ২৬ এবং ২০১২-তে আর্জেন্টিনার হয়ে ৩ খেলায় তার গোল সংখ্যা দাঁড়ায় ৭। এই গোলটি তার রেকর্ডভঙ্গকারী মৌসুমের ৮২তম গোল ছিল। এ পর্যন্ত মোট ২৬ গোল করে তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন।[২৩৫]

৭ সেপ্টেম্বর, প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলায় মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে তার ২৮তম গোল করেন। খেলাটিতে আর্জেন্টিনা ৩–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। এতে করে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থানে চলে যায় আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে গোলটি ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ৮ খেলায় মেসির চতুর্থ গোল ছিল। এতে করে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন মেসি।[২৩৬] এই গোলের মাধ্যমে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বশেষ ছয় খেলার সবকটিতে মোট দশ গোল করেন তিনি।[২৩৭] ২০১২ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে ৯ খেলায় ১২ গোল করেন মেসি।[২৩৮]

২০১৩ সালের ২২ মার্চ, ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলায় পেনাল্টি থেকে মেসি ২০১৩ সালে তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন। এছাড়া, ওই খেলায় তিনি গঞ্জালো হিগুয়েইয়েনের দুইটি গোলে সহায়তাও করেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে জয় লাভ করে।[২৩৯] ২০১৩ সালের ১৪ জুন, মেসি গুয়াতেমালার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে দলকে ৪-০ গোলের জয় এনে দেন এবং এর মাধ্যমে তিনি আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ম্যারাডোনার ৩৪ গোলকে ছাড়িয়ে যান এবং ৩৫ গোল নিয়ে এর্নান ক্রেসপোর সাথে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করতে থাকেন।[২৪০][২৪১] প্যারাগুয়ের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে জোড়া গোল করে ক্রেসপোকেও ছাড়িয়ে যান মেসি। এছাড়া, ওই খেলায় তিনি আগুয়েরোর একটি গোলে সহায়তায়ও করেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ৫-২ গোলে জয় লাভ করে এবং দুইটি খেলা হাতে রেখেই ২০১৪ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।[২৪২]

মেসি তার ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব অভিযান শেষ করেন ১০ গোল নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে।[২৪৩] ২০১৪ সালের ৭ জুন, স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে মেসি একটি গোল করেন এবং দলকে ২-০ গোলের জয় এনে দেন। এটিই ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে তার প্রথম গোল।[২৪৪]

২০১৪ বিশ্বকাপ

২০১৪ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা দলে মেসি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৫ জুন, গ্রুপ পর্বের প্রথম খেলায় বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পায় আরজেন্টিনা। খেলার ৬৫তম মিনিটে তিনি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রক্ষণভাগের তিন জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন।[২৪৫] ২০০৬ বিশ্বকাপে সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রোর বিপক্ষে গোল করার আট বছর পর করা এই গোলটি বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় তার দ্বিতীয় গোল। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় খেলায় তিনি ইরানের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে আর্জেন্টিনার পক্ষে একমাত্র জয়সূচক গোল করেন। প্রায় ২৫ মিটার দূর থেকে নেয়া শটে বলটি সামান্য বেঁকে গোলপোস্টের বাম পাশের উপরের কোণা দিয়ে জলে জড়ায়। এই গোলটি ছিল তার ৪০তম আন্তর্জাতিক গোল। এই জয়ের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে।[২৪৬][২৪৭] ২৫ জুন, গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করার মাধ্যমে মেসি প্রতিযোগিতায় তার গোল সংখ্যা ৪২-এ নিয়ে যান। খেলায় আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে জয় লাভ করে এবং গ্রুপের প্রথম স্থানে থেকে গ্রুপপর্ব শেষ করে।[২৪৮] গ্রুপ পর্বের ৩টি খেলায়ই সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মেসি।[২৪৯][২৫০][২৫১]

২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির ম্যাটস হুমেলসের সাথে বল দখলের লড়াইয়ে মেসি।

১৬ দলের পর্বে আরজেন্টিনা মুখোমুখি হয় সুইজারল্যান্ডের। খেলাটির ৯০ মিনিট গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হলে তা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় এবং অতিরিক্ত সময়ে দি মারিয়ার করা একমাত্র গোলে সহায়তা করেন মেসি। এই খেলায় সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি গ্রুপ পর্বের সবকয়টিসহ টানা চারটি খেলায় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পান। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে জয়ের মাধ্যমে আরজেন্টিনা সেমি ফাইনালে খেলার সুযোগ করে নেয়। সেমি ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলাটি অমিমাংসিতভাবে শেষ হলে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায়। মেসি প্রথম পেনাল্টি নেন এবং তা গোলে পরিণত করার মাধ্যমে আর্জেন্টিনাকে জয়লাভে সাহায্য করেন।[২৫২] ফাইনালে আরজেন্টিনা জার্মানির মুখোমুখি হয়। খেলায় আর্জেন্টিনা দলে কিছু গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে। মেসির একটি শট গোলবারের বাহিরে দিয়ে চলে যায়। এছাড়া আর্জেন্টিনার একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। ৯০ মিনিট শেষে খেলাটি অমিমাংসিত থাকলে ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। খেলার শেষের দিকে মারিও গোটজে'র করা একমাত্র গোলে জয় পায় জার্মানি। বিশ্বকাপ না জিতলেও মেসিকে প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করা হয়।[২৫৩] যদিও তাঁর এই পুরস্কার জয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।[২৫৪][২৫৫]

২০২২ বিশ্বকাপ

২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সাথে মেসি।

মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা জয় করে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ। মেসি গোল্ডেন বল জেতেন। তিনি ২০২২ বিশ্বকাপে ৬ টি গোল করেন। এখনকার সময়ে মেসিকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বলা হয়। ২০২৩ সালে ক্লাব ও জাতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাকে ফিফা বর্ষসেরা এর পুরস্কারে পুরষ্কৃত করা হয়।মেসি তার খেলোয়াড় জীবনে সব কিছুই অর্জন করেছে যা একজন সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন।

কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ জয়

১৪ জুন ২০২১-এ, ব্রাজিলে ২০২১ কোপা আমেরিকার আর্জেন্টিনার উদ্বোধনী গ্রুপ ম্যাচে চিলির বিপক্ষে ১-১ ড্রয়ে ফ্রি কিক থেকে গোল করেন মেসি। ২১ জুন, মেসি তার ১৪৭ তম ম্যাচে খেলেন এবং টুর্নামেন্টের তাদের তৃতীয় খেলায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ১-০ জয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি খেলার জন্য জাভিয়ের মাশ্চেরানোর রেকর্ডের সমান করেন। এক সপ্তাহ পরে, তিনি রেকর্ডটি ভেঙে দেন যখন তিনি তার দলের চূড়ান্ত গ্রুপ ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জয়লাভ করেন, পাপু গোমেজের প্রথম গোলে সহায়তা করেন এবং পরে দুটি গোল করেন। ৩ জুলাই, প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জয়ে মেসি দুবার সহায়তা করেন এবং ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন। ৬ জুলাই, কলম্বিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ১-১ গোলে ড্র করে, মেসি তার দেশের হয়ে তার ১৫০তম উপস্থিতি করেন এবং টুর্নামেন্টে তার পঞ্চম অ্যাসিস্ট নথিভুক্ত করেন, লাউতারো মার্টিনেজের জন্য একটি কাট-ব্যাক, যা তার নয়টি গোল অবদানের রেকর্ডের সাথে মিলে যায়। পাঁচ বছর আগে থেকে একটি একক টুর্নামেন্টে; পরে তিনি আর্জেন্টিনার শেষ ৩-২ পেনাল্টি শুট-আউট জয়ে তার স্পট কিকে গোল করে তার পঞ্চম আন্তর্জাতিক ফাইনালে এগিয়ে যান। ১০ জুলাই, আর্জেন্টিনা ফাইনালে স্বাগতিক ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ১-০ গোলে পরাজিত করে, মেসিকে তার প্রথম বড় আন্তর্জাতিক শিরোপা এবং ১৯৯৩ সালের পর আর্জেন্টিনার প্রথম, সেইসাথে তার দেশের যৌথ রেকর্ড ১৫ তম কোপা আমেরিকা সামগ্রিক করে।আর্জেন্টিনার করা ১২ টি গোলের মধ্যে নয়টিতে মেসি সরাসরি জড়িত ছিলেন, চারটি করেছেন এবং পাঁচটিতে সহায়তা করেছেন; তিনি তার পারফরম্যান্সের জন্য টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন, যা তিনি নেইমারের সাথে ভাগ করে নেন। এছাড়াও তিনি কলম্বিয়ার লুইস দিয়াজের সাথে চার গোল করে সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে সমাপ্ত হন, মেসিকে গোল্ডেন বুট পুরস্কৃত করা হয় কারণ তার আরও সহায়তা ছিল। ৯ সেপ্টেম্বর, মেসি ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বলিভিয়ার বিপক্ষে হোম জয়ে একটি হ্যাটট্রিক করেন যা তাকে ৭৯ গোল সহ দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পুরুষ আন্তর্জাতিক স্কোরার হিসেবে পেলের উপরে চলে যায়।

২০২২ সালের ওয়েম্বলিতে ওয়েম্বলিতে কনমেবল-উয়েফা কাপ অফ চ্যাম্পিয়নদের তৃতীয় সংস্করণের ফাইনালেসিমাতে, মেসি ইতালির বিরুদ্ধে ৩-০ ব্যবধানে জয়ে দুবার সহায়তা করেছিলেন এবং আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় ট্রফি অর্জন করে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন। সিনিয়র লেভেল এরপর মেসি ৬ জুন এস্তোনিয়ার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে ৫-০ গোলের জয়ে আর্জেন্টিনার পাঁচটি গোলের সাথে এটি অনুসরণ করেন, সর্বকালের আন্তর্জাতিক পুরুষদের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের মধ্যে ফেরেঙ্ক পুস্কাসকে ছাড়িয়ে যান।

২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে মেসি আর্জেন্টিনার উদ্বোধনী খেলায় পেনাল্টিতে গোল করেন, সৌদি আরবের কাছে ২-১ হারে, মেক্সিকোর বিরুদ্ধে তাদের পরের ম্যাচে যেখানে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে জিতেছিল, মেসির ১ গোল আর এনজো ফার্নান্দেজের গোলে । অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ রাউন্ড ১৬ খেলায়, মেসির আর্জেন্টিনা ২-১ ব্যবধানে জিতে। জয়ের প্রথম গোলটি করেন মেসি যা ছিল তার ক্যারিয়ারে ১০০০ তম ম্যাচ , ইকুয়েডরের ইভান হুর্তাডোর করা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফিফা বিশ্বকাপ এবং জাতীয় দলের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে, মেসি আর্জেন্টিনার নাহুয়েল মোলিনার হয়ে রিভার্স পাস দিয়ে প্রথম গোলে সহায়তা করেন এবং অতিরিক্ত সময়ের পরে খেলা ২-২ ব্যবধানে শেষ হলে পেনাল্টি থেকে গোল করেন। পেনাল্টি শুটআউটে আর্জেন্টিনা ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছিল, মেসি প্রথম পেনাল্টিতে গোল করেছিলেন। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে, মেসি বিশ্বকাপের রেকর্ড- ২৫ তম ম্যাচ খেলতে নামে, যা জার্মানির লোথার ম্যাথাউসের সাথে সমতা আনেন, এবং ম্যাচটি জিতে ৩-০ তে।। জুলিয়ান আলভারেজের করা আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোলে সহায়তা করার আগে পেনাল্টি দিয়ে উদ্বোধনী গোলটি করেন। তার ১১ তম বিশ্বকাপ গোলের মাধ্যমে, মেসি বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। আর্জেন্টিনা ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে উঠেছিল, মেসি বলেছিলেন যে এটিই হবে তার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ । ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালে, মেসি লুসাইল স্টেডিয়ামে তার রেকর্ড ২৬ তম বিশ্বকাপ ম্যাচে উপস্থিত হন। তিনি একটি পেনাল্টি দিয়ে আর্জেন্টিনার উদ্বোধনী গোলটি করেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ১৮৮৬ সালে শেষ-১৬ রাউন্ডের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একটি বিশ্বকাপের প্রতিটি রাউন্ডে একটি করে গোল করা হয়। ফ্রান্স ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে, যিনি দুই মিনিটের মধ্যে দুবার গোল করেছিলেন, আর্জেন্টিনার শেষ দুই গোল শোধের পর, মেসি আর্জেন্টিনার লিড পুনরুদ্ধার করতে অতিরিক্ত সময়ে আবার গোল করবেন, এমবাপ্পে আবার ফ্রান্সের সমতা করেছিলেন । অতিরিক্ত সময়ের পর ৩-৩ গোলে সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। শুট-আউটে মেসি আর্জেন্টিনার প্রথম গোলটি করেন, আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত ৪-২ ব্যবধানে জয়লাভ করে, ট্রফির জন্য জাতির ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটে। মেসি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের জন্য গোল্ডেন বল পেয়েছিলেন, এটি তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুবার জিতেছিলেন। তিনি গোল্ডেন বুট রেসে সাত খেলায় সাত গোল করে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন, এমবাপ্পের থেকে এক গোলে পিছিয়ে। ফাইনালে তার উপস্থিতি এবং দুটি গোলের মাধ্যমে, মেসি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি খেলার খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাথাউসকে ছাড়িয়ে যান (২৬), এবং পেলে সবচেয়ে বেশি গোল করে।

খেলার ধরন

একই খেলার ধরন ও দৈহিক উচ্চতার কারণে মেসিকে প্রায়ই তার স্বদেশি দিয়েগো ম্যারাডোনা'র সাথে তুলনা করা হয়।[২৫৬] মেসি অন্যান্য খেলোয়াড়দের তুলনায় অধিক ক্ষিপ্র এবং তিনি অতি দ্রুত গতিপথ পরিবর্তন করতে পারেন। এছাড়াও তিনি কৌশলে ট্যাকল এড়িয়ে যেতে পারেন।[২৫৭] তার ছোট ও শক্তিশালী পায়ের কারণে অতি অল্প সময়ে তিনি অধিক গতি অর্জন করতে পারেন। তার দ্রুতগতির পা তাকে গতিশীল অবস্থায়ও ড্রিবলিং করার সক্ষমতা প্রদান করে।[২৫৮] প্রাক্তন বার্সেলোনা ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা বলেন, ‘‘মেসিই একমাত্র খেলোয়াড় যে বল ছাড়া যত দ্রুত দৌড়াতে পারে, বলসহ তার চেয়েও বেশি দ্রুত দৌড়াতে পারে।’’ পেপ আরোও বলেন “ আপনারা মেসিকে বর্ননা করতে যাবেন না, শুধু তাকে ও তার খেলাকে উপভোগ করেন। [২৫৯] ম্যারাডোনার­ মত মেসিও একজন বাম পায়ের খেলোয়াড়।[২৬০] বল কাটাতে এবং দৌড়াতে তিনি সাধারণত তাঁর বাম পায়ের বহির্দেশ ব্যবহার করে থাকেন। সতীর্থদের সহায়তা করতে ও 'পাস' দিতে এবং ফিনিশিং-এ তিনি সাধারণত তার বাম পায়ের ভেতরের অংশ ব্যবহার করেন।[২৫৭]

মেসিকে প্রায়ই গোলপোস্টের দিকে বল নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায়। রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের কাটিয়ে আক্রমণ করতে তিনি সমর্থও হন। তাঁকে মধ্য মাঠের দাগ থেকে অথবা মাঠের ডান পার্শ্ব দিয়ে আক্রমণ করতে বেশি দেখা যায়। মেসিকে বহুমুখী খেলোয়াড়ও বলা হয়ে থাকে। জাভিইনিয়েস্তার সাথে পাসিং ও সৃজনশীলতায় তার চমত্‍কার সমন্বয় রয়েছে।[২৬১][২৬২][২৬৩] এছাড়া তিনি নির্ভুলভাবে সেট-পিস্ ও পেনাল্টি কিকও নিতে পারেন।[২৬৪] মেসির বল কাটানোর সক্ষমতা প্রসঙ্গে ম্যারাডোনা বলেন, ‘‘বল তার পায়ের সাথে আঠার মত লেগে থাকে। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক কিংবদন্তিকে দেখেছি, কিন্তু মেসির মত বল নিয়ন্ত্রণ করতে কাউকে দেখিনি।’’[২৬৫] ম্যারাডোনা আরও বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন মেসিই বর্তমানে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।[২৬৬][২৬৭]

‘‘তাঁর ব্যক্তিত্ব তাঁর কাছে এবং আমার ব্যক্তিত্ব আমার কাছে। তাঁর খেলা তাঁর কাছে এবং আমার খেলা আমার কাছে। আমিও তাঁর মত বড় দলে খেলি। সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা আলাদা। কিন্তু বর্তমানে সে-ই বিশ্বের সেরা।’’

ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, সেপ্টেম্বর ২০১১[২৬৮]

কৌশলগতভাবে মেসি দলের আক্রমণভাগে খেলে থাকেন, তবে কখনও কখনও তিনি প্লেমেকারের দায়িত্বও পালন করেন।[২৬৯] মেসি উইং বা মাঠের মাঝখান দিয়ে আক্রমণ করতে পছন্দ করেন। তিনি বাম-উইঙ্গারফরোয়ার্ড হিসেবে খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন। প্রাক্তন বার্সেলোনা ম্যানেজার ফ্রাংক রাইকার্ড তাকে ডান-উইংয়ে নিয়ে যান। তিনি ভেবেছিলেন, এই অবস্থানে থেকে মেসি আরও সহজে বিপক্ষ দলের রক্ষণভাগ ভেদ করে মধ্য মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন এবং বাম পা দিয়ে গোলপোস্টে বাঁকানো শট নিতে পারবেন।[২৬৯] গার্দিওলার অধীনে মেসি ফলস-৯ অবস্থানে খেলেছিলেন। যা মেসির প্রবৃত্তির সাথে মিলে গিয়েছিল।[২৭০] আপাতদৃষ্টিতে, মেসি একজন ফরোয়ার্ড বা লোন স্ট্রাইকার হিসেবে খেললেও তিনি কখনও কখনও রক্ষণভাগ পর্যন্ত চলে যান। অন্যান্য ফরোয়ার্ড , উইঙ্গার ও আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের সহায়তা করার জন্য বা আক্রমণাত্মক দৌড় শুরু করার জন্য তিনি এ কাজ করে থাকেন।[২৭০] আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে মেসি সাধারণত ফ্রন্ট লাইনের যেকোন অবস্থানে খেলে থাকেন। ফরোয়ার্ড বা উইঙ্গার হিসেবে শুরু করলেও তিনি মাঠের অন্যান্য অবস্থানেও খেলেন। ম্যারাডোনার অধীনে তিনি মূলত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার বা প্লেমেকার হিসেবে খেলেছিলেন।[২১৭][২১৯][২২০] মেসি প্রকাশ করেন যে তিনি সাবেক আর্জেন্টাইন প্লেমেকার পাবলো আইমারের ভক্ত।[২৭১]

ফুটবলের বাইরে

লিওনেল মেসি
২০১১ সালে মেসি
জন্ম
লিওনেল আন্দ্রেস মেসি

(1987-06-27) ২৭ জুন ১৯৮৭ (বয়স ৩৬)
রোজারিও, সান্তা ফে, আর্জেন্টিনা
জাতীয়তাআর্জেন্টিনীয়
পেশাফুটবলার
দাম্পত্য সঙ্গীআন্তোনেল্লা রক্কুজ্জো
সন্তানথিয়াগো মেসি,মাতেও মেসি,সিরো মেসি
পিতা-মাতাহোর্হে ওরাসিও মেসি (বাবা)
সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি (মা)
আত্মীয়মাক্সি বিয়ানকুচ্চি (খুড়তুতো ভাই)
এমানুয়েল বিয়ানকুচ্চি (খুড়তুতো ভাই)
ওয়েবসাইটঅফিসিয়াল ওয়েবসাইট

ব্যক্তিগত জীবন

মাকারিনা লেমোস নামক এক মেয়ের সাথে মেসির সম্পর্ক ছিল। মেসি পরে বলেছিলেন, ২০০৬ বিশ্বকাপের আগে ইনজুরি সারিয়ে যখন তিনি আর্জেন্টিনায় যান, তখন মেয়ের বাবা ঐ মেয়ের সাথে মেসিকে পরিচয় করিয়ে দেন।[২৭২][২৭৩] লুসিয়ানা স্যালাজার নামক এক আর্জেন্টাইন মডেলের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল।[২৭৪][২৭৫] ২০০৯ সালে ক্যানাল ৩৩ টেলিভেশন চ্যানেলের ‘‘হ্যাটট্রিক বার্সা’’ নামক অনুষ্ঠানে মেসি বলেন, ‘‘আমার একজন মেয়েবন্ধু আছে এবং সে আর্জেন্টিনাতে থাকে। আমি সুখী এবং নিশ্চিন্তে আছি।’’[২৭৫] সিজেস কার্নিভালে, অ্যান্তোনেলা রকুজ্জো[২৭৬] নামক ঐ মেয়ের সাথে মেসিকে দেখা যায়। রকুজ্জো রোজারিওর স্থানীয় অধিবাসী।[২৭৭] ২০১২ সালের ২ জুন, ইকুয়েডরের বিপক্ষে মেসি একটি গোল করেন ও একটি গোলে সহায়তা করেন। গোল করার পর তিনি বলটি তার জার্সির ভেতর ঢুকিয়ে নেন, যা তার মেয়েবন্ধুর গর্ভবতী হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। রকুজ্জো তার টুইটারে পোস্ট করেন যে তিনি সেপ্টেম্বরে সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন।[২৭৮] মেসি নিশ্চিত করেন যে এটি একটি ছেলে শিশু, সে অক্টোবরে জন্মগ্রহন করবে এবং তিনি ও তার মেয়েবন্ধু শিশুটির নাম থিয়াগো রাখার পরিকল্পনা করেছেন। তবে, থিয়াগোর জন্ম একটু পরেই হয়। ২ নভেম্বর, থিয়াগো জন্মগ্রহণ করে এবং মেসি সন্তানের বাবা হন। বার্সেলোনার দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করা হয়, ‘‘লিও মেসি একজন বাবা।’’ পাশাপাশি, মেসি তার ফেসবুক পাতায় পোস্ট করেন, ‘‘আজ আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ, আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে এবং এই উপহারের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।’’[১৩][২৭৯]

মেসির দুজন খুড়তুত ভাই রয়েছে: ম্যাক্সি, প্যারাগুয়ের ক্লাব অলিম্পিয়াতে উইঙ্গার হিসেবে খেলেন এবং এমানুয়েল বিয়ানচুচ্চি, প্যারাগুয়ের ইন্দিপেনদিয়েন্তে ক্লাবে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন।[২৮০][২৮১]

আমেরিকান লেখক রাইট থমসন এর মতে, মেসি স্পেনে থাকা সত্ত্বেও রোজারিও এবং তার পরিবারের সাথে সুনিবিড় বন্ধন রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছেন। তার কথার মাধ্যমেই এই বন্ধন সম্পর্কে বোঝা যায়। আজকের দিনে, মেসি কিছুটা আলাদা ধরনের স্পেনীয় ভাষায় কথা বলেন, যেমনটি রোজারিওর স্থানীয় মানুষেরা বলে থাকেন। তিনি প্রতিনিয়তই রোজারিওতে তার কিছু বন্ধুর সাথে ফোন বা বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকেন, যাদের অধিকাংশই ‘‘দ্য মেশিন অব ‘৮৭’’ এর সদস্য ছিলেন। একদিন বুয়েনোস আইরেসে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ট্রেনিং শেষে তিনি পরিবারের সাথে ডিনার করতে এবং রাত কাটানোর জন্য গাড়িতে করে রোজারিওর উদ্দেশ্য যাত্রা করেন এবং পরের দিন ট্রেনিং শুরু হওয়ার আগে বুয়েনোস আইরেসে ফিরে আসেন। মেসি রোজারিওতে তার পুরনো বাড়ির মালিকানাও রেখে দিয়েছেন, যদিও তার পরিবার বাড়িটি আর ব্যবহার করেনা।

দানশীলতা

২০০৭ সালে, মেসি প্রতিষ্ঠা করেন ‘‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’’। এই সংস্থা সুরক্ষিত নয় এমন শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখে।[২৮২][২৮৩] শৈশবে মেসিরও শারীরিক সমস্যা ছিল, তাই এই সংস্থা আর্জেন্টিনার রোগাক্রান্ত শিশুদের স্পেনে নিয়ে গিয়ে চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করে এবং যাতায়াত, চিকিত্‍সা ও অন্যান্য ব্যয় বহন করে। এই সংস্থার জন্য মেসি নিজে চাঁদা সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়াও হার্বালাইফ নামক একটি বহুমুখী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান লিও মেসি ফাউন্ডেশনের সহায়তা করে থাকে।

২০১০ সালের ১১ মার্চ, মেসিকে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[২৮৪] শুভেচ্ছা দূত হিসেবে মেসির লক্ষ্য, শিশুদের অধিকার রক্ষা। এক্ষেত্রে মেসিকে সহায়তা করে থাকে তার নিজের ক্লাব বার্সেলোনা­বার্সেলোনাও ইউনিসেফের সাথে নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িত।[২৮৫] এছাড়া মেসি তার সাবেক ক্লাব নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজের স্টেডিয়ামের ভেতরে ক্লাবের যুব প্রকল্পের জন্য একটি শয়নাগার তৈরিতে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করেন, এমনকি একটি নতুন ব্যায়ামাগারও তৈরি করে দেন। এতে করে লিওয়েল’স-এর সাথে মেসির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। তারা মেসির সন্তান থিয়াগোকে একটি বিশেষ সদস্যপত্র দেওয়ার পরিকল্পনাও করেন।[১৩]

২০১৩ সালের মার্চে, মেসি তার জন্মভূমি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে একটি শিশু হাসপাতালে ৬০০,০০০ ইউরো অনুদান প্রদান করেন। এই অর্থ ব্যয় হয় ভিক্টর জে ভিলেলার শিশু হাসপাতালের অনকোলজি ইউনিটের পুনঃসংস্কারের কাজে। সেইসাথে, ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের জন্য বার্সেলোনায় ভ্রমণের জন্যেও এই অর্থ ব্যয় করা হয়।[২৮৬]

সম্পত্তি

২০১০ সালের মার্চে, ফুটবল ভিত্তিক ফরাসি ম্যাগাজিন ফ্রান্স ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবলারদের তালিকায় মেসিকে শীর্ষস্থানে রাখে। ২৯.৬ মিলিয়ন পাউন্ড (৩৩ মিলিয়ন ইউরো) বার্ষিক আয় নিয়ে ডেভিড বেকহ্যামক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে তিনি শীর্ষস্থান দখল করেন। বেতন, বোনাস ও মাঠের বাইরের বিভিন্ন মাধ্যম হতে তিনি এই অর্থ আয় করে থাকেন।[২৮৭][২৮৮] তার সর্বমোট সম্পত্তি হিসাব করা হয়েছে ১১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।[২৮৯] ২০১৪ সালের মে মাসে, ফোর্বস কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পেছনে থেকে দ্বিতীয় হন মেসি। বিগত ১২ মাসে তার মোট আয় ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।[২৯০]

পারিশ্রমিক

২০১২ সালের ডিসেম্বরে, বার্সেলোনা ঘোষণা করে যে মেসি পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ণ করতে যাচ্ছেন যার মাধ্যমে তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনায় থাকবেন। এই চুক্তিতে তার পারিশ্রমিক বাড়িয়ে করা হয় ১৬ মিলিয়ন ইউরো (২১.২ মিলিয়ন ডলার), যা তাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ফুটবলারে পরিণত করে। স্পেনে এই স্তরের আয়ের আয়কর বন্ধনী ৫৬% হওয়ায়, বার্সাকে মেসির পক্ষে আয়কর দিতে হবে ২০ মিলিয়ন ইউরোর (২৬.৫ মিলিয়ন ডলার) চেয়ে সামান্য বেশি।[২৯১]

মিডিয়া

মেসির জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের একটি উদাহরণ। ছবিটি ভারতে তোলা হয়েছে।

প্রো ইভলিউশন সকার ২০০৯ ও প্রো ইভলিউশন সকার ২০১১ ভিডিও গেম দুটির কভারে মেসির ছবি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, গেম দুটির প্রচারমূলক অভিযানের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন।[২৯২][২৯৩] প্রো ইভলিউশন সকার ২০১০ গেমটির কভারে ফের্নান্দো তোরেসের[২৯৪] সাথে মেসির ছবি ব্যবহার করা হয়। ২০১১ সালের নভেম্বরে, প্রো ইভলিউশন সকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল গেম সিরিজ ফিফা’র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রনিক আর্টস ঘোষণা করে, ২০১২ সালে তাদের আসন্ন ভিডিও গেম ফিফা স্ট্রিটের কভারে মেসির ছবি ব্যবহার করা হবে। ইলেক্ট্রনিক আর্টসের ফিফা ২০১৩ ভিডিও গেমটির কভারেও মেসির ছবি ব্যবহার করা হয়।[২৯৫] জার্মান খেলাধুলার সামগ্রীনির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস মেসির স্পন্সর। তাকে অ্যাডিডাসের টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেও দেখা যায়।[২৯৬] ২০১০ সালের জুনে, মেসি হার্বালাইফের সাথে তিন বছরের একটি চুক্তি সাক্ষর করেন।[২৯৭] এই প্রতিষ্ঠানটি লিও মেসি ফাউন্ডেশনের কাজেও সহায়তা করে।

মেসি টাইম ১০০ এর তালিকায় ২০১১[২৯৮] ও ২০১২[২৯৯] সালে টানা দুইবার জায়গা পান। এটি টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক প্রকাশিত একটি তালিকা। প্রতি বছর বিশ্বের ১০০ জন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়।

২০১১ সালের এপ্রিলে, মেসি তার ফেসবুক পাতা চালু করেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাতার অনুসারীর সংখ্যা ৬০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।[৩০০] ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর অনুসারে, তার পাতায় অনুসারীর সংখ্যা নয় কোটির কাছাকাছি।[৩০১]

২০১৩ সালের মার্চে, খাটি স্বর্ণ দ্বারা মেসির বাঁ পায়ের একটি প্রতিরূপ তৈরি করা হয়। যা জাপানে ৫.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রিত হয়। ২৫ কিলোগ্রাম ওজনের প্রতিরূপটি নির্মাণ করেন জাপানি গহনানির্মাতা গিনজা তানাকা। তিনি এটি নির্মাণ করেন মেসির টানা চতুর্থ ব্যালন ডি অর জয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য।[৩০২]

২০১৩ সালের ৮ মে, ঘোষণা করা হয় যে এপিক পিকচার্স গ্রুপের প্রযোজনা এবং অর্থায়নে মেসির জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করা হবে। এই চলচ্চিত্রটি ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ শুরুর সময় মুক্তি পাবে।[৩০৩]

বিজ্ঞাপনী উদ্যোগ

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে, মেসিকে তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্ব্যাসাডর করা হয়।[৩০৪] এনবিএ তারকা কোবি ব্রায়ান্টের সাথে একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে মেসি কাজ করেন। তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের সর্বশেষ বিজ্ঞাপনে, এই দুই তারকা একটি যুবকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে।[৩০৫]

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর, লা লিগায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে মেসি অ্যাডিডাস আডিজেরো জুতা পরে মাঠে নামেন। এই জুতা মেসির একজন ভক্তের ডিজাইন করা। ২০১২ সালের প্রথম দিকে মেসি তার ভক্তদের জন্য অ্যাডিডাস আডিজেরো এফ৫০এস জুতা ডিজাইন করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ১৪,২০০-এরও বেশি ডিজাইনের মধ্য থেকে স্পেনের হ্যাভিয়ের পাসকুয়াল মুলোরের ডিজাইনটি মেসি পছন্দ করেন।[৩০৬] ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি, মালাহার বিপক্ষে খেলায়, তার চতুর্থবারের মত ফিফা ব্যালন ডি অর বিজয় স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি অ্যাডিডাস আডিজেরো এফ৫০ এর বিশেষ জুতা জোড়া পরে মাঠে নামেন।[৩০৭]

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে, মেসিকে জাপানি ফেইস ওয়াশ স্কাল্প-ডি এর সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। বিজ্ঞাপনে তিনি জাপানি ভাষায় কিছু কথা বলেন।[৩০৮]

২০১৩ সালের জুলাইয়ে, চীনে বার্তা আদান-প্রদান সংক্রান্ত অ্যাপলিকেশন উইচ্যাটের বিজ্ঞাপন চিত্রে মেসি অংশগ্রহণ করেন। তিনি অ্যাডিডাসের স্যুট পরেছিলেন এবং দুইটি উইচ্যাটের মাসকট ধরে রেখেছিলেন। উইচ্যাট টেনসেন্টের একটি ক্রস প্ল্যাটফর্ম বার্তা প্রেরক অ্যাপলিকেশন।[৩০৯] ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, জিলেটের একটি বিজ্ঞাপনে টেনিস তারকা রজার ফেদেরারের সাথে মেসি কাজ করেন। মেসিকে কোম্পানিটির আন্তর্জাতিক ফুটবল অভিযানের দূত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়া জিলেট লিও মেসি ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য পুরনে তাদের অংশীদার হিসেবেও কাজ শুরু করে।[৩১০]

খেলোয়াড়ী পরিসংখ্যান

ক্লাব

২১ অক্টোবর ২০২৩-খেলা ম্যাচ অনুসারে।

ক্লাবমৌসুমলিগকোপা দেল রেমহাদেশীয়অন্যান্যমোট
বিভাগউপস্থিতিগোলউপস্থিতিগোলউপস্থিতিগোলউপস্থিতিগোলউপস্থিতিগোল
বার্সেলোনা সি২০০৩–০৪[১৯]তের্সেরা দিভিসিওন১০১০
মোট১০১০
বার্সেলোনা বি২০০৩–০৪[৩১১]সেহুন্দা দিভিসিওন বি
২০০৪–০৫[৩১২]১৭১৭
মোট২২২২
বার্সেলোনা২০০৪–০৫[৩১২]লা লিগা[ক ১]
২০০৫–০৬[৩১৩]১৭[ক ১]২৫
২০০৬–০৭[৩১৪]২৬১৪[ক ২][ক ৩]৩৬১৭
২০০৭-০৮[৩১৫]২৮১০[ক ১]৪০১৬
২০০৮–০৯[৩১৬]৩১২৩১২[ক ১]৫১৩৮
২০০৯–১০[৩১৭]৩৫৩৪১২[ক ৪][ক ৫]৫৩৪৭
২০১০–১১[৩১৮]৩৩৩১১৩[ক ১]১২[ক ৩]৫৫৫৩
২০১১–১২[৩১৯]৩৭৫০১২[ক ৬]১৫[ক ৭]৬০৭৩
২০১২–১৩[৩২০]৩২৪৬১১[ক ১][ক ৩]৫০৬০
২০১৩–১৪[৩২১]৩১২৮[ক ১][ক ৩]৪৬৪১
২০১৪–১৫[৩২২]৩৮৪৩১৩[ক ১]১০৫৭৫৮
২০১৫–১৬[৩২৩]৩৩২৬[ক ১]৪৯৪১
২০১৬–১৭[৩২৪]৩৪৩৭[ক ১]১১৫২৫৪
২০১৭–১৮[৩২৪]৩৬৩৪১০[ক ১]৫৪৪৫
২০১৮–১৯[৩২৪]৩৪৩৬১০[ক ১]১২৫০৫১
২০১৯–২০[৩২৪]৩৩২৫[ক ১]৪৪৩১
২০২০–২১[৩২৪]৩৫৩০[ক ১]৪৭৩৮
মোট৫২০৪৭৪৮০৫৬১৪৯১২০২৯২২৭৭৮৬৭২
পারি সাঁ-জেরমাঁ২০২১–২২লিগ ১২৬[ক ১]৩৪১১
২০২২–২৩৩২১৬৪১২১
মোট৫৮২২১৪৭৫৩২
ইন্টার মায়ামি২০২৩মেজর লিগ সকার[ক ৮]১০১৪১১
ক্যারিয়ারে সর্বমোট৬১৬৫০৮৮৩৫৬১৬৩১২৯৩৭৩৩৮৯৯৭২৬

আন্তর্জাতিক

গোল

১৫ জুন ২০২৩–এ খেলা ম্যাচ অনুযায়ী।[৩২৫][৩২৬][৩২৭][৩২৮]

দলবছরম্যাচগোল
আর্জেন্টিনা২০০৫
২০০৬
২০০৭১৪
২০০৮
২০০৯১০
২০১০১০
২০১১১৩
২০১২১২
২০১৩
২০১৪১৪
২০১৫
২০১৬১১
২০১৭
২০১৮
২০১৯১০
২০২০
২০২১১৬
২০২২১৪১৮
২০২৩
মোট১৭৫১০৩

সহায়তা

নিচের ছকে রয়েছে আর্জেন্টিনার হয়ে আন্তর্জাতিক সহ ক্লাব ফুটবলের সব ধরনের অফিসিয়াল প্রতিযোগিতায় মেসির সহায়তা সংখ্যা:[৩২৯]

মৌসুমসহায়তা
২০০৪–০৫
২০০৫–০৬
২০০৬–০৭
২০০৭–০৮১৬
২০০৮–০৯১৯
২০০৯–১০১২
২০১০–১১২৯
২০১১–১২৩৩
২০১২–১৩১৮
২০১৩–১৪১৬
২০১৪–১৫৩২
২০১৫–১৬২৭
২০১৬–১৭১৮
২০১৭–১৮২১
২০১৮–১৯২০
২০১৯–২০২৬
২০২০–২১১৭
২০২১–২২১৬
২০২২–২৩২৬
২০২৩–২৪৩*
মোট৩৫৮

* মৌসুম চলছে।

আন্তর্জাতিক গোল

স্কোর এবং ফলাফলের তালিকা আর্জেন্টিনার গোলের হিসাব প্রথমে।
#তারিখমাঠপ্রতিপক্ষস্কোরফলাফলপ্রতিযোগিতা
১ মার্চ ২০০৬সাংক্ত জাকোব-পার্ক, বাসেল, সুইজারল্যান্ড  ক্রোয়েশিয়া – ১২–৩প্রীতি খেলা
১৬ জুন ২০০৬ভেলটিনস এরিনা, গেলসেনকিরচেন, জার্মানি  সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রো – ০৬–০২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ
৫ জুন ২০০৭কাম্প ন্যু, বার্সেলোনা, স্পেন  আলজেরিয়া – ২৪–৩প্রীতি খেলা
– ২
৪ জুলাই ২০০৭এস্তদিও মেত্রোপলিতানো দি ফুতবল দি লারা, বারকুইসিমেতো, ভেনিজুয়েলা  পেরু – ০৪–০২০০৭ কোপা আমেরিকা
১১ জুলাই ২০০৭পলিদেপর্তিভো কাঁচামে, পুয়ের্তো অর্দাজ, ভেনিজুয়েলা  মেক্সিকো – ০৩–০
১৬ অক্টোবর ২০০৭এস্তাদিও জোসে পাচেন্চো রমেরো, মারাকাইবো, ভেনিজুয়েলা  ভেনেজুয়েলা – ০২–০২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব
২০ নভেম্বর ২০০৭এস্তাদিও এল ক্যাম্পিন, বগোতা, কলম্বিয়া  কলম্বিয়া – ০১–২
৪ জুন ২০০৮কোয়ালকম স্টেডিয়াম, স্যান ডিয়েগো, যুক্তরাষ্ট্র  মেক্সিকো – ০৪–১প্রীতি খেলা
১০১১ অক্টোবর ২০০৮এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা  উরুগুয়ে – ০২–১২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব
১১১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯স্তেদ ভেলোদর্মে, মার্শেই, ফ্রান্স  ফ্রান্স – ০২–০প্রীতি খেলা
১২২৮ মার্চ ২০০৯এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা  ভেনেজুয়েলা – ০৪–০২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব
১৩১৪ নভেম্বর ২০০৯ভিসেন্তে ক্যালদেরন স্টেডিয়াম, মাদ্রিদ, স্পেন  স্পেন – ১১–২প্রীতি খেলা
১৪৭ সেপ্টেম্বর ২০১০এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা  স্পেন – ০৪–১
১৫১৭ নভেম্বর ২০১০খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, দোহা, কাতার  ব্রাজিল – ০১–০
১৬৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১স্তেদ দি জেনেভে, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড  পর্তুগাল – ১২–১
১৭২০ জুন ২০১১এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা  আলবেনিয়া – ০৪–০
১৮৭ অক্টোবর ২০১১  চিলি – ০৪–১২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব
১৯১৫ নভেম্বর ২০১১এস্তাদিও মেত্রোপলিতানো রবের্তো মেলেন্দেজ, বারানকিয়া, কলম্বিয়া  কলম্বিয়া – ১২–১
২০২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২এস্তেদ দি সুইজি, ওয়াঙ্কদর্ফ, বের্ন, সুইজারল্যান্ড   সুইজারল্যান্ড – ০৩–১প্রীতি খেলা
২১ – ১
২২ – ১
২৩২ জুন ২০১২এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা  ইকুয়েডর – ০৪–০২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব
২৪৯ জুন ২০১২মেটলাইফ স্টেডিয়াম, পূর্ব রাদারফোর্ড, যুক্তরাষ্ট্র  ব্রাজিল – ১৪–৩প্রীতি খেলা
২৫ – ১
২৬ – ৩
২৭১৫ আগস্ট ২০১২কমার্জব্যাংক-এরিনা, ফ্রাংকফ্রুট, জার্মানি  জার্মানি – ০৩–১
২৮৭ সেপ্টেম্বর ২০১২এস্তাদিও মারিও এলবার্তো কেম্পেস, কর্দোবা, আর্জেন্টিনা  প্যারাগুয়ে – ১৩–১২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব
২৯১২ অক্টোবর ২০১২এস্তাদিও মেলভিনাস আর্জেন্টিনাস, মেন্দোজা, আর্জেন্টিনা  উরুগুয়ে – ০৩–০
৩০  উরুগুয়ে – ০
৩১১৬ অক্টোবর ২০১২এস্তাদিও ন্যাসিওনাল, স্যান্তিয়াগো, চিলি  চিলি – ০২–১
৩২২২ মার্চ ২০১৩এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা  ভেনেজুয়েলা – ০৩–০
৩৩১৪ জুন ২০১৩এস্তাদিও মাতিও ফ্লোরেস, গুয়েতেমালা সিটি, গুয়েতেমালা  গুয়াতেমালা – ০৪–০প্রীতি খেলা
৩৪ – ০
৩৫ – ০
৩৬১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩এস্তাদিও দিফেন্সরেস দেল কাকো, আসুনসিয়ন, প্যারাগুয়ে  প্যারাগুয়ে – ০৫–২২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব
৩৭ – ১
৩৮৭ জুন ২০১৪এস্তাদিও সিউদাদ দে লা প্লাতা, লা প্লাতা, আর্জেন্টিনা  স্লোভেনিয়া – ০২–০প্রীতি খেলা
৩৯১৫ জুন ২০১৪এস্তাদিও দো মারাকানা, রিউ দি জানেইরু, ব্রাজিল  বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা – ০২–১২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ
৪০২১ জুন ২০১৪মিনেইরাও, বেলো অরিজন্ঠ, ব্রাজিল  ইরান – ০১–০
৪১২৫ জুন ২০১৪এস্তাদিও বেইরা-রিও, পোর্তো আলেগ্রে, ব্রাজিল  নাইজেরিয়া– ০৩–২
৪২ – ১
৪৩১৪ অক্টোবর ২০১৪হং কং স্টেডিয়াম, সো কন পো, হং কং  হংকং – ০৭–০প্রীতি খেলা
৪৪ – ০
৪৫১২ নভেম্বর ২০১৪বলিন গ্রাউন্ড, লন্ডন, ইংল্যান্ড  ক্রোয়েশিয়া – ১২–১
৪৬১৩ জুন ২০১৫এস্তাদিও লা পর্তাদা, লা সেরেনা, চিলি  প্যারাগুয়ে – ০২–২২০১৫ কোপা আমেরিকা
৪৭৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫বিবিভিএ কম্পাস স্টেডিয়াম, হাউস্টন, যুক্তরাষ্ট্র  বলিভিয়া – ০৭–০প্রীতি খেলা
৪৮ – ০
৪৯৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫এটি এন্ড টি স্টেডিয়াম, আর্লিংটন, যুক্তরাষ্ট্র  মেক্সিকো – ২২–২
৫০২৯ মার্চ ২০১৬এস্তাদিও মারিও এলবার্তো কেম্পেস, কর্দোবা, আর্জেন্টিনা  বলিভিয়া – ০২–০২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব

সম্মাননা

ক্লাব

বার্সেলোনা
প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন
  • লিগ ১ (১): ২০২১-২২
  • ত্রোফে দে শাম্পিওঁ (১): ২০২২
ইন্টার মায়ামি

আন্তর্জাতিক

আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০
  • ফিফা অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ: ২০০৫
  • দক্ষিণ আমেরিকান যুব চ্যাম্পিয়নশীপ: তৃতীয় স্থান: ২০০৫
আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২৩
আর্জেন্টিনা

রানার-আপ: ২০০৭, ২০১৫, ২০১৬তৃতীয় স্থান: ২০১৯

একক

  • ফিফা বিশ্বকাপ সোনালী বল/ফিফা বিশ্বকাপ সেরা খেলোয়াড় পুরস্কার (২): ২০১৪, ২০২২
  • ব্যালন ডি অর/ফিফা ব্যালন ডি অর(৮): ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ এবং ২০২১, ২০২৩
  • ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় (১): ২০০৯
  • ফিফা শ্রেষ্ঠ পুরুষ খেলোয়াড় (২): ২০১৯, ২০২২
  • ইউরোপীয় সোনালী জুতো (৬): ২০০৯-১০, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯
  • উয়েফা ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় (২): ২০১১, ২০১৫
  • উয়েফা বর্ষসেরা ক্লাব ফুটবলার (১): ২০০৯
  • উয়েফা বর্ষসেরা ক্লাব ফরওয়ার্ড (২): ২০০৯, ২০১৯
  • লা লিগা বর্ষসেরা খেলোয়াড় (৬): ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৪-১৫
  • লা লিগা বর্ষসেরা ফরওয়ার্ড (৭): ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬
  • লা লিগা মৌসুমসেরা দল: ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬
  • উয়েফা লা লিগা মৌসুমসেরা দল: ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭
  • লা লিগা বিদেশি বর্ষসেরা খেলোয়াড় (৩): ২০০৭, ২০০৯, ২০১০
  • লা লিগা আইবেরো-আমেরিকান বর্ষসেরা খেলোয়াড় (৫): ২০০৭, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২
  • পিচিচি ট্রফি (৮): ২০০৯-১০, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১
  • কোপা আমেরিকা সেরা খেলোয়াড় (২): ২০১৫, ২০২১
  • কোপা আমেরিকা গোল্ডেন বুট (১): ২০২১
  • কোপা আমেরিকা প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানকারী (৪): ২০১১, ২০১৫, ২০১৬, ২০২১।
  • কোপা আমেরিকা প্রতিযোগীতার যুব সেরা খেলোয়াড় (১): ২০০৭।
  • কোপা আমেরিকা সেরা একাদশ (৪): ২০০৭, ২০১৫, ২০১৬, ২০২১
  • ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ স্বর্ণ গোলক (২): ২০০৯, ২০১১
  • ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ রৌপ্য গোলক (১): ২০১৫
  • ওয়ার্ল্ড সকার যুব বর্ষসেরা খেলোয়াড় (৩): ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮।
  • ওয়ার্ল্ড সকার বর্ষসেরা খেলোয়াড় (৩): ২০০৯, ২০১১, ২০১২।
  • ওয়ার্ল্ড সকার সর্বকালের সেরা একাদশ (১): ২০১৩।
  • ওঞ্জ দি’অর (৪): ২০০৯, ২০১১, ২০১২, ২০১৮। ২০১০ সালে কোন বিজয়ী ছিলনা।
  • আইএফএফএইচএস বিশ্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা (২): ২০১১, ২০১২।[৩৩০]
  • আইএফএফএইচএস শীর্ষ বিভাগের সেরা গোলদাতা (২): ২০১২, ২০১৬[৩৩১]
  • আইএফএফএইচএস বিশ্বসেরা প্লেমেকার (৩): ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯
  • আইএফএফএইচএস দশকসেরা বিশ্বসেরা প্লেমেকার : ২০১১-২০২০
  • গোল ডট কম বর্ষসেরা খেলোয়াড় (৩): ২০০৯, ২০১১, ২০১৩।
  • এল পেইস কিং অব ইউরোপীয়ান সকার (৪): ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২।[৩৩২]
  • ইএসপিওয়াই সেরা আন্তর্জাতিক এথলেট (১): ২০১২
  • উয়েফা বর্ষসেরা দল (১২): ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০
  • উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ সর্বোচ্চ গোলদাতা (৬): ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯।
  • উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ বর্ষসেরা ফরোয়ার্ড (১): ২০০৯। ২০১০ সাল থেকে নিবৃত।
  • উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল ম্যান অব দ্য ম্যাচ (১): ২০১১।
  • এল’ইকুইপে চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়নস (১): ২০১১।
  • কনমেবল–উয়েফা কাপ অব চ্যাম্পিয়ন্স ফাইনাল ম্যান অব দ্য ম্যাচ (১): ২০২২
  • ফিফা অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ প্রতিযোগীতার সেরা খেলোয়াড় (১): ২০০৫।
  • ফিফা অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ সর্বোচ্চ গোলদাতা (১): ২০০৫।
  • ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ স্বর্ণ গোলক (২): ২০০৯, ২০১১।
  • ফিফা/ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশ (১৪): ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০।
  • ফিফপ্রো যুব বর্ষসেরা খেলোয়াড় (৩): ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮।
  • ইএসএম বর্ষসেরা দল (৭): ২০০৬, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩।
  • কোপা দেল রে শীর্ষ গোলদাতা (১): ২০১০–১১।
  • এলএফপি সেরা খেলোয়াড় (৫): ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩।
  • এলএফপি সেরা ফরোয়ার্ড (৫): ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩।
  • মার্কা লেইন্দা (১): ২০০৯।
  • ব্রাভো এওয়ার্ড (১): ২০০৭।
  • গোল্ডেন বয় (১): ২০০৫।
  • অলিম্পিয়া দি অরো (১): ২০১১।
  • অলিম্পিয়া দি প্লাতা (১২): ২০০৫, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯।[৩৩৩]

রেকর্ডসমূহ

সর্বশেষ অক্টোবর ২০২২ অনুযায়ী।

বিশ্ব

  • সর্বোচ্চ ফিফা ব্যালন ডি অর পুরস্কার: ৮ (২০০৯-১২, ২০১৫, ২০১৯, ২০২১, ২০২৩)[৩৩৪]
  • এক বছরে সর্বোচ্চ গোলের জন্য গিনেস বিশ্ব রেকর্ড পুরস্কার: ৯১ গোল (২০১২ সালে)[৩৩৫]
  • এক বছরে সব ক্লাব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সর্বোচ্চ গোল: ৭৯ গোল (২০১২ সালে)
  • এক মৌসুমে সব ক্লাব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সর্বোচ্চ গোল: ৭৩ গোল (২০১১-১২ মৌসুমে)
  • ঘরোয়া লিগে টানা সর্বোচ্চ খেলায় গোল: ২১ ম্যাচে ৩৩ গোল (২০১১-১২ মৌসুমে)[৩৩৬]
  • প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল: ৬৭২ গোল
  • ফিফা ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশে সর্বোচ্চ অন্তর্ভুক্তি: ১৬ বার (২০০৭-২০২২)
  • সর্বোচ্চ ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার: ৮

মহাদেশীয়

  • সর্বোচ্চ ইউরোপীয় সোনালী জুতো: ৬
  • উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ হ্যাট্রিক: ৮টি হ্যাট্রিক[১৬২] (ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সাথে যৌথভাবে)
  • ইউরোপীয়ান কাপের এক খেলায় সর্বোচ্চ গোলদাতা: ৫ গোল (অন্য ১৩ জন খেলোয়াড়ের সাথে যৌথভাবে)[৩৩৭]
  • উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে সর্বোচ্চ গোল: ৭৮ গোল
  • উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ ভিন্ন দলের বিপক্ষে গোল: ৪০ টি
  • উয়েফা সুপার কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা: ৩ গোল (অন্য ৭ জন খেলোয়াড়ের সাথে যৌথভাবে)
  • সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০০ উপস্থিতি: ২৮ বছর ৮৪ দিন (২০১৫ সালে)
  • প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১৮ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ আসরে গোল
  • কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ সহায়তাকারী: ১৭ সহায়তা
  • কনমেবল অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা: ২৭ গোল [২য়- লুইস সুয়ারেজ(২৬ গোল) ]

আর্জেন্টিনা

  • আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা: ১০৪ গোল (১৭৭ ম্যাচে)
  • এক পঞ্জিকাবর্ষে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা: ১৮ গোল (২০২২ সালে)
  • একমাত্র আর্জেন্টাইন হিসেবে সকল কনমেবল দলের বিরুদ্ধে গোল
  • আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়: ১৮ বছর ৩৫৭ দিন (২০০৬ বিশ্বকাপে)
  • সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে গোল : ১৮ বছর ৩৫৭ দিন (২০০৬ বিশ্বকাপে)
  • সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে কনমেবল অঞ্চলে জাতীয় দলের হয়ে ১০০ উপস্থিতি: ২৭ বছর ৩৬১ দিন (২০১৫ সালে)
  • সর্বাধিক আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবলারের পুরস্কার: ১২ বার (২০০৫, ২০০৭-১৩, ২০১৫-১৭, ২০১৯)

স্পেন

  • সর্বাধিক লা লিগা সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার: ৬ (২০০৯-১৩, ২০১৫)
  • সর্বাধিক লা লিগা সেরা ফরওয়ার্ডের পুরস্কার: ৭ (২০০৯-১৩, ২০১৫,২০১৬)
  • লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা: ৪৭৪ গোল
  • লা লিগার সর্বোচ্চ গোলে সহায়তাকারী: ১৯৩ সহায়তা
  • স্পেনীয় সুপার কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা: ১৪ গোল
  • লা।লিগায় এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল: ৫০ গোল (২০১১-১২ মৌসুমে)
  • লা লিগায় এক মৌসুমে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিক: ৮টি (২০১১-১২ মৌসুমে) (ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সাথে যৌথভাবে)
  • প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় ৩০০ গোল
  • একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় ৪৫০ গোল
  • লা লিগার ইতিহাসে সর্বাধিক দলের বিরুদ্ধে গোল: ৩৭

বার্সেলোনা

  • বার্সেলোনা ডার্বিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা: ২৫ গোল
  • এল ক্লাসিকোতে সর্বোচ্চ গোলদাতা: ২৬ গোল
  • অ্যাথলেটিক-বার্সেলোনা ক্লাসিকোতে সর্বোচ্চ গোলদাতা: ৩২ গোল
  • প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলদাতা: ৬৭২ গোল
  • প্রীতি ম্যাচ সহ সর্বোচ্চ গোলদাতা: - গোল
  • ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোলদাতা: ১২৩ গোল
  • লা লিগায় সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিক: ৩৬টি
  • সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিক: ৪৮টি
  • সর্বাধিক প্রতিযোগিতামূলক ট্রফি জয়: ৪১টি

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

'https:https://www.search.com.vn/wiki/index.php?lang=bn&q=লিওনেল_মেসি&oldid=7339826' থেকে আনীত
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ